somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ হঠাৎ ফেরা !

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোর বেলা এমন একটা সময় যখন কেউ যদি আমার কাছে এসে বসে অপু সাহেব উঠুন আপনাকে লাখ টাকা দেওয়া হবে ! আমি তাকে চোখ না খুলেই বলব দুরে গিয়া মর ব্যাটা ! সেই আমি যখন ফোন কানে নিয়ে বিরক্ত হয়ে হ্যালো বললাম তখন ওপাশ থেকে একটা মাত্র শব্দ আমার সকল ঘুম নিমিশের ভেতরে গায়েব করে দিল !
আরিন কেবল মাত্র একবার বলেছে হ্যালো !
আমি নিজেই অবাক হয়ে গেলাম যে এতো দিন পরেও আমি ওর গলা একদম পরিস্কার মনে রেখেছি !
আমি আরেকবার ফোনের নাম্বার টা দেখলাম ! ততক্ষনে আমার ঘুম পুরোপুরি চলে গেছে ! একবার মনে হল স্বপ্ন দেখছি না তো ! ও চলে যাওয়ার পরে বেশ কয়েকবার ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি কিন্তু এতো স্পষ্ট কখন মনে হয় নি !
আরিন আবার বলল
-হ্যালো ! অপু ! কেমন আছো ?
কেমন আছো ?
এই নয়মাস পরে আমার খোজ নিতে মনে পড়লো !
আমি বলতে গেলে চিৎকার করে বলে উঠলাম
-থাপ্পাড় দিয়ে তোমার দাঁত খুলে ফেলবো ফাজিল মেয়ে ! এতো দিন পরে এই ভোর বেলা ফোন দিয়ে বলছো আমি কেমন আছি !
ফাজলামি পেয়েছো বদ মেয়ে ! একবার তুমি কেবল আমার সামনে এসো ! তারপর তোমাকে আমি মজা দেখাবো !

আমি ফোনের ওপাশে ওর হাসির আওয়াজ পেলাম !
-আবার হাসছো ! সিরিয়াসলি আমার সামনে আসো তোমাকে ...... তোমার সিওর খবর আছে !
-রাগ করেছো আমার উপর ?
-না রাগ করবো কেন ? আদর করবো ?
-মিস কর নি ?
আরে এই মেয়ের সমস্যা কি ! আমি এতো এতো চিৎকার করছি আর ও যেন মজা পাচ্ছে !
-নাহ ! তোমাকে মিস করবো কেন ? ঐ যে তোমার বাসার পাশে যে সুন্দর মত মেয়ে টা থাকতো না ওকে খুব মিস করেছি !
-তাই ? তা যেতা ওর কাছে ! ও আর হারিয়ে যায় নি আমার মত !

আমি আরও কিছু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু নিজেকে সামলে নিলাম ! আমার মাথার ভেতরে কত গুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ! কোন আগা মাথা খুজে পাচ্ছি না ! আরিন আমার সাথে এমন কেন করলো ! আর যদি ঠিকই করে রাখে তাহলে আমার সাথে আবারও কেন যোগাযোগ কেন করলো ?

আরিন বলল
-শুনো তোমার মেইলে একটা মেইল গেছে ! ঠিক আছে ! ওটা ওপেন কর !
-ওসব পরে হবে !
-আহা শুনো না ! প্লিজ একটু শান্ত হয়ে শুনো ! আমাকে যা ইচ্ছা কর ! কিন্তু এখন যা বলছি শুনো !
-বল !
-ঐ মেইলে একটা টিকেট আছে ! আর কিছু কাগজ পত্র আছে ! ঠিক আছে ! তুমি এই সকাল বেলাতেই এম্বাসিতে যাবা ?
-মানে ?
-মানে অস্ট্রেলিয়ান আম্বাসিতে !
-কেন ?
-আরে গাধা আমার সাথে দেখা করবা না !
-দেখা তো করবোই ! তোমার দাঁত ফেলতে হবে না ?
-ঐ তো !
-তুমি কোথায় এখন ?
-সিডনিতে !
-সে কি ! কেন ?
-এখানে আমার মা থাকে !
-তোমার মা না আগে ইউ এস এ তে ছিল !
-ছিল মুভ করেছে ! আমার জন্য !
-কেন ?
-আহা এতো কেন কেন করছো কেন ? তোমার সব প্রশ্নের উত্তর এখানে এসে পেয়ে যাবা ! আমি টিকেট পাঠিয়েছি ঐ মেইলেই ! কাগজ পত্র গুলো দেখালে আশা করি ভিসা হয়ে যাবে ! ঠিক আছে ! রাখছি এখন, আমাকে এখন রাখতে হচ্ছে ! বাই !

আমি কিছু বুঝতে পারলাম না ! আরিন হঠাৎ করেই এমন কেন করলো আমার সাথে ! ৮ টা মাস আমার থেকে এভাবে দুরে থাকার পরে আজকে বলছে সে সিডনিতে আছে । আমার জন্য টিকেট পাঠিয়ে বলছে চলে আসতে !

আমি মেইল চেক করলাম ! আসলেই ও যা যা বলেছে সব চলে এসেছে ।

সকালে এম্বাসীতে গেলাম ! আশ্চার্য ভাবেই দেখলাম কাজ হতে লাগলো দ্রুত ! এটো দ্রুত কাজ হয় না স্বাধারনত ! হয়তো আরিন ওখান থেকে ব্যবস্থা করেই রেখেছিল তাই এতো দ্রুত হল সব কিছু ! নয়তো হত না !


অফিসের সব থেকে গম্ভীর এম্লোয়ী হিসাবেই অরিন পরিচিত ছিল ! গম্ভীর সাথে বদমেজাজী ! সবাইকে সব সময় বকাবকি করছে ভুল ধরছে ধকাচ্ছে ! সহ্য না করে উপায় ছিল না । ওর পোস্টাই এমন ছিল ! অফিসের এক সেমিনার আয়োজন হল কক্সবাজারে । প্লান হল সেখনে একটা ট্রেনিং হবে, সাথে অফসি পিকনিক ! সবাই হাজির কেবল আমি ছাড়া ! আমার নিজের কক্সবাজারে একটু এলার্জি ছিল ! একটা ব্যক্তিগত কারন ছিল ! আমি গেলাম না !

পিকনিক শেষ করে দেখলাম আরিন আর আগের মত সবাইকে ধকাচ্ছে না ! একটু যেন ইজি হয়ে গেছে সবার সাথে । যাই হোক আমাকে কেবিনে ডেকে নিয়ে গিয়ে আমার না যাওয়ার কারন জানতে চাইলো ! বললাম
-নিজের ব্যক্তিগত !
-সবাই আপনাকে খুব মিস করছিল ! আপনি নাকি চমৎকার গান করেন ! আমরা আপনার গান মিস করেছি !
আমি কিছু না বলে হাসলাম একটু !
আরিন তারপর বলল
-কারন টা কি বলা যাবে ? যদি খুব বেশি পার্শনাল না হয়ে থাকে !

ঠিক বুঝলাম না আরিন হঠাৎ করেই আমার ব্যক্তিগত ব্যাপারে এতো আগ্রহ কেন দেখাচ্ছে ঠিক বুঝলাম না ! তারপর মনে হল বলেই দেই !
-আসলে আমার একজনের সাথে সমুদ্র সৈকত টা দেখার কথা ছিল ! একজনের হাত ধরে !
-তারপর ?
-কথা দিয়েছিলাম তার হাত না ধরে কোন দিন কক্সবাজারের সমুদ্রে দেখবো না !
-সে কোথায় ?
-অন্য কারো সাথে আগেই সমুদ্র দেখে ফেলেছে !
-আর আপনি ? এখনও মুভ করেন নি ?
-সবাই সব কিছু পারে না ! আরও ভাল করে বললে ......।
কথাটা শেষ না করে চুপ করে রইলাম কিছু সময় !
আরিনও কিছুসময় চুপ করে থেকে বলল
-আসলে আমাদের সবার জীবনেই এমন কষ্টের ঘটনা গুলো আমাদের কে বেঁধে রাখে ! মুভ করতে দেয় না । তাই না ?
কৌতুহল থেকেই বললাম
-আপনার জীবনেও আছে নাকি এমন কিছু ?
আরিন জবাব দিল না ! কেবল অন দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু সময় !


পিকনিকে গিয়ে নাকি আরিন সবার সামনে গানের তালে তালে নেচে ছিল ! সবাই তো অবাক ! তাদের ম্যাম এমন হতে পারে তারা ভাবতেও পারে নি । সবার শেষে এতো বলেছিল সে তার আগের জীবন টা পাল্টাতে চাচ্ছে ! ঐ জীবনে নাকি ক্লান্ত হয়ে উঠেছে ! অফিসে সবার সাথেই তার আস্তে আস্তে ভাব হয়ে উঠলো ! আমার সাথে যদিও কথা কম বলতো তবুও কথা হত মাঝে মাঝে !

একদিন অবাক করার মত একটা কাজ করলাম ! আমি রিক্সা নিয়েছি বাসায় যাবো ! অফিসের ঠিক সামনেই আরিনের গাড়ি জ্যামে আটকে আছে ! আমার রিক্সাটা থামলো ঠিক তার পাশেই ! কাঁচ দিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো ! তারপর কাঁচ নামিয়ে বলল
-এদিকে কোথায় ? আপনার বাসা কি এদিকে নাকি ?
-হুম ! এদিকেই !
-আসুন ! গাড়িতে আসুন ! আমি নামিয়ে দেই !
আমি হেসে বললাম
-তার চেয়ে বরং আপনি গাড়ি থেকে নেমে রিক্সায় আসুন ! আকাশের অবস্থা ভাল না । যে কোন সময় বৃষ্টি নামবে । দেখবেন বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাসায় ফেরায় কি মজা !

আমি এমনি সিরিয়াসলি বলি নি ! এমনি কথার কথা বলেছি ! কিন্তু সত্যি সত্যি চলে আসবে আমি ভাবি নি ! আমাকে অবাক করে দিয়ে আরিন আমার রিক্সায় উঠে এল !

জ্যাম ছেড়ে যাওয়ার পরপরই শুরু হল বৃষ্টি ! পুরাতন বেইলি রোড দিয়ে আমার রিক্সা ছুটে চলেছে তীব্র বৃষ্টির মধ্যে । আমার পেছন পেছন আরিনের গাড়ি আসছে । আমরা দুজন বৃষ্টিতে ভিজছি ! মাঝখানে আরিন রিক্সা থামিয়া রাস্তার উপর বৃষ্টিতে ভিজতে লাগলো ! মানুষজন অবাক হয়ে আমাদের দেখছে । ভাবছে ফরলাম পোষাকে একটা ছেলে আর একটা মেয়ে বৃষ্টির ভেতরে কি করে ! নিশ্চয় তারা আমাদের প্রেমিক প্রেমিকা ভাবছে।
অবশ্য আরিনের সেদিকে লক্ষ্য নেই ! সে যেন অন্য জগতে রয়েছে ।

প্রায় ঘন্টা খানেক ভেজার পরেও বৃষ্টি থামলো না ! বরং আরও বাড়লো ! সেই সাথে তীব্র বাতাস ! আকাসে মেঘ ডাকতে লাগলো আরও জোড়ে ! আমরা যখন আরিনের বাসার সামনে এসে থামলাম তখন রীতিমত ঝড় শুরু হয়ে গেছে ।
আমি ওকে নামিয়ে দিয়ে বললাম
-আচ্ছা তাহলে আসি !
আরিন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-থেঙ্কিউ !
-কেন ?
-এই বৃষ্টিতে ভিজতে ডাকার জন্য ! কবে শেষ বৃষ্টিতে ভিজেছিলাম মনে নেই !
-আচ্ছা আসি !
-বাইরের অবস্থা দেখেছেন ! আপনার বাসা কোথায় ?
-এই তো কাছেই ।
-কোথায় ?
-মোহাম্মাদপুর ।
-মোহাম্মাদ পুর !!!

আরিন কেবল অবাক হয়ে তাকালো আমার দিকে ! মোহাম্মাদপুর আপনার কাছে কাছে মনে হল ! এদিকে কেন তাহলে !
-একটা কাজে যাচ্ছিলাম !
-শুনুন এখন অতদুর যেতে হবে না ! আপনি বাসায় আসুন ! ঝড় থামলে তারপর যাবে ! আসুন !
-আরে না ঠিক আছে ! সমস্যা হবে না !
-হবে ! এই ভেজা কাপড়ে এতোদুর গেলে জ্বর চলে আসবে ! তারপর কাল অফিস কামাই !

আরিন আমাকে জোর করেই নিয়েই গেল !

নয়তলার একটা ফ্ল্যাটে আরিন একাই থাকে । আমার জন্য তোয়ালে, টিশার্ট আর ট্রাইজারও নিয়ে এল ! এগুলো নাকি ওর এক্স হাজব্যান্ডের ! আগেই শুনেছিলাম যে ওর ডিভোর্স হয়েছে । তাও অনেক দিন আগেই নাকি !

আমি যখন গা মুছে বাইরে বের হয়ে এলাম দেখি আরিন আগেই বের হয়ে এসেছে ! টিভির ঘরের টি টেবিলের উপর চায়ের কাপে ধোয়া উড়ছে । আমি বসতে বসতে আরিন এসে পাশে বসলো ! ঝড় হলেও দেখি এদিকে কারেন্ট ঠিকই আছে । আমাদের এলাকায় অবশ্য ঝড় বৃষ্টির দিনে কারেন্ট থাকার নিয়ম নেই !
আরিন যেন আমার মনের কথাই ঠিক ঠিক ধরে ফেলল !
বলল
-কারেন্ট নেই । আই পিএস ।
-ও তাই বলেন । আমাদের এলাকায় কারেন্ট থাকে না এই সময় । সেই সময় আমরা মোমবাতি জ্বালাই । কেন জানি পুরো সময়ের ভেতরে এই সময়টাতেই অন্য রকম লাগে ।
-তাই ?
-হুম !
-আচ্ছা দাড়ান !

এই বলেই আরিন ভেতরে চলে গেল । ফিরে এল বেশ কয়েকটা মোমবাতি নিয়ে । তারপর সেগুলো ঘরের কয়েক জায়গায় জ্বালিয়ে দিয়ে আইপিএস এর লাইণ বন্ধ করে দিল ।

মোমের আলোতে চারিদিকে কেবল একটা রোমান্টিক পরিবেশ তৈরি হয়ে গেল !
আমি হঠাৎ করেই বললাম
-আমাদের প্রায়ই আগে এরকম জিনিস নিয়ে কথা হত ।
-কি রকম ?
-না মানে সেই সমুদ্র কন্যার কথা বলছি । তার খুব পছন্দের ছিল এই মোমের আলো । বলতো মোমের আলোতে সে রাতে আমার সাথে প্রতিদিন ডিনার করবে । মানে ক্যান্ডেল টাইট ডিনার আর কি ! কত কিছু করার প্লান ছিল বিয়ের পর । কিন্তু .....
-আসলেই মানুসের প্লান মাফিক কিছু হয় না তাই না ?
-হুম ! এই যে দেখেন প্লান ছাড়া আজকে বৃষ্টিতে ভেজা হল ! তারপর আপনার সাথে বসে চা খাওয়া হচ্ছে । ভাল হচ্ছে না !

কিছু সময় আবারও দুজন চুপ করে রইলাম । আসলে কি বলবো খুজে পেলাম না ! দেখলাম আরিন চায়ের কাপ হাতে নিয়ে বারান্দার দিকে এগিয়ে গেল । আমিও গেলাম পেছন পেছন । তখনই বাইরে বেশ ঝড় হচ্ছে । দুজন কিছু সময় চুপ থাকার পরেই হঠাৎ করেই আরিন বলল
-আমি চার চার বার বাচ্চা কনসিভ করেও রাখতে পারি নি ! কেন পারি নি কেউ বলতে পারলো না ! ডাক্তারেরা বলল আমি নাকি আর পারবো না ! এর বেশি ট্রাই করলে নাকি আমার শরীরের জন্য ভাল হবে না ! তারা সার্টিফিকেট দিয়ে দিল ! সেই সাথে আমার হাজব্যন্ড আর শ্বাশুড়িও !
-কি !
-আমাদের সমাজে মেয়েরা বাচ্চা জন্ম দিতে না পারলে সেটাকে বড় অন্যায়ের কাজ মনে করা হয় । যেন দোষ টা মেয়ের নিজের ।
আমি কি বলবো ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না ! আরিন বলল
জাভেদ কে আমি ভালবেসে বিয়ে করেছিলাম । যদিও ওর মায়ের তাতে মত ছিল না । এবার সে সুযোগ পেয়ে গেল । সেই সাথে জাভেদেরও বদলে যেতে দেখলাম !

আরিনের কন্ঠস্বর শুনে মনে হল ও হয়তো কাঁদছে । তাকিয়ে থাকি ওর দিকে । সে আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-না ! আমি কাঁদছি না ! অনেক আগেই সেটা বন্ধ করে দিয়েছে ! কারো জন্য জীবন থেমে থাকে না ! আমি মুভ করছি ! আপনারও উচিৎ মুভ করা ! ঠিক আছে । তার সাথে সমুদ্র দেখতে পারেন নি তো কি হয়েছে অন্য কারো সাথে দেখবেন !

ঐ দিন রাতে আরিনের বাসায় থাকতে হল । রাত এমনিতেই অনেক হয়েছিল । ঐ দিন অনেক রাত পর্যন্ত গল্প করলাম ! আমার অতীত ছোট বেলার কথা আরও কত । কত কথা দুজনের জমা ছিল জানতাম না ! আরিনেরও মনে হয় কথা বলার মানুষ পেয়ে সব কিছু বলতে লাগলো !

ফ্রিজে রান্না করা খাবার ছিল কি মনে হল আবার দুজন নতুন করে রান্না করতে বসলাম ! দুজনের ভেতরেই একটা অস্বাভাবিকত্ব কাজ করছিল । আমরা কেন এই কাজ গুলো করছিলাম আমাদের কাছে কোন ব্যাখ্যা ছিল না । কেবল ভাল লাগছিল তাই করছিলাম !
তারপর আমরা মুভি দেখতে বসলাম । শোফায় না বসে দুজনেই কার্পেটের উপর বসলাম ! একদম কাছাকাছি !
এইচবিও শ্যা শাইনিং নামে একটা ভুতের মুভি দেখাচ্ছিল !
আরিন বলল
-আমি এই মুভি দেখবো না !
-আরে কেন ?
-না না ! আমি এই মুভি দেখলে রাতের বেলা ঘুমাতে পারবো না ! প্লিজ সরান !
-না ! এটা তো সরানো যাবে না ! খুব চমৎকার মুভি ! দেখেন মজা পাবেন !

আরিন আমার হাত থেকে রিমোর্ট কেড়ে নিতে চাইলো । কিন্তু পারলো না । তবে হাল ছেড়ে দিল না ! আমি ও রিমোর্ট নিয়ে টানা টানি শুরু করে দিয়েছি ! ঠিক তখনইখুব ভয়ংকর দৃশ্য দেখা গেল স্ক্রিনে । একটা হিম শীতল চিৎকার ভেসে এল । এমনিতেই লাইট অফ ছিল ! খাওয়ার পরে আমরা লাইট অফ করে দিয়েই টিভি দেখতে বসেছিলাম ! এই চিৎকারে আরিন সত্যি সত্যিই ভয় পেল ! রিমোর্ট ছেলে দিয়ে আমার দিকে আরও ঘেষে এল ! তারপর আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যে আমি কি করবো ঠিক বুঝলাম না ! টিভির আলোতে ওর চোখের চাহনী দেখে আমার বুকের ভেতর টা কেমন করে উঠলো ! আমি বলে বোঝাতে পারবো না !
কিন্তু দুর্ঘটনা ঘটে যাবে আমি ভাবি নি ! আরিনও নিশ্চয়ও ভাবে নি ।


অফিসের ভেতরে আমাদের সম্পর্ক আগের মত থাকলেও বাইরে আগের মত থাকলো না ! সত্যি বলতে কি পরের এক মাস আমি বাসা আর অফিস একটা মিনিটের জন্য আরিন কে চোখের আড়াল করি নি । অফিসে আমরা একই সাথে যেতাম আসতাম একই সাথে । নিজের বাসা রেখে আমি ওর বাসায় থাকতে লাগলাম ! আরিন বলেছিল অন্য কারো সাথে মুভ করতে তাই বলে ওর সাথে আমি সামনের দিকে মুভ করবো সেটা ভাবি নি !

একদিন আমার হাতে দুইটা কক্সবাজারের টিকিট ধরিয়ে দিয়ে বলল
-যাবে ?
-সমুদ্রে ?
-হুম ! আমাকে সমুদ্র কন্যা না বানাও অন্তত হাত ধরে একটা বার সমুদ্র কি দেখা যায় আমার সাথে ?

এক সপ্তাহে পরে টিকিট ছিল ! আমি যে ওয়াদা করেছিলাম সেটা ভেঙ্গে ফেলবো ঠিক করলাম ! সত্যি যে আমার জন্য অপেক্ষা করে তার জন্য নিজের আনন্দ নষ্ট করবো কেন ? নিজের বেঁচে থাকাটা কেন অন্যের জন্য নষ্ট করবো !

সোম বারে আমাদের যাওয়ার কথা ছিল ! আমি মাঝে এক দিনের জন্য বাসায় গিয়েছিলাম কাজে । বাসা থেকে মা ফোন করেছিল ! কি একটা জমি নিয়ে নাকি সমস্যা হচ্ছিলো ! আরিন কে বলেছিলাম যে আমি বাসা থেকে এসেই আমরা যাবো এক সাথে !

কিন্তু বাসা থেকে এসে আমি একেবারে আকাশ থেকে পরলাম ! আরিনের ফোন বন্ধ পেলাম ! তারপর অফিসে এলে শুনলাম ও নাকি রিজাইন করে চলে গেছে ! এক দিনের মাথায় এমন কিছু হবে আমি ধরনাই করতে পারি নি !
কি এমন হয়ে গেল যে একেবারে চাকরী ছেড়ে দিয়ে চলে যেতে হবে !
ওর ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখি সেখানে তালা মারা !
পরপর আরও সাত দিন গেলাম । কোন খোজ নেই ! আশ্চার্য্যজনক ভাবে আরিন আফসিন আমার জীবন থেে হারিয়ে গেল দুম করে ! আমি আজকের আগ পর্যন্তও ওর কোন খোজ খবর পাই নি ! কোন উত্তরও পাই নি !


সিডনি এয়ারপোর্টে ভেবেছিলাম আরিন আমাকে নিতে আসবে কিন্তু তার কোন খোজ খবর নেই । এদিক ওদিক তাকাচ্ছিলাম তখন কেউ একজন আমার পেছনে এসে আমার কাধে হাত । ফিরে তাকিয়ে দেখি এক মহিলা ! চেহারা একটু চেনা চেনা লাগলো !
-তুমি অপু ?
এইখানেও বাংলা শুনবো ভাবি নি ! তখনই মনে হল এই মাঝ বয়সী নারীকে আমি চিনি !
আমি বললাম
-জি !
-আমি আরিনের মা !
-আমি বুঝতে পারছি ! ও কোথায় ?
-হাসপাতালে ।
-কি হয়েছে ?

বারবার মনে হল কোন দুর্ঘটনা কি ঘটলো ! এই জন্য কি আরিন না এসে ওর মা এসেছে !
-চল !

এয়ারপোর্ট থেকে হাসপাতালের রাস্তা টুকু আমাদের মাঝে কোন কথা হল না । আমি তখনও চিন্তায় বাঁচি না ! এদিকে আরিনের মায়ের ভাব দেখে মনে তিনি কিছু বলবেন না ! যখন করিদোরে পা রাখলাম তখনও জানি না কি দেখবো কি অবস্থায় দেখবো ওকে । আট মাস পরে ওর দেখতে কেমন হয়েছে কে জানে !

আরিনের মা আমাকে একটা কেবিনে নিয়ে এল । প্রথম পা দিতেই কেমন অদ্ভুদ একটা অনুভুতি হল ! বেডের দিকে তাকিয়ে দেখি আরিন সেখানে শুয়ে আছে । আগের থেকে একটু যেন ফর্সা হয়েছে । হয়তো আবাহাওয়ার কারনে ! আরেকটু এগোতেই আমি থেমে গেলাম ! আরিনের ঠিক পাশেই একটা সাদা তোয়ালেতে একটা ছোট্ট শিশু শুয়ে আছে !

আমি কি বলবো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না ! আস্তে গিয়ে ওর বেডের পাশে গিয়ে বসলাম ! আমার মনে তখনই হাজারও প্রশ্ন ! কি হচ্ছে এখানে ? আরিন এখানে কেন ?
আর এই ছোট্ট শিশু টা ওর পাশে কেন শুয়ে আছে ?
এটা কে ?

আরিনের মা বলল
-তোমার মেয়ে !
-আমার !!

আমি তো বিয়েই করি নি ! ঠিক তখনই আমার কাছে সব কিছু আস্তে আস্তে পরিস্কার হয়ে এল । কিন্তু আমাকে না জানিয়ে এতো আসার কি দরকার ছিল ! একবার আমাকে বলাটা কি অরিনের দরকার ছিল না !

আরিন চোখ মেলেছে ততক্ষনে ! আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো একটু !
আমি কেবল বললাম
-তুমি আমাকে একবার বলতে পারতে ?
-পারতাম ! কিন্তু ..... বলতে পারি নি !
-তাহলে এখন কেন বললে ?

আরিন কিছু সময় চুপ করে থেকে বললাম
-কেন জানি মনে হয়েছিলো যে আমি হয়তো মারা যাবো ! তখনই আমার মেয়ের কি হবে ? কে দেখবে ? দেখবে তো তুমি ?
-মারা যাচ্ছো তুমি ?
আরিন কোন কথা বলে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! আমি বললাম
-তোমার না চড় মেরে দাত ফেলে দেওয়ার কথা ছিল আমার ! এসব ধানাই পানই বন্ধ ! আগে আমি তোমার কাছে আমার আট মাসের হিসেব চাই ! তোমার খবর আছে । সত্যি সত্যি ! আগে একটু সুস্থ হও ! তোমার.....
আচ্ছা ভাল । খবর কর ! আগে আমার মেয়ে একটু কোলে নাও !
-আমার মেয়ে ! কেবল তোমার একার মেয়ে !
-তো ?
-আবার ! একে তো এতো দিন আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখে অন্যায় করেছো তার উপর আবার ......

আরও কথা চলতে থাকে । বোধ করি আরিনের মনের ভেতরে যে হীনমন্যতা ছিল সেটা আর নেই ! ওর চেহারা দেখেই সেটা বেশ ভাল করেই বোঝা যাচ্ছিলো ! আমি আমাদের মেয়েকে কোলে নিতে নিতে বললাম
-আর এভাবে হারিয়ে যেও না কেমন ! আমাদের এখনও সমুদ্র দেখা বাকি !
-হুম ! এবার আমরা আমাদের জলপরীর সাথে সমুদ্র দেখতে যাবো ! ঠিক আছে !



সর্বশেষ এডিট : ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৮
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×