somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ ফেসবুকের কারনে যেভাবে আমার বিয়ে ভেঙ্গে গেল ! ;)

২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৪:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



কাল রাতেই বুঝতে পেরেছিলাম কিছু একটা হয়েছে । কিন্তু ব্যাপারটা এরকম দিকে মোড় নিবে তা আমি মোটেই ভাবতে পারি নি । আমি মিরার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে বলল
-তুমি কেবল এই ছোট কারনের জন্য .....।
আমার কথা টা শেষ হল না । মিরা তীব্র কন্ঠে বলল
-এটা আপনার কাছে ছোট বিষয় হল ? শুনেন মিস্টার তুষার আমি ছোট বেলা থেকে বিন্দু মাত্র অবহেলা সহ্য করতে পারি নি ! আজও করবো না ! সো এখানেই মনে হয় সব কিছু শেষ হলে ভাল হয় !
-কিন্তু ....

মিরা আর কোন কথা না শুনে টেবিল ছেড়ে উঠে গেল ! আমি তাকিয়ে তাকিয়ে ওর চলে যাওয়া দেখলাম ! ঘটনা যে এই দিকে এমন ভাবে আসবে আমি কোন দিন ভাবতেই পারি নি ! বোকার মত বসে রইলাম কিছুক্ষন !

একটু পরে ওয়েটার এসে বলল
-স্যার আপনাদের অর্ডার টা ?
-বিষ আছে আপনাদের কাছে ? লাইক বিষের কোরমা কিংবা বিষের কাবাব ?
-সরি স্যার কিছু বুঝতে পারছি না কি বলছেন ?
-আরে মিয়া আমার সব ঠিকঠাক বিয়ে ভাঙ্গে গেল আর তুমি কও কি খামু !
-সরি স্যার ! আসলে আমি বুঝতে পারি নাই !

আমি আর কিছু না বলে উঠে গেলাম ! মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল ! পকেট থেকে মোবাইল বের করে সবার আগে ফেসবুক ডিএকটিভ করে রাখলাম ! শ্লার চালাবোই না আর কোন দিন ফেসবুক !


সপ্তাহ খানেক আগের ঘটনা !
মা খুব ভাল করে আমার বুঝিয়ে শুনিয়ে নিয়ে গেল মেয়ে দেখতে । এও তালিম দিয়ে নিয়ে গেল যাতে করে আমি মুখের উপর কোন কিছু না বলে দেই ! বাবা মায়ের বাধ্য ছেলের মত মেয়ে দেখতে গেলাম । আমার ইচ্ছে ছিল এতো সকালে আমি কিছুতেই গলায় দড়ি পড়বো না । মেয়ে দেখে বলবো যে মেয়ে পছন্দ হয় নি । এর আগেও কয়েকটা এভাবে বাতিল করেছি ।

কিন্তু মিরাকে দেখে আমার মুখ দিয়ে একটা কথাও বের হল না ! কেবল ঢিপঢিপ বুকের স্পন্দন নিয়ে মিরার দিকে তাকিয়ে রইলাম । মা ঠিকই বুঝতে পেরেছিল যে মিরাকে আমার পছন্দ হয়েছে । এখন মিরার আমাকে পছন্দ হলেই বিয়ের কথা বার্তা পাকা করা যায় ! মা নিজেই বলল
-ছেলে মেয়েরা আগে একটু কথা বলে নিক ! তাদের জীবনের ডিসিশান তারা নিবে !


মিরার ঘরের বারান্দায় বসে যখন চা খাচ্ছিলাম মিরা তখন অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল । আমার সাথে সরাসরি তাকিয়ে কথা বলতে হয়তো লজ্জা পাচ্ছে । ওর লজ্জা কাটানোর জন্যই বললাম
-তুমি কি সত্যিই এখন বিয়ে করতে চাও, নাকি বাবা মার চাপে রাজি হয়েছে ?
মিরা মৃদু কন্ঠে বলল
-আসলে বাবা মা ইচ্ছাই তো আমার ইচ্ছা । ওনারা যা ভাল মনে করেন তাই !
-তবুও তো তোমার নিজের একটা ইচ্ছা আছে নাকি ?

মিরা এই কথার জবাব খানিকটা ঘুরিয়ে দিল । মিরা বলল
-আমি যেমন আমার সম্পর্কে জেনে এসেছেন আমিও তো আপনার সম্পর্কে জেনেছি !
-তা কি জেনেছো শুনি !
এতোক্ষন পরে মিরা আমার চোখের দিকে তাকালো ! বলল
-তা আমার মুখে নিজের প্রসংসা শুনতে চান ?
আমি হেসে বললাম
-শুধু কি ভাল কথাই শুনেছো ? খারাপ কিছু শোন নাই !
-বলবো কেন ? কিছু তথ্য হাতে থাক ! পরে কাজে লাগবে !
-পরে মানে ?

আমার এই কথা শুনে মিরা বেশ লজ্জা পেল ! আমি মোটামুটি ধরেই নিলাম মিরা সাথে আমার বিয়ে হচ্ছেই ! মাও আমার মুখ দেখে যা বোঝার বুঝে নিলেন ! বাসার আসার পথেই ফেসবুকে স্টাটাস লিখলাম বড় করে । এমন কথা যদি ফেসবুকে না বলা তাহলে কি শান্তি লাগে । নতুন জীবনে প্রবেশ করটে যাচ্ছি ! ইত্যাদি ইত্যাদি !

তারপরের দিন গুলো যেন অন্য রকম আনন্দে কাটতে লাগলো ! রাতের এদিক চ্যাটিংয়ের পরিবর্তে মিরার সাথে কথা হতে লাগলো ! মনে হল জীবন কত সুন্দর ! এভাবে সারা জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায় !
আহা !

কিন্তু সবার কপালে যেমন সুখ সয় না, আমার কপালেও সইলো না । একদিন রাতে কথা বলতে বলতেই মিরা বলল
-আচ্ছা, আপনি ফেসবুক ব্যবহার করেন না ?
মনে মনে বললাম আবার করি না ! জীবনে আমার ফেসবুক ছাড়া আছে কি ?
বললাম
-তুমি আসার আগে আমার জীবনে একমাত্র প্রেমিকা হল ফেসবুক ! এখন তুমি আর ফেসবুক !
মিরা হেসে বলল
-তাই ? তা আপনার আইডি টা বলেন তো ! দেখি আপনার প্রেমিকা কেমন !
আমি নিজের আইডি বললাম !
মিরা মনে হয় ল্যাপটপে ছিল ! আমার সাথে কথা বলছিল আর ব্রাউজ করছিল ! আমি ওকে কিছু সময় দিলাম আমাকে খুজে বের করার জন্য !
কিন্তু যখন সময় চলে যাওয়ার পরেও ও কোন কথা বলছিল না তখন বললাম
-মিরা ! আছো ?
-হুম ! আছি !
-পেয়েছো আমাকে ?
-হুম ! লাল রংয়ের গেঞ্জি মুখে হাত দেওয়া ছবি প্রোফাইল পিকচারে ! তাই না ?
-হুম ! এই তো পেয়েছো ? ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাতে পারছো নাকি আমি পাঠাবো ?
-লাগবে না !
কিছুক্ষন নিরবতা ! তারপর মিরা ঠান্ডা গলায় বলল
-আচ্ছা ! আমার একটু কাজ আছে আমি আপনাকে কাল ফোন দিবো !
-কোন সমস্যা ?
-না ! কোন সমস্যা না !

মিরা আর কোন কথা না বলে ফোন রেখে দিল ! আমি ঠিক কিছুই বুঝতে পারলাম না ! কেন জানি মনে মিরা আমার প্রোফাইল দেখে কিছু একটা মনে করেছে । তন্ন তন্ন করে প্রোফাইল দেখলাম ! লাইকড পেইজ গুলো দেখলাম সেখানে উল্টা পাল্টা কিছু করেছি কি না ! কমেন্ট গুলো দেখলাম ! এক্টিভিটি লগ দেখলাম ! নাহ ! তেমন কিছুই না । তাহলে ?
কি এমন দেখলো মেয়েটা ?
একটু চিন্তা ঠিকই লাগছিল কিন্তু কিছুই করার নেই । মিরা যতক্ষন না বলতে ততক্ষন কিছুই জানতে পারবো না !

পরদিন সকালেই মিরার ফোন এসে হাজির ! সে আমার সাথে দেখা করতে চায় !
মেয়ের কথা মতই হাজির হলাম ! আমার আগেই মিরা এসে হাজির ! মুখ গম্ভীর ! আমি বসতেই মিরা নিজের মোবাইল থেকে কিছু টেপাটেপি করে আমার দিকে বাড়িয়ে দিল ! বলল
-এটা আপনার প্রোফাইল না ?
তাকিয়ে দেখি আমার প্রোফাইলই ! বললাম
-হুম ! কেন কোন সমস্যা ?
-না কোন সমস্যা না !
-তাহলে ?
-আসলে আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না !
আমি আকাশ থেকে পড়ার ভাব করলাম !
-সে কি ? কেন ?
মিরা বলল
-মেসেজ বাক্সটা চেক করেন !
আমি ওর মোবাইল থেকেই ইনবক্সে গেলাম ! সেখানে দেখা যাচ্ছে মিরা আমাকে মাস ছয়েক আগে একটা মেসেজ পাঠিয়েছিল !
"ভাইয়া আপনার লেখা অনেক ভাল লাগে ! যদি ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট গ্রহন করে তাহলে খুশি হব !"

মেসেজটা সিন দেখাচ্ছে কিন্তু সেখানে কোন রিপ্লাই দেখছি না ! তার মানে আমি দেখেছি কিন্তু উত্তর দেই নি ! মেয়েটা কি এই জন্য আমার উপর রাগ করেছে ! আরে আমি হয়তো ফেইক আইডি ভেবে রিকোয়েস্ট গ্রহন করি নি ! তাই বলে ?
বললাম
-তুমি কেবল এই ছোট কারনের জন্য .....।
আমার কথা টা শেষ হল না মিরা তিব্র কন্ঠে বলল
-এটা আপনার কাছে ছোট বিষয় হল ?



আমি ভেবেছিলাম হয়তো সাময়িক ভাবে মিরা আমার উপর রাগ করেছে । বাসা নিশ্চই এই ছোট কারনে বিয়ে ভেঙ্গে যাবে না ! কিন্তু মা সন্ধ্যায় এসে বলল ওরা নাকি পিছিয়ে এসেছে । মেয়ে নাকি এখন কিছুতেই বিয়ে করবে না !
মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
-না হলে আর কি করার !
-তুই মন খারাপ করিস না ! আমি জানি মেয়েটাকে তোর পছন্দ হয়েছিল কিন্তু এখনকার যুগে মেয়েরও তো একটা মতামতের বিষয় আছে ।
-ঠিক আছে মা ! তুমি চিন্তা কর না ! এমন কিছু না !
-তুই ভাবিস না ! এর থেকেও সুন্দর মেয়ে তোর জন্য খুজে বের করবো !

আমি মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকলাম কিছুক্ষন ! ল্যাপটপ চালু করে ফেসবুক টা ব্লাক লিস্টে দিয়ে দিলাম ! মোবাইল থেকেই সকল ফেসবুক এপ্লিকেশন মুছে ফেললাম ! শ্লার জীবনে আর কোন দিন ফেসবুকই চালাবো না !


পরিশিষ্টঃ


বছর খানেক পর ! মা অনবরত আমার জন্য মেয়ে দেখে চলেছে ! একটা মেয়ের সাথে দেখা করতে এসেছি । মেয়েটা সামনে বসে আছে । সামনে একটা জুসের গ্লাস ! একটু পরপর মেয়েটা গ্লাসে চুমুক দিচ্ছে আর মোবাইলে কি যেন করছে । আমি চুপচাপ খাচ্ছি !

হঠাৎই মেয়েটা বলল
-আচ্ছা আপনি ফেসবুক ব্যবহার করেন না ?
-না !
-সত্যি ? করেন । এ যুগে এমন কেউ আছে নাকি এমন ?
বললাম
-এক সময় ব্যবহার করতাম ! এখন আর না !
-আমি কিন্তু ফেসবুকে খুব একটিভ ! এটা কিন্তু মেনে নিতে হবে ! ফেসবুক ছাড়া আমার এক মিনিটও চলে না !
-হুম ! তাই তো দেখা যাচ্ছে !

আরও কিছু কথা বলল মেয়েটা ! আমি কিছুই শুনলাম না !
বাসায় এসে মা কে বললাম মেয়ে পছন্দ হয় নি !



ফেসবুক
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:১৪
২২টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×