somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ আন্তর্জাতিক ছদরুল

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-হ্যালো ! আমি ছদরুল বলছি !
-ছদরুল ? কোন ছদরুল ?

ওপাশ থেকে কিছুটা সময় নিরবতা ! আমি অপেক্ষা করতে থাকি । তার সাথে মনের ভিতর ছদরুল নামটা খুজতে থাকি ! এমন সময় ওপাশ থেকে আবার ভেসে আসে
-কে তানভীর না ?
-হ্যা তানভীর বলছি ! আপনি কে বলছেন ?
-আরে আমি ছদরুল ! আন্তর্জাতিক ছদরুল !

আন্তর্জাতিক ছদরুল নামটা কানে আসতেই স্মৃতির পাতায় একটা চেহারা জ্বলজ্বল করে উঠলো । চট করেই সব কিছু মনে পড়ে গেল ! আমি কিভাবে একে ভুলে গেলাম ঠিক বুঝলাম না । আর যাই হোক একে তো ভুলে যাওয়ার কথা না !

আমি অতিদ্রুত বললাম
-হ্যা বল ! ছদরুল ! তুই এতো দিন পরে ? কোথায় আছিস ?
-আরে, আমি তোর বাসা টা খুজে পাচ্ছি না ! ঠিক মত ঠিকানা টা বলতো দেখি ! বেটা রনি তোর ঠিকানা দিল কিন্তু একটা আন্তর্জাতিক মানের ঠিকানা দিতে পারলো না ! বেটা কোন কাজেরই না !

খাইছে ! এই পাবলিক এই খানে কি করে ? বলা নেই কওয়া নেই ছদরুল হঠাৎ আমার বাসায় এসে হাজির !! একবার মনে হল এখনই ফোন রেখে দিয়ে মোবাইল বন্ধ করে দেই । এতো বড় পেইন কিছুতেই সহ্য করা ঠিক হবে না । কিন্তু যেহেতু ঢাকায় চলে এসেছে তাই ফোন বন্ধ করেতে মন সায় দিল না । আমি ফোনে ওকে আমার বাসার ঠিকানা বলে দিলাম ।

ফোন রাখার পরে রনিকে চিবিয়ে খেতে মন চাইলো । বেটা তুই আর কারো ঠিকানা দিতে পারিস নাই । এই ঝামেলা আমার গলায় পড়িয়ে দিছিস !
দাড়া তোকে একবার সামনে পাই তোর খবর আছে ! কিন্তু আমি একবার শুনেছিলাম ওর নাকি কি এক মানষিক সমস্যা দেখা দিয়েছে । কোন হাসপাতালে আছে নাকি ।
তারপর পর কি খবর কে জানে !


ছদরুল আমার বন্ধু নাকি বন্ধু না এই কথা কোন ভাবেই নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে না । ছোট বেলা থেকেই আমরা একই গ্রামে থাকি একই স্কুলে কলেজে পড়ালেখা করেছি । খেলাধুলাটাও একই মাঠে করেছি ।

বলতে গেলে অন্য সবার থেকেই আমার সাথে ওর যোগাযোগ হত বেশি । অন্য কেউ তো ওকে দুচোক্ষে দেখতে পারতো না । তার অবশ্য উপযুক্ত কারনও ছিল !

ছদরুলের আবার সব কিছুতে অতি নিরপেক্ষতার সাথে সাথে সেটার মান নিয়ে প্রশ্ন করার অভ্যাস আছে । ওর বাবা ছিল একজন উকিল ! উনিও প্রায়ই প্রায়ই কোন কেইসে হেরে গেলে সবাইকে বলে বেড়াতো এই কেইসে আন্তর্জাতিক মানদন্ড রক্ষা করা হয় নাই । কেউ নিরপেক্ষ ছিল না । বাবার স্বভাবও কি না পেয়েছে সব কিছুতেই ছদরুল আন্তর্জাতিক মান, নিরপেক্ষ বলার একটা অভ্যাস দাড়িয়ে গেছে ।

প্রথম প্রথম কেউ এটা গা না করলে বয়স বাড়ার সাথে সাথে ছদরুলের এই অভ্যাসটা দিনে দিনে বাড়তেই লাগলো ! কোন খেলায় হেরে গেলেই সে চিৎকার করে বলতো তার সাথে নিরপেক্ষতা বজায় রাখা হয় নাই । এই খেলা আন্তর্জাতিক মানের হয় নাই । খেলার আগে কোন কথা নেই । শুরু সময় সে ঠিকই চুপচাপ থাকে । কিন্তু হেরে যাওয়ার পরেই প্রতিদিনের প্যান প্যান শুরুখয় !
প্রতিদিন খেলার হারার পরে তার মুখ থেকে এইকথা শুনে শুনে পাড়ার ছেলেরা বেশ বিরক্ত হয়ে গেল । তাকে আর কেউ খেলায় নিতে চাইতো না !

এদিকে পরীক্ষার খাতায় কম নাম্বার পেলেই স্যারের সামনে চিৎকার করে বলতো স্যার তার খাতা নাকি নিরপেক্ষ ভাবে দেখেনি । খাতা দেখার মান আন্তর্জাতিক মানের হয় নি ! সব স্যার টুকটাক ধমক দিলেও আমাদের জহির স্যার ছিলেন খুব রাগি । তার সামনে এই কথা বলার পরে একদিন এমন মাইর দিলেন যে ছদরুল ঠিক সোজা হয়ে দাড়াতো পারলো না ! যখন স্কুল থেকে হেটে হেটে বাড়ি যাচ্ছিল পেছন থেকে ক্লাসের পুলাপাইন হাসতে হাসতে বলতে লাগলো
-কি রে ছদরুল মাইর খানা আন্তর্জাতিক মানের হইছে তো ?

আমরা ভেবেছিলাম এর পর থেকে মনে হয় ছদরুলের আন্তর্জাতিক মনভাবের কিছুটা সুমতি হবে কিন্তু আরও যেন বেড়ে গেল ! এর পর থেকে সব কিছুতেই আন্তর্জাতিক মান খুজতে লাগলো !
ত্যাক্ত বিরক্ত হয়ে তার বাবা তাকে কম বয়সেই বিয়ে করিয়ে দিল । ভেবেছিল নতুন বউ আসলে মনে হয় তার নিরপেক্ষতা, আন্তর্জাতিক মান এসবের ব্যাপারে ঝামেলা কমে যাবে ।
কিন্তু ঝামেলা বেঁধে গেল বিয়ের প্রথম দিনেই । মানে বাসর রাতেই । বাসর রাতে ছদরুলের বউ যখন ছদরুলের জন্য অপেক্ষা করছিল তখন ছদরুল দরজার সামনে দাড়িয়ে মনে মনে বিয়ের মান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করছিল । এক সময় সন্দেহ নিয়ে বাসর রাতে ঢুকলো ! বাসর রাতে বউ যখন ছদরুলে কাছে আসতে চাইলো ছদরুল তখন বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়িয়ে বলল
-না না না !
নতুন বউ খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বলল
-কি ?
-এ হতে পারে না !
-কি হতে পারে না ?
-এই বিয়ে নিরপেক্ষ আর আন্তর্জাতিক মানের হয় নাই ! এই বিয়ে আমি মেনে নিতে পারি না !
নতুন বউ কাঁদো কাঁদো হয়ে বলল
-তুমি এই সব কি বলছো ? আন্তর্জাতিক মান মানে ? নিরপেক্ষতা মানে কি ?
-আমি ওসব জানি না ! তবে আমার কাছে মনে হচ্ছে আন্তর্জাতিক মান দন্ড মেইনটেইণ করা হয় নাই ! আমি মানি না !

বউ আরও কিছুক্ষন বুঝানোর চেষ্টা করলো । কিন্তু ছদরুল কিছুতেই বুঝতে চাইলো না । শেষে বিরক্ত হয়ে ছদরুলের পিছনে লাথি মেরে ওকে ফেলে চলে গেল বাসর রাতেই !

আন্তর্জাতিক মান দন্ড নিয়ে ছদরুল একা একা নিজের বাসর রাত কাটালো । তারপর থেকে নাকি ছদরুলের মাথায় সমস্যা আরও বেড়ে যায় ।


তারপর আমি ঢাকায় চলে আসি পড়া লেখার জন্য । এক সময় পড়ালেখা শেষও হয়ে যায় ! চাকরীবাকরী ব্যস্ততার কারনে ছদরুলের খবর আর রাখা হয় নি । আজকে এতোদিন পরে ছদরুলের খবরা খবর পেয়ে পুরানো অনেক কথাই মনে পড়ে গেল !

আমি ছদরুলের আসার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি । ঠিক এমন সময় আমার ফোনে আবার একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে ফোন এসে হাজির !
আমি হ্যালো বলতেই ওপাশ থেকে একজন বলে উঠলো
-তানভীর রহমান বলছেন ?
-জি । কে বলছেন ?
-দেখুন আমরা আলো দিশা মানষিক হাসপাতাল থেকে বলছি !
-জিু বলুন !
-আমাদের কাছ থেকে একজন মানষিক রোগী পালিয়েছে আজ সকালে ! তার রেখে যাওয়া কিছু কাগজ পত্র থেকে আপনার নাম্বার টা পেয়েছি !
আমি খানকিটা সঙ্কিত গলায় বললাম
-রোগীর নাম কি ?
-রোগীর নাম ছদরুল আহমেদ !
-আন্তর্জাতিক ছদরুল ?
-জি জি ! এই নামেই আমরা ওকে ডাকতাম । সব কিছুতেই আন্তর্জাতিক মান, নিরপেক্ষতা খুজে বেরায় ! আমরা সম্ভব সব জায়গায় সবার সাথে যোগাযোগ করেছি ! আপনার সাথে কি সে যোগাযোগ করেছে ?


আমি কি করবো কিছু সময় ঠিক বুঝতে পারলাম না । যডি বলি যোগাযোগ করেছে তাহলে নিশ্চই এরা এসে ছদরুল ধরে নিয়ে যাবে । পাগলা গারদে নিয়ে আন্তর্জাতিক মানের ট্রিটমেন্ট দিব ! কিন্তু যদি না বলি তাহলে বাইরের লোকজন কে জ্বালিয়ে মারবে । আন্তর্জাতিক মান দন্ড আর নিরপেক্ষতা নিয়ে বিচার করলে তো মনে হয় সত্য কথাই বলা উচিৎ ! আমি বললাম
-জি করেছিল !
-আপনি আপনি দয়া করে যে কোন ভাবে তাকে কিছুক্ষন আটকে রাখেন আমাদের আসা পর্যন্ত ! বেটা আমাদের বেশ ভুগিয়েছে । এবার কাছে পেয়ে নেই আন্তর্জাতিক মানের ইলেক্টিক শক না দিলে বেটা ঠিক হবে না ! আপনার বাসার ঠিকানা টা বলুন জলদি ! আমরা আসছি !



আমি বাসার ঠিকানা বলে অপেক্ষা করতে থাকি ! আজকে ছদরুলের জন্য আন্তর্জাতিক মানের ইলেক্ট্রিক শক অপেক্ষা করছে !


(আলিম আল রাজি ভাইয়ের আন্তর্জাতিক মানের বাসর রাতের গল্প থেকে এইটা লেখার উৎপত্তি)
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×