somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ মুখপাত্র বদরুল ;)

০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৫:২৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হন্তদন্ত হয়ে টিপু ঘরে ঢুকে দেখে মুখপাত্র বদরুল ভাই গম্ভীর হয়ে বসে আছে । সামনে তার আইফোন টা পরে আছে অবহেলায় । ঘরের ভিতর আরও কয়েকজন বসে আছে তবে কারই মুখে কোন কথা নেই । সবাই বেশ চিন্তিত । বেশ গম্ভীর !

-বদরুল ভাই !
মুখপাত্র বদরুল ভাই ফিরে চাইলো ! তার মুখটা বেশ চিন্তিত । অনেক দিন থেকেই তাদের আয়-রোজগার নাই । মন মেজাজ ভাল থাকে কিভাবে ?
বদরুল বলল
-কি খবর টিপু ?
-ভাই খবর খুবই ভাল !
খুবই ভাল শুনে বদরুলের মুখ টা উজ্জ্বল হয়ে উঠলো । টিপুর দিকে অগ্রহ নিয়ে তাকিয়ে রইলো কিছু আশার বানী শোনার জন্য ।
টিপিু বলল
-ভাই খবর পজেটিভ ! আপিলের রায়ে ফাঁসি বহাল থাকছে না !
-সোর্স ?
-একেবারে পাক্কা ! কোন ভুল নেই !
-ঠিক তো ?
-কেন ভাই আগেরটার যে খোজ এনে দিয়েছিলাম সেই টা কি ভুল হয়েছিল বলেন ?

বদরুলের মুখে একটা হাসির রেখা দেখা দেয় । দেশের মানুষের কাছে তাদের গ্রহনযোগ্য নিয়ে অনেক আগে থেকে প্রশ্ন উঠেছে । মানুষ আর ওদের দিকে নজর দিতে প্রস্তুত না । অন্য দিকে একের এক ফাঁসির রায় হচ্ছে । তারা আন্দোলনের সুযোগ পাচ্ছে না ! আরে যদি ফাঁসির রায় হয়েই যায় তাহলে তারা আন্দোলন করবে কি নিয়ে !

তবে মনে হচ্ছে এবার আরেকটা ইস্যু খুজে পাওয়া গেছে । আগামী কালই আরেকটা রায় আসতেছে ! এবার যদি আবার মাঠ গরম করা যায় !

বদরুল সবার উদ্দেশ্য বলল
-তা হলে বন্ধুরা আমাদের হাতে আবারও সময় এসেছে । আগেরটা আমরা ভাল করে কাজে লাগাতে পারি নাই । আশা করি এবার আমাদের সুযোগ টা কাজে লাগাবো !
-কি কি করতে চান !
একজন বলে উঠলো !

-সবার প্রথমে আমাদের দরকার ব্যানার ! কারন রায় পেয়ে, ব্যানার বানাতে বানাতে অনেক সময় পার হয়ে যাবে । আমাদের হাতে এতো সময় নাই মনে হয় । রায় পাওয়ার সাথে সাথে আমরা ব্যানার নিয়ে মাঠে নেমে যেতে চাই !

আরিফ, তুমি এখনও প্রেসে চলে যাও ! গোটা দশেক ব্যনার বানিয়ে ফেলো !
আরিফ বলল
-কি লিখবো ভাই বলে ?
-আরে এসব কি আমাকে বলে দিতে হবে না কি । বড় করে কয়েক জায়গায় লিখবে আঁতাতের এই রায় মানি না মানবো না ! আরও কয়েক জায়গায় লিখবে এই আমলের সরকার, রাজাকারের পাহারাদার ।
মনে রেখো রেখা এগুলো এমন ভাবে লিখবে যেন সবার নজরে আসে । বিশেষ করে এই লাইন গুলো আর আমার নামটা !

আরিফ চলে গেল !

-এর পরে আসো আমরা মিশিল করবো ।
একজন বলে উঠলো
-স্যার ঝাড়ু মিশিল করলে কেমন হয় ?
-হুম ! সেই করা যেতে পারে ! আচ্ছা যাও তুমি তিনশ ঝাড়ুর অর্ডার দিয়ে ফেলো । আমাদের যেন সব কিছু হাতের কাছেই থাকে ।
-ভাই ! ৩০০ ! এতো লোক হবে তো ? পাবলিক তো আর আগের মত আসে না !
বদরুল ভাই কে আবারও কিছু টা সময় চিন্তিত দেখা গেল !
-আচ্ছা ঠিক আছে আপাতত ১৫০ টা ম্যানেজ কর !

-ভাই এরপর বেলুন উৎসব !
মুখপাত্র বদরুল একটু বিরক্ত হল ।
-কিসের ভিতর কি ?
-না মানে করেন আমাদের মনের লুকানো ক্ষোভ গুলো আমরা বেলুনের সাথে লিখে পাঠিয়ে /দিলাম !
-হুম ! ভাল আচ্ছা এই টা এখন না ! এইটা দুদিন পরে করা যাবো ! তবুও তুমি কথা বার্তা বলে কয়ে রাখও !
-আচ্ছা ভাই কোন বেলুন আনবো !
মুখপাত্র বদরুল চোখ পাকিয়ে বলল
-বোঝো না কোন টা আনতে হবে ! ফাজিল কোথাকার !
সে চলে গেল !

মুখপাত্র বলল
-এবার আমাদের আরেকটা কাজ হবে মাইকের ব্যবস্থা করা । এমন ভাবে মাইক লাগাতে হবে যেন পুরো এলাকা আমাদের কথা শুনতে পায় ! ঠিক আছে । এবং এখন থেকেই লাগাতে হবে ! আমরা আগেই মাঠ দখল করতে চাই !
-আচ্ছা ভাই । কোন সমস্যা নেই আমি ব্যাবস্থা করছি !

আরেকজন চলে গেল !


-আর শোন এখনই সবাইকে এখনই অনলাইনে একটিভ হতে বল । বেশ বড় বড় কিছু স্টাটাস লিখে রেডি রাখতে বল । রায় হওয়ার সাথে সাথে প্রতিবাদী সেই স্টাটাস গুলো সবার ওয়ালে ওয়ালে চাই আমি । ঠিক আছে ?

সবাই মাথা নাড়ালো !

-আরও একটা কথা । গতবার আমরা অভিশাপ দেওয়ার অনুষ্ঠান করেছিলাম । মানুষজন বেশ হাসিহাসি করেছিল । এবার এমন কিছু করা যাবে না !
-ভাই এবার এসএমএসের প্রক্রিয়া করলে কেমন হয় ?
-এসএমএস মানে ?
-না মানে, আমরা বললাম আর কি আপনারা যদি মনে করেন এই রায় আপনাদের মন মত হয়েছে, ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা হয়েছে, তাহলে ইয়েস লিখে এসএমএস করুন এই নাম্বারে ! নয়তো নো লিখে এসএমএস করুন ! একটা মোবাইল কোম্পানির সাথে কথা বললেই হয়ে যাবে !
-ব্যবাস্থা করা যাবে ?
-যাবে ভাই ! আপনি কেবল বলেন ! দেখেন ব্যবস্থা করে ফেলি !
-আচ্ছা ! দেখ তাইলে । আমার বদিকে বল আমার ভাষের স্পীচ তৈরি করতে । একটু যেন জ্বালাময়ী হয় ! ঠিক আছে ।



অনেক দিন পরে আবার মেসের এই ঘর টা কর্ম ব্যস্ত হয়ে উঠলো । আনেক দিন পরে সবাই আজকে খুব ব্যস্ত ! দেখা যাক সামনে কি হয় !



######
পরদিন সকালে সবাই সব কিছু নিয়ে প্রস্তুত । কেবল মাত্র রায় পড়া শেষ হলেও বদরুল এবং তার দলবল মিশিল নিয়ে ঝাপিয়ে পড়বে । মাইক প্রস্তুত । সেই রাত থেকে সেখানে নানান অনুষ্ঠান প্রচার করা হচ্ছে । মঞ্চের এক পাশে রেডি রাখা হয়েছে ২০০টার মত ঝাড়ু । সাথে সাথে গোটা বিশেক ব্যানার/ফেস্টুন রেডি রাখা হয়েছে । যদিও লোক সমাগোম এখনও খুব বেশি হয় নাই । কোন সমস্যা নেই । যা আছে এটা দিয়েই হবে । কয়েকটা টিভি সাংবাদিককেও দেখা যাচ্ছে ।

সবাই মোবাইল কিংবা ল্যাপটপে স্টাটাস লিখে বসে আছে । মুখপাত্র বদরুলের ভাষনের স্পীচ টা তার পকেটে ! গতকাল রাত থেকে সে কয়েকবার সেটা প্রাকটিসও করেছে ।
বদরুল আর দেরি সহ্য করতে পারছে না । ভাবতে ভাবেতেই সেই পুরানো দিনের কথা মনে পরে গেল । আহা ! আগে মানুষজন তাকে কত সম্মানই না করতো এখন কেউ তাকে ঠিক মত পোসেও না !


সব প্রস্তুতি সম্পমন্ন রায় পরা শুরু হয়েছে । টিভিতে লাইভ দেখাচ্ছে ।
এই তো এখন সাংবাদিক বের হয়ে আসবে !

বদরুল আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে । সাথে সাথে সে ভাষনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে । এই তো ব্রেকিং নিউজ দেখাচ্ছে টিভির স্ক্রিনের নিচে !


"মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত রাজাকার কামারুজ্জামানের ফাঁসির রায় বহাল রেখেছে আপিল বিভাগ !

বহাল !!!

সঙ্গে সঙ্গে সাংবাদিকরা বদরুল কে ঘিরে ধরলো !
-মুখ পাত্রসাহেব রায়ে আপনার অনুভুতি কি ?

বদরুলের চোখ তখন টিপুকে খুজে বেরাচ্ছে । কাছে পেলে তাকে চিবিয়ে খাবে ! এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে মুখপাত্র বলল

-রায়ে আমরা সন্তুষ্ট !




বিঃদ্রঃ জীবিত মৃত কিংবা অর্ধ মৃত কোন ব্যক্তি কিংবা ঘটনার সাথে এই গল্পের কোন মিল নেই । যদিও বা মিল পাওয়া তা কাকতালীয় ব্যাপার মাত্র ! ;)
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×