somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ পেত্নী প্রেম

১১ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৫০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


-তোমার ভয় করছে না ?

নীলির কথা শুনে আমি খানিকটা হেসে দিলাম । বললাম
-আমাকে দেখে কি মনে হচ্ছে আমার ভয় করছে ?

নীলি কিছু না বলে কেবল আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । জানালার ওপাশটা বেশ অন্ধকার । আমি নীলির চেহারা পরিস্কার বুঝতে পারছি না তবে কেন জানি মনে হল ও গভীর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । ওর চোখ একটা বিশ্ময় কাজ করছে ।
কে বলে যে কেবল মানুষেরাই বিশ্মিত হতে পারে !! অশরীরীরাও যে বিশ্মিত হতে পারে তা নীলির চেহারা না দেখলে আমি ঠিক মত বুঝতে পারতাম না !

নীলি জানালা ভেদ করে আমার ঘরে চলে এল । যেমন করে আমরা দরজার পর্দা সরিয়ে ঘরে ঢুকি ঠিক সেভাবে । ব্যাপার টা এমন যেন খুব স্বাভাবিক একটা ঘটনা । অন্য কেউ হলে এতোক্ষনে মনে হয় চিৎকার চেঁচামিচি করে কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলতো আমি নিজেকে সামলে নিলাম । তবে এই সামলে নেওয়াটা এমনি এমনি হয় নি !

এখানে ভাড়ায় এসেছি খুব বেশি দিন হয় নাই । প্রথমেই যখন এখানে ভাড়ায় আসি ঘর ভাড়া শুনে একটু অবাকই হয়েছিলাম । তার উপর আমি ব্যাচেলর জেনেও আমাকে যখন ভাড়া দিতে রাজি হয়ে গেল তখন আসলেই একটু অবাক না হয়ে পারলাম না !
এমন ফ্যামিলি বাসায় সহজে বাড়ির মালিকেরা ব্যাচেলরদের বাসা ভাড়া দিতে চায় না ! অন্য সব ফ্লোর গুলো ভাড়া দেওয়া কেবল এই ফ্লোরে কেউ নেই । তখন অবশ্য কোন প্রকার সন্দেহ হয় নাই ।

আমি নিশ্চিন্তে উঠে গেলাম । সব থেকে বড় সুবিধা হল আমার অফিস থেকে বাসা টা থেকে একদম কাছে । হেটে যাওয়ার দুরুত্বে । কদিন ভালই কাটছিল । কেবল সমস্যা ছিল যে রাত হলেই আমার ঘর টা একটু বেশি ঠান্ডা হয়ে যেত । ভালই হত যে প্রচন্ড গরম ছিল বাইরে কিন্তু আমি এসি চালু না করেও ঠান্ডার আরাম পেতাম ।

আরেক টা ব্যাপার যে বাড়ির মালিক প্রতিদিন সকালে এসে আমার খোজ খবর নিয়ে যেত । আমার কোন সমস্যা হচ্ছে কি না কিংবা আমি ভাল আছি কি না ! কথা বলার সময় বাড়িওয়ালার চেহারায় একটা অন্য রকম দুষ্চিন্তার ছাপ দেখতে পেতাম । তবে আমি যখন বলতাম কোন সমস্যা নেই তখন ভদ্রলোকের চেহারা দেখে মনে হত যেন বুকের ওপর থেকে ১০ মণের একটা পাথর সরে গেল ।

আমার তারপর থেকেই খানিকটা সন্দেহ তৈরি হল । এখন সন্দেহ তৈরি হলেই তো বাড়ির মালিকের কাছে গিয়ে বলা যায় যে আঙ্কেল আপনার বাড়িতে কি কোন ভুত আছে ! আর জানতে চাইলেই উনি কেনই বা বলবেন ? তার উপরে বাড়ি থেকে চলে যেতে বলতে পারেন । আমি কেন এতো চমৎকার জায়গা ছাড়বো !!

তবে একদিন পাড়ার দোকানের কাছে জানতে চাইলাম । প্রথমে তো ব্যাটা বলতেই চায় না । তবে আমি ঐ ফ্ল্যাটে দুই সপ্তাহের উপরে আছি এবং নিশ্চিন্তে আছি দেখে দোকানদার বেশ অবাক হয়ে আমার দিকে তাকালো । তারপর গলা নীচ করে যা বলল তার সারমর্ম হল আমি যেই ফ্ল্যাটে থাকি সেই ফ্ল্যাটে নাকি একটা ভুত থাকে । ঠিক ভুত না মহিলা ভুত । সোজা ভাষায় পেত্নী ! মেয়েটার নাকি ওখানে মারা গিয়েছিল । মেয়েটার নাম ছিল নীলি ! এর আগে ঐ ফ্ল্যাটে কেউ নাকি এক সপ্তাহের বেশি থাকতেই পারে নাই । আমি সপ্তাহ দুয়েক কিভাবে আছি এই নিয়ে তার বিশ্ময়ের শেষ নাই ।

আমি হেসে উড়িয়ে দিল । সদাইপাতি কিনে নিয়ে হাজির হলাম বাসায় ! বাসায় আসার পরেই আমি ব্যাপার গুলো একটু চিন্তা করতে শুরু করলাম ! যতই হেসে উড়িয়ে দেই নিজের মনে মনে একটু কিছু ভয় কিংবা সন্দেহ ততক্ষনে তৈরি হয়ে গেছে ! আসলেই কিছু একটা আছে এই বাসা ! বিশেষ করে ঠান্ডার বিষয় । তাছাড়া আরেকটা ব্যাপার আমি আগে লক্ষ্য করি নি তবে লক্ষ্য করা দরকার ছিল মনে হচ্ছে ।

আমি এমনিতেও বাইরেই খাওয়া দাওয়া করি । তবে মাঝে মাঝে চরম ক্ষুদার মুহুর্তে যখন বাইরে যেতে ইচ্ছে করে না তখন ঘরেই কিছু বানিয়ে নেই । এই দুই সপ্তাহে দুবারের মত এমন হয়েছে ।
রাতের বেলা যখন ক্ষুদা লেগেছিল তখন একবার বোম্বাই টোস্ট আর খিচুরী রেঁধেছিলাম । সেগুলোর বাসন আমি আধোয়া অবস্থায়ই রেখেছিলাম সকালে পরিস্কার করবো বলে । সকালে অফিসে চলে যাওয়ার ফলে আর করা হয় নাই । কিন্তু বাসায় এসে দেখি সেগুলো পরিস্কার করা । পরে আমার মনে হয়েছিল আমিই হয়তো সেগুলো পরিস্কার করে রেখেছি ! আমার মনে নেই !

যাক আমি আর বেশি চিন্তা করলাম না । যেই থাকুক যদি সত্যিই থেকে থাকে তাহলে সে যে আমার কোন ক্ষতি করবে না সেটা আমি পরিস্কার বুঝতে পারছি ! যদি ভয় দেখতো তাহলে এতো দিন সমানে চলে আসতো !

নীলিকে দেখি আরও সপ্তাহ খানেক পরে । আমি অফিস থেকে ফিরে এসেছি সবে মাত্র । সেদিন কাজের খুব চাপ ছিল । বাসায় আসতে আসতেই রাত প্রায় ১০ টা । ঘরে ঢুকে আমার শরীর যেন আর চলছিল না । দরজা থেকে জামা কাপড় খুলতে শুরু করলাম । লক্ষ্য কেবল বিছানা ! আগে ঘন্টা খানেক ঘুমানোর ইচ্ছে তারপর অন্য কিছু চিন্তা করা যাবে ! খেয়েই এসেছি সুতরাং কোন চিন্তা নেই ।

আমি জুতা মোজা খুলে খুলে এদিক ওদিক ফেলতে ফেলতে শোবার ঘরের দিকে এগুচ্ছি তখনই পেছন থেকে ঠান্ডা মিহি কন্ঠে একজন বলে উঠলো

-এতো অগোছালো কেন আপনি ?

আমি কিছুক্ষন কোন কথা বলতে পারলাম না । একেবারে যেন চুপ হয়ে দাড়িয়ে গেলাম ! লক্ষ্য করলাম আমার পা টা খানিকটা যেন কাঁপছে । আমার হয়তো প্রথমে ভাবা দরকার ছিল যে অন্য কেউ আমার ঘরে ঢুকেছে । কিন্তু কন্ঠটিতে এমন কিছু ছিল যে আমার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো ! ঘরের তাপমাত্রা ততক্ষনে অনেক নেমে এসেছে । আমার খানিকটা শীত শীত করতে লাগলো !

আমি নিজেকে বুঝাতে চেষ্টা করলাম যে এইটা আমার কোন ক্ষতি করবে না । কোন ক্ষতি করবে না ! এইটা একটা ভাল ভুত ! ভাল পেত্নী ! সুইট পেত্নী !! খুব বেশি কাজ হচ্ছিল না । প্রবল ইচ্ছে করছিল সামনের ঘরের দিকে দরজা বন্ধ করে দেই কিন্তু ইচ্ছে টা দমন করলাম ! অনেক সাহস সঞ্চয় করে পেছনে তাকানোর প্রস্তুতি নিলাম !

আমি ঘুরে তাকিয়ে দেখি সেখানে কেউ নেই । তবে আমার ছোড়া জামা কাপড় আর জুতা মোজা গুলোও গোছানো রয়েছে । আমার মনে হল মেয়েটা চলে গেছে । কারন তাপমাত্রা আবারও বাড়তে শুরু করেছে ।

এরপর মেয়েটার অদৃশ্য কন্ঠ শুনলাম বেশ কয়েকবার । প্রত্যেকবার আমার অগোছালোতার জন্য মৃদু শাসন ! আমি আবিস্কার করলাম যে মেয়েটাকে আমার আর ভয় লাগছে না মোটেই !

গত কালকে আমি অফিস যাওয়ার আগে একটা ছোট্ট নোট লিখে রেখে গেলাম আমার অগোছালো শার্টের উপর !
"আমি তোমাকে দেখতে চাই"

নিজের কাছেই কিছুটা হাস্যকর শোনালো যে আমি একটা পেত্নীর সাথে দেখা করতে চাচ্ছি ! মানুষ জন শুনলে কি ভাববে কে জানে !

অফিস থেকে ফিরে এসেও তার কোন খোজ পেলাম না । তবে আমার শার্ট খানা ঠিকই গোছানো ছিল !

রাতের ঘুমাতে যাবার আগে জানলার দিকে তাকিয়েছি তখনই একটা ছায়া মূর্তি দেখতে পেলাম । প্রথমে বুকের ভেতরে ধক করে উঠলেও সামলে নিলাম পরক্ষনেই ! নিজেই এগিয়ে গেলাম সামনে । ছায়াটা তখনও জালনার ওপাশেই রয়েছে চুপচাপ ! আমি আগে গিয়েই জানতে চাইলাম
-তুমি কি এসেছো ?

তখনই নীলি জানতে চাইলো কথাটা !

ঘরের আলোতে মেয়েটা যখন এলো আমি খানিকটা অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম বহুদিন আমি এতো সুন্দর মুখ দেখি নি ! আমি কিছুটা সময় কোন কথা বলতে পারলাম না ! কেবল চেয়ে রইলাম !
নীলি বলল
-কি পেত্নীর চেহারা দেখে খুব পছন্দ হয়েছে ?
বলেই খুব জোরে হাসতে লাগলো ! আমি বললাম
-বিশ্বাস হচ্ছে না ! আমাদের ছোট বেলা থেকে যা শেখানো হয় শাক চুন্নী আর পেত্নী বিষয়ে তা দেখি পুরাই উল্টা !

নীলি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি বেশ সাহসী দেখছি ! এর আগে মানুষ গুলো বেশ ভীতু ছিল ! যাক ভাল তোমার সাথে টুকটাক কথা বলা যাবে !
-চাইলে প্রেমও করতে পারো !
-আচ্ছা ! তাই ?
-জানি সুন্দরী পেত্নী প্রেম করা সুবিধা কি ?
-কি শুনি ?
-পেত্নীর বাবা তাকে বিয়ে দেওয়ার জন্য চাপ দিতে পারবে না ! বিয়ে হয়ে যাওয়ার সম্ভবনাও নেই !

এই কথাটা বলার পরই দেখলাম নীলির মুখটা কেবল মলিন হয়ে গেল ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আচ্ছা আমি যাই !
-সেকি ! কোথায় ? আমার কথায় কষ্ট পেলে নাকি !
-না ঠিক আছে !
-না ঠিক নেই । আমাকে বলবা তারপরপ যাবা !

নিজের কন্ঠ শুনে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম । আমি একটা অশরীরীর সাথে আর্গুমেন্ট করতেছি । আমার বলার ধরনই কি না জানি না নীলি আবারও হেসে ফেলল ! তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমরা যা মনে কর আমরা কিন্তু আসলে এতোটা ফ্রী না ! তোমাদের যেমন নিজেরদের জগৎ আছে ঠিক আমাদেরও নিজেদের জগৎ আছে । আমাদের সেখানেও থাকতে হয় !

-তাহলে আমাদের জগতে !!
-আসলে যাদের মৃত্যু স্বাভাবিক হয় তাদের সাথে এই জগতের একটা সংযোগ স্থাপন হয়ে যায় ! চাইলেও আমরা এখান থেকে নিজেদের কে সরিয়ে রাখতে পারি না ! বুঝছো ! ইচ্ছে করে থাকি না !

-হুম । বুঝলাম ! তা কখন আসবা আবার ?
-আসলেই টের পাবা ! এখন যাই !

নীলির অনেক কিছুই জানা হল না তবে মেয়েটা আবার আসবে ! তখন ওর সাথে চুটিয়ে আড্ডা দেওয়া যাবে ! নীলি যেভাবে জানালা ভেদ করে এসেছিল ঠিক সেভাবেই চলে গেল । আমি নিজের বিছানার দিকেক রওনা দিলাম ঘুমানোর জন্য !



##

-আচ্ছা তোমরা আমাদের কি মনে কর বলতো ?
-কি আবার মনে করবো ? এতো দিন যা শুনে এসেছি তাই তো মনে করবো !
-কি শুনেছো ? কোথায় শুনেছো ?
-না মানে ভুত এফএম !

ভুত এফএমের নাম শুনতেই নীলির মুখটা বিরক্তিতে ভরে গেল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তোমার ঐ আরজে না ফারজে কে যদি আমি সামনে পেতাম না তাইলে তারে গাল থাপড়াইরা লাল করে দিতাম ! বেটা ফাজিলের এক শেষ ।
-তার মানে কিচ্ছু সত্যি না !
-অবশ্যই না !
-তাহলে ? এই যে এতো মানুষ মরে কিভাবে ?
-আশ্চর্য আমরা কিভাবে কিভাবে মরে ! আমরা জানি নাকি ! নিজেরা নিজেরা ভয় পেয়ে মরলে আমাদের কি করার আছে । আমাদের তো খেয়ে দেয়ে কাজ নেই তোমাদের ভয় দেখাবো ! হুহ !!

আমি বললাম
-আচ্ছা তোমাদের পৃথিবীটা কেমন ?
নীলি কি যেন ভাবলো ! তারপর বলল
-কি ভাবে বলব ! আচ্ছা শুনো তোমাকে একটা কথা বলি । ভাল করে বললে আমাদের পৃথবীটা কিন্তু অনেক টা তোমাদের মতই । বলতে পারো একটা পৃথিবীর প্যারালাল ওয়ার্ড থাকে না ঠিক তেমন ।
-বুঝলাম না !


ইদানিং বাসায় এসে আমার এক মাত্র কাজ হচ্ছে নীলির সাথে কথা বলা । মেয়েটিও ঠিক যেন আমার জন্য অপেক্ষা করে । আমি বাসায় আসলে দেখতে পাই আমার জন্য বাধরুমে গরম পানি অপেক্ষা করছে । আমি গোসল করেই টের পাই আমার ঘরের তাপমাত্রা কেমন ঠান্ডা হয়ে গেছে । আমার বুঝতে কষ্ট হয় না নীলি চলে এসেছে । আগে তো আমরা কেবল আমার শোবার ঘরেই কথা বলতাম এখন বাসার সব জায়গায় আমাদের দুজনের এক সাথে চলাচল । টিভি দেখতে দেখতে কিংবা কারন্ট করে চলে গেলে বারান্দায় বসে আমাদের কথা চলে । মাঝে মাঝে আমি অবাক হয়ে যায় একটা অশরীরির সাথে আমি কিভাবে এতো কথা বলি ! কেমনে করে বলি !!

আরেকটা জিনিস যেটা হয়েছে নীলি এখন থেকে আসার সময়ে সাথে করে কি যেন একটা নিয়ে আসে । আমরা যেমন ম্যাঙগো জুস খাই ঠিক তেমনি প্যাক করা থাকে । তার গায়ে অদ্ভুদ ভাষা কি যেন লেখা ! ওর কাছে জানতে চাইছিলাম যে এই জিনিস টা কি ও বলল যে ওদের ওখানকার একটা খাবার । লুকিয়ে আমার জন্য নিয়ে এসেছে ।
আমরা যেমন পাইপ ঢুকিয়ে জুস খাই এই তেও ঠিক ওমন পাইপ ঢুকিয়ে খাতে শুরু করলাম । সত্যি বলতে কি এমন অদ্ভুদ স্বাধের জিনিস আমি এর আগে কোন দিন খাই নাই । এরপর থেকে নীলি প্রতিদিন নিয়ে আসতো বলতে গেলে আমিই ওকে নিয়ে আসতে বলতাম । আর সাথে সাথে আমাদের আড্ডা তো চলতোই !


নীলি আমাকে বোঝানোর জন্য হাত টা তুলল । তারপর মাথায় কি যেন একটু চুলকালো । তারপর বলতে শুরু করলো
-দেখো আমাদের আর তোমাদের পৃথিবীটা কিন্তু অনেক টা একই রকম ! যখন কেউ একজন তার দেহ থেকে মুক্ত হয়ে যায় তখনই সে আমার দের পৃথিবীতে প্রবেশ করে কিংবা প্রবেশ করার পথ খুজে পায় ! বলা চলে তার ভিতর সেই প্রবেশের পাওয়ার টা চলে আসে । এবং সত্যি কথা কি যদি একবার সেই এই পৃথিবীতে প্রবেশ করে ফেলে তাহলে তাদের আর অন্য কিছু মনে থাকে না !

আমি বললাম
-তাহলে তোমরা আবার এই পৃথিবীতে কেন ?
-আগে একদিন বলেছিলাম মনে নেই । আসলে যারা একটু অপঘাতে পরে তারা সহজে এই পৃথিবীর মায়া ঠিক মত ছাড়তে পারে না । তাদের পরিত্রানটা ঠিক মত হয় না তাই দুই পৃঠিবীর মধ্যে তাদের বিচরন চলে ! বুঝেছো !
-হুম ! বুঝলাম !


##
-বাবা তোমার শরীর ঠিক আছে তো ?
আমি বাড়িওয়ালার দিকে আরও ভাল করে তাকাই । ভেবেছিলাম দিন কে উনি হয়তো আমার খোজ নেওয়া বন্ধ করে দিবেন বিশেষ করে যখন দেখবেন যে আমি ঠিক ভয় টয় পাচ্ছি না । তার উপরে উনার বাড়ি ছাড়ার কোন নামও নিচ্ছি না । কিন্তু আমার ধারনা খানিকটা ভুল প্রমানিত করে দিয়েই বাড়িওয়ালা আমার খোজ খবর নিয়মিত করতে লাগলো । একদিন তো আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন যে

-তোমার শরীর ভাল তো ?
-জি আঙ্কেল ভাল !
-রাতে ঘুম হয় ভাল ?
-জি !
-ও ! না মানে তোমার শরীর কেমন দিন দিন খারাপ হয়ে যাচ্ছে তো, তাই জানতে চাইলাম !
-না । আসলে অফিসে খুব চাপ যাচ্ছে ইদানিং !
-ও আচ্ছা !

আমার কথা শুনে বাড়িওয়ালার মনে হল ঠিক পছন্দ হল না । তিনি ঠিক বিশ্বাসও করলেন না মনে হয় । অন্তত তার চোখ দেখে তো তাই মনে হল ! তিনি আর কিছু জাতে চাইলেন না ! তবে একটা ব্যাপার আমার নিজের কাছেও কেমন যেন লাগলো । ইদানিং সবাই বলছে আমার শরীর নাকি খারাপ হয়ে যাচ্ছে । কারন টা আমি নিজেও ঠিক ধরতে পারছি না । চোখের নিচে কালি আর গালের হাড় কেমন যেন বসে যাচ্ছে । কেন যাচ্ছে আমি ঠিক বলতে পারছি না !

যাই হোক এদিকে নীলির সাথে আমার সম্পর্কের যেন আরও একটু ধাপ এগিয়ে গিয়েছে । ও বলতে গেলে আমার বাসার সব কাজ কর্ম করে ! আমাকে কিছু করতে হয় না ! সব কিছু সঠিক জায়গায় রেখে দেয় ! আর প্রতিদিনের সেই অদ্ভুদ জুস তো আসেই ! আমি বেশ ভাল আছি ! মাঝে মাঝে মনে হয় এমন একটা লক্ষ্যি বউ যদি আমার থাকতো তাহলে কতই না ভাল হত !

আমি কেবল এই কথাটা চিন্তা করেছি ঠিক সেদিনই ও কথাটা আমাকে বলল ! সাথে অনেক টাই দুঃখ করলো । যদি সে বেঁচে থাকতো তাহলে নিশ্চই আমার বউ হত ! এমন সময় ও আমাকে অদ্ভুদ একটা প্রস্তাব দিল । যা শুনে আমি খুব বেশি অবাক হয়ে গেলাম ! কেবল অবাকই না বিশ্মিত হয়ে বললাম
-এটা কি সম্ভব ?
-হুম ! যদি তুমি চাও ? আসলেই চাও কি না সেটাই হল ব্যাপার !
আমি কেবল বললাম
-চাই ! অবশ্যই চাই !
আমার কেন জানি মনে হল নীলি আমার কথা শুনে খুব বেশি খুশি হল । একটু যেন বেশিই খুশি !

প্রস্তাব টা এরকম যে ওর পক্ষে তো আমার পৃথিবীতে আগের মত আসা সম্ভব নয় কিন্তু আমার পক্ষে নাকি ওর পৃথিবীতে যাওয়া সম্ভব এবং ওর মত করে তবে সাময়িক সময়ের জন্য ! আমি কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না কিভাবে কাজ টা করবো ! ও কেবল আমাকে বুঝিলে দিল ওর আর আমার ভিতরে পার্থক্য হচ্ছে আমার শরীরটা ! এখন কাজটা হবে আমার আত্মাটাকে আমার শরীর থেকে আলাদা করার ! যদি আলাদা করতে পারি তাহলেই নাকি সম্ভব !

নীলি আমাকে যা বলল তার অর্থ হচ্ছে মানুষের আত্মাটা শরীরের সাথে আটকে থাকে কেবল মাত্র মনের জোরের কারনে ! মন নাকি অবচেতন ভাবেই জোর খাটিয়ে নিজেক শরীরের ভেতরে আটকে থাকে । এখন আমার মনের উপর জোর সৃষ্টি করতে হবে যাতে করে আমি যেন আমার আত্মাকে বের করতে হবে । শরীর থেকে আত্মা আলাদা হয়ে যাবে ! প্রতিদিন ঘুমানোর আগে খুব করে চেষ্টা করতে লাগলাম !
কিন্তু কোথায় কি !

এভাবে সপ্তাহ খানেক চেষ্টা করেও যখন কোন লাভ হচ্ছিল না তখন এদিন নীলিকে চোখের পানি আটকে আমার তাকিয়ে থাকতে দেখলাম ! অনেক কষ্টে সে আমাকে কেবল বলল
-বেঁচে থাকতে তার কোন ইচ্ছে পূরন হয় নি মরে গিয়েও হবে না !
কেন জানি ওর কান্না মিশ্রিত চেহারা সহ্য হল না ! নিজের উপর খুব রাগ হল !

ঠিক ঐ দিনই কিছু একটা হল ! ঠিক রাত তিন টার দিকে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল ! আমি ঘুম থেকে উঠেই দেখি চারিপাশে কেমন আবছায়া আলোর মত কিছু একটা খেলা করছে । কিন্তু আমি যতদুর খেয়াল ছিল আমার ঘরটাতে কোন সময়ে পুরোপরি অন্ধকার হয় না !
আসেপাশের ঘরের আলো এসে ঘরে একটা আলো থাকে সারা রাত ।

আলোটা কেমন অপরিচিত মনে হল ! অন্তত আমার জীবদ্দশায় এমন আলো আমি কোন দিন দেখি নি ! এই আলোর ব্যাখ্যা কোন ভাবেই দেওয়া সম্ভব নয় ! তবে আস্তে আস্তে আমি টের পেলাম জায়গা টা আসলেই আমার শোবার ঘরই । এই অদ্ভুদ আলোর কারনে অন্য রকম লাগছে । নিজের ঘরের আসবার পত্র জানালা দরজা সবই চিন্তে পারলাম একটু পরে !

আমি এদিক ওদিক তাকিয়ে একটু নড়তেই কেমন যেন নিজেকে খুব বেশি হালকা মনে হল ! নিচে তাকিয়ে আমার চোখ আকাশে উঠলো ! ঠিক নীচে কেউ শুয়ে আছে । দেখতে হুবাহু আমার মত । এমন কি আমি রাতের বেলা যেটা পড়ে ঘুমিয়ে ছিলাম সে সেই পোষাকটাই পরে আছে ।
আমি কিছুটা অবিশ্বাস চোখ নিয়ে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে ।
তাহলে ?
তাহলে সত্যি ! কাজ হয়েছে ?
এবার নীলির কাছে যাওয়া যাবে ?
নীলির দেশে আমি প্রবেশ করতে পারবো ?
সত্যি কি পারবো !

আমি যেই না আরেকটু নড়তে যাবো তখনই দেখলাম একটা কিছু দড়ি জাতীয় জিনিস দিয়ে আমার ঠিক পায়ের কাছ থেকে আটকানো । এবং সেটা আমার ঘুমন্ত শরীরের পায়ের কাছে আটকানো ! অনেক টা শেকলের মত । ওটা দিয়ে আমি আমার দেহের সাথে আটকে আছি !

আমি কিছু সময় টানাটানি করলাম কিন্তু কোন লাভ হল না । সেটা খুলল না কিংবা খোলার কোন লক্ষণও দেখলাম না ! ঠিক সেই সময়ে নীলিকে দেখতে পেলাম । ওর হাতে সাদা ফলাওয়ালা একটা কুঠার জাতীয় কিছু ! আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো ! তবে ওর হাসির ভিতরে কেন জানি কোন প্রাণ দেখতে পেলাম না । বরং সেখানে কেমন যেন একটা তাড়াহুড়া ভাব ! নীলি বলল
-এটা কেটে ফেলতে হবে !
-কোন ক্ষতি হবে না তো !
-আরে না ! কোন সমস্যা নেই ! আমার কথার উপর ভরশা নেই !

আমার অবশ্য আরও একটু চিন্তা ভাবনা করার ইচ্ছে ছিল ! এভবে কেটে ফেলা কি ঠিক হবে ? আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এটা আমার শরীরের সাথে আমার আত্মার বন্ধন । কেবল মন না এটাই হচ্ছে প্রধান যেটা আমাকে আমার শরীরের সাথে আটকে রেখেছে । এখন এটা যদি ছিড়ে ফেলি তখন ?
আমি আবার ফিরে যেতে পারবো তো আমার শরীরে ?

নীলি যখনই আমার ঘুমন্ত শরীরের দিকে এগিয়ে গেল তখনই একটা কাজ হল ! আমার শোবার ঘরের দরজা হাট করে খুলে গেল । দরজার দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে বাড়িওয়ালা দাড়িয়ে আছে সাথে আরেক জন ! তাকে চিনতেও আমার খুব বেশি কষ্ট হল না । আমাদের এলাকার মসজিদের ইমাম ! দরজা খুলে কেউ আমার দিকে তাকালো না । এমন একটা ভাব যেন আমাকে তারা দেখতেই পাচ্ছে না !
তাদের চোখ আমার ঘুমন্ত শরীরের দিকে !

বাড়িওয়ালা খুব উত্তেজিত হয়ে কিছু একটা বলল । কিন্তু আমি আবছা ভাবে শুনতে পেলাম । মনে হল যেন অনেক দুর থেকে শুনতে পাচ্ছি !
কেবল একটা কথাই কানে গেল !
বাড়িওয়ালা বলছে
দেরি হয়ে গেল নাকি ?
হুজুর বলল
-না মনে হয় ! এখনও শরীর গরম !

তারপর হুজুর আমার শরীরের দিকে এগিয়ে এসে হাত স্পর্শ করলো । সঙ্গে সঙ্গে আমার পুরো শরীর কেঁপে উঠলো ! নীলির দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখ টা কেমব বিষন্ন হয়ে গেছে । তারপর হুজুর পানি জাতীয় ছিটালো আমার উপর । আমার আর কিছু মনে নেই !



সকালে বেশ বেলা করে ঘুম থেকে উঠলাম । তাকিয়ে দেখি বাড়িওয়ালা আমার দিকে তাকিয়ে আছে । আমার চোখ খোলাতে তার মুখে একটা দুঃচিন্তার একটা রেখা একটু কমে গেল ! আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না কি হল । আর বাড়িওয়ালা আমার ঘরে কি করছে । রাতের ঘটনা গুলো কেমন আবছা আবছা মনে আছে ।
একটু পরে পাড়ার মসজিদের ইমাম এসে আমাকে দেখলেন । আমাকে গত রাতের ঘটনা বললেন ! আমি নাকি রাতে বেশ চিৎকার চেঁচামিচি করেছিলাম । সেই শুনেই বাড়িওয়ালার আমার দরজার সামনে এসেছিলেন । তিনি আগে থেকে আঁচ করেছিলেন যে কিছু একটা হয়েছে আমার । সোজা গিয়ে ইমাম সাহেব কে ডেকে আনেন !

ইমাম সাহেব জানতে চাইলো
-ঐ মেয়েটার সাথে কত দিন কথা বল ?
-এই মাস খানেকের উপরে !
-ও কি তোমাকে কিছু খেতে দিতো ? মানে সাথে করে নিয়ে আসতো !
-হুম !
-ওটা দিয়েই তোমাকে বস করেছে । তোমার চিন্তা ভাবনা টাকে বসে এনেছে । যাই হোক এখন অনেক টা ভাল আছে । সময় মত না এলে অনেক ক্ষতি হয়ে যেত । তুমি হয়তো আর বেঁচে থাকতে না ! এখানে আর থেকো না ।


ঐ দিনই বাসা ছেলে দিলাম । জিনিস পত্র আপাতত থাকুক আমি কেবল একটা ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম এক বন্ধুর বাসায় গিয়ে থাকি অন্য বাসা না খুজে পাওয়ার আগ পর্যন্ত !

সিএনজিতে হঠাৎ কি মনে হতে ব্যাগ টা খুলতেই দেখলাম আমার জামা কাপড়ের ভিতরে এক টুকরো কাগজ ! সেখানে কেবল একটা লাইণ লেখা "তোমাকে কাছে পেতে চেয়েছিলাম, হয়তো একটু অন্যায় পথে, এইটাই কেবল আমার অপরাধ ছিল"

আর কিছু লেখা নেই ! আমি কাজটা দুমড়ে ছুড়ে দিলাম বাইরে ! পেত্নীর ভালবাসা পাওয়া থেকে বেঁচে থাকাটা আমার কাছে বেশি আনন্দের মনে হল !
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৫ দুপুর ১:৫৫
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×