somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প নাম্বার তিনঃ ভারপ্রাপ্ত বয়ফ্রেন্ড

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গল্প নাম্বার তিনঃ ভারপ্রাপ্ত বয়ফ্রেন্ড
.....................

জীবনে আবার নিহির সাথে দেখা হবে ভাবি নি । তাও আবার এখানে । ও নিশ্চই ওর স্বামীর সাথে এসেছে এখানে । বসের কোন দিক দিয়ে পরিচিত হবে হয়তো !
এখান থেকে পালাবো, সেই উপায়ও নেই । বসের পার্টি বলে কথা ! আমি কোনার দিকে গিয়ে নিজের চেহারা খানিকটা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করলাম । ওর সাথে চোখাচোখি হলে আমিও অস্বস্থিতে পড়বো ও নিজেও অস্বস্তিতে পড়বে । কি দরকার এতো দিন পরে এসব ঝামেলায় পড়া !

কিন্তু চাইলেই তো আর ঝামেলা এড়ানো যায় না ! নিহি ঠিকই আমাকে দেখে ফেলল ! আমি কোনার দিককার একটা সোফায় বসে পেপসির একটা গ্লাসে চুমুক দিচ্ছি নিহি এসে আমার পাশে বসলো !
আমার দিকে তাকিয়ে সহজ ভাষায় বলল
-আমার কাছ থেকে পালাতে চাইছো কেন ? সেই কখন থেকে দেখছি !
-কই না তো ! পালাবো কেন ? তোমাকে ঠিক দেখতে পায় নি !
-তাই ? হা হা হা হা ! এখনও মিথ্যে কথাটা ঠিক মত বলতেও শিখো নাই ?
আমি কোন কথা না বলে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম ! নিহি এখনও যেন ঠিক আগের মতই আছে । সেই চটপট করে কথা বলে । আমার মনে আছে এই চটপটে ভাবের জন্যই আমি ওর প্রেমে পড়েছিলাম !

আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-তুমি এখানে ? বসের পার্টিতে ? হাজব্যান্ডের সাথে এসেছো ?
-হুম !
ওর চেহারা দিকে তাকিয়ে দেখি ও যেন আমার কথা শুনে খুব মজা পেল ! তারপর নিহি বলল
-তা তোমার বউ কোথায় ?
আমি কি বলবো ঠিক বুঝলাম না ! একবার মনে হল বলি যে বাসায় আছে আসে নাই । কিন্তু মিথ্যা কথাটা বলতে পারলাম না ! বললাম
-আসলে ....।
-বিয়ে কর নি ?
-নাহ !
-কেন ?
-জানি না !

জানি না টুকু বলতে গিয়ে বুকের ভেতর থেকে কেমন একটা উদাসী হাওয়া বের হয়ে এল । আমি ওর দিকে তাকিয়ে বললাম
-আচ্ছা আমার একটা কাজ আছে ! আমি যাই !
-কাজ আছে নাকি আমার সামনে থাকতে চাও না ?
-তুমি যেইটা ভেবে নাও সেইটাই !

আর দাড়ালাম না ! বস যা মনে করে করুগ গে ! পার্টি থেকে বেরিয়ে এলাম !

নিহিকে একটা সময় অনেক বেশি পছন্দ ছিল আমার । আমি কেন, ক্লাসের অনেকই পছন্দ করতো ওকে । কিন্তু কেউ কিছু বলতে সাহস পেত না । একে তো ও ছিল এস আই এর মেয়ে । কে কি বলবে শেষে মাইর খাবে । আর তার উপর নিহি পড়ালেখায় খুব ভাল ছিল । ভাল বলতে খুব বেশি ভাল ! ভাল পড়ুয়া মেয়েদের কে সবাই একটু সমীহ করে চলে । ক্লাসের কেউই তার ধারে কাছে আসতে পারতো না ! আমিও না ! তবে অন্যদের থেকে আমার অবস্থা বেশ ভাল ছিল ! তাই মাঝে মাঝে ওর সাথে কথা বলতাম ! ও আমার সাথে সেই ভাবেই কথা বলতো !
একদিন সাহস করে ওকে মনের কথা টা বলেই ফেললাম ! ও এমন একটা ভাব করলো যেন কিছু শোনেই নাই ! কোন কথার জবাব না দিয়ে চলে গেল ! মনে মনে ভাবলাম কপালে আমার দুঃখই আছে ।

কিন্তু সেবারের মত কিছু হল না ! আমিও যে ওকে আমার মনে কথা বলেছিলাম সেটা ভুলে গেলাম । পড়া লেখায় মন দিলাম । ইন্টার পরীক্ষার যখন ঢাকায় চলে এলাম শুনতে পেলাম ওরা নাকি আমাদের এলাকা ছেড়ে একেবারে ঢাকায় চলে এসেছে । আমার আবার দেখা হল বুয়েটের কোচিং এ !
ক্লাসের ফাঁকে ওর সাথে কথা বলতাম টুকটাক ! ও বলতো ! কিন্তু পুরানো সেই প্রসঙ্গ আর তুলতাম না কোন দিন !
একদিন অবাক করে দিয়ে নিহি আমাকে বলল
-তুমি আমাকে একবার প্রোপোজ করেছিলে মনে আছে ?
কোন রকমে বললাম
-হুম !
-সেদিনের সেই কথা নিয়ে প্রায়ই ভাবী ! একটা বয়ফ্রেন্ড থাকাটা খারাপ না কিন্তু ! কি বল ?
আমার মনে হল আমি কি স্বপ্ন দেখছি ? কোন মেয়ের মুখে কি শুনছি ?
নিহি বলল
-আমি তোমার প্রস্তাব ভেবে দেখবো যদি তুমি বুয়েটে চান্স পাও ! আমি চাই আমার বয়ফ্রেন্ড বুয়েটে পড়ুক আমার সাথে !
আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না ! তারপর নিহি বলল
-তবে বুয়েটে চান্স না পাওয়া পর্যন্ত তুমি আমার ভারপ্রান্ত বয়ফ্রেন্ড হতে পারো !
-ভার প্রাপ্ত ?
-হুম ! লাইক একটিং বয়ফ্রেন্ড ! হবা ?
আমি হাসি নিয়ে বললাম
-হুম !
-তো মিস্টার বয়ফ্রেন্ড ! চলুন আজকে অফ আছে । একটু ডেটিং করে আসি !

তখনও বুয়েট পরীক্ষার মাস দুয়েক বাকী ছিল ! সত্যি বলতে কি সেই সময়টা অনেক চমৎকার কেটেছে আমার । ওর সাথে দিনের কিছু নির্দিষ্ট সময় ছাড়া অবশ্য কথা হত না ! আর সপ্তাহে একদিন ওর সাথে ঘুরতে বের হটাম ! সময় কাটতো খুব ভাল ! সব কিছু কেমন স্বপ্ন মনে হত !

কিন্তু সব স্বপ্নের যেমন শেষ আছে এটাও শেষ হল । আমি বুয়েটে চান্স পেলাম না ! নিহি ঠিক পেয়ে গেল ! আমি একদিন গেলাম ওর সাথে দেখা করতে । ও বলল আমাকে বলল
-তোমার ভারপ্রাপ্তের দায়িত্বটা মনে হয় শেষ হল ! তাই না ?
-হুম !

ঐ নিহির সাথে আমার শেষ দেখা । তারপর আর ঢাকায় থাকি নি ! পরালেখা শেষ করে অবশ্য চাকরী জন্য আবার ঢাকায় ! তারপর ওর সাথে দেখা হল এভাবে ।

রাতের বেলা ঠিক মত ঘুম এল না । নিহির ভারপ্রাপ্ত বয়ফ্রেন্ড হিসাবে কাটানো সেই দুই মাসের স্মৃতি নিয়ে এটো গুলো বছর কিভাবে কেটে গেল, ভাবতেই পারি নি । আস্তে আস্তে কষ্ট গুলো ফিকে হয়ে আসছিল, আজকে আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠলো !

পরদিন অফিসে গিয়ে প্রথম ধাক্কাটা খেলাম । বস সবার সাথে নিহিকে পরিচয় করিয়ে চিল । সে এখন থেকে আমাদের অফিসের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ! পার্টি দিনই নাকি সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল ! আমি ছিলাম না তাই জানতে পারি নি !

দ্বিতীয় ধাক্কাটা খেলাম নিহি যখন আমার কেবিনে এল । আমার দিকে তাকিয়ে কোন রকম ভুমিকা না করেই বলল
-একটা ভাড় প্রাপ্ত বয়ফ্রেন্ডের পোস্ট ফাঁকা আছে । এপ্লাই করতে চাও ?
-মানে ?
-মানে কিছু না ! আপাতত ভারপ্রাপ্ত ! পরে পার্মানেন্ট !
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বলল
-কিন্তু তোমার তো.......
-বিয়ে ?
-হুম
নিহি জোরে হেসে উঠলো ! তারপর বলল
-তুমি যেমন ঐ জায়গাটা আর কাউকে বসাতে পারো নি, আমি নিজেও পারি নি ! আসলে যেদিন থেকে তোমার প্রয়োজনীতাটা অনুভব করলাম তখন তুমি অনেক দুরে ! আর এখনকার মত মোবাইল ইন্টানেটও ছিল না তখন ! তাই চাইলেও কিছু করতে পারি নি !

আমি কিছু না বলে কেবল তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে ! আামর যেন বিশ্বাস হচ্ছিলো না ! বারবার মনে হচ্ছিল যে আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছি !

নিহি আবার বলল
-কি হবে ভারপ্রাপ্ত বয়ফ্রেন্ড ?
-হুম ! তবে বিএনপির মহাসচিবের মত যেন আবার ৭/৮ বৎসর ভারপ্রাপ্ত থাকতে না হয় সেদিকে লক্ষ্য রেখো !

নিহি আবারও হেসে উঠলো । আমার কেবল মনে হতে লাগলো যে আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছি ! কিন্তু এই স্বপ্ন মনে হয় না সহজে ভাঙ্গবে !


(সমাপ্ত)




গল্প নাম্বারঃ দুই
........................

ঈপ্সিতার আজ সকালে জাবিতে ভর্তি পরীক্ষা আছে । পুরো দিনে আরও মোট তিন টা পরীক্ষা হবে সেখানে । একা একা এতো দুর যেতে হবে এই কথা ভেবেই ঈপ্সিতার গলা শুকিয়ে আসছে । অন্য কোন দিন হলে হয়তো এতো চিন্তা করতো না কারন অন্য দিন গুলোতে নাহিদ ওর সাথে থাকতো ! কিন্তু গত কাল রাতে নাহিদের সাথে ওর খুব কথা কাটাকাটি হয়েছে । এক পর্যায়ে তো রেগে ফোন কেটে দিয়েছে । বলেছে কিছুতেই আর তাকে ফোন দেবে না ! কোন কথা নেই তার সাথে !

মনে মনে নিজেকে আর নিজের ভাগ্যকে আরেকবার বকা দিল ঈপ্সিতা ! আর একটা দিন পরে ঝগড়া টা বাঁধলে কি এমন ক্ষতি হত কে জানে !
একবার মনে হল পরীক্ষা দিতে যাবে না, কিন্তু পরক্ষনেই চিন্তাটা বাদ দিয়ে দিল ! এতো পরিশ্রম করে যদি শেষে এসে পরীক্ষাই না দেয় তাহলে কেমন হয় ! আর বাসায় জানলেও নিশ্চই খুব রাগ করবে ওর বাবা মা !

যখন ঘড়িতে ছাড়ে ছয়টা বাজে তখনই ওর মোবাইলে একটা মেসেজ এসে হাজির ! ঈপ্সিতা এসএমএস খুলে দেখে নাহিদ পাঠিয়েছে । সেখানে লেখা "সাভার যাওয়ার বাস সাতটার সময় ছাড়বে ! আমি হোস্টেলের সামনে"
কিছুটা সময় এসএমএস টার দিকে তাকিয়ে রইলো ! তারপর আর কিছু চিন্তা না করে চট করে তৈরি হয়ে নিল । ঘড়িতে যখন পৌনে সাতটা বাজে তখন ঈপ্সিতা নিচে নামলো ! এতো জলদি কেমন করে তৈরি হল সেটা একটা রহস্য বটে । তবে সকালের মন খারাপ আর অনিশ্চিয়তা ভাবটা এখন আর নেই ওর ভিতর ! কেমন যেন একটা শান্তি শান্তি ভাব রয়েছে !

হোস্টেলের ঠিক সামনেই একটা হোটেল আছে । নাহিদ যখন ওর সাথে দেখা করতে আসতো সব সময় এই হোটেলর ভিতর বসতো ! কিন্তু আজকে সে ভিতরে না বসে হোটেলের সামনে দাড়িয়ে আছে । ঈপ্সিতাকে দেখেই নাহিদ কিছুটা সময় তাকিয়ে থাকলো ওর দিকে । তারপর হাটা শুরু করে দিল ! স্পষ্টই যে কাল রাতের পরে সেও তার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে কিন্তু এটাও জানে যে ও না আসলে ঈপ্সিতা আজকে পরীক্ষা দিতে আসবে না । যতই রাগ করুক ওকে ভাল তো বাসে !

বাসে প্রচন্ড ভিড় থাকা সত্ত্বেও নাহিদ কিভাবে যেন ঈপ্সিতাকে বাসে তুলে ফেললো । সবার ধাক্কা ধাক্কি থেকে বাঁচিয়ে ভাগ্য গুনে একটা মহিলা সিটও পেয়ে গেল ! ঈপ্সিতা কে বসিয়ে নিজে দাড়িয়ে থাকলো ওর পাশে !

ঈপ্সিতা যখনই ঢাকার বাসে ওঠে ওর কাছে কেমন যেন একটা চাপা অস্বস্থি লাগে । যদি আবার ভীড় বেশি হয় তাহলে সেই অস্বস্থি টা আরও বেশি হয় । কিন্তু প্রতিবার যখন নাহিদ ওর সাথে থাকে আর এমন টা মনে হয় না ! নিজেকে কেমন যেন একটু নিরাপদ মনে হয় । একটু শান্তি কাজ মনের ভিতর । আজকেও তেমন শান্তি কাজ করছিল । সিটে বসেও বারবার ও নাহিদের চেহারার দিকে তাকাচ্ছিল ! ছেলেটা ওর দিকে একটা বারও তাকায় নাই সেই সকাল থেকে ! কেমন গম্ভীর হয়ে আছে । আসলে গত রাতে একটু বেশিই যেন খারাপ ব্যবহার করা হয়ে গেছে ওর সাথে ।

ক্যাম্পাসে নেমেও নাহিদ ওর সাথে কোন কথা বলল না ! ওকে একটা খাবার হোটেলে নিয়ে গেল । চুপচপা নাস্তা যখন শেষ করলো তখন প্রথম পরীক্ষা শুরু হতে আও বেশ খানিকটা সময় বাকি আছে ! ঈপ্সিতার একবার মনে হল ওকে সরি বলে । গত কাল রাতে যা হয়েছে তার জন্য কিন্তু বলতে পারলো না ! প্রতিবার বলতে গেলে কিসের যেন একটা ঈগো এসে বাঁধা দিতে লাগলো !

পরীক্ষার হলে ঢোকার আগে শেষ বারের মত যখন ঈপ্সিতা পিছন ফিরে তাকালো দেখলো নাহিদ ওর দিকে তাকিয়ে আছে । একবার কি হাত নাড়বে ? কিছু একটা করা আগেই পেছন থেকে একজন সামনে আগাতে বলল । নাহিদ চোখের আড়ালে চলে গেল !

পরিক্ষার শুরুর বেশ সময় ধরেই ও নাহিদের কথাই ভাবতে লাগলো ! অন্য কেউ হলে হয়তো ওর কাছে আসতোই না । কিন্তু ছেলেটা ঠিকই এসেছে । শত রাগের পরেও ঈপ্সিতার দরকার ঠিকঠিক সময়ে এসে হাজির হয়েছে । এসব ভাবতে ভাবতে ও লক্ষ্যই করলো না কখন খাতা দিয়ে দিয়েছে । যখন খিয়াল হল তাড়াতাড়ি লিখতে শুরু করলো !

সব গুলো পরীক্ষা যখন দেওয়া শেষ হল তখন প্রায় চার টা বেজে গেছে । এখন ফিরতে হবে ! যদিও হাতে এখনও বেশ খানিকটা সময় আছে । ঈপ্সিতা নিজের প্রশ্ন হাতে নিয়ে নাহিদের পেছন পেছন হাটছিল ।

-আমি এখন বাসায় যাবো না !
নাহিদ হাটতে হাটতে দাড়িয়ে গেল ঈপ্সিতার কথা শুনে । পেছনে ফিরে তাকিয়ে রইলো ঈপ্সিতার দিকে । তারপর বলল
-তাহলে কোথায় যাবো ?
-স্মৃতি সৌধে যাবো ! এতো দুর এসে এভাবে চলে যাবো না দেখে ?
-আমার কাজ আছে !
-তাহলে কেন এলে ? কাজ করতে ! বল কেন আসলে ?
-জানি না !
-জানো না ? নাকি বলতে চাও না ? বললে রাগ কেটে যাবে ?
এই কথা বলে ঈপ্সিতা হেসে উঠলো ! তারপর বলল
-শুনো মিস্টার নাহিস হাসান, তুমি যতই রাগের ভান কর না কেন আমি জানি তুমি এখন আমার সাথে স্মৃতি সৌধে যাবে আমাকে ফুচকা খাওয়াবে । ঠিক আছে ? সুতরাং এটো ভাব না নিয়ে চলবে ঠিক আছে !
-তা কি করতে হবে আমার এখন ?
-আমার আগে আগে না হেটে আমার হাত ধরে হাটতে হবে ! ঠিক আছে ?
-আর ?
-আমাকে বাদাম খাওয়াতে হবে ! ঐ সামনে আইসক্রিমওয়ালার কাছ থেকে একটা চকবার কিনে দিতে হবে !
-আর কিছু ?
-এবং সবার আগে এমন গোমড়া মুখ টা হাসি হাসি করতে হবে !
-সব কিছু আমাকেই করতে হবে ? ম্যাডাম কিছু করবেন না ?
-সময় আসুক !

এই বলে ঈপ্সিতা হাসলো ! সেই হাসির অর্থ কেবল নাহিদই বোঝে ! আর কেউ না !


(সমাপ্ত)





গল্প নাম্বারঃ এক
...............

দরজা খুলে দেখি নিশির আব্বা দরজার সামনে দাড়িয়ে । তার পিছনে আরও কয়েকজন লোকজন দাড়িয়ে আছে । সবার মুখ খানিকটা থমথমে ! এরা এখানে কি চায় ঠিক বুঝলাম না । উনি কি আমার সাথে দেখা করতে এসেছেন নাকি আমার বাবার কাছে নালিশ করতে এসেছেন কে জানে ?
অবশ্য আমার সাথে দেখা করার কোন কারন নেই । আমার বাবার কাছেই কোন না কোন বিষয়ে অভিযোগ করতে এসেছে । এই লোকের আর কি বা কাজ ?

আমি দরজা ছেড়ে তাকে ভেতরে যাবার জন্য জায়গা করে দিতেই সে আমার দিকে তাকিয়ে কঠিন গলায় বলল
-নিশি কোথায় ?
আমি আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গি করে বললাম
-নিশি কোথায় মানে ? আমি তার কি জানি ?
-দেখো ছোকড়া, ভাল ভাবে বলছি নিশি কোথায় সরাসরি বলে দাও, নয়তো ভাল হবে না বলছি !

চিৎকার চেঁচামিচি শুনে বাবা বের হয় এলেন ! আমার দিকে একবার তারপর নিশির বাবার দিকে একবার তাকিয়ে বললেন
-কি ব্যাপার আতাহার সাহেব । কি সমস্যা ?
-আপনার ছেলে আমার মেয়েকে কিডন্যাপ করেছে ?

কিডন্যাপ কথাটা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম ! বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখ হাসি হাসি । তিনি নিশির বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনার মনে হয় কোথাও ভুল হচ্ছে ! আমার ছেলের চেহারা দেখে কি মনে হচ্ছে এই ছেলে কাউকে কিডন্যাপ করতে পারে ?
আমি চেহারায় একটা ভাল মানুষী ভাব এনে নিশির বাবার দিকে তাকালাম !
নিশির বাবার মুখের কাঠিন্য বিন্দু মাত্র কমলো না ! বরং আরও বাড়লো একটু ! তিনি বললেন
-আমি জানি কাজটা ঐ করেছে !
বাবা বললেন
-দেখুন আতাহার সাহেব গত দিন আপনি বলেছিলেন আমার ছেলে নাকি আপনার মেয়েকে পথে ঘাটে ডিস্টার্ব করে । পরে খোজ নিয়ে জেনেছি নিশি ওর সাথে বসে বসে ফুচকা খাচ্ছিল ! তবুও আপনি চান না বলে আমি আমার ছেলেকে শাসন করেছি ! সে আর আপনার মেয়ের সাথে যোগাযোগ করার কোন চেষ্টা করে নি ! এমন কি গত সপ্তাহের পরে সে একটা বারের জন্য বাইরে বের হয় নাই ! আর আপনি বলছেন আমার ছেলে আপনার মেয়েকে কিডন্যাপ করেছে !
-আমি এতো কিছু শুনতে চাই না ! যদি আমার মেয়ে কে আপনি ফেরৎ না দেন তাহলে আমি পুলিশের কাছে যাবো !

বাবার দিকে তাকিয়ে দেখলাম তিনি তখনও ঠান্ডা চেহারা নিয়ে নিশির বাবার দিকে তাকিয়ে আছে । তার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি যা ইচ্ছে করুন ! গতবার আমি আমার ছেলের সাথে না থাকলেও এবার আমি জানি সে কিছু করে নি ! যান পুলিশের কাছে যান । পুলিশ নিয়ে আসুন !
নিশির বাবা কিছুক্ষন আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে চলে গেলেন । এও বলে গেলেন যে উনি পুলিশের কাছে যাচ্ছেন !

নিশির বাবা চলে যাওয়ার পরে বাবা আমার দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বললেন
-নিশি কোথায় ?
-কি ?
-বললাম নিশি কোথায় ?
-আমি কিভাবে জানি ? আমি কিভাবে বলবো ?
বাবা আমার দিকে শান্ত এবং ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে রইলো !
আমি আবার বললাম
-সত্যি আমি জানি না ! আমি না গত এক সপ্তাহ ধরে বাইরে বের হই না । আমি কিভাবে জানবো যে নিশি কোথায় ? আজিব !

বাবা এবার হাসি মুখ বলল
-তুই আমাকে জন্ম দিস নাই আমি তোকে জন্ম দিছি ! পরিস্থিতি অন্য দিকে যাওয়ার আগেও ক নিশি কোথায় ?
আমি মুখ বেজার করে বললাম
-বড় খালা বাসায় ! রুনু আপুর কাছে !
-তুই কি গাধা নাকি ? ওদের বাসায় কেন পাঠিয়েছিস ?
-তাহলে কোথায় পাঠাবো ?

বাবা আমার দিকে তাকিয়ে মোবাইল বের করে কাকে যেন ফোন করতে লাগলো ! আমি আমার ঘরে চলে এলাম ! আসলে গত সপ্তাহে নিশির বাবা হাতে ধরা পড়ার পরে জীবনটা হেল করেছে ঐ ভদ্রলোক ! আমাদের বাসায় এসে আমাকে যাচ্ছে তাই কথা শুনিয়ে গেল । এবং এও বলে গেল যে এক সপ্তাহের ভিতরে নিশিকে বিয়ে দিয়ে তিনি আমার হাত থেকে মেয়েকে রক্ষা করবে । আমি বুঝলাম না আমার হাত থেকে রক্ষা করার কি হল ? প্রেম কি আমি একা তার সাথে করি ? তার মেয়ে কি করে না আমার সাথে ? আজিব পাব্লিক !

আমি ভেবেছিলাম ভদ্রলোক মনে হয় এমনিই বলছে কথা গুলো ! কিন্তু পরদিন নিশি ফোন দিয়ে বলল সত্যি সত্যি তার জন্য ছেলে দেখা হচ্ছে ! আমার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পরলো ! এদিকে বাবাও আমার উপর চটে আছে । অবশ্য টচে আছেন নিশির সাথে প্রেম করেছি এই জন্য না । আমার জন্য একটা মানুষ তাকে কথা শুনিয়ে গেল এই জন্য !

শেষে খালাতো বোনের কাছে ফোন দিলাম । যা প্লান প্রোগ্রাম করার সেই করলো ! আমি কেবল চুপচাপ বসে রইলাম ! ঘটনা ঘটার পরে যাতে কেউ আমার দিকে আঙ্গুল তুলতে না পারে সেই জন্য !

দেখতে দেখতে সাত দিন পার হয়ে গেল । নিশির বাবা পাগলের মত মেয়েকে খুজতে লাগলো । পুলিসের কাছে গিয়েও খুব বেশি লাভ হয় নাই । পুলিশের এক কথা যে তার মেয়ে সাবালিকা এবং আমার সাথে যে তার একটা সম্পর্ক ছিল এটা তারা জানতে পেরেছে । পুলিশের সন্দেহ মেয়ে স্বইচ্ছায় বাড়ি থেকে পালিয়েছে । এখানে তারা কি করবে ?

তবুও রুটিন চেকের জন্য তারা আমাদের বাসায় এসেছিল । বাবার সাথে গল্প গুজব করে চলে গেছে । বিশেষ করে আমার নানার জেলা জজের পদবীটা এখানে বেশ কাজে দিয়েছে । নানা নাকি নিজে ওসির কাছে ফোন দিয়েছিল ! যাই হোক এই এক সপ্তাহ নিশির সাথে আমার একটা বারও কথা হয় নাই । একবার আপুর কাছে ফোন দিয়েছিলাম আপু বলেছে তারা ভাল আছে । কিন্তু কোথায় আছে আমাকে বলে নি ।
বাবার কাছ থেকেও আমি কিছু জানতে পারি নি ! বাবা তাদের কোথায় নিয়ে যেতে বলে কে জানে !

অবশ্য এই ব্যাপারটা নিয়ে বাবার পার্সোনাল ইন্টারেস্টের কারন আমি ঠিক বুঝতে পারি । ঐদিন নিশির বাবা বাসায় এসে বাবাকে যা ইচ্ছে তাই বলে গেছে । তিনি একটা কথাও বলতে পারে নাই । আমাকেই অবশ্য কোন কথা বলে নাই । মুখ গম্ভীর হয়ে থেকেছে । কিন্তু তার চেহারা দেখে মনে হয়েছে তিনি চান আমি যেন নিশিকে বিয়ে করি ! এক মাত্র নিশির বিয়ে করলেই তিনি শান্তি পাবেন এমন একটা ভাব ! তাহলে নিশির বাবাকে টাইট দেওয়া হবে !
এর থেকেই তো সাহসটা পেলাম এমন একটা কাজ করার । বাবা হয়তো প্রথমে একটু চটবেন কিন্তু আমি জানতাম দিন শেষে তিনি খুশিই হবেন !

সাত দিন পরে নিশির বাবা নিজে আমাদের বাসায় এসে হাজির হলেন । তখন ওনাকে দেখতে খানিকটা বিধস্ত সেনাপতির মত মনে হচ্ছিল ! আমার বাবার কাছে এসে বলল
-আপনি আমার মেয়েকে খুজে দেন ! ভাইসাব আপনার পায়ে পড়ি ! আমার মেয়েটা কোথায় আছে কে জানে ? পুলিশও কিছু বলছে না ! ওরা বলছে মেয়ে স্বইচ্ছায় গেছে ।
বাবা নিশির বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি যে আপনার মেয়ে কে খুজবো এতে আমার স্বার্থ কি বলেন ? কেন খুজবো ?
এই কথা শুনে নিশির বাবা কিছুটা সময় কোন কথা বলতে পারলো না । কেবল তাকিয়ে রইলো বাবার দিকে । বাবা বলল
-হ্যা এমন যদি হত যে নিশি আমার ছেলের বউ তখন ও হারিয়ে গেলে আমি ওর খিজ লাগাতাম ! তাই না ? আপনি নিশ্চই বুঝতে পারছেন আমি কি বলতে চাইছি !

কিছুটা সময় চুপ থেকে নিশির বাবা বলল
-আমি তাতেই রাজি ! নিশি ফিলে এলে সে আপনার ছেলের বউই হবে !

বাবা খানিকটা বিজয়ী ভঙ্গীতে হাসলেন ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-যাও ! নিজের নিশির খোজে বের হও ! যত সোর্স আছে সব জায়গায় খোজ লাগাও !
তারপর নিশির বাবার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনি চিন্তা করবেন না বিয়াই সাহবে ! সব ঠিক হয়ে যাবে । আমার পুত্রবধু কে কেউ আটকে রাখতে পারবে না ! আপনি নিশ্চিন্ত হয়ে বসুন তো !

আমি কেবল হাসি মুখ নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম ! শুনেছি আমার বয়স থাকতে বাবাও এমন ছিল । কেবল নিজের টাই না আও কেয়েজন বন্ধুর বিয়েও নাকি তিনি বুদ্ধি করে করিয়েছিল !
নিজের বিয়ের বেলাতেও একই কাজ করেছিল । নানা তখন ফার্স্ট ক্লাস অফিসার ! পুলিশ নাকি বাবার পেছনে লেগেছিল সেই রকম ভাবে । কিন্তু শেষ পর্যন্ত বাবা এবং তার বুদ্ধির সাথে পেরে ওঠে নি । নানা নিজে মেনে নিয়েছে সব !

বাইরে এসে ফোন টা নিয়ে রুনু আপুর নাম্বারে ফোন লাগালাম ! ওপাশ থেকে রিং হওয়ার আওয়াজ আসছে !

(সমাপ্ত)
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×