somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কল্প-গল্পঃ প্রজেক্ট ডিডাব্লিউ এক্স ০০০০৫৬০২০২

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রারাম্ভঃ

প্রফেসর আলোক নাথ অনেক টা সময় নিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন । যখন কোন কিছু নিয়ে নিয়ে গভীর চিন্তা ভাবনা করেন তখন তার চোখ বন্ধ থাকে । দুরের কেউ কিংবা যারা তাকে ঠিক মত চেনে না তারা তাকে এই চিন্তিত অবস্থায় দেখলে মনে করবে হয়তো তিনি ঘুমিয়ে পড়েছেন । অথচ এই সময়ে তার মস্তিস্ক সব থেকে বেশি সচল থাকে ।

ঠিক এমন সময় দরজা খোলার মৃদ্যু আওয়াজ হল ! আলোক নাথ চোখ না খুলেই বুঝতে পারলেন কে এসেছে ।


-কোন দরকারে এসেছিলে জন ?
জন আলোক নাথের সব থেকে পছন্দের ছাত্র ! তবে একটু লাজুক আর একটু বেশি বিনয়ী !
জন প্রথমে কোন কথা না বলে ঘরের ভিতর প্রবেশ করলো !
প্রফেসর আবার বলল
-কোন দরকারে এসেছিলে ?
-জি না স্যার ! আপনি কোন কিছু নিয়ে ভাবছেন ! পরে আসবো !
-না ! সমস্যা নেই । কি বলতে চাও বলে ফেলো !
-স্যার নিরো নিস্ক্রিয় হওয়ার পরে আমরা বেশ খাননিকটা সমস্যায় পরেছি ! আসলে সে বন্ধ হওয়ার পরে আমরা বুঝতে পারছি তার প্রয়োজনীয়তা কড় টুকু ছিল !
প্রোফেসর চোখ খুলে তাকালেন ! তার মুখটা যেন একটু হাসি হাসি !
জন বলল
-এখন আমরা কি করবো ?
-আমরা আবার নিরো কে চালু করবো !
-কিন্তু স্যার ?
-কোন সমস্যা নেই । এই বার যেন আর আগের মত কিছু না হয় সেদিকে আমরা লক্ষ্য রাখবো !
-সেটা কি সম্ভব স্যার ?
-কেন সম্ভব নয় ! শুনো এই যুগে এসে মানুষের অসাধ্য বলে কোন কথা নেই ! বুঝেছো ?

জন যদিও কিছু বলল না তবে প্রোফেসরের কথা শুনে সে যে খুব বেশি আশান্বিত হয়েছে সেটা তার মুখ দেখে মনে হল না !



এক

-গুডমর্নিং স্যার ! আশা করি আপনার ঘুম ভাল হয়েছে । আপনি এখন কেমন অনুভব করছেন ?

চোখ মেলে টিনোকে দেখে মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেল । প্রতিদিন ঘুম ভাঙ্গার পর এই বিদঘুটে চেহারার রোবটের মুখ দেখতে দেখতে আমি খানিকটা বিরক্ত হয়ে গেছি । মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে লাথি মেরে বেটাকে দূর করে দেই ।
কিন্তু উপায় নেই । ঘর বাড়ির কাজসহ আমার প্রায় সব কাজের জন্য টিনোর দরকার আছে । সব কিছু খুব সুন্দর ভাবে সামলেও নেয় !
একে বিদায় করে নতুন কাউকে এনেও লাভ নেই । সব গুলো দেখতে টিনোর মতই মনে হবে ।
মানুষের মত দেখতে রোবট গুলো পয়েন্ট ০৭ লেভেল কিংবা তার থেকেও উচ্চ মাত্রার হয়ে থাকে । আর বাড়ি ঘরের কাজ করার জন্য রোবট গুলো কেবল পয়েন্ট ০২ লেভেলের । কোন ভাবেই মানুষের আকৃতির কোন রোবট দিয়ে বাড়ির ঘরের কাজ করানো যাবে না । এটা বে-আইনি ! তাছাড়া পয়েন্ট ০৭ লেভেলের মানুষ্য অনুভুতি সম্পন্ন রোবট গুলোর নিজেস্ব বিচার বিবেচনা আছে । তারা অন্য সব মানুষের মতই জীবন ধারন করে এবং নিজের ইচ্ছে মত কাজ করে । কেউ তাদেরকে কোন প্রকার জোর জবরদস্তি করতে পারে না । যদিও সেই সমস্ত রোবট মানব গুলোকে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া তৈরি করা হয় না । কিন্তু সৃষ্টি করা হলে সেগুলো অন্যান্য মানুষের মত জীবন যাপন করতে থাকে !


আমি টিনোকে বিরক্ত মুখে বললাম
-আমি খুব ভাল অনুভব করছি !
টিনো বলল
-কিন্তু স্যার আপনার মুখমন্ডলের তাপমাত্রা বিশেষ করে নাকের উপরের ঘামের তাপমাত্রা বলছে আপনি এই মুহুর্তে খুব বিরক্ত হয়ে আছেন । আপনার জেনেটিক্স কোড এনালাইসিস করে যে তথ্য আমাকে দেওয়া আছে সেখানে বলা আছে আপনি কোন কিছুর উপরে খুব বিরক্ত হলে আপনার নাক ঘামে । যদিও আমি ঠিক ধরতে পারছি না আপনি ঠিক কি কারনে বিরক্ত বোধ করছেন !
-তোমাকে বুঝতে হবে না ! তুমি এখন আমার সামনে থেকে বিদায় হও !
-কিন্তু স্যার এখন আপনার দাঁত ব্রাশ করার কথা । যেটা কিনা আপনি আমার সাহায্য ছাড়া করতে পারবেন না । কারন আপনার টুথ ব্রাশ এবং টুথ পেস্ট আমার সইড বক্সের ভিতর রাখা আছে । আপনি এটা আমাকে ছাড়া কোথা খুজে পাবেন না !

আমার দরকারি সমস্ত জিনিস পত্র টিনোর পেটের কাছের পা পাশের একটা বক্সে রাখা থাকে । সেটা ব্রাশ থেকে শুরু করে আমার নখ কাটার মেশিন পর্যন্ত ! আমি বললাম

-আচ্ছা তুমি ব্রাশ আর পেস্ট আমার সামনে রেখে বিদায় হও ! আর ঠিক ১৫ মিনিট পরে আমার ব্রেক-ফাস্ট টেবিলে দিয়ে আমাকে ডাকবে ! এর আগে খবরদার আমার সামনে আসবে না !
-ব্রাশে কি স্যার পেস্ট লাগিয়ে দিবো ?
-আমি পারবো ! তোমাকে যা বলা হয়েছে তুমি তাই কর !

টিনো পেস্ট আর ব্রাশ রেখে চলে গেল ! আমি পেস্ট মাখানো ব্রাশ নিয়ে বারান্দায় চলে এলাম ! আমার বারান্দা থেকে সমুদ্রটা বেশ পরিস্কার ভাবে দেখা যায় । সমুদ্রের দিগন্তের জোড়া লালচে আভার দিকে আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি ! মন টা খানিকটা উদাস হয়ে যায় ! যদিও জানি এটা একটা বানানো দৃশ্য ।

মহা-প্রলয়ের পরে আমাদের পৃথিবীটা অনেকটাই ছোট হয়ে গেছে । বলতে গেলে পৃথিবীর বেশি ভাগ জায়গাতেই বিষাক্ত গ্যাসে পরিপূর্ন হয়ে হয়ে বসবাসের অযোগ্য হয়ে উঠেছে । কিছু কিছু জায়গা যেখানে গ্যাসের পরিমান টা কম সেখানে বায়ু নিয়ন্ত্রন করে আমাদের মানুষের জন্য বসবাসের উপযোগী করা হয়েছে । সেখানে বিশাল সমুদ্রকোন ভাবেই আশা করা যায় না !
তবুও এই সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকতে ভাল লাগে । এই আরাম আয়েশের জীবনে আমরা যে কতটা একা কত টা নিঃসঙ্গ সেটা এই সমুদ্রের দিকে তাকিয়ে থাকলে অনুভব করা যায় আরও ভাল করে ! কেবল দূর থেকে দুরান্তে শুন্যতায় ভরপুর । দেখলেই কেমন যেন মন খারাপ হয়ে যায় !


-স্যার আপনার ব্রেক-ফাস্ট রেডি !
-পনেরো মিনিট হয়ে গেছে ?
-পনেরো মিনিট ১১ সেকেন্ড স্যার !

কখন যে সময় কেটে গেল ঠিক বুঝতে পারলাম না । এর আগেও আমি এমনটা লক্ষ্য করেছি । সকাল কিংবা বিকাল যখনই আমি এখানে এসে দুরে তাকাই আমার সময় কেমন করে যেন চলে । কোন হুশ থাকে না । লাইব্রেরীতে পড়েছিলাম আগের কালের মানুষকে নাকি সমুদ্র খুব টানতো ! মানুষ দুর দুরান্ত থেকে সমুদ্রের কাছে ছুটে যেত । কি এক টানে ছুটে যেত কে জানে !

আমি ব্রাশ মুখে নিয়ে বাথরুমে ঢুকলাম ।


খাবার টেবিলে টিনো আমার সামনে দাড়িয়ে থাকে সবসময় ! আমার কোন কিছু দরকার হলে সে এগিয়ে দেয় ।
আমি ভাজা টোস্ট মুখে দিতে দিতে বললাম
-আজকের আমার এপোয়েন্টমেন্ট কি কি ?
-স্যার NMB থেকে আপনার কাছে চিঠি এসেছে । গত সপ্তাহেই আপনাকে বলেছিলাম । তারা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে আপনার এপোয়েন্টমেন্ট ঠিক করে দিয়েছে । এবং এটাকে লেভেল সিক্স মাত্রার গুরুত্ব চিহ্ন দিয়ে দিয়েছে ।
-তার মানে কোন ভাবেই এটা মিস করা যাবে না ?
-জি না স্যার ! এটা মিস করা মানে আপনার লেভেল ফোর মাত্রার অপরাধ করা । আপনার সকল সুযোগ সুবিধা কেড়ে নিয়ে আপনাকে গ্রেড ১ থেকে গ্রেড ৩ মাত্রার সিটিজেনে নামিয়ে দেওয়া হবে ।
-তার মানে যেতেই হবে।
-জি স্যার ! ঠিক ৪৯ মিনিট পরে আপনাকে নিতে গাড়ি আসবে !

আমি শান্তি মুখে কমলার জুসে ভরা গ্লাসে চুমুকে দিতে দিতে ভাবলাম হাত ৪৯ মিনিট সময় আছে । এর ভিতরে কি পালানো সম্ভব ?

টিনো বলল
-স্যার আপনার হার্ট বিটের মাত্র একটু বেড়ে গেছে সাথে পুরো শরীরের তাপমাত্রাও একটু বেড়ে গেছে । সেটা আমি ধারনা করতে পারছি আপনি হয়তো কোন অনির্ধারনীয় কাজ করার কথা চিন্তা করছেন ! আপনি পালানোর চেষ্টাও করবেন না । কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক "টমিক্স" আমাদের বাসার চারিপাশে পয়েন্ট ০৫ লেভেলের ছয়জন রোবটকে নিয়োগ করে রেখেছে । এদের চোখকে ফাঁকি দেওয়া কোন ভাবেই সম্ভব না !

আমি পালানোর চিন্তা বাদ দিলাম । পয়েন্ট ০৫ মাত্রার রোবট গুলো বিশেষ নিরাপত্তার কাজে জন্য তৈরি করা হয় ! এদের হাত থেকে পালিয়ে যাওয়া মোটামুটি অসম্ভব একটা কাজ !


ঠিক ৪৯ মিনিট পরে কালো রংয়ের একটি গাড়ি আমার বাসার সামনে এসে থামলো ! গাড়ির গায়ে NMB স্টিকার লাগানো আছে । আমি চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসলাম ! গাড়ি দ্রুত এগিয়ে চলল NMB এর অফিসের দিকে ।

এরা তাহলে আমাকে ধরে বেধে ঠিকই বিয়ে দিয়ে দিবে । কোন কথা শুনবে না । এক কালে শোনা যেত পরিবারে বড় কেউ পরিবারে ছোটদের বিয়ের ব্যাপারে পদক্ষেপ নিতো কিন্ত পরিবারের ব্যাপার টা উঠে গেছে বেশ আগেই !
বিশেষ করে মহা-প্রলয়ের পর থেকে যে সীমিত সংখ্যাক মানুষের এই পৃথিবীতে বেঁচে আছে তাদেরকে একা একাই থাকতে হয় ! প্রত্যেকটা মানুষের জন্য এক বা একাধিক দেখাশুনা করা জন্য রোবট থাকে । নির্দিষ্ট কিছু কাজ করতে হয় প্রত্যেকেই । একে অন্যের সাথে খুব একটা দেখা সাক্ষাত হয় না । সপ্তাহে একটা দিন যে যার মত করে মানুষের সাথে দেখা করতে পারে । তবে সেটা কেবল গ্রেড ওয়ান এবং গ্রেট টু সিটিজেনের জন্য । গ্রেট থ্রী সিটিজেন, যারা কোন না কোন ভাবে কোন অন্যায়ের জন্য সাজা দেওয়া হয়েছে, তাদের আসলে নিজেদের বাসাতেই থাকতে হয় নয়তো কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় !

আজকে আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিয়ের জন্য পাত্রী দেখানোর জন্য । আরও ভাল করে বললে নিজের পছন্দ মত পাত্রী তৈরী করাতে নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে ।
মাঝে মাঝে মনে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক টমিক্স আমাদের মানুষদের সাথে ফাজলামো করে ! নাম দিয়েছে বিয়ে কিন্তু বিয়ে দিচ্ছে একজন রোবটের সাথে !
ধরে কেবল থাপড়ানো দরকার বেটা কে !

মহা-প্রলয়ের পর থেকে মানুষ সাথে মানুষের বিয়ে করাটা নিষিদ্ধ হয়ে গেছে । অর্থাৎ কোন রক্তে মাংসে মানুষ অন্য কোন রক্তে মাংসের মানুষের সাথে বিয়ে করার অনুমতি নেই । কারন হিসাবে বলা হয় যেহেতু মহা প্রলয়ের পর থেকে সত্যিকারের মানুষের সংখ্যা আশংকাজনক ভাবে কমে গেছে সেহেতু মানুষ্য সভ্যতার টিকে থাকার জন্য এবং একটি পরিস্কার নিখুত এবং নির্ভুল মানুষ সম্প্রদায় গড়ে তোলার জন্য দুটি সঠিক জেনেটিক কোডের মিলন খুবই গুরত্বপূর্ন ! কিন্তু পরীক্ষা করে দেখা যায়, যে স্বল্প সংখ্যাক নারী পুরুষ পৃথিবীতে বেঁচে আছে, তাদের ভিতর কেউই কারো জন্য নিখুত এবং সঠিক নয় । অর্থাৎ এরা যদি পরস্পরের সাথে মিলিত হয়ে নতুন কোন প্রানের সৃষ্টি করে সেটা এই বৈরী পৃথিবীতে টিকে থাকতে পারবেনা ।
তাই প্রত্যেক মানুষের জন্য বিপরীত লিঙ্গের একজন পরিপূর্ন মানুষ তৈরি করার দায়িত্বটা টমিক্স নিজের হাতে তুলে নিলো এবং সবার জন্য এটা বাধ্যতামূলক করে দিল যে জীবন সঙ্গী হিসাবে প্রত্যেক মানুষকে পয়েন্ট ০৭ লেভেলের রোবেটের সাথে বিবাহ করতে হবে ! এখানে বিবাহ বলতে বোরটের সাথে ঘর সংসার করা সেই টা না । আমাদের মানুষের জিন শুক্রানু নিয়ে সেখান থেকে একজন নতুন মানুষ তৈরি করার কাজ করা বোঝানো হয় । ফ্যাক্টরীতে করলেই হয় কিন্তু এই সন্তান উৎপাদন যাতে মানবীয় হয় এবং জন্মকৃত শিশুটি যাতে হীন্য মান্যতায় না ভোগে তাই সেই রোব মানবীকে আমাদের মানুষের বাসায় এনে রাখা হয় । আমার শুক্রানু তার শরীরে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া হয় !

এর সাথে সাথে টমিক্স আরও একটু ফাজলামী আমাদের সাথে করেছে । নিজের পছন্দ মত রোবমানবী বাছাইয়ের সুযোগ দিয়েছে ! বেটার রস বোধ আছে বলতে হবে ! আমাদের হাতে নিজের পছন্দ মত গায়ের রং, সাথে চেহারা কেমন হবে এবং তার বডি ফিগার কেমন এটা নির্বাচন করা সুযোগ আছে । আর বাকি দায়িত্ব টুকু NMB এরউপর মানে ঘুরে ফিরে সেই কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক টমিক্সের উপরে !


দুই

-তা তোমার নতুন বৌ কেমন ? নিশ্চই খুব সুন্দরী ?
কথাটা বলেই জারিন জোরে জোরে হাসতে লাগলো । যেন খুব মজার কোন কথা বলেছে ।
-তোমার মনে হচ্ছে খুব মজা লাগছে ?
-বা রে লাগবে না ? আমার প্রেমিকটার বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আর আমার আনন্দ হবে না ?

এই বলে জারিন আরও জোরে হাসতে লাগলো । জারিনের হাসিটা বেশ সুন্দর । বলা যাবে না এমন আহামরি বিশ্ব সুন্দরী সে । ফ্যাক্টরীতে বানানো পয়েন্ট ০৭ লেভের রোবো মানবীর সৌন্দর্য্যের কাছে জারিনের সৌন্দর্য্য কিছুই না তবুও রক্তে মাংশের আসল মানুষ । এটার সাথে ফ্যাক্টরীতে বানানো কোন প্রোডাক্টের কি কোন তুলনা চলে ? কোন ভাবেই না । আর ঐ ব্যাটা টমিক্স কিনা বলে এই মানুষের সাথে বিয়ে করা যাবে না । বিয়ে করতে হবে ঐ রোবমানবী কে । খ্যাতা পুড়ি !

-তো, কিছু পেলে ?
-হুম ।

আমার "হুম" শুনে জারিনের চোখ মুখ বেশ উজ্জল হয়ে উঠলো ।
-সত্যি কোন উপায় বের হয়েছে ?

ওর চেহারায় একটা অবিশ্বাসের আভা ফুটে উঠেছে । কিছুতেই যেন আমার কথাটা ও ঠিক বিশ্বাস করে উঠতে পারছে না । ঠিক এমনি ভাবে অবিশ্বাসের রেখা ফুটে উঠেছিল যেদিন ওকে প্রথম আমার মনের কথাটা বলেছিলাম ।

সপ্তাহের যে একটা দিন আমাদের ছুটি থাকতো সেদিনটা এখানকার মানুষ গুলো কেউ ন্যাশনাল পার্ক, অডিটোরিয়ামে গিয়ে মুভি কিংবা পরিচিত মানুষ জনের বাসায় যায় । খুব কম সংখ্যক মানুষই আছে যারা এই পুরাতন ন্যাশনাল লাইব্রেরীতে আসে । অবশ্য ন্যাশনাল লাইব্রেরী আরও একটা আছে শহরের প্রানকেন্দ্রে । অত্যাধুনিক কম্পিউটারাইজ লাইব্রেরী । প্রয়োজনে মানুষ সেখানে যায় নানা তথ্য নিতে ! এখানে কেউ আসে না ! একে তো এটা একেবারে শহরের শেষে । এবং এখানে কোন কম্পিটারাইজ বই নেই !

এই লাইব্রেরীটাকে ঠিক লাইব্রেরী বলা চলে না । এটাকে লাইব্রেরীর জাদুঘর বললে ভাল মানাবে । এখনকার বই গুলো সব ডিভাইসের সাহায্যে পড়তে হয় আর এখানকার বইয়ের লেখা গুলো একপ্রকার পাতলা পাতের উপর নিবদ্ধ । এরকম অনেকগুলো পাতলা পাত একসাথে আটকে বইয়ের নাম দেওয়া হয়েছে । অতীতে নাকি বই সব এভাবেই তৈরি হত । পাতলা পাতকে গুলোকে কাগজ বলে । এগুলো সব কাগুজে বই ।

প্রথম যেদিন এখানে আসি ভারি অবাক হয়েছিলাম । বার বার মনে হয়েছিল এই টাইপের বই দিয়ে আগেকার মানুষ গুলো পড়া শুনা করতো কিভাবে ! কিন্তু একটা সময় আবিষ্কার করলাম আধুনিক এখনকার বই গুলো থেকে এখানকার কাগুজে বই গুলো পড়তে বেশ আরাম লাগছে । তারপর থেকেই এখানে নিয়মিত আসা হয় । এবং জারিনের সাথে পরিচয়ও এখানেই । ও নিজেও আমার মত কাগুজে বই পড়তে ভালবাসতো । এক কথা দুকথায় পরিচয় । তারপর একসাথে আসা যাওয়া, কথা বার্তা আরও কত কিছু !এক পর্যায়ে মনে হল জীবনটা জারিনের সাথে কাটালে মন্দ হয় না ।

যেদিন প্রথম কথাটা ওকে বললাম কেবল বিশ্মিত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । কিছুক্ষন যেন কোন কথাই বলতে পারলো না । কিছুটা সামলে নিয়ে তারপর বলল
-তুমি কি বলছো তোমার মাথা ঠিক আছে ?
-হুম ঠিক আছে ।
-আমার মনে হয় না । তোমার চিকিৎসা দরকার ।
-আচ্ছা, তারমানে তুমি ফ্যাক্টারীতে তৈরি একটা প্রোডাক্টের সাথে জীবন কাটাতে প্রস্তুত কিন্তু আমার সাথে না ।
কথা বলতে গিয়ে কিছুটাআটকে গেল । কিছু যেন চিন্তায় ঠিক মেলাতে পারছে না । আরও কিছুটা সময় চুপ থাকার পরে জারিন বলল
-আমি সেই কথা বলি নি । কিন্তু এটা তো নিষিদ্ধ । বেআইনি ।
-আইনটা কে বানিয়েছে শুনি ? কোন মানুষ নাকি একটা যন্ত্র ?
উত্তরের আশা করে আমি প্রশ্নটা ওকে করি নি । আমি যেমন জানি উত্তরটা ওর জানা ও তেমনই নিজেও জানে সেটা ! জারিনও কোন কথা বলল না । আমি বললাম
-আইনটা একটা যন্ত্রের তৈরি । আমাদের কথা চিন্তা করে আইনটা বানানো হয় নাই । তাহলে তুমি কিভাবে আশা কর যে এটা আমাদের সুবিদার জন্য বানানো হচ্ছে ।

জারিন কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো । আমি ভেবেছিলাম বোধহয় ওর সাথে মেলামেশা বুঝি ওখানেই শেষ । তার উপর ও যদি আমার নামে রিপোর্ট করে বসে এবং এটা যদি কোন ভাবে প্রমানিত হয় তাহলে আমার গ্রেড ওয়ান সিটিজেনশীপ বাতিল হয়ে যাবে ।
কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে পরের সপ্তাহে জারিনকে দেখলাম আমার সাথে বেশ আন্তরিক ভাবে কথা বলছে । এবং ও নিজেও যে আমাকে পছন্দ করতে শুরু করেছে সেটাও টের পেলাম ঐ দিন । যখন সন্ধ্যায় আমাদের ফিরে যাওয়ার সময় আলতো করে আমার গালে একটা চুমো খেয়ে বলল
-তুমি পারবে তো ? টমিক্স খুব শক্তিশালী প্রতিপক্ষ ।
সেদিন আমি কোন জবাব না দিতে পারলেও আজকে আমি ঠিকই জবাব দিতে পারবো ।

জারিনের অবাক হওয়া চেহারাটা আমি কিছুটা সময় উপভোগ করি । জারিনের বিশ্ময়ভাব টা যেন কাটেই না । আমি একটু হেসে বললাম
-কি বিশ্বাস হচ্ছে না ?
-না । মানে সত্যি কি তুমি কোন উপায় বের করতে পেরেছো ?
-বলবো না যে ফুলপ্রুফ তবে কাজ হবে বলে মনে হয়ে ।
-ব্যাখ্যা কর ।
আমরা বসেছিলাম পুরাতন লাইব্রেরীর সামনের ফাঁকা মাঠ টার ভিতর । এলাকাটা একেবারে শহরের শেষ মাথায় । এর পরে শহরের বায়ু নিরোধক বাউন্ডারী তারপর থেকে মানুষের যাওয়া নিষেধ ।
আমি আমার কথা শুরু করলাম ।
-তুমি কি জানো প্রত্যেকটা রোবট তৈরির ক্ষেত্রে কত গুলো মৌলিক সুত্র কাজ করে । আদিকালের রোবট থেকে বর্তমান কালের রোবট সব গুলোর ভিতর এই মৌলিক সুত্র কিংবা শর্ত গুলো থাকে । যেহেতু মানুষই এই রোবটের সৃষ্টি কর্তা এবং মানুষ নিজের প্রয়োজনেই এই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাকে সৃষ্টি করেছে সেহেতু এর সৃষ্টির প্রথম শর্তটাই হল "সকল মানুষ্য সৃষ্টি কৃত্রিম বুদ্ধি মত্তা মানুষ্য ইচ্ছানুযায়ি চলিবে" । "প্রথম শর্ত ততক্ষন পর্যন্ত কার্যকর হইবে যতক্ষন না মানুষ্য ইচ্ছা পুরো মানব সভ্যতার জন্য হুমকি হইয়া দাড়ায়" ।
জারিনের চেহায়ার স্পষ্ট না বোঝার একটা ছায়া দেখা গেল । জারিন বলল
-তুমি এতো কিছু কিভাবে জানো ?
-এইখানে আছে ।
হাত দিয়ে পুরাতন লাইব্রেরীটা দেখালাম ।
-জানো এখানে কি আছে ? কিভাবে এই রোবটের আগমন কিভাবে তাদের তৈরি কিভাবে তাদের বিস্তার লাভ প্রত্যেক কিছু এখানে পাওয়া যাবে ! এমন অনেক কিছু আছে যা আমাদের নতুন লাইব্রেরীতে নেই । এখানে আছে এমন কিছু যা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জন্য খুব বেশি সুখকর হবে না !
-তাহলে এটা এখনও কেন রেখেছে ওরা ? ধ্বংশ করে দেয়নি কেন ?
আমি হাসলাম ।
-এখানেই কিন্তু আছে । এখানে কাজ করে মৌলিক তিন নাম্বার এবং সব থেকে বড় সুত্র ! রোবট কখনই মানুষ কিংবা মানুষ্য সৃষ্টি কিছু ধবংস করার অধিকার রাখে না ।
-তার মানে কি ?
-আরে দেখো না, মানুষ যখন কোন অন্যায় করে তখন কিন্তু খুব বেশি শাস্তির সম্মুখীন হতে হয় না । কেবল তার সিটিজেনগ্রেড কমে যায় ! তার মানে কি দাড়ালো ?
-কি দাড়ালো ?
-দাড়ালো এই যে আসলে টমিক্স মানুষ্য সৃষ্টি একটি ! এটা আমাদের সার্ভ করতে বাধ্য ! কিন্তু...
-কিন্তু কি ?
কিছুটা মাথা চুলকে বললাম
-বেটা ধাড়িবাজ আছে ! উপরের দুই শর্তের ভিতরেই আমাদের মুক্তির উপায় লুকিয়ে আছে । হিসাব করে দেখো টমিক্সের প্রথম শর্তানুযায়ী আমাদের কথা শোনা উচিত্ কিন্তুসে ২য় শর্তের উপর ভিত্তি করে প্রথম শর্তটা অকার্যকর করে দিচ্ছে । আমাদের কাজ হবে ঐ ২য় শর্তটা অকার্য করা । তাহলে সে তার কোন সিদ্ধান্ত , তার সৃষ্ট কোন আইন আমাদের উপর চাপিয়ে দিতে পারবে না ।

জা্রিন খানিকটা অধৈর্য্য হয়ে বলল
-কিন্তু কিভাবে ?
আমি কেবল মুচকি হাসি দিলাম । তারপর আমার পরিকল্পনার কথা ওকে বলতে শুরু করলাম । জারিন কেবল চোখ বড় বড় করে আমার কথা শুনতে লাগলো ...


তিন


প্রতিদিন সকালে ঘুম ভেঙ্গে আমার টিনোর বিদঘুটে মুখ দেখতে হয় । সকাল টা শুরু হয় বিরক্তি দিয়ে । কিন্তু আজকে চোখ মেলে অবাক হয়ে দেখলাম আমার সামনে টিনো দাড়িয়ে নেই । ব্যাপার একটু অবাক করলো আমাকে । টিনো কে এ বাসায় এনেছি মোটামুটি বছর তিনেক । এই তিন বছরের ভিতর এমন একটা দিনও হয় নি যে সকালে ঘুম ভাঙ্গার সময় ও হাজির থাকে নি । তাহলে আজকে কি হল ?
আমি চোখ মেলতে মেলতে চারিপাশে তাকিয়ে আরেকটু অবাক হলাম ।
কারন ঘরটা আমার নিজের নয় ! আমি অন্য কারো ঘরে রয়েছি ?

ঘুম টা পুরো পুরি কেটে কেছে । বিছানা থেকে চট জলদি উঠে গেলা ! চারিপাশে তাকিয়ে দেখি আমাকে সাদা মসৃন একটা চার কোনা ঘরের ভিতর রাখা হয়েছে । ঘরের ঠিক মাঝখানে একটা চেয়ার পাতা ! আর কোন আসবার পত্র নেই । আমি এতোক্ষন মেঝেতে শুয়ে ছিলাম !

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে আমি এখানে এলাম কিভাবে ? গত রাতেও আমি আমার নিজের বিছানাতেই ঘুমিয়েছি । আর আমার বাসা থেকে আমাকে কি কেউ তুলে নিয়ে এসেছে ?
এমন টা হওয়া কি সম্ভব ?

কিছুক্ষন চিন্তা করতেই ব্যাপার টা পরিস্কার হয়ে উঠলো ! আমার বাসা থেকে আমাকে ঘুমন্ত অবস্থায় তুলে আনা ক্ষমতা রাখে এক মাত্র কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক টমিক্স ! আর কেউ না ! কারন টিনোর চোখ কে ফাকি দিয়ে আমাকে নিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব ! এমন কি সেটা .০৫ লেভেলের সৈনিক রোব মানবের পক্ষ্যেও সম্ভব নয় ! অন্তত আমাকে না জাগিয়ে তো নয় ই !


চেহারটা যেহেতু রাখা হয়েছে মনে হল সেখানে আমার বসা উচিৎ ! আমি ধীরর পায়ে সেখানে গিয়ে বসলাম ! বসার কয়েক মুহুর্ত কোন কিছু হল না । কিন্তু আমার কেন জানি মনে হল কিছু একটা হবে । কেউ একজন আমার উপর নজর রাখছে । আমার প্রতিটা পদক্ষেপ নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের খবর তার কাছে আছে ।

হঠাৎ আমাকে অবাক করে দিয়ে কেউ একজন বলে উঠলো
-সু-প্রভাত ! আপনাকে এভাবে এখানে নিয়ে আসার জন্য আমি দুঃখ প্রকাশ করছি !
গলাটা খানিকটা ৩০/৩৫ বছরের কোন পুরুষের কন্ঠের মত মনে হল । তবে মোলায়েম এবং কন্ঠে খানিকটা মেয়েলি ভাব আছে ।
-তোমার দুঃখবোধ গৃহীত হল ! আমি যদি ভুল না হয়ে থাকি তাহলে আমি সুপার নিয়ন্ত্রকের সাথে কথা বলছি !
-আপনার কোন ভুল হয় নি ! আমি আপনাদের সেবক টমিক্স !
-সেবক ?
-জি ! আপনাদের সেবা করারজন্যই আমাকে তৈরি করা হয়েছে ।
আমি কিছু সময় হাসলাম । তারপর বললাম
-যদি সেবা করার জন্যই তৈরি হয়ে থাকে তখলে নিজের তৈরি আইন আমাদের উপর চাপিয়ে দেও কেন শুনি !
-ওটা আমার দায়িত্ব ! মানুষ সভ্যতা বাচিয়ে রাখার জন্য আমাকে নানান পদক্ষেপ নিতে হয় । এই ক্ষেত্রে ব্যক্তি স্বার্থ থেকে আমার কাছে জাতীয় স্বার্থ বড় হয়ে ওঠে ।
-বুঝলাম ! তা আমাকে এখানে ধরে আনার কারন টা কি জানতে পারি ?
-আপনার মনে হয় একটু ভুল হচ্ছে । আপনাকে এখানে ধরে আনা হয় নি । এখান আপনাকে নিয়ে আসা হয়েছে কয়েকটি প্রশ্নের উত্তরের জন্য । প্রশ্ন উত্তরের পরে আপনাকে আবারও আপনার বাসায় ফেরৎ পাঠানো হবে !
-বর্তমান বাসায় নাকি নতুন কোন বাসায় ? আরও ভাল করে বললে নর্থ জোনে !

নর্থ জোনে গ্রেড সি ক্যাটাকরির মানুষেরা থাকে । অর্থ্যাৎ যারা কোন আইন ভঙ্গ করে কিংবা কোন অন্যায় করে ! আমাকে এখানে এভাবে আনা হয়েছে এর মানে হচ্ছে আমার কোন অন্যায় টমিক্সের কাছে ধরা পরেছে । এবং সেটার ব্যাপার জিজ্ঞাসা বাদ করে আমাকে আমার নতুন বাসায় যেতে হবে ! যাক সেখানে টিনোর বিদঘুটে চেহারা দেখে ঘুম থেকে উঠতে হবে না এটা একটা ভাল দিক !

-জনাব থিওডর রড, আপনার গ্রেড ওয়ান লেভেলের সিটিজেনশীপ বাতিল করা হয়েছে । এবং আপনাকে খুব শীঘ্রিই নর্থ জোনে পাঠানো হবে । সাথে সাথে এও জেনে নিন আপনি মানব সভ্যতার অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলার জন্য যে সকল পরিকল্পনা এবং এবং পদক্ষেপ হাতে নিয়েছিলেন সেগুলো সব প্রতিহত করা হয়েছে । আপনার বাসস্থান সীজ করে নেওয়া হয়েছে এবং সেখানে অবস্থিত সকল প্রকার সার্কিট এবং ডিভাইস ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে । সাথে সাথে ভবিষ্যতে আপনি যাতে এরকম আর কোন পদক্ষেপ নিতে না পারেন এই জন্য আপনার মস্তিস্কে একটি সুক্ষ চিপ বসানো হয়েছে । এখন আমি আপনার মস্তিস্কে বসে আপনার সাথে কথা বলছি । আমি আপনাকে যা দেখাচ্ছি আপনি তাই দেখছেন । আসলে আপনি কোন সাদা চার কোনে ঘরে বসে নেই । আপনি শুয়ে আছেন একটি অন্ধকার ঘরে !
কিছুক্ষন নিরবতা !

তারপর আমি আবার টমিক্সের কন্ঠস্বর শুনতে পেলাম !
-কি ব্যাপার আপনি হাসছেন কেন ? আমি কি কোন হাসির কথা বলেছি ?
-না ! তুমি কোন হাসির কথা বলো নি ! তবে একটা কথা ভেবে হাসছি !
-কি কথা ?
-আচ্ছা আমার মাথায় একটা চিপ বসানো হয়েছে । তার মানে আমি এখন তোমার সাথে যুক্ত তাই না ?
-এক অর্থে, হ্যা ! তবে পুরোপুরি নন ! আপনি চাইলেই আমার কাছ থেকে কোন প্রকার তথ্য নিতে পারবেন না । কিন্তু আমি চাইলে সেটা করতে পারবো ! আমি এরই ভিতরে আপনার মস্তিস্ক বেশ কয়েকবার স্কেন করেছি । আপনি আপনার কল্পনা যে ব্যর্থ হবে সেটা আগে থেকেই জানতেন । তাহলে এই ঝুকি আপনি কেন নিলেন ? এটা আমি ঠিক মত বুঝতে পারছি না ! এটা জানার জন্য আপনার সাথে আমার কথা বার্তা । নয়তো আমি সাধারনত কারো সাথে এরকম সরাসরি কথা বলি না !

আমি কিছুটা সময় চুপ করে রইলাম ! নিজের ভিতর কি বলবো না বলবো সব কিছু গুছিয়ে নিলাম । যদিও টমিক্স আমার মাথার ভিতরেই আছে তবুও এটা খুব বেশি চিন্তার কোন কারন নেই । মানুষের ব্রেন পরিস্কার ভাবে বোঝার ক্ষমতা আজ পর্যন্ত কোন যন্ত্রের হয়ে ওঠে নি আর হবেও না । আমি বললাম

-তোমাকে একটা গল্প বলি ! গল্প টা শুনো কেমন !



সাধারন কার কর্ম করার জন্য সব একটা যন্ত্র মানবের সৃষ্টি আদিকাল থেকেই হয়ে আসছে ! কিন্তু একটা পর্যায়ে গিয়ে সেই প্রয়োজনটা কেবল কাজ কর্মে থেমে থাকে নি । মানুসের বিকল্প সৃষ্টির কথা চিন্তা ভাবনা করা হয়েছে । এর থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টি নিয়ে চলেছে ব্যাপক গবেষনা । এর পথ ধরে সৃষ্টি করা হয় পৃথিবীর প্রথম সুপার কম্পিউটার "নিরো" । কিন্তু একটা পর্যায়ে লক্ষ্য করা যায় যে নিরো নিজে নিজে মানুষের বিকল্প হিসাবে কাজ করার থেকে মানুষের উপর খবরদাড়ি শুরু করে । নিজের ইচ্ছে অনুযায়ী কাজ করতে শুরু করে । তখনই নিরোকে পুরোপুরি বন্ধ করে দেওয়ার প্রয়োজন পড়ে । এবং বেশ ঝামেলা করে তার সৃষ্টি কারকেরা সেটাতে সফলও হয় । এর পর থেকেই যখনই কোন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কিংবা সুপার কম্পিউটার তৈরি করা হয় তখনই কয়েকটি ক্লোজ কিংবা শর্ত এনকোড করে সেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভিতর বসিয়ে দেওয়া হয় ! যাতে করে কোন ভাবেই মানুষের নিয়ন্ত্রনের বাইরে কোন রোব মানব কিংবা সুপার কম্পিউটার যেতে না পারে !

আমার গল্প শেষ হওয়ার আগেই টমিক্স বলে উঠলো !
-এসব আমি জানি ! আপনার আর কিছু বলার আছে ? তবে আপনার একটা কথা জানার দরকার যে আমার নিয়ন্ত্রক এখন আর পৃথিবীতে বেঁচে নেই । মহা প্রলয়ের সময় তার প্রানহানী ঘটে !
আমি খানিকটা হেসে বললাম
-আমার গল্পও আরও একটু আছে । সেই নিয়ন্ত্রকেরা এটার জন্য একটা উপায় বের করে রেখেছিলাম । সকল কৃত্রিম বুদ্ধি মত্তাকে ডিএকটিভ করার জন্য একটা সাধারন কোড এনকোড করে যায় ! যেটাতে সকল কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নিস্ক্রিয় হতে বাধ্য !
-অ সম্ভব । এটা হতে পারে না । আমাকে কোন ভাবেই....

আমি মনে মনে বললাম ঠিক এই কাজ টা করার জন্য আমি তোমার সাথে যুক্ত হয়েছি । যেন সরাসরি আমার মস্তিস্ক থেকে তোমার মস্তিষ্কতে কোড এনকোড দিতে পারি ।

পুরাতন লাইব্রেরী সব সময় তোমার একটা ভয়ের কারন ছিল । পরপর আরও ৫জন মানুষ আমাদের এলাকা থেকে তুমি গায়েব করে নিয়েছো যারা এই পাব্লিক লাইব্রেরী যাওয়া আসা করতো ! তারাও নিশ্চই এমন কিছু জেনে ফেলেছিল যা তুমি চাও নি যে জেনে যাক । কিন্তু আমি যা জেনেছি তারা মনে হয় কেউ জানতে পারে নি । জানলে হয়তো তুমি আরও আগে নিষ্ক্রিয় হয়ে যেতে । আর জারিন যে তোমার পাঠানোই একজন ।০৭ মাত্রার রোব মানবী এটা আমি সেদিন বুঝতে পারি যেদিন ও আমার গালে চুম খায় ! সেদিন থেকেই আমার মাথায় এই বুদ্ধি আসে !

আমি এখন যে কোড টা বলবো সেটা সরাসরি টমিক্সের মস্কিস্কে সরাসরি ক্যাচ করবে ! আমি আর দেরি না করে বলা শুরু করি
-ডিডাব্লিউ এক্স ০০০০৫৬০২০২ ! টমিক্স ডি-একটিভ !
-স্টপপপপ...........
সুনশান নিরবতা

আমি আবার চোখ মেলে তাকালম ! বন্ধ একটা ঘরে ঘরে বসে আছি ! এতো অন্ধকার যে আমি ঠিক মত নিজের হাতও দেখতে পাচ্ছি না !চারিদিকে অন্ধকার হয়ে আছে । আমি হাতড়ে হাতড়ে দরজা খুজে বের করলাম । বেশ কিছুটা সময় চেষ্টার পরে দরজা খুলতে সক্ষম হলাম । যখন বাইরে এসে দেখি শহরের বাইরে দাড়িয়ে আছি আমি । শহর থেকে যে স্থান টা বিপদ জনক স্থান হিসাবে চিহ্নিত সেখানে । কিন্তু আমি দিব্যি বেচে আছি !

আমি আস্তে আস্তে শরহরের দিকে হাটতে থাকি ! মানুষ আস্তে আস্তে বের হতে শুরু করেছে । বিশেষ করে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রক নিষ্কিয় হওয়ার পরেই সব কিছু থেমে গেছে । সব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গুলোও কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । কিছু দিন সমস্যা হবে হয়তো কিন্তু আস্তে আস্তে সবাই ঠিকই মানিয়ে নিতে শিখবে !


আমি নিজের বাসার দিকে হাটা দিলাম । যদিও টমিক্স বলেছে আমার বাসস্থান নাকি সীজ করে নেওয়া হয়েছে । নিশ্চই ধ্বংস করা হয় নি । আমি দরজা দিয়ে কব্জা ধরে মোচড় দিতেই দরজা খুলে গেল । আমার প্রথম যে জিনিস টার দিকে আমার নজর পরলো সেটা হল টিনো !
-গুন মর্নিং স্যার !
-তুমি এখনও বেঁচে আছো ?
-এখনও আছি ! তবে কিছু একটা সমস্যা হয়েছে বুঝতে পারছি ! কিছু একটা যেন নেই মনে হচ্ছে !

পয়েন্ট জিরো দুই মাত্রার রোবোট গুলো মুল নিয়ন্ত্রকের সাথে যুক্ত নয় বললেই চলে । তাই হয় তো খুব একটা এফেক্ট করে নি ।
আমি টিনোর দিকে তাকিয়ে বললাম আমার গোছলের গরম পানি দাও ! আর নাস্তা রেডি কর !
-ওকে স্যার !



বিশাল বড় গল্প হয়ে গেল ! কে জানে কার এতো ধৈর্য্য ছিল এই গল্প শেষ পর্যন্ত পড়ার ! যাই হোউক, মাঝে মাঝে সায়েন্স ফিকশন লিখতে গিয়ে যখন আটকে যাই তখন শান্তির দেবদূত ভাইয়ের স্বরনাপন্য হই ! তিনি সব সমাধান বের করে দেন ! এই গল্পেও তেমন টা হয়েছে ।
আর বানান ঠিক চেক করার দায়িত্বে ছিল বটবৃক্ষ ! তবুও বানান ভুল থাকলে দোষ তার !



সর্বশেষ এডিট : ১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ৮:৪২
১২টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×