somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ বিবাহ এবং বিবাহ পরবর্তি ঘটনা সমূহ :D

১০ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




কয়েকদিন আগেও ক্লাস আড্ডা বাদ দিয়ে খুব বেশি সময় থাকা হত না ক্যাম্পাসে । তারপর বাসা আর টিউশনী । সত্যি বলতে কি আমি আমার ঘরে পিসির সামনেই সময় কাটাতে ভালবাসতাম । কিন্তু কয়েকদিন আগেই আমার জীবনে এতো বড় একটা দূর্ঘটনা ঘটে গেছে যে আমার এখন আর বাসায় থাকতে মন বলে না। যতটা সময় বাসা থেকে বাইরে থাকতে পারি ততই ভাল ।

ক্লাস শেষ করে তাই বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলাম ডিপার্টমেন্টের সামনের মাঠে । সজিব, রুনু, মলি, আকিব রাফি সবাই রয়েছে । আমার মন মরা কেন কদিন ধরে ওরা বার কয়েক জানতেও চেয়েছে । অবশ্য প্রায় সপ্তাহ দুয়েক ধরেই আমার মন মেজাজের অবস্থা খুব বেশি ভাল না । আমি কোন জবাব না দিয়ে কথার প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দেই । কথা আড্ডা চলতে থাকে ঠিক তখনই আমার চোখ নীষার দিকে যায় ।

বাসা থেকে বের হওয়ার সময় দেখেছিলাম ও টিয়া রংয়ের একটা সেলোয়ার কামিজ পরে রেডি হচ্ছিলো ক্যাম্পাসে আসার জন্য। সেই রংটা দেখেই ওকে দ্রুত চিনে ফেললাম । অবশ্য আরেকটু হলে এমনিতেই চিনতে পারতাম । কারন ও আমাদের দিকেই আসছে ।
কেন ?
এই ঝামেলা এই খানে কেন ?

কাধে ব্যাগ, ওড়না ভাল করে গলায় পেঁচানো । মুখে হালকা মেকাপও দিয়েছে । তবে ঠোটে লিপস্টিক দেয় নি । আমাদের আড্ডার ঠিক সামনে এসেই থামলো । কিছুটা সময় আমাদের দিকে তাকিয়ে রইলো আমার দিকে । আমি না দেখার ভান করে কথা চালিয়ে গেলাম । একবার ইচ্ছে হলে উঠে চলে যাই কিন্তু যাওয়া হল না ।

আস্তে আস্তে আড্ডার সবাই ব্যাপারটা লক্ষ্য করলো যে তাদের মাঝে একজন অপরিচিত মানুষ দাড়িয়ে আছে । রুনুই প্রথমে জানতে চাইলো
-কিছু বলবা ?
রুনু অবশ্য নীষাকে চিনে না । তবুও ওকে তুমি করেই বলল । বলতে গেলে আমরা ক্যাম্পাসের প্রায় সিনিয়ার ব্যাচ । আমাদের থেকে প্রায় সবাই ছোট। তুমি করে বলাই যায় ।

রুনুর দিকে না তাকিয়ে নীষা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি বাসায় যাবো

রুন যেমন অবাক হল আড্ডার বাকী সবাই অবাক হল মেয়েটা আমার দিকে তাকিয়ে কথা বলার জন্য । তাও গলায় একটা আবদার মূলক কথা শুনে। আমি নিজেকে যথাসম্ভব শান্ত রেখে বললাম
-আমি এখন বাসায় যেতে পারবো না, একটু পরে আমার ক্লাস আছে ।
নীষা বলল
-মিথ্যা কথা, আমি তোমাদের ডিপার্টমেন্টে খোজ নিয়েছি । সব ক্লাস শেষ হয়ে গেছে।

এতু টুকু একটা মেয়ে আমাকে তুমি করে বলছে এই ঘটনা আসলেই সবাইকে অবাক করলো । মলি বিশ্মিত কন্ঠে বলল
-এই অপু, মেয়েটা কে রে ? তোকে তুমি করে বলছে কেন ? চেনে তোকে ?
সজিব বলল
-আমিও চিনতে পারছি না । আমি যতদুর জানি ওর এই বয়সী কোন কাজিনও নেই । কে ?

পুরো আড্ডার ভেতরে একটা তোড়জোড় শুরু হয়ে গেল, মেয়েটা কে সেটা জানার জন্য। আমার সাথে তার কি বা সম্পর্ক সেটাও জানার আগ্রহ সবার । আমি কোন কথা না বলে চুপ করে আকাশের দিকে তাকিয়ে রইলাম । বুঝলাম আমার ক্যাম্পাসেও আসা বন্ধ করতে হবে । এই মেয়ের জন্য জীবন "ত্যাসপাতা" হইয়া গেল । এই মাইয়া আর এই মাইয়ার বাপের জন্য । সাথে আমার নিজের বাপও কম যায় না ।

রুনু এবার নীষার দিকে তাকিয়ে বলল
-এই মেয়ে তুমি কে বলত ? অপুর সাথে এই ভাবে কেন কথা বলছো কেন ?
নীষা খুব শান্ত কন্ঠে বলল
-আপনাদের বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেন। সে কিছু বলে নাই আপনাদের ?

এবার সন্দেহ আরও যেন একটু বেড়ে গেল । রুনু উঠে গিয়ে নীষাকে ওর পাশে বসালো। তারপর ওর চোখের দিকে কিছুক্ষান তাকিয়ে থেকে বলল
-তুমি ......অপুর বউ ?
নীষা কিছু বলল না । কেবল একটু হাসলো । সেই হাসিতে আর কারই বোঝার বাকি রইলো না যে আসলেই সে আমার বউ । বিয়ে করা বউ ।
সবাই আমার দিকে তাকালো এক ভাবে । আমি তাকিয়ে রয়েছি বদ মেয়েটার দিকে । আমার বিয়ের কথা প্রকাশ করে দিয়ে মেয়েটা যেন খুব মজা পাচ্ছে ।
থাপড়ায়া দাঁত ফেলে দেওয়া উচিৎ । বদ মেয়ে কোথাকার ।

এবার ঈদে গ্রামের বাসায় গিয়ে সময় গুলো বেশ ভাল করেই কাটছিল । বাবাও অনেক দিন পরে গ্রামে গিয়ে যেন পুরানো সব বন্ধুরদের সাথে মিলে মিলেশিসে একাকার হয়ে গেল । ঠিক এমন সময় আসল ঘটনা আমার সামনে এল । আমাদের গ্রামে নীষারা থাকতো । বাবার খুবই ভাল বন্ধু ছিলেন নীষার বাবা । আমিও ওকে চিনতাম । আমার থেকে কয়েক বছরের জুনিয়র ।

রাতে খাওয়ার সময় বাবা নীষার কথা বলল । মেয়েটা নাকি এবার আমার ভার্সিটিতে চান্স পেয়েছে, ফার্মেসীতে । মেয়েটাও পড়ালেখায় ভাল খুব কিন্তু মেয়েটার কেবল একটা সমস্যা । মেয়েটা কিছুতেই রাতে একা একা ঘুমাতে পারে না । ভয় পায় । তাও আবার রুমে থাকলে হবে না, তার খাটে কাউকে ঘুমাতে হবে । জন্মের পর থেকে মেয়েটা নাকি এখনও মায়ের সাথে ঘুমায় রাতে ।

মেয়ে এইজন্য ক্লাস করতে পারছে না । কারন ঢাকায় ওদের এমন কোন আত্মীয় নেই যেখানে ও থাকতে পারবে । হলেও থাকতে পারবে না এখন । মেয়েটা কয়েকদিন ঢাকায় ছিল তারপর ফিরে এসেছে । আর ওর বাবার এরকম পরিস্থিতি নেই যে ওরা ঢাকায় গিয়ে থাকবে ।

এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল । কিন্তু এরপর বাবা যা বলল তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না । বাবা ঠিক করেছে মেয়েটার ভবিষ্যৎ তিনি এভাবে নষ্ট হতে দিবে না ।
অতি উত্তম কথা । একটা না একটা উপায় বের করতেই হবে । এভাবে একটা মেয়ের জীবন নষ্ট হতে দেওয়া যায় নাকি ।
বাবা বলল
-আমি অনেক দিন থেকেই ঠিক করে রেখেছিলাম রকিবের মেয়ের সাথেই তোর বিয়ে দেব । কদিন পরেই দিতাম । এখন কদিন আগে বিয়ে টা হবে । এই আর কি ।

ঠিক আছে । কোন সমস্যা নেই । বিয়ে যখন হবে তখন কদিন আগে আর পরে কি ।। এ্যা ......
কেবল পানি খুখে নিয়ে ছিলাম । মুখ থেকে ফেলে দিয়ে বললাম
-এ্যা । কি বললে ? কার বিয়ে ?
-কেন তোর । তুমি এখন বড় হয়েছিস । কদিন পরে অনার্স শেষ হবে । বিয়ে করবি না ?
-মানে কি । কেউ একজন রাতে একলা ঘুমাতে পারে না তার জন্য তো আমাকে কুরবানি করার কোন মানে নেই । নাকি আছে ।

বাবা কঠিন চোখে আমার দিকে তাকালো । আমি আর কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম । আমাদের সংসারে এখনও বাবার উপরে কেউ কথা বলবে এখন কেউ নেই । তার উপর তিনি যদি একবার ভেবে নেন যে আমাকে বিয়ে দেবেন তাহলে আমার কিছুই করার নেই । আর এটা বাবার গ্রাম, তার নিজের এলাকা । অবশ্য আমার নিজেরও গ্রাম ।

সপ্তাহ খানেকের ভেতরেই আমার বিয়ে হয়ে গেলে নীষার সাথে । আমার কেবল বারবার মনে হচ্ছিলো যে আমি ভয়ংকর দুঃস্বপ্ন দেখছি এখনই আমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে । সব ঠিক হয়ে যাবে ।

নীষার আমাদের সাথে ঢাকায় চলে এল এবং আমাদের বাসায় থাকতে লাগলো । দুদিনের ভেতরেই দেখলাম মা আর বাবাকে পঁটিয়ে ফেলল । কিভাবে ফেলল কে জানে । আমার মনে হতে লাগলো যে আমি আসলে আমার মা বাবা সন্তান না । এই নীষাই এই বাড়ির মেয়ে আমি ঘরজামাই ।
এই মেয়েগুলা এমন চালু হয় কিভাবে ? রাতে অবশ্য নীষা আমার কাছে ভীড়তে পারে না । আমি সারা দিন বাইরে থাকি রাতে বাসায় যাই । খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি দরজা বন্ধ করে । রাতে নীষা মায়ের সাথে ঘুমায় । বাবা ঘুমায় গেস্ট রুমে ।
ঘুমাক । আমি কিছু বলবো না । দেখি কদিন এভাবে চলতে পারে । কাউকে বলি নি আমার এই বিয়ের কথা কিন্তু আজকে এই কথা সবাই জেনে গেল ।

বন্ধুদের হাত থেকে মুক্তি পেয়ে বাইক নিয়ে বাসার দিকে এলাম । নীষাকে বাসায় না রেখে আসার আসতেই হল । রুনু আর মলি তো পারলে আমাকে চিবিয়ে খায়। সোজা বলে দিল যে নীষা পিছনে নিয়েই আমাকে বাসায় যেতে হবে নয়তো আজ থেকে গ্রুপের কেউ আমার সাথে কথা বলবে না । এতো মিষ্টি একটা বউয়ের কথা লুকিয়ে আমি এমনিতে তাদের কাছে বিরাট অপরাধ করেছি । আর এখন যদি নীষাকে এভাবে রেখে যায় তাহলে আমার খবরই আছে । কি আর করা বাইকের পেছনে ওকে নিয়ে আসতেই হল । বলতে গেলে বিয়ের পরে এই প্রথম ওকে আমার বাইকে তুললাম ।

বাসার সামনে ওকে নামিয়ে দিয়ে আবার যখন বাইক ঘুরাতে লাগলাম, নীষা বলল
-এখন কোথায় যাও ?
-সেটা জেনে তোমার কি দরকার ? তুমি বাসায় যাও ।
-দরকার আছে । এই রোদের ভেতরে কোথায় যাও বল ?
-আজিব তো । তুমি এই কথা কেন জিজ্ঞেস করছো কেন ? আর এই রাইট তোমাকে কে দিয়েছে ? বাসায় যাও ।
-ভাত খাবা না ?
-না । আমার খিদে নাই ।
আমি আর কথা না বাড়িয়ে বাইক ঘুড়ালাম । বেশি প্যাঁচাল ভাল লাগে না ।

টিউশনী থেকে বাসায় আসতে আসতে মোটামুটি রাত আটটা বেজে যায় । আজকে আরও ঘন্টা খানেক পরে এলাম । খাবার টেবিলে দেখি মা বাবার সবার মুখ গম্ভীর । বুঝলাম এই বদ মেয়ে নিশ্চয়ই আমার নামে কিছু বলেছে । অবশ্য নীষার মুখও গম্ভীর ছিল ।

বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুই নীষার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিস কেন ?
আমি যেন আকাশ থেকে পড়ার ভঙ্গি করলাম । বলল
-কি বলছো তুমি ? আমি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার করলাম কই ? আজকে রবং ওকে বাইকে করে ক্যাম্পাস থেকে বাসায় নিয়ে এলাম ।
-আমি এতো কথা শুনতে চাই না । এরপরে যেন ওর সাথে কোন প্রকার খারাপ ব্যবহার না করা হয় । ব্যাপার টা ভাল হবে না ।
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে খেতে লাগলাম ।

রাতে ঘুমানোর আগে মা ঘরে এসে বলল
-মেয়েটার সাথে কঠিন করে কথা না বললেই হয় না ? বুঝতে পারছি তোর মনের অবস্থা ।
-মা, যখন বুঝতেই পারছো তাহলে কেন বলছো ?
-তুই মেয়েটার দিক টাও একটু দেখ । এতো মিষ্টি একটা মেয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করিস কিভাবে ?
আমি কোন কথা না বলে পিসির দিকে তাকিয়ে রইলাম ।
মা বলল
-আজ তোর জন্য মেয়েরা সারা দুপুর না খেয়ে আছে । এভাবে কেউ কথা বলে ?

আমি তবুও কোন কথা বললাম না । চুপ করেই রইলাম । তবে একটা বার মনে হল আমার জন্য না খেয়ে থাকার কি হল এমন ?

পরদিন সকালে অবশ্য নীষাকে নিয়েই যেতে হল ক্যাম্পাসে । সেখানে পরিস্থিতি বদেল গেল । আমার বন্ধুদের আড্ডায় নীষা হাজির হতে লাগলো । এবং অবাক হয়ে দেখলাম আমার থেকে আমার বন্ধুরা ওর দিকেও বেশি এটেনশন দিচ্ছে । বুঝতে পারলাম আমার এখানেও থাকা চলবে না । আর দিন দিন নীষার খবরদারী যেন বাড়তে লাগলো । মা আবার বাবাকে এমন ভাবেই এই মেয়ে পটিয়ে ফেলল যে তাকে ছাড়া তারা যেন কিছুই বুঝে না । আর আমি যেন জলের বাঁনে ভেসে এসেছি ।

একদিন মেয়েটার সাহসের চুড়ান্ত করলো । আমি ঘরে বসে ছিলাম । একটু পরে টিউশনীতে বের হব । এমন সময় নীষা আমার ঘরে এসে হাজির । নীষা সব কিছু করলেও আমার ঘরে আসার সাহস পেত না । তবে সেই ভয়ই মনে হয় উঠড়ে গেল । আমার কাছে এসে খুব স্বাভাবিক ভাবে বলল
-এই, এক হাজার টাকা দাও ।
আমি প্রথমে কিছু বুঝতে পারলাম না । বললাম
-কি ?
-বললাম এক হাজার টাকা দাও ।
-তোমাকে আমি টাকা দেব কেন ?
-বারে তুমি টাকা দেবে না তো কে দিবে ? আমি অন্যের কাছে টাকা চাইবো নাকি ?

এরপর খুহব স্বাভাবিক ভাবে আমার মানিব্যাগ থেকে এক হাজার টা বের করে নিল । আমি এতোটাই অবাক হয়ে গেলাম যে কিছু বলার মত ভাষাই খুজে পেলাম না । সে যে আমার বউ, স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দিতে লাগলো ।

তবুও মেয়েটাকে একটু দুরে দুরে রাখলাম । নীষা এখনও মায়ের সাথেও ঘুমায় । কিন্তু সেই দিনও শেষ হয়ে এল । সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে বুঝতে পারলাম কিছু একটা সমস্যা হয়েছে । মায়ের কাছে গিয়ে জানতে পারলাম যে নানার শরীর নাকি হঠাৎ করেই খারাপ হয়ে গেছে । এখনই যেতে হবে । আমিও যাওয়ার জন্য তৈরি হতে গেলে মা বলল
-তোর যেতে হবে না ।
-কেন ?
-নীষার কাল পরীক্ষা আছে । ওকে থাকতে হবে । তুইও থাকবি ।
-মানে কি ?
বাবা পেছন থেকে বলল
-মানে কি রে গাধা । আমি আর তোমার মা যাচ্ছি । বউমা আর তুই থাক বাসায় । খুব বেশি সমস্যা হলে তোকে ফোন দিবো তুমি নীষাকে নিয়ে চলে আসবি ।
-কিন্তু মা ...
-কোন কিন্তু না ।

বাবা মা চলে গেল । নীষা দরজা বন্ধ করতে করতে আমার দিকে অদ্ভুদ চোখ তাকালো । দুষ্টামীর একটা ছায়া যেন আমি ওর চোখে দেখতে পেলাম ।

সেদিন ক্যাম্পাসে গেলাম না । আমি রাতের বেলা নিয়ে একটু চিন্তিত হয়ে আছি । মেয়েটা রাতে কোথায় ঘুমাবে ? আমার সাথে নাকি ? মাই গড । এখন ?

তবে নীষাকে যতই কাছে আসতে দেই না কেন মেয়ে হিসাবে সে আসলেই একটা লক্ষ্যি মেয়ে এটা অস্বীকার করার কোন উপায় নেই । দুপুরে চমৎকার ভাবে আমার জন্য রান্না করে টেবিলে খেতে দিল । রাতের খাবারের পর সব কিছু গোছাগাছ করে আমার আশে পাশে ঘুরঘুর করতে লাগলো । ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বুঝলাম যে ওর ঘুম আসছে কিন্তু একা একা ঘুমাতে সাহস পাচ্ছে না ।

মা ফোন দিলেন । আমাকে নীষার সাথে ঘুমাতে বললেন । নিজের বউয়ের পাশে ঘুমাতে সমস্যা কোথায় বলে আরও কত কিছু বললেন ।
নীষা আমার ঘরের ভেতরে একবার আসে আবার চলে যায় । একবার বিছানার উপরে বসে আবার জানলার কাছে যায় । তারপর থাকতে না পেরে বলল
-আমি এই এক পাশে ঘুমাই ?
ওর দিকে তাকালাম । তারপর শান্ত কন্ঠে বললাম
-ঘুমাও ।

আমার অনুমুতি পেয়ে মেয়েটা যে কি পরিমান খুশি হল আমি ঠিক বলে বোঝাতে পারবো না । আরও ঘন্টা খানেক পিসি তে বসে থাকার পরে আমি নিজেও বিছানায় গেলাম । সত্যি বলতে কি নিজের কাছে একটু অসস্থি লাগছিল । আমার পাশেই একটা মেয়ে ঘুমিয়ে আছে । যদিও আমারই বউ তবুও অস্বস্থি কাটলো না । লাইট বন্ধ করে চোখ বুঝে রইলাম কিছুটা সময় । ভাবতে লাগলাম সাত-পাঁচ । পাশে নীষা চোখ বন্ধ করে আছে । তবে আমার কেন জানি মনে হল ও ঘুমায় নাই । তারপর কখন যে ঘুমিয়ে গেছি টের পাই নি ।
হঠাৎ করেই আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল ।

অনুভব করলাম নীষা আমার শরীরের খুব কাছে চলে এসেছে । আমাকে বলতে গেলে জড়িয়ে শুয়ে আছে । বাইরে ততক্ষনে জোছনা । জানলা দিয়ে আলো এসে নীষার ঘুমন্ত চেহারার উপরে পরছে । আমি নীষার ঘুমন্ত চেহারা দিকে তাকিয়ে কয়েকটা মুহুর্ত অন্য কোন চিন্তা এল না । এতো মায়াবী মুখ আমি এর আগে কোন দিন দেখেছি বলে মনে হয় না । কিছুতেই ওর দিক থেকে চোখ সরাতে পারলাম না । তাকিয়ে রইলাম । কেবল মনে হতে লাগলো যে এই চেহারার দিকে আমি সারা জীবন তাকিয়ে থাকতে পারবো ।

বুঝতে পারছিলাম আমার নিজের ভেতরে কিছু একটা পরিবর্তন আসছে । অদ্ভুদ সেই অনুভুতির কোন তুলনা নেই । আমি কেবল নীষার দিকে তাকিয়েই রইলাম । নিজের কাছেই বড় বেশি অদ্ভুদ লাগছিলো । ভোর বেলা পর্যন্ত আমি ওর চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম এক ভাবে । তারপর ওর কপালে একটা ছোট্ট চুম খেয়ে ওর গা ঘেষে শুরু পড়লাম ।

সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গলো বেশ বেলা করে । পাশে দেখি নীষা নেই । ফ্রেস হয়ে নাস্তার টেবিলে আসতে না আসতেই নাস্তা এসে হাজির । নীষার অন্যান্য দিনের মত আজকে সেলোয়ার কামিজ না পরে শাড়ি পড়েছে । চুল ভেজা তার মানে গোসল করেছে । ওকে যেন আরও একটু অন্য রকম লাগছে । গত রাতের ওর দিকে তাকিয়ে থাকাটার কথা মনে পড়ে গেল । আমি পরোটা মুখে দিতে দিতে বললাম
-তোমার পরীক্ষা কখন ?
-পরীক্ষা নেই ।
-মানে কি ?
-মানে আমি মিথ্যা বলেছি ।
-কেন ?
আমার কথা শুনে হেসে ফেলল । আমি ধরে ফেললাম ও কেন মিথ্যা বলেছে । কিছু বা বলে কেবল তাকিয়েই রইলাম ।
এই মেয়ে দেখছি আসলেই বিরাট বদ ।

নীষা পরোটা মুখে দিতে দিতে বলল
-আর থেঙ্কিউ ।
-কেন ?
এর কেনর উত্তর দিলো না । কেবল হাসলো । তারপর মুখ দিয়ে একটা ইশারা করেলো । আমি মোটেই বুঝতে কষ্ট হল না মেয়েটা কি বোঝাতে চাইছে ।

এই মেয়ে আসলেই চালু আছে । সামনের জীবনে আমার খবরই আছে ।
-দুষ্ট হয়েছো তাই না ?
-হুম ।
বলে আবার সেই দুষ্টামীর হাসি ।
-দাড়াও । তোমাকে মজা দেখাচ্ছি ।
-এই খবরদার উঠবে না । খবরদার বলছি কাছে আসবা না ?

আমি নিজের চেয়ার থেকে উঠি পর্যন্ত নাই । নীষা চাচ্ছে যেন আমি উঠি ওর দিকে যাই ।
দাড়াও নাস্তা আগে শেষ হোক । তোমার মজা দেখাচ্ছি ........

-----
তারপর ........ এতো কিছু জানতে হবে না । আমার খবরের কথা আপনাদের জানাবো কেনু শুনি ?
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মে, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৪
২৭টি মন্তব্য ২৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×