somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এক ছুটির বিকেলে ......

২৮ শে অক্টোবর, ২০১৪ বিকাল ৪:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



ভালবাসার মানুষকে ঘৃণা করা যায় কখনও ! হ্যা অভিমান করা যায়, তার উপর রাগ করে থাকা যায়, খুব বেশি হলে ঘৃণা করার অভিনয় করা যায় কিন্তু ঘৃণা করা যায় না । তাই তো জাবিনকে এতো দিন পরে দেখেও মনের ভিতর কেমন একটা উতলা ভাব সৃষ্টি হল । যদিও অনেক কিছুই বদলে গেছে, তবুও ।

জাবিনের মুখটা আর আগের মত নেই । বয়সের ছাপ পরেছে স্পষ্ট ! তবুও আমার কাছে যেন সেই তেমনটিই মনে হল । হাসলে ওর গালে একটা টোল পড়তো ! এখনও নিশ্চই পড়ে ।
আমার মনের কথা বুঝতে পেরেই মনে হয় জাবিন হেসে উঠলো । আমি এতো দুর থেকেও হাসিটা যেন স্পষ্ট দেখতে পেলাম । এক ভদ্রলোকের সাথে হেসে কথা বলছে । নিশ্চই ওর হাজব্যান্ড হবে । বিয়ে করে সুখে শান্তিতে বসবাস করছে নিশ্চই !
বুকের ভেতরের সেই কষ্ট খানা আবারও জেগে উঠলো ! আমার কেন জানি মনে হল এখানে থাকাটা আর উচিৎ হবে না । জাবিনের সাথে চোখাচোখি হলে আবার অন্য ঝামেলায় পড়তে হবে । কষ্ট টা আরও বেশি জানান দিবে । এদিকে নিম্মি তো রয়েছেই । এই দুইজন যদি সামনা সমানি এসে হাজির হয় তাহলে এদের সংঘর্ষে আমি ধ্বংস হয়ে যাবো । জীবনের স্বাভাবিক সুখ টুকু হারিয়ে যাবে নিমিষেই !

আমি পেছনে ঘরতে যাবো ঠিক তখনই নিম্মি এসে হাজির । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি কোথায় যাচ্ছো ?
-রুমে যাচ্ছি ! ভাল লাগছে না !
আমার কথায় যেন হায় হায় করে উঠলো নিম্মি ! বলল
-কি বল এই সব ? একটু পরে ফানুশ উড়ানো হবে আর তুমি এখন রুমে যাবো ! এখনও তো ঠিক মত সন্ধ্যাও হয় নি !
-আমার ভাল লাগছে না । শরীরটাও কেমন জানি করছে
-কই দেখি
এই বলে নিম্মি আমার কপালে হাত দিল !
-কই কিছু না তো ! শরীর তো ঠান্ডা !
-আরে জ্বর হয়েছে নাকি যে শরীর গরম হবে ? এমনি ভাল লাগছে না । তুমি দেখো অনুষ্ঠান ! আমি গেলাম ।

নিম্মিকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাটা দিলাম হোটেলের দিকে । পেছন ফিরে চাইলে হয়তো নিম্মির অশ্রুভাজা চোখ দেখতে পাবো । আমার কাছ থেকে একটুও গরম কথা সে শুনতে পারে না । এখন নিশ্চই কেঁদে কেটে একাকার করবে ।
সমস্যা নেই । ওর সাথে ওর ছোট বোন আছে । খাালা-খালুও এসেছে আমাদের সাথে । কিছুটা সময় ওকে সঙ্গ দিতে পারবে । আমার এখন কিছুটা সময় একা থাকা উচিৎ ! এতোদিন পরে জেগে ওঠে কষ্টা টা ভুলার জন্য কিছুটা সময় একা পার উচিৎ !

ফানুষ উৎসব হোটেল থেকে একটু দুরে আয়োজন করা হয়েছে । হোটেলের করিডোরে হাটতে হাটতে হঠাৎ করেই লক্ষ্য করলাম কেউ একজন আমার রুমের সামনে দাড়িয়ে আছে । আরেকটু এগিয়ে যেতেই অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সেটা আর কেউ স্বয়ং জাবিন ! ওখানে ওকে একটা নীল রংয়ের শাড়ি পড়ে থাকতে দেখেছিলাম । হোটেলের পরিস্কার আলোতে দেখলাম রংটা ঠিক তেমন নীল নয় ! কি রং কে জানে !!
আর যাই হোক ওকে এখানে আশা করি নি !
আমাকে দাড়িয়ে পড়তে দেখে জাবিন বলল
-কি হল ? অবাক হলে খুব ?
-তুমি এখানে ?
-কেন আসতে পারি না ? এখন ছুটি মৌসুম চলছে । যে কেউই আসতে পারে এখানে । পারে না ?
-না মানে এখন, এই খানে ? তোমার না বীচে থাকার কথা ?
-ও ! তোমারও তো ঐ খানেই থাকার কথা ! চলে এলে যে !
আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না । ওকে দেখেই যে চলে এসেছি এই কথাটা বলতে মন চাইলো না ।
জাবিন বলল
-আমাকে দেখে চলে এসেছো ?
-হুম !
জাবিনও দেখলাম চুপ করে গেল ! পুরো করিডোরে কেবল মাত্র আমরা দুজন । আর কাউকে দেখা যাচ্ছে না ! দুজন মানুষ একটা দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে চুপ করে । কারও সাথে কেউ কথা বলছে না আবার কাউকে কেউ ছেড়ে কেউ চলেও যাচ্ছে না !


জাবিন কোন দিনই আমার প্রেমিকা ছিল না । কিন্তু হয়তো প্রেমিকা হতে পারতো । যখন প্রথম বার ওকে ভালবাসার আমন্ত্রন জানিয়েছিলাম খুব যত্ন করে সেটা সে ফিরিয়ে দিয়েছিল । কি কারনে ফিরিয়ে দিয়েছিল সেটা অবশ্য আমার কাছে তখনও স্পষ্ট ছিল না । আজও হয় নি ! তখন আমার মনে কষ্ট দিতে চায় নি বলেই হয়তো আমার সাথে ওর সম্পর্কটা নষ্ট হয় নি । স্বাভাবিক ভাবে আমাদের দেখা হত, কথা হত । মাঝে মাঝে ঘোরাঘুরই হত ! এবং একটা সময় আমি অবাক হয়ে লক্ষ্য করতে শুরু করলাম যে ওর ভিতর একটা প্রেমিকা সুলভ আচরন দেখা যাচ্ছে । দেখতে শুরু করেছিলাম নতুন করে আশার আলো ! আমার উপর একটা নির্ভরশীলতার দৃষ্টি আমাকে খুব শান্তি দিত ! রাত জেগে চ্যাটিং কিংবা ফোনালাপ গুলোর কথা এখনও আমার মনে পড়ে । কেবল মুখ ফুটে ভালবাসি বলা বাকি ছিল মনে হয় ।

আমি নিশ্চিত ছিলাম এখন না বললেও একদিন সে ঠিকই বলে ফেলবে ! ফেলবেই ! কিন্তু যেমন টি ভেবেছিলাম তেমন টি হল না । আমার নিশ্চিত জানায় কিছুটা ভুল ছিল !
এক ছুটির বিকেলে ওর গম্ভীর মুখ দেখে আমার নিজের মাঝে কেমন একটা অনিশ্চয়তা দেখা দিল ! আমার উপর নির্ভরশীলতার জায়গায় সেদিন আমি অন্য কিছু দেখেছিলাম সেখানে !
জাবিন আমাকে ওর মোবাইল বের করে কয়েকটা ছবি দেখিয়ে বলল
-তোমার কাছ থেকে এটা আশা করি নি ।
ছবি গুলো আমার সাথে একটা মেয়ের রিক্সা চড়ার ছবি ছিল । আমার পরিচিত একটা মেয়ের ! আমি অবাক হওয়ারও সময় পেলাম না । এমন কি কিছু বলারও না । জাবিন বলল
-আমার কাছে মানুষটা আমার কাছে মিথ্যা বলেবে এটা আমি কোন ভাবতেও পারি না ! সত্য বলে কেউ আমার জানটা কেড়ে নিলেও আমার কোন আপত্তি নেই তবে মিথ্যা বলার মানুষটির সাথে এক মুহুর্ত নয় !
আমি বলার চেষ্টা করলাম
-শুনবে তো আমার কথা !
কিন্তু জাবিন কিছু শুনলো না ! সেই ছুটির বিকেলে আমাকে রেখে চলে গেল ! সেই শেষ দেখা ওর সাথে । তারপর আর দেখা হয় নি । আমি কয়েকবার চেষ্টা করেও আর যোগাযোগ করতে পারি নি ।

পরে একদিন শুনেছিলাম কোন এক ছোট ভাইয়ের কাছ থেকে নাকি আমার আর সেই মেয়েটার ছবি পেয়েছিল । সেই ছোট ভাই কেন এমন টা করলো আমি নিশ্চিত ছিলাম না । তবে জাবিনের উপর ঠিকই অভিমান জন্মেছিল । আমার উপর যদি ওর এতুটুকু বিশ্বাস না জন্মে তাহলে আমাকে কেমন করে ভালবসাবে সে আমাকে । অন্য কারো কথা শুনে আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে চলে যাওয়াটা আমি কিছুতে মেনে নিতে পারছিলাম না ।
সিদ্ধান্ত নিলাম ওর কাছে দুরে চলে যাবো !

তারপর আর দেখা হয় নি । কয়েক বছর পরে নিম্মির সাথে পরিচয় । পারিবারিক ভাবে বিয়ের পরে সুখেই ছিলাম । তাহলে আজকে কেন আবার নতুন করে পুরানো কষ্টটা অনুভব করলাম ! আসলেই কি সুখে ছিলাম !



আমি জাবিন কে বললাম
-এখানে এভাবে দাড়িয়ে থাকাটা উচিৎ হচ্ছে না ।
-চলে যেতে বলছো ?
-আমার স্ত্রী চলে এলে ঝামেলা হবে । ও আমার সাথে অন্য কোন মেয়েকে একদম সহ্য করতে পারে না ! আর তাছাড়া তোমার হাজব্যান্ডও নিশ্চই ব্যাপার টা সহজ ভাবে নিবে না !

জাবিন কিছুিটা সময় চুপ করে থেকে বলল
-আমি এখনও বিয়ে করি নি ! যাকে দেখেছো সে আমার বড় দুলাভাই ! আপার সাথে এসেছি !
কেন জানি বুকের ভেতর কষ্টের অনুভুতিটা আরেকটু বেড়ে গেল !
জাবিন বলল
-আমি আসলে তোমাকে ভুল বুঝেছিলাম । কিন্তু যখন ভুল বুঝতে পারলাম তখন তুমি অনেক দুরে । কোন ভাবেই তোমার কাছে ফেরৎ যেতে পারি নি আর । এবং তখনই বুঝতে পারলাম তোমনাকে আসলে কত টা ভালবাসি ! কিন্তু ...।
কিছুটা নিরবতা ! তারপর আবার জাবিন বলল
-এখানে তোমাকে গতকালই দেখেছিলাম । জানি এখন কিছুই করার নেই তবুও তোমাকে যে ভালবাসি এই টুকু বলতে এসেছিলাম । সে দিন আমি ভুল ছিলাম এটুকুই বলতে এসেছি !

আমি চুপ করে তাকিয়ে থাকি জাবিনের দিকে । অনুভব করলাম যে বুকের ভেতরের কষ্ট টা একটু একটু করে যেন বাড়ছেই !

-তোমার বউটা অনেক সুইট ! তোমাকে অনেক ভালোবাসে বোঝা যায় ! ওকে কষ্ট দিও না, কেমন ? যে মানুষ গুলো তোমাকে ভালবাসে সেই মানুষ গুলোকে কষ্ট দিলে জীবনে ভাল থাকা যায় না ! আর ভাল থেকো !
-আর তুমি ?
-ভুল করেছি । সেটার কষ্ট তো ভোগ করতেই হবে । নাকি ?

জাবিন আর কোন কথা বলল না । পেছন ঘুরে হাটতে লাগলো ! আমি তাকিয়ে তার চলে যাওয়া দেখলাম !
এক ছুটির বিকেলে জাবিন আমাকে ভুল বুঝে চলে গিয়েছিল । আর এই ছুটি বিকেলেও ও আমার কাছ থেকে দুরে চলে যাচ্ছে ! আমি কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে তার চলে যাওয়া দেখেছি !


অতিদির লেখা তুমি আমায় ডেকেছিলে ছুটির নিমন্ত্রনে অবলম্বনে....
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×