somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ দলকানা

১৩ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



মনজু একটি রাজনৈতিক দলের সব থেকে বড় অনলাইন এ্যাকটিভিটিস্ট । যে কোন ঘটনায় সব কিছু তাদের দিকে টেনে পোস্ট লেখায় তার জুড়ি নাই । অবশ্য এই সব সে এমনি এমনি করে না । তার জন্য মাস শেষে মোটা অংকের টাকা তার ব্যাংক একাউন্টে যোগ হয় । অবশ্য কোথা থেকে এই টাকা আসে সেটার কোন বৈধ কাগজ পত্র নেই । বলা চলে অজানা এক জায়গা থেকে এই টাকা এসে হাজির হয় । অবশ্য সেটা নিয়ে মজনু খুব বেশি চিন্তিত নয় । টাকা আসাটাই বড় কথা ! কোথা থেকে আসলো সেটা খুব বেশি দরকারি নয় !

তার পোস্টে সব সময় কয়েক হাজার লাইক আর শেয়ার সাথে কমেন্টের তো হিসাব নেই । যত লাইক আর কমেন্ট বাড়তে থাকে ততটা পরিমান অর্থের যোগান বাড়তে থাকে । সে সারাদিন কেবল এই কাজই করে ! অন্য কিছু করার অবশ্য তার দরকারও পড়ে না ।


মনজু সকাল থেকেই একটু চিন্তিত বোধ করছে । কাল রাত থেকে তার স্ত্রী বাসায় নাই । রাগ করে কোথায় যেন চলে গেছে । অবশ্য মনজু এইটা নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করছে না । চলে গেছে আবার চলে আসবে । হয় বাপের বাড়ি যাবে নয়তো কোন বান্ধবীর বাড়ি । কিন্তু এখন মনজুর সামনে চিন্তার যে প্রধান কারন যেটা হচ্ছে গত রাতে একটা ঘটনা ঘটেছে । তাদের দলের একজন নাকি কোন মেয়েকে রেপ করেছে ।
রেপ করেছে সেটা খুব বেশি ব্যাপার না । কিন্তু সমস্যা হচ্ছে সে হাতে না হাতে ধরা পরেছে । সেই সাথে অনলাইনেও ছড়িয়ে পড়েছে ব্যাপার টা । যদি অনলাইনে না আসতো তাহলে ব্যাপার টা নিয়ে তার খুব বেশি চিন্তার কারন ছিল না কিন্তু এখন সেটা তার মাথা ব্যাথার কারন ।

যদি অনলাইনে ঠিক ঠাক মত ব্যাপার টা সামাল দেওয়া যায় তাহলে উপর মহলে তার চাহিদা আরও বেড়ে যাবে ! তার ব্যাংক একাউন্টে জমা কৃত টাকার পরিমানও বেড়ে যাবে ।

মনজু তার সব থেকে কাছের সাগরেত সবীরকে করে ফোন দিল ! সবীরও তার মত একজন অনলাইন একটিভিষ্ট । তবে তার মত এতো বড় নয় ।

-বস কি খবর ?
-খবর তো তোর কাছে ?
-হুম ! একটু ঝামেলায় পইড়া গেছি ।
-যেই টা সমস্যা না । তোকে যে মেয়েটা সম্পর্কে কয়েকটা কথা জানতে কইছিলাম, জানছিস ?
-হুম ! কিন্তু মাইয়া তো একদম ক্লিন । কোন দাগ নাই ।
-আরে বেকুবের বাচ্চা, দাগ নাই দাগ বানা ! এই টা কোন কথা । শোন মেয়েটার গ্রামের বাড়ির কিংবা যে হোম টাইনের খোজ লাগা । তারপর দেখ সেই খানে আমাদের কোন লোক আছে নাকি । তারপর একটা গল্প বানা ! শোন মনে রাখবি মেয়ে মানুষকে নিয়ে ছড়ানো গল্প মানুষ তাড়াতাড়ি খায় ! আর সব থেকে বড় পয়েন্ট তো আমাদের হাতে আছেই ।
-কোন টা বস ?
-তুই শালা গাধাই রয়ে গেলি । মেয়েটা রাত্রে বাইরে ছিল আর এই তো শিওর । তাই না ?
-হ !
-আর আমাদের দেশের মানুষ রাত্রে বাইরে থাকা মেয়েদের ব্যাপারে কথা বার্তা বেশি বিশ্বাস করে । শোন যা বললাম তাই কর !
-আচ্ছা বস !

মনজুর মাথার মধ্য এখন পুরো গল্প টা খেতে শুরু করতেছে । মেয়েটাকে কি কি অপবাদ দিবে সে আগে থেকেই ঠিক করে নিল । ভাবতেই তার মাথার ভেতরে উত্তেজনায় একটা ধারা বয়ে গেল ।

কদিন আগেও সে এই কাজ টা করেছে । তবে সেটা ছিল ঠিক এই ঘটনার উল্টা টা । বিপক্ষ দলের একজন একটা মেয়ের সাথে কিছুটা খারাপ আচরন করেছিল । এক একটা পাব্লিক মিটিং থেকে কয়েকটা মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে বের করে দিয়েছিল । কিন্তু কপাল টা খারাপ ছিল তার । ঠিক সেই মুহুর্তের ছবি একজন তার ক্যামেরায় তুলে ফেলে । ছেড়ে দেয় অনলাইনে । আর যায় কোথায় ।
সেইবার উপর মহল থেকে বেশ সুনাম পেয়েছিল সে । দেখা যাক এইবার কি করা যায় । যদিও এইবারও ভিট টিম মেয়ে কিন্তু এইবার একটু অন্য ভাবে জিনিস টা সামলাতে হবে । কদিন পরেই দেখে নির্বাচন চলে আসবে । নেতার নামে কোন বদনাম যেন না লাগে সেই ব্যাপারে কঠিন লক্ষ্য রাখতে হবে ।

সকাল দশটার ভিতরেই অনলাইনে মনজুর নিজেস্ব থিউরী আর গল্প ছড়িয়ে পড়লো ! বলতে গেলে এতোক্ষন যারা মেয়েটাকে সাপোর্ট দিচ্ছিলো তারাও কোন কথা বলতে পারলো না । আর অনলাইনের সুশীল রা এরকমই একটা বিষয় নিয়ে খুব বেশি সময় তারা আগ্রহ পায় না । তারা খোজে নতুন নতুন ইস্যু ।

যখন দেখলো ইস্যুতে ঝামেলা শুরু হয়েছে তখন অনেকেই আবার নিজেদের প্রতিবাদী পোস্ট হাইড করা শুরু করে দিল । মনজু সব চুপচাপ দেখছিল আর হাসছিল । তার প্লান কাজ করছে । তিনি আরেকটা বাহবা মূলক ফোনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো । ঠিক তখনই তকটা ফেসবুক পোস্ট তার এক ছোট ভাই তার ইনবক্সে দিয়ে গেল ।

সেটা দেখার পর মনজুর কোন কথা বলতে পারলো না । একে বারে "থ" হয়ে গেল । কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না ।

মনজু কি করবে ঠিক মট সিদ্ধান্ত পারছিল না । যখন সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছিল না ঠিক তখনই তার কাঙ্খিত ফোন টা এসে হাজির !
-হ্যালো স্যার !
-কি খবর তোমার ?
-জি জি ! ভাল স্যার !
-ভালই তো সামলেছো দেখছি !
-জি স্যার ! কিন্তু ....
-আমি জানি কি কিন্তু ! দেখো তুমি দলের একনিষ্ঠ কর্মী ! তাই এই সব ছোট খাটো কিন্তু সামনে না আনাই ভাল !
-কিন্তু স্যার !
-আর কোন কথা শুনতে চাই না ! তোমার একাউন্ট টা চেক কর ! সেখানে আগের থেকে বেশি এমাউন্ট জমা হয়েছে । আশা করি এই পরিমান অর্থ তোমার ওয়াইফের ক্ষতির জন্য যথেষ্ঠ হবে !

মনজুর আর কোন কথা বলল না । ফোন লাইন কেটে গেল । মনে মনে ভাবলো এখন পরিবারের লোক জনের সামনে যাবে কিভাবে ।
চিন্তাটা মাথা থেকে বের করে দিল । নিজের একাউন্টটা চেক করে সেই চিন্তাটা আরও দ্রুত গায়েব হয়ে গেল ! অর্থের পরিমানটা এক্সপেক্টেশন থেকেও অনেক বেশি ।

এবার আরও শক্ত ভাবে নেতাকে বাঁচানো যাবে । যখন একজনের স্বামী তার বউয়ের সম্পর্কে কোন কথা বলবে সেই কথা সবাই চোখ বুঝে বিশ্বাস করবে ! মনজুর কিবোর্ড টা হাতে নিল আবার ! কিবোর্ডের উপর ঝড়ের বেগে বয়ে চলতে লাগলো তার আঙ্গুল !
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১৫ রাত ৮:১৪
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×