somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ ভালবাসার বিভ্রম

২১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ট্রেন ছাড়ার কথা ৯ টা ৫০ মিনিটে ! আমি হাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি এখনও মিনিট দশেক বাকি আছে । মানুষ জন ছড়িয়ে ছিটিয়ে প্লাটফর্মের উপর ঘোরাফেরা করছে ! কেউ কেউ আবার বগির ভেতরেই নিজেদের সিট নাম্বার টা খুজতে ব্যস্ত !
কয়েকটা ছেলেমেয়ে কে দেখলাম খুব হইচই করে বগিতে উঠতে । ট্যুরে যাচ্ছে সম্ভবত ! আমিও ছাত্র অবস্থায় বেশ কয়েকবার ট্যুরে গিয়েছিলাম বন্ধুদের সাথে ! সেই সময় টাই অন্য রকম ছিল !

আবারও জানলা দিয়ে বাইরে তাকালাম । চোখ দুটো এমন কাউকে খুজছে যাকে কোন ভাবেই দেখার কোন সম্ভাবনা নেই । তবুও চোখ দুটো তাকে খুজছে । কেন, কে জানে !
মানুষের মন টা আসলেই বেশ অদ্ভুদ ! কথায় আছে মানুষ হচ্ছে পৃথিবীর সব থেকে লজিক্যাল প্রানী কিন্তু এই মানুষেরাই সব ইলজিক্যাল আর ইরেশনাল কাজ, চিন্তা-ভাবনা গুলো করে !

মাঝ বয়সী এক লোক আমার পাশে এসে বসে পড়লেন ! আমি তার দিকে না তাকালেও লোকটা নিজের ব্যাগটা সিটের উপর রাখতে রাখতে বললেন
-আজকাল কার ছেলে মেয়েরা ! আমাদের সময় এমন ছিল না !
আমি কোন কথা না বলে বাইরে তাকিয়ে রইলাম ! আসলে আমার কোন কথা বলতে ইচ্ছে করছে না ! মনটা সামিয়ার দিকেই পরে আছে । আজকে একটু আগে যে কাজটা করলাম সেটা কি করা ঠিক হয়েছে ?
জানি না ! ঠিক হয়েছে কি না কিন্তু কেন জানি নিজেকে সংবরন করতে পারি নি ! আর হয়তো এই সুযোগ আসবেও না !
-দেখেছেন ভাই সাহেব, এই এই মেয়ে গুলা একা একা যাচ্ছে যদি কিছু হয়ে যায় ! তখন ?
ভদ্রলোক দেখি অন্যের ছেলে মেয়েদের জন্য বেশ চিন্তিত !
-আমার মেয়ে যদি এমন কিছু করে তাহলে চাপকিয়ে পিঠের চামড়া তুলে দেবো ! সব কিছু সবার জন্য না !
আমি তবুও কোন কথা বললাম না ! কেবল কিছুটা সময় ভদ্রলোকের দিকে তাকিয়ে আবারও জানলার দিকে তাকালাম ! তারপর চোখ বন্ধ করে ফেললাম ! সামিয়া এতোক্ষনে নিশ্চয় চলে গেছে ! আমার জন্য অপেক্ষা করার কোন কারনই নেই ! তবুও মন বলছে ইস যদি করতো !

কেন ?
কেন করবে ?
মাঝে মাঝে ই প্রশ্নটা আমি মাঝে মাঝেই নিজেকে করি ! কেন অপেক্ষা করবে আমার জন্য ! আমার স্ত্রী বলে ?
নাহ ! পরে মনে হয় কেবল বিয়ে করলেই স্বামী কিংবা স্ত্রী হওয়া যায় ?
সম্ভবত না ! আরও অনেক কিছুর প্রয়োজন ! যা আমাদের ভেতরে কোন দিনই ছিল না ! তাহলে কেন একটু মন খারাপ লাগছে ?
কেন আমি ওকে আশা করে আছি !

আমার জানা নেই ! আসলেই জানা নেই !


একটু দুলুনি দিয়েই ট্রেন টা যাত্রা শুরু করলো ! যে ছেলে মেয়ে গুলো প্লাট ফর্মের উপরে দাড়িয়ে ছিল হুড়মুড় করে উঠে পড়লো ! পাশের বসা ভদ্রলোক কে দেখলাম আবার বিরক্তিতে গজগজ করতে শুরু করেছে ! এমন একটা ভাব যেন ছেলে মেয়ে গুলো বিরাট কোন অন্যায় করে ফেলেছে । ন

আমি একটু নিশ্চিন্ত হলাম ! যাক ! এখন আর কোন সমস্যা নেই ! একটু আগে মনের ভেতরে যে সুক্ষ একটা ভাবনা কাজ করছিল যে সামিয়া হয়তো আসবে ! এখন সেটা থেকে মুক্ত ! আমি আবারও চোখ বন্ধ করলাম ! ওকে নিয়ে ভাবা বন্ধ করতে হবে ! সামনের দিনের জন্য এই ভাবনা গুলো মোটেই আমার জন্য ভাল কিছু হবে না ! তার চেয়ে বরং সামনের ছুটিটা আমি কিভাবে কাটাবো আর কোথায় কোথায় যাবো সেটা নিয়ে একটু চিন্তা করা যাক !

আজ থেকে দু সপ্তাহ একেবারে নিজের মত ! ইচ্ছে মত ঘোরাঘুরি তারপর মুক্তি ! সামিয়ার কাছ থেকে একেবারে দুরে যাবো তখন !
তখন কেন বলছি ? আমার তো মনে হয় আজকে একটু আগে থেকেই আমি ওর কাছ থেকে দুরে চলে এসেছি ! আর হয়তো ফিরে যাবার কোন পথ নেই । সব পথ নিজেই আমি বন্ধ করে দিয়েছি !



সামিয়া ! নামটা মনে হতেই বারবার কেবল পুরানো দিনের কথা মনে পরে যায় ! কট কথা মনে পরে !
মাস ছয়েক আগেই ওর সাথে বিয়ে হয়েছিল ! পারিবারিক ভাবে ! ভাল ফ্যামিলি আর আর বড়লোক বাবার মেয়ে ! কিন্তু বিয়ের শুরু থেকেই ওর সাথে আমার বনিবনা হয় নি ! বনি বনা বলতে যে আমাদের ঝগড়া হত এমন না ! আসলে ওর সাথে আমার দেখা হত খুব কম ! ও থাকতো নিজের মত । আমি থাকতাম আমার মত ! ভাগ্য ভাল যে বাবা মা কেউই আমার সাথে থাকে না তাহলে হয়তো ব্যাপারটা আরো অন্য দিকে যেতে পারতো ! অবস্থা আরও খারাপ হতে পারতো ! সেদিকে যায় নি ভাল হয়েছে !

আমি সারাদিন অফিসে থাকতাম আর ও থাকতো ওর বন্ধুবান্ধবদের নিয়ে ! বিয়ের প্রথম দিনের সেই কথা আমাকে সে পরিস্কার করেই বলে দিয়েছিল যে তার স্বাধীনতায় আমি যেন কোন বাধা দেওয়ার চেষ্টা না করি ! আমি অবশ্য করি নি ! কি দরকার !
আমি সারা জীবন ঝামেলা এড়িয়ে চলেছি ! এবারও ঝামেলা এড়িয়েই চললাম ! আমরা ঠিক মত কাছেই আসতে পারলাম না যে বলবো আমাদের মাঝে দুরুত্ব বাড়তে লাগলো ! সেটা তো সব সময়ই ছিল ! তবুও সব কিছু একটা ব্যালেন্সে ছিল !
কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহে একটা ব্যাপারে আমাকে একটু নাড়া দিয়ে ছিল বেশ ভাল করেই । সামিয়ার সম্ভবত কারো সাথে এফেয়ার চলছে ! সারাদিন পর বাসায় আসার পর ওর ফোনে খুব ফোন আসতে শুরু করলো ! আগে বাসায় থাকায় অবস্থায় ও আমার সাথে টুকটাক কথা বলতো ! সেটাও কমে গেল ! একদিন রাতে ঘুম ভেঙ্গে দেখি ও পাশে নেই । বারান্দা থেকে কথা বলার আওয়াজ আসছে ! আর এক দিন আমি নিজ চোখেই দেখলাম ও একটা ছেলের সাথে ফার্স্ট ফুডে বসে গল্প করছে । ফোন দিলাম । বলল যে ওর বাবার বাসায় যাচ্ছে !

অন্য সব কিছু মেনে নিলেও এটা কেন জানি কিছুতেই মেনে নিতে পারছিলাম না ! কোন ভাবেই নিজের মন কে বুঝ দিতে পারছিলাম না যে সামিয়া অন্য কারো সাথে .... পরশুদিনই ভাবলাম একটা দফারফা করে ফেলা দরকার ।
রাতে খাবার পরে ও যখন শোবার ঘরের দিকে যাচ্ছিলো তখনই ওকে বললাম
-একটু কথা ছিল !
-এখন ? আমার ঘুম আসছে !
-বেশি না ! ১০ মিনিট লাগবে ! এই টুকু লেট হলে খুব সমস্যা হবে ?

সামিয়া অনিচ্ছা সত্ত্বেও শোফায় গিয়ে বসলো ! আমি বসলাম ওর মুখোমুখি ! কয়েকটা মুহর্ত চলে গেল কোন কথা না বলেই ! আমি খানিকটা দম নিয়ে ঠিক করে নিলাম কি বলবো আর কিভাবে বলবো !
-কিছু বলবা না ?
-হুম !
একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে শুরু করলাম !
-দেখো আমি ঘোরপ্যাঁচ কম বুঝি ! যা জানতে চাইবো, কিংবা যা বলার আছে সোজাসুজি বলবো ! আশা করি তুমিও সোজাসুজি কথা বলবে ! আর কিছু না ! ঠিক আছে ?

আমার গলার কন্ঠ স্বরে কিছু একটা ছিল যে দেখলাম সামিয়ার মুখ টা যেন একটা সিরিয়াস হয়ে গেল ! আমি সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বললাম
-তোমার কি কারো সাথে কিছু চলছে ? প্লিজ আমি সত্য টা জানতে চাই !
সামিয়া কোন কথা না বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! কিছুটা দ্বিধা যেন ওর চোখে দেখতে পেলাম !
আমি আবারও বললাম
-দেখো আমি ব্যাপারটা হয়তো বুঝতে পারছি ! যাক, সমস্যা নেই । তুমি কি চাও সেইটাই আসল ব্যাপার ! জোর করে কেউকে ধরে রাখা সম্ভব না ! সেটা আমি জানি ! তাই লুকোচুরি করে লাভ নেই !

আবারও কিছুটা সময় ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম ! ও ততক্ষনে চোখ নামিয়ে ফেলেছে ! মনে হল ওকে আর বিব্রত করে লাভ নেই ! আমি আমার কথা বলে ফেলি ! আমি বললাম
-আমি পরশুদিন সপ্তাহ দুয়েকের জন্য একটু ঢাকার বাইরে যাবো ! তুমি এই সময়ের ভেতরে একটু ভাবো ! কি করবে ? কার সাথে থাকবে ! ঠিক আছে !

সামিয়া তখনই আমার দিকে তাকালো ! আমি আবারও বললাম
-এভাবে এক সাথে না থাকাই ভাল !

বলে চুপ করে রইলাম ! সামিয়ে আরও কিছুটা সময় আমার সামনে বসে থেকে উঠে চলে গেল ! আমি ঐ রাতে আর শোবার ঘরে গেলাম না ! শোফার উপরেই রাত টা কাটিয়ে দিলাম ! কেন বুকের ভেতরে হঠাৎ করেই একটা কষ্ট লাগছিলো ! কোন কারন নেই তবুও ওকে হারানো কষ্ট অনুভব করছিলাম ! আজিব একটা অনুভুতি !

পরের দিন ওর সাথে আমার দেখাই হল না ! মাঝে মাঝে ও রাত করে বাসায় আসে ! আমার অফিস থাকে তাকে তাই তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়তে হয় ! সকালে উঠে দেখি ও ঘুমিয়ে আছে ! আমি আবার চলে যাই ! আজকে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ও ঠিকই আমার পাশে ঘুমিয়ে আছে । কখন এসেছে আমি টের পাই নি !

কিছু সময় ওর ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়ে রইলাম ! মাঝে মাঝেই এমন করে তাকিয়ে থাকতাম ওর দিকে ! কেমন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হত নিজের কাছে ! এখনও হল ! সাথে একটা কষ্টের অনুভুতিও !

জলদি জলদি অফিস থেকে ফিরে এসে দেখি সামিয়া তখনও বাসায় আছে । এমন সাধারনত হয় না ! আমি গোছগাছ করতে লাগলাম ! সন্ধ্যার একটু পরে যখন বের হব দেখলাম সামিয়া আমার সাথেই বের হল । ওর পরনে একটা সাদা রংয়ের টি-শার্ট আর কালো টাইট জিন্স ! গলায় একটা কালো স্কার্ফ !
আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-কোথাও যাচ্ছো ?
-হুম ! তুমি ট্যুরে যাচ্ছো, আমিও ! গাজিপুরে ! আজকে থাকার প্লান !
মন টা একটু খারাপ হল ! নিশ্চয়ই সেই ছেলেও যাবে ! ওর সাথে ঘুরবে ! কথা বলবে আর ....। আমি আর কিছু ভাবলাম না ! যাক ! আমার কিছু করার নেই ! হঠাৎ সামিয়া বলল
-চল তোমাকে নামিয়ে দেই !
-কোথায় ? স্টেশনে ?
-হ্যা !
-আরে দরকার নেই !
-কোন সমস্যা নেই ! আমার হাতে এখনও বেশ খানিকটা সময় সময় আছে ! আবার কবে দেখা হবে ঠিক নেই !


আমি আর মানা করলাম না ! আসলেই তো ! আবার কবে দেখা হবে ঠিক নেই ! আদৌও ঠিক মত দেখা হবে কি না কে জানে !

পুরো রাস্তা কোন কথাই বললাম না ! সামিয়ে নিজের ফোন নিয়ে ব্যস্ত আমি বাইরে তাকিয়ে রইলাম ! কি দেখছিলাম আমি নিজেই জানি না ! যখন স্টেশনে চলে এলাম তখনই মন খারাপ টা হঠাৎ করেই বেড়ে কেন জানি ! বুকের ভেতরে হুহু করে উঠলো ! ইচ্ছে হল ওকে জড়িয়ে ধরে বলি তুমি আমার সাথে চল ! আমার নতুন করে শুরু করি সব কিছু ! একবার হয় নি তো কি হয়েছে আরেকবার হবে ! দুজন মিলে একটু চেষ্টা করলেই হবে !
কিন্তু চাইলেই কি সব কিছু করা যায় !

ওর কাছ থেকে দুরে চলে যাচ্ছি ভাবতেই কষ্ট হতে লাগলো ! অদ্ভুদ রকমের কষ্ট ! আমরা দুজনেই চুপচাপ কয়েকটা মিনিট বসে রইলাম । সামিয়াই আগে কথা বলল !
-অপু !
-হুম !
-তুমি খুব ভাল একটা ছেলে ! এটা জানো কি !
-তুমিও ভাল একটা মেয়ে !
-তাই ?
এই বলে সামিয়া হেসে ফেলল ! তারপর আমাকে অবাক করে দিয়ে আামকে জড়িয়ে ধরলো ! তখনই একটা অদ্ভুদ কাজ করে ফেললাম
সামিয়ার কপালে চুম খেলাম !
তারপর কপাল থেকে ওর ও ঠোঁটে ! গুভ বাই কিস ! সামিয়া একটু অবাক হলেও কিছু বলল না !
-ভাল থেকো !
-তুমিও !

দরজা খুলে বেরিয়ে স্টেশনের রাস্তা দিয়ে হাটতে লাগলাম ! পেছনে ফিরে তাকাবো তাকাবো না করেই ঠিকই তাকিয়ে ফেললাম ! দেখি ও জানালা দিয়ে আমার দিকেও তাকিয়ে আছে ! একবার ইচ্ছে হল দৌড়ে গিয়ে ওর কাছে চলে যাই । বলি সব কিছু ঠিক করে নিতে !
কিন্তু জানি সেটা কোন ভাবেই হবার নয় ! কেবল হাত নাড়লাম ওর দিকে তকিায়ে ! তারপর ঘুকে গেলাম স্টেশনের ভেতরে !



ট্রেন টা বেশ জোরেই চলতে শুরু করেছে । ঘন্টাখানেক পার হয়েও গেছে । আমি এতোক্ষন চোখ বন্ধ করেই ছিলাম । অদ্ভুদ ভাবেই দেখছি এখনও সামিয়া ছাড়া আর কিছু ভাবছি না ! আচ্ছা যখন ফেরৎ আসবো তখন আসলেই ও চলে যাবে ?
জানি না ! তবে চলেই যাবে মনে হয় !

হইচই শব্দ শুনে তাকিয়ে দেখি সামনের ছেলে মেয়েদের গ্রুপ টা গান ধরেছে ! শিরোনাম হীনের গান ! বগির কিছু মানুষ ট্রেনের তালে তালে সেটা শুনছে ! আমার পাশের ভদ্রলোক দেখলাম সেই বিরক্ত মুখেই তাদের দিকে তাকিয়ে আছে !

-আচ্ছা এরা সারা রাতই এমন করবে ? আমাদের ঘুমাতে দিবে না !
-চিন্তা করবে না । ট্যুরে যাচ্ছে তো একটি চিৎকার চেঁচামিচি করবেই !
-তাই বলে আমাদের শান্তি দিবে না ! এটা কোন কথা !
আমি হেসে বললাম
-একটু স হজ ভাবে নিন ! বয়স কম না ওদের ! ছাত্র থাকা কালে আমিও এমন করেছি ! আর আমার মনে হয় আপনিও এমন টা করেছেন !
লোকটা কিছু বলল না আর । তবে আমি যে ছেলে মেয়েদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছি এটা তিনি মোটেই ভাল চোখে দেখছেন না !

-টিকেট !

টিটি সাহেব চলে এসেছে । আমি টিকেট বের করে টিটি সাহেবের দিকে দিতে যাবো তখনই একটা অদ্ভুদ দৃশ্য দেখলাম !
সমিয়াকে দেখতে পেলাম বগির দরজার কাছে ।
বগির প্রত্যেকটা যাত্রীর চোখ ওর দিকে ! বিশেষ করে ওর টাইট ফিটিং ড্রেস সবার দৃষ্টি কেড়েছে ! টিটি সাহেবও দেখি ওর দিকে তাকিয়ে আছে । আমার পাশের ভদ্রলোকের চোখও সেদিকে ! আমার কেবল মনে হল আমি স্বপ্ন দেখছি !

সামিয়া সরাসরি আমার দিকে এল ! আমার সামনে দাড়িয়ে বলল
-ব্যাগ নাও !
-কি !
টিটি সাহেব বলল
-আপনাকে ব্যাগ নিতে বলতেছে !
আমা রপাশের ভদ্রলোক নিজের হাতে আমাকে ব্যাগ এগিয়ে দিলেন ! আমি রোবটের মত ব্যাগ কাধে নিলাম !

সামিয়া আমার হাত ধরে বগির থেকে বেরিয়ে গেল ! আমি ওর পেছন পেছন হাটতে লাগলাম ! আমার তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না ! বারবার মনে হচ্ছে সিটে বসে থাকতে থাকতে ঘুমিয়ে পরেছি নিশ্চয় ! নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছি ! স্বপ্ন ছাড়া অন্য কিছু হতেই পারে না !

ও আমাকে এসি কম্পার্টমেন্টের দিকে নিয়ে গেল ! একটা কেবিনের দরজা খুলে আমার নিয়ে ভেতরে চলে এল !
ক্যাবিনের সিটে দেখি ওর ব্যাগ পড়ে আছে । ব্যাগটা আমার পরিচিত ! ওর নীল রংয়ের ব্যাগ প্যাক টা ! যেটা একটু আগেই আমি স্টেশনে ওর পাশেই দেখেছি ! আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না । ও এখানে কেন ?

আমি কেবল বলতে শুরু করেছি
-তুমি এখানে ? তুমি....

সামিয়া আমাকে আর কিছু বলতে দিল না ! গাড়িতে বসে যে মৃদু ভাবে ওর ঠোঁটে চুম খেয়েছিলাম ও সেটা কে যেন আরও গভীর করে তুলল ! সত্যি বলতে কি এতো গভীর ভাবে এর আগে ওকে চুম খাইনি !
আমার কেবল মনে হচ্ছিলো যে আমি নিশ্চয়ই স্বপ্ন দেখছি ! অবশ্যই স্বপ্ন দেখছি ! এটা সত্য হতে পারে না ! নাকি পারে ?
আমি জানি না !

কত টা সময় পার হয়েছে আমার লক্ষ্য নেই কেবল অনুভব করলাম যে ও আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে । মাথা রেখেছে আমার বুকে ! আমি আর কিছু চিন্তা করতে পারছি না ! যদি স্বপ্ন হয় তাহলে হয়তো একটু পরেই আমার ঘুম ভেঙ্গে যাবে ! দেখবো সেই ছেলে মেয়ে গুলো তখনই হইচই করছে বগির ভেতরে ! চিৎকার করে গান গাইছে আর নিজেডের ভেতরে হাসাহাসি করছে ! আর আমার পাশের ভদ্রলোক বিরক্ত চোখে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে !
আর যদি সত্যি হয় তাহলে চোখ খোলার পরেও হয়তো দেখবো সামিয়া আমার বুকের মাথা রেখে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে আছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ৮:৪৩
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×