somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ নিশিদিশি মন

২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার বরাবরই মনে হয় স্নেহার মাথার বড় রকমের সমস্যা আছে । পাগল মেয়ে একটা ! অবশ্য সব মেয়েই স্নেহার মত এমন মাথায় সমস্যা আছে । আমার নিজেরও আছে । মাথায় সমস্যা থাকে কেউ বলে না তার সমস্যা আছে । কিন্তু আমি বলি । চিন্তাগুলা মাঝে মাঝে এমন দিকে যেতে শুরু করে যে আমি পরে সেগুলো ভেবে নিজেই কেমন অবাক হই । ভাগ্য ভাল মানুষ অন্য মানুষের মনের কথা বুঝতে পারে না । বুঝতে পারলে অনেক বড় সমস্যা হয়ে যেত !

হয়তো অনেকেই আমার মত । মুখে কেউ কিছু প্রকাশ করে না । নিজের ভেতরেই লুকিয়ে রাখে । আমাদের ক্লাসের সব থেকে গম্ভীর ছেলেটা যে কি না, দরকার ছাড়া একটা কথাও বলে না, তার মাথার ভেতরেই হয়তো অনেক হাস্যকর কথা ঘুরপাক খায় । কিন্তু আমরা কোন দিন জানতে পারবো না !

কেবল কি চিন্তা ভাবনা । মানুষ কত অর্থহীন কাজ করে । স্বপ্ন পূরণ হওয়ার সম্ভাবনা খুব একটা নেই জেনেও স্বপ্ন দেখতে ভালবাসে । কত রকমের স্বপ্নে দেখে । নিজে নিজেই ঘুরে বেড়ায় সেই স্বপ্নের রাজ্যে ।
স্নেহাটা সন্ধ্যা থেকেই কপালে একটা লাল টিপ লাগিয়ে ঘুরতেসে । সে নাকি বিয়ের পর একটা টকটকে লাল শাড়ি পড়ে দীপকের সাথে ঘুরবে, আর দীপকের গায়ে থাকবে সাদা পাঞ্জাবি । দুজন মিলে সন্ধ্যা হলেই বাড়ির ছাদের গিয়ে বসে থাকবে । দীপকের মা একটু চিৎকার করে এই বলে বাড়ি বউ কেন সন্ধ্যা বেলা ছাদে থাকলে চুল খুলে । কোন রকম খারাপ বাতাস থাকে । যদি কিছু হয়ে যায় । দীপক কিছু বলতে চেষ্টা করবে কিন্তু স্নেহা সেটা শুনবে না কিছুতেই । এক ভাবে দীপকের হাত ধরে হাটবে আর মাঝে মাঝে পা ঝুলিয়ে রেলিংয়ের উপর বসবে । আমি যেমন জানি, স্নেহা নিজেও খুব ভাল করেই জানে যে ওর এই স্বপ্নটা কোন দিনই পূরন হবে না । তবুও ও স্বপ্নে টা দেখে । দেখতে ভালবাসে ।

আজকেও এই স্বপ্নটার কথাই ও আমাকে বলছিলো । কতবার যে আমাকে বসেছে সেটা আমি সেটা আমার মনেও নেই । শুনতে শুনতে আমার কান ঝালাপা হয়ে গেছে তবুও আমাকে শুনতে হয় । আর কেউ নেই এখানে শোনার নেইও ! এইসব বলতে বলতে একসময় বললো
-কনিকা আমার এত স্বপ্নগুলো পূরণ হবে কোনদিন?
স্নেহা খুব ভালো করেই জানে হবে না। আমার কিছু বলার ছিল না । তবুও আমার কাছেই ও শুনতে চায় । আমি যেন বলি হবে একদিন । যেন বলি দেখিস ঠিক ঠিক একদিন দীপক ভাই ১০৮ টা লাল গোলাপ নিয়ে তোর দরজায় এসে হাজির হবে । বলবে, দেখো তোমার জন্য রইস মিয়ার ক্ষেত থেকে এই ফুল গুলো চুরি করে এনেছি । প্রেমিকার জন্য ফুল কিনে তো অনেকেই আনে এভাবে এডভ্যাঞ্চার করে কয়জন আনতে পারে !
কিন্তু আমার কেন জানি মুখ থেকে একটা শব্দ বের হয় না । আমি ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে ওকে ঘুমাতে বলি । ও বন্ধ করে থাকে । আমাকে বলে লাইট টা অফ করে দিতে । খুব নাকি চোখে লাগছে ।
লাইটটা অফ করে দিয়ে এসে আবারও ওর পাশে এসে বসি । সব কিছু কেমন যেন এলোমেলো লাগে । জীবনটা হঠাৎ করেই কি এমন ভাবে এলো মেলো হয়ে যায় । যেমন টা স্নেহার হয়ে গেছে । আমার জীবনটাও এমন হয়ে যাবে ?
আমি বললাম, জানিস আমারো স্বপ্ন, একটা নীল জামদানী শাড়ি পড়ে আসিফের হাত ধরে হাটবো, কপালে থাকবে একটা নীল টিপ.. আর আসিফের গায়ে নীল পাঞ্জাবি । ও পাঞ্জাবী পরতে একদম পছন্দ করে না । তবে আমার সাথে ঘুরতে হলে ওকে বলবো পাঞ্জাবী পরতেই হবে । নয়তো হাত ধরতে দিবো না ! চুমও খেতে দিবো না ! চুম খাওয়ার কথা শুনলে ও সুড় সুড় করে সব কিছু করবে ! আমি আসিফকে বলবো কোনদিন যদি আমাকে শাড়ি গিফট করে, তাহলে যেন নীল জামদানী শাড়ি গিফট করে...
হুম, এই শখ গুলা হয়তো আসিফের কাছে ঢং মনে হতে পারে, মেয়েদের এই শখগুলা ছেলেরা সাধারণত বোঝে না । তাদের কাছে হয়তো বৌয়ের সাথে রাত কাটানোটাই ভালোবাসা ! কয়জন হাসবেন্ড আছে যারা মেয়েদের অনুভুতি গুলা বোঝে ! আফিস কি বুঝতে পারবে কোন দিন ?
আসিফ তুই কি পারবি এরকম হাসবেন্ড হতে?
বুঝবি আমাকে?
তোর একটা ছোট অপরাধে, রাগ করার ভান ধরে বসে থাকলে ভালবেসে আনার রাগ ভাঙ্গাবি তো?
নাকি বলবি এইসব ড্রামা আমার ভালো লাগে না......
আমি সেই কখন থেকে একা একাই কথা বলে যাচ্ছি । প্রিয় বান্ধবীর দুঃসময়ে ওর পাশে থাকতে এসে নিজের কথা গুলোই ভাবছি কেবল । মানুষ আসলে বরাবরই স্বার্থপরই । নিজেকে আর নিজের টা ছাড়া আর কারোটা বোঝে না ।
তাকিয়ে দেখি স্নেহা ঘুমিয়ে পরেছে । এই চাঁদের আলোতে মেয়েটার মুখটা কত নিঃপাপ মনে হচ্ছে । দীপক ভাই কিভাবে পারলো এরকম ভাবে ওকে ছেড়ে চলে যেতে । একবার ফিরে তাকানোর দরকারও মনে করলো না । চেনা মানুষ গুলো এভাবে কেন অচেনা হয়ে যায় ! আসিফও একদিন এমন হয়ে যাবে জানি ।
স্নেহা ঘুমিয়ে পড়েছে দেখে আমি বিছানা ছেড়ে নিচে নেমে এলাম । বাইরে বাতাস দিচ্ছে মনে হয় । চাদের আলোতে জানলার পাশের দাড়িয়ে থাকা গাছ গুলো কেমন নিরবে একটু একটু দুলছে । আমি জানলা খুলে দিতেই এক ঝলক বাতাস আমাকে ছুয়ে গেল । সেই আমি চোখ বন্ধ করে কিছুটা সময় সব কিছু ভুলে যেতে চাইলাম । সব কিছু থেকে নিজেকে খানিকটা সময় দুর করে রাখতে চাইলাম ।
ঠিক তখনই কিছু একটা এসে লাগলো আমার ঠিক পাশের দেওয়ালে । একটা ভোতা মত আওয়াজে খানিকটা চমকে উঠলাম । কেউ একজন এদিকে কিছু একটা ছুড়ে মেরেছে । আরেকটু হলেই হয়তো আমার গায়ে লাগতো ! আমি এদিক ওদিক তাকাতেই কালো ছায়াটাকে দেখতে পেলাম । চিৎকার করে দারোয়ানকে বলতে যাবো তখনই ছায়াটা আমার দিকে তাকিয়ে হাত নাড়লো । আরেকটু ভাল করে তাকাতেই আসিফকে আমি চিনতে পারলাম ।
ছেলেটা এখানে কি করছে ? এখানে তো ওর থাকার কথা না । আর আমাদের তো ঝগড়া চলছে গত দুদিন ধরে । ওর সাথে কথা বন্ধ ।
স্নেহা যখন একগাদা ঘুময়ের ঔষধ খেয়ে ফেলল তখন আসি আমাকে সান্তনা দেবে কি আমাকে বলতে লাগলো আসলে স্নেহা যা করেছে সেটা বেকুবী করেছে । দীপক ভাই স্বাভাবিক আচরনই করেছে । এমনই করা উচিৎ । সেদিন থেকেই ওর সাথে আমার তূমুল ঝগড়া । কথা বন্ধ ।
আমি তাকিয়ে দেখি আসিফ আমাকে কিছু ইশারা করছে । কিছু সময় বুঝলাম ও আমার ফোনের কথা বলছে । ফোনটা সাইলেন্ট মুডে আছে । সেটা হাতে নিয়ে দেখি ১৭টা মিসকল । সব আসিফের । আমি ফোনকানে নিয়ে আবারও জানলার কাছে এলাম ।

-কি চাই ?
-কিছু না চাই না । কিছু দিতে এসেছি ।
-আমার কিছু দরকার নেই ।
-নেই ?
-না !
-চলে যাবো ?
-যা ! এখানে আসতেই কে বলেছে ?
-তাও কথা । আচ্ছা চলে যাচ্ছি । একবার একটু নিচে আসবি ? একটা কথা বলতাম !
-ফোনে বল !
-না ফোনে বললে হবে না । সরাসরি বলতে হবে !
-শোন ফোনে বললে বল নয়তো চলে যা । আমার ঘুম আসছে । আমি ঘুমাবো !
কিছু সময় কোন কথা বলল না আসিফ । আমি নিজেই একটু অবাক হলাম এই দেখে যে ওর সাথে কেমন খারাপ ব্যবহার করছি । আসলে যখন থেকে দীপক ভাইয়ের আসল চেহারাটা আমি দেখতে পেয়েছি কেবলই মনে হচ্ছে জগতের সবাই মনে হয় এমনই । এমন ভাবেই কেবল নিজের টা বোঝে । তখনই থেকেই এমন মনে হচ্ছে । স্বার্থের প্রয়োজনে সবাই একদিন চলে যাবে । কাউকে ধরে রাখা যাবে না ।
আসিফ বলল
-আচ্ছা । আমি যাচ্ছি । অন্য কোন দিন বলবো কথা টা ।
লাইনটা কেটে গেল । তাকিয়ে দেখি ছায়াটা আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে । কেমন যেন একটয় কুজো হয়ে হাটছে । আসিফের মন খারাপ হলেই ও এমন করে হাটে । নিজের কাছেই কেমন যেন কান্না আসতে লাগলো । ছেলেটার সাথে এতো খারাপ ব্যব হার না করলেও পারতাম । বুকের ভেতরে একটা শূন্যতা পুরো দেহটাকে আচ্ছান্ন করে ফেলল । আমি সাথে সাথেই আসিফকে আবার ফোন দিলাম ।

-দাড়া ! আমি আসছি ।

আমি জানি না আসিফ আমাকে কি বলতে এতো রাতে এসেছে । হয়তো কোন গুরুত্বপূর্ন কথা না । গুরুত্বপূর্ণ হলে এভাবে না বলে ও চলে যেতে পারতো না । এমনিই এসেছে, দুদিন ধরে কোন কথা হয় না তাই হয়তো । কিন্তু আমার কেন জানি মনে হল যে ওর মুখ থেকে এই কথাটা না শুনতে পারলে আমার সারা রাত হয়তো ঘুমই আসবে না । মানুষের মনটা আসলেই বড় অদ্ভুদ !
আমি দ্রুত দরজার দিকে পা বাড়ালাম ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ রাত ১১:১৫
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×