somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুইটি অনুগল্পঃ মিতু

০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গল্পঃ এক

মিতুর আরেকবার ফোনটা কানে লাগালো । জানে এর ফলাফল কি হবে তবুও গত কয়েক ঘন্টা ধরে সে এই কাজটা করে যাচ্ছে । সুমনের ফোনটা বন্ধ জেনেও কিছু সময় পরপর কল করে যাচ্ছে । বারবার মনে হচ্ছে কখন চালু করবে ফোনটা ও ।

মোবাইলের সময়টা দেখে নিল । নয়টা বাজতে গেলে । সুমনের এখনও দেখা নেই । সুমনের ঠান্ডা একদম সহ্য হয় না । শীত কালে তাই যত দ্রুত সম্ভব সে বাসায় ফিরে আসে কিন্তু আজকে রাত নয়টা বাজতে গেলে তবুও তার দেখার নেই । এই তীব্র শীতের রাতে ছেলেটা কোথায় একা একা বসে আছে কে জানে । মিতুর আবার কান্না আসতে লাগলো ।
ঘরের আলো অনেক আগেই নিভিয়ে দেওয়া হয়েছে । ঘর অন্ধকার করে বসে আছে সেই ঘন্টা দুয়েক হল । যদিও বাসায় কেউ নেই তবুও মিতু তার চোখের পানি আলোর ভেতরে ফেলতে চাচ্ছে না । মনে হচ্ছে ঘরের অন্ধকারের ভেতরে ওর চোখের পানি ফেললে কেউ দেখবে না । যদিও দেখার কেউ নেইও ।

মিতুর বারবার মনে হচ্ছে ও কাজটা কেন করতে গেল ? একটা ফোন করলে কি এমন ক্ষতি হয়ে যেত ! আরেকটু কেয়ার কি ওর দেওয়া উচিৎ ছিল না ?

ওদের বিয়ের শুরু থেকে সুমন ওকে সব দিক থেকে সব সহযোগিতা করে এসেছে । ওদের বাসা থেকে মিতুর চাকরি করাটা পছন্দ ছিল না কিন্তু সুমন এটাতে মোটেই আপত্তি করে করে নি । বিয়ের পরেও যেখানে অন্যান্য হাজব্যান্ডরা বউদের বাইরে ঘোরাঘুর কিংবা বন্ধুদের সাথে সময় কাটানোটা পছন্দ করে না সেখানে সুমন এসবে কোন আপত্তি করি নি কোন দিন ।
কেবল ওর একটা জিনিসে সমস্যা ছিল । সেটা হচ্ছে মিতুর ছেলেদের সাথে ঘোরাঘুরি !
যেদিন ওদের মাঝে এই বিষয়টা নিয়ে কথা হয় সেদিনের কথা মিতু প্রায়ই ভাবে । সুমন অনেক টাই অস্বস্থি নিয়ে কথাটা বলেছিলো ওকে ।
মিতু বলল
-তার মানে তুমি চাচ্ছো যে আমি কোন ছেলের সাথে মিশবো না ?
-আরে না না !

সুমন হাসলো কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে । তারপর বলল
-আমি সেই কথা বলি নি । আসলে আমি ছোট বেলা থেকেই একটু ঈর্ষা পরায়ন ছেলে !
-হিংশুক ?
-হুম ! বলতে পারো । তবে সব দিকে না, কিছু কিছু দিকে । আমার কাছের মানুষ, আমার ভালবাসার মানুষটা যদি অন্য কোন ছেলের সাথে কথা বলে কিংবা একটু হাসা হাসি, ঘোরাঘুরি করে এটা আমি ঠিক সহ্য করতে পারি না । আগে তো একদম পারতাম না । খুব রেগে যেতাম ।
-কিন্তু এটা তো ঠিক না ।
-আমি জানি এটা ঠিক না । রেগে যাওয়া ঠিক না । কিন্তু সব মানুষের কিছু চারিত্রিক লিমিটেশন থাকে । আমি যেহেতু মানুষ আমারও আছে । এটাই সেটা ।

কথাটা বলে সুমন কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । মিতুর মনে হল সত্যিই তো । সবারই কিছু না কিছু এমন ব্যাপার থাকে । যেমন রাতের বেলা ও কারো নাক ডাকা একদম সহ্য করতে পারে না । ওর দিকে কেউ যদি একটু অমনযোগি হয়ে সেটাও মিতু সহ্য করতে পারে না । আর ও নিজেও যদি তার স্বামীকে অন্য কোন মেয়ের সাথে হাসাহাসি করতে দেখে তাহলে নিজের কাছে সেটা খারাপ লাগবে ।

সুমন বলল
-দেখো আমি তোমাকে বলবো না তুমি অন্য কোন ছেলের সাথে মিশো না কিংবা কথা বল না । কেবল একটা অনুরোধ করি যে যখন এমন কোন পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে তোমার কারো সাথে বাইরে যাওয়ার দরকার পরবে তখন আমাকে একটু জানাবে । এটুকুই । আমি যেন অন্য কারো কাছ থেকে এটা না জানতে পারি ।
-আচ্ছা । মনে থাকবে আমার ।

তারপরেও মাঝে এমন অনেক টা সময় গেছে যে যেখানে মিতু অফিস কিংবা বন্ধুদের সাথে বাইরে গেছে কিন্তু সুমনকে জানাই নি । কিংবা জানাতে ভুলে গেছে । মাঝে মাঝে যে জানাই নি তা নয় । কিন্তু ঘটনা টা যে এমন ভাবে হবে সেটা মিতু ভাবতেই পারে নি ।

আজকের দুপুরের কথা । অফিসের এক কলিগের সাথেই কাজে বের হয়েছিলো মতিঝিলের দিকে । কাজ অফিসের কাজে ছিল এই জন্যই ওর এতো কিছু মনে হয় নি । কাজ যখন প্রায় শেষ তখন তখনই ওর ফোনে সুমনের ফোন এসে হাজির ।
নিয়মিত যেমন ফোন করে তেমন ফোন মনে করেই মিতু ফোনটা ধরলো ।
-কোথায় তুমি ?

প্রথম প্রশ্নটা শুনেই মিতু একটু থতমত খেয়ে গেল । ঠিক তখনই তার মনে হল যে সুমন ওকে দেখতে পেয়েছে কোথা থেকে ।
-সুমন শোন প্লিজ আমি আসলে কাজে বের হয়েছি রফিক ভাইয়ের সাথে !
ওপাশ থেকে কোন আওয়াজ এল না !
-হ্যালো শুনছো ? হ্যালো !

কোন জবাব নেই । তারপর ফোনটা রেখে দেওয়ার আওয়াজ হল । প্রায় সাথে সাথেই ফোন ব্যাক করলো । কিন্তু ফোন বন্ধ । মিতুর আর কোন সন্দেহই রইলো না যে সুমন ওকে দেখতে পেয়েছে । আর দেখতে পেয়ে ওর মাথা খারাপ হয়ে গেছে ।

মিতু কাজ শেষ করে অফিস না গিয়ে সুমনের অফিসে গিয়ে হাজির হল । সেখানে গিয়ে জানতে পারলো যে সুমনও কাজে মতিঝিলের দিকে গিয়েছিল । একটু আগে নাকি ড্রাইভার ফিরে এসেছে সব কাগজ পত্র নিয়ে । সুমন নাকি রাস্তার মাঝে নেমে গেছে ।

মিতুও আর অফিসে যায় নি । ভেবেছিলো হয়তো সুমন নিজেও বাসায় চলে আসবে কিন্তু আসে নি । তারপর থেকে সারাটা সময় মিতুর কেবল অস্থির সময় কেটেছে । পরিচিত সবার কাছে ফোন দিয়ে জানতে চেয়েছে যে সুমন ওখানে গেছে কি না । কিন্তু না সে যায় নি । সবার থেকে যখন না শুনা শেষ হল তখন বেড রুমে গিয়ে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করলো । বারবার মনে হচ্ছিলো যে একবার একটা ফোন করলে কি এমন ক্ষতি হত ওর । কিংবা একটা মেসেজ দিয়ে রাখলে ।

-------
রাত ১০ টার কিছু পরে যখন কলিংবেল বেজে উঠলো মিতু যেন একেবারে দৌড় দিয়ে দরজার কাছে চলে গেল । দরজা খুলে দেখে সুমন দাড়িয়ে আছে । চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে বিমর্ষ । কিছু সময় কেবল তাকিয়ে রইলো ওর দিকে । তার পর দরজা খুলা অবস্থায়ই ওকে জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে । এট আগে মিতু সুমন কে এতো জোরে জড়িয়ে ধরেছে কি না ওর জানা নেই । চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগলো নিরবে ।

কতক্ষন ওকে জড়িয়ে ধরে রেখেছিলো মিতু জানে না সুমনের ডাকে ।
-দরজাটা বন্ধ করি । মানুষজন দেখলে কি বলবে ?
-বলুক যা ইচ্ছে । আমার স্বামীকে আমি জড়িয়ে ধরেছি । কার কি !
-আরে বাবা ঠিক আছে ।
-না আগে বল তুমি রাগ করে নেই আমার উপর ।
-আরে আমি কেন রাগ করে থাকবো তোমার উপর ?
-না আমি জানি তুমি রাগ করে আছো ? আমার কিছু একটা করা উচিৎ হয় নি কিন্তু আমি করেছি ।

সুমন ওকে নিজের কাছ থেকে ছাড়িয়ে মুখোখুখি এনে বলল
-আমি তোমার উপর রাগ করি নি । তবে একটু মন খারাপ হয়েছে অবশ্য । তোমার সাথে ঐ লোকটা কে দেখে আমার মোটেি ভাল লাগে নি ।

সুমন দেখলো মিতুর চোখের পানি আবার পড়তে শুরু করলো । সুমন এটা দেখে বলল
-আচ্ছা বাবা এই দেখো আমি হাসছি । ঠিক আছে । তুমি কান্না কাটি করো না প্লিজ !

সুমন মিতুকে পাশে সরিয়ে রেখে দরজা বন্ধ করতে গেলে দেখলো মিতু এবার ওকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছে । পিঠের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ধরে রইলো কিছুটা সময় । এইকাজ টা ও প্রায়ই করে । ওর হাত টা সামনে ওর বুকের কাছে চলে এসেছে । সেখানে তাকিয়ে দেখে মিতুর হাতে তাজা মেহেদী দেওয়া । হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ি ।
এতো সময় সুমন লক্ষ্য করে নি এবার আবারও মিতুর দিকে তাকিয়ে দেখে মিতু হালকা আকাশী নীল রংয়ের শাড়িটা পরে আছে । এটাতে মিতুকে সব থেকে সুন্দর লাগে । মাঝে মাঝেই সুমন ওকে এই শাড়িটা পরতে বলে ।

সুমন কিছুটা সময় মিতুর দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-তুমি কি আজকে ভুনা খিচুরী রান্না করেছো ?
মিতু জবাব না দিয়ে কেবল মাথা ঝাকালো ।
-বুদ্ধি ভালই পেয়েছো !

মিতু তাকিয়ে দেখলো সুমন ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে । আকাশী নীল রংয়ের শাড়ি, হাতে মেহেদী ভুনা খুচুরী, কাঁচের চুড়ি এসব সুমনের খুব পছন্দের । প্রিয় মানুষটার রাগ ভাঙ্গাতে প্রিয় জিনিস গুলোর কোন বিকল্প নেই । মিতু সুমনকে আরও একটাবার জড়িয়ে ধরলো । তারপর বলল
-আই প্রমিজ ইউ, আর কোন দিন এরকম টা হবে না । কোন দিন না ।
-আচ্ছা ঠিক আছে ঠিক আছে । এখন খেতে দাও জলদি । দুপুর থেকে কিছু খাই নি । আর জড়িয়ে ধরার জন্য পুরো শীতের রাত পরে আছে ।
---
(সমাপ্ত)



গল্পঃ দুই

মিতুর জন্য আমার বিয়ের প্রস্তাবটা প্রথমে আমার খালা এক বান্ধবীর কাছ থেকে আসে । তাদের বাসার পাশেই নাকি নতুন ভাড়াটিয়া এসেছে । মেয়েটা দেখতে নাকি অনেক সুন্দর আর খুব নম্রভদ্র । আর তখন আমার বিয়ে দেওয়ার জন্য এতো তোড়জোড় ছিল যে মেয়ের খোজ পেলেই খুব একটা খোজ খবর না নিয়েই মা সেখানে দৌড়ে চলে যেত দেখার জন্য । আমাকে প্রতিবার নিতে না পারলেও মাঝে মাঝে ঠিক ঠিক পাকড়াও করে নিয়ে যেত । সেদিনও নিয়ে গিয়েছিলো ।

প্রতিবারের মত আমি বিরক্ত হয়েই বসে ছিলাম । মায়েরা মায়েরা কথা বলছিলো । তার কিছু সময় পরেই মিতু ঘরে ঢোকে । আমি মিতুকে দেখে প্রথমে কিছুটা সময় কোন কথা বলতে পারলাম না । আমার দম বন্ধ হয়ে যাওয়ার মত হল । বারবার মনে হচ্ছিলো যে এই মেয়ে কোথায় ছিল এতো দিন কোথায় ছিল ? আমি কোন কথা না বলতে পেরে কেবল তাকিয়ে রইলাম মেয়ের দিকে । মেয়েটা কেমন লাজুক চোখে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে ।

আমার কেবল মনে হল যে এই মেয়েকে বিয়ে না করলে আমি ঠিকঠাক দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো । যে করেই হোক এই মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে । ঠিক তখনই ঝামেলা টা শুরু হল । তাড়াহুড়া করে খুব খোজা না নিয়েই আমার মা চলে এসেছিলাম কিন্তু এসে আসল খবর জানতে পারলাম ।
মিতু কথা বলতে পারে না । ছোট বেলায় গলায় একটা ইনফেকশন হয়েছিল, সেখান থেকে অপারেশন করার পর থেকে ও আর কোন দিন কথা বলে নি । মায়ের মুখ গম্ভীর হয়ে গেল । আর বেশি কিছু না বলে মা বেরিয়ে এল । তারপর বাসায় এসে খালা আর সেই বান্ধবীকে সেই ঝাড়ি ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল যে আমি যেন ওসব মাথা থেকে বের করে দেই । জগতে কি মেয়ের অভাব আছে !!

কিন্তু আমি কিছুতেই মিতুকে মন থেকে বের করতে পারছিলাম না । পরদিন আবারও ওদের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম । আমাকে দেখে মিতুর বাবা একটু অবাক হল । অনেক কথা বলল । অনেকেই নাকি মিতুকে দেখে পছন্দ করে কিন্তু যখন শোনে ও কথা বলতে পারে না তখন ওরা পিছিয়ে যায় কিংবা মোটা যৌতুক দাবী করে । মিতুর বাবা মেয়েকে বিক্রি করবেন না বলেই দিলেন । দরকার হলে মেয়ে ঘরেই থাকবে । মিতু হাতের কাজ বেশ ভাল জানে । ও একটা বুটিক হাউজে চাকরি করে, পার্টনারশীপে । সেখান থেকে নাকি ভাল টাকাও পায় । জীবন পার করতে ওর কারো সাহায্য লাগবে না ।
আমি চুপ করে শুনে যাচ্ছিলাম । বারবার কেবল মিতুর চেহারাটা আমার চোখের সামনে ভাসছিলো । আমি বললাম
-আমি ওকে বিয়ে করতে চাই । কোন কিছুর বিনিময়ে না । কেবল ওকে চাই আর কিছু না ।
মিতুর বাবা আমার দিকে তাকিয়ে বললাম
-কিন্তু মা তো রাজি হবে না । তোমার পরিবার তো রাজি না । । আগে তোমার ফ্যামিলিকে রাজি করাও তারপর । আমাদের কোন আপত্তি নেই

আমি যখন কথা বলছিলাম দেখছিলাম যে দরজার আড়াল থেকে কে যেন উকি দিচ্ছে । সেটা যে মিতু আমার বুঝতে মোটেই কষ্ট হল না । আমার সাথে একবার চোখাচোখিও হয়ে গেল ।

বাসায় এই কথা বলতে মা যেন ফেটে পড়লো । পরিস্কার বলে দিল যে ঐ মেয়েকে তিনি কিছুতেই বাড়ির বৌ করে আনবেন না । এই কথা যেন তার সামনে দ্বিতীয়বার তোলা না হয় । বাবা টিভি দেখছিলো আমার দিকে তাকিয়ে কেমন করে যেন হাসলো ।

মা রান্না ঘরের যেতেই বাবা বলল
-মেয়ে নাকি কথা বলতে পারে না সত্যি নাকি ?
সোফায় বসতে বসতে বললাম
-হুম !
-এই সুযোগ হাত ছাড়া করিস না !
-মানে ?
-আরে যে স্বামীর বউ চুপ থাকে তার থেকে ভাগ্যবান আর কে আছে । পছন্দ হলে বিয়ে করে ফেল । শেষে তোমার মায়ের পছন্দ মত বিয়ে করলে দেখবি সে তার মতই টিভি সংবাদ পাঠিকা ধরে এনেছে । সারাদিন ননস্টপ চলতেই থাকবে !
আমি হাসলাম কেবল । বাবা আবার বলল
-শোন একজনকে একবার ভাল লেগে গেলে সেটা ছাড়ানো মুশকিল । সারা জীবন আফসোস থাকবে । তার চেয়ে সাহস করে কাজটা করে ফেললেই হল ।

-তুমি কি বললে ?
কখন যে মা পেছনে চলে এসেছে আমরা দুজনেই লক্ষ্যই করি নাই । আমি আর বসে থাকলাম না । উঠে চলে এলাম । এবার বাবা আর মায়ের ব্যাপার তাদের ভেতরে চলুক !

প্রায় প্রতিদিনই মিতুদের বাসায় যেতে লাগলাম । মিতুর বুটিক হাউজেও হানা দিতে লাগলাম । মিতু আমাকে দেখতো আর কেমন চোখে তাকিয়ে থাকতো আমার দিকে । আমি আরও একটু বেশি পাগল হয়ে যেতাম ।
এইসব কথা আমার বাসায় জানতেও খুব একটা দেরি হল না । একদিন মিতুদের বাসায় গিয়ে দেখি মিতুর বাবা খুব গম্ভীর হয়ে আছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-বাবা তুমি আর আমাদের বাসায় এসো না ।
-কেন ? কি হয়েছে ?
-তোমার মা এসেছিলো । আমাকে আর আমার মেয়েকে অনেক কিছু বলে গেছে । এসব কথা আমি আর শুনতে চাই না ।
-কি বলেছে ?
-সেটা তুমি তোমার মায়ের কাছ থেকেই শুনে নিও । তুমি আর এসো না !

আমি ওখান থেকেই বাসায় ফিরে এলাম । মায়ের কাছে জানতে চাইলাম সে কি বলেছে মিতুর বাবা কে । মায়ের কাছে কথা শুনে এমন রাগ হল যে মনে মনে ঠিক করে নিলাম যে আমি মিতুকেই বিয়ে করবো, অন্য কাউকে নয় ।

পরদিন আবারও মিতুদের বাসায় গিয়ে হাজির হলাম । মিতুর বাবাকে কেবল বললাম যে আমি আজকের পর থেকে আর এখানে আসবো না কেবল মিতুকে আজকে যেন আমার সাথে বাইরে যেতে দেই । মিতুর বাবা কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে তারপর রাজি হয়ে গেল । মিতু বের হয়ে এল কিছু সময় পরেই । ও বুটিক হাউজে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিলো ।
আমি কেবল ওর দিকে তাকিয়ে আরও কিছুটা সময় হারিয়ে গেলাম কোথায় যেন । এই মেয়ে যদি আমার বউ না হয় তাহলে আমি আসলেই দম বন্ধ হয়ে মারা যাবো । কোন ভুল নাই ।

রিক্সায় যখন ওকে নিয়ে যাচ্ছিলাম ও চুপ করে অন্য দিকে তাকিয়ে ছিল । অবশ্য ও চুপ করে থাকা ছাড়া আর কি করতে পারে । আমার নিজেরও খানিকটা কেমন যেন অস্বস্থি লাগছিলো তবে সেই সাথে ভালও লাগছিলো খুব ।

মিতু আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । কেবল আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো । আমি কি করতে যাচ্ছি যেটা যেন ও ঠিক ঠিক বুঝতে পারলো তখনই । যখন আমাদের রিক্সাটাকে আমি মগবাজার কাজী অফিসের সামনে দাড়াতে বললাম তখন ও চোখে বিশ্ময় দেখতে পেলাম । আমি রিক্সা থেকে নেমে মিতুর দিকে তাকিয়ে বললাম
-মিতু তোমার সামনে এখন দুইটা পথ খোলা আছে । তুমি রিক্সা থেকে এখন নামতে পারো আমার সাথে । অথবা এই রিক্সা নিয়ে চলে যেতে পারো । আমি বাঁধা দিবো না ।

মিতু যেন দ্বিধায় পরে গেল । কি করবে ঠিক বুঝতে পারলো না । আমি ওর দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললাম
-আমি জানি তুমি আমাকে ঠিক মত চিনোও না । কদিন থেকে দেখছো মাত্র । তাই হয়তো ঠিক ভরশা করতে পারছো না তবে আমার চোখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখো ।

মিতু আমার দিকেই তাকিয়ে আছে । সোজা আমার চোখের দিকেই ।
আমি আবার বললাম
-আজকে যদি তুমি আমার এই হাতটা ধর তাহলে যতদিন আমার বেঁচে থাকতো তোমার হাত ছেড়ে দিবো না কোন দিন । এমন কি মরার পর ভুত হয়ে তোমার আসেপাশে থাকবো । তুমি চাইলে সেই গল্প লিখে পাঠাতেও পারবে ভুত এফএমের রাসেল ভাইয়ের কাছে ।
মিতু কথা গুলো কেবল শুনে গেল গভীর চোখে । আমি বললাম
-যাবে আমার সাথে ?

কিছুটা সময় ও কেবল তাকিয়েই রইলো আমার দিকে । আরও কিছুটা পরে মিতুর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই দেখলাম ওর চোখ থেকে একটু পানি বের হয়ে এল । তবে সেটা বিষন্নতার নয় অন্য কিছুর । ওর চোখের পানি নিয়েই আমার হাত ধরলো । যদিও কেবল চেয়েই রইলো আমার দিকে ওর চোখের দৃষ্টি স্পষ্ট বলছে যে "আমি বিলিভ ইন ইউ" !

ওর হাত ধরেই কাজী অফিসের ভেতরে ঢুকলাম । নতুন জীবনের শুরুটা এখানেই ....


(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১০:৫৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×