somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ অন্ধকারের মেয়ে

১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ৩:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটাকে প্রথম যেদিন দেখলাম সেদিনই পছন্দ হয়ে গেল । যদিও বিদেশের মাটিতে সব কন্যাই সুন্দর লাগে আমার কাছে তবুও এই মেয়েটাকে একটু বেশিই ভাল লাগলো আমার । ভাল লাগার অন্যতম কারন টা হচ্ছে মেয়েটাও ঠিক আমার মতই ।

আমার মত বলতে মেয়েটার পারিপার্শিক অবস্থা সম্ভবত আমার মতই নয়তো এই এলাকায় সে থাকতো না । আমি যতদুর জানি এই এলাকায় আমেরিকার সব থেকে আরাম প্রিয় ভদ্র গরীবেরা থাকে । অর্থাৎ যারা একই এপার্টমেন্টে দুই চারজন থাকতে পছন্দ করে না আবার পকেটে খুব বেশি টাকা পয়সাও নেই তেমন গরীবেরা । এলাকাটাকে একেবারে গ্রাম বলা যাবে তবে আবার শহরও বলা যাবে না । আমাদের দেশের মফশ্বল শহরের মত আর কি ! এখানে বেশি ভাগই অন্য দেশ থেকে আসা কলেজ ভার্সিটির স্টুডেন্ট আর কিছু আমেরিকান বৃদ্ধরা থাকে । নিরিবিলি শান্তিতে । শান্ত শিষ্টই বলা চলে এলাকাকে যদিও আমার ক্যাম্পাস থেকে এই এলাকাটা বেশ দুরে কিন্তু কি আর করা ।

মেয়েটা কে পছন্দ করার আরেকটা কারন হচ্ছে মেয়েটার একটা বিড়াল আছে । ধবধবে সাদা রংয়ের । এই বিলাইটার কারনেই বলা চলে মেয়েটাকে প্রথম দেখি আমি । আমার বাসার ঠিক উল্টাদিকে একটা বাসা থাকে সে । মাঝ দিয়ে একটা কার গাড়ি যাওয়ার মত রাস্তা আছে ।

একদিন ক্লাসে যাই নি । বাসায় বসেই টিভি দেখছি, এমন সময় দেখি একটা বিড়াল মিউ মিউ করছে । তাকিয়ে দেখি আমার জানলা দিয়ে একটা সাদা বিড়াল ঢুকে পড়েছে । এদিক ওদিক দেখছে । আমি হাত দিয়ে ডাক দিতেই দেখলাম আমার দিকে দৌড়ে চলে এল । কারো পোষা বেড়াল নয়তো এমন ভাবে কাছে আসতো না । আমি কোলে নিয়ে কিছুটা সময় আদর করতে না করতেই আমার ঘরের দরজায় টোকা পড়লো ।
আমি যখন বাসায় থাকি তখন দরজাটা খোলায় থাকে । বললাম
খোলা আছে ।
আমি টিভি স্ক্রিন থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই মেয়েটা ঘরে ঢুকলো । কালো রংয়ের একটা হাফ প্যান্ট পরা সাথে কালো টপস । সোনালী চুল গুলো পেছন দিয়ে শক্ত করে বাধা । চোখে একটা কালো ফ্রেমের চশমা ।
-হাই !
আমি তখন অল্প কদিন গিয়েছি । ঠিক ঠাক মত গুছিয়ে ইংরেজিও বলতে পারি না । বুকের মধ্যে কেমন যেন করে । আর মেয়ে হলে তো কথাই নেই ।
আমি কোন রকমে বললাম
-হ্যালো ।
মেয়েটা এবার হাসলো একটু । লজ্জা মিশ্রিত হাসি । তারপর বলল
-আসলে আমার পেট টা তোমার বাসায় চলে এসেছে ।
আমি হাত দিয়ে সাদা বেড়াল টা দেখালাম ।
-এটা ?
-হ্যা !
-ভেরি সুইট বিড়াল ।
মেয়েটা আবারও হাসলো ।
-সরি তোমাকে বিরক্ত করার জন্য ।
-না না ঠিক আছে ।
মেয়েটা আমার ঘরেরভেতরে এসে আমার হাত থেকে বেড়াল টা নিলো ।
-থেঙ্কিউ ।
-নো প্রব্লেম ।
মেয়েটা বিড়াল নেওয়ার পরেও সেখান থেকে চলে গেল না । কিছু যেন বলবে ? কিন্তু ঠিকমত বলতে পারছে না । আমি বললাম
-কিছু বলবে ?
-ডু ইউ নো মি ?

আমি চেহারাটা আরেকটু ভাল করে দেখার চেষ্টা করলাম । কিন্তু পরিচিত মনে হল না । অবশ্য সব সাদা চামড়ার মেয়েই আমার কাছে কেমন জানি একই রকম লাগে । চাইনিজদের মত । আমি মনে মনে সাজিয়ে ইংরেজিতে বললাম
-আসলে তোমাদের দেশের সব মেয়েদের কেই আমার একই রকম মনে হয় । তবে তোমাকে এর আগে দেখেছি বলে মনে পড়ে না ।
এই কথা শুনে মেয়েটা যেন একটু স্বস্থির নিঃশ্বাস ফেলল । তারপর বলল
-হাই । আম লুসি । লুসি রোওগ । তোমার বাসার ঠিক উল্টা দিকে থাকি ।
-হ্যালো ! নাইস টু মিট ইউ । আমি তপু !
-টপু ?
-না টপু না, তপু ! ত-ত-ত
তারপর মনে হল এই চেষ্টা করে লাভ নেই । এখানে আমার যতগুলো বিদেশীর সাথে পরিচয় হয়েছে তারা সবাই আমাকে টপু বলেই ডাকে । আমাদের দেশে ট আর ত আছে এদের দেশে কেবল টি ই আছে অন্য কিছু নেই ।
আমি হেসে বললাম
-টুপ ।
মেয়েটা বলল
-নাইস টু মিট ইউ টু !

মেয়েটা আর কিছু না বলে চলে গেল । তবে আমার কাছে ব্যাপার টা একটু অন্য রকম লাগলো । এই মেয়োট হঠাৎ করেই আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলার মানে কি ? আমি বেশি কিছু চিন্তা করলাম না । এরপর আরও কয়েকবার মেয়েটার সাথে দেখা হল । ক্লাসে যাওয়ার সময় কিংবা কাজ থেকে ফেরার সময় । মেয়েটা আমাকে দেখে হাসতো হাট নাড়তো । আমাকে মনে হল মেয়েটা সম্ভবত একাই থাকে এখানে । এই বয়সের একটা মেয়ে এখানে একা একা থাকে ।


তবে লুসির সাথে আমার ভাল ভাবে পরিচয় হল আরও কিছুদিন পরে । ক্লাস শেষ করে আমাকে আবার একটা পার্ট টাইম চাকরী করতে হয় নিজের খরচ ভাল ভাবে চালানোর জন্য, একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে । বাসে করে ফিরতে ফিরতে বেশ রাতই হয় কোন কোন দিন ।
সেদিনও একটু রাত হয়ে গেছিলো ।

বাস থেকে নামার পরেও আরও কিছুটা পথ আমাকে হাটতে হয় । হাটতে ছিলাম বাসার দিকে তখনই দেখলাম কয়েকটা ছেলে একটা মেয়েকে টিজ করছে । মেয়েটা রাস্তার এই পাশে ছেলে গুলো তার পাশে পাশে । আরও একটু কাছে যেতেই ছেলে গুলোর কথা শুনতে পেলাম । কন্ঠ শুনে পিচ্চিই মনে হল । অন্তত আমার থেকে বয়সে তো ছোট হবেই । বিশেষ করে মেয়েটাকে বিচ আর হোর ডাকছে । মেয়েটা কিছু না শুনে হাটার চেষ্টা করছে । মেয়েটা আমার পরিচিত মনে হল । আর সামনে যেতেই বুঝতে পারলাম মেয়েটা লুসি । যদিও আমার ঐ চার পাঁচ জনের কাছে মার খাওয়ার একটা সম্ভাবনা ছিল তবুও আমি গলা খায়ের দিলাম । ছেলে গুলোও দাড়িয়ে গেল এমন কি মেয়েটাও ।
একটা ছেলে বলল
-নিজের চরকায় তেল দাও গে ।
আমি নিজের ফোন বের করে আগে বাংলা আচ্ছা করে একটা গালী দিলাম । গাদি শুনে ওরা আরও একটু থমকে গেল ! আমি বললাম
-পুলিশে কল করবো । করবো ?
-হেই ম্যান বলেছি না নিজের চরকার .....
এই কথা শেষ করার আগেই আমি ফোনে বোতাম টিপে কানের কাছে নিলাম
-নাইন ওয়ান ওয়ান.....

ছেলে গুলো এবার আর দেরি না করে সোজা দৌড় দিলো উল্টা দিকে । আসলে আমি এমনি ফোনের ডায়েল টিপে কানে নিয়েছি । সত্যি সত্যি কল করি নি । দেখলাম লুসি আমার দিকে এগিয়ে এল । ল্যাম্পপোস্টের আলোতে মেয়েটার চেহারায় একটা কৃতজ্ঞতার ভাব ফুটে উঠতে দেখলাম ।
-থেঙ্কিউ ।
-নো প্রব্লেম । তা তুমি এখন আসো বাসায় ? এই রাতের বেলা ?
-এই সময়ই হয়ে যায় প্রায় । প্রায়ই ওরা এরকম করে ।
-তাই ? কম্পেইন কর নি ।
-আমার কম্প্লেইণ কেউ শুনবে না ।
-কেন ?
আমি খানিকটা অবাক হয়েই জানতে চাইলাম । শুনবে না কেন ঠিক মাথায় ঢুকলো না ! আমি আবারও বললাম
-তাহলে এক কাজ কর, আমিও এই সময়ে বাসায় আসি । তুমি কোথায় জব কর ?
মেয়েটা নাম বলল । যদিও আমি খুব বেশি ভাল চিনি না । শেষে আমি ওকে বললাম আমি কোথায় জব করি । লুসি চিনতে পারলো । বলল
-ওটা থেকে আমার কাজের জায়গা ১০ মিনিটের রাস্তা ।
-তাহলে যেদিন বেশি রাত হবে আমাকে একটা ফোন দিবে । আমরা এক সাথে আসতে পারি কাজ থেকে !
-সত্যি তুমি আসবে আমার সাথে ?
-হ্যা । সমস্যা কি ? তা ছাড়া পাশাপাশি থাকি, যদি এক সাথে আসলে সমস্যা কি ! সফর সঙ্গি পেলে তো ভালই হয় ।
আমি এই কথাটা বলার সাথে সাথেই মেয়েটা একটা অদ্ভুদ রিয়েকশন দেখালো যা আমি ঠিক আশা করি নি । মেয়েটার চোখে একটা আনন্দের আভা দেখতে পেলাম এবং সেটা অশ্রুতে রূপান্তরিত হল সাথে সাথেই । এক সাথে আসতে চেয়েছি এই জন্য এতো খুশির কারন আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না ।
লুসি আবারও বলল
-থ্যাঙ্কিউ । আমি মোটামুটি ভুলতে বসেছি এসব !
-মানে ! এসব মানে কোন সব ?
-না কিছু না । চল বাসা দিকে যাওয়া যাক !
আমি আর লুসি পাশাপাশি হাটতে লাগলাম । এই নির্জন রাস্তায় লুসির পাশা পাশি হাটতে আমার ভালই লাগছি তবে মনের ভেতরে একটা কেমন অনুভুতি হচ্ছিলো ।


সেদিন মেয়েটা হঠাৎ করেই বলল আমি তাকে চিনি কি না আজকে আবার এক সাথে আসতে চাওয়াতে এতো খুশি হল ।
তারপর থেকে মাঝে মাঝেই লুসির সাথে কাজ থেকে বাসা আসতে লাগলাম । এবং একটা ব্যাপার লক্ষ্য করতে লাগলাম সপ্তাহে সেটা একদিন দুইদিন থেকে শুরু করে এক পর্যায়ে গিয়ে সপ্তাহে ছয় দিনই হতে শুরু করলো । একটা দিন আমি কাজে যাই না ।
কাজ থেকে আসা বাদ দিয়েও লুসি আমার বাসায় আসতে লাগলো নিয়মিত । প্রথম প্রথম যখন আসতো তখন ওকে একটু যেন সংকুচিত লাগতো । আমার কেবল মনে হল যে হয়তো প্রথম প্রথম হচ্ছে বলে এমন মনে হচ্ছে কিন্তু এর কিছুদিন পরেই সেটাও কেটে গেল একেবারে । লুসি আমার সাথে খুব ভাল ভাবেই মিশে গেল ।
একদিন আমাকে এসে বলল
-টপু ?
-হুম ।
-তুমি তোমার ফেসবুকের স্টাটাসে এসব কি লিখো ? তোমাদের ভাষা ?
-হুম ! বাংলা ।
-আমি না গুগল ট্রান্সলেটর দিয়ে দেখেছি কিছু বুঝতে পারি না ।
আমি হেসে ফেললাম ।
-বুঝতে পারবে না । গুগল ট্রান্সলেট ভয়াভহ অনুবাদ করে । তুমি কোনটা জানতে চাও আমাকে বল আমি বুঝিয়ে দিচ্ছি ।
-সব কিছু । আমি সব গুলোও জানতে চাই । আসলে তুমি যা লিখো সব জানতে ইচ্ছে করে .....
লুসি কথাটা এমন ভাবে বলল যে আমি প্রথমে কিছু সময় কোন কথাই বলতে পারলাম না । তখনই আমার কেন জানি মনে এই মেয়ে আমার প্রেমে পড়েছে । সত্যি কারের প্রেমে পড়েছে । আমি কি বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারলাম না ।
আমাদের মেলা মেশাটা আমাদের চারিপাশের আরও যে কজন থাকে তারা যেন ভাল চোখে দেখলো না । আমাদের নিয়ে যে গসিপ হচ্ছে সেটা ঠিক ঠিক কানে আসতো । তবে আমি সেদিকে খুব বেশি কান দিতাম না । ক্লাস কাজ আর লুসিকে নিয়ে বেশ সময় কেটে যাচ্ছিলো । লুসিও ঠিক একই কাজ করতো যদিও ওর নাকি গ্রাজুয়েশন আগেই শেষ হয়ে গিয়েছিলো । হতে পারে তবে আমার ওকে দেখে মনে হত না ।
আমার যেদিন কাজে যেতাম না সেদিন লুসির সাথে কাছেই একটা নদীর পাড় আছে সেখানে যেতাম । সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকতাম । লুসি অনেক কথা বলতো । আমিও বলতাম অনেক কথা । ফেরার পথে যখন কলোনীর ভেতরে আসতাম এদিক ওদিক থেকে কিছু কথা কানে আসতো । সেগুলো যে আমাকে আর ওকে নিয়ে সেটা বুঝতে কষ্ট হত না । পাড়ার কিছু ছেলে সব সময়ই থাকতো এসব করার জন্য । আমাদের দেশে যেমন আছে ।

আমি এসবে কিছু মনে করতাম না তবে লুসি বেশ মন খারাপ করতো । আমি ওকে শান্ত হতে বলতাম । মাঝে মাঝে আমি বেশ খানিকটা অবাক হতাম এই ভেবে যে ওরা এতো মেয়ে রেখে লুসির পেছনে কেন লেগেছে । কিন্তু কোন উত্তর খুজে পেতাম না । কিন্তু তখনও আরও কিছু বাকি ছিল আমার জানার জন্য ।
একদিন কাজের ভেতরেই আমার বস আমাকে ডেকে বলল
-তোমার সাথে একটা মেয়েকে দেখি প্রায় দোকানের বাইরে, কে মেয়েটা ?
-আমার প্রতিবেশী । একটু দুরে কাজ কজকরে । রাত হয়ে যায় তাই বাসায় যায় আমার সাথে ।
-মেয়েটাকে চিনো তুমি ?
-চিনবো না কেন ?
-না মানে মেয়েটা সম্পর্কে তুমি কি জানো ?
আমি কিছু বলতে গিয়েই থেমে গেলাম । আসলেই লুসি সম্পর্কে আমি কেবল ওর নাম ছাড়া আর তেমন কিছুই জানি না । আমি বললাম
-আসলে তেমন কিছুই না । পাশা পশি থাকি তো তাই.....।
-তুমি কি জানো মেয়েটা একজন পর্ন স্টার ?
আমার প্রথমে মনে হল আমি ঠিক মত শুনতে পেলাম না । আসলে আমার বস কি বলল সেটা আমার কানে ঢোকে নি । আমি আবার বললাম
-কি বললে ?
-পর্ন তারকা ? তবে এখন ছেড়ে দিয়েছে । এক্স পর্নস্টার বলতে পারো । ১৮ তে শুরু করেছিলো ২০ এ ছেড়ে । গত তিন বছর ধরে এখানে ওখানে কাজ করে । মেয়েটার ফ্যামিলি বেশ ভাল ছিল তবে এখন ফ্যামিলির সাথে কোন যোগাযোগ নেই । রেজি রোওগ নাম ! গুগলে সার্চ দিও পেয়ে যাবে !
বস আমাকে আর কিছু বলল না । আমার মাথার ভেতরে আর কিছু আসছিলো না । কেমন জানি লাগলো । আসলেই আমি এটা কোন ভাবেই কল্পনা করি নি । আমার কাছে এবার লুসির আচরনের কিছুটা ব্যাখ্যা পেলাম । পেলাম সেই সমস্ত ছেলে গুলোর আচরনের কারন । প্রতিবেশিদের গসিপের কারন ।
ঐদিন একটু আগে আগেই বাসায় চলে এলাম । জানি লুসি একা একা আসবে । বাসায় এসে নেটে গিয়ে সার্চ দিতেই এমন ভয়ানক কিছু এল আমি চোখ সরিয়ে নিলাম । ইমেজ গুলো হাইড করে কিছু নিউজ পড়তে লাগলাম । ওর সম্পর্কে ওর ফ্যামিলি সম্পর্কে । যা যা আছে সব কিছু ।

রাতে যখন দরজায় কড়া নড়লো আমার বুঝতে কষ্ট হল না যে কে এসেছে । দরজা খুলে দেখি লুসি দাড়িয়ে । আমার চেহারার দিকে তাকিয়ে বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে । আমি ওকে রেখে ঘরে ঢুকলাম ও পেছন পেছনই ঢুকলো ।

আমি ল্যাপ্টপের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ওর সম্পর্কে নিউজ গুলো দেখছি । আমার মাথায় আস্তে আস্তে সব আসতে লাগলো । ও যখন মাঝে মাঝে আমার সাথে বের হত তখন কেন সব কিছু ঢেকে ঢুকে চলতো । এমন ভাবে মাথায় ক্যাপ পড়ত যেন ওর চেহারাটা ঠিক মত দেখা না যায় । আমার মাথায় এটা ঢুকতো না যেখানে আমেরিকান মেয়েরা নিজেদের সৌন্দর্য্য দেখা সদা প্রস্তুত দেখানে লুসি এমন ভাবে লুকিয়ে কেন রাখছে ।এখন বুঝতে পারি এটা ও করতো যাতে করে মানুষ ওকে চিনে না ফেলে ।
লুসি কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে তারপর বলল
-তুমি জেনে গেছ তাই না ?
আমি মুখ তুলে বললাম
-তোমার কি এটা আমাকে বলা দরকার ছিল না ?
-হুম ছিল, তবে সাহস করতে পারি নি । একে একে ফ্যামিলি বন্ধু-বান্ধব সবাই আমার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে তো আসে পাশের মানুষ গুলোও আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলে যে.....

তারপর অনেকক্ষন কেউ কোন কথা বললাম না । আমি ভাবছি কি বলব । একবার মনে হচ্ছে এই মেয়েটার সাথে আর যোগাযোগ না রাখারই দরকার অন্য দিকে আবার মনে হচ্ছে মেয়েটা আগে ওমন ছিল এখন আর আর এসব করে না তাহলে মেয়েটার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করার কোন মানে নেই । এমন যখন দোটানায় রয়েছি তখন লুসি আবার বলল
-তো ? তুমিও কি আমার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিবে ? যদি দাও তাহলে আমাকে এখনও বলে দাও আমি আর তোমার সামনে আসবো না ।

আমার নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগলো লুসির কথা শুনে । আমার আসলেই ওরকম ভাবে রিয়্যাকশন দেখানোটা ঠিক হয় না । ওর অতীতটা এমন কোন ভাল কিছু নয় যেটা সবাইকে বলে বেড়াতে হবে । লুকানোর পেছনে কারনটা ছিল ।
আমি বললাম
-আরে আমি কি তাই বলেছি ?
-তোমার চোখ বলছে । এই দৃষ্টি আমার চেনা !
-তাই ?
-হ্যা !
আমি লুসির দিকে এগিয়ে গিয়ে একেবারে ওর চোখের দিকে চোখ রেখে বললাম
-এবার বল ? এই দৃষ্টি তোমার চেনা ?
কিছুটা সময় লুসি আমার দিকে কেবল তাকিয়ে রইলো । আমি ওর হাতটা ধরে বললাম
-আমার কিছুটা খারাপ লেগেছে সত্য কিন্তু আমি অন্যদের মত আমি করবো না । যখন তুমি একটা খারাপ কাজ থেকে নিজেকে বের করে এনেছো আমি থাকবো তোমার পাশে । প্রমিজ করলাম ।

লুসি তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ করেই আমার জড়িয়ে ধরলো শক্ত করে । একটু পরেই অনুভব করলাম ও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে । আশ্চার্য্য এই মেয়েটাও দেখি আমাদের বাঙ্গালী মেয়েদের মত ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদে । আমি মেয়েটার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম । লুসির জন্য কেন জানি খুব বেশি মায়া লাগলো । প্রিয় মানুষ যখন ছেড়ে চলে যায় পুরো পুরি ইগ্নোর করে চলে যায় তখন কেমন লাগে সেটা আমি জানি ।

লুসি যখন নিজেকে আমার থেকে আলাদা করলো ওর চোখে তখনও পানি লেগে আছে তবে সেটা সে মোছার চেষ্টা করলো না । আমি নিজের হাতে সেটা মুছে দিলাম । লুসি আমাকে বলল
-আমি তোমাকে একটা জিনিস দেখাবো বলে এসেছিলাম
-কি ?
-এই দেখো
এই বলে লুসি ওর মোবাইল বের করলো তারপর সেটার মেসেজ কি প্যাডে গিয়ে কিছু টেপাটেপি করতে লাগলো । আমি অবাক হয়ে দেখলাম ও পরিস্কার বাংলায় লিখলো

"তপু আমার বন্ধু । আমি ওকে খুব পছন্দ করি"

-তুমি বাংলা কোথা থেকে শিখলে ?
-কোর্স করেছি ! ডাউন চাউনে করায় !
-সত্যি ! কেন ?
-তুমি তো ফেসবুকে সব বাংলায় লেখ । সেগুলো বোঝার জন্য ।

মেয়েটা আসলেই আমাকে অবাক করে দিয়েছে । সেদিনও আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম যেদিন জানতে পারলাম যে লুসি রাতের বেলা কেবল আমার সাথে বাসায় আসবে বলে প্রায় ৩৫ মিনিটের বাস জার্নি করে আমার দোকানের সামনে এসে হাজির হয় !

মেয়েদের আচরন আসলেই বেশ অদ্ভুদ । যাদের কে একবার পছন্দ করে ফেলে তাদের জন্য সব কিছু করতে পারে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৩৮
২৩টি মন্তব্য ২২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×