somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ফেইক বয়ফ্রেন্ড

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাসপাতালের নাম টা আমি আরেকবার পড়লাম । ধানমন্ডি এলাকার সব থেকে বড় হাসপাতাল । এর আগে আমি কোন দিন এতো বড় হাসপাতালে ঢুকি নি । একটু অবশ্য দ্বিধা কাজ করছিলো । কিন্তু সেই সাথে ইশানার কাছে যাওয়ার জন্যও একটা তাগিত অনুভব করছিলাম । মেয়েটা কেমন আছে কে জানে ? যদিও আমি যতদুর জানি যে এই রকমের কেস এই টাইপের প্রাইভেট হাসপাতালে হ্যান্ডেল করা হয় না । সেগুলো নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিক্যালে । সুজন ঠিক মত খবর দিয়েছে তো ?

আমি রিসিপশনের দিকে এগিয়ে গেলাম । এই রাতের বেলা সেটা একটু ফাঁকাই বলা চলে । একটা লোক বসে ছিল । আমি সামনে দাড়াতেই বলল
-বলুন ! তবে এখন কিন্তু ভিজিং আওয়ার নেই ।
-আসলে আমি ইশানা নামের একজনের সাথে দেখা করতে এসেছি ।
-ইশানা ? আপনাকে আগেই বলেছি এখন ভিজিটিং আওয়ার চলছে না । কালকে আসবেন । সকাল ৯ টা থেকে ১১ আর বিকেল ৪ টা থেকে ৬ টা । এখন কোন দেখা হবে না । আগামী কাল ।
একটু যেন বিরক্তই মনে হল লোকটা কে !

আমি প্রথমে এদিক ওদিক তাকালাম । কেউ আমাকে এখানে সাহায্য করবে না । এমন কি এমন কেউ নেইও পরিচিত যাকে আমি ফোন করতে পারি । এক ইশানা ছিল সেতো নিজেই এখানে ভর্তি হয়ে আছে । আমার ফোনের জবার সে দিতে পারবে না । আমি আরেকবার এগিয়ে গেলাম রিসিপশনের দিকে । বললাম

-আসলে আমি ঘন্টা খানেক আগে আসা একটা সুইসাইড এটেম্প কেসের কথা জানতে চাচ্ছি ।

দেখলাম লোকটার চেহারা মুহুর্তেই বদলে গেল ।
-ইশানা মানে ইশানা চৌধুরী ?
-জি ।
-আপনি কি হন ওনার ?
-সেটা কি বলা খুব জরুরী ?
-আপনার নাম কি তপু বা এরকম কিছু ?
-অপু !

এবার লোকটার চেহারা আগের থেকেও একটু বেশি ফ্যাঁকাসে হয়ে গেল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-প্লিজ আপনি কিছু মনে করবেন না । আমি আসলে ঠিক চিনতে পারি নি ।
আমি খানিকটা দ্বিধা নিয়ে বললাম
-আমাকে কি আপনার চেনার কথা ?
-আমাকে খুব শক্ত ভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যে আপনি আসা মাত্রই যেন ইশানা ম্যামের কেবিনে পাঠিয়ে দেওয়া ।

এই কথা বলেই লোকটা একটা বেল বাজালো । একটা ছেলে একটু পরেই এসে হাজির । আমাকে দেখিয়ে দেখিয়ে দিয়ে লোকটা বলল
-ইনাকে জলদি ইশানা ম্যামের কেবিনে নিয়ে যাও । আর স্যার কি এখনও আছে ?
ছেলেটা বলল
-হ্যা এখনও আছে । একটু আগে পুলিশও এসেছে ।
-আচ্ছা যাও নিয়ে যাও ।

তারপর আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-প্লিজ কিছু মনে করবেন না । আপনি রাজুর সাথে যান ও আপনাকে কেবিনে নিয়ে যাবে ।

আমি ছেলেটার পেছন পেছন হাটতে লাগলাম । একটু যেন কেমন কেমন লাগতে লাগলো নিজের কাছে । নিজেকে একটু ভিআইপি ভিআইপিও লাগছিলো । আমি জানতাম ইশানারা অনেক বড় লোক তবে এই এতো বড় হাসপাতালেও ওদের এমন প্রভাব থাকতে পারে আমি ভাবি নি । কেবল ঐ রিসিপশনের চোখের দিকে তাকিয়েও আমি সেটা ঠিক বুঝতে পারছিলাম ।

আরও কিছু সময় হাটার পরেই ছেলেটা আমাকে একটা করিডোরের সামনে নিয়ে এল । আমি আরও একটু সামনে এগোতেই দেখলাম কয়েকজন পুলিশ অফিসারের সাথে একজন কোর্ট-টাই পরা মাঝ বয়সী লোক কথা বলছে চিৎকার করে ।

-সাফায়েত আই ওয়ান্ট দ্যাট বাস্টার্ড ডেড ।
পুলিশের পোশাক পরা অফিসারটি বলল
-আঙ্কেল একটু বোঝার চেষ্টা করুন । এভাবে.....
এটা শুনে যেন কোর্ট-টাই পরা লোকটা আরও বেশি চিৎকার করে উঠলো
-আমি কোন কথা শুনতে চাই না । যদি তুমি না পারো তাহলে আমাকে বল আমি অন্য কারো সাথে কথা বলি ।
-আমি সেটা বলি নি । তবে এভাবে এখনই যদি কিছু হয় তাহলে আপনার রেপুটেশনের উপরে একটা দাগ পড়বে ।
-নাথিং ইজ বিগার দ্যান মাই ডটার । আই জাস্ট ওয়ান্ট দ্যাট কার্লপ্রিট ডেড ।

আচ্ছা তাহলে উনি ইশানার বাবা । ইশানার কাছেও ওর বাবার কথা আমি বেশ কয়েকবার শুনেছি । খুব ব্যস্ত সেই সাথে খুব নাকি রাগী । তবে তিনি মেয়ে বলতে অজ্ঞান, তাই মেয়ের এই অবস্থা দেখে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রন করতে পারছে না । আর কার্লপ্রিট বলতে কাকে বোঝাচ্ছে সেটাও আমার বুঝতে খুব বেশি কষ্ট হল না । পুলিশ অফিসার টা বলল

-আপনি একটু শান্ত হোন । প্লিজ একটু শান্ত হোন । আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি ঐ শয়তানটা আর কোন দিন নিজের পায়ে দাড়াতে পারবে না । হাত দিয়ে কোন দিন কিছু খেতেও পারবে না । আই প্রমিজ ইউ দ্যাট । পরে আপনি ওকে নিয়ে যা ইচ্ছে করবেন । কিন্তু কদিন যাক তারপর ।
দেখলাম ইশানার বাবা যেন একটু শান্ত হল ।
-মেক ইট কুইক !

পুলিশ গুলো আর দাড়ালো না, চলে গেল । ইশার বাবা এবার আমার দিকে তাকালো । যদিও আমার উপস্থিতি তিনি আগেই বুঝতে পেরেছেন বলেই আমার মনে হল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-ইউ মাস্ট বি অপু !
আমি কিছু না বলে কেবল মাথা ঝাকালাম ।
-আসো ! ইশানা তোমার কথা বলছিলো ।

আমি আরও একটু এগিয়ে গেলাম । অনুভব করলাম আমার বুকের ভেতরে কেমন একটা ভয়ভয় করতে লাগলো । একটু আগেই এই ভদ্রলোক রাফিকে মেরে ফেলার জন্য বলছিলো । তাও আবার একজন পুলিশকে । এই লোক কোন সাধারণ লোক হতে পারে না । কেন রিসিপশনের লোকটা ঐ রকম ফ্যাকশে হয়ে গেছিলো সেটা বুঝতে আমার মোটেই কষ্ট হল না ।

আমি ইশানার বাবার সাথেই কেবিনে ঢুকলাম । ওকে নাকি একটু আগেই কেবিনে আনা হয়েছে । তবুও সারাক্ষণ পর্যবেক্ষনে রাখা হয়েছে । ভেতরে একজন নার্সকেও দেখতে পেলাম ইশানার । দরজার কাছেই দাড়িয়ে ছিল ।
ইশানার বাবার কাছ থেকে আরও জানতে পারলাম যে ওর স্টোমার্ক ওয়াশ করার সময় বেশ কয়েকবার নাকি ও আমার নাম নিয়েছে । সেখান থেকেই আমার খোজ পাঠানো হয়েছে । যেন চোখ খোলার সাথে সাথে ও আমাকে দেখতে পায় !

সাদা ধরধবে একটা রুমে ঢুকলাম । তাকিয়ে দেখি ঠিক রুমটার মাঝখানে একটা বেড রাখা রয়েছে । সব কিছু সাদা । আরও কিছু যন্ত্রপাতি । সবই সাদা । মনে হল যে আমি কোন হাসপাতালে নয় বরং কোন হোটেল রুমে চলে এসেছি । আমি সাদা বেডটার দিকে এগিয়ে গেলাম । সেখানে একটা সাদা চাদরের ভেতরে ইশানা শুয়ে আছে । ওকে এর আগেও আমি অনেক বার দেখেছি কিন্তু এতোটা নিঃপাপ, আর কোমল আমার আগে মনে হয়নি । আমি কয়েক মুহুর্ত যেন তাকিয়েই রইলাম ইশানার দিকে । যখন সব কিছু ভুলে আমি ইশানার দিকে তাকিয়ে আছি তখন ইশানার বাবা আমার কাধে হাত রেখে বলল
-তুমি এখানে একটু থাকো । ওর জ্ঞান ফিরে এলে তোমাকে দেখলে ওর ভাল লাগবে ।

যদিও অনুরোধ করলো তবে আমার কাছে কেন জানি সেটা অনেকটাই আদেশের মত শোনালো ।
-আর কোন কিছুর দরকার হলে কেবল এই বেল টা বাজাবে ।
বেডের কাছে একটা লাল সুইট দেখালো ।
-কিছু খেতে মন চাইলেও । আমার মনে হয় তুমি রাতের খাওয়া খাও নি । তার আগেই চলে এসেছো, তাই না ?

আসলেই আমি রাতের খাওয়ার সময় পায়নি । রাত জেগে থাকি বলে রাতের খাওয়া খেতে একটু দেরিই হয় আমার । আজকে খাওয়া হয় নি ।

-আমি ব্যবস্থা করছি ।

এই বলে ইশানার বাবা দরজা দিয়ে বের হয়ে গেল, সাথে করে নার্সকেও নিয়ে গেল । আমি ইশানার পাশের একটা টুলে বসলাম । মেয়েটা এর আগেও আমার খুব বেশি অন্য রকম লাগতো আজকে কেন জানি একটু বেশি আপন মনে হল । অচেতন অবস্থায় মেয়েটা আমার নাম নিয়েছে ।
কেন ?
তাহলে কি সত্যি সত্যিই ........
আই ডোন্ট নো । আমি আসলেই জানি না ।

-----------

ইশানার সাথে আমি যেদিন ফেসবুকে ইন এ রিলেশনশীপ দিলাম তখন স্বাভাবিক ভাবেই আমার বন্ধুরা সেটাকে খুব ভাল ভাবে নেয় নি । ভাল ভাবে নিবে না এটা আমি খুব ভাল করেই জানতাম । নেওয়ার কথা না । সুজন আমার দিকে কঠিন চোখ তাকিয়ে বলল
-তুমি কি মনে করে ঐ মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়ালি বলতো ? তুই জানিস না ঐ মেয়েটা কেমন ? পুরো ক্যাম্পাস জানে আর তুই জানিস না ?

আমি কিছু বললাম না । কারণ আমার কিছু বলার ছিল না । আসলেই পুরো ক্লাসই এমন কি বলতে গেলে পুরো ক্যাম্পাসই ইশানার সম্পর্কে খুব ভাল করেই জানে । অন্তত আমার মত গোবেচারা টাইপের ছেলে যে ওর সাথে সম্পর্কে যেতে পারে এটা কেউ ভাবতেও পারে না । সুজন আবার বলল
-তোকে নিয়ে কোন ট্রিকস খেলছে । সাবধানে থাকিস বলে দিলাম ।
-আচ্ছা ঠিক চিন্তা করিস না । ব্যাপারটা যে রকম দেখাচ্ছে আসলে সেরকম না ।

আসলেই কিন্তু ব্যাপারটা সেই রকম না । ইশানা আমার ক্লাসে পড়ে না । এইবারের সেমিস্টারের আমাদের একটা ননক্রেডিট সাবজেক্ট আছে । এই ক্লাস টা হয় কমবাইন্ড আকারে । ইশানাদের সাথে । কোর্চ টিচার আসলে সময় বাঁচানোর জন্য এমনটা করেছে । কিছু বলার নেই তাই আমরাও মেনে নিয়েছি ।

ক্লাস করতে গিয়ে দেখি ইশানাদের সাথে ক্লাস । যদিও মেয়েটাকে আমি আগে থেকেই চিনি । কেবল আমি কেন সবাই চিনে । তবে এইবার যেন আরও একটু ভাল করে চিনতে পারলাম । এতো কাছ থেকে । এবং কয়েকদিন পরে অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম মেয়েটাও আমাকে খানিকটা লক্ষ্য করছে । কেন করছে আমি জানি না অবশ্য । আমি সারাটা সময় ক্লাসের শেষের দিকেই বসে থাকতাম । স্যার কি বলতো সেটা শোনার চেষ্টা করতাম না কোন দিন । বাসায় গিয়ে নিজে নিজে পড়তাম ।

যেদিন প্রথম ইশানার সাথে কথা হল তার পরের দিন আমাদের একটা ইনকোর্স পরীক্ষা ছিল । আমি ক্লাস থেকে থেকে সব সময়ই একটু শেষের দিকে বের হই । সবাই বের হওয়ার পরেই । সেদিন তখনও বের হইনি । কেবল বের হতে যাবো তখনই মেয়েটা আমাকে ডাক দিল !
-অপু !
আমি একটু অবাক না হয়ে পারলাম না । এই মেয়ে কোন ভাবেই আমাকে ডাক দেওয়ার কথা না । শুনেছি মেয়েরা পরীক্ষার আগে ভাল ছাত্রদের আগে পিচে ঘোরাফেরা করে । আমি অত ভাল ছাত্রও নই অবশ্য । আমি বললাম
-আমি ?
-হুম !
আমি আবারও বেঞ্চের উপরে বসে পড়লাম । তারপর আমার কাছে এসে আমার সামনের বেঞ্চে এসে বসলো । বলল
-তুমি ছাড়া আর কারো নাম তো অপু না ।
-ও । আমার ঠিক জানা ছিল না । বল কি দরকার ?
-আসলে কালতো এক্সাম । আমার না কিছুই পড়া হয় নি । ক্যান ইউ হেল্প মি ?
-হেল্প ?

আমি ঠিক মত বুঝলাম না এই মেয়ে আমার কাছে কি সাহায্য চাচ্ছে । আমি আসলে অন্য ছাত্রদের সাহায্য করার মত ছাত্রও নই । ইশানা বলল
-হ্যা । তুমি আমি শুনেছি তুমি টপিক গুলো বেশ সহজ করে পড় । আমাকে নোট গুলো দেবে ?

এই কথা সত্য যে আমি নিজে যা পড়ি তা লিখে রাখি । তবে সেগুলো কোন ভাবেই নোট বলা যাবে না ।
-আমি তো নোট করি না । কেবল যা পড়ি সেগুলো লিখি । কারণ না লিখলে আমার ঠিক মনে থাকে না ।
-ঐ তো ঐ গুলোই । দেবে প্লিজ ?

ছেলেদের সব থেকে বড় দুর্বলতা হচ্ছে সে কখনই সামনে দাড়ানো একটা মেয়ের অনুরোধ চট করেই ফেলে দিতে পারে না । মেয়েটা যেমনই হোক না কেন, আর তার উপরে মেয়ে যদি সুন্দরী হয় তাহলে তো কথাই নেই । ইশানার নামে যত কথাই চলতে থাকুক না কেন মেয়েটা যে সুন্দরী সেটা কোন ভাবেই অস্বীকার করা যাবে না । আমি রাজি হয়ে গেলাম । তবে বললাম যে এখন তো কাছে নেই নিতে হলে আমার সাথে আমার বাসায় যেতে হবে ।

ইশানা নিজে থেকেই আমার ফোন নাম্বার নিল । তারপর বলল আজ বিকেলেই সে আমার বাসায় আসবে । বিকেল বেলা আমাদের দেখা হল । সে সব গুলো কাগজ ফটোকপি করে নেওয়ার সাথে সাথে আমরা একসাথে বসে চাও খেলাম । আসলে তখনও আমার মাথায় ঠিক আসছে না যে এতো মানুষ থাকতে ইশানা আমার কাছ থেকে নোট কেন নিবে !

--------

আসল সত্য আরও কয়েকদিন পরে টের পেলাম । আমাকে ফোন দিয়ে একটা অদ্ভুত কাজের জন্য অনুরোধ করলো ! ওর বয়ফ্রেন্ড হওয়ার জন্য বলল তবে সেটা মিথ্যা-মিথ্যি ।

আমি যখন কিছু বুঝলাম না তখন ইশানা বলল
-আসলে আমার একজন বয়ফ্রেন্ড ছিল । কিন্তু ওর স্বাভাব কদিন থেকেই আমার কাছে ভাল লাগছে না । আমি ওর সাথে ব্রেকআপের চেষ্টা করে যাচ্ছি কিন্তু ও কিছুতেই সেটা হতে দিবে না । ওর কথা হচ্ছে যদি আমি নতুন কারোর সাথে ইনভল্ভ হই তাহলেই সে সেটা মেনে নিবে কিন্তু যদি আমি একা থাকি তাহলে তার সাথে সম্পর্ক রাখতেই হবে । এই জন্য । প্লিজ হেল্প মি !

-ও আচ্ছা তাহলে এই জন্য তুমি আমার সাথে এই কদিন মিশছো ?

দেখলাম ইশানা কথার জবাব না দিয়ে চুপ করে রইলো । একবার মনে হল না করে দেই কেন জানি না করলাম না । পুরো কলেজ ভার্সিটি জীবনে আমার কোন গার্লফ্রেন্ড ছিল না । তার মানে এই না যে আমি কাউকে পছন্দ করতাম না কিন্তু কাউকে কোন দিন সাহস করে বলতে পারি নি । কেন জানি মিথ্যা-মিথ্যি হলেও একজন গার্লফ্রেন্ড হবে তাও আবার ইশানার মত একজন এই ব্যাপার টা আমার কাছে মোটেই খারাপ লাগলো না । বললাম
-আচ্ছা ঠিক এতে যদি তোমার উপরকার হয় তাহলে তাই ।
-থ্যাঙ্কিউ ! তোমাকে আসলেই অনেক ধন্যবাদ।

ইশানা এসে আমার হাত ধরলো । ওর মুখের হাসিটা কেন জানি আমার কাছে মেকি মনে হল না । মনে হল ও আসলেই খুশি হয়েছে যে আমি ওকে সাহায্য করতে রাজি হয়েছি ।

------

ইশানার দিকে কতক্ষন তাকিয়ে ছিলাম ঠিক নিজের মনের কাছে মনে নেই । কেবল একটা সময় ধরে আমি ওর ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকিয়েই আছি । কোন সময় জ্ঞান আমার নেই । আজকে ক্যাম্পাস থেকে ফেরার সময়ও ওর সাথে দেখা হয়েছে কিন্তু এমন অবস্থায় কোন দিন ওকে দেখি নি, এভাবে ঘুমন্ত অবস্থায় ।

শিশু যেমন চুপচাপ ঘুমিয়ে থাকে ঠিক তেমনি মেয়েটা ঘুমিয়ে আছে । আমার কেবল তাকিয়ে থাকতেই মন চাইলো । কেন জানি ভাল লাগছিলো ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে । এভাবে কতক্ষণ তাকিয়ে ছিলাম আমি নিজেই জানি না । আমার চেয়ে থাকাটাতে একটু ব্যঘাত ঘটলো । কারন ইশানা একটু নড়ে উঠলো । আমি ওর বাঁ দিকে বসে ছিলাম । ওর নড়াচড়াতে ওর বাঁ হাত টা চাদরের ভেতর থেকে বের হয়ে এল । ওখানে একটা স্যালাইনের সুই লাগানো রয়েছে । আর ও একটু নড়ে আবার ডান দিকে একটু কাত হয়ে শুলো ।

এখন আমি এখন যেখানে বসে আছি যেখান থেকে ওর চেহারাটা ঠিক মত দেখা যাচ্ছে না । আমাকে এখন আগের মত ওর চেহারার দিকে তাকাতে ডান দিকে বসতে হবে । চাদর থেকে বের হওয়া হাত টা আমি আবারও চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়ে আমি আমার টুলটা নিয়ে আবারও ডান দিকে এগিয়ে গেলাম ।

আগের বার আমি একটু দুরে বসলেও এবার একদম বেডের কাছে নিয়ে গিয়ে বসলাম । এতো কাছে যে চাইলেই আমি ওখান থেকে বসেই ওর কপালে কিংবা ঠোটে চুমু খেতে পারি ।
চুমু !!
কি ভাবছি এসব ?
আমি আমার ফেইক গার্লফ্রেন্ড কে এভাবে চুমু খাওয়া কি ঠিক হবে ?
কেন হবে না ?
ওতো নিজেও আমাকে আমাকে চুমু খেয়েছে !
তাহলে ?

আমি ইশানার ডান হাতটা ধরলাম । একটু যেন বেশি গরম মনে হল । একটু কি জ্বর এসেছে ? অবশ্য আমার শরীর সব সময়ই একটু ঠান্ডা থাকে । আমি সবার শরীরই একটু বেশি গরম মনে হয় ! আস্তে আস্তে ওর নরম হাতটাতে আমার হাত ঘষতে লাগলাম ।

চুমু কি খাবো ?
না থাক !
দরকার নেই ।

অন্য কিছু ভাবা যাক । আচ্ছা ইশানা যখন অজ্ঞান ছিল তখন নাকি আমার নাম নিয়েছে । মেয়েটা কেন আমার নাম নিবে ? আমি এখনও এই ব্যাপারটার অর্থ বের করতে পারি নি । ইশানা পরিস্কার ভাবেই বলেছিল কেবল ওকে সাহায্য করার জন্য আমাকে ওর ফেইক বয়ফ্রেন্ড হওয়া লাগে । এর বেশি কিছু না । অবশ্য এই গত কয়েকদিনে ইশানা সব থেকে বেশি আমার সাথেই সময় কাটিয়েছে । আর সত্যি সত্যি বলতে কি এই সময়টা আমার একবারও মনে হয় নি ইশানা অভিনয় করছে । আর মানুষ যার কথা সব সময় ভাবে অবচেতন মন সব সময় তাকেই কাছে পেতে চায় । এই জন্যই কি ও আমার নাম নিয়েছিল ?

আমি ছোট্ট করে ওর কপালে একটা চুম খেলাম । তারপর আবারও বসে পড়লাম টুলে । মনে মনে ঠিক করে ফেললাম যে যতক্ষণ মেয়েটা চোখ না খুলবে ততক্ষন আমি ওর সামনে থেকে যাবো না ।

-স্যার ডিনার !

পেছনে তাকিয়ে দেখি সেই নার্স টা যে ইশানার বাবার সাথে বের হয়ে গিয়েছিল । একটা বড় চার কোনা কাগজের ওয়ানটাইম প্লেট ধরে আছে । সেখানে একটা বেশ বড় বার্গার আর একটা চিকেন ফ্রাইড রাইসের বাটি । তার উপরে আবার একটা বড় চিকেন লেগ-পিচ । পাশে কোকের বোতল রাখা ।

-এতো কিছু ? এতো কে খাবে ?
-স্যার পাঠালো !
-আচ্ছা আপনি রাখুন ওখানে । আমি খেয়ে নিব । আর আপনি কি এখানে থাকবেন এখন ?
-আমার টিউটি এখানে তবে আপনি না চাইলে আমি থাকবো না । কাছেই আমাদের রেস্ট রুম । আমি ওখানে অপেক্ষা করতে পারি । কেবল ঘন্টা খানেক পরপর চেক করে যাবো !

নার্সের ব্যবহার দেখে আমি আবারও একটু অবাক হলাম । নার্স এমন ভাবে কথা বলছে যেন আমিই এই হাসপাতালের মালিক কিংবা মালিকের ছেলে । আমাকে এতো সম্মান দিয়ে কথা বলছে কেন কে জানে !
আমি বললাম
-আচ্ছা ঠিক আছে আপনি ওখানে গিয়েই অপেক্ষা করুন । দরকার হলে আমি আপনাকে ডাক দিব ।

নার্স আর কিছু না বলে প্লেট সামনের একটা টেবিলের উপরে রেখে দিয়ে চলে গেল । আমি আবারও ইশানর দিকে তাকিয়ে রইলাম । নিজের কাছেই বুঝতে পারছি না মেয়েটার দিকে তাকাতে এতো ভাল কেন লাগছে ।

----

যেদিন আমি ইশানার সাথে রিলেশনশীপ স্টাটাস দিলাম ঠিক সেদিনের পরদিনই ও আমার ডিপার্টমেন্টের সামনে এসে হাজির । আমি তখন মাত্র সবে ক্লাস শেষ করে বের হয়েছি । বাইরে এসে দেখি ইশানা দাড়িয়ে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে । আমি আসলে এখানে ওকে এভাবে আশা করি নি ।

ইশানা সোজা আমার কাছে এসে আমার হাত ধরলো সবার সামনেই । আমার সাথের বন্ধুদের দিকে তাকিয়ে দেখি ওরা আমার দিকে কেমন আড় চোখে তাকিয়ে আছে । আমাকে আর বেশি সুযোগ না দিয়ে ইশানা আমাকে প্রায় টানতে টানতেই নিয়ে গেল । রাস্তা দিয়ে যখন হাট ছিলাম তখন অনুভব করতে পারছিলাম যে সবার চোখ আমাদের দিকে । ইশানাকে সবাই মোটামুটি চেনে তার সাথে আমি হাটছি তার উপর আবার হাত ধরে ।

ইশানার অবশ্য এসবের দিকে কোন লক্ষ্য নেই । সে আমার সাথে আপন মনেই কথা বলে যাচ্ছে । আমি একটু অস্বস্থি নিয়ে হাটছি ওর পাশে । তবে সত্যি কথা বলতে কি যে আমার যে খারাপ লাগছে তা কিন্তু না, বরং আমার যেন একটু ভালই লাগছিলো । অস্বস্থিকর কিন্তু ভাল লাগার অনুভুতি ।

আমাকে নিয়ে ওকে ক্যাম্পাসের একটা জাগয়া বসে পড়লো । এখানে স্বাধারনত কাপলরা বসে গল্প । আমি কত দেখেছি আর মনে মনে আফসোস করেছি যে নিজে কি কোন দিন এখানে বসে গল্প করতে পারবো কারো সাথে । আর আজকে আমি বসে বসে গল্প করছি ইশানার সাথে ।

আমি ইশানাকে বললাম
-তুমি এটা কি করলে ? এভাবে না আসলও কিন্তু হত ।
ইশানা বলল
-শুনো বয়ফ্রেন্ড, আমি যা করবো বাধা দিবা না ঠিক আছে । মনে রেখো আমি এখন তোমার প্রেমিকা ।

এই বলে বেশ হাসতে লাগলো । আমি ওর হাসির দিকে তাকিয়ে রইলাম । সেদিন অনেক টা সময় বসে রইলাম ওর সাথে । সময় টা কিন্তু মোটেই খারাপ কাটলো না । আমি বরং খুশিই হলাম ওর সাথে থেকে । যখন উঠবো তখন ইশানা বলল
-আমাকে বাসায় পৌছে দিয়া আসবা ?
-কেন গাড়ি ?
-আজকে গাড়িতে যাবো না ?
-তাহলে ?
-তোমার সাথে রিক্সায় যাবো । নিয়ে যেতে হবে । আমি কোন কথা শুনবো না । শুনবো না । শুনবো না !

এরপর এমন ভাবে আমার কাছে আবদর করতে লাগলো যে আমি অবাক হয়ে গেলাম । মিথ্যা হলেও আমার এই অনুভুতিটা মোটেই খারাপ লাগলো না ।

ওকে নিয়ে রিক্সায় উঠলাম । প্রথম বারের মত এমন কারো সাথে রিক্সায় উঠলাম । ইশানাকে আসলেই আমার কাছে একটু অন্য রকম লাগছিলো । মেয়েটা যে অভিনয় করছে এটা আমার কাছে মোটেই মনে হল না । আমার কাছে সব কিছুই যেন অন্য রকম লাগছিল । আর এখন তো অভিনয় করার দরকার নেই । কারন আমাদের আসেপাশে কোন পরিচিত মানুষও নেই । আমি বুঝতে পারছিলাম না । তবে কিছু বলতেও পারছিলাম না । আমি নিজেই জানি না কেন ?

একটা সময় ইশানা আমাকে বলল
-এই রিক্সার হুড তুলো
-কেন ? রোদ নেই তো । সমস্যা কি ?
-আরে বাবা হুড তুলো । আমার বাসা সামনে।
-ও আচ্ছা ।
আমি হুড তুলে দিলাম । কিন্তু তখনও আমার ঢুকছে না বাসা সামনে তো হুড তুলতে কেন হবে ?

ঠিক তখনই একটা ইশানা কাজ টা করলো । কেউ যদি আমার মাথায় জোরে করে একটা বাড়ি মারতো সেটাতেও আমি এতো বড় ধাক্কা খেতাম না । ইশানা হুড তোলার সাথে সাথেই ইশানা আমার ঠোটে চুম খেলো । ঝট করে করে না বরং লম্বা একটা চুম্বন !

তারপর নিজের ঠোটটা সরিয়ে রিক্সাওয়ালাকে থামতে বলল । আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নেমে গেল । দৌড়েই গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকে গেল । আমি তখনও ঠিক বুঝতে পারি নি আসলে কি হল আর ইশানা আসলে করলো ?
আর সব থেকে বড় কথা কেন করলো ?

বাসায় আসার পরেও আমার মাথা ভেতরে এই জিনিস ঐটাই ঘুরতে লাগলো । অন্য কোন কিছু আনতেই পারছিলাম না । ওকে যে ফোন দিয়ে কথাটা জিজ্ঞেস করবো সেটাও কেন জানি অস্বস্থির জন্য করতে পারছিলাম না । আমি কিভাবে একটা মেয়েকে জিজ্ঞেস করবো যে আমাকে সে কেন চুমু খেলো । ভেবেছিলাম সেটাই মনে হয় শেষ । কিন্তু শেষ না ।

তারপর থেকে প্রতিটা দিন যখন আমার সাথে ইশানার দেখা হল প্রতিটা দিন যাওয়ার সময় ও আমাকে ঠিক কোন না কোন ভাবে চুমু খেতোই । তবে কেবল যে চুমই খেতো সেটা না, আমার সাথে ও অনেক কথা বলতো । অনেক বেশি । আমার কেবল মনে হত যেন আমাকে পেয়ে জীবনের সব না বলা কথা ও বলে ফেলছে । ক্লাস ক্যাম্পাস ছাড়াও আমরা বাইরে দেখা করতে লাগলাম । ঘন্টার পর ঘন্টা এক সাথে সময় কাটাতে শুরু করলাম ।একদিন নিজ থেকেই নিজের কথা, নিজের পরিবারের কথা গুলোও আমাকে বললো ।

ছোট বেলা থেকেই ও খানিকটা একা একা মানুষ হয়েছে । বাবার আদরের মেয়ে হলেও বাবার বেশির ভাগ সময়ই ব্যবসা নিয়েই ব্যস্ত থাকতো । এই কারনেই নাকি ও মা ওদেরকে রেখে অন্য কারো সাথে চলে গিয়েছিল । কোনটা ভুল আর কোনটা ঠিক সেটা বলার মত কেউ ছিল না । জীবনে অনেক ভুল করেছে এখনও করছে । বাবা সব কিছুতেই হ্যা বলতো বিধায় ওর জন্য যেন সব কিছু আরও সহজ হয়ে গেল অন্য পথা যাওয়াটা । এভাবেই অনেকটা উৎশৃঙ্খল জীবনের দিকে একটু একটু করে এগিয়ে গিয়েছিলো ও । মাঝে মাঝে ওর খুব বেশি ওখান থেকে ফিরে আসতে ইচ্ছে করে কিন্তু পারে না । কারো হাত ধরে ফিরতে ইচ্ছে করে ওর ।

আমার মনে হল যেন বলতে চাইলো সেই হাতটা যেন আমার হয় । ও আসলে কেবল ফেইক বয়ফ্রেন্ড হওয়ার জন্যই আমার সাথে এরকম করে নি । এর ভেতরে আরও অন্য কিছু আছে ।

এসব রাতের ভাবতাম প্রায়ই । আজকেও ভাবছিলাম আর তখনই ঘটনাটা ঘটলো । সুজন ফোন করে জানালো যে ইশানর নাকি একটা ভিডিও বের হয়ে হয়েছে অনলাইনে । ওর আগের বয়ফ্রেন্ড রাফি নাকি ছেড়েছে । আমার সাথে সম্পর্কে যাওয়ার প্রতিহিংসার কারনে এটা ছেড়েছে ।

আমার কেন জানি মন খারাপ হল । আমাদের মাঝে অনেক কথা হলেও ইশানা কোন দিন আমাকে এসব কথা বলে নি । জানতাম এখনকার প্রেম ভালবাসা মানে অনেকটাই এরকম হয়ে গেছে কিন্তু তাই বলে ভিডিও করবে এসবে । নিজের ইমোশনকে আবারও লাগাম দেওয়ার চেষ্টা করলাম । সাথে সাথে এও ঠিক করলাম যে আজকের পর থেকে আর ইশানার সাথে আর দেখা করবো না । ওর সাথে কোন কথা বলবো না ।

ফেসবুকে গিয়ে রিলেশনশীপ স্টাটাসটা বদলাবো ঠিক তখন আবারও সুজন ফোন করলো । এবার ফোন করে ও যা বলল তার জন্য আমি মোটেই প্রস্তুত ছিলাম না । ইশানা নাকি এই ভিডিও বের হওয়ার ঘটনায় খুব আপসেট হয়ে পড়ে । তারপরই নাকি একগাদা ঘুমের ঔষধ খেয়ে সুইসাইড এটেম্ট করে ।

আমি এটা শুনে একেবারে থ হয়ে যাই । ইশানা এমন একটা কাজ করতে পারে ভাবতেো পারি নি । একটু আগে যেটা নিয়ে আমি ভাবছিলাম সেটা কোথায় হারিয়ে খুজেও পেলাম না । আমি তখনই ইশানার জন্য হাসপাতালে ছুতে দিলাম ।

--------

এর মাঝে সিস্টার এসে দুবার দেখে গেছে ইশানাকে । একবার ডাক্তারও এসেছে । তবে ইশানার বাবা আর আসে নি । আশ্চর্য ভদ্রলোক । ইশানা ঠিকই বলেছিল । ও বাবা সব সময় ব্যস্ত । তাই বলে এখনও ব্যস্ত থাকবে !!

আমার একটু ক্ষুধা অনুভব হলে মনে পড়লো আসলে আমার কিছু খাওয়া হয় নি । আমি এই সারাটা সময় ইশানার হাত ধরেই বসে ছিলাম । এখন মনে হল একটু কিছু খাওয়া দরকার । আমি টুল থেকে খাবার রাখা টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলাম । লেগ-পিচ টাতে একটা কামড় দিয়ে আবার যখন ইশানার বেডের দিকে ফিরেছে দেখি ও চোখ মেলে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ।

কখন চোখ খুললো এই মেয়ে !

আমি আবারও তাড়াতাড়ি ওর কাছে ফিরে গেলাম । আমি টুলে বসতেই ইশানা বলল
-আমার হাত ছাড়লে কেন ?
-তুমি জেগে ছিলে এতোক্ষন ?
-হাত ধর আগে । ধর বলছি !

আমি ওর হাত ধরে বসলাম ওর পাশে । ইশানা বলল
-চোখ বন্ধ করার আগে ভেবেছিলাম আর কোন দিন তোমাকে দেখতে পাবো না । তুমি এসেছো......

ওর মুখে হাসির সাথে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো । অদ্ভুত একটা দৃশ্য । সম্ভবত মেয়েদের এই অবস্থায় দেখতে সব থেকে বেশি সুন্দর লাগে । অন্য রকম সুন্দর ! আমি তাকিয়ে রইলাম কেবল । তারপর টিস্যু দিয়ে ওর চোখ মুছতে মুছতে বললাম
-কাঁদছো কেন ? আমি রয়েছি তোমার পাশে । এই দেখো তোমার পাশে আছি ।
ইশানা আরও কিছুটা সময় নিরবে চোখের পানি ফেলল । আমি বললাম
-চিকেন খাবা ? টেস্টি আছে কিন্তু ?
-আমাদের হাসপাতালের চিকেন টা বাজে ।
-তোমাদের হাসপাতাল ?
-হু । এটার মালিক বাবা !

ও আচ্ছা এবার বুঝতে পারলাম আরও ভাল করে । আমাকে কেন এতো বেশি সম্মান দেওয়া হচ্ছিলো । মালিকের মেয়ের বন্ধু বলে কথা । ইশানা একটু পর ক্ষীণ গলায় বলল
-ডিড ইউ সি দ্যাট ?
-কি ?

কি বলার পর বুঝলাম ও আসলে কি দেখার কথা বলছে । আমি বললাম
-না ! দেখি নি ।
ওর চোখ দিয়ে পানি বের হতে দেখে আমি আবারো ওর চোখ মুছে দিলাম । বললাম
-প্লিজ কেঁদো না । আমি তোমাকে ছেড়ে যাচ্ছি না । কোথাও না ।
-আমি সত্যি ইচ্ছে করে করি নি । বিশ্বাস কর । আমি ঐ দিন খুব বেশি ড্রাঙ্ক ছিলাম । ও যে এরকম.....
-আচ্ছা বাবা ঠিক আছে । বলতে হবে না । আমি শুনতে চাচ্ছি না তো....
-না, শুনতে হবে । আমি কোন দিন এরকম কিছু করি নি । বিশ্বাস কর । জানি না মানুষ আমাকে নিয়ে কি বলে তবে আমি কারো কাছে এরকম কিছু করি নি । ঐদিনও ও কিছু করতে চেয়েছিল কিন্তু পারে নি । আমি প্রটেস্ট করেছি । সত্যি বলছি .......

আমি ওর মুখের কাছে আমার হাত নিয়ে নিয়ে ওকে চুপ করিয়ে দিলাম । তারপর বললাম
-তোমাকে কৈফৎ দিতে হবে না । তুমি বলেছো এতেই চলবে ......
-অপু ......
-হুম
-আই লাভ ইউ।

এতো মোলায়েম স্বরে কেউ কাউকে ভালবাসি বলতে পারে আমি জানতাম না । ওর চোখ দিয়ে তখনও পানি পড়ছে । ইশানা আবারও বলল
-আই লাভ ইউ, ইন রিয়েল ।
-আই নো ! এখন কান্না বন্ধ কর । তোমার বাবা এসে যদি দেখে তার মেয়েকে আমি কাঁদাচ্ছি তাহলে আমার খবরই আছে ।

আমার এই কথা শুনে ইশানা কান্না বন্ধ করে হাসলো একটু । তারপর বলল
-তোমার কি মনে হয় আব্বু এসব দেখছে না ?

আমি যেন আকাশ থেকে পরলাম । কি বলছে এই মেয়ে ! উনি কিভাবে দেখবে এসব ! আমি বললাম
-কিভাবে দেখবে ?
-আমাদের হাসপাতালের ভিআইপি ক্যাবিন গুলোতে সব সিসিটিভি ক্যামেরা লাগানো আছে । যেন কোন প্রকার কোন দুর্ঘটনা ঘটতে না পারে । আমি নিশ্চিত জানি আব্ব যেহেতু এখানে নেই আব্বু ঠিক ঠিক সিসিটিভি ফুটেজ রুমে আছে । আমাদের কে দেখছে ।

খাইছে আমারে । আমি যে ইশানাকে চুমু খেয়েছি এসবও দেখেছে ।

ইশানা বলল
-তোমার মুখ এমন কেন করছো ?
-তোমাকে আমি চুমু খেয়েছিলাম একবার । তোমার বাবা নিশ্চয়ই দেখেছে ।
ইশানা আবারও হেসে ফেলল ফিক করে । এবার আর ওর চোখ দিয়ে পানি পড়লো না অবশ্য ।
-কপালে ?
-হুম !
-ওকে এবার ঠোটে খাও ।
-কোন ভাবেই না । তোমার বাবা দেখছে । আমি কোন ভাবেই এই কাজ করতে পারবো না ।

তখনই ইশানা ওর পাশে রাখা বেড সুইচ টা চেপে দিল । প্রায় সাথে সাথেই একজন নার্স ছুটে এল ঘরে । আমার কেন জানি মনে নার্স রুমের বাইরেই দাড়িয়ে ছিল ।

-ইয়েস ম্যাম !
-এই রুমের ক্যামেরা বন্ধ করার ব্যবস্থা করেন ।
-কিন্তু স্যার....
-কোন কথা শুনতে চাই না । বন্ধ করতে বলেছি করেন ।

নার্সটা যেন অনিচ্ছা স্বত্তেও দেওয়ালের একটা সুইচ টিপ দিল । তারপর রুম ছেড়ে চলে গেল । ইশানা এবার আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এবার !
-বন্ধ হয়েছে ?
-হুম ।
-এখনই ?
-ইয়াপ এখনই । প্রতিবার কেবল আমি আগে চুমু খাই । আজকে তুমি ....

এই একটা দিনে কত কিছু হয়ে গেল । রাত থেকে এখন প্রায় ভোর হতে চলল । পুরোটা সময় আমি ইশানার পাশে ছিলাম । ভাবছিলাম ওর যখন জ্ঞান ফিরবে তখন আমি কি বলবো । কত কিছু ভালছিলাম কিন্তু শেষ পর্যন্ত সব কিছু এসে থামলো চুমোতে ।

ইশানা তখনও আমার দিকে গভীর চোখে তাকিয়ে আছে । ইশার দিকে তাকিয়ে মনে হচ্ছে না আজকে ওর উপর দিকে এতো বড় একটা ঝড় গিয়েছে ! শুয়ে থাকা অবস্থায় ওকে যেমন নিঃপাপ একটা বাচ্চার মত মনে হচ্ছে এখনও ঠিক সেই রকমই মনে হচ্ছে । কেবল মনে হচ্ছে সেই বাচ্চাটা একটু যেন বড় হয়ে গেছে । আর একটু একটু দুষ্টুমি করতে শিখেছে ।

আমি ওর দিকে আর একটু এগিয়ে গেলাম । ইশানা গভীর চোখে আমার দিকে তখনও তাকিয়েই আছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০২১ দুপুর ১:০৯
২০টি মন্তব্য ১৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×