somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরমানু গল্পঃ নিশির বদলে যাওয়া

১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৫:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আলী আকবার কখন যে নিজের মেয়ের গালে ঠাশ করে একটা চড় বসিয়ে দিলেন নিজেই ঠিক মত বলতে পারবেন না । এতো বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়েছিলেন যে, কি করছেন তার সবটুকুর উপর তার নিজের নিয়ন্ত্রন নেই ।
চড় মারার আওয়াজটা এতো জোরে হল যে রান্না ঘর থেকে আলী আকবার সাহেবের স্ত্রী সায়রা বানু দৌড়ে এলেন ! এসেই জানতে চাইলেন
-কি হয়েছে ?
আলী আকবার এখনও ঠিক মত সুস্থির হতে পারে নি । তিনি ঠিক মত বিশ্বাসই কারতে পারছেন না তার শান্তশিষ্ট মেয়ে নিশি তার সামনে দাড়িয়ে এমন কিছু বলে ফেলেছে !

নিশি তার মায়ের দিকে তাকিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল
-মা কিছু হয় নি । বাবা আমাকে একটা চড় মেয়েছে !
সায়রা বানু মুখটাতে আরও বেশি হা করে বললেন
-সেকি ! কেন ? চড় মারবে কেন ?
-এটা তুমি বাবার কাছেই শুনে নিও ।

নিশি আর কোন কথা না বলে নিজের ঘরের দিকে রওনা দিল । তার মুখের দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে তেমন কিছুই হয় নি । এভাবে চড় খাওয়াটা খুবই স্বাভাবিক !
নিশি চলে যাওয়ার সাথে সাথে সায়রা বানু তার স্বামীর দিকে তাকিয়ে বলল
-মেয়েটা কে এতো জোরে মারলে কেন ?
-মারলাম কেন ? ওকে ..... ওকে ........

আলী আকবার ঠিক মত কথা বলতে পারছেন না । তিনি আসলে বুঝতে পারছেন না তিনি কিভাবে কথাটা বলবেন । তার নিজেরই কথাটা ঠিক হজম হচ্ছে না ।

প্রতিদিন কার মত তিনি সকালে নাস্তা করে চা খাচ্ছিলেন এমন সময় নিশি তার সামনে এসে বলল
-বাবা তুমি কি আমার জন্য ছেলে দেখছো ?
আলী আকবার একটু চমকে গেল । নিশি অন্য মেয়েদের মত সব বাবাদের কাছে জিজ্ঞেস করার মত মেয়ে না । তিনি এতো দিন পোষাক থেকে শুরু করে যে স্কুল কলেজ ঠিক করে দিয়েছেন নিশি কোন প্রকার বাক্য ব্যয় না করে সেটা মেনে নিয়েছে । কোন দিন কোন প্রশ্ন করে নি । কিন্তু আজকে হঠাৎ এমন কথা কেন জানতে চাইলো ।
আলী আকবার সাহেব বলল
-হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন ?
-দেখছো কি না বল ?
-মেয়ে বড় হলে সব বাবাই মেয়ের জন্য ছেলে দেখে !
-দেখো না !
আলী আকবার একটু যেন ধাক্কার মত খেলো ! তিনি ঠিক বুঝতে পারলো না তিনি কি বলবেন !
নিশি তার হাতে ধরে রাখা একটা ছবি বাবার সামনের টি টেবিলে রাখলো !

আলী আকবার টেবিলের উপর রাখা ছবিটা দেখলো সেটা একটা ছেলের ছবি । তবে ছেলেটার পাশে তার নিজের মেয়ে নিশিও রয়েছে ।
নিশি বলল
-আমি এই ছেলে কে বিয়ে করবো !
-এই ছেলে কে বিয়ে করবো মানে ?
আলী আকবার যেন গর্জে উঠলো । কিন্তু আলী অবাক হয়ে দেখলেন নিশি তার গর্জনে বিন্দু মাত্র ভয় না পেয়ে বলল
-এই ছেলে মানে এই ছেলেকেই ! অন্য কাউকে না ! যদি জোর কর তাহলে আমার ঘরে ৪১ টা ঘুমের ঔষধ আছে সেগুলো আমি এক সাথে খেয়ে ফেলবো !

আলী আকবার নিজেকে আর ধরে রাখতে পারলেন না ! উঠে গিয়ে নিশির গালে চড় বসিয়ে দিল ! এবং চড় মারার পর অবাক হয়ে দেখলেন নিশি তাতে বিন্দু মাত্র বিচলিত হল না ! নিশির চোখের দিকে তাকিয়ে আলী আকবারের নিশিকে খুব বেশি অচেনা মনে হল । তার মনে হল সে তার মেয়েকে চিনে না ! যেন কোন অচেনা মেয়ে তার সামনে দাড়িয়ে আছে ।


-----
-তুমি সত্যি বলেছো তোমার বাবাকে ?
-হুম !
-তিনি কি বললেন ?
-কিছু না ! আমার গালে একটা চড় মারলেন ! তারপর বড় বড় দম নিতে লাগলেন !

অপু বুঝতে পারছে না সামনে বসা মেয়েটাকে সে কি বলবে ? এই কদিনেই মেয়েটা কেমন যেন অচেনা হয়ে উঠেছে । বিশেষ করে সাহসের দিক দিয়ে ! অপুর নিজেরই কেমন ভয় লাগতে শুরু করেছে ।
আগে মেয়েটা কেমন শান্ত আর ভিতু ছিল । সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতো ! আর এখন মেয়েটা কেমন করে তাকায় । তার তাকানোর ধরন টা বদলে গেছে ।
নিশি বলল
-শুনো ছেলে আগামী কাল তুমি বাবার সামনে গিয়ে দাড়াবে ।
-তারপর ?
-তারপরপ কি ? কথা বলবে । বাবা যা জানতে চাইবে তার উত্তর দিবে !
-যদি আমাকে তার পছন্দ না হয় ?
-সেটা পরের ব্যাপার ! তোমাকে যা করতে বলছি তাই করবে !
-আচ্ছা !

নিশি অপুর দিকে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা কেমন যেন কনফিউজড হয়ে গেছে । কেমন ভয়ে ভয়ে ওর দিকে তাকাচ্ছে । নিশির অপুর এই তাকানোটা দেখতে বেশ ভালো লাগছে । কথা জোরে অবশ্য বলা যেত কিন্তু বললে ছেলেটা নিশ্চই আরও একটু কনফিউজড হয়ে যাবে ! নিশি মনে মনে বলল শোন ছেলে তোমাকে ছাড়া আমার কিছুতেই চলবে না ! কিছুতেই না !



------
-তা বিয়ের পর আমার মেয়েকে খাওয়াবে কি ?
অপু কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না ! নিশির বাসায় এসেছে মিনিট পাঁচেক হল ! এর ভিতরেই নিশির বাবার প্রশ্ন শুরু হয়েছে ।
-কি কর ?
-কোথায় থাকো ?
-বাবা কি করে ?
-নিশির সাথে কত দিন ধরে পরিচয় ?

অপু কোন প্রশ্নের ঠিক মত জবার দিতে পারছে না । কথা বলার সময় তার গলা কাঁপছে । ভাইভা বোর্ডে গিয়েও তার এতো ভয় কোন দিন লাগে নি !
অপু কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিশি ঘরে ঢুকলো । হাতে নাস্তার ট্রে !
ওকে দেখে অপুর বুকে যেন একটু বল এল ! নিশি ওর দিকে তাকিয়ে ইশারায় একটু হাসলো !
নিশির দিকে তাকিয়ে আলী আকবার অপুর সামনেই বলল
-এই ছেলে আমার পছন্দ না !
নিশি আবারও শান্ত কন্ঠে বলল
-বাবা, তোমার পছন্দ হচ্ছে না কারন তুমি তাকে পছন্দের চোখ দিয়ে দেখোই নি । তুমি তো ওর আসার আগেই ওকে অপছন্দ করে বসে আছো !

কথা সত্যি ! তিনি আসার আগে থেকেই অপুকে অপছন্দ করে বসে আছেন । পরিবারের তার উপর কেউ কথা বলবে তিনি এটা মেনে নিতেই পারছেন না । কিন্তু তিনি খানিকটা ভয়েও আছেন নিশির কথার বিপরীতে তিনি কিছু বলতেও পারছেন না । মেয়েটা এই দুদিনেই কেমন যেন অচেনা হয়ে গেছে । তিনি কিছুতেই আগের মত জোর দিয়ে নিজের মেয়েকে কিছু বলতে পারছেন না । পাছে মেয়েটা অন্য কিছু করে ফেলে । কেবল বুড়ো সিংসের মত কেবল হুংকার ছাড়তে লাগলেন তাও কেবল মনে মনে !

নিশি বলল
-মায়ের তো অপুকে পছন্দ হয়েছে বেশ !
আলী আকবার বলল
-মানে কি ?
-মানে হচ্ছে নিশি এর প্রথম এ বাড়িতে আসে নি । মায়ের সাথে এর আগেও দেখ করে গেছে ।
-ও আচ্ছা ! তাহলে তলে তলে এতো দুর....।

ততক্ষনে সায়রা বানু বসার ঘরে চলে এসে দাড়িয়েছে । তিনি কিছুটা সময় নিজের স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে রইলো । তারপর নিজের কাছে খানিকটা অসহায় বোধ করলেন ! তিনি বুঝলেন এতো দিন কেবল তিনি মনেই করতেন তার পরিবার তার কন্ট্রলে আছে । কিন্তু বাস্তবতা তো অন্য কিছু !
নিশি হঠাৎ আলী আকবারের পাশে গিয়ে বসলো ! তারপর তার হাত ধরে বলল
-বাবা, আমি সারাটা জীবন তোমার কথা মত চলে ছি ! তুমি যা চেয়েছো তাি শুনেছি ! আজকে আমার কথা টা শুনো একটু ! প্লিজ !



-----
অপুর আসলেই একটু একটু ভয় ভয় করছে । নিশি মেয়েটার ভেতরকার এরকম হঠাৎ পরিবর্তন তার ভয়ের প্রধান কারন ! মেয়ের চোখের ভাষাও কেমন বদলে গেছে ।
তার উপর আরেকটা ভয়ের কারন টা হচ্ছে নিশির বাবার ওর কাছ থেকে ওর বাবার নাম্বার নিয়েছেন । নিশির সামনে ও কিছুতেই সেটা না দিয়ে পারে নি । অবশ্য অপুর মা নিশিকে চেনে । কিন্তু বাবাকেই অপুর সব থেকে বড় ভয় ! নিশিতো ওর বাবার সামনে ঠিকই সাহস দেখিয়েছে । অপু কি পারবে সেই সাহস দেখাতে !
-এই নাও !
পেছনে তাকিয়ে দেখে নিশি দাড়িয়ে । ওর হাতে একটা সাদা চায়ের কাপ !
অপুর হাতে কাপ টা দিতে দিতে বলল
-তোমার আব্বাকে ফোন করা হয়েছে । ওনারা আসছেন !
-বুঝতে পারছি !
-তুমি কি ভয় পাচ্ছো ?
-পাওয়া কি স্বাভাবিক না ?
-ও !! বাবুটা ভয় পেও না ! আমি আছি না !

অপু মনে মনে বলল "তুমি আসো এই জন্যই তো ভয় পাচ্ছি"
নিশি বলল
-এই মনে মনে কি বললা তুমি ?
-কিছু বলি নি তো ! কিচ্ছু না !
-তাই না ? যা ইচ্ছে বলে নাও । বিয়ের পরে মনে মনেও কিছু বলতে পারবে না বলে দিলাম !

এই বলে নিশি খুব জোরে হেসে ফেলল ! এটো জোরে হাসতে লাগলো যে নিশির হাসি দেখে অপুর কেন সব ভয় নিমিষেই দুর হয়ে গেল । মনে মনে বলল যে মেয়ে এরকম ভাবে প্রাণ খুলে হাসতে পারে সেই মেয়ে পাশে থাকলে কোন ভয় পাওয়ার কোন কারন নেই !


সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:০৫
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×