somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ভোর চারটা

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-স্যর আপনার এখানে আসাটা জরুরী !
ডিআইজি প্রিজন আরাম করে ঘুমাচ্ছিলেন । তখনই বিছানার পাশে রাখা টেলিফোনটা বেসুরো ভাবে বেজে উঠলো ! খান খান করে রাতের নিরবতা ভেঙ্গে দিল । সাথে সাথে প্রিজন ডিআইজির ঘুম থেকে জেগে উঠলো ।
হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে নিজের পরিচিত জুনিয়র অফিসারের কন্ঠস্বর শুনতে পেলো ।

-স্যর আপনার এখানে আসাটা জরুরী !
-এখন ?
-জি স্যর !
-কটা বাজে তোমার হিসেব আছে ?
-স্যর প্লিজ আপনি যতদ্রুত সম্ভব এখানে আসুন ! কিছু আর্মি কর্পোরাল কারাগারে ঢুকার চেষ্টা করছে । তাদের সাথে সর্বোচ্চ পর্যায়ের আদেশ আছে । কিন্তু কোন প্রকার কাগজ পত্র দেখাচ্ছে না তারা ! আমরা তাদের কে গেটের কাছে আটকে রেখেছি ।

ডিআইজি প্রিজনের ঘম ছুটে গেল মুহুর্তেই । তিনি জামা কাপড় পরে দ্রুত কারাগারের দিকে রওনা দিলেন ! সেখানে পৌছে গিয়ে দেখেন অবস্থা বেশ খারাপের দিকে । কালো পোষাক পরা কিছু অস্ত্রধারী গেটের কাছে অপেক্ষা করছে অধীর হয়ে । তাদের মুখে এক অধৈর্য্য এবং বেপরোয়া ভাব !
ডিআইজি তাদের কাছে যেতে একজন সামনে এগিয়ে এল !
-আমি মুসলেহউদ্দিন ! দেশের সর্বোচ্চ স্থান থেকে আমাকে এখানে পাঠানো হয়েছে । আশাকরি আপনি আমাদের কাজে বাঁধা হয়ে দাড়াবেন না !
ডি আইজি কি বলবেন ঠিক বুঝতে পারলেন না । এমনিতেও দেশের অবস্থা খুব বেশি ভাল না ! ক্যান্টোর্মেন্টের ভিতরের অবস্থা নাকি আজকাল ভালো যাচ্ছে না !
মুসলেহউদ্দিন আবার বলল
-আপনি পিএমের সাথে কথা বলুন ! দ্রুত ! আমাদের হাতে সময় কম !
ডিআইজি কি করবেন কিছুক্ষন চিন্তা করলেন । এদের কে এখানে উনি আটকে রাখতে পারবেন বলে মনে হয় না । তিনি নিজের অফিস থেকে পিএমের কাছে ফোন দিলেন !
-আমি ডিআইজি কেন্দ্রীয় কারা গার থেকে বলছি ! মাহামান্য রাষ্ট্রপতির সাথে একটু কথা বলতে চাই !
অপাশ থেকে একজন বলল
-একটু ধরুন !

ঠিক ৪৫ সেকেন্ড পরে রাষ্টপতি মোশতাক ফোন ধরলেন ! তিনি এতো রাতে ফোন করার কারন জানতে চাইলে ডিআইজি বললেন
-স্যর কয়েকজন আপনার রেফারেন্স কারাগারে প্রবেশ করতে চাইছে ! আমি কি তাদের প্রবেশ করতে দিবো ?
ফোনের ওপাশ টা কিছুটা সময় নিরবতা ! তারপর রাষ্ট্রপতি মোশাতাক বললেন
-Let them do whatever they want.
-স্যার আপনি কি নিশ্চিত ?
-শুনুন আপনাকে যা করতে বলা হয়েছে আপনি তাই করুন !


ডিআইজি জুনিয়র অফিসার টিকে কেন্দ্রীয় কারাগারের দরজা খুলে দিতে বলল । সাথে সাথে এও বলল যেন ওদের কাজে কোন প্রকার বাধা না দেওয়া হয় । প্রেসিডেন্টের অফিস থেকে অর্ডার এসেছে ।

খুলে গেল কারাগারের মূল ফটক। চত্বরে প্রবেশ করে কালো পোশাকধারীর নেতৃত্বে অস্ত্রধারী ৪ জন সৈন্য। তাদের মধ্য নেতা রিসালদার মুসলেহউদ্দিন পায়ে পায়ে এগিয়ে চলল একটি বিশেষ প্রিজন সেলের দিকে ।


বিশেষ প্রিজন সেলটির কাছে মুসলেহ উদ্দিন দেখেন তাদের যে চার জনের খোজে তারা এসেছিলেন দুটি পৃথক সেলে তাদের রাখা হয়েছে । তাদের কে দেখেই মুখে একটা কুটিল হাসি দেখা দিল মুসলেহউদ্দিনের । পাহাড়াদার কে বলে দুটি সেলের তালা খোলা হল । তারপর চার জন একটি সেল একত্র করতে নির্দেশ দিল !
এর আগেও এরকম কাজ কাজ করে সে অভ্যস্ত কিন্তু আজকের এই কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিতর এই বিশেষ মিশনে এসে মুসনেহউদ্দিনের যেন তার আসল পৈশাচিক রুপ টা দেখা প্রস্তুতি নিল !

মুসলেহউদ্দিন এবং তার সঙ্গের বাকি কালো পোষাক পরা সৈন্যরা নিজেদের অস্ত্র চার জনের দিকে দিকে তাক করলো ! সামনের চার জন যেন কিছু বুঝতে পারছিলনো না । পৃথিবীর কোথাও বন্দী হিসাবে কোন মানুষ কে রাতের আধারে হত্যা করাটা চরম কাপুরুষতার প্রতীক হিসাবে ধরা হয় ! কিন্তু মুসলেহউদ্দিনের সেদিনে লক্ষ্য নেই !

মুসলেহউদ্দিনের প্রথম শব্দ উচ্চারণের সাথে সাথে গর্জে ওঠে ঘাতকের হাতের স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র। ৬০ রাউন্ড গুলির পর সব কিছু স্তব্ধ।
সুনশান ।
নীরব ।

যাওয়ার সময় প্রিজন সেলের গেট টি তালা মেরে চাবি নিয়ে চলে গেল তারা !


পাশের বন্দীটি এতোক্ষন ভয়ে দেওয়ালের সাথে কান দিয়ে চুপ শুয়ে ছিল । ভয় ছিল ঘাতকেরা না আবার তার সেলেও প্রবেশ করে তার উপর গুলি চালায় ! কিন্তু ভারী বুটেও আওয়াজ দুরে সরে যেতেও মুখ তাকায় ! তার মত অনেকেই নিজেদের প্রিজন সেল থেকে উকি ঝুকি দেওয়া শুরু করেছে ।
ওদের সামনের গার্ড টি নিশ্চল মুখে দাড়িয়ে আছে সেলের সামনে ! সেও পাশের সেলটির সামনে যেতে সাহস পাচ্ছে না !
হঠাৎই সবাই শুনতে পেল কেউ যেন ব্যাথায় কাতর হয়ে পানি পানি বলে আওয়াজ করছে । আওয়াজ টি ভেসে আসছে পাশে সেল থেকে । কিন্তু সেখানে পানি দেওয়ার মত কেউ ছিল না । আস্তে আস্তে কন্ঠটি নিস্তেজ হয়ে নিশ্চুপ হয়ে যায় !


৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনের গল্প

লিখেছেন ঢাকার লোক, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৩৫

মাত্র মাস দুই আগে আমার এক আত্মীয়ের সাথে দেখা আমার এক বোনের বাড়ি। তার স্ত্রী মারা গেছেন তার সপ্তাহ দুই আগে। মক্কায় উমরাহ করতে গিয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমান

লিখেছেন জিনাত নাজিয়া, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:১২

" অভিমান "

তোমার ঠোঁটে বোল শিখেছি
তুমি আমার মা, কেমন করে
ভুলছ আমায় বলতে
পারিনা। এমন করে চলে
গেলে, ফিরে ও এলেনা। হয়তো
তোমার সুখেই কাটছে দিন,
আমায় ভাবছ না।

আমি এখন সাগর... ...বাকিটুকু পড়ুন

×