somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নিশি আর ব্লগার একজন আরমানের কাছে আসার গল্প (আরমানের শহীদ হওয়ার গল্প)

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



চোখ মেলেই নিশির বিছানার উপরে এলোমেলো কম্বলর দিক চোখ পড়লো ! কালো রংয়ের কম্বলটা এখনও কেমন জানি অপরিচিত ! কিছুটা খাট পেরিয়ে নিচে নেমে গেছে !
একটু যেন অপ্রস্তুত হল । উল্টো হয়ে পাশ ফিরতেই সঙ্গে সঙ্গে মনে পরে গেল ও এখন কোথায় আছে ! খাননিকটা লজ্জা পেল নিজের কাছে !
পাশের মানুষটি পাশ নেই ! ওর আগেই ঘুম ভেঙ্গেছে !
বাধরুম থেকে পানি পরার আওয়াজ আসছে !
লজ্জা থেকে এমন নিজের উপর খানিকটা বিরক্ত হল নিশি !
মানুষটা অফিস যাবে আর ও পড়ে পড়ে এখনও ঘুমাচ্ছে ! এটা কোন কথা !
চট করেই বিছানা ছাড়লো ! ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে সাড়ে সাতটার কিছু বেশি বাজে ! গত কালকে নিশি দেখেছে মানুষটা সাড়ে আটটার দিকে বাসা থেকে বের হয়েছে । এখনও বেশ কিচুটা সময় হাতে আছে । যদি চট করে কয়েকটা রুটি বানানো যায় তাহলে গত রাতের রান্না করা মাংসের ঝোল দিয়ে খেয়ে যেতে পারবে !

নিশি আর দেরি করলো না ! পরনের শাড়িটা একটু ঠিক করেই উঠে পড়লো ! রান্না ঘরের দিকে পা চালালো ! এখনও ঘরের কাজে ঠিক মত অভস্ত্য হয়ে উঠে নি ! কি করে হবে ? বিয়েই হল কবে ওর ! মাত্র তো দিন পাঁচেক ! এর ভিতর এতো কিছু হয় ?
বাসায় থাকতে তো ঘুম থেকে উঠেই বেশ বেলা হয়ে যেত !

রান্না ঘরে গিয়ে নিশি আরেক দফা অপ্রস্তুত হল ! জেসন ভাই রুটি বানানোর জন্য আটা বেলছে !
ছি! ছি ! কি লজ্জা !
ঘরে ছোট ভাইয়ের বউ থাকতে বড় ভাই রুটি বানাচ্ছে !
এটা কোন কথা?
নিশি চোখ কপালে তুলে বলল
-আপনি করছেন কি ?
জেসন ভাই হেসে বলল
-কেন ? দেখছো না ?
-আমাকে ডাকবেন না ? আপনি সরুন তো ! জলদি সরুন !
-আরে কোন সমস্যা নাই ! তোমাকে কিছু করতে হবে না ! তার উপর তুমি নতুন বউ !
-হয়েছে । নতুন বউ আর কদিন থাকবে নতুন ! আপনি বের হন ! জলদি বের হন বলছি রান্না ঘর থেকে !
-আরে এই মেয়ের সমস্যা কি ? আমার রান্না ঘর থেকে আমাকেই বের করে দিচ্ছে !
-শুনের জেসন ভাই ! এই বাড়ি আপনার হতে পারে কিন্তু এই রান্না ঘরে কেবল ভাবী আর আমার অধিকার । যেহেতু ভাবী এখন নেই ! সেহেতু এটা এখন আমার দখলে ! আপনি জলদি বের হন বলছি !
জেসন ভাই হাসতে হাসতেই রান্না ঘর থেকে বের হয়ে এল !


-আমার নতুন বউ কি ?
রুটি বানানো প্রায়ই শেষ সেই সময় আরমান রান্না ঘরে উকি দিল !
-ইস ! এতো আহ্লাদ !
-আরে ! রীতিমত কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে কর বউ আমার । একটু আহ্লাদ করবো না ? নিজের বউয়ের সাথে আহ্লাদ করবো না তো কার সাথে করবো ?
নিশি একটু মুখ বাঁকা করলো !
-হুম ! হয়েছে ! টেবিলে বসেন ! আমি নাস্তা নিয়ে আসছি !

আরমান আর জেসন ভাইকে বিদায় দিতে দিতে প্রায় নয়টা বেজে গেল ! যদিও নতুন বউকে এভাবে একা রেখে যাওয়া ঠিক না কিন্তু প্রাইভেট চাকরীতে অনেক বাধ্যবাধকতা থাকে ! তার উপর নিশির এইভাবে হুট করে চলে আসাটা আরমান ঠিক মত ছুটিও নিতে পারে নি অফিস থেকে ! তবে আরমান বলেছে অফিসে কেবল হাজিরা দিয়েই চলে আসবে ! যদিও এই ব্যাপারে নিশির যথেষ্ঠ সসন্দেহ আছে ! অন্তত গত কয়েক দিনের অভিজ্ঞতা থেকে তো তাই মনে হয়েছে !
এই টুকু সময় নিশিকে একা একা থাকতে হবে ! অবশ্য খুব বেশি সমস্যা নাই ! উপর তলায় বাড়িওয়ালারা থাকেন ! নিশির সমবয়সী দুটো মেয়ে আছে ! চাইলেই ওদের ওখানে যাওয়া যাবে অথবা ওদেরকে নিচে ডেকে আনা যাবে !

দরজায় দাড়িয়েই আরমানকে বিদায় দিল ! যতক্ষন আরমান কে দেখা যায় সেদিকেই তাকিয়ে রইলো নিশি !

যখন আবার ঘরে ফিরে এল নিজের মনের ভিতর অদ্ভুদ একটা আনন্দ অনুভুব করতে লাগলো ! কিভাবে স্বপ্ন টুকু বাস্তবে পরিনত হয়ে গেল ঠিক বুঝতেই পারছে না । এমন কি নিশির ঠিক এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না আসলেই ওর পছন্দের মানুষটার জন্যই সকালবেলা নাস্তা বানিয়েছে এবং একটু আগে যাকে অফিসে যাওয়ার জন্য বিদায় দিল সেই মানুষটাকেই ও ভালবাসে কাছে চেয়েছিল !
পাঁচ পাঁচটা দিন কেটে যাওয়ার পরেও মনে হচ্ছে নিশি এখনও স্বপ্ন দেখছে ! একটু পরেই হয় তো সেপ্ন টা ভেঙ্গে যাবে । পরদিন সকাল বেলা ওর বাবা মা ওকে ধরে তাদের পছন্দ মত ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে !


নিশির বিয়ে মোটামুটি ঠিক হয়েই গিয়েছিল ! এখনও পড়ালেখা শেষ হয় নি এই অযুহাতে কিছুতেই নিশির বাবাকে আটকে রাখা সম্ভব হচ্ছিল না ! তারা বাবার কেবল একটাই কথা ! সে কিছুতেই এতো ভাল ছেলে হাত ছাড়া করতে রাজি নন ! বিয়ের পরেও পড়ালেখা করা যাবে । নিশি যখন দেখলো কোন কিছুতেই আর বাবাকে আটকানো গেল না তখনই আরমান কে ফোন দিল !
নিশির মন কিছুটা দ্বিধান্বিত ছিল ! এইভাবে হুট করে বিয়ের কথা বললেই তো যে কেউ বিয়ে করতে পারে না ! মানুষ যতই আবেকের কথা বলুক বাস্তবটা অনেক বেশি কঠিন !
আরমানকে সব কিছু বলার পর আরমান কিছুটা সময় চুপ করে রইলো ! ফোনের ওপাশ থেকে নিরবতা দেখে নিশির মনের ভয়টা যেন একটু বেড়ে গেল । তাহলে কি ....
নিশির ভাবনার শেষ হওয়ার আগেই আরমান বলল
-তুমি কি করতে চাও ?
-আমি জানি না ! আমার মাথায় কিচ্ছু আসছে না ! আমি কিছু ভাবতে পারছি না ! কিন্তু ....
-কিন্তু কি ?
-কিন্তু তোমাকে রেখে অন্য কাউকে বিয়ে করার কথা আমি কিছুতেই ভাবতে পারি না ! কিছুতেই না !
-আচ্ছা ! তুমি আজকের রাতটা আরেকটু ভাবো ! সকাল বেলা আমাকে বল কি করতে চাও ! যদি ঢাকায় আসতে চাও আসতে পারো অথবা যদি বল আমি তোমার ওখানে আসি তাতেও আমি রাজি ! তুমি যা চাইবে তেমন টি হবে ! ঠিক আছে ?

আরমানের কথায় বুকে একটু বল আসলো ! কিন্তু তবুও বাবা মাকে ছেড়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়াটা খুব একটা সহজ ছিল না নিশির জন্য ! পরদিন রাতে নিশির বিয়ের কথা বার্তা পাকাপাকি করতে ছেলে পক্ষ আসবে ! রাতে খুব ভাল ঘুম আসে নি চিন্তায় । ভোর রাতের দিকে একটু তন্দ্রার মত এসেছিল কিন্তু সেটও খুব বেশিক্ষন স্থায়ী হয় নি ! বার বার মনে হচ্ছিল ওর কোথাও যাওয়ার কথা । কিন্তু ওর ট্রেন টা মিস হয়ে যাচ্ছে !
সকাল বলে ঘুম থেকে উঠেই কেবল একটা কথাই মনে হল আরমান কে ছাড়া কিছুতেই চলবে না ওর ! কিছুতে না !
আরমান কে ফোন দিয়ে বলল
-আমি তোমার কাছে আসছি !
-একা একা আসতে পারবে ? কাউকে সাথে করে নিয়ে আসতে পারবে ?
নিশি বলল
-হুম ! পারবো না কেন ? আব্বা কে বলি ? আব্বাকে বলি যে আব্বা আমি বাড়ি থেকে পালিয়ে যাচ্ছি ! আপনি আমাকে একটু এগিয়ে দেন তো !
-আরে তুমি রেগে যাচ্ছ কেন ?
-গাধার মত প্রশ্ন করলে রাগবো না ?
-আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে ! রেগো না ! টাকা আছে তোমার কাছে ?
-না ! খুব বেশি নেই !
-চিন্তা নেই ! আমি পাঠাচ্ছি ! তুমি কিন্তু এক কাপড়েই বের হয়ে আসবে ! কেমন ?
-না ! আমি তো বিরাট লাগেজ রেডি করে রেখেছি ! তুমি এই রকম কথা বার্তা কেন বলছো ?
-আচ্ছা ! বাবা ! রাগ কর না ! মাথা ঠান্ডা রাখো !

নিশির সকাল বেলা স্বাভাবিক ভাবে নাস্তা খেল ! যদিও ওর ভিতরটা উত্তেজনয় কাঁপছিল ! নিজেকে কিভাবে নিয়ন্ত্রন রাখলো নিশি নিজেই জানে !


কলিং বেল বেজে উঠলো ! নিশির চিন্তার মাঝে ছেদ পড়লো !
নিশির ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো আধা ঘন্টাও হয় নাই !

-তুমি ?
-হুম !
-তোমার না অফিস যাওয়ার কথা !
-নতুন বউকে রেখে কিভাবে অফিস যাই বল ? তার উপর এই দেখো পথে মাঝে ইয়া বড় একটা ইলিশ মাছ পেলাম ! তুমি তো আবার ইলিশ মাছ খুব পছন্দ কর তাই না ?
নিশি তাকিয়ে দেখে আরমানের হাতে একটা পুটি মাছ সাইজের ইলিশ মাছ !
নিশি বলল
-এই টা তোমার ইয়া বড় !
আরমান অবাক হওয়ার ভান করে বলে
-আরে কি বল ? ঢাকা শহরে এটাই হল সব চেয়ে বড় ইলিশ মাছ ! এই টা তোমার শহর না যে ইলিশ মাছের সাইজ ইয়া বড় হবে !
-বুঝলাম ! তা জনাব এই ভাবে অফিস কামাই দিলে চলবে ? চাকরি চলে গেলে উপায় আছে ? আপনার কি মনে নেই এখন আর আপনি একজন আরমান নাই । দুইজন আরমান হয়েছেন !
-প্রিয় বধু । কোন চিন্তা নাই ! তোমার জন্য সব কিছু পরিত্যাগ করে দিবো !
-হয়েছে ! আসেন । আপনাকে আর ডায়লগ বাজি করতে হবে না ! ভিতরে আসেন !
নিশি একটু রাগ দেখাতে চায় কিন্তু মনে মনে খুশি হয় অনেক বেশি ! গত চার দিনেও আরমান ঠিক একই কাজটা করেছে । অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হয় কিন্তু মাঝ পথেই আবার চলে আসে । পাগল একটা !


বাসা থেকে বের হতে খুব একটা অসুবিধা হয় নি নিশির । কেবল যখন বাসের টিকিট কাটছিল তখন একটু বুক কাঁপছিল ! বাসটা যাবে বাজারের উপর দিয়ে ! সেটার জন্যই ভয় করছিল । কোন ভাবে যদি নিশির বাবা টের পেয়ে যায় যে মেয়ে পালিয়ে যাচ্ছে তাহলে নিশিকে আর আস্ত রাখবে না !
যতক্ষন না বাস বাজার ছেড়ে যায় ততক্ষন নিশি যেন ঠিক মত নিঃশ্বাস নিতে পারছিল না ! নিজেকে স্বাভাবিক রাখার হাজারটা চেষ্টা করছিল ! কিন্তু কেউ যদি ওকে একটু ভাল করে দেখত নিশ্চিত বুঝে ফেলতো এই মেয়ে নিশ্চই পালিয়ে যাচ্ছে !
বাস বাজার ক্রস করার পরেও নিশির ভয় কাটে নি ! যতবার বাসটা একটু থেমেছে কিংবা যতবার একটু ব্রেক করেছে ততবার নিশির বুঝের ভেতরটা কেঁপে উঠেছে । বারবার মনে হয়েছে ই বুঝি ওর বাবা চলে আসলো !
বাসা থেকে বের হওয়ার সময় একটা চিরকুট রেখে এসেছে সে ! ঐ টা হাতে পাওয়ার পর বাসায় কি অবস্থা হবে ভাবতেই হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে নিশির !
সারা ক্ষন আরমানের সাথে কথা হচ্ছিল । নিশি নিজেও বুঝতে পারছিল যে আরমান নিজেও চিন্তিত ! সব কিছুর উপরে নিশির নিরাপত্তা নিয়ে বেশি চিন্তিত ছিল !
কিন্তু কিছু করার ছিল না ! আরমান ঢাকা থেকে এসে যে ওকে নিয়ে যাবে এমনও উপায় ছিল না ! একে তো হাতে সময় ছিল না তার উপর এতে রিস্কটা আরও একটু বেশি ছিল !

সব কিছু প্রস্তুতই ছিল ! কিন্তু তবুও বাস থেকে নেমে যতক্ষন না প্রিয় মানুষটিকে দেখতে পেল ততক্ষন নিশির মনে শান্তি ছিল না ! বাস থেকে নেমেই দেখলো আরমান দাড়িয়ে আছে পাঞ্জাবী পরে ! এতো টেনশনের মাঝেও নিশির হাসি পেয়ে গেল !
বাহ !
বিয়ে করার জন্য একেবারে প্রস্তুত !
নিশির একবার মনে হল বলে যে শেরওয়ানী পরলে ভাল হত ! কিন্তু বলে নি ! নিশির খুব ইচ্ছা করছিল আরমান কে একবার জড়িয়ে ধরতে ! কিন্তু এতো লোকজনের মাঝে কি জড়িয়ে ধরা যায় ?


নিশির রান্নার প্রস্তুতি নিচ্ছে এমন সময় আবার কলিংবেল বেজে উঠলো ! এরই মাঝে আবার কে রান্না ঘর থেকেই দরজাটা কাছে তাই নিশি নিজেই বেরিয়ে এল দরজা খুলতে ! দরজা খুলেই ওকে আরেক দফা অবাক হতে হল !
এতো গুলা মানুষ দরজার সামনে !
সবার সামনে দাড়িয়ে জেড়িফ ! নাটকের মডেলদের মত চেহারা আর থাকেও সব সময় পরিপাটি হয়ে ! বিয়ের দিনও জেরিফ এসেছিল এই রকম সেজে গুজেই ! তার পরে অভি দারিয়ে ! হাসি মুখে বলল
-ভাবী কেমন আসেন ? চলে এলাম জ্বালাতে !
তারপরেই কাভা ভাই ! হাতে এক বড় একটা বাজারের ব্যাগ !
সদা হাস্যজ্জল মানুষ !
নিশিকে দেখেই একটা মিস্টি হাসি দিলেন ! বললেন
-কি ব্যাপার আরমানের বউ ! সব ঠিক তো ?
নিশি হেসে বলল
-কি ব্যাপার ? আপনি একেবারে বাজার নিয়ে হাজির হয়েছেন !
-আনবো না ? বাসায় কি রান্না হবে সেটা তো রাধুনীর চিন্তার বিষয় ! কেন সেদিন আমার রান্না খাও নাই ?
-খেয়েছি তো !
-আজকেও চলে এলাম ! আজকেও আমরা পিকনিক করবো ! তাই একেবারে বাজার নিয়েই হাজির হলাম !
সবার পিছনে কান্ডারী ভাই আর কুনো ব্যাঙ ভাই ! যথারীতি নিশি কে দেখে একটা হাসি দিল !


আসলেই সেদিন সব কিছু এরাই করেছে । আরমানের আসে পাশের মানুষ গুলো সেদিন আরমানের কাছেই ছিল ! কাভা ভাই সবার জন্য রান্নায় ব্যস্ত ছিল ! এতো গুলো মানুষ জন্য রান্নার যোগার করা তো চাট্টি কথা না !



বাস থেকে নামতে নামতে প্রায় রাত ১০ টা ! ওখান থেকে সোজা আরমানে বাসায় ! নিশি এক কাপড়েই চলে এসেছিল এদিকে বিয়ের জন্য সব কেনা কাটা সাহায্য করেছে কান্ডারী ভাই আর আর কান্ডারী ভাবী !
নিশিকে বউয়ের সাজে ভাবীই সাজিয়েছিল !
বিয়ের সময় কাছের মানুষ গুলোর পাশে থাকা টা জরুরী । কিন্তু ঐ দিন নিশির কটা বারেও মনে হয় নি যে এক দল অপরিচিত মানুষের মাঝে সে রয়েছে । বারবার মনে হয়েছে খুব কাছের একদল মানুষই তার পাশে রয়েছে !
বিয়ে হতে হতে প্রায় ১২ টা বেজে গেল ! জেসন ভাই সব কিছুর তত্ত্বাবোধায়নে ছিলেন ! সব কছু ঠিক মত হচ্ছিল কি না এটা দেখছিল ! বারবার অভিকে ধমক দিচ্ছিল ! এই এটা কর ! ওটা কর ! এতো দেরি লাগে ?


নিশি দরজা বন্ধ করতে যাবে তখনই সাইকেলে টুংটাং আওয়াজ কানে আসলো ! ফিরে তাকিয়ে দেখে মাগুর ভাই !
এই মানুষটাও সেদিন অনেক মজা করছিল ! এই রকম মজার মানুষও হতে পারে ! নিশির সাথে এমন ভাবে কথা বলছিল যেন তিনি কত দিনেরই না চেনা ! হাসির হাসির কথা বলছিল যেন নিশির মুখের টেনশন টা কমে যায় !
টুংটুাং বেল বাজিয়ে মাগুর ভাই বলল
-আমাকে রেখেই দরজা আটকে দিচ্ছ ? এটা কিন্ত ঠিক না !
-আরে কি বলেন ! আসুন ! আপনাকে রেখে কিভাবে দরজা আটকে দিবো ?
নিশি যখন দরজা আটকে ঘরে ঢুকলো ততক্ষনে ঘরের ভিতর একটা হইচই শুরু হয়ে গেছে ! আরমানের সাথে আগে যখন কথা বলতো তখন আরমান প্রায়ই তাদের এইরকম আড্ডার কথা বলত ! আজকে তার ভাল ভাবে উপলব্ধি করা যাচ্ছে !
নিশি এক গুচ্ছ ভাললাগা নিয়ে কাছের মানুষ গুলোকে দেখতে লাগলো ! এই মানুষ গুলো আজকে এখানে ওর জন্য ! ভাবতেই নিশির চোখ ভিজে উঠলো আনন্দে !



নিশি যখন বাসর রাতে ঢুকলো তখন বেশ রাত হয়ে গেছে ! ভাবী ওকে সাজিয়ে গুছিয়ে চলে গেল ! আস্তে আস্তে কেবল জেসন ভাই বাদ দিয়ে সবাই যে যার বাসায় চলে গেল ! আরমান যখন বাসর রাতে ঘুকলো তখন নিশির শরীর বেশ ক্লান্ত লাগছে । কিন্তু তবুও বাসর রাতে প্রত্যেকটা মেয়ের জীবনের জন্য একটা বিশেষ রাত । নিশি সেই সময়টার জন্য কত দিন ধরে না অপেক্ষা করেছে !
আরমান যখন নিশির সামনে এসে বসলো তখন নিশির বুকের মাঝে কেমন করে উঠলো ! এতো পরিচিত মানুষ তবুও কেন এমন লাগছে !
নিশি আর কিছু ভাবতে পারছিল না ! সবকিছু যেন স্বপ্ন মনে হচ্ছিল ! আজকে রাতে ওর অন্য একটা ছেলের সাথে বিয়ে কথা পাকা হওয়ার কথা ছিল আর এখন সে তার প্রিয় মানুষটির সামনে বসে আছে ।
বধু সেজে !
এটা কি শুধুই স্বপ্ন নাকি সত্যি হচ্ছে !
নিশিই আগে কথা বলে উঠলো ! বলল
-তোমাকে একটু ছুয়ে দেখবো ?
আরমান হেসে বলল
-কেন বিশ্বাস হচ্ছে না ?
-উহু ! এভাবে তোমাকে পেয়ে যাবো কোন দিন ভাবি নি !
-পেয়ে গেছো তো ?
তারপর আরমান আবৃতি করতে লাগলো

প্রিয় বালিকা,
যাবে কি আমার সাথে?
দেবে কি অনেকটা পথ পাড়ি?
যতোটা পথ পাড়ি দিয়ে
ছুঁতে চেয়েছি তোমায়
অন্তত ততোটা পথ !

প্রিয় বালিকা,
ভালোবাসবে কি আমায়?
যতোটা আমি বাসি তোমায় !
ঠিক ততোটা না হলেও তার অর্ধেক !

প্রিয় বালিকা,
আমি তোমার ভিঞ্চি হবো।
তুমি কি ক্যানভাস হবে?
তুমি আমার ক্যানভাস হলে
সেখানে আঁকবো আমার মোনালিসাকে !

প্রিয় বালিকা,
যদি ভালোবাসো তবে হাতটা বাড়াও
আর যদি নাও বাসো তবুও হাতটা বাড়াও
আমি একবার তোমার ও আঙ্গুল ছুঁয়ে দিতে চাই।

প্রিয় বালিকা,
তোমার ঐ আঙ্গুলেই
আমার শেষ ইচ্ছেদের বসবাস।

কারণ
এরপর হয়তো কোন এক ভোরে
সবাই আবিস্কার করবে নশ্বর আমাকে !

কিন্তু আমি বেঁচে রইবো
তোমার মাঝেই
অনন্তকাল !



---------

জানি না গল্পটা এমন হয়েছিল কি না ! কিন্তু মোটামুটি নিশ্চিত যে এমন কিছু হয়েছিল ! আরমান তার প্রিয় বালিকাকে পেয়ে গেছে !
এই তো কদিন আগে আরমান আমার ব্লগে এসে এসে গল্প পড়তো আর কমেন্ট করতো ! আমি কোন দিন ভাবতেই ভারি নি আমার গল্পের মত করে সে তার নায়িকাকে পেয়ে যাবে !
আমার থেকে এক বছরের জুনিয়র হয়ে বদ পুলা আমার আগে বিয়ে করে ফেলল ! তাও বিয়ে করবি কর, কাকে বিয়ে করলো ?
দুঃখের বিষয় আরমানের বউয়ের নিশি !
দুনিয়াতে বদ পুলা আর মেয়ে খুইজ্জা পাইলো না !
শুনো আরমান জলদি বউয়ের নাম চেঞ্জ কর ! আমি কিন্তু আমার গল্পের নায়িকার নাম বদলাবো না ! সুতরাং সাবধান !


আপনারা সবাই আরমান এবং আরমানের বউ (নট নিশি, এই নাম কেউ মুখে আনবা না) এর জন্য দোয়া করবেন ! যেভাবে ভালবাসা দুজন কে কাছে এনেছে সারাটা জীবন যেন এই ভালবসায় দুজন কাছাকাছি থাকে !




বিঃদ্রঃ বিয়ে উপলক্ষ্যে হেভি খানা পিনার আয়োজন আশা করতাছি ! আরমান জলদি ইনতেজাম কর ! দেরি করলে কিন্তু খবর আছে !


সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ৯:৫১
৪৭টি মন্তব্য ৪৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শ্রমিক সংঘ অটুট থাকুক

লিখেছেন হীসান হক, ০১ লা মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪৮

আপনারা যখন কাব্য চর্চায় ব্যস্ত
অধিক নিরস একটি বিষয় শান্তি ও যুদ্ধ নিয়ে
আমি তখন নিরেট অলস ব্যক্তি মেধাহীনতা নিয়ে
মে দিবসের কবিতা লিখি।

“শ্রমিকের জয় হোক, শ্রমিক ঐক্য অটুট থাকুক
দুনিয়ার মজদুর, এক হও,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×