somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বৃষ্টি, জলাবদ্ধতা এবং আমার সম্ভাব্য প্রেমের গল্প ;)

৩০ শে আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৫:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



যখন ক্যাম্পাসের জন্য বেরিয়েছিলাম তখন টিপটিপ বৃষ্টি হচ্ছিল । তবে আকাশের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছিল যে খুব জলদিই কুকুর বিড়ালের বৃষ্টি শুরু হবে । হলও তাই ! সারাটা দিন মনে হল আকাশটা প্রাণ খুলে কাঁদলো ! আমি একটু ভয়ই পাচ্ছিলাম । বারবার মনে হচ্ছিল যে বাসায় যাওয়ার সময় পথ ঘাটের অবস্থা কি হবে ? বিশেষ করে আমার বাসার সামনের গলির অবস্থা কি হবে কে জানে ?

ঠিক যা ভয় করেছিলাম তাই হল । বাসার সামনের গলিতে এসে দেখি সেখানে ছোট খাটো বঙ্গোপসাগর হয়ে আছে । তার থেকেও মজার বিষয় হল সেই সাগরের সামনে বাড়িওয়ালার মেয়ে অরনী বিরক্ত এবং খানিকটা অসহার চোখে দাড়িয়ে আছে । আমাকে দেখে যেন তার বিরক্তিটা আরও একটু বাড়লো !


পনেরো নাম্বারে আসার পরে জীবন একটু অশান্তিতে আছি । আগে যেখানে ছিলাম সেখানে শান্তি ছিল বেশি । কিন্তু কিছু করার নেই । আগের বাসাটা ছেড়ে দিতে হয়েছে । তাড়াহুড়া করে আর কোন বাসাও পাচ্ছিলাম না । তার উপর ব্যাচেলরকে কেউ আবার ভাড়া দিতে চায় না সহজে । হাতের কাছে যা পেলাম সেটাই সই । মোটামুটি সবই ভাল কিন্তু বাসাটা একটু গলির ভিতরে । রিক্সা ঢুকে না । একটু হেটে যেতে হয় ! এটাও কোন ব্যাপার না । সব থেকে বড় সমস্যা হচ্ছে একটু বৃষ্টি হলেই পানি উঠে যায় গলির ভিতরে । তখন একটু ঝামেলা হয়ে যায় !

তবে একটা আনন্দের বিষয় হল বাড়িওয়ালার মেয়েটি বেশ সুন্দরী ! কোন কলেজে পড়ে শুনেছি কিন্তু এমন একটা ভাব করে যেন কোন স্কুলের হেড মাস্টার ! যাক তবুও সুন্দরী মেয়েদের সব কিছু সহ্য করে নেওয়া যায় ! এই জন্য আমিও সহ্য করে নিয়েছি ! আর কপাল দেখো আজকে তার সাথেই এখানে আটকা পরেছি !

আমি অরনীর দিকে তাকিয়ে বললাম
-অনেক পানি, তাই না ?
যথারীতি বিরক্ত হয়ে অরনী বলল
-দেখতেই তো পাচ্ছেন ! কিভাবে পার হওয়া যায় সেই চিন্তা করেন !
আমি বললাম
-উপায় তো একটাই ! প্যান্ট গুটাও ! তারপর হাটো !

বলেই আমি অরনীর দিকে তাকালাম ! আমার পরনে ঢোলা জিন্স ! আমি সহজেই প্যান্ট গোটাতে পারবো । কিন্তু অরনীর পরনে কামিজের সাথে টাইট কালো জিন্স রয়েছে । কোন ভাবে গোটানো সম্ভব না ! আর অরনীর মনভাব দেখে মনে হল সে চাইছে না এই পানিতে তার প্যান্টা টা ভিজুক !

আমি বললাম
-আর কোন উপায় নেই ! এই গলি দিয়ে তো রিক্সা ঢুকে না । ঢুকলে না হয় একটা ব্যবস্থা করা যেত ! তবে.....
কথা বলতে গিয়ে আমি থেমে গেলাম ! এইকথা কিছুতেই অরনীর সামনে বলা যাবে না ! নাকি যাবে ?
ও কি রাগ করবে ? করতে পারে ! থাক !

আমি নিজের প্যান্ট গোটাতে থাকি ! অরনী বলল
-তবে ? তবে কি ?
আমি বললাম
-তবে আরেকটা উপায় আছে । কিন্তু সেটা তোমার পছন্দ হবে না !
-কি বলেন ?
-থাক ! লাভ নেই ! তুমি ....
-আহা ! বলেন তো ! আমার এখন বাসায় যাওয়া জরুরী !

আমি খানিকক্ষন আমতা আমতা করে বললাম
-না মানে আমি তোমাকে কোলে নিয়ে এইপানি টুকু পাড়ি দিতে পারি ! যদি তুমি চাও ? কিন্তু আমি জানি তুমি চাইবে না !

এই কথা বলেই মন হল আজকে আমার মনে হয় খবরই আছে রে । অরনীও আমার দিকে কিছুক্ষন ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে থেকে অন্য দিকে চোখ ফেরালো ! আমি আর কোন কথা না বলে সেন্ডেলটা হাতে নিয়ে পানিতে নেমে পড়লাম ! কয়েক পা গিয়েছি তখনই অরনী পেছন থেকে ডাক দিল !
-শুনুন !
-হুম !
-কোথায় যাচ্ছেন ? আমাকে কে নিয়ে যাবে ?

আমার প্রথমে কেন জানি মনে হল আমি ভুল শুনতেছি । অরনী কি আসলেই এই কথাটা বলল ! কে জানে ! নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমি আবার ফিরে তাকালম ! বললাম
-কি বললে ? শুনি নাই ? আবার বল !
অরনী আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-বেশি ঢং করেন না ! হাতি গর্তে পড়লে সবাই লাথি মারে !
আমি কিছু মনে করলাম না ! হাসি মুখ বললাম
-তোমার ওজন কত ! আমি তুলতে পারবো তো ?
-যান, আপনাকে আমাকে তুলতে হবে না ! আপনি যান !
-আরে রেগে যাচ্ছো কেন ? আমি তো এমনি বললাম !
-আপনার কিছু করতে হবে না ! আপনি যান !
-আরে বাবা ! আর কেউ কিন্তু আসবে না ! কেউ কিন্তু এমন প্রস্তাবও দিবে না !


সত্য সত্যি অরনীকে যখন কোলে নিলাম তখন নিজের কাছেই কেমন যেন লাগছিল ! অরনী আমার গলা ধরলেও খুব ভাল করে ধরে নি । কিছু দুর গিয়েই একটু ছেড়ে দেওয়ার ভাব করতেই অরনী আমার গলা আরও জোরে জড়িয়ে ধরলো ! চিৎকার করে বলল
-আপনাকে কিন্তু আমি ধাক্কা মেরে ফেলে দিবো বললাম ! আর একবার যদি এমন করেন !
-আড়ে বাবা পা পিছলে গিয়ে ছিলাম !
-একদম চুপ ! কোন কথা না !
আমি হাটছি পানির ভিতরে ! আস্তে পানিযেন বাড়ছে আর অরনী আস্তে আস্তে আমা রগলা চেপে ধরছে । মনে হচ্ছে অনন্ত কাল ধরে আমি পানিতে হাটিতেছি, চারিদিকে সমুদ্রের সাফেন ! আমার দুদন্ড শান্তি দিয়েছিল পনের নাম্বারের অরনি সেন !

বাড়ির গেটে কাছে এসে অরনী নেমে পড়লো ! আমার মনে বড় জলদি যেন চলে এলাম ! আর একটু লাম্বা রাস্তা হলে কি এমন ক্ষতি হত ! আমার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা বলতে গিয়েও বলল না ! সিড়ি বেয়ে উপরে চলে গেল ! আমিও ওর পেছন পেছন উঠতে লাগলাম ! মনে মনে বললাম ইস যদি প্রতি দিন যদি এমন করে বৃষ্টি হত !



দুই দিন পরে বাড়ির ছাদে আবার অরনীর সাথে দেখা । যদিও আমাদের বাড়ির ছাদে ওঠা নিষেধ ছিল কিন্তু সুযোগ পেলেই আমি ছাদে উঠতাম ! অরনী দেখলে অবশ্য মাঝে মাঝে চিৎকার চেঁচামিচি করতো কিন্তু আজকে করলো না ! আমি ওর পাশে গিয়ে দাড়ালাম !
-এখানে কি করেন আপনি ?
অন্য দিনের মত এতো কড়া করে না তবে নরম করেও বলল না কথা না !
-এমনি হাওয়া খেতে এসেছি তোমার বাবা এমন ভাবে বাসা বানিয়েছে হাওয়া বাতাস আসে না ঘরের ভিতরে !
-তাহলে আছেন কেন ? ছেড়ে দিন !
-দিতাম কিন্তু ব্যাচেলরদের কেউ বাসা ভাড়া দিতে চায় না ! আরও একটা কারন অবশ্য আছে !
-কি কারন ?
-আছে ? একটা জনকে মাঝে মাঝে দেখি ! তাকে একবার দেখলে মন ভাল হয়ে যায় আপনা-আপনি । এই জন্য এই বাসা ছেড়ে যেতে ইচ্ছে করে না ! এই জন্য শত বকা খেয়েও ছাদে উঠি মাঝে মাঝে তাকে দেখার জন্য !

অরনী কিছু বলতে গিয়ে বলল না ! আমিও কিছু বললাম না ! সেদিনের অরনীকে কোলে নেওয়ার কথা ভাবতে লাগলাম ! এই দুই দিনে সেই কথাই অবশ্য অনেক বার ভেবেছি ! মেয়েটা এতো সহজে কিভাবে রাজি হয়ে গেল ! হয় তো ঐ দিন বাসায় যাওয়াটা ওর জন্য বেশ জরুরী ছিল ! কিংবা ....।
ভাবনায় ব্রেক লাগালাম ! নিজেকে বললাম আতো বেশি চিন্তা করা ঠিক না ! সব কিছু এমনি এমনি এভাবে হবে না !

আমি বললাম
-তোমার বৃষ্টি ভাল লাগে না ?
-নাহ ! একদম না ! দেখেন না বৃষ্টি হলে বাসার সামনে কেমন বিচ্ছিরি পানি জমে যায় ! বিরক্ত লাগে !
-এই কারনে বৃষ্টি ভাল লাগে না ?
-হুম !
-আজিব ! তবে আমার কিন্তু বৃষ্টি অনেক পছন্দ ! আমি তো চাই প্রতিদিন এরকম বৃষ্টি হোক !
অরনী খানিকটা বিরক্ত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-মানে কি ? কেন ?
-আমারও তোমার মতই ঐ একই কারন ! বৃষ্টি হলে বাসার সামনে পানিজমে যায় ! কাউকে না কাউকে কোলে নেওয়ার একটা সুযোগ সৃষ্টি হয় !

এবার অরনী আমার দিকে ভুরু কুচকে খানিকটা সময় তাকিয়ে রইলো । তারপর আর কোন কথা না বলে নিচে চলে গেল ! আমি আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম ! আকাস একদম ফকফকা !
একটু বৃষ্টি দিলে কি হয় শুনি ?




মনে হয় আমার কথা শুনেই ফেলল । পরদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে দেখি আকাশ জুড়ে বৃষ্টি পরছে । আমি শুয়ে শুয়ে বৃষ্টি দেখতে লাগলাম । আহা সেদিনের সেই দিন টা যদি আবার ফিরে আসতো ! এই কথা ভাবছি এমন সময় বাড়ির দারোয়ান ছেলেটা আমাকে ডাকতে এল ।
-কি ব্যাপার ?
-আফা আপনারে ডাকতাছে ।
-কোন আফা ?
-অরনী আফা !
-কি জন্য ?
-উনি নিচে দাড়ায়া আছেন । আপনারে যাইতে কইছে ।

আমার মাথায় কিছু এল না । আমি নিচে গিয়ে দেখি যথারীতি বাড়ির সামনে পানি জমে গেছে । তার সামনে অরনী দাড়িয়ে । সেদিনের মতই পোষাক পরা । আমি খানিকটা বিশ্ময় নিয়ে অরনীর দিকে তাকিয়ে আছে সেই পানির দিকে । আমি ঠিক বুঝলাম না আমাকে এখন আসতে বলার কারন কি ?

অরনীর কাছে গিয়ে বললাম
-কি ব্যাপার ? এতো সকালে ?
-উপরওয়ালা আপনার কথা শুনেছে ! তাই না ?
-হুম ! তাই তো দেখছি !
-তা এখন আমি বাইরে যাবো কিভাবে ?
-চলেন আমি নিয়ে যাই !

অরনী আমার দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবেই বলল
-এই জন্যই আপনাকে ডেকেছি !

আমনার প্রথম মনে হল হয় তো আমি মনে হয় তখনও ঘুমিয়েই আছি কিন্তু অরনীর চেহারা দেখে তেমন মনে হল না ! আমি বললাম
-তুমি কি সিরিয়াস ?
-আমার চেহারা দেখে কি মনে হচ্ছে ?
-আমাকে একটা চিমটি কাটবে ?
-কেন ?
-না মানে স্বপ্ন দেখছি না তো !


আমি কিছুক্ষন অরনীর চেহারা দিকে তাকিয়ে রইলাম ! আসলেই কখন কোথা থেকে কার ভাগ্য ফিরে যায় সেইটা বলা মুশকিল ! আমি ওকে কোলে নেওয়ার প্রস্তুতি নিলাম !

আহা ! লাইফ ইজ বিউটিফুল !
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×