somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ অনলাইন স্ক্রিনশট কেলেঙ্কারি

০৪ ঠা মে, ২০১৫ দুপুর ১:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনলাইন জীবনে মাঝে মাঝে বিখ্যাত ব্যক্তিদের কিছু কুকীর্তি প্রকাশ পায় । বিশেষ করে নারী ঘটিত কোন কেলেংকারী ! আজকেও ঠিক তেমন একটা ঘটনা ঘটেছে । এক মেয়ে অনলাইনের এক বড় ভাইয়ের নামে যা তা বলে বেড়াচ্ছে । কিছু স্ক্রীনশর্ট প্রকাশ করেছে এমন কিছু কথা বলেছে যেগুলো তার অনলাইনের ক্যারিয়ার বলতে গেলে একেবারে শেষ করে দিবে ।

যাক ভাল । আমি মজা দেখতে লাগলাম ! এরকম কেলেংকারী ঘটার পরেই পুরো অনলাইন মোট তিন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায় । এক পক্ষ যায় সেলিব্রেটির দিকে আরেক পক্ষ যায় ভিটটিমের দিকে । আর শেষ পক্ষ তাকিয়ে তাকিয়ে মজা দেখে ! সুশীল জাতীয় সেলিব্রেটিরা আবার কোন পক্ষ নেয় না । কারন দুই পক্ষেই তাদের ফলোয়ার থাকে । এক পক্ষ নিলেই ফলোয়ার কমে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে ।

যাক আমি তাকিয়ে তাকিয়ে মজা নিচ্ছিলাম তখনই অনলাইনের সব থেকে বড় ভাই আমাকে ইনবক্সে নক করে একটা লিংক দিল । আমি লিংকের ভেতরে গিয়ে দেখি একটু আগে যে মেয়েটা স্ক্রিন শর্ট প্রকাশ করেছে তার লিংক ! আমি বড় ভাই কে জিজ্ঞেস করলাম কি ব্যাপার ভাই ?
এই লিংকের মেয়েটার সাথে একটু ভাব জমাও তো !

আমি তো আকাশ থেকে পড়লাম কথা শুনে । বড় ভাই বলে কি ?

তারপর বড় ভাই যা বলল তার সারমর্ম হইলো এই মেয়ে তাদের গ্রুপের একজনের নামে যা তা বলে বেড়াচ্ছে । এই মেয়েটার সাথে ভাব করে তারপর মেয়েটার নামেও এমন কিছু ছাড়াতে হবে !

আমি জানতাম এমন কিছু হবেই । অনলাইনের সেলিব্রেটিরা একটা মাফিয়ার মত । এদের এদের প্রতিপক্ষকে এরা স হজে ছেড়ে দেবে না এবং কোন না কোন ভাবে ঘায়েল করবেই !

আমি বললাম আমাকেই করতে হবে ?
বড় ভাই বলল
তুমি ছাড়া আর কে ? তুমি এই সব কাজে ওস্তাদ । মেয়েরা তোমার কথাতে পটবে ভাল । এবং জলদি !

কি আর করা । বড় ভাই বলে কথা । তাও আবার অনলাইনের সব চেয়ে বড় ভাই !

আমি মেয়েটিকে এক একটা ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠালাম ! দেখলাম আধা ঘন্টার ভিতরেই মেয়েটা এড রিকোয়েস্ট গ্রহন করে নিল ! প্রথম দিনই মেয়েটাকে নট করলাম না । আমি চাচ্ছি মেয়েটা আগে আমার ওয়াল ঘুরে যাক !

একটু পরে টের পেলাম মেয়েটা আমার ওয়ালে ঘুরছে । কারন টুকটাক লাইকের নটিফিকেশন আসছে । আমি সময় নিতে থাকলাম । চট জলদি কথা বলার ইচ্ছে টা দমন করে নিলাম । সময় এখনও পড়ে আছে ।

নীলাঞ্জনা নীলিমা !

ফেসবুকীও নাম ! যদিও জানি নাম এরকম হবে না ! জানতে হবে !

-হ্যালো !
মেয়েটি কিছু সময় পরে উত্তর দিল !
-হ্যালো !
-ভাল আছেন ?
-জি !
-মন ভাল ?
-কেন এই কথা জানতে চাচ্ছেন ?
-এমনি বলতে পারেন !
-ও আপনিও জানেন সব কিছু !
-সবাই জানে !
-আপনার কি মনে হয় ! আমিই কি খারাপ ?
-তাই মনে হলে কি আমি আপনার সাথে এখন কথা বলতাম ?

কিছক্ষন কোন কথা নেই । তারপর মেয়েটি বলল
কাল থেকেই ঐ কুত্তাটার চেলাবেলারা এমন ভাবে আমাকে আক্রমন করা শুরু করেছে আমি আসলে ভুলেই গেছিলাম কেউ আমার পক্ষেও কথা বলতে পারে ! থ্যাংকস !
-মেনশন নট ! আচ্ছা আপনাকে একটা কথা জানতে পারি ?
-নাম তো দেওয়াই আছে !
-ডাক নাম । যেটা আপনার বাসায় ডাকে !
মেয়েটা বলল
-কেন জানতে চাচ্ছেন ?
-এমনি ! না চাইলে বলতে হবে না !
-নীলি !
-ওকে নীল ! ইটস নাইস টকিং ! গুড ডে !

এরপর থেকে মেয়েটার সাথে আমার কথা শুরু হল । সপ্তাহে যেতে না যেতে না যেতে সবাই সব কিছু ভুলে গেল, ইউ নো, আমার ফেসবুক প্রজন্ম যেমন হয়ে থাকে ঠিক তেমন ! এদের সব কিছু বালকের প্রথম যৌনানুভুতিট মত । ফুস কইরা আসে আট ঠুস কইরা চইলা যায় !

যাক মেয়েটার সাথে আপনি থেকে তুমি এরপর ফেসবুক ইনবক্স থেকে ভাইবার ইনবক্সে যেতে সময় লাগলো না । এরপর সেখান থেকে ফোনের ইনবক্স এরপর কল !
বুঝতে অসুবিধা হল না মেয়েটা আমার প্রতি দুর্বল হতে শুরু করেছে । এরপর মেয়েটার সাথে কয়েক ধাপ এগিয়ে গেলাম । দেখাও হয়ে গেল ! দেখতে শুনতে খারাপ না ! বিশেষ করে মেয়েটার হাসিটা বেশ মায়াময় ! তাকিয়ে থাকলে তাকিয়ে থাকতেই ইচ্ছে করে ।

একটু নিজের কাছে খারাপই লাগছিল যে এই মেয়েটাকে আমি ঠকাচ্ছি ! মেয়েটার সাথে সত্যি কারের একটা সম্পর্ক তৈরি গড়ে উঠলে ভাল হত ! কিন্তু আমার নিজেরও অনলাইন ক্যারিয়ারের ব্যাপার জড়িত এর সাথে । বড় ভাই আমাকে তাদের সারিতে স্থান দিবে বলে দিয়েছে যদি আমি এই কাজটা ভাল করে করতে পারি !

নীলি একদিন হঠাৎ করেই আমার সাথে দেখা করতে চাইলো । ঐ দিন কেন জানি দেখা হওয়ার পরেও নীলির মন টা কেমন একটু বিসন্ন ছিল । বারবার জানতে চাওয়ার পরেও মেয়েটা কোন উত্তর দিল না । অন্যান্য দিন মেয়েটা খুব হাসি খুশি থাকলো কিন্তু ঐ দিন কেমন যেন একটু মন মরা ছিল ! আমাকে একটু অবাক করে দিয়েই মেয়েটা সেদিন চলে গেল ।

ঐ দিন রাতেই আমি অনালইনে ঢুকেই একটা ধাক্কার মত খেলাম । দেখি নীলি কদিন আগে যার স্ক্রিন শট প্রকাশ করেছিল তাকে নিয়ে একটা স্টাটাস দিয়েছে । যার মূল কথা হল সে দিন যা বলেছে সেটা ছিল তাদের দুজনের মিলে সাজানো নাটক ! দেখলাম সেই সেলিব্রেটিও এটা সমর্থন করলো । তারা আসলে দেখতে চাইলো কে কে তাদের সাথে আছে এবং কার কি প্রতিক্রিয়া ! কিছু কিছু মানুষের আসল রূপ বের করার জন্যই নাকি এই কাজ !

খাইছে । এই মেয়ে বলে কি !

আমি বড় ভাইকে সাথে সাথে জানাতে যাবো ঠিক তখনই বড় ভাই আমাকে নিয়ে একটা স্টাটাস দিল ! তাকিয়ে দেখি নীলির সাথে আমি ইনবক্সে যে সব কথা বলেছি সেই সব নিয়ে ! একটু ঘুরি পেঁচিয়ে লেখা তাই লেখা গুলোর মিনিং অন্য রকম ঠেকছে !

আমার অনলাইনে একটা ক্লিন ইমেজ আছে । সেটা বলতে গেলে সাথে সাথে ধ্বংশ হয়ে গেল ।

আমার সব কিছু বুঝতে খুব বেশি কষ্ট হল না । আগেই বলেছি এরকম কোন ঘটনা ঘটলেই দিন পক্ষ হয়, দেখলাম এবার আমার বিপক্ষে স্টাটাসের পর স্টাটাস আসতে লাগলো ! আমি বুঝে গেলাম আমার আর এখানে টেকা সম্ভব না । কিছু ব্যাখ্যা করতে ইচ্ছে হল না ।

একবার মনে হল নীলিকে খুব করে গালি দেই তারপরেই মনে হল নীলি ঠিক তাই করেছে যেমন টা আমি তার সাথে করেছি ! এর পেছনেও সম্ভবত সেই বড় ভাই আছে ।

আইডি বন্ধ করে দিলাম । একবার ভেবেছিলা নতুন আইডি খুলে আবারও ফিরে আসবো কিন্তু তারপর মনে হল কি দরকার ! অনলাইন জগৎ ছেড়ে চলে গেলাম !

#####

তারপর বেশ কয়েক বছর কেটে গেছে । আমারও পড়ালেখা শেষ হয়েছে । চাকরিতে ঢুকেছি ! সময় ভালই কাটছিল ঠিক এমন সময় আবার নীলির সাথে দেখা হয়ে গেল !
আমার অফিস সাথে আরও কয়েকটা অডিস মিলে একটা ট্রেনিং সেশন চালাচ্ছিলো । সমাজ সেবা টাইপ ! বেসরকারী প্রতিস্থান গুলো নিজেদের ইমেজ তৈরি তে নানা ধরনের কাজ করে থাকে সেরকম !

সেখানে নীলি এসে হাজির ! অন্য একটা অফিসের প্রতিনীধি হয়ে ! ওকে দেখে একটু চমকে উঠলাম ! নীলিও তাই উঠলো তবে সামলে নিলাম আমরা দুজনেই । আমি গেলাম না ওর দিকে । একটু এড়িয়েই চললাম পুরো ট্রেনিং !
কাজ শেষে দেখলাম ও নিজেই এগিয়ে এল !

-কেমন আছো ?
-ভাল !
-তুমি এখানে আসো জানতাম না !
-আমিও না !

তারপর আরও অনেক কথা । কথায় কথায় জানতে পারলাম ও নিজেও অনলাইন ছেড়ে দিয়েছে । আমাকে ঠিক যেভাবে অনালইনে ফাঁসানো হয়েছিল ঠিক ওকেও নাকি কদিন পরে আবারও ফাঁদে ফেলা হয় ! ও আর টিকতে না পেরে বেরিয়ে এসেছে ।

আসার সময় নীলি হঠাৎ করেই আমার ফোন নাম্বার টা চাইলো ! কেন জানি দিয়েও দিলাম ! মেয়েটার উপরে রাগ রেখে লাভ কি ! সেদিনের মেয়েটার সেই হাসিটা এখনও চোখে লেগে আছে । কি সেই মায়াময় হাসি !
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×