somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ এক যে ছিল সুন্দরবন !

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নিজের রাজকীয় গুহায় ঘুমাচ্ছে বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার ! গত কয়েক দিনে বেশ পরিশ্রম গেছে ! দুর দেশে অন্য রাজার সাথে দেখা করতে গিয়েছিল সে ! ফিরেছে কাল রাতেই । তাই আজকে বেলা পর্যন্ত ঘুমাচ্ছে !
হঠাৎই রাজা তার কানের কাছে কিছু একটা নড়াচড়ার অনুভুতি পেলেন ! একটু বিরক্ত হলেন বটে কিন্তু ! কিছু বললেন না !
কারন গন্ধ বলছে তার কান ধরে টানা টানি করে খেলা করছে তার ছেলে ! রয়েল বেঙ্গল টাইগার জুনিয়র !
চোখ না খুলেই রাজা ভড়াট গলায় বললেন
-কি ব্যাপার জুনিয়র ? আমাকে কেন বিরক্ত করছো ?
-বাবা ! তুমি কোথায় ছিলে ?
-কাজে ছিলাম !
-কি কাজ বাবা ?
-আছে ! তুমি বুঝবে না ! আগে বড় হও তারপর ! যাও এখন খেলতে যাও !
-না বাবা ! যাবো না ! বাইরে কেউ খেলতে আসে না ! সবার শরীর খারাপ !
-শরীর খারাপ ?
-হুম ! আর বাইরে যেতে ভাল লাগে না বাবা !
-কেন ?
-তুমি শুনতে পাচ্ছ না বাবা ?

আসলেই তিনি শুনতে পাচ্ছেন ! এতোক্ষন ক্লান্ত ছিলেন বিধায় কোন কিছু বলেন নি ! কিন্তু কাল রাতে বাসায় আসার পর থেকেই একটা অস্বস্থিকর পরিবেশ চারিদিকে ! একটু যেন বেশি গরম লাগছে ! তার উপর একটা হালকা কাঁপন অনুভব করছেন মাটিতে তিনি !
ভেবেছিলেন সকালে উঠে খোজ নিবেন ! এবার তিনি চোখ মেলে তাকালেন । জুনিয়র তার কান টানাটানি বন্ধ করে তার গলার কাছে মাথা ঘষতে শুরু করেছে । তিনি জুনিয়র কে বললেন
-এমন অবস্থা কত দিন থেকে জুনিয়র ?
-তুমি যেদিন বেড়াতে গেলে তার কয়েক দিন পর থেকেই ।

খানিকটা চিন্তিত হলেন বনের রাজা । মাটির কাঁপনটা এখন পরিস্কার বুঝতে পারছেন । কাঁপনের সাথে সাথে দুর থেকে একটা ঘড়ঘড় আওয়াজও শোনা যাচ্ছে । বড় কোন নৌযান যেন প্রতিনিয়ত ছুটে চলেছে আসপাশ দিয়েই ।
বনের রাজা এবার উঠে দাড়ালেন । বাইরে কি হচ্ছে একটু খোজ নেওয়া দরকার । বেশ কিছু দিন বাইরে ছিলেন তিনি ! তার রাজ্যের কি খবর কে জানে ? বাইরে যাওয়ার জন্য তিনি গুহার দরজার দিকে পা বাড়ালেন ! জুনিয়র এবার তার পা ধরে রেখেছে ! বাবার পায়ের সাথে খেলা করতে তার বেশ ভাল লাগে !

জুনিয়র কে নিয়েই তিনি হাটতে লাগলেন আস্তে আস্তে ! আর একটা ব্যাপার লক্ষ্য করার মত ! তিনি বেশ গরম অনুভব করছেন । বছরের এই সময়টাতে তো এতো গরম হওয়ার কথা না ।
তাহলে ? গুহার বাইরে এসে বনের রাজা একটু ধাক্কার মত খেলেন । তার গুহার সামনে বনের পশুপাখিরা ভিড় করে দাড়িয়ে । এমন একটা ভাব যেন তার জন্যই সবাই দাড়িয়ে আছে । সবার তো জানার কথা না যে তিনি বনে ফিরে এসেছেন । বনের রাজা বললেন
-কি ব্যাপার তোমরা ?
হরিণ বলল
-মহারাজ আমরা আপনার সাথে দেখা করতে এসেছি ।
-এতো সকালে ?
ভয়ে ভয়ে বানর এগিয়ে এসে বলল
-মহারাজ আমরা প্রতিদিনই এখানে এসে বসে থাকি । আপনি কবে আসবেন এই আশায় !
-কি ! কি হয়েছে ? নতুন কোন সমস্যা হয়েছে নাকি !
-জি মহারাজ ।
বনের রাজা কুমিরের দিকে তাকিয়ে বেশ অবাক হলেন । কুমির সাধারনত এই সব বনের সভায় হাজির থাকে না । কুমির যখন এসেছে তার মানে অবস্থা নিশ্চই খারাপের দিকে । বনের রাজা সবার দিকে চোখ বোলালেন । মোটামুটি সবাই হাজির কেবল খ্যাক শিয়াল বাদে । তিনি বললেন
-আচ্ছা ঠিক আছে তোমার সবার কথা শোনা হবে । আগামী কাল বিকাল তিনটার সময় বনের দরবারে মিটিং । এর ভিতর আমি নিজে কিছু খোজ খবর নিয়ে দেখি !

এই বলে তিনি গুহার ভিতরে চলে গেলেন । পরদিন বিকেল তিনটায় বনের সবাই হাজির হয়ে গেল নির্দিষ্ট জায়গায় । কয়েক মিনিটের ভিতরেই বনের রাজা রয়েল বেঙ্গল টাইগার হাজির হলেন । তার মুখ বেশ গম্ভীর ।

গতকাল সকাল বেলা সবাই চলে যাওয়ার পরপরই তিনি বন পরিদর্শনে বের হন এবং যা পর্যবেক্ষন করেন তাতে তার মুখ এমনিতেই গম্ভীর হয়ে যায় । বলের সবার সাথেই তিনি কথা বলেছেন ! কার কি সমস্যা তিনি নিজে খোজ খবর নিয়েছেন !

বনের তাপমাত্রা আগের তুলনায় বেশ বেড়ে গেছে । গরমে বনের সব পশুপাখির অবস্থা খারাপ । কেউ কেউ বেশ অসুস্থ হয়ে পরেছে । আর সারাক্ষন একটা কাঁপন অনুভব হচ্ছে পুরো বন জুরে । সাথে যুক্ত হয়েছে বড় বড় নৌযান চলার আওয়াজ । মোট কথা সুন্দরবনের শান্ত শীতল পরিবেশ আর আগের মত নেই কিছু তেই ।

এই অবস্থা চলতে থাকলে খুব বেশি দিন টিকতে পারা যাবে না এখানে এটা তিনি খুব ভাল করেই বুঝে গেছেন । তিনি সারা রাত এটা নিয়ে ভেবেছেন ! প্রয়োজনীয় খোজ খবর নিয়েছেন এই নিয়ে !


তিনি মঞ্চে উঠে সবার উদ্দেশ্য বললেন
-আমি সারা বন ঘুরে দেখেছি । সবার সাথে কথা বলেছি ! যা দেখছি সেটা মোটেই কাম্য নয় । এই ব্যাপারে শিয়াল পন্ডিতের কি বক্তব্য শুনতে চাই ।
শিয়াল এগিয়ে এল । রাজা বলল
-আমি ভ্রমনে যাওয়ার আগে তুমি আমাকে আস্বস্ত করেছিলে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র বনের কোন ক্ষতি করবে না । কিন্তু তুমি নিজেই দেখছো এই বনের কি অবস্থা ! ওদের প্রতিনিধি হিসাবে তোমার কি বলার আছে ?
খ্যাক শিয়াল কুর্নিশ করে বলল
-মহারাজ । বনের উপর একটু ইফেক্ট তো পড়তেই পারে । এতো বড় একটা প্রজেক্ট ।
-তোমার কাছে এটা একটু ইফেক্ট মনে হচ্ছে ? নিজের বন ছেড়ে ওদের দালালী শুরু করে দিয়েছ দেখছি ।
-ছিঃ ছিঃ কি বলেন মহারাজ ! আমি তো আপনাদেরই লোক । কিন্তু আপনাকে তো বৃহৎ স্বার্থটাও দেখতে হবে । দেশের বিদ্যুৎ চাহিদার কথাটা তো চিন্তা করতে হবে । উন্নতির কথাটা একটু দেখতে হবে ।
-বৃহৎ স্বার্থ ? আমাদের এই বন থেকে বড় স্বার্থ আর কোনটা হতে পারে বলত ? তোমার কি মনে নেই এই সুন্দরবন প্রকৃতির কতবড় একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ । এর ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স যদি নষ্ট হয়ে যায় তাহলে পুরো দেশের উপর কি পরিমান দুর্যোগ নেমে আসবে সেটা কি তুমি জানো না ? তোমার কি মনে নেই দেশে প্রয়োজনীয় বনাঞ্চলের চাহিদার অধিকাংশই এই সুন্দরবন থেকে পুরন হয় !
-কিন্তু মহারাজ । আপনাকে তো উন্নয়নের দিক টাও দেখতে হবে !
-তাই ? উন্নয়ন ? আচ্ছা শিয়াল একটা কথা বল । তোমার কাছে তো উন্নয়নই বড় কথা । তাই না ?
শিয়াল বিস্তৃত হাসি দিয়ে বলল
-জি মহারাজ । এটা সবারই কাম্য !
-তোমার কাছে তোমার পারিবারিক আর্থিক উন্নয়ন তো গুরুত্বপুর্ন সে হিসাবে । তাই না ?
-জি মহারাজ ।
-তাহলে কি পারিবারিক আর্থিক উন্নয়নের জন্য তুমি তোমার বউকে রাতের বেলা অন্য শিয়ালের কাছে পাঠাতে প্রস্তুত ?

শিয়ালের মুখের হাসি নিমিশেই মুছে গেল । মহারাজ বলল
-শুনো শিয়াল নিজের জন্মভুমিকে ভালবাসো । কিসে তার ভাল হয় সেইটা চিন্তা কর ।
তারপর তিনি সবার উদ্দেশে বললেন
-এই কয়দিনে অনেক কিছু বদলে গেছে । এখন অনেক কিছুই আর আগের মত নেই ।
অনেকে বলল
-এখন কি উপায় ?
-এখন আর কোন উপায় নেই । আমি কাল সারাটা সময় কেবল এইটা নিয়েই ভেবেছি । এই সুন্দর বনের এই অংশটুকু এখন আর আমাদের বসবাসের যোগ্য নয় । দিন দিন এর অবস্থা খারাপের দিকে যাচ্ছে ।
-এখন কি উপায় নেই ?
-আর কোন উপায় নেই । আমাদের এই বনভুমি ছেড়ে যেতে হবে ।
-কি বলেন মহারাজ ? নিজের বনভুমি ছেড়ে যাবো ? আমরা কোথায় যাবো ?
কেউ কেউ বলল
-তাছাড়া আমরা যদি এই এলাকা ছেড়া যাই তাহলে তো এখানকার ইকোলজিক্যাল ব্যালেন্স ভেঙ্গে পড়বে । আমাদের বনভুমি ধ্বংস হয়ে যাবে । সাথে সাথে পুরো দেশের জন্য এটা একটা বিপর্যয় ডেকে আনবে ।
বনের রাজা বলল
-এটা আমিও ভেবে দেখেছি ! এমনিতেই এটা ধ্বংশ হয়ে যাচ্ছে । আর যারা আমাদের কথা চিন্তা করে নি, যাদের কে আমরা এতো দিন ধরে প্রকৃতির হাত থেকে রক্ষা করে আসছি, তারা আমাদের কথা ভাবে নি । আমরা কেন ভাববো ? আমি সব খোজ খবর নিয়েছি । সুন্দর বনের ভারতীয় অংশটুকুতে আমরা বেশ নিরাপদ থাকবো । এই দেশে আমাদের রক্ষার কোন আইন না থাকলেও ভারত দেশে বন রক্ষায় কঠিন আইন আছে । সবাই সবার সব কিছু গুছিয়ে নাও । আমরা এক সপ্তাহ পরে রওনা দিবো ।


পরিশিষ্টঃ
২১১৩ সাল !

শফিক তার ছাত্রীর দিকে বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে ! মেয়েটা দিন দিন পড়াশুনা থেকে কেমন পিছিয়ে যাচ্ছে ! একটা পড়া যদি মন দিয়ে পড়ে !
শফিক নিশুকে জিজ্ঞেস করলো !
-পড়া হয়েছে ?
-জি না স্যার !
-কি পড়া ছিল ?
-বাঘ পরিচিতি !
-কেন পড় নি !
নিশু কোন উত্তর দিল না ! চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো ! শফিক বলল
-আচ্ছা আমি আর একবার পড়িয়ে দিচ্ছি । মন দিয়ে শুনো ! ঠিক আছে !
-জি ! ঠিক আছে !
-প্রথমে আছে রয়েল বঙ্গল টাইগার ! এটা বাঘ প্রজাতির মধ্য সব চেয়ে উল্লেখ যোগ্য প্রজাতি ! এখন পাওয়া যায় কেবল ভারতীয় বনাঞ্চনের একটা অংশে !
-স্যার ! একটা কথা !
-কি ?
-নাম বেঙ্গল টাইগার কিন্তু পাওয়া যায় কেবল ভারতীয় বনাঞ্চালে ! কেন ?
শফিক কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো নিশুর দিকে ! তারপর বলল
-এতো কিছু শুনতে হবে না ! পাওয়া যায় না, এটাই কথা ! এটা মুখস্ত রাখবা ! ঠিক আছে !
-জি আচ্ছা !
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×