somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অশুভ লেন-দেন !

২১ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


কেবিন টা একেবারে অন্ধকার করে রাখা ! এই দিনের বেলাতেও কেবিনের ভেতরে থেকে বোঝার উপায় নেই যে বাইরে সূর্য টা একেবারে মাথার উপরে আলো ছড়াচ্ছে !
কেবিনের ঠিক মাঝেখানে শাকিল আহমেদ চোখ বন্ধ করে নিজের আরাম কেদারায় বসে আছে । চিন্তায় মগ্ন ! শাকিল আহমেদের বয়স বেশি না ! কিন্তু এখন যে কেউ তাকে দেখে একজন মাঝ বয়সী মানুষ বলে ভুল করবে !

এই কদিনে তার উপরে বেশ বড় রকমের ধকল বয়ে গেছে । শুরু হয়েছে তার বাবার মর্মন্তিক এবং ভয়ংকর মৃত্যু দিয়ে এবং আজ সকাল পর্যন্তও খবর পেয়েছে যে তাদের আরও দুইটা ফ্যাক্টরীরে আগুন লেগেছে ।
কথায় আছে বিপদ যখন আছে তখন একা আসে তাই বলে এভাবে চারিদিক দিয়ে বিপদ তাকে ঘিরে ধরবে সে কখনই ভাবে নি !

সবে মাত্র পড়ালেখার পাট শেষ করে সে বাবার অফিসের দায়িত্ব নিয়েছিল ! কিন্তু পুরোপুরি দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার আগে ভেবেছিল কদিন কোথাও ঘুরতে যাবে, বিশেষ করে পুরো দেশটা একবার ঘুরে দেখবে ! বাইরের অনেক জায়গায়ই যাওয়া হয়েছে তবে নিজের দেশটা ভাল করে দেখা হয় নি ! সব প্রস্তুতিও প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছিল কিন্তু মাঝখান থেকে এতো বড় বিপদ তার মাথার উপর এসে পড়লো !

মাস খানেক আগের কথা । বাবা আহসান আহমেদের সাথে নিয়মিত শাকিল অফিসে আসত ! প্রতিদিন নিজের বাবার অফিস টা দেখতো আর ভাবতো কিভাবে তার বাবা এতো অল্প সময়ে এতো সম্পদের মালিক হয়ে উঠলো !


শাকিলের এখনও মনে আছে তার এসএসসি পরীক্ষার ফরম ফিলাপের টাকা কিছুতেই যোগার হচ্ছিল না ! বলা চলে আসপাশে কারোও কাছ ধারও পাওয়া যাচ্ছিল ! শাকিল মোটামুটি ধরে নিয়েছিল যে তার পরীক্ষা দেওয়া হচ্ছে না ! তারপর আব্বা কোথা কেথে যে টাকা নিয়ে এলেন । সেদিন তার মুখ টা ছিল বেশ গম্ভীর । শাকিলের সেদিনের কথাটা এখনও পরিস্কার মনে আছে । বাবার গম্ভীর মুখটা এখনও তার মনে রয়েছে স্পষ্ট ! বারবার তার মনের ভিতর একটা কু ডাকছিল । মনে হচ্ছিল যেন কিছু একটা যেন ঠিক হয় নি সেদিন ।

তারপর আর পিছনে ফিরে তাকানোর দিন আসে নি । আহসান আহমেদ ব্যবসায় হাত দিলেন এবং আশেপাশের সবাই এমন কি শাকিল এবং তার মাও ব্যাপার টা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলেন যে আহসান আহমেদের ব্যবসা দিনে দিনে ফুলে ফেঁপে একাএকার হচ্ছে । যেই শাকিল আট নাম্বার বাসে ঝুলতে ঝুলতে স্কুলে যেত এবং এক টাকা বাস ভাড়া কম দেওয়ার জন্য হেল্পারের সাথে ঝগড়া লাগাতো সেই শাকিল লাল রংয়ের ফারারীতে করে কলেজে যেতে লাগলো । ক্লাসের সবাই শাকিলকে আলাদা চোখে দেখতে শুরু করলো !

দেখতে দেখতে যেন সব কিছু হয়ে গেল ! শাকিলের মাঝে মাঝে কিছুতেইএ সব বিশ্বাস হত না ! যেন সব কিছু কেউ লিখে রেখেছে, আরও ভাল করে বললে কোন বাংলা সিনেমার স্ক্রিপ্ট যেন । একটার পরে একটা ঘটনা ঘটছে ! নায়ক প্রথম জীবনে খুব কষ্ট করে তারপর তার উন্নতি হতে থাকে !

দুই বছের মাথায় আহসান আহমেদের মোট সম্পদের পরিমান প্রায় হজার কোটি টাকায় এসে দাড়ালো । কিভাবে কেউ বলতে পারে না তবে তারপর কেবলই সামনে এগিয়ে চলা ।

কিন্তু এই ১০ বছরের মাথায় এসে এভাবে সব কিছু আবার হারাতে বসেছে এতাও খানিকটা অবিশ্বাস্যই মনে হচ্ছে শাকিলের কাছে ! কিন্তু এখন ওর মনে একটা বদ্ধ ধারনা জন্মেছে যে ঠিক ১০ বছর আগে যেই অবস্থানে ছিল ওরা ঠিক সেই অবস্থানেই চলে যেতে বসেছে !
শাকিল আহমেদ নিজের চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়লো ! কিভাবে তার বাবা গড়া সম্পদকে রক্ষা করবেন সেই চিন্তায় তাকে বেশ কাবু করে ফেললেন !


-স্যার একজন মহিলা আপনার সাথে দেখা করতে এসেছে ?
নিজের চিন্তায় ছেদ পড়ল ! মুখ তুলে তাকিয়ে দেখে তার পিএস আলম দরজায় দাঁড়িয়ে ! বাইরে থেকে কিছুটা আলো এসে পড়ছে ঘরে ভিতরে । কিছুটা বিরক্ত হলে শাকিল । একবার মনে হল আলম কে একটা ধমক মারে কিন্তু নিজেকে সামলে নিল । বলল
-কে এসেছে ?
-স্যার নাম বলেনি ! তবে খুব জরুরি এবং এতে নাকি আপনার উপকার হবে !
শাকিলের মনে হল কারও সাথে দেখা না করতে কিন্তু পরক্ষনেই উপকার হবে কথাটা মনে হল !
এই বিপদের সময়ে কি এমন উপকার হবে কে জানে ? মেয়েটিকে আসতে বলল

শাকিল নিজের ঘরের আলো জ্বাললো ! অনেকক্ষন অন্ধকারে থেকে চোখে আলো পড়তেই চোখ টা চট করে বন্ধ করে নিতে হল ! যখন চোখ টা খুললে অবাক হয়ে দেখলো ঠিক ওর সামনেই একজন মাঝবয়সী মহিলা বসে আছে । একটু যেন অবাকই হল ! এতো জলদি এই মহিলার এখানে আসা কিছুতেই সম্ভব না !
এসিটার যেন হঠাৎ করেই বেশি করে ঠান্ডা বাতাস দিতে লাগলো ! এতোই ঠান্ডা যে শাকিলের রীতিমত শীতশীত করতে লাগলো !
মহিলা অদ্ভুদ হাসি হাসি মুখে তার দিকে তাকিয়ে আছে । কিন্তু সেই হাসিতে অন্য রকম কিছু রয়েছে যেটা শাকিলের ভাল ঠেকছে না ! মনে হচ্ছে খুব অশুভ কিছু একটা রয়েছে সেখানে ! খুব অশুভ কিছু একটা !
মহিলার দিকে ভাল করে তাকালো শাকিল ! মহিলা কালো রংয়ের একটা শাড়ি পরে আছে । কালো লম্বা হাতা ব্লাউজের সাথে লম্বা কালো ঘন চুল ! মহিলার চোখও স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কালো !

শাকিল নিজের ভিতরকার অনুভুতি মহিলাকে বুঝতে না দিয়ে বলল
-জি বলুন ?
মহিলা তবুও কিছু না বলে তার দিকে হাসি হাসি মুখেই তাকিয়ে রইলো ! যেন কিছু একটা দেখছে শাকিলের ভিতর এবং সেটা কিছু ভাল কিছু না ! লোভী চোখে শাকিলের দিকে তাকিয়ে থাকাটা শাকিলের কাছে কিছুতেই ভাল লাগছে না ! শাকিল আবার বলল
-আপনি কিছু বলতে এসেছেন ? নাকি এমনি এসেছেন ? দেখুন আমি এমনিতেই অনেক সমস্যার ভিতর আছি !
মহিলা হঠাৎ বলল
-আমি তোমার সেই সমস্যা থেকে বের করতে এসেছি !

সত্যি মহিলার কন্ঠে কিছু একটা ছিল যেটা শাকিলকে মুহুর্তের ভিতরেই কেমন ভীত করে ফেলল ! সামনে বসা মহিলাকে কিছুতেই ভাল ঠেকছে না তার । সামনে বসা মহিলাকে সে চলে যেতে বলতে চাইলো কিন্তু সেই কথাটা বলার সাহস তার হল না ! নিজের কেবিন নিজের অফিস তবুও নিজেকে বড় অসহায় মনে হল !
মহিলা আবারও সেই হাসি মাখা মুখে বলল
-তুমি অনেক সমস্যার ভিতরে আছও আমি জানি ! তোমার এই সমস্যার হাত থেকে বাঁচানোর জন্যই আমি এখানে এসেছি !
-কিভাবে ?
-আজকের সকালের খবর তো তুমি পেয়েছ তাই না ?
-হুম !
এই রকম খবর তুমি আর পেতে থাকবে ! যতক্ষন না ....।
-যতক্ষন না কি ?
-যতক্ষন না তুম সেই আগের মত হয়ে যাও !
-আগের মত মানে ?

এই কথার জবাবে মহিলা আবারও সেই হাসিটা দিল ! ভয় ধরানো হাসি !
-কাম অন বয় ! আমি জানি যে তুমি জানো আমি কোন সময়ের কথা বলছি ! তোমার চিন্তা জুড়ে কেবল সেই কথাই কাজ করছে !

শাকিলের বুকের ভেতর একটা আশ্চার্য কাঁপন অনুভত হল ! মহিলা কিভাবে জানে সেই কথা ? কোন ভাবেই কি সেই কথা জানতে পারে ?
কোন সম্ভাবনা কি আছে ?
মহিলা বলল
-আচ্ছা তোমার কি মনে হয় নি ১০ বছর খুব কম সময় হাজার কোটি টাকা আয় করার জন্য ! অথবা কারও ভাগ্য যদি খুব খুব ভাল না হয় তাহলে কারও পক্ষেই এই পরিমান টাকা আয় করা সম্ভব না সারা জীবনে !

শাকিল কোন কথা না বলে মহিলার দিকে তাকিয়ে রইলো ! মহিলা বলল
-আহসান মানে তোমার আব্বা কিন্তু ততটা ভাগ্যবান না ! কিন্তু তবুও সে সে পেরেছে ।
-আপনি কি বলছেন আমি ঠিক বুঝতে পারছি না !
-এবং তোমারও সেই পরিমান ভাগ্য নেই !
-আপনি কি বলছেন আমি কিছুতেই বুঝতে পারছি না !
-তুমি চিন্তা করে দেখো ! আমি কিছু বলবো না আর !
-আপনার সাথে কথা বলতে আমার ভাল লাগছে না ! আপনি প্লিজ চলে যান ! প্লিজ চলে যান !

মহিলার চোখে আবার একটা হাসির রেখা দেখা দিল ! মহিলা বলল
-আমি চলে যাচ্ছি ! তবে একটা কথা বলতেই এসেছি ! আমি চাইলে তোমাকে সাহায্য করতে পারি । যেমন টা তোমার বাবাকে সাহায্য করেছিলাম !
মহিলা আর দাড়ালো না ! ঠিক দরজার কাছে গিয়ে একবার ঘুরলো ! বলল
-তোমার বাবার একটা বাদামী রংয়ের নোট বুক ছিল ! ঐ টা তোমার জন্য হেল্পফুল হবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য !

মহিলা রুম থেকে বরুতেই শীত শীতভাব টা চলে গেল মুহুর্তেই ! হঠাৎ করে শাকিলের সেই ভয়টাও কেটে গেল !



পরবর্তি দুই মাসে আহসান আহমেদের রেখে যাওয়া বাদ বাকি প্রায় সব কিছুই আস্তে আস্তে ধ্বংশ হতে লাগলো ! কোন টাতে আগুন লেগে গেল তো কোন টা অন্য কেউ দখল করে নিল ! কোন টা আবার সরকারী অদ পরলো ! কোনটা আবার মামলা খেলো ! এই ভাবে আস্তে আস্তে যখন সব কিছুই শাকিলের হাত থেকে ছুটে যেতে লাগলো তখনই তার হাতে বাবার একটা ডায়রী পড়লো ! বাদামী রংয়ের ডায়রী ! বেশ পুরানো লাগলো নোটবুক টা !
পুরানো কিছু হিসাব পত্র খোজ করতে গিয়েই সেলফের ভিতরে ডায়রী টা পেল সে ! হাজার রকমের হিসাব পত্তর লেখা তাতে ! সাথে কিছু কিছু কথা বার্তা লেখা । কিছু নকশা আকা ! অদ্ভুদ সব সাইন আকা তাতে ! নিজের কেবিনে বসে পড়তে শুরু করলো ! কয়েকটা পাতা উল্টেই তার চোখ আটকে গেল ! কয়েকটা দিনের কথা লেখা !

১০ই নমেম্বর ২০০৩ ।
কোন ভাবেই শাকিলের ফরম ফিলাপের টাকা টা যোগার করতে পারি নি । নিজেকে এতো টা অসহায় আর কোন দিন আমাকে মনে হয় নি । শাকিলের দিকে কিছুতেই তাকাতে পারছিলাম না ! আমি যে কতটা অক্ষম পিতা সেটা বারবার শকিলের দিকে তাকিয়ে উপলব্ধি করতে পারছিলাম ! বার বার মনে হচ্ছিল মরে যাই ! এই পৃথিবী থেকে চলে গেলে যদি সব সমাধান হয়ে যেত তাহলে আজকে তাই যেতাম !

১৪ই নভেম্বর ২০০৩
কঠিন একটা সিন্ধান্ত নিয়েছি ! এভাবে ধুকে ধুকে বাঁচার থেকে বাঁচার মত বাঁচতে চাই ! হোক সেটা কম সময় ! কিন্তু এই কম সময়েই আমি আমার ছেলেকে পৃথিবীর সব সুখ এনে দিতে চাই ! আমি আমার পরিবারকে অল্প সময় হলেও সব থেকে বেশি সুখ দিতে চাই !

২২ নভেম্বর ২০০৩
শানুর জন্য আজকে একটা লালা শাড়ি কিনে এনেছি ! কতদিন পরে ওকে শাড়ি কিনে দিতে পারলাম আমার নিজেরই মনে নেই ! জীবন টা আসলেই অনেক সুন্দর মন এহচ্ছে । থ্যাঙ্কস টু লুসিফার !


তারপর আরও এমন সব অবিশ্বাস্য সব কথা বার্তা আর বিভিন্ন চিহ্ন আকা সেগুলো কিছুতেই সাহকিল ঠিক বিশ্বাস করতে পারছে না !! বারবার কেবল একটা কথাই মনে হচ্ছে যে এটা কি সম্ভব ?
সম্ভব এটা ?
তাহলে সেদিনের সেই মহিলা কি তাহলে এই কথাটাই বলতে এসেছিল ?



২০ দিন পর !
রাত আট টার কিছু বেশি বাজে ! ঝুম বৃষ্টি হচ্ছে । ঝুপ করেই যেন গভীর রাত নেমে পড়েছে । চারিদিকে কেবল বৃষ্টি পড়ার শব্দ ছাড়া আর কিছু শোনা যাচ্ছে না ! এরই মাঝে কেরানীর গঞ্জের একটি গাছে ঘেরা বাগান বাড়ির সামনে একটি কালো রংয়ের প্রাডো গাড়ি এসে থামলো ! কয়েকবার হর্ন বাজাতেই বাড়ির গেট খুলতে বাগান বাড়ির কেয়ারটেকার আজিম আলী এগিয়ে গেল ! বৃষ্টির পানি কেটে গাড়িটি প্রবেশ করলো বাড়ির ভেতর ! আবার গেট টা বন্ধ হয়ে গেল !

গাড়ির দরজা খোলার আগেই আবারও আজিম আলী ছাতি নিয়ে দরজার কাছে এসে হাজির !
দরজা ঠেলে শাকিল আহমেদ নামল ! তার মুখটা অন্য যে কোন দিনের থেকে বড় বেশি গম্ভীর ! কিছুটা অন্যায় করতে যাচ্ছে সে । ভয়ংকার অন্যায় করতে যাচ্ছে আজকে ! ভয়ংকর অন্যায় এবং অশুভ একটা কাজ !

আজিম আলীর দিকে তাকিয়ে শাকিল আহমেদ বলল
-যোগার হয়েছে ?
একটা তেলতেলে হাসি দিয়ে আজিম আলী বলল
-জি স্যার ! হইছে !
-কোথায় ?
-ঘুম পাড়ায়া রাখছি !
-আচ্ছা ! আর বাদ বাকি সব কিছু !
-সেই গুলোও হইছে !

শাকিল আহমেদ পকেট থেকে এক তোড়া টাকার নোট বের করে আজিম আলীর হাতে তুলে দিল ! আজিম আলি আবারও তেলতেলে হাসি দিয়ে টাকা গুলো পকেটে ভরে নিল ! আজিম আলী আহসান আহমেদের ব্যক্তিগত লোক ছিল ! প্রায় তিনি এই বাগান বাড়িতে বিশেষ কিছু কাজ করার জন্য আসতেন ! আজকে সেই বিশেষ কাজ টা করতে এসেছে শাকিল আহমেদ !

যখন শাকিল আহমেদ দরজা ঠেলে বড় হল রুম টার ভেতরে ঢুকলো তখনও তার পা কাঁপছিল ! সে এখনও ঠিক মত সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না ! নাকি তার আর কোন উপায় নেই !

গত চার দিনে তার আরও দুই গার্মেন্স ফ্যাক্টরীতে আগুন লেগেছে । সব কিছু পুড়ে ছাড়খাড় হয়ে গেছে ! আস্তে আস্তে সব কিছু তার হাত ছাড়া হয়ে যাচ্ছে !
শাকিল কিছুতেই সেই ১০ বছর আগে ফিরে যাওয়ার কথা চিন্তা করতে পারছে না । কিছুতেই সে ফিরে যেতে পারে না ! তার আজকে সে এখানে এসেছে ! এই রাতের বেলা এখানে এসেছে । ১০ বছর আগে তার বাবা আহসান আহমেদ যে ভুল টা করেছিল আজকে সে সেই ভুল টা করতে এসেছে ! জেনে শুনেই এসেছে !


মধ্যরাতে সে সকল প্রস্তুতি নিয়ে বসে গেল বড় হল রুমটার মাঝ খানে ! বাইরে তখন এক ভাবেই বৃষ্টি পড়েই যাচ্ছে । শাকিলের সামনে একটা কালো ছোট বক্স পেতে রাখা আছে । ঠিক তার সামনেই একটা কালো চাদরে উপর একটা চার মাসের ফুটফুটে বাচ্চা শুয়ে আছে চোখ বুঝে ! আজিম আলী ঠিক এই জিনিসটার কথায় বলছিল !
বাচ্চাটা চোখ বন্ধ করে ঘুমিয়ে আছে । আরও ভাল করে বললে তাকে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে । এই ঘুম সহজে ভাঙ্গবে না ! ক্লোরোফমের কড়া ডোজ দিয়ে বাচ্চা টা কে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে !

শাকিল তার বাবার সেই কালো ডায়রীটা থেকে নির্ধারিত পাতা বের করে আনলো ! তার সামনে একটা মৃত মুরগীর দুটো পা কেটে রাখা ! সাথে বিড়ালের বাঁ চোখ ! বিড়াল টা অবশ্যই কালো ছিল ! সব কিছু একটা কালো কাপড়ের ভিতর বাঁধা !

১৩ টা মোম বাতির গোল করে বসানো হয়েছে । কালো কাপড় টা ১৩ টা মোমবাতির মাঝখানে রাখা !

সব প্রস্তুতি সম্পন্ন! এবার আসল কাজ ! শাকিল তার বাবার নোট বইয়ের সেই নির্দিষ্ট পেজ টা বের করলো ! তারপর সেখান থেকে একটা লাইন পড়তে শুরু করলো !

বেনতো পেলেটা লেকটা !
বেনতো পেলেটা লেকটা !
বেনতো পেলেটা লেকটা !

এক ভাবে কথা গুলো পরপর বলতে থাকলো শাকিল ! কখন যে তার ভিতর অন্য কিছু একটা চলে এল শাকিল ঠিক বলতে পারবে না ! অন্য কিছু তার হুস রইলো না ! কেবল একটা কথাই তার মুখ দিয়ে বরে হতে লাগলো

বেনতো পেলেটা লেকটা !
বেনতো পেলেটা লেকটা !
বেনতো পেলেটা লেকটা !

কতক্ষন শাকিল বলতে পারবে না কিন্তু একটা সময় তার হুস হল যে পুরো হল রূম টার ভিতর ঠান্ডা একটা ভাব চলে এসেছে । শাকিলের সেদিনের মতই শীত করতে লাগলো !

একটু পরেই সে লক্ষ্য করলো তার সামনে কেউ বসে আছে । এবং সামনে বসা । শাকিল একটু ভাল করে লক্ষ্য করে দেখতে পেল তার সামনে বসা মানুষ টা দেখতে হুবাহু তার মত ! যেন তার সামনে একটা আয়না বসিয়ে দেওয়া হয়েছে !

শকিল কিছু বলতে যযাবে তখন নকল শাকিল বলে উঠলো
-আমি জানতাম তুমি আমাকে ডাকবে ?
-কে তুমি ?
-আমি তুমিই ! তোমার ভেতরেই আমি ! সবার ভেতরে আমি থাকি ! কেউ আমাকে ডেকে আনতে পারে কেউ পারে না ! তুমি পেরেছ ! যেমন টি তোমার বাবা পেরেছিল !
-আমার বাবা ?
-আমি জানি যে তুমি জানো ! জানো না ?

শাকিল কিছু বলল না ! কারন সে জানে ! জানে বলেই আজকে সে সামনে এই জীব টিকে দেখেছে ! ঠিক যেমন ভাবে তার বাবা ১০ বছর আগে ডেকেছিল ! ডেকে নিজের জীবনের বিনিময়ে চেয়েছিল সাফল্য !
সওদা করেছিল নিজের আত্মার !

কথা এমন হয়েছিল যে জীবনের সব টুকু না জীবিত থেকে একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বেঁচে থেকে সে বাকি সময় টা তার সেবা দাস হয়ে থাকবে ! নিজের আত্মাকে তুলে দিবে তার হাতে ! বিনিময়ে সে পাবে জীবনের সব টুকু সাফল্য ! ঐ ১০ বছরে যা চাইবে তাই পাবে সে !

-তোমাকে কি বলে ডাকবো ?
সামনে বসা মানুষ টা হাসলো ! বলল
-যা ইচ্ছা ডাকতে পারো ! আমার নির্দিষ্ট কোন নাম নেই ! তবে অনেকে আমাকে লুসিফার বলে ডাকে ! অনেক বই পুস্তকে গল্পে আমাকে এই নামে সম্মোধন করা হয় । কেন হয় কে জানে ?
-লুসিফার ?
-হুম !
কিছুক্ষন নিরবতা ! বাইরে তখনও একভাবে বৃষ্টি পড়ছেই !
লুসিফার বলল
-আমরা অনেক অকাজের কথা বলে ফেলেছি ! সেই জন্য আমাকে ডেকেছো সেই কাজের কথা বলি ?
শাকিল মাথা নাড়ালো !
-তো তুমি তৈরি তো ?
-হুম !
-নিশ্চিত ভাবেই বলছো ?

এইবার শাকিল কে একটু দ্বিধান্তিত মনে হল ! লুসিফার বলল
-আমি তোমাকে ১০ বছরের সাফল্য ভরা জীবন দেব বিনিময়ে তুমি তোমার আত্মাটা আমাকে দেবে ! রাজি ? তবে এই নির্ধারিত সময় যাওয়ার পরে যদি তুমি এই ডিল টা ভঙ্গ কর তাহলে তোমার পরিনতি হবে ভয়ংকর ! ঠিক তোমার বাবার মত !

শাকিলের দ্বিধা আরও একটু বাড়লো যেন ! তার চোখের সামনে তার বাবার ক্ষত বিক্ষত লাশ টার চেহারা ভেসে উঠলো ! তার বাবা কার এক্সসিডেন্ট করেছিল কিন্তু লাশ দেখে মনে হচ্ছিল কোন ভয়ংকর পশু যেন তাকে খুবলে খুবলে খেয়েছে !

শাকিলের দ্বিধা দেখে লুসিফার হো হো করে হেসে ফেলল !
-তুমি এই সময়ে জীবনের শ্রেষ্টা সময় টা কাটাবে ! তোমার বাবা তোমাকে যা দিয়েছে তার থেকেও অনেক বেশি কিছু ! টাকা সুনাম আর নারী !
সব তোমার হবে !
শাকিল তবুও কিছু একটা যেন ভাবছে ! আসলেই কি সে তৈরি ?
লুসিফা রবলল
-আচ্ছা যাও ! আরও পাঁচ বছর বাড়িয়ে দিলাম ! ১৫ টা সফল বছর ! ১৫ টা ! ভেবে দেখো ! ভেবে দেখো শাকিল! আর দ্রুত সিদ্ধান্ত নাও !
শাকিল ঠিক করেই এসেছিল কিন্তু শেষ মুহুর্তে এসে তার ভিতরে আবারও দ্বিধা দেখা দিল ! আসলেই কি সে প্রস্তুত নিজের আত্মাটা শয়তানের কাছে
বিক্রি করার জন্য ?



পরদিন সকাল বেলা ।
অফিসে এসেই শাকিলের মন টা ভাল হয়ে গেল ! গত রাতের দুশ্চিন্তা কেনে গেল যেন মুহুর্তেই ! চারিদিকে এতো আলো কিভাবে এল ! কেন জানি মনে হচ্ছে আজকে সব কিছু ভাল হবে !
কালকে লুসিফার সেটাই বলেছিল !
যখন ফুটফুটে বাচ্চাকে লুসিফারের জন্য বলি দেওয়া হল তখনই লুসিফারের চোখে আশ্চার্য একটা পৈচাশিক আনন্দ দেখতে পাচ্ছিল ! খুশি চোখে সে শাকিল কেবল
-তুমি আমাকে খুশি করে দিয়েছো আমিও তোমাকে খুশি করবো ! কাল থেকেই তোমার সৌভাগ্য শুরু হয়ে যাবে ! চিন্তা কর না ! এখন যাও ! গাড়ি নিয়ে ঢাকায় ফিরে যাও !

ঐ রাতেরই শাকিল ঢাকায় চলে এসেছে ! সাথে করে নিয়ে এসেছে পনের বছরের সাফল্যের জীবন !

শাকিল নিজের কেবিনে বসতে বসতে ভালতে লাগলো কি সৌভাগ্য শুরু হবে আজ !
কি দিয়ে শুরু হবে ? শাকিল ভাবতে লাগলো !

-স্যার আসবো ?
নিজের চিন্তায় মগ্ন ছিল তকখনই কন্ঠ টা শুনতে পেল ! তাকিয়ে দেখে দরজার কাছে অনিন্দ সুন্দরী এক মেয়ে দাড়িয়ে আছে ! মেয়েটাকে আগে দেখেছে বলে ওর মনে পড়ে না !
-কে আপনি ?
-স্যর আমি আপনার নতুন পিএস ! আজই জয়েন করেছি !
-আলম কোথায় ? আপনাকে কে নিয়োগ দিল ?
-স্যার আমাকে ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাকা হয়েছিল ! আলম স্যার আছেন ! আমি আপনার সেকেন্ড পিএস !
-ও !

শাকিল কিছু ভাবলো যেন কিছুটা সময় ! লুসিফার বলেছিল সাফল্য, সুনাম আর নারী আসবে তার জীবনে !

শেষের টা কি আগে চলে এল ?
কেবল একটা মৃদু হাসি নিয়ে শাকিল তার নতুন পিএসের দিকে তাকিয়ে রইলো !
আজকে কেবল প্রথম দিন ! এখন ১৪ বছর ১১ মাস ২৯ দিন পরে সামনে জীবন কে উপভোগ করার জন্য !


(কিছু বানান ভুল থাকবে, ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন)





সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২৭
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

জামায়াত শিবির রাজাকারদের ফাসির প্রতিশোধ নিতে সামু ব্লগকে ব্লগার ও পাঠক শূন্য করার ষড়যন্ত্র করতে পারে।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৪৯


সামু ব্লগের সাথে রাজাকার এর সম্পর্ক বেজি আর সাপের মধ্যে। সামু ব্লগে রাজাকার জামায়াত শিবির নিষিদ্ধ। তাদের ছাগু নামকরণ করা হয় এই ব্লগ থেকেই। শুধু তাই নয় জারজ বেজন্মা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাওরের রাস্তার সেই আলপনা ক্ষতিকর

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৯

বাংলা বর্ষবরণ উদযাপন উপলক্ষে দেশের ইতিহাসে দীর্ঘতম আলপনা আঁকা হয়েছে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম হাওরের ‘অলওয়েদার’ রাস্তায়। মিঠামইন জিরো পয়েন্ট থেকে অষ্টগ্রাম জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই আলপনার রং পানিতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×