somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একটি সাধারন গল্প

৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ৯:২৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সংকুচিত ভাব নিয়ে নিশিদের ড্রয়িংরুমে বসে আছি ! নিজেকে কেমন যেন বেমানান লাগছে এখানে। আমি চারিদিকে তাকিয়ে নিজের সাথে আসেপাশের সব কিছুর সাথে মিল খুজতে শুরু করলাম !

মোটা গদির সোফা টা এতোই আরামদায়ক যে, মনে হচ্ছে এখানেও শুয়ে পড়ি ! আমাদের বাসার শোবার গদিও এমন আরামদায়ক না ! আমি একটু হাত দিয়ে টিপেটুপে দেখার চেষ্টা করলাম !
দেওয়া টাঙ্গানো ৫৬ ইঞ্চি টিভিটার দিকে তাকিয়ে ভাবছি এরা কি টিভি দেখে নাকি সিনেমা দেখে !
আশ্চর্য !

আমি টিভির দিকে তাকিয়ে ভাবছি এটাতে টিভি দেখতে কেমন লাগবে ঠিক তখনই নিশির মাকে ড্রয়িং রুমে ঢুকতে দেখালম ! পিছনেই কাজের মেয়ে গোছের একজন ট্টে হাতে ঘরের ভিতর ঢুকছে ! আমি নরম সোফা থেকে উঠে দাড়ালাম !
নিশির মা বলল
-আরে বস বস ! আমি স্কুলের টিচার নাকি যে উঠে দাড়াতে হবে ?

মহিলা আমার অস্বস্তি নিশ্চই ভাল করেই টের পাচ্ছিলেন ! এবার মনেও হয়েছিল যে এখানে আসা টা ঠিক হচ্ছে না ! কিন্তু নিশির কথা ভেবে কেন জানি না এসে পারলাম না !

কেমন করে না এসে পারি ? যে মেয়েটার কথা না ভেবে একটা সময়ও থাকা যায় না সেই মেয়েটাকে যখন দুদিন ধরে চোখের সামনে না দেখি তখনই কি ভাল লাগে ? তার উপর যখন শোনা যায় মেয়েটার শরীর খারাপ, এবং সেই শরীর খারাপ হওয়ার পিছনে আমার নিজের কিছুটা হাত আছে তখন তো আসতেই হয় !

যখন দরজায় বেল বাজাচ্ছিলাম তখনও নিজের মনের ভিতর একটু ইতস্তত লাগছিল ! একবার মনেও হল যে দরজা থেকেই ঘুরে যাই ! আরও মনে মনে কত কথাই না আসছিল ! কিন্তু তখনই দরজা খুলে গেল ! দরজা নিশির মা-ই খুলে দিলেন ! আমাকে দেখে হাসি মুখে বললেন
-কাকে চাই ?
আমি একটু ইতস্তর করে বললাম
-এটা নিশিদের বাসা ?
-হুম ! নিশিদের বাসা !
-আমি ...... আসলে আমি নিশির সাথে পড়ি ! ওর বন্ধু !
-ও ! তাই নাকি ! এসো ভেতরে এসে ! আমি নিশির মা !

আমি তো ভেবেছিলাম আমাকে দেখে নিশির পরিবার খানিকটা বিরক্তই হবে কিন্তু নিশির মায়ের চেহারায় বেশ আন্তরিকতা দেখলাম ! এটা বেশ ভাল লাগলো !

আমাকে ড্রয়িং রুমে বসিয়ে রেখে নিশির মা ভেতরে চলে গেল ! আমি নিশিদের ড্রয়িং রুম টা দেখতে লাগলাম !


নিশির মা সোফার উপরে বসতে বসতে বলল
-তো তুমি নিশুর সাথে পড় ! তোমার নাম কি সিয়াম ?
-জি !
-তোমার কথা নিশু প্রায়ই বলে !
-বলে ?
-হুম ! তবে যা বলে সত্যিই বলে মনে হয় !
-কি বলে ?
এই কথার উত্তর নিশির মা না দিয়ে কেবল হাসলো কেবল ! আমি একটু আস্বস্তির ভিতরে পড়ে গেলাম !
কি জানি নিশি কি না জানি বলে আমার নামে !

নিশির মা বলল
-সেটা তুমি ওর কাছ থেকে শুনে নিও ! নিশির শরীর খারাপ ! পরশু থেকে ! তুমি ওকে দেখতে এসেছো ?
-জি !
-ওকে ! সমস্যা নেই ! ওর অবস্থা এখন ভাল বেশ ! তুমি আগে নাস্তা কর !
-না না আন্টি ঠিক আছে ! আমি ওকে একটু দেখেই চলে যাবো ! নাস্তার দরকার নেই !
-আরে কি বল ! আমাদের বাসায় এই প্রথম এসেছো ! কিছু না খেলে কি চলে !!

তারপর পাশে দাড়ানো মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলল
-এই সুফিয়া !
এতোক্ষন সুফিয়া আমাদের পাশেই দাড়িয়ে ছিল ! নাম ধরে ডাকতেই ট্রে টা সামনের টি টেবিলের টার উপরে রাখলো ! সেখানে দেখতে পেলাম বেশ কয়েক রকমের খাবার । যার কয়েকটা তো আমি চিনলামই না !

-কই ? নাও ।
-জি !
-আরে লজ্জা পেও না । নাও নাও ।
আমি একটা পেস্ট্রী মুখে নিলাম ! বাহ ! বেশ মজার তো !
-ভাল লাগছে ?
-হুম ।
-আরেক টা নাও ।
-না ঠিক আছে ।


খাওয়া দাওয়া পর্ব শেষ করে আন্টি নিজেই আমাকে নিশির ঘরে নিয়ে গেল ! আমি ভেবেছিলাম নিশিকেই মনে হয় ড্রয়িং রুমে নিয়ে আসবে কিন্তু আমাকে নিয়ে গেল ওর কাছে ! নিশি তখনও বিছানায় শুয়ে আছে চেহারায় একটা অসুস্থ ভাব তখনও আছে ! মনে হয় ফুড পয়জেনিংটা বেশ ভুগিয়েছে ! একদিনেই বেশ কাহিল বানিয়ে দিয়েছে !

আমার আসার খবর আগেই পেয়েছে মনে হয় আমাকে দেখে মৃদু স্বরে হাসলো !
-হেই হিরো ! একেবারে হাজির !
আমি খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলাম ! নিশির মা তখনও আমার পিছনেই দাড়িয়ে !
অবশ্য তিনি বেশিক্ষন থাকলেন না ! আমাদের কথা বলতে দিয়ে নিজে চলে গেলেন !
আমি ওর বিছানার উপর বসতে বসতে বললাম
-আমি কিন্তু মানা করেছিলাম !
-কি ?
নিশি এমন একটা ভাল করলো যেন কিছুই জানে না !

গতপরশু আমার হঠাৎ কি মনে যেন রাস্তায় ধারের আখের রস খেতে মন চাইলো ! আমি সাধারোন নিশি পাসে থাকলে এসব খারার খাইনা ! কারন আমি কিছু খেলে কিংবা কিছু কিনতে চাইলে নিশির সেইটা করতেই হবে ! আমি কিছু খাবো সেও সেইটা খাবে ! খাবে মানে খাবেই !

আমাকে খেতে দেখে নিশিও জেদ ধরলো যে সেও খাবে ! আমি কঠিন করে মানা করলাম ! বললাম
-এই জিনিস তোমার পেটে সহ্য হবে না কিছুতেই !
-না হোক !
-আরে আশ্চার্য ! এটা কি ধরনের কথা ?
-এটাই কথা !
-আচ্ছা যাও ! আমি খাবো না !
নিশি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি না খেলেও আমি খাবো ! আমি খুব ভাল করেই জানি তোমার একবার কিছু মনে হলে তুমি সেইটা করবেই ! আমি চলে গেলে তারপর খাবে, তাই না ?
-খাবো না !
-না খাও ! আমি এখন খাবো !
তারপর শরবৎ মামাকে বলল
-মামা আমাকে এক গ্লাস দাও ! ভাল করে বানিয়ে দিও !
আমি আরও কত করে মানা করলাম, কিন্তু কে শোনে কার কথা ! সে খাবেই ! আমি কত করে মানা করলাম কিন্তু ও কিছুতেই শুনলো না ! ও খেলো সাথে আমিও খেলাম ! তবে বলতেই হবে শরবৎ টা বেশ স্বাধের ছিল ! আমার থেকে নিশিই বেশি খেলো ! তার নাকি খুব মজা লাগছে !

আমি জানতাম কিছু একটা হবেই ওর ! বিকেল বেলাতেই ওর ফোন পেলাম যে ওর পেট এ ট্রাবল দেখা দিছে ! ও নাকি অসুস্থ বোধ করছে ! রাতে নাকি অবস্থা আরোও খারাপ হয়েছিল ! আমার কারনে এমন টা হয়েছে ! ঐ দিন যদি ওর সামনে না খাওয়ার কথা তুলতাম তাহলে এসবের কিছুই হত না !

নিশির দিকে তাকিয়ে বললাম
-এমন বোকামী আর করবা না ! মনে থাকবে ?
-কি ? তুমি হঠাৎ আমাকে দেখতে চলে এলে !
-এমনি ? আমার কারনে তোমার শরীর খারাপ হল আর আমার আসা টা তোমার কাছে এমনি মনে হচ্ছে ?

আমার কথা শুনে নিশি আমাকে আমাকে চুপ করতে ইশারা করলো !
বলল
-আস্তে ! আস্তে !
আমি চুপ করলাম !
-মা যদি জানতে পারে আমি বাইরের খাবার খেয়েছি আমাকে আস্ত খেয়ে ফেলবে !
-তাহলে কেন খেলে ?
-ইচ্ছা হয়েছে ! তাই !
-মানে কি ?
-মানে হচ্ছে আমার যা ভাল লাগবে আমি তাই করবো !
-এটা কোন কথা ?
নিশির আমার দিকে অদ্ভুদ চোখে তাকিয়ে বলল
-সামনে তোমার কপালে আরও দুঃখ আছে ! বুঝছো কোন মেয়ের প্রেমে পড়েছো হাড়ে হাড়ে টের পাবে !

আমি নিশির ঘরের চারিদিক টা দেখতে লাগলাম !
-এই কি দেখো ?
-তোমার ঘর ।
-তুমি কি আমার ঘর দেখতে এসেছো নাকি আমাকে ?
-তোমাকে ?
-তাহলে ? আমাকে দেখো !
-তোমাকে তো দেখবোই ! দেখার জন্য সারা জীবন পরে আছে ! এখন অন্য কিছু দেখি ! তুমি না সেদিন বলছিলে তোমার জানলা দিয়ে একটা মেয়ের ঘর দেখা যায় !
-এই খবরদার কিন্তু ! একেবারে খুন করে ফেলবো !
-আরে ক্ষেপতেছো কেন !
আমিবিছানা থেকে উঠতে গেলেই নিশি আমার হাট চেপে ধরলো !
-চুপ করে বসে থাকো ! একদম নড়বা না বললাম !

নিশি এবার আমার কোলে নিজের মাথা রাখলো ! তারপর আমার হাতটা নিজের চুলে উপর দিয়ে বলল
-কোন মেয়ের দিকে যদি তাকাও কোন দিন, খবর আছে !
আমি হাসি !

ওর চুলে বিলি কাটতে কাটতে ভাবি আসলেই আমার কপালে সামনে দুঃখই আছে ! তবে এখন একটা চিন্তার বিষয় যে নিশির মা যদি এখন চলে আসে তাহলে আমাকে দেখে কি ভাববে ! এই অস্বস্তি নিয়ে আমি বারবার দরজার দিকে তাকাতে লাগলাম !
এদিন নিশি চোখ বন্ধ করে চুলে বিলি কাটার মজা নিতে লাগলো !

সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০১৪ রাত ১:২৮
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×