somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ বিজয় উৎসব

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক
ভোর হতে এখনও একটু বাকি আছে । চারিপাশে এখনও আলো ফুটে নাই ভাল করে । এই আবছায়া অন্ধকারের ভিতর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনে একটা মাঝারি জটলা দেখা যাচ্ছে ! খুব বেশি মানুষ জন নেই ! দুইটা তিনটা ব্যাক্তিগত মাইক্রবাস আর কয়েকটা সংবাদ মাধ্যমের গাড়ি দেখা যাচ্ছে !

পাঁচটার বাজার অপেক্ষা করছে সবাই । ভোর পাঁচটার সময় লাশ সরবারহ করা হবে জানানো হয়েছে । সেই লাশ নেওয়ার জন্যই অপেক্ষা । সংবাদ মাধ্যমের লোক গুলো মুখে একটা দুঃখি দুঃখি ভাব নিয়ে অপেক্ষা করছে । কিন্তু একটু ভাল করে লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে আসলে কেউ এমন দুঃখি নয় ! সবার চেহারা মাঝে কেমন একটা শান্তি শান্তি ভাব রয়েছে । একটা চাপা আনন্দ কাজ করছে !

কারাগারের চারিপাশে বেশ কিছু পুলিশ আর র‌্যাব মোতায়েন রয়েছে ! তার থেকেও দুরে দাড়িয়ে রয়েছে আরো কিছু মানুষ ! চারিদিকে অন্ধকার রয়েছে তাই দুর থেকে দেখলে লোক গুলো কেমন একটু কুকুরের মত মনে হচ্ছে । ক্ষনে ক্ষনে কুকুর যেমন করে কেঁদে উঠে ঠিক তেমনি আওয়াজ শোনা যাচ্ছে !

কারাগারের দরজার সামনেই একজন মহিলা দাড়িয়ে আছে । সঙ্গে তার এক যুবক ছেলে ! যার লাশ সরবারহ করা হবে সে এই যুবকের বাবা । যুবক বাবার লাশের জন্য অপেক্ষা করছে । কিন্তু তার মনে অন্য চিন্তা !
বাবার লাশ নাকি এই বাংলার মাটিতে কবর দিতে দিবে না !
একটু আগে সে তাদের গ্রামের বাড়িতে ফোন করেছিল । যেখানে তার বাবাকে দাফন করার কথা ছিল । গ্রামবাসি নাকি কিছুতেই কবর খুড়তে দেয় নি ! তাদের একটাই কথা কোন রাজাকারের কবর এই পবিত্র বাংলায় হবে না ! হতে দেওয়া হবে না !
যুবক চিন্তায় আছে । তার বাবা কবর কোথায় হবে ?

এই গেট খুলছে ! কেউ একজন বেরিয়ে আসছে .......


দুই
১৬ই ডিসেম্বর, ২০১৩
তোয়াজ আলীর দ্রুত পা চালাচ্ছে ! দুই ক্রাচে ভর দিয়ে একটা পা নিয়ে হাটতে তার বেশ কষ্ট হওয়ার কথা । কিন্তু তোয়াজ আলী সেই কষ্ট অনুভব করছেন বলে মনে হয় না । কেবল সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন !
কাটাবন থেকে সোরওয়ার্দী উদ্যান ! বেশ খানিকটা পথ । অন্তত একজন খোড়া মানুষের জন্য তো বটেই । অল্প ক্ষনের মধ্যেই তোয়াজ আলীর ঘাম ছুটে গেল !
কিন্তু কিছু করার নাই ! কাটাবনের পর থেকে রাস্তা বন্ধ ! কোন প্রকার যানবাহন যেতে দেওয়া হচ্ছে না ! বিকেল বেলা শাহবাগ আর সোরওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় উৎসব হবে ! তোয়াজ আলী সেই উৎসবে যোগ দেওয়ার জন্যই এসেছেন ! একজন মুক্তিযোদ্ধার বেসে আজকে বিজয় উৎসবে যোগ দিতে এসেছেন !

দীর্ঘ ৪১ বছর তিনি বাসায় বসে বিজয় উৎসব পালন করেছেন ! তোয়াজ আলী স্ত্রী কিছুতেই তাকে বাইরে আসতে দেন নি পায়ের কারনে ! যুদ্ধ তার একটা পা নিয়ে গেছে । তিনি আফসোস করেননি ! দেশের জন্য প্রান দিতে প্রস্তুত ছিলেন সেখানে একটা পা কিছুই না ! কিন্তু যুদ্ধের পরে যখন রাজাকার গুলো নিজের আসে পাশে দেখতেন একটা অন্ধ আক্রসে ফেটে পরতেন ! কাটা পা নিয়ে অবশ্য তার কিছুই করার ছিল না ! কিছু করার ক্ষমতা ছিল না তাদের প্রভাব পতিপত্তির কারনে ! বুকের ভেতরে কেবল একটা চাপা কষ্ট কাজ করতো ! বারবার ভাবতেন এই কারনেই দেশ স্বাধীন করেছিলেন তারা !

কিন্তু আজকের উৎসবে তাকে যে যোগ দিতেই হবে ! আজকে সেই চাপা কষ্টের কিছুটা তো লাঘব হয়েছে ! কিছুটা শান্তি সে পাচ্ছে ! তার সাথে শান্তি পাচ্ছে ৩০ লক্ষ শহীদ !
আজকের এই দিনে ঘরে কি বসে থাকা যায় ? এক বিজয়ের পর আরেক বিজয় পেয়েছে তারা ! এই দিনে কি ঘরে বসে থাকা যায় ?

তোয়াজ আলী আরো জোরে পা বাড়ালেন ! উত্তজনা আর আনন্দের কারনেই হয়তো সামনে পরে থাকা ইট টা আর চোখ এড়িয়ে গেল ! হোঁচট খেলেন ! ঠিক পাকা রাস্তার উপর পড়তে যাবেন তখনই কেউ একজন তাকে ধরে ফেলল ! না ধরে ফেলল হয়তো সোজা পিচের রাস্তার উপরই পড়ে যেতেন !
-আরে চাচা আস্তে ! এতো তাড়াহুড়ার কি আছে ? আরেকটু হলেই তো পড়তেন !
তোয়াজ আলী হাসলেন ! যে তাকে পরার হাত থেকে বাঁচিয়েছে তার দিকে তাকিয়ে দেখলেন ! বয়সে যুবক । গায়ে রং ফর্সা ! চোখে চশমা ! যুবক বলল
-হাসছেন কেন ?
-এমনি হাসি ! আজকা পড়লেও কোন ব্যাথা পাইতাম না বাবাজি !
-কেন ?
তোয়াজ আলী কথা না বলে কেবল হাসলেন ! আনন্দের হাসি !
-কোথায় যাচ্ছেন ?
-ঐ খানে উৎসব হইতাছে না ?
-সোরওয়ার্দী উদ্যানে ?
-হ ! ঐ খানে !
-চলেন আমিও যাচ্ছি ওখানে ! আমার সাথে সাথে চলেন ! আর এতো তাড়াহুড়া করার দরকার নেই ! এখনও অনেক সময় আছে উৎসব শুরু হওয়ার !

তোয়াজ আলী আস্তে আস্তে হাটতে থাকে ! তার পাশে যুবকও হাটতে থাকে ! আজকে যুবকের মনেও অনেক আনন্দ ! আর কত বছর পরে তার মুক্তিযোদ্ধা বাবার আত্মা যেন একটু শান্তি পেয়েছে । একজন রাজাকারের ফাঁসি এই বাংলার মাটিতে হয়েছে !

ঐতো বিজয় ধ্বনি কানে আসছে ! মাইকে গান শোনা যাচ্ছে !
জয় বাংলা !
বাংলার জয় !
হবে হবে হবে ......হবে নিশ্চয়..।



কালকের গল্পটি এডিট করে দিলাম আজকে ! জয় বাংলা !
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০১৩ রাত ১২:৩৯
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×