somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অশ্রুকন্যা !! আমার গার্লফ্রেন্ড !!

১৮ ই নভেম্বর, ২০১২ রাত ১১:১৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিহিন শক্ত করে আমার হাত ধরে রেখেছে । কিছুতেই যেন আমাকে যেতে দিবে না কোথাও ! আমি নিহিনের দিকে তাকিয়ে দেখি ওর চোখে পানি চলমল করছে । যে কোন সময় পানি গড়িয়ে পড়বে ।
আমার মাঝে মাঝে অবাক লাগে এই ভেবে যে এই চিকন শরীরে এতো পানি আসে কোথা থেকে !
কোন কথা নাই বার্তা নাই, কেমল নায়াগ্রার জলপ্রপাতের মত পানি পড়তেই থাকে ।
আমি যদি ওকে একটু ধমক দিয়ে কথা বলি তাহলে ওর চোখ দিয়ে পানি পড়ে!
যদি একটু আদর করি তাহলে পানি পড়ে !
দেখা হলে পানি পড়ে !
আবার যখন ওকে রেখে আসতে যাই তখনও পানি পড়ে !
এতো পানি আসে কোথা থেকে কে জানে ?
আমি একটু ভয়ে ভয়ে ওর দিকে তাকাই । মেয়েটা কি এখনই কেঁদে ফেলবে ? নিহিন চোখে গাড় করে কাজল দিয়েছে । এখন যদি কেঁদে ফেলে তাহলে চোখের কাজল লেপ্টে একাকার হয়ে যাবে !
তার উপর আজ আবার সাদা সেলোয়ার কামিজ পরে এসেছে । মেয়েটাকে কত দিন বলেছি যেদিন তোমার কান্না কাটি করার মুড থাকবে সেদিন চোখে কাজল পরবে না ।
কিন্তু না !
আমার সাথে দেখা করতে আসতে হলে তার কাজল পরা চাই ই ।
আমিই ওকে একদিন বলেছিলাম চোখে কাজল দিলে অনেক সুন্দর লাগে ! আর যাবে কই !
নিহিন চোখের পানি আটকানোর আপ্রান চেষ্টা করে যাচ্ছে ! আমি খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললাম
-এই জন্য আমি তোমাকে আসতে মানা করেছিলাম । মাত্র দুদিনের জন্য যাচ্ছি এর জন্য এতো কান্নাকাটি করার কি আছে ?
নিহিন বলল
-কই কান্না কাটি করছি ? কাঁদছি না আমি !
এই কথা বলতে বলতে নিহিনের চোখ দিয়ে টুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ল । নিহিন ব্যস্ত হয়ে পড়ল পানি মোছার জন্য ! আমি ওকে বললাম
-এটা কি ?
নিহিন চোখ মুছতে মুছতে আমার দিকে তাকালো ! তারপর বলল
-আমি কি করবো বল ! তুমি আমার কাছ থেকে দুরে যাচ্ছ এটা আমি মেনে পারছি না । এই কয় দিন আমি তোমার কাছ থেকে কিভাবে দুরে থাকবো !
আমি কিছু বলতে গিয়েও আটকে গেলাম । মেয়েটাকে জোরে কিছু বলতেও পারি না ।
কিভাবে বলি !!

যেদিন থেকে শুনেছে আমি একটু ঢাকার বাইরে যাবো সেদিন থেকে ই ও এমন করছে !
বারবার বলছে
-এতোদিন আমি কিভাবে থাকবো ? আর কেন যাবা ? কি দরকার ?
-আরে কি দরকার মানে ? আমার ছোট বেলার বন্ধুর বিয়ে ! না গেলে হয় নাকি ? বন্ধু রাগ করবে না ?
নিহিন চোখে পানি নিয়ে বলল
-বন্ধু রাগ করবে ঠিক আছে আর আমি ? আমার কথা ভাববে না ? আমি কষ্ট পাবো না ?
-আরে বাবা ! আমি তো আর চিরো দিনের জন্য যাচ্ছি না । মাত্র দুইদিনের জন্য!
-দুইদিনের জন্যই কেন যাবা ? আমি কিভাবে থাকবো?

আমি টিস্যু দিয়ে নিহিনের চোখ মুছিয়ে দিলাম । একটু সাবধানে চেষ্টা করতে করলাম কিন্তু শেষ রক্ষা হল না । কাজল লেপ্টে কেমন একটা বিষ্ছিরি অবস্থা হল !
আমি বললাম
-আমি এই জন্য তোমাকে আস্তে মানা করে ছিলাম । এখন যাওয়ার সময় তোমার এমন কান্না ভেজা মুখ দেখতে ভাল লাগে !
নিহিন ফুপিয়ে কেঁদে উঠল !
হায় আল্লাহ !! আমি কই যাবো !!
-আমাকে ছেড়ে যাবে আমি একটু আসতেও পারবো না ? শেষ দেখা হবে না ?
এই মেয়েকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো ? শেষ দেখা মানে কি ?
আমি বললাম
-আমি যুদ্ধে যাচ্ছি ? এমন ভাবে কথা বলছো যেন আমি আর আসবো না ! আমি আসবো না কি আর ?
নিহিন চোখ মুছতে মুছতে বলল
-যেও না প্লিজ ! তুমি জানো না তোমাকে না দেখলে আমার কেমন হয় ? আমি ঠিক মত নিঃশ্বাস নিতে পারি না !

নাহ ! এই মেয়েটার সাথে কথা বলে লাভ নাই । যত কথা বলবো তত আমার মনকে কনফিউজ করে দিবে ! তখন মনে হবে আমার বুঝি যাওয়া ঠিক হবে না !
আমি নিহিনের হাত থেকে নিজেকর ছাড়িয়ে নিলাম । বললাম
-আমার বাস ছাড়ার সময় হয়ে গেছে । আমি যাই !
নিহিন অনিচ্ছা সত্তেরও আমার হাত ছেড়ে দিল । আমি বাসের দরজায় উঠে পিছনে তাকালম !
নিহিনের চোখ দিয়ে আবার পানি পরছে !
এসব কি ভাল লাগে ?
যাওয়ার সময় একটু হাসবে !
একটু হাসি মুখে বিদায় দিবে । কিন্তু না ! কেঁদেই চলেছে .......
আমি জানলা দিয়ে মুখ বের করে তাকালাম ! হাত নাড়লাম ।
নিহিন হাত নাড়ল না !
আমার দিকে তাকিয়েই রইলো ! চোখ দিয়ে তখনও পানি পড়ছে অনবরত !
চোখ থেকে পানি আর কাজলের মিশ্রনের একটা কালো পানি ধারা ওর গাল বেয়ে নিচে নামছে !

বাস চলতে শুরু করলো ! আমি আবার হাত নাড়লাম । ঠিক তখনই নিহিন একটা পাগলামো করা শুরু করলো ! বাসের সাথে সাথে হাটতে লাগলো !
যাসের গতি আস্তে আস্তে বাড়তে লাগলো আর নিহিনের হাটার গতিও বাড়তে লাগলো !
এক পর্যায় নিহিন দৌড়াতে লাগলো ! আমি চিৎকার করে থামতে কিন্তু নিহিন আমার কথা শুনো না !
ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে ওর প্রিয় কিছু ওর কাছ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে । বাচ্চা মেয়ে যেমন আর হারিয়ে যাওয়া জিনিসের জন্য দৌড়ায় নিহিন ঠিক সেভাবেই দৌড়াতে লাগলো !
এই মেয়েটা আসলেই পাগল !
এমন পাগলামো কেন করছে !
এভাবে কেউ বাসের সাথে সাথে দৌড়া্ড় ?

এক পর্যায়ে নিহিন বাসে আড়ালে চলে গেল । কিন্তু আমার কেন জানি মনে হল নিহিন এখনও দৌড়াচ্ছে ! আমি নিহিনকে ফোন দিলাম !
ও ধরছে না ।
কি করবো ?
নাহ !!
এই মেয়ে আমাকে শান্তি দিবে না ।

আমি বাসের ড্রাইভার কে বাস থামাতে বললাম । ড্রাইভার একটয় অবাক হলেও কিছু বলল না । আমি বাস থেকে নেমে পড়লাম ! আমি জানি না কেমন এমন মনে হচ্ছে কিন্তু আমি জানি নিহিন এদিকেই দৌড়ে আসছে !
আমি নিজেও হাটতে লাগলাম ওর দিকে !
এই তো নিহিনকে দেখা যাচ্ছে !

এখনও দৌড়েই যাচ্ছে !! আমার কাছে এসে একটু থামলো ! তারপর আমাকে জড়িয়ে ধরলো ! এতো মানুষ চারি ধরে কিন্তু নিহিনের কোন ক্ষ্যাল নাই !
ওর বুকটা কেমন ধরফর করছে ! নিহিন কোন রকম বলল
-আর কখনও আমাকে ছেড়ে যাবে না ! আর কখনও না !! আমি আর কখনও তোমাকে যেতে দিবো না ! দিবো না !

আমি আর কিছু বললাম না । বললাম পরতে পারলাম না ! এই মেয়ের ভালবাসার কাছে আমার আর কিছু বলারও নাই !
কিন্তু বন্ধুর বিয়েতে যেতে পারলাম না । না জানি ও কি বলবে !!!



বাস্তবের নিহিন রা কখনও এমন হয় না !! বাস্তবের নিহিনরা কখনও এভাবে ভালবাসতে পারে না ! তাদের সেই ক্ষমতাই নেই !! :(:(:(:(

৫১টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×