somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টি অথবা একটি ভালবাসার গল্প

২৮ শে মে, ২০১৪ রাত ৮:৪৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



এক

-ইভান ভাই ! আর কতক্ষন ?

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি অফিস ছুটির আরও এক ঘন্টা বাকি ! সাবির ভাই তখনও লাইনে আছেন ! কি বলবো ঠিক বুঝলাম না ! চলে যেতে বলব নাকি ?
তিনি আমার অফিসের কাছেই নাকি কোন কাজে এসেছিলেন, এখন চলে যাচ্ছেন ! আমাকে ফোন দিয়েছেন যে আমার অফিস শেষ হয়েছে কি না ! শেষ হলে আমার সাথে যাবেন আড্ডা মারতে ! কি করবো ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না ! তবে অফিস শেষে বাসে করে ঝুলতে ঝুলতে যাওয়ার চেয়ে সাবির ভাইয়ের সাথে বাইকেই যাওয়াই ভাল !

একে তো আজকে প্রায় সারা দিনই বৃষ্টি হয়েছে, এমন বৃষ্টির দিনে কি কারো কাজ করতে মন বলে ! এমন দিনের বিকেল টা কাটাতে হয় প্রিয় মানুষটার সাথে !
যাক, সেই মানুষ যেহেতু নাই আপাতত তাই সাবির ভাইয়ের সাথে বের হওয়া যাক ! আমি বসের কেবিনে হালকা ঢু মেরে দেখি বস আগেই কেটে পড়েছে ! আমিও আর দেরি না করে বেরিয়ে পড়লাম ! সাবির ভাই ততক্ষন আমার অফিসের সামনে চলে এসেছে !
আমাকে দেখে চিরায়িত হাসি দিয়ে বলল
-মিয়া এতো কাজ করলে চলবে ? চলেন আজকে আপনাকে টংয়ের চা খাওয়াবো !
এই রকম আবাহাওয়ায় টংয়ের চা হলে মন্দ হবে না ! আমি বাইকে উঠে বসলাম !


দুই

-এই রেশমী ! কি করিস ?

তাকিয়ে দেখি তুলি এখনও লবির ভিতরেই দাড়িয়ে আছে ! এই মেয়েটা এমন হয়েছে না ? নিয়মের বাইরে আর কিচ্ছু করতে রাজি না ! এতো চমৎকার বৃষ্ট হচ্ছে কই একটু ভিজবো তা না সেই কখন থেকে আমাকে আর সুমিকে আটকে রেখেছে ! কিছুতেই ভিজতে দিবে না ! শেষে না পেরে নিজে নিজে নেমে পড়লাম ! হাতে তখনও ইয়া বড় এক আইসক্রিম !

আমি তুলির দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললাম
-জানিস বৃষ্টির ভিতর আইসক্রিম খেতে খুব মজা ! আয় না !
-না ! আমি যাবো না ! এই বৃষ্টিতে ভিজলে জ্বর আসবে !
-আরে আসুক না !

আমি সুমির দিকে তাকিয়ে দেখি ও খুব মনযোগ দিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে ! এমন একটা ভাব যেন এই দুনিয়াতে আইসক্রিমের থেকে আর জরুরী কিছু নেই ! সুমিটা সব সময়ই এমন খাই খাই ! আইসক্রিম হলে অন্য দিকে তার কোন নজরই যায় না ! খাওয়া ছাড়া আর কিছু নাই যেন ওর জীবনে !

এমন কি ওর কারনেই আজকে এই আইক্রিম ফেস্টে আসা ! সেই দুঘন্টা ধরে আমরা কত যে আইসক্রিম খেলাম ! বেশ চমৎকার সময় কাটলো ! সব থেকে বেশি সুমিই খেয়েছে । আইসক্রিম কাউন্টারে সুমি যখন আট বারের মত আইসক্রিম নিতে গেল তখন লোকটার চেহারা দেখার মতই ছিল ! এমন কি বের হওয়ার সময়ও সুমি ইয়া বড় এক স্খচ নিয়েই তবে বের হয়েছে ! এখন সেটাই খেতে ব্যস্ত ! আমার আর তুলির কথা শোনার সময় কোথায় !

আমি সুমিকে টান দিয়ে বৃষ্টির ভিতর নিয়ে এলাম ! তারপর হাটা দিলাম গেটের দিকে ! জানি তুলি আমাদের পেছন পেছন আসবেই !
বৃষ্টি ! এতো চমৎকার একটা জিনিস ! এটাকে মানুষ এড়িয়ে চলে কিভাবে বুঝি না ! বৃষ্টি হলেই সবার ভেজা উচিৎ ! উপরওয়ালার এতো চমৎকার একটা উপ হার মানুষ কিভাবে না নিয়ে থাকতে পারে আমি ঠিক বুঝতে পারি না !

তুলি ততক্ষনে আমাদের পেছনে চলে এসেছে ! আমার পাশে এসে বলল
-রেশমী যদি আমার জ্বর আসে তাহলে তো খবর আছে কিন্তু !
-আচ্ছা খবর আছে ! তোকে নাপা আমি কিনে দেব ! এখন আর তো !
আমি ওর দিকে তাকিয়ে একটু হাসি দিলাম !

আমরা ততক্ষন ফুটপাতে নেমে এসেছি ! সারি সারি দাড়িয়ে থাকা গাড়ি পার হয়ে আমরা তিন জন হেটে চলেছি ! তিন জনের হাতেই আইসক্রিম ! লোকাল বাস গুলোর ভেতর থেকে কিছু কিছু মানুষ আমাদের দেখছে !

তিন তরুনী বৃষ্টির ভেতর মনের আনন্দ আইসক্রিম খেতে খেতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে ! ঢাকা শহরের জন্য দৃশ্য টা খুব বেশি পরিচিত না ! একটু তো অবাক হওয়ারই কথা !

আমরা হাটছি, ঠিক এমন সময় ছেলেটাকে দেখলাম আমি ! বাইকের পিছনে বসে তাকিয়ে রয়েছে আমার দিকে ! এক ভাবে ! আমাদের তিন জনের কারো দিকে না ! কেবল আমার দিকে !


তিন

-সাবির ভাই !
-হুম !
-এভাবে দাড়িয়ে থাকবেন ?
-কি করবো ?
-আরে ফুটপাতের উপর দিয়ে যান না কেন ?
-আরে কি বলেন ? আইন ভঙ্গ করবো ?
সাবির মাঝে মাঝে এমন ভাবে কথা বলে হাসি চলে আসে ! আমি কিছু বলতে গিয়েও বললাম না !

ততক্ষনে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে । সাবির ভাইকে দেখে মনে হল যেন তিনি বৃষ্টি হওয়াতে বেশ খুশি ! আনন্দের সাথে বৃষ্টি উপভোগ করতে লাগলেন ! সারাদিন অফিস করে এখন এই জ্যামের ভিতর বসে বসে ভেজার কোন মানে হয় ?
তাও আবার যদি হত সেটা কোন বাসের ভিতর ! এই বাইকের পিছনে বসে বসে ভিজতেছি !

রূপসী বাংলার সিগনালে বসে বসে ভিজছি ! কি মনে করে সাবির ভাইয়ের বাইকে চড়ে ছিলাম আর এখন কপালে কি লেখা রয়েছে ! কি আর করবো ?
বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলাম ! খানিকটা বিরক্ত বৃষ্টির উপর ! এখন অফিসে থাকলেই মনে হয় ভাল হত ! রূপসী বাংলার সিগনালের দিকে তাকিয়ে ওপাশের মানুষ জন দেখতে লাগলাম ! আসে পাশের বাস-কারে বসা মানুষ গুলোও দেখলাম আমার মতই বিরক্ত মুখে বসে আছে ! এমন সময়ে বৃষ্টি উপভোগ করার ইচ্ছে মনে হচ্ছে কারো নেই !

আমি তাকিয়ে তাকিয়ে সবাইকে দেখছি ঠিক তখনই দৃশ্যটা চোখ আসলো আমার !

এমন সময় রূপসী বাংলার ফুটপথ দিয়ে তিন বিদুষী তরুণী হেটে যেতে দেখলাম। তাদের সকলের হাতেই আইসক্রিম। একজনতো এতই মনোযোগ দিয়ে আইসক্রিম খাচ্ছিল যেন আইসক্রিমের চেয়ে অমৃত আর কিছুই নেই। যাই হোক তাদের মধ্য থেকে একটি মেয়ে দেখলাম আমার দিকে কেমন ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

তার হাতেও আইসক্রিম তবে সেটার দিকে মেয়েটা লক্ষ্য নেই ! আমার দিকেই মেয়েটি তাকিয়ে রয়েছে ! এতোক্ষন আমি ওদিকেই দেখছিলাম কিন্তু মেয়েটিকে এতোক্ষনে দেখলাম !

শুনেছি উপরওয়ালা নাকি তার সৌন্দর্য থেকে কিছু পরিমান রূপ মানুষকে দিয়েছেন আর তার মধ্যে বেশির ভাগ পেয়েছে নারী। প্রকৃতি আর নারীর মাঝে এই কারনেই হয়ত বৈশিষ্টগত মিল খুঁজে পাওয়া যায়। বৃষ্টি হলে সবুজ বনানী যেমন স্নিগ্ধ সজীবতায় ভরে উঠে ঠিক তেমনি বৃষ্টি হলে যেন নারীর রূপ প্রস্ফুটিত হয় কৃষ্ণচূড়ার মতো ভালোবাসার রঙে সেজে। বিশেষ করে বৃষ্টিতে ভিজে নারীর সৌন্দর্যন যেন আরও কয়েকগুন বেশি আকারে পুরুষের চোখে ধরা পড়ে !

আমি এতোক্ষন যে বিরক্ত নিয়ে সাবির ভাইয়ের পিছনে বসে ছিলাম আর ভাবছিলাম হয়তো অফিসে বসে থাকাই ভাল ছিল এমন মনে হচ্ছে এখানে না আসতে হয়তো আমার জীবনের অনেক বড় কিছু মিস হয়ে যেত ! কেবল বারবার মনে হচ্ছে আমার ভাগ্যই মনে হচ্ছে এখানে আমাকে এখানে নিয়ে এসেছে !

আমি সব কিছু ভুলে তাকিয়ে রইলাম মেয়েটার দিকে ! মনে হচ্ছে কতদিন থেকে যেন আমি ঠিক এই মেয়েটার জন্যই অপেক্ষা করে ছিলাম !
জানি খানিকটা হাস্যকর শোনাচ্ছে কিন্তু আমার কাছে এখন এমন টাই মনে হচ্ছে ! আমরা কতক্ষন একে ওপরের দিকে তাকিয়ে রইলাম বলতে পারবো না ! কেব একে অপরের দিকে তাকিয়েই রইলাম কেবল !

আমরা একে ওপরের দিকে তাকিয়ে আছি ঠিক এমন সময় সিগনাল ছেড়ে দিল ! হঠাৎ করেই মনে হল কি হচ্ছে ! এমন কেন হচ্ছে ? সাবির ভাই ততক্ষন বাইকে ফার্ষ্ট গিয়ার তুলে ফেলেছেন ! আমি কিছু বলার আগেই সাবির ভাই বাইক ছেড়ে দিল ! আসেপাশে সব গাড়ি গুলো চলতে শুরু করেছে ! আমার সামনের ১২ নাম্বার গাড়িটা মেয়েটা আর আমার মাঝে বাঁধা হয়ে এল ! আমি গাড়িটা আসার আগে আমি কেবল মেয়েটার বিসন্ন চোখের দৃষ্টিটাই দেখতে পেলাম !

কেন জানি মনে মনে হল মেয়েটার মনে ঠিক তেমনই অনুভুতি হচ্ছে যেমন টা আমি এই মুহর্তে অনুভব করছি ! সত্যি কি তাই ?


চার

-আরে আরে করিস কি ?

সুমির আমার দিকে হাহাকার করে তেড়ে আসাতে আমি যেন বাস্তবে ফিরে এলাম ! এতোক্ষন কোথায় ছিলাম কে জানে ? তবে আমি আমার ভিতর ছিলাম না এই টুকু ভাল করে বলতে পারি !
কি হয়ে গেল হঠাৎ ?
হাস্যকর একটা ব্যাপার !
কোথাকার কোন একটা ছেলে তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকা !
তুলি আর সুমি বুঝতে পারলে কি বলবে কে জানে ?
সুমি তো আমাকে ক্ষেপিয়ে মারবে !
ছিঃ ছিঃ ! কি ভাববে ওরা !
আমি নিজেই আমার আচরনে অনেক বেশি অবাক হয়ে গেলাম ! এমন টা মোটেই আগে কোন দিন আমার সাথে হয় নি । বরং রাস্তার কেউ আমার দিকে তাকালে আমার নিজেরই কেমন জানি বিরক্ত লাগত !
তাহলে ছেলেটার এমন ভাবে তাকিয়ে থাকা কেন অন্য রকম লাগলো ?
নিজের কাছেই কয়েকবার প্রশ্নটা করলাম আমি ?
কোন উত্ত র নেই !
উত্তর কি আসলেই আমার অজানা ?
আমি জানি না !

সুমি ততক্ষনে আমার হাতের কাছে পৌছে গেছে ! আমার দিকে চোখ বড় বড় করে বলল
-খাবি না ! ভাল কথা ! এভাবে নষ্ট করার কোন মানে আছে !
সুমি আমার হাতের আইসক্রিমের কথা বলছে । বাইকের পেছনে বসা ঐ ছেলেটার দিকে এমন ভাবে তাকিয়ে ছিলাম তার উপর বৃষ্টি পড়ছে, হাতের আইসক্রিম টা প্রায় গলে গেছে ! আইসক্রিমটার এমন করুন অবস্থা দেখে সুমি চিৎকার করে উঠেছে ! তা না হলে এখনও মনে হয় আমি ছেলেটার দিকেই তাকিয়ে থাকতাম !

ছেলেটা !

আমি আবার ছেলেটার দিকে তাকালাম ! ঠিক তখনই সিগনাল ছেড়ে দিল ! ছেলেটার সামনে বসা রাইডার বাইক টান দিল ! শেষ বারের মত ছেলেটার সাথে আমার চোখাচোখি হল ! ঠিক ঠিক পরপরই একটা লোকাল বাস আমাদের দুজনের মাঝ খানে চলে এল !
আমার কেবল মনে হল চোখাচোখি না হলেই মনে হয় ভাল ছিল ! সেখানে আমি এক অচেনা বিষন্নতা দেখতে পেলাম !
বিষন্নতা ?
কেন ?
আমার জন্য ?
নাহ ! কোন সম্ভাবনা নেই ! ছেলেটার হয়তো আর দশটা মেয়েটার সাথে এমন ভাবে রাস্তায় দেখা হয়েছে ! চোখাচোখি হয়েছে !
আচ্ছা সবার দিকেই কি ছেলেটা এমন ভাবে তাকিয়ে ছিল ?
খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হল ছেলেটার চোখের ঐ বিষন্ন দৃষ্টি টা কেবল আমার জন্য ! আমার কাছ থেকে দুরে চলে যাচ্ছে এই জন্য !


পাঁচ

সাবির ভাইকে বললাম
-ভাই দেখছেন ঘটনা ?
-ভাই আমি বাইক চালানোর সময় কোথাও তাকাই না।
-মেয়েটা কেমন করে আমার দিকে তাকিয়ে ছিল ?
-তাই নাকি ?
সাবির ভাই এমন একটা ভাব করলো যেন যেন এর থেকে অদ্ভুদ কথা সে আর কোন দিন শুনেই নাই ! তারপর বলল
-হয়ত মেয়েটা আপনাকে না বরং আমার বাইকের দিকে তাকিয়ে আছে !
আমি বললাম
-তাইলে আমারে নামায় দেন। আপনি মেয়েটারে একটা লিফট দেন আপনার বাইকে।
সাবির ভাই বলল
-পাগল ! তার চেয়ে আপনি বাইক চালিয়ে মেয়েটারে লিফট দেন আমি নেমে যাচ্ছি । বাইক ঘুরাবো ?
আমি বললাম
-ঘুরান ?
-কি ? সত্যি ঘুরাবো ?
-হুম ! ঘুরান ?
-আপনিকি সিরিয়াস ?
-হুম ! ঘুরান !

সারির ভাই আসলেই আমার কথা শুনে বেশ অবাক হল মনে হল ! বাংলামোটরের মোড় থেকে বাইক ঘুড়ানোর কোন উপায় নাই ! সিগনাল আটকানো !
কি করি এখান ? নেমে পড়বো ?
হুম ! তাই করি ! মেয়েটা নিশ্চই খুব বেশি দুরে যায় নি ! কাছে পিঠেই কোথাও আছে ! দৌড়ে গেলে মেয়েটাকে পেয়েও যেতে পারি !
এপাশের সিগনালে থামতেই আমি নেমে পড়লাম !
-আরে যান কই ?
-আপনে যান !
-কই যাবো ?
-বাড়ি চলে যান !
-আর আপনি ?
-জানি না !

সাবির ভাই আমার দিকে অবাক হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে ! আমি ততক্ষনে রূপসী বাংলার দিকে দৌড়াতে সুরু করেছি !

আমি কেন এই কাজটা করলাম ঠিক জানি না ! বলতেও পারবো না ! কেবল মনে হল মেয়েটাকে এরেকবার না দেখলে মনে হয় আমি দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো বিশেষ করে মেয়েটার চোখের ঐ বিষন্নাতার দৃষ্টিটা কার জন্য ছিল এটা আমার জানার খুব বেশি দরকার ! খুব বেশি !
আমি কেবল দৌড়েই চলেছি !
কত দুরে মনে হচ্ছে পথ টা ! এতো দুরে কেন ?


ছয়

-কই যাস ওদিকে !
তাই তো, এদিকে কোথায় যাচ্ছি ! আমাদের যেতে হবে ডান দিকে ! আই মিন মিন্টু রোডের দিকে ! কিন্তু আমি যাচ্ছি বাংলামোটরের দিকে ! কেন ?
কোন কারন নেই ! নাকি আছে ?
আমি তুলির দিকে তাকিয়ে বললাম
-তোরা হাট আমি আসতেছি !
-মানে কি ? এদিকে কই যাবি ?
-যা না আমি আসতেছি !
-রেশমি তোর আচরন কেমন যেন লাগছে ! সেই কখন থেকে এমন আচরন করছিস যেন আমরা কেউ তোর পাশে নেই ! কি বলছি না বলছি কোন খিয়াল নাই !

তুলি আমার দিকে তীব্র চোখে তাকিয়ে আছে । সুমি তখনও আমার আইসক্রিম টা খেতে ব্যস্ত !
আমি বললাম
-৫ মিনিট ! বেশি না ! তোরা হাটতে থাক ! আমি ধরে ফেলবো তোদের !

তুলি কিছু বলতে গিয়েও যেন বলল না ! সুমিকে নিয়ে ডান দিকে হাততে শুরু করলো ! আমি আরেক টু সামনে এগিয়ে গেলাম !
কেন ?
কোন কারন নেই !
ছেলেটা হয়তো বাইকে করে অনেক দুরে চলে গেছে ! এদিকেও গাড়ির অনেক বড় লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে ! আমি শূন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম !
কেমন একটা খালি খালি লাগছিল ! যখন মনে হল কোন কারন ছাড়া এখানে দাড়িয়ে থাকার কোন মানে হয় না, আমি ঘুরে দাড়ালাম ! ওরা বেশ খানিকটা পথ এগিয়ে গেছে !
হাটতে যাবো কেমন যেন কান্না এল !
আমি সত্যই বেশ অবাক হয়ে গেলাম নিজের আচরনে !
আশ্চর্য ! কি হয়েছে আমার ?
এমন কেন হচ্ছে ?
অচেনা একটা ছেলের জন্য এমন কেন হবে ! কোন কারন নেই !
ছেলেটা হয়তো আমার কথা ভাবছেও না ! আর কেন ভাববে ! কোন কারন আছে কি ?
কোন কারন নেই !
না !
এই ভাবে পাগলামো করার কোন মানে নেই !

আমি হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে ডান দিকের পথে পা বাড়ালাম !
কি মনে হল যেন শেষ বারের মত আরেকবার তাকিয়ে দেখি রাস্তাটাতে !
কিছু হবে না জেনেও ! আমি আরেকবার পিছন ফিরে তাকালাম !



পরিশিষ্টঃ

মেয়েটি কেবল এক রাশ বিশ্ময় নিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে রইলো ! ছেলেটি তখনও হাপাচ্ছে ! এতো খানি পথ সে দৌড়ে এসেছে ! ছেলেটি দম নিচ্ছে ! সাথে সাথে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে সেই আগের দৃষ্টিতে ! তবে সেখানে একটু আগের সেই বিষন্নতা নেই ! বরং সুক্ষ একটা হাসি ছেলেটার মুখে দেখা যাচ্ছে !

মেয়েটি লক্ষ্য করলো তার চোখ দিয়ে আবার পানি পড়তে শুরু করেছে ! এবার মেয়েটি তার চোখের পানি আটকানোর চেষ্টা করলো না !
ছেলেটি মুখে তখনও সেই হাসি লেগে আছে !

মেয়েটি হঠাৎ করেই বলল
-হাসো কেন ? হুম !
ছেলটি বলল
-তোমাকে দেখে হাসি ! আমার জন্য যে তুমি কাঁদছো এটা দেখে ....

২৫টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×