somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরমানু গল্পঃ ম্যাগি নুডুলসের মশলার প্যাকেট :D

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিলা আমার উপর রাগ করে চলে গেল কেন আমি কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না । সব কিছু ভালই চলছিলো । মাঝে মাঝেই ও আমার ঘরে এসে আমার সাথে গল্প করতো । বিছানার উপর বসে পা নাচাতো আর কথা বলতো । আমি পিসি টেবিলের সামনে বসে ওর চটপটে কথা গুলো শুনতাম । সত্যি বলতে কি আমার খারাপ লাগতো না । বরং একটু বেশি ভাল লাগতো ।

এই চিলেকোঠায় আমি এসেছি প্রায় ছয়মাস । এই বাসাতেই ভাড়া থাকে ওরা । প্রথম থেকেই ও আমার সাথে বেশ ফ্রি ছিল । অন্য মেয়েগুলোর মত না । আমিও ভাল ভাবেই মিশতাম । বাবা মাকে ছেড়ে এই এতো দুরে একা একা থাকাটা আমার জন্য বেশ কষ্টকর ছিল । সেদিক দিয়ে তিলার সাথে সময় বেশ ভাল কাটতো । কিন্তু ঐ দিনের পর কি হল তিলা আর ছাদেও আসে না আমার সাথে কথাও বলে না । কয়েকবার চেষ্টা করেও আমি এর অর্থ উদ্ধার করতে পারলাম না ।

মনে মনে খারাপই লাগা শুরু করলো । মেয়েটাকে আমি পছন্দ করতে শুরু করেছিলাম । আর আমার কেন জানি মনে হত যে মেয়েটাও আমাকে ঠিক ঠিক পছন্দ করতে শুরু করেছে । তাহলে মাঝখান দিয়ে সমস্যাটা কোথা থেকে হল কে জানে ।

দিন সাতেক পরে তিলা যখন আবার ছাদে আমি ওর কাছে জানতে চাইলাম কথাটা । প্রথমে এমন একটা ভাব করলো যে ও কিছু জানে না এবং আমাকে সে ঠিকমত চিনে না । কিন্তু পরে যখন আমি বললাম এই কদিনে ওর সাথে কথা না বলতে পেরে আমি অনেক কষ্টে থেকেছি তখন দেখলাম ওর মনটা একটু নমনীয় হয়ে এল । বলল
-আমারও খারাপ লেগেছে আপনার সাথে কথা না বলতে পেরে ।
-তাহলে কেন আসো নি বলবা ? আমি তো বুঝতেই পারছি না যে আমি করলাম না কি এমন ?
-আপনি খুব খারাপ !
-বুঝলাম খারাপ কিন্তু কি কারনে খারাপ বলছো সেটা তো বলবা ?
-আপনার কাছে ঐটা ছিল ।
-কোন টা ?
-আমি মুখে বলতে পারবো না ।
-মানে কি ? এই তুমি বলছো আমার কাছে ঐটা ছিল আবার বলছো মুখে বলতে পারবা না । এটা কেমন কথা বলতো ?

তিলা অনেক টা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-আপনার বালিশের কাছে ঐদিন আমি কনডমের প্যাকেট দেখেছি !

লাইন টা বলেই অন্য দিকে মাথা ঘুরিয়ে ফেলল । আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম তিলার দিকে ।
কি বলে এই মেয়ে !
কনডমের প্যাকেট !
এই মেয়ের মাথা ঠিক আছে তো ?

আমি প্রথমে কয়েক মুহুর্ত কোন কথাই বলতে পারলাম না । আসলে তিলার মুখ থেকে এমন কথা শুনতে পাবো কিংবা ও আমার নামে এমন কথা বলতে পারে এটা আমার ধারনার বাইরে ছিল ।
-কি বলছো যা তা ! মোটেই না !
আমি খুব বেশি আত্মবিশ্বাসের সাথে বললাম
-আমি দেখেছি ।
আমার থেকেও বেশি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলল তিলা !
-হতেই পারে না । তুমি এসো আমার সাথে ।
-আহা আপনি নিজে এখন সরিয়ে ফেলেছেন কি না আমি কিভাবে জানবো !
-তবুও তুমি এসো ।

এক প্রকার জোর করাই শুরু করলাম । তিলা আস্তে আস্তে আমার রুমের ভেতরে এল । সোজা চলে গেল আমার বালিশের কাছে । আমার মনে তখন হঠাৎ খানিকটা সন্দেহ জাগলো । কদিন আগে রাফি এসেছিলো আমার কাছে । ব্যাটার স্বভাব আবার ঐ দিকে একটু আছে । মানিব্যাগে সব সময় এই জিনিস রাখে । ওর কাছ থেকে কি পরলো । যদি পরেই থাকে তাহলে মনে হয় তিলার সাথে সম্পর্কটা এবার পুরোপুরি যাবে ।

তিলা আমার বিছানার কাছে যেতেই চিৎকার করে উঠলো ।
আমি মনে মনে বললাম, গেছে । সব গেল । আমার প্রেম টা শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল ।
তিলা হাতের ইশারা বালিশের দিকে দিয়ে বলল
-এই যে !
-কোথায় ?

কোথায় বললাম কিন্তু গলা দিয়ে স্বর বের হল না । কেমন যেন দুর্বল লাগলো নিজের কাছে ।
শালার বেটা রাফি ! তোকে আমি খুন করবো !! সত্যি খুন করবো ।
আমি তিলাকে পাশ কাটিয়ে চলে গেলাম বিছানার বালিশের কাছে ।

এই তো !
দেখা যাচ্ছে প্যাকেট টা।
ওহ না !
ধূসর রংয়ের !
সত্যিই দেখা যাচ্ছে !

রাফি তোকে আমি সত্যি সত্যিই খুন করে ফেলবো । আমার হাত থেকে তোকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না !

আমি কাঁপা হাতে প্যাকেট টা হাতে নিলাম । অনুভব করলাম আমার মাথাটা যেন কেমন করে ঘুরছে । একটু একটু আবছায়া দেখছি ! আর ভাবতে পারছি না । তিলা যে রাগ করেছে সেটার পেছনে যুক্তি-সংগত কারন আছে এবং এটার প্রমানও এখন ওর হাতে ।
না ওর হাতে না আমার হাতে । কোন ভাবে যদি আমি জাদু জানতাম ......।

আরে দাড়াও এটা কি ???
আরে এটা তো ......
ততক্ষনে তাকিয়ে দেখি তিলা নিজেও চিনতে পেরেছে ।

আরে এটা তো ম্যাগি নুডুলসের মশলার প্যাকেট !

রাতের বেলা আমি প্রায়ই নুডুলস রান্না করি । সেটার কোন একটা রয়ে গেছে ।

আমি আমার নিজের চোখকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারছিলাম না । মনে হচ্ছিলো আমার ফাঁসির আদেশ হয়ে গেছিলো আমাকে ঝুলাবে ঠিক তখনই রায় আসলো যে আমি নির্দোষ । আমি মুক্ত !

তাকিখে দেখি তিলা আমার দিকে কেমন লজ্জিত চোখে তাকিয়ে আছে ! নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে ।
-সরি ! আসলে আমি দুর থেকে চিনতে পারি নি । কিছু মনে করবেন না ।
-না না ঠিক আছে । ভুল মানুষেরই হতে পারে ।

আমার গলায় তখনও কেন জানি জোর নেই । কেমন যেন লাগছে ।
তিলা আর একটুও না দাড়িয়ে সোজা দৌড়ে বেরিয়ে গেল । লজ্জা পেয়েছে তবে আমি ঠিক ঠিক জানি ও আবার ফিরে আসবে । এবং এখন অবস্থা আমার অনুকুলে !

ও চলে যাওয়ার সাথে সাথেই আমার চোখে মুখে কেমন অন্ধকার নেমে এল । আমি বিছানায় এলিয়ে পড়লাম । আসলে এতো বড় শক তার উপর সেই শক থেকে বেঁচে যাওয়ার শখ, এই দুইটা বিপরীত ধর্মী শক আমার শরীরের উপর দিয়ে গেছে । পরপর ঘটনা ঘটার কারনে আমার শরীর সেটা সহ্য করতে পারে নি ।

যখন জ্ঞান ফেরে, তাকিয়ে দেখি তিলা আমার মাথায় পানি ঢালছে । আর একটু একটু যেন চোখ মুছছে । আমি আবারও চোখ বন্ধ করলাম ।
যাক, ম্যাগি নুডুলসের মশলার প্যাকেটটার কল্যানে আমার প্রেমটা হয়েই গেল মনে হচ্ছে !! :D
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৬ বিকাল ৩:৩৫
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×