somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাবিলা ও তার আবীর ভাইয়ার গল্প

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাবিলা একজন একজন 'অ' সম্বলিত মানুষ । 'অ' দিয়ে গঠিত অমনযোগী, অশান্ত, অস্থির, অর্ধপাগল ইত্যাদি কতিপয় শব্দের সাথে নাবিলার খুব ভালো মিল রয়েছে । আসলে এরা নাবিলারই একটা অংশ ।

নাবিলা মোটেও একজন যুক্তিবাদী মানুষ না । কোনো কিছুতেই যুক্তি দেখাতে পারে না । আর কেউ একজন যুক্তি দেখালে বিরক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে ভাবতে থাকে মানুষ গুলো কেন যুক্তি দেখায় ! যুক্তি মত কাজ করবে রোবট ! মানুষ কেন যুক্তি দিয়ে চলবে ! আশ্চার্য !

কিন্তু এখন সামনে বসা মানুষটাকে নাবিলার মোটেই বিরক্ত লাগছে না ! যদিও মানুষটা বেশ কিছুক্ষন ধরে নাবিলাকে বিভিন্ন যুক্তি দেখানোর চেষ্টা করছে, তবুও নাবিলা তার দিকে তাকিয় আছে ! খুব যে বেশি কিছু শুনছে সেটা কিন্তু না ! কিন্তু এমন একটা ভাব করে আছে যেন খুবই মনযোগী শ্রোতা সে ! তাকে যেটাই বলা হবে সে সেইটা মন দিয়ে শুনবে !
-এই !
-হুম !
-তুই শুনছিস ?
-হুম ! হুম ! শুনছি তো ! অবশ্যই শুনছি ! আপনি একটা কথা বলবেন আর আমি শুনবো না এটা কি হয় নাকি ! তারপর বলেন ?

আবীর কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো নাবিলার দিকে ! মেয়েটার মতি গতি ইদানিং কেমন যেন হয়ে গেছে ! কেমন যেন উল্টাপাল্টা আচরন করছে ! বলল
-কিন্তু আমার তো মনে হচ্ছে না যে তুই মন দিয়ে শুনছিস না !
-জি ! আপনি ঠিকই ধরেছেন ! আপনার কথা আমি শুনছি না ! আপনি এতো কথা বলতে পারেন, না ? আপনার গার্লফ্রেন্ড আপনাকে সহ্য করে কিভাবে বলেন তো ! আমি আপনার গার্লফ্রেন্ড হলে ..।
নাবিলা কথা টা শেষ করলো না !

নাবিলা সকাল বেলা আবীর ভাইয়াকে ফোন করে এখানে নিয়ে এসেছে । কেন নিয়ে এসেছে সে নিজেই জানে না ! বাড়ি থেকে কিছু প্লান করে বের হয় নি ! তবে এখন কিছু একটা পাগলামো করতে মন চাইছে । এবং নাবিলা নিশ্চিত ভাবেই জানে নাবিলা যে পাগলামিই করতে চাইবে কি না তার সামনে বসা এই মানুষটিও তাই করবে ! এইজন্য এই পাগলা টাইপের মানুষটাকে এতো পছন্দ !

নাবিলার এখন সেই দিনটার কথা পরিস্কার মনে আছে যেদিন এই পাগলা মানুষটার সাথে তার প্রথম দেখা হয়েছিল !
ওরা সেদিন এসেছিল শাহবাগে । কোন কাজে না ! এমনি ! মাঝে মাঝেই নাবিলা আর ওর বন্ধুরা মিলে স্কুল ফাঁকি দিয়ে চলে যায় এখান সেখানে । নাবিলা রাস্তার ফুটপাতের একটা বইয়ের দোকানে বই দেখছিল তখনই কে যেন পাশ থেকে বলে উঠলো
-এই মেয়ে একদম নড়বে না !
নাবিলা প্রথমে বুঝতে পারে নি যে কথাটা ওকেই বলা হচ্ছে । ওর বান্ধবীরা পিছনে একটা ফুচকার দোকানে বসে আড্ডা দিচ্ছে !
কন্ঠটা আবার ধমকে উঠলো
-এই মেয়ে বললাম না, না নড়তে !
এইবার নাবিলার মনে হল যেন কথাটা ওকেই বলছে কেউ !
তাকিয়ে দেখছে ওর দিকে ক্যামরা তাক করে এক উস্কোভুস্কো চুলওয়ালা ছেলে হাটু গেড়ে বসে আছে ছবি তোলার জন্য প্রস্তুত !
নাবিলা কেন জানি কিছু বলতে পারলো না ! এই ভাবে যে কাউকে ছবি তুলতে দেওয়াটা ঠিক না কিন্তু নাবিলা সব সময় নার্ভাস থাকে ! এই যে আজকে স্কুল পালিয়েছে সেটাও ও নিজের ইচ্চায় করে নি ! নাবিলা একা একা স্কুল পালাবে এটা কোন দিন হতেই পারে না ! ওর বান্ধবীরা ওকে প্রায় জোর করে নিয়ে এসেছে ! ও কিছুতেই মানা করতে পারে নি ! এখনও ছেলেটা কয়েকটা ছবি তুলল ! তারপর কিছু যেন হয় নি এমন একটা ভাব করে চলে গেল ! নাবিলা বোকার মত তাকিয়ে রইলো কেবল !
অন্য কেউ হলে এখন কি করতো কে জানে ?


-তাহলে কি করবো এখন ? আর আমাকে এখানে ডেকে আনলি কেন ?
নাবিলা কিছু না বলে আবারও কিছুটা সময় আবীর ভাইয়ার দিকে তাকিয়েই রইলো ! কিছু একটা বলতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না !
-হাদার মত তাকিয়ে থাকবি না !
-ভাল ভাবে কথা বলেন ! এইটা কি ভাষা ?
-আরে এইটা তো ভাল ভাষা ! বোকা ! তোকে বোকা বলতে পারবো না ?
-না পারবেন না !
-তাহলে কি বলবো ?
-ভাল বলবেন !
-আচ্ছা ঠিক আছে ? ফোন করে বললি কি জানি সমস্যা হয়েছে ! এই জন্য দেখা করতে চাস ! সেই সমস্যার কথারই তো বললি না !
-কোন সমস্যা হয় নি ! এমনি দেখা করতে মন চাইলো তাই দেখা করেছি ! খুশি ? এখন চুপ চাপ বসেন তো আমার পাশে !
-এই তোর কথা বার্তা কেমন জানি লাগছে ! তুই আমার গার্লফ্রেন্ড না বুঝলি ! আর আমিও তোর বয়ফ্রেন্ড না !
-তো আপনি আমার কি শুনি ?
-মানে ?
-মানে আপনার সাথে আমার সম্পর্ক কি ? আমি ফোন করলাম আর আপনি দৌড়ে কেন চলে এলেন ?
নাবিলা লক্ষ্য করলো আবীর ভাইয়ার মুখের কথা আটকে গেল । কিছুটা চিন্তিত হয়ে সে নাবিলার দিকে তাকিয়ে আছে । এই মুহ ভঙ্গিটা নাবিলার খুব ভাল করে পরিচিত ! আবীর ভাইয়া যখনই কোন বিষয় নিয়ে চিন্তায় পড়ে যান বা যখন কোন কিছুর উত্তর খুজে পান না তখনই এমন মুখ করে তাকিয়ে থাকেন !
নাবিলার এই সময়টা বড় মজা লাগে !

নাবিলা এমনিতেই কন্ফিডেন্স ছাড়া একটা মেয়ে । যুক্তি তর্ক দিয়ে কাউকে আটকাতে পারে না এমন কি কারো সাথে জোর গলার ঠিক মত কথাও বলতে পারে না ! মানুষের কথায় তাকে বার বার আটকে যেতে হয় কিন্তু এই মানুষটার কাছে আসলেই নাবিলা কেমন জানি বদলে যায় ! মুখ দিয়ে কথার খই ফুটতে থাকে ! আর আবীর ভাইয়াও তাকে সেই রকম প্রশ্রয় দেয় !
মাঝে মাঝে নাবিলার মনে হয় ও নিজে যেমন অ সম্বলিত একটা মানুষ তেমন আবীর ভাইয়াও ! পড়া লেখার করে কিন্তু কি করে সে নিজেই জানে না ! মাথায় লম্বা চুল আর গলায় একটা ক্যামেরা নিয়ে সারা দিন ঘুরে বেরায় ছবি তোলার জন্য ! কোথাকার কি ছবি তুলে বেড়ায় কে জানে ! আর কথা বার্তাও কেমন যেন ! অপরিচিত মানুষের সাথে এমন ভাবে কথা বলে যেন কত দিনের পরিচয় !

প্রথম দিনের ছবি তুলে গায়েব হয়ে যাওয়ার পরে বহুদিন আবীর ভাইয়ার সাথে নাবিলার দেখা হয় নি ! প্রায় চার মাস পরে আবার একদিন দেখা হল টিএসসিতে ! সেদিন সনাতন ধর্মালম্বিদের রথ যাত্রার কি একটা অনুস্ঠান হচ্ছিল ! নাবিলা বসে ছিল ডাসের এক কোনায় ! ওর আর বন্ধুদের আসার কথা ছিল তাদের জন্য ! এমন সময় পাশে ধুপ করে একটা ছেলে বসে পড়লো !
প্রথমে নাবিলা একটু ভয় পেলেও পরে ছেলেটাকে চট করেই চিনে ফেলল ! আরে সেদিনের সেই ছেলেটা !
ছেলেটা পরিচিত ভঙ্গিতে বলল
-আরে, আপনি ? কোথায় ছিলেন এতদিন ? আপনাকে খুজছিলাম ।
-কেন খুজছিলেন ?
-আপনার নাম জানার জন্য ।
-আচ্ছা,
-আপনার নামটা কি ?
-নাবিলা । আপনার ?
-আবীর । আপনি আমার চেয়ে ছোট, আপনাকে আমি তুই ডাকতে পারি ? আমি আমার ছোটদের তুমি বা আপনি ডাকতে পারি না । সরাসরি তুই । আমার গার্লফ্রেন্ড আমার সমবয়সী, তাই ওকে তুমি ডাকি । ছোট হলে ওকে ও তুই ডাকতাম ।
-ওওও । হুম বুঝলাম ।
-শোন, আমি তোকে তুই ডাকবো, আর তুই ভাইয়া ডাকবি । আচ্ছা এই যে তোকে তুই ডাকলাম রাগ করেছিস ?
-হুম, আপনি আমাকে তুই ডাকতে পারেন না । আপনার সাথে এটা ২য় দেখা, আপনি আমার পরিচিতও না । অপরিচিত একজন কে এই ভাবে তুই ডাকা যায় না !
ছেলেটা মানে কিছু শুনলো বলে মনে হল না ! নাবিলার দিকে তাকিয়ে বলল
-আজকে আমি উঠি । ভাল থাকিস ! টা টা ।

নাবিলাকে অবাক করে দিয়ে আবীর চলে গেল ! সেদিন রাত ভারে নাবিলা আবীর ভাইয়ার কথা ভবালো ! কেন ভাবলো সে নিজেই জানে না !

তারপর টুক টাক করে আবীর ভাইয়ার সাথে দেখা হতেই থাকলো !


-কি হল বললেন না ?
-জানি না !
নাবিলা হাসলো !
-আমি কিন্তু জানি !
-কি জানিস শুনি !
-তা তো আপনাকে বলা যাবে না ! আপনি খুজে বের করেন !
আবীর ভাইয়াকে আবারও খানিকটা চিন্তিত মনে হল ! নাবিলার বেশ মজা লাগছে । আগে নাবিলা কোন কথাই বলতে পারতো না ! এখন পটপট করে কথা বলতে পারে ! সেই স্কুলে থাকতে আবীর ভাইয়ার সাথে তার পরিচয় ! এখন কলেজে উঠেছে । কদিন পরে কলেজ পাস করে ভার্সিটিতে উঠবে ! স্কুলে থাকতেই আবীর ভাইয়ার সাথে নিয়মিত যোগাযোগ হত ! বিশেষ করে যখন এসএসসি পরীক্ষার শুরুর আগ দিয়ে ! খুব বেশি ভাল ছাত্রী সে কোন কালেই ছিল না কিন্তু পড়া শুনা করতো নিয়মিত ! কিন্তু নাবিলার প্রধান সমস্যাই ছিল নিজের উপর আত্মবিশ্বাসের অভাব ! সব সময় মনে হত ওকে দিকে কিচ্ছু হবে না ! ও জীবনে কিছু করতে পারবে না ! এই বিষন্নতায় ওর দিন কেটে যেত ! এ সময় আবীর ভাইয়া ওকে নানান কথা বলতো ! নিজের জীবনের কথা বলতো ! আবীর ভাইয়ার জীবনের কথা শুনতে শুনতে নাবিলার প্রায় মনে হত যেন ও নিজের জীবনের কথাই শুনছে !
আস্তে আস্তে নাবিলা লক্ষ্য করতে শুরু করলো যে আবীর ভাইয়ার সঙ্গ ওর বেশ ভাল লাগছে ! শুরু থেকে নাবিলার সিদ্ধান্তহীনায় ভুগতো ! নিজের সিদ্ধান্তের জন্য অন্যের উপর নির্ভর করতে হত ! আবীর ভাইয়ার সাথে পরিচয় হওয়ার পর থেকে সে সব কিছুতেই আবীর ভাইয়ার উপর নির্ভর করা শুরু করে । আবীর ভাইয়া তাকে সলিউশন দেয় সব প্রবলেমের । তিনি নাবিলাকে ঢাকার বিভিন্ন জায়গা ঘুরে দেখায়, ফটোগ্রাফি শিখায়, গিটার বাজানো শিখায়। যখনই নাবিলার মন খারাপ হচ্ছে, নাবিলার মন ভালো করার জন্য উদ্ভট কাজকর্ম করছেন তিনি ।

নাবিলার সেদিন কলেজের একটা ইনকোর্স পরীক্ষার রেজাল্ট দিয়েছে । নাবিলার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে ! এই নিয়ে নাবিলার মন খারাপ ! নাবিলা কলেজ থেকেই আবীর ভাইয়াকে ফোন দেয় ! বলে তার মন খারাপ ! মনে হচ্ছে এখনই ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে মরে যায় !
ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আবীর ভাইয়া কলেজে হাজির! ওকে ফোন দিয়ে নিচে নামিয়ে আনলো ! তারপর ওকে নিয়ে রিক্সায় চড়লো ! ও ভেবেছিল হয় তো কোথাও ওকে বেড়াতে নিয়ে যাবে ! কিন্তু নাবিলা কে নিয়ে গেল কমলাপুর রেল স্টেশন ছাড়িয়ে আরো ভিতরে ! রেল লাইন ধরেই দুজন হাটতে লাগলো ! বেশ খানিকটা দুরে আসার পর আবীর ভাইয়া বলল
-আমরা এখানে অপেক্ষা করি ! কেমন ?
নাবিলা কিছু বুঝতে পারছিল না ! না বুঝতে পেরে বলল
-কিসের জন্য ?
-বারে তুই না বললি ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে মরে যেতে ইচ্ছে করছে ! তাই তোকে এখানে নিয়ে এলাম ! এখানে তুই চাইলেই নিজের মনের ইচ্ছা পুরন করতে পারবি ! অবশ্য বাংলাদেশের ট্রেনের যা অবস্থা ! কখন আসে ঠিক নাই ! চিন্তা করিস না । সাথে করে খাবার নিয়ে এসেছি । খিদে লাগলে খেতে পারবি !
নাবিলা কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারলো না ! নাবিলার মন খারাপ কোথায় একটু শান্তনা দিবে তা না ! সে এখন ইয়ার্কী মারছে ! কিন্তু নাবিলা রাগ করতে গিয়ে ফিক করে হেসে দিল ! কেন দিল সে আজও বলতে পারবে না !


-আচ্ছা এতো চিন্তা করতে হবে না ! চলেন কোথা থেকে ঘুরে আসি !
-কোথায় যাবি ?
-চলেন যে কোন জায়গায় ! এক জায়গায় গেলেই হল !
-শিশু পার্কে যাবি ?
-আমি শিশু না !
-আরে শিশু পার্কে কি কেভল শিশুরা যায় নাকি ? খোজ নিয়ে দেখ শিশু পার্কে শিশু থেকে বড়রা বেশি যায় !
-নাহ ! যাবো না !
-কোথায় যাবি ?
-চলেন কমলাপুর স্টেশনে যাই !
-ওখানে কেন ?
-চলেন ! আমরা না হয় ওখানে যাই ! আপনি আগে ঐ জায়গায় নিয়মিত যেতেন ছবি তুলতে ! আজকে চলেন !
নাবিলা এক প্রকার জোর করে কমলাপুর যাওয়ার বাসে উঠে বসল !
আবীরের আজকে কেমন যেন লাগছে ! মেয়েটার আচরনও কেমন জানি লাগছে ! এই মেয়ের সমস্যা কি ? আজকে নাবিলার মন খুব বেশি খারাপ ? সেদিন নিশির কথা ওকে ওভাবে বলাটা ঠিক হয় নি !
নিশি !
আবীর মনে মনে একটু বিষন্নতার হাসি হাসলো ! যার কোন অস্তিত্বই নাই তাকে নিয়ে এতো গল্প না করলেই কি না !


নাবিলার মন আজকে মোটেই খারাপ না ! বরং গত সপ্তাহে নিশির কথা যখন আবীর ভাইয়ার মুখ থেকে শুনে তখন নাবিলার মোটেই খারাপ লাগে নি ! বরং ভাল লেগেছে !
নাবিলার অন্য সব গুন না থাকলেও একটা গুন ঠিক আছে । নাবিলা মানুষের ভিতরটা চট করে বুঝ ফেলে । কে কেমন আর কে কেমন আচরন করে তা নাবিলা ধরতে পারে খুব সহজেই ! আবীরর ভাইয়াকেও সে অনেক আগেই বুঝে নিয়েছে ! একটা ব্যাপার নাবিলা ভাল করেই বুঝে নিয়েছে আবীর ভাইয়া উপর থেকে যেমন দেখায় ভিতর আসলে তেমন না ! সারাক্ষন যেমন একটা ছন্নছাড়া ভাব নিয়ে থাকে ভিতরে ভিতরে একেবারেই অন্য মানুষ ! আর প্রায়ই যে তা গার্লফ্রেন্ডের কথা বলে এমন কেউ আসলে কেউ নেই ! অন্তত বাস্তব জীবনে ! এটা নাবিলা মোটামুটি শিওর হয়ে নিয়েছে !
নাবিলার সাথে আবীর ভাইয়া কত বার দেখা করছে কিন্তু আজ পর্যন্ত একটা দিনও সে নিশি আপুকে আবীর ভাইয়ার সাথে দেখে নি এমন কি ওর সাথে থাকা অবস্থায় কোন দিন ফোনও আসে নি তার ।
এই টা কেন ?
তার উপর আবীর ভাইয়া নিশি আপু কে নিয়ে গল্প গুলো করে সেই গুলারও কোন আগা মাথা নেই ! একদিন একদিকে যায় তো অন্য দিন অন্য দিকে ! নাবিলার বুঝতে একটুও অসুবিধা হয় নি ! হয় তো একটা সময়ে ছিল কিন্তু এখন নেই নাবিলা একবারে নিশ্চিত ! এটা জানার পরেই নাবিলার কেন জানি মনটা বড় বেশি অস্থির হয়ে থাকে ! ও এইটা কিছুতেই বুঝতে পারে না একটা মানুষ কিসের জন্য এমন টা করে ! কেন নিজেকে কল্পনার কোন প্রেমিকার সাথে আবদ্ধ রাখে ! বাস্তবে কে তার কেউ নেই ! নাকি বাস্তবে সে বড় একা ! এই জন্য মন হয় কল্পনার জগতে তার এই ছুটে চলা !
তাই নাবিলা আজকে খুব ভেবে চিন্তে নাবিলা একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে ! ভয়ংকর একটা সিদ্ধান্ত ! তবে অবশ্য সিদ্ধান্তটার অনেকাংশ নির্ভর করছে আবীর ভাইয়ার উপর ! আবীর ভাইয়ার উপর সে চাইলেই জোর খাটাতে পারবে না কিন্তু সে চাইলে নাবিলাকে এক ধমক দিয়ে বসিয়ে রাখতে পারবে !


-তুই কি বললি আমি ঠিক বুঝতে পারি নি ! আবার বল !
-না বোঝার তো কিছু নাই ! আমার অনেক দিনের শখ কারও সাথে পালিয়ে যাবো !
-যা ! তোকে কে মানা করেছে !
-তাই তো যাচ্ছি ! আপনার সাথে !
-আমার সাথে ?
-হুম !
-তোর কেন মনে হল আমি আমার গার্লফ্রেন্ড কে ছেড়ে তোর সাথে পালিয়ে যাবো ! পিচ্চি একটা মেয়ে !
-শুনুন ! আপাতত আর কেউ কাউকে পাচ্ছি না । তাই আপনি ! আর আপনার গার্লফ্রেন্ড ?
-কেন ?
-আমি খুব ভাল করে জানি আপনার গার্লফ্রেন্ডের ব্যপারে ! ঠিক আছে ?

নাবিলার দিকে আবীর তাকিয়ে রইলো কিছু সময় ! তারপর বলল
-কি জানিস তুই ?
-জানি ! আপনাকে কেন বলবো ?
-তুই বেশি পেকে গেছিস ! নাক টিপলে এখনও দুধ বের হবে আবার পাকনামো ! পালানোর শখ ! থাপড়িয়ে দাঁত ফেলে দেওয়া দরকার !
-আমাকে বকবেন না বলে দিলাম !
-বকবো না তো কি করবো ? কোলে তুলে নাচবো ?
-নাচতে পারেন ! তবে আপনার শরীরের যা অবস্থা আমাকে কোলে নিতে পারবেন বলে মনে হয় না !
-শোন অনেক কথা হয়েছে ! এখনই ট্রেন ছেড়ে দিবে ! নিচে নামি চল !
-আমি নামবো না !
-মানে কি ?
-কোন মানে নেই ! আমি বাসায় যাবো না ! আর আমার বাসায় যাবার উপায় নেই ! আমি বাড়িতে চিঠি লিখে এসেছি যে আমি পালিয়ে যাচ্ছি !

আবীর ভাইয়া কিছুক্ষন নাবিলার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো ! তারপর বলল
-তুই থাক ! আমি তোর সাথে যাবো না ! আমার কি পাগলে কামড়িয়েছে ! তোকে নিয়ে যাই আর তোর বাবা আমার নামে কিডন্যাপিংয়ের মামলা ঠুকে দিক ! তোর যাওয়ার এতো শখ হলে তুই যা !
-যাবোই তো ! আপনার যেতে হবে না ! আপনি নেমে পড়ুন !

নাবিলাকে সত্যি সত্যি অবাক করে দিয়ে আবীর নেমে পড়লো ! নামার আগে বিড় বিড় করে কি যেন বলছিল ! নাবিলা প্রথমে একটু অভিমান হল আবীর ভাইয়ার উপর ! কেন সে নাবিলাকে এমন একলা ফেলে চলে যাবে ?
হুম ! একটু না হয় পাগলামো সে করেই ফেলেছে তাই বলে এভাবে এমন ভাবে একলা ফেলে চলে যাবে ?
এটা কেমন কথা !
কিন্তু যখন ট্রেন চলতে শুরু করলো তখন নাবিলার একটু ভয় করতে লাগলো ! চোখ ফেটে কান্না আসতে শুরু করলো ! যখন ট্রেনের টিকের কাটছিল তখন মনের ভিতর কেমন একটা আনন্দ লাগছিল । আর এখন !
নাবিলা কি করবে এখন ?
নাবিলা কান্না আটকাতে পারছে না ! চোখ ফেটে পানির বের হওয়ার সাথে সাথে নাবিলা চোখ মুছে ফেলছে ! পাছে কেউ দেখে ফেলে !
এখন নাবিলা কি করবে ? ট্রেন এখন কত দুর চলে এসেছে কে জানে ! এখন কি করবে !
নাবিলার সত্যি সত্যিই ইচ্ছা করছে ট্রেনের দরজা দিয়ে লাফিয়ে নিচে পরে মরে যায় !

-কি রে এরকম ভেউ ভেউ করে কাঁদছিস কেন ?
কখন পাশে আবীর ভাইয়া এসে বসেছে নাবিলা টের পায় নি ! আবীর ভাইয়া কে দেখে নাবিলার কান্নার বেগ যেন আরও একটু বেড়ে গেল ! নিজেকে আর ধরে রাখতে না পেরে সোজ তাকে জড়িয়ে ধরলো !
-আপনি খুব খারাপ ! খুব খারাপ !
-হুম ! বুঝলাম ! কান্না কাটি বন্ধ করর ! ভেউ ভেউ করা পুঁচকে মেয়ে আমার পছন্দ না !

নাবিলার তবুও কাঁদতেই থাকলো !
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ডালাসবাসীর নিউ ইয়র্ক ভ্রমণ

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ২:৪৪

গত পাঁচ ছয় বছর ধরেই নানান কারণে প্রতিবছর আমার নিউইয়র্ক যাওয়া হয়। বিশ্ব অর্থনীতির রাজধানী, ব্রডওয়ে থিয়েটারের রাজধানী ইত্যাদি নানান পরিচয় থাকলেও আমার কাছে নিউইয়র্ককে আমার মত করেই ভাল ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×