somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ গ্যাড়াকলে পতন :D

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ৯:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



-মেয়ে কি করে ?

বাবা আমার দিকে এমন ভাবে তাকালো যেন জাতিসংঘের ত্রিদেশীও গুরুত্বপূর্ন মিটিংয়ে বলিউডের মুভি নিয়ে কথা বলে ফেলেছি । তিনি পরোটা মুখে দিতে দিতে বলল
-মেয়ে কি করে তোমাকে তো বললাম-ই । এনএসইউতে আর্কিটেকচারে পড়ছে ।
-তার মানে মেয়ে বেকার ?

বাবা চোখ গরম করে আমার দিকে তাকালেন । আমি বিশেষ পাত্তা দিলাম না । এটা বাবার অজন্ম স্বভাব । কারো কোন কথা পছন্দ না হলেই তিনি চোখ গরম করে তাকান ! আগে বেশ ভয় পেতাম তবে এখন এই চোখ গরম পর্যন্তই । বাবা আবারও বললেন
-বেকার মানে তুমি কি বলতে চাচ্ছো ? তোমার মাকে আমি যখন বিয়ে করি তখন কি সে স্বকার ছিল নাকি ?
-বাবা, বিয়েটা তুমি করতে যাচ্ছো না, আমি করতে যাচ্ছি । আমার কিছু বিষয় আছে সেটা না মিললে আমি বিয়ে করবো না ।
এবার বাবা চিৎকার করে উঠলো ।
-বিয়ে করবি না মানে, তুই করবে তোর ১৪ গোষ্ঠী করবে !
বাবার মেজাজ সব সময়ই একটু চড়া থাকে । এমনিতে আমাকে তুমি করে বললেই রেগে গেলে আমাকে তুই করে বলে । আমি দুটোতেই অভ্যস্ত ।
বাবার চিৎকার চেঁচামিচি শুনে মা এগিয়ে এল সাথে সাথেই । আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল
-কি শুরু করলে তোমরা ?
বাবা বিন্দু মাত্র শান্ত না হয়ে বলল
-তোমার ছেলেকে বলে দাও । শফিকের মেয়ের সাথেই আমি ওকে বিয়ে দেব । যদি এই ঘরে থাকতে হয় তাহলে ওকে ঐ মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে । নয়তো .....
আমি মায়ের দিকে শান্ত কন্ঠে বললাম
-আমি বিয়ে করবো না, সেই কথা তো বলি নি । তবে কোন বেকার মেয়েকে বিয়ে করবো না ।
বাবা আবারও বলল
-কেন? তুই কি বেতন কম পাস ? তোর মাকে যখন বিয়ে করেছিলাম আমি তখন ১২০০ টাকা বেতন পেতাম । কই আমাদের তো সমস্যা হয় নি । বউয়ের টাকায় চলতে হবে কেন তোকে ?
-বাবা কথা সেটা না যে সে কত টাকা বেতন পায় । কথা হচ্ছে আমি কোন বেকার মেয়েকে বিয়ে করবো না । কোন মেয়ে যেমন বেকার ছেলেকে বিয়ে করতে চায় না আমিও কোন বেকার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই না ।
-তোর চিন্তা করতে হবে না । দরকার হলে তোমার বউয়ের খরচ আমি দেব । তোকে পালছি তোর বউকেও পালার মত ক্ষমতা আমার আছে ।

বাবা অবশ্য সত্যিই বলেছি । আমি যদিও চাকরি করি । বেতনও খারাপ না তবে আমাকে কিছুই দিতে হয় না । নিজের টাকা নিজের খরচ করি । বাবার সাফ কথা, যতদিন তিনি আছেন আমাকে সংসারের জন্য কিছু করতে হবে না । তিনি যাওয়ার পরে কেবল মাকে দেখে রাখতে হবে । এর বেশি কিছু তিনি আমার কাছে চান না ।
আমি আর দাড়ালাম না । আমার নাস্তা খাওয়া শেষ । নিজের ঘরের দিকে যেতে যেতেই বাবার চিৎকার চেঁচামিচি শুনতে পেলাম । বাবা মাকে বলছে
-আমি কোন কথা শুনতে চাই না । ওকে শফিকের মেয়েকেই বিয়ে করতে হবে । আমি ওকে কথা দিয়েছি । তুমি তোমার ছেলেকে বলে দিও !

আসলে বেশ কদিন থেকেই বাবা মা আমাকে বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা রয়েছে । তাও আবার অন্য কোন মেয়ের সাথে নয়, বাবার কোন এক বন্ধুর মেয়ের সাথে । আগে নাকি একই গ্রামে থাকতো । তারপর অনেক দিন দেখা সাক্ষাত নেই । পরে খোজ পেয়েছে কয়েক মাস আগে । আমাদের বাসাতে কয়েকবার এসেছে । একবার নাকি ঐ মেয়েও এসেছে । আমি অবশ্য একবারও বাসায় ছিলাম না । মায়ের নাকি খুব পছন্দ হয়েছে মেয়েটাকে, বাবারও । বাবা প্রস্তাব দেওয়াতে বাবার ঐ বন্ধু নাকি রাজিও হয়ে গেছে সাথে সাথেই । মেয়েরও নাকি কোন আপত্তি নাই ।
কিন্তু আমার বেশ আপত্তি আছে । ছোট বেলা থেকেই আমার কেন জানি বেকার মেয়েদের একদম দুই চোক্ষে দেখতে ইচ্ছে করে না । কিন্তু চারিপাশে এতো এতো বেকার মেয়ে যে তখনই ঠিক করে নিয়েছিলাম কোন স্বাবলম্বী মেয়ে ছাড়া জীবনে বিয়েই করবো না । আমি ঐ মেয়েকে কিছুতেই বিয়ে করতে চাই না । যত সুন্দরীই হোক না কেন ? আমি কোন বেকার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই না !

অবশ্য আরেকটা কারন আছে । জেরিনকে আমার মনে ধরেছে বেশ, একদম আমার মনের মত একটা মেয়ে । নিজের পায়ে দাড়ানো একটা মেয়ে । আমি যে অফিসে কাজ করি সেই অফিসেই মাস খানেক হল জয়েন করেছে ।
অবশ্য মেয়েটার মনের কথা কি আমি এখনও জানি না । জানার কথাও না । সবে মাত্র মেয়েটা জয়েন করেছে । খুব বেশি কথা বলার সময় পেলাম কোথায় ? অফিসের অন্য সবার থেকে মেয়েটা অবশ্য আমার সাথে একটু যেন বেশি মেলামেশা করে । যদিও এর অন্যতম কারন হচ্ছে আমাদের কাজ করতে হয় একই সাথে ।


অফিসে গিয়ে দেখি জেরিন আগেই এসে বসে আছে । আমাকে দেখে একটা হাসি দিল । প্রতি উত্তরে আমি নিজেো হাসি দিলাম । প্রতিদিন এভাবেই আমার কাজ শুরু হয় ।
আজকে মনে হল ওকে কথাটা বলা দরকার । কারন আমি মুখে যাই বলি না কেন বাবার বিরুদ্ধে খুব বেশি সময় টিকে থাকতে পারবো কি না আমি জানি । বাবা ঠিক ঠিকই আমাকে তার বন্ধুর মেয়ের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবেন । আমি ঠেকাতে পারবো না । কিন্তু জেরিনকে যদি একবার বিয়ে করে ফেলতে পারি তাহলে বাবা আর বেশি চিৎকার চেঁচামিচি করতে পারবেন না ।
অফিস শেষে জেরিন কে বললাম একটু কথা আছে । ও যেন সামনের রেস্টুরেন্টে একটু অপেক্ষা করে । আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল
-এখানে বলা যাবে না ?
-না । ওখানেই যাওয়া লাগবে !
-সিরিয়াস কিছু ?
-হুম !
-আচ্ছা, আমি আসছি !
আমি আরও খানিক পরে গিয়ে হাজির হলাম
-বলেন আপনার সিরিয়াস কথা !
-ইয়ে মানে এখনই ? আগে একটু নাস্তা করা যাক ।
-নাস্তার সময় নাই । আমাকে আবার একজনের বাসায় যেতে হবে ।
-কার বাসায় ?
-আছে । আপনি চিনবেন না !
-কোন পাত্র পক্ষকে দেখতে না তো !
জেরিন হেসে ফেলল ।
-না তেমন কিছু না । তবে একটু কাজ আছে !
-আসলে আমি একটা কথা জানতে চাচ্ছিলাম । তোমার কি খুব শীঘ্রই বিয়ে টিয়ে করার কোন প্লান আছে ?
জেরিন মুখে হাসি নিয়েই বলল
-হঠাৎ ? এই কথা কেন জানতে চাইছেন !
-প্লিজ বল !
-না তো । এখন তো ক্যারিয়ার নিয়ে সামনে এগুনোর সময় । বিয়ে করার সময় কার আছে বলেন !
-মানে যদি এমন কাউকে বিয়ে করো যে তোমার ক্যারিয়ারের পথে কোন বাঁধা হবে না । তখন ?

জেরিন অনেক টা সময় আমার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো । মেয়েরা জানি ছেলেদের না বলা কথা সহজেই বুঝে ফেলে । জেরিনও যে বুঝে ফেলেছে সেটা বুঝতে আমার কষ্ট হল না । জেরিন অন্য দিকে তাকালো কিছুটা সময় । আমার মনে হল মেয়েটা আমাকে এখন ধমক দেবে । তারপর বলবে ছিঃ লাবিব ভাই । আমি আপনাকে বড় ভাইয়ের মত দেখতাম আর আপনি কি না আমাকে ....

আমি মোটামুটি এটা শোনার জন্যই অপেক্ষা করে রইলাম । জেরিনের দিকে তাকাতেই দেখি ও শান্ত চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । তারপর বলল
-আপনি আমাকে বিয়ে করতে চান ?
-হুম !
হুম বলেই চুপ করে রইলাম । আর কি বলবো খুজে পেলাম না । মনে হল আরও কিছু বলা উচিৎ । তারপর বললাম
-আসলে বাবা এক প্রকার জোর করেই আমাকে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে । কিন্তু বাবার পছন্দের মেয়েকে আমি বিয়ে করতে চাই না ।
-কেন ? মেয়ে দেখতে সুন্দর না ?
-আমি মেয়েকে দেখি নি ।
-দেখুন আগে । হয়তো আমার থেকেই সুন্দর হবে দেখতে ।
-হোক । আই ডোন্ট কেয়ার ! আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই !
-কেন ? আপনার সাথে আমার ঠিক প্রেম নেই । আবার আপনি প্রথম দেখাতে আমার প্রেমেও পড়েন নি আমি যতদুর জানি । তাহলে ?
-আসলে, আমি ছোট বেলা থেকেই স্বাবলম্বী মেয়েদের কে বেশ পছন্দ করি । যারা নিজেদের পায়ে দাড়ানো, অন্যের উপর নির্ভরশীল নয় !
-কেন ঐ মেয়ে বেকার নাকি ?
-হুম ! কেবল পড়ছে । এনএসইউতে ।
-আরে তাহলে তো ভাল । আমিও তো এনএসইউ থেকে পড়েছি । মেয়েটা নিশ্চয়ই পড়া লেখা শেষ করে কিছু করবে ।
-করুক ।
-তাহলে সমস্যা কি ! ওকেই বিয়ে করে ফেলুন । আপনার বাবার পছন্দ বলে কথা ।

আমি কিছুটা সময় চুপ করে থেকে জেরিনের দিকে তাকিয়ে রইলাম । মেয়েটা যেন খুব মজা পাচ্ছে আমার কথা শুনে । আমি বললাম
-আচ্ছা মনে কর, একটা মেয়েকে একটা ছেলে বিয়ে করতে চায় । ছেলেটা ভার্সিটিতে পড়ে তবে কদিন পর পড়া লেখা শেষ হবে । সেই মেয়ে কি ছেলেটাকে রাজি হবে ?
জেরিন একটু চুপ থেকে বলল
-না ঠিক । ছেলেটা যেহেতু কিছু করে না তাই রাজি হবে না সম্ভবত ।
-কিন্তু ছেলেটা কিন্তু সামনে কিছু করবে । নিশ্চয়ই করবে । কিন্তু মেয়েরা তাকে বিয়ে করবে না । মেয়েরা করবে কার চাকরি আছে সেটা দেখে । এমন কি ছেলেটা যদি তার প্রেমিকও হয় তবুও করবে না । যতক্ষন না ছেলেটা কিছু না করে । তাহলে আমি কেন করবো !
জেরিন হেসে ফেললো । তারপর বলল
-লাবিব ভাই আপনি এমন হাসির কথা কেন বলছেন ? আমাদের দেশে এমন ভাবে ভাবা হয় না ।
-না হোক । আমি ভাবি এমন ভাবেই । এই কথাই চিন্তা কর, এখন যদি আমি ঠিক ঠাক মত চাকরি না করতাম তাহলে ঐ মেয়ে কি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হত । কেবল ঐ মেয়ে বলছি কেন অন্য কোন মেয়ে কি রাজি হত ? তাহলে আমি কেন হব ?

জেরিন আরও কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলো আমার দিকে । তারপর বলল
-আচ্ছা আমি কিছু টা সময় ভাবি । বাসায় বলে দেখি তারা কি বলে । এভাবে তো চাইলেই সব কিছু হয় না !

আমি জানি চাইলেই সব কিছু হয়না । এখানে আমার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কিছু করারও নাই । জেরিন যা বলবে সেটার উপর আমার পরের জীবন অপেক্ষা করছে । তবে আশার কথা হচ্ছে মেয়েটা আমাকে একেবারে রিজেক্ট করে দেয় নি ।

কিন্তু বাসায় গিয়ে নতুন বিপদের কথা শুনতে পেলাম । বাবা নাকি সত্যি সত্যিই আমার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছেন । অনেকটা জোর করেই আমাকে বিয়ে দেবেন । মাকে বলেছেন আমাকে যেন এসবের কোন কথাই জানানো না হয় । কেবল আগামীকাল আমি যখন অফিস থেকে বাসায় আসবো তখনই নাকি আমাকে জোর করেই বিয়ে দেওয়া হবে । আমার পালানোর পথ সব বন্ধ করে দেবেন ।
আমার রাতে ঘুম হল না । কি করবো না করবো । শেষে ঠিক করলাম যে কালকে আবারও জেরিনকে বলল কথা গুলো । ও যদি রাজি না হয় তাহলে আগামীকাল আর বাসায় আসবো না । সোজা যেদিকে দুচোখ যায় সেদিকে চলে যাবো ।
পরদিন অফিসে বলতে গেলে পুরোটাই আমার দুশ্চিন্তে কাটলো । জেরিন নিজের কাজে বেশ ব্যস্ত । তবে যখন লাঞ্চ আওয়ারে ওকে বিয়ের কথা বললাম তখন ও যেন আকাশ থেকে পড়লো । বলল
-এভাবে হুট করে বিয়ে করা যায় নাকি ?
একবার মনে হল অনুরোধ করি । কিন্তু পরে মনে হল মেয়েটা তো ঠিকই বলেছে । এভাবে একটা মেয়ে হুট করে বিয়ে করে ফেলতে পারে না । তাই ঠিক করলাম পালাবো ! অফিসে কিছু বললাম না । না বলে কয়েকদিন না আসলে খুব একটা ক্ষতি হবে না । জেরিন ঠিক ঠিক সামলে নিবে । আর অফিসের বস আমার সম্পর্কে দুরের মামা হয় । খুব একটা ঝামেলাঝওয়ার কথা না ।

জেরিন ছুটির সময় এসে বললাম
-আপনি তাহলে সত্যিই পালাবেন ?
-কি করবো বল ? তুমি তো কোন সমাধান দিলে না । এখন বাসায় গেলে আমি আর জীবিত থাকবো না এটা নিশ্চিত । পালালে একটা চান্স থাকবে !
জেরিন বলল
-আমাকে সত্যি সত্যিই বিয়ে করতে চান ?
-হুম !
-পরে পস্তাবেন না তো ?
-নাহ । কোন ভাবেই না !
-আমার সম্পর্কে তুমি কিছুই জানো না তবুও বিয়ে করতে চাও ?

জেরিন হঠাৎ করেই আপনি থেকে তুমিতে নেমে এসেছে । এটা অবশ্য ভাল লক্ষ্যন ! আমি বললাম
-আমার কিছুই জানার দরকার নেই । আমি চাই তবুও !
-আচ্ছা চল তাহলে ।
-সত্যি
-হ্যা ! সত্যি !

যখন জেরিন কে সাথে নিয়ে কাজী অফিস থেকে বের হলাম তখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছিলো না ।
জেরিন অবশ্য স্বাভাবিকই ছিল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এখন কোথায় যাবে ? বাসায় নাকি অন্য কোথাও ?
-বাসায়ই চল । আব্বা যতই রাগ করুক না কেন আমাকে তো আর দ্বিতীয়বার বিয়ে দিতে পারবে না । সো নো টেনশন !
-আমাকে আবার বকবে না তো ?
-আরে না । তোমাকে কিছু বলবে না । তবে আমাকে বকতে পারে । সেটা ব্যাপার না !

আমার নিজের কাছে যে ভয় লাগছিলো না সেটা না । তবে কেন জানি মনে হচ্ছিলো যে আসল বিপদ কেটে গেছে । এখন আর সমস্যা হবে না ।

বাড়ির গেটের কাছে যখন নামলাম তখনও একটু একটু ভয় ভয় করছিলো । একা একা বিয়ে করে ফেলেটা বেশ সাহসের একটা কাজ যেখানে বাসায় অন্য একজন বউ সেজে বসে আছে ।
দরজার কাছে এসে ভেতর থেকে আওয়াজ শুনতে পাচ্ছিলাম । নিশ্চয়ই আব্বার সেই বন্ধুরা এসেছে । আমাকে বিয়ে দিবে । কিন্তু সেটার তো আর উপায় নেই । আমি তো এখন বিবাহিত । কোন মেয়ের বাবাই বিবাহিত ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিতে চাইবে না ।
দরজা খুলে ভেতরে ঢুকতেই দেখলাম সবার চোখ আমাদের দিকে ফিরলো । বাবাকে দেখতে পেলাম সোফাতে বসে কয়েকজনের সাথে গল্প করছে । অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম সেখানে আমার অফিসের বসও জাহিদ মামা আছে । বাবাকি বসকেও দাওয়াত দিয়েছে । তাই মনে হচ্ছে । আত্মীয় যখন হয় তাকে দাওয়াত দিতেই পারে । ভেতরে তাকিয়ে দেখি অনেকেই আছে । সবাই আমার দিকে তাকিয়ে আছে হাসি মুখে । আমার পাশে জেরিন কে দেখেও তাদের কোন ভাবান্নর হল না । বরং এটা যেন স্বাভাবিক ছিল এমন একটা ভাব করে সবাই আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ।

ঠিক তখনই আমার মনে হল কোথাও বড় একটা ঝামেলা হয়েছে । বাবার কিংবা অন্য কারো তো জেরিনকে দেখে হাসি মুখ রাখার কথা না ! আমি জেরিনের দিকে তাকাতেই দেখি ও আমার দিকে তাকালো । হাসলো, তারপর বলল
-হার্টএটাক কর না প্লিজ ! আমি এখনই বিধবা হতে চাই না !

তারপর আরেকটু হাসি দিয়েই সামনে চলে গেল । বাবার সামনে গিয়ে বাবাকে সালাম করলো তারপর বাবার পাশে বসা ভদ্রলোকের পাশে গিয়ে বসলো । হাসি মুখে !
আমার মাথায় এখনও কিছু ঢুকছে না । কি হচ্ছে এসব ?
সবাই এরকম ভাবে হাসি মুখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে কেন ?
বাবা বলল
-তুই কি ভেবেছিস ? বেশি বুদ্ধি তোর ? মনে রাখিস তুই আমাকে জন্ম দিস নাই, আমি তোকে পৃথিবীতে আনছি !
আমি কেবল অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম । আমার দিকে আমার বস এগিয়ে এসে বলল
-এখনও বুঝতে পারো নি তুমি ? আসলে এই জেরিন হচ্ছে তোমার বাবার বন্ধু শফিক সাহেবের মেয়ে । তোমার বাবার কথা মতই আমি ওকে অফিসে তোমার সাথে কাজ করার কদিন সুযোগ করে দিয়েছিলাম । যাতে.....।


যাতে জেরিন আমার সাথে মিশতে পারি । আর যেহেতু জেরিন চাকরি করে সেহেতু ওকে বিয়ে করতেও আমার খুব একটা সমস্যা থাকার কথা না ! বস বলল
-তুমি যদি ওকে বিয়ের কথা না বলতে তাহলে দুএক দিনের ভেতরে ও নিজেই বলতো ! বুঝছো ! কিন্তু তুমি নিজ থেকেই সব সহজ করে দিলে । হাহাহা !!

কি !!
আমার সাথে এতো বড় ধোকা !!
এই বিয়ে আমি মানি না !
কোন ভাবেই মানি না !
আমি কোন কথা না বলে নিজের রুমের দিকে চলে গেলাম ।
কি রকম একটা বেকুব বনে গেলাম ।

আমার এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না, আমার পুরো পরিবার, আমার অফিসে বস, জেরিন সবাই মিলে এই কাজটা করেছে । আমি দরজা বন্ধ করতে যাবো দেখি সামনে জেরিন দাড়িয়ে ।
অনেকটা আমাকে ধাক্কা দিয়েই ঘরে ঢুকে পড়লো । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি তোমার কাছে জানতে চেয়েছিলাম তুমি আমাকে সত্যিই বিয়ে করতে চাও কি না ! বলেছিলাম ? বলেছিলাম তুমি আমার সম্পর্কে কিছুই জানো না । তুমি কি বলেছিলে ?
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম ।
জেরিন বলল
-তবে একটা কথা তোমার জানা দরকার । সেটা হল এই বুদ্ধিটা কিন্তু আমার ।
-তোমার ?
-হুম ! একজন বেকার মেয়ের বুদ্ধি । যে বেকার মেয়েকে তুমি বিয়ে করতে চাও নি সে তোমাকে বুদ্ধিতে কিভাবে হারিয়ে দিল দেখলে তো ! সামনে আর কত কি তোমার জন্য অপেক্ষা করছে টের পাবা !

তারপর হাসতে হাসতেই বিছানার উপরে গিয়ে বসে পড়লো । এমন একটা ভাব যে এসব নিজের জিনিস । অবশ্য এখন থেকে এই ঠিক ঠিক সব কিছুর উপরে জোর খাটাবে । যে মেয়ের মাথা থেকে এই জিনিস বের হতে পারে সেই সব কিছু করতে পারবে ! জেরিন আমার বিছানার উপরে বসতে বসতে বলল
-আরে বাবুটা এমন মুখ গোমড়া করে কেন আছো ? কাছে এসে আদর করে দেই !

আমার কেবল মনে হল যে সামনে জীবনে আসলেই খবর আছে ।
বিরাট গ্যাড়াকলে পড়ে গেছি !
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:৫৪
২৬টি মন্তব্য ২৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×