somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

তিনটি অনুগল্প

১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্প এক

-না কাজল দিবো না ! লেপ্টে যাবে, আপনি জানেন না ?
-যাক ! তবুও !
ফাইযা কিছু সময় চুপ করে রইলো । ফোনের ওপাশ থেকেও কোন আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না ! ফাইযা বলল
-আপনি কেন এসব করছেন ?
-জানো না তুমি ?
-আমি আপনাকে ভালবাসি না !
-আমি জানি !
-তাহলে ? হোয়াটস দ্য পয়েন্ট ? আমাকে নিয়ে চিন্তা করার মানুষ আছে । আপনাকে না করলেও চলবে !
-আমি জানি ! তবুও ! প্লিজ !
-আমি আসবো না ! আপনি ফোন রেখে দিন !
অপুকে আর কোন কথা বলার সুযোগ না দিয়েই ফাইযা ফোন রেখে দিল । ফোন রাখার পরে আবার হুহু করে কেঁদে উঠলো ।
কি আশ্চর্য মানুষের জীবনটা । যে ছেলেটাকে সে নিজের প্রানের চেয়েও বেশি ভালবাসে সেই ইমন তাকে একবার ফোন করেই দেখে না । সে বেঁচে না নাকি মরে গেছে তাতে তার কোন কিছু যায় আসে না ! আর যাকে সে ভালবাসে না সেই ছেলেটা ওর জন্য কি না করে ! এমন কেন হয় ?
আজকেও কান্নার আরেকটা কারন রয়েছে । সকাল বেলা ফাইযার মন টা ভালই ছিল । ইমনের সাথে দেখা হওয়ার কথা ছিল । কাল রাতে অনেক কষ্টে ইমন কে রাজি করিয়েছিল । কিন্তু একটু আগে আবারও ওর সাথে যাচ্ছে তাই ব্যব হার করেছে ইমন । বলে দিয়েছে ফাইযা যেন ওকে আর ফোন না করে । তার মুখ সে আর দেখতে চায় না !
এই সব কথা ফাইযা কাউকে বলতে পারে না ! মাঝে মাঝে যখন খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে তখন সে অপুকে ফোন দেয় ! ফোন দিয়ে কাঁদে । ছেলেটা চুপচাপ শুনে যায় ! ওকে শান্তনা দেওয়ার চেষ্টা করে ।
মাঝে মাঝে খুব মন খারাপের দিনে ওর সাথে দেখাও করে ! ওকে হাসানোর চেষ্টা করে । ফাইযার খারাপ লাগে না ! ছেলেটা এমন কেন সেটাও বুঝতে পারে কিন্তু ফাইযা চুপ থাকে ! কেন থাকে সে টা ওর কাছে নিশ্চিত না !
অনেক টা সময় পর ফাইযার কান্না থামলো ! চোখ ধুয়ে এসে চোখে যত্ন করে কাজল দিলো । পায়ে নুপুর পরলো ! অপুর পছন্দের পোসাকটাই পরলো বেছে বেছে । যতবার অপুর সাথে দেখা করতে গিয়েছে ততবারই সে এই পোষাক টাই পরে গিয়েছে । অপু চুড়িদাড় খুব পছন্দ করে । তার ভাষ্যমতে চুড়িদাড়ে নাকি ফাইযাকে অসম্ভব সুন্দর লাগে !
একে বারে তৈরি হয়ে যখন ফোন দিতে যাবে তখনই অপুর ফোন এসে হাজির !
-কি রেডি ?
-আপনি কিভাবে জানেন যে আমি রেডি হচ্ছি ?
-আমি জানি ! আই ক্যান ফিল !
-আমি সত্যি মাঝে মাঝে অবাক হই ! আর আফসোস হয় কেন আপনার সাথে আমার আরও আগে দেখা হয় নি ! তাহলে তো জীবনের একটা খারাপ অধ্যায় কোন দিন শুরু হতই না !
-তুমি চাইলে অধ্যায়টা শেষ হতে পারে !
ফাইযা কিছুটা সময় চুপ করে রইলো ! কি বলবে ঠিক ভেবে পাচ্ছে না !
ওপাশ থেকে অপু বলল
-আচ্ছা এই প্রসঙ্গে আমরা পরে কথা বলি ! আমি তোমার বাসার নিচে চলে এসেছি ! নামো !
-নামছি !
সিড়ি দিয়ে নিচে নামার সময় ফাইযার মনে অদ্ভুদ কিছু কথা মনে হচ্ছিলো ! নিজের মন কে শক্ত করতে চাইলো সে ! কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে তাকে । আজকেই ! ভাল থাকা বা না থাকা তার নিজের কাছে ! নিজের মনের কাছে !



গল্প দুই

আমি কোন কথা না বলে কেবল ফাইযার দিকে কিছু সময় ধরে তাকিয়ে রইলাম । এই মেয়েটা আর বড় হল না ছোটও রয়ে গেল । অন্তত কথা বার্তা শুনে তো তাই মনে হয় ! এতো বড় হয়ে গেছে কিন্তু কথা বার্তা এখনও বাচ্চাদের মতই রয়ে গেল । আমি আবারও অবাক হয়ে বললাম
-এখন বাজে রাত দুইটা ! তুমি এখন আমাকে গোছল করতে বলতেছো কেন ?
-আমার গরম লাগতেছে ।
-ভাল ! গরম পরেছে গরম তো লাগবেই । তা তোমার গরম লাগছে তুমি গোসল করবে আমি কেন ?
-শুনো বেশি বুঝবা না ! যা বলছি তাই কর !
এই বলে তোয়ালে টা আমার দিকে বাড়িয়ে দিল ! যাও গোসল করে এস !
অবশ্য একেবারে খারাপ কিছু বলে নি । আগে একটা সময় ছিল যখন আমার শীত বেশি ছিল আর গরম কম । কিন্তু এখন প্রচুর গরম লাগে । যেই আমি ঘামতাম না একদমই এখন একটু গরমেই ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে পড়ি ।
আজকে গরম পড়েছেও তেমন । ফ্যানে তো কাজই হচ্ছে না ! মনে হচ্ছে আমি যেন এমন একটা ঘরে শুয়ে আছি যার আসে পাশে আগুন জ্বালিয়ে রাখা হয়েছে ।
যখন গোসল করে বের হলাম দেখি ফাইযা জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে কি যেন দেখছে । এরকম টা মাঝে মাঝেই ও করে । এর আগেও দেখেছি । হঠাৎ হঠাৎ কোথায় যেন হারিয়ে যায় ! আমি বললাম
-কি দেখো !
ও চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকালো । তারপর হাসলো ! ওর হাসির সব থেকে বড় গুন টা হল মানুষ তো কেবল মুখ দিয়ে হাসে আর ও হাসে চোখ দিয়ে ! ফাইযার চোখ গুলো এমনিতেই একটু বড় বড় ! সেই হাসিটা ফুটে ওঠে আরও পরিস্কার ভাবে ! বলল
-ভাল লাগছে ?
-হুম !
-কেমন হাঁসফাঁস করছিলে গরমে ! কতবার বলেছি একটা এসি কেন, তা তো শুনবা না !
-আচ্ছা বাবা কিনবো ! সামনের বার ! এসো ঘুমানো যাব !
-এখনও মাথা মুছা হয় নি ভাল করে !
-হয়েছে । আর কত মুছবো !
-আবার ? শুনো তোমাকে না বলেছি কথার পিঠে কথা বলবা না ! এই ভেজা মাথা নিয়ে শুলে জ্বর চলে আসবে তখন ঝামেলা হবে আমার ! আমাকে ঝামেলায় ফেলতে খুব ভাল লাগে, তাই না ?
আমি কিছু না বলে হাসলাম কেবল !
-এদিকে এসো !
এর পর ফাইযা নিজে তোয়ালেটা নিয়ে আমার মাথা মুছে দিয়ে লাগলো ! যখন মনে হল আমার মাথায় আর পানি নেই তখন বলল
-এবার শুয়ে পড় ! আর নড়াচড়া করবা না !
আমি মাহারানীর হুকুম মত শুয়ে পড়লাম ! লাইট অফ করে দিতেই ফাইযা আমাকে জাপটে ধরে শুলো ! তারপর খুব মৃদু স্ব রে বলল
-আমি তোমাকে অনেক জ্বালাতন দেই, না ?
-হুম ! অনেক !
-কি !! সত্যি দেই ?
-হুম ! সত্যি তো !
-বেশ করি ! আরও দিবো ! দিয়ে দিয়ে একেবারে মেরেই ফেলবো !
আমাকে আরও জোড়ে জড়িয়ে ধরলো ! ফাইযার এই স্বভাব টা সেই ছোট বেলা থেকেই । কাউকে জড়িয়ে না ধরলে নাকি ওর ঘুম আসে না ! আগে ওর মাকে জড়িয়ে ঘুমাতো এখন আমি !
আজকে গরম পড়াতে আমাকে জড়িয়ে ধরতে মনে হয় ওর একটু দ্বিধা হচ্ছিলো ! ও জানে আমার গরম বেশি ! তাই আমাকে গোসল করে আসতে বলল যাতে আমার কষ্ট না হয় !
বললাম
-সেই মরনেই আমার সুখ গো সখি ! তুমি কি জানো না !



গল্প তিন

বলতে গেলে ক্লাসের সবার চোখে একে বারে আমার দিকে ঘুরে গেল । এমন করে সবাই আমার দিকে তাকাতে লাগলো আমি একটু ভরকে গেলাম । আসলে এমন ভাবে ঘটনা আমার দিকে টার্ন নিবে ভাবতে পারি নাই !
বুকের ভেতরে ধকধকটা টের পাচ্ছিলাম খুব ভাল ভাবেই । বুঝতে পারছিলাম যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে । মিমিও ততক্ষনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে অন্য সবার মত ! সেই দুষ্টামীর ভরা হাসি ওর চোখে !
আল্লাহ মেয়েদের মাথার ভেতরে এতো প্যাঁচ কেনু ?
----
----
ভার্সিটির প্রথম ক্লাসে প্রত্যেকটা ছেলেরই কেবল এই লক্ষ্য থাকে এইটা দেখার যে ক্লাসে মোট কয়টা সুন্দরী মেয়ে আছে । আমরাও ঠিক সেইটা কাজটাই করছিলাম । যুক্তি সংগত কারনেই মিমির দিকে প্রথমে নজর পরলো না কারো ।
মিমিকে আমি দেখলাম আরও কয়েকটা ক্লাস পরে । ক্লাস পার্ফমেন্সের জন্য স্যার যখন দুজন দুজন করে গ্রুপ করে দিচ্ছিলো তখন ওর আমার রোল নাম্বার এক সাথে করে জুড়ে দেওয়া হল ! পরপর রোল নাম্বার হওয়ার জন্য এমন টা হচ্ছিলো ! অবাক হয়ে দেখলাম ক্লাসের সব থেকে সুদর্শন ছেলে রোমেল কিভাবে যেন সব থেকে সুন্দর মেয়েটার সাথে গ্রুপ করে ফেলেছে স্যারের কথা বলে । তখন কেন জানি ওকে খুব হিংসে হচ্ছিলো ! ক্লাসের অন্য সবাইও রোমেল কে খুব হিংসের চোখে দেখছিলো !
কেনই বা দেখবে না ! ভার্সিটির নতুন জীবনের শুরুতেই শ্লা এমন একটা সুযোগ পেয়ে গেল ! আর আমরা চেয়ে চেয়ে দেখলাম কেবল ! কিন্তু কি আর করা ! সেই দিনই মিমিকে দেখলাম ভাল করে ।
পায়ে মোজা পরা একটা মেয়ে ! সবার আগে কেবল এই জিনিসটাই আমার চোখে পড়লো ! এতো বড় হয়ে কেউ পায়ে মোজা পরে ! মাথাটা একেবারে স্কার্ফ দিয়ে ঢাকা । কেবল মুখটাই দেখা যাচ্ছে । চোখে মোটা চশমা ! গায়ের রং সত্যি বলতে আমার থেকেও ময়লা ! তবে চশমার ফাঁক ফিয়েও মিমির চোখ টা দেখা যাচ্ছিলো ।
আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমাদের এক সাথে কাজ করতে হবে !
-হুম ! তাই তো !
-আমি কিন্তু ফিল্ড সার্ভে করতে পারবো না ! এটা তুমি দেখবে । লেখালেখি সব আমি করবো ! ঠিক আছে সেটা ?
আমি রাজি হয়ে গেলাম ! ফিল্ড সার্ভে থেকে লেখা লেখিই ঝামেলা বেশি ! মেয়েটা যখন নিজের থেকেই কাজটা করতে যাচ্ছে তখন খারাপ কি !
মিমির সাথে পরিচিত হলাম ! প্রথম কয়দিন লক্ষ্য না করলেও পরে লক্ষ্য করলাম যে মেয়েটা ঠিক মত কারো সাথে কথা বলে না ! কিংবা ক্লাসের অন্য সবাই ওকে এড়িয়ে চলে ।
কেন ?
দেখতে কালো বলে ?
মেয়ে গুলার সাথে টুকটাক মেশে কিন্তু কোন ছেলের সাথে ঠিক মত মেশে না ! কিংবা একটু বেশি কনজার্ভেটিভ পরিবারের মেয়ে । যাই হোক আস্তে ক্লাসে রকাজে আমার একটু বসতে হল । কথা বার্তা শুরু হল !
প্রথম এসাইনমেন্টে আমাদের গ্রুপটা সবার থেকে বেশি নাম্বার পেল । আর সব থেকে কম পেল রোমেল দের গ্রুপ ! মনে মনে হাসলাম ! কেবল সৌন্দর্য্য দিয়ে কি আর পেটের ভাত হজম হয় !
এরপর থেকেই মিমির সাথে আসলেই আমার সম্পর্ক ভাল হতে শুরু করলো । ক্লাসে পরেও অর সাথে দেখা করতে শুরু করলাম ! ও যদিও বলেছিল ফিল্ড-ওয়ার্ক ও করতে পাবে না তবুও আমার সাথে ও সাথে মাঝে মাঝে যেত সার্ভে করতে ।
একদিন এরকম একটা সার্ভে শেষ করে ফিরছি । ওকে বাসায় পৌছে দিয়ে আমি হলে ফেরৎ যাবো । ও আসলে হলে থাকতো না । ধানমন্ডির কোথায় যেন থাকতো ! বাংলামোটরে এসে হঠাৎই বৃষ্টি নেমে এল খুব । যদিও একটু একটু শীত পরা শুরু করেছে কিন্তু ঢাকা শহরে আবার শীত বলে কিছু আছে নাকি ! এই সময়ে বৃষ্টি নামার কথা না অবশ্য ! কোন মতে একটা দোকানের নিচে দাড়ালাম ! কিন্তু আমার মন পরে ছিল বৃষ্টির ভেতরে । আমি মিমিকে বললাম
-চল বৃষ্টিতে ভিজি !
-কি ! না !
-আরে চল না ! কিছু হবে না !
-না !
-প্লিজ চল ! দেখ এতো চমৎকার বৃষ্টি আর পাওয়া যাবে না !
মিমিকে কিছুতেই রাজি করানো গেল না ! শেষে না পেরে আমিই একাই ভিজতে লাগলাম ! মিমি আমার বৃষ্টিতে ভেজার দিকে তাকিয়ে রইলো ! ওর চোখ দেখেই মনে হচ্ছিলো ওর নিজেরও ভিজতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কোন কারনে পারছে না ।
রাতে আমাকে ফোন দিয়ে সরি বলল ! আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-সরি কেন ?
-না মানে তুমি এতো করে বললে যে ! আসলে আমারও খুব ইচ্ছে করছিলো তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজি !
-তাহলে কেন ভিজলে না ?
কিছু সময় চুপ থেকে মিমি বলল
-একদিন তোমার সাথে আমি ঠিক ঠিক বৃষ্টিতে ভিজবো কথা দিলাম । আর আজকে কেন ভিজি নি এটাও একদিন তুমি বুঝতে পারবে !
দিন দিন মিমির সাথে মেলামেশা বাড়তে থাকলো । সেই সাথে কেন জানি মনে হল আমি মেয়েটার প্রতি একটু দুর্বল হয়ে পরছি ! বিশেষ করে ওর চোখের প্রতি ! চশমা খুলে মাঝে মাঝে ও আমার সাথে গল্প করতো ! তখন ওর চোখ দুটো আমার কাছে অদ্ভুদ লাগতো ! কেমন একটা ঘোর লাগা ! বড় বেশি আপন মনে হত ।
শীতের ছুটির আগে তাই ওকে কথাটা বলেই ফেললাম ! বললাম
-তোমাকে পছন্দ করি !
-কিন্তু তোমার মা তো করবে না !
কথায় কথায় ওকে একদিন বলেছিলাম যে আমার ভাবী দেখতে খুব সুন্দর । মায়ের তাই ইচ্ছে ছোট বউও তিনি ফর্সা আর সুন্দর নিবেন ! মিমি ঠিক সেই কথা মনে রেখেছে । ভুলে যায় নি !
আমি বললাম
-মা তো আর বিয়ে কবে না ! আমি করবো !
-ব্যাপার টা এতো সহজ না !
-তুমি চাইলেও সহজ ! দেখ আমি এসব ভাবতে চাচ্ছি না ! আমি কেবল জানি তোমার সাথে থাকলে আমার ভাল লাগে ! ব্যস । মানষিক ভাবে শান্তিতে থাকি ! বুঝেছো ! যদি কেবল চেহারা দেখতাম তাহলে তো তোমার সাথে মিশতাম না !
-তা হয় না ! আমার সাথে মেশা বন্ধ করে দাও দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে !
-কিন্তু ....
আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিমি উল্টো দিকে হাটা দিল ! আমি ভাবতেই পারলাম না মিমি আমাকে রিজেক্ট করে দিয়ে চলে গেল ! আমি একে বারে নিশ্চিত ছিলাম যে মিমি আমার প্রোপোজে রাজি হয়ে যাবেই । কারন ওর আচরনেও আমার খানিকটা মনে হত যে ও নিজেও আমাকে পছন্দ করে ! কিন্তু এভাবে ছ্যাকা খেয়ে যাবো ভাবি নি !
পরদিনই শীতের ছুটি হয়ে গেল । ১০ দিন বলতে গেলে আমি মিমিকে একটা বারো ফোন দিলাম না ! ও নিজেও দিলো না ! প্রথম প্রথম একটু খারাপ লাগলেও ঠিক হয়ে গেল । ছুটির পরে আবার ক্লাস শুরু হল ।
প্রথম দিন ক্লাসে গিয়ে দেখি আমাদের ক্লাসের এক কোনে একটা সুন্দর মত মেয়ে বসে আছে । রোমেল আর ওর সাঙ্গ পাঙ্গরা মেয়েটার আসে পাশে ঘোরাঘুরি করছে । অন্য ক্লাসের মেয়ে হবে হয়তো , কারো সাথে এখানে এসেছে !
আমার চোখে সারা ক্লাস রুমের দিকে মিমিকে খুজতে লাগলো । কিন্তু কোথাও তার দেখা পেলাম না ।
মেয়েটা কি তাহলে আসে নাই এখনও ছুটি শেষ করে ? ফোন দিবো একবার ?
নাহ ! কি দরকার আমার এতো ! না আসলে না আসবে !
ঠিক তখনই আমি মিমির গলার আওয়াজ পেলাম । চোখ গেল আবারও সেই কর্ণারে । সুন্দর মত মেয়েটার দিকে । ঠিক তখনই মেয়েটা আমার দিকে ঘুরে তাকালো !
বলা চলে ধাক্কাটা তখনই খেলাম !
আরে এই তো মিমি !
কিন্তু এই মেয়ে তো .....
আমার মুখের কথা আটকে গেল !
এই মেয়ে এতো ফর্সা হল কিভাবে !
মিমির গায়ের রং একে বারে ফর্সা হয়ে গেছে । তাও আবার যেন তেন ফর্সা না, দুধ ফর্সা ! আগের মত এতো স্কার্ফ পরে নাই । একটা সেলোয়ার কামিজ পরে এসেছে । উপরে সাদা রংয়ের সোয়েটার । পায়ে মোজাও নেই ! আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম মিমির দিকে । আমার তখনও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে যে আসলেই এই সেই মিমি !
মিমি আমার দিকে ফিরে তাকালো । ওর চোখে একটা দুষ্টামীর হাসি দেখতে পেলাম । সেখানে ওর চোখ যেন স্পষ্টই বলছে কি জনাব অবাক হয়েছেন ?
কেবল আমি না ক্লাসের যে দেখছে সেই অবাক হচ্ছে । অবিশ্বাসের চোখে তাকিয়ে রয়েছে মিমির দিকে । মিমি কেবল হাসছে । কিছু বলছে না ! এমন কি স্যারেরাও অবাক হয়েছে ।
আরও কদিন পরে জানতে পারলাম যে মিমি ইচ্ছে করেই নাকি গায়ে মেকাপ করে আসতো আর নিজেক কালো করে রাখতো । কেন করতো কে জানে ! এই জন্যই সেদিন আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজতে চায় নি ।
তারপর থেকে মিমির জীবন থেকে আমি যেন গায়েব হয়ে গেলাম । মিমি ক্লাসের অনেক ছেলের সাথেই ক্যাফেটরিয়াতে দেখা যেতে লাগলো ! আমি চুপচাপ দেখতে লাগলাম আর আপন মনেই জ্বলে পুড়ে মরতে লাগলাম !
ঠিক সেই সময়ই কানে একটা খবর এল । আসছে প্রোপোজ ডে তে নাকি রোমেল সবার সামনেই মিমিকে প্রোপোজ করতে যাচ্ছে ।
আমাদের প্রথম সেমিস্টার শেষ হওয়া উপলক্ষ্য সেদিন নাকি কি একটা অনুষ্ঠান হবে । সব কিছু নাকি রোমেল দের গ্রুপই করছে । প্রধান উদ্দেশ্য টা হচ্ছে মিমিকে প্রোপোজ করা !
একবার ভাবলাম সেদিন আসবো না ! কিন্তু খনিকটা কৌতুহল থেকে না এসে পারলাম না ! হাজার হলেও মেয়েটাকে এক সময় আমি বেশ পছন্দ করতাম ! চার/পাঁচ মাস মিমির সাথে আমার কত ভাল সময় কেটেছে !
প্রোপজডের দিন আমি তাই ক্লাস রুমের সবার শেষে বসে ছিলাম । অনুষ্ঠান শুরু হল । নাচ গান আবৃতি সবই হল ! কিন্তু আমার এসব কিছুই ভাল লাগছিলো না ! আমার চোখ বারবার কেবল চলে যাচ্ছিলো মিমির দিকে । ওকে দেখে মনে হল ও খুব মজে আসে । কি হতে যাচ্ছে এটা যেমন আমার কানে গেছে তেমনি ওর কানেও নিশ্চয়ই গেছে । এই জন্যই কি এতো খুশি !
সবার শেষে রোমেল স্টেজে উঠলো । তারপর ডাক দিল মিমিকে । মিমি প্রথমে যেতে না চাইলো শেষে সবার অনুরোধে । রোমেল একেবারে ফিল্মি কায়দায় হাটু গেড়ে ওকে প্রোপোজ করে বসলো !
সবাই এখন চুপ করে আছে মিমির জবাব শোনার অপেক্ষায় ! মিমি আস্তে করে মাইক টা হাতে নিলো । কি যেন ভাবলো । তারপর বলল
-তুমি একটু দেরি করে ফেলেছো ?
-মেল যেন শক খেয়েছে এমন ভাবে উঠে দাড়ালো । তারপর বলল
-মানে ?
মিমি হেসে বলল
-মানে হচ্ছে আমাকে অলরেডি একজন প্রোপোজ করে বসে আছে আর আমি তাতে রাজিও হয়ে বসে আছি !
ঠিক তখনই বলতে গেলে ক্লাসের সবার চোখে একে বারে আমার দিকে ঘুরে গেল । এমন করে সবাই আমার দিকে তাকাতে লাগলো আমি একটু ভরকে গেলাম । আসলে এমন ভাবে ঘটনা আমার দিকে টার্ন নিবে ভাবতে পারি নাই !
বুকের ভেতরে ধকধক টা টের পাচ্ছিলাম খুব ভাল ভাবেই । বুঝতে পারছিলাম যে কিছু একটা ঘটতে চলেছে । মিমিও ততক্ষনে আমার দিকে তাকিয়ে আছে অন্য সবার মত !
আল্লাহ মেয়েদের মাথার ভেতরে এতো প্যাঁচ কেনু ?
এই মেয়ের মাথায় এতু প্যাঁচ কেনু ?
আমার কেন জানি সবার মত মনে হচ্ছে মিমি আমার কথাই বলছে ! একবার তো মনে হল মিমি সবার সামনে আমার নামটাই বলে ফেলবে কিন্তু বলল না !
মিমি আর কিছু না বলে কেবল স্টেজ থেকে নেমে এল ।
অনুষ্ঠান শেষে আস্তে আস্তে হাটছি মিমি পেছন থেকে এসে আমার পাশে পাশে হাটতে লাগলো ! তারপর বলল
-সবার এতো আগ্রহ তোমার আগ্রহ নেই জানার ?
-না !
-কেন ?
-কারন আমি জানি কে তোমাকে প্রোপোজ করেছে ?
-তা জানেন যখন জনাবের মন কেন খারাপ ?
-মন খারাপ না তো !
-তাহলে ? একা একা হাটছেন যে !
-হাটছি না অপেক্ষা করছি !
-কিসের ?
-বৃষ্টির জন্য ! একজন আমাকে বলেছিল আমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবে । সেই একজন তো চলে এসেছে কিন্তু বৃষ্টি এখনও আসে নি !
মিমির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ও হাসছে মৃদ্যু স্বরে ....। আরেকটু সরে এল আমার দিকে । সামনের দিকে হাটতে হাটতে আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে হল বৃষ্টি শুরু হতে এখনও অনেক বাকি ! এই মৌসুমে বৃষ্টি নামবে না !
সমস্যা নেই । অপেক্ষা করা যাবে !
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০১৫ দুপুর ২:৩৪
১৯টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×