somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সুপ্তি আর আমার গল্প

১১ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সন্ধ্যা হয়ে এসেছে । সূর্য ডুবে গেলেও, এখনও পুরোপুরি অন্ধকার নামেনি । রিক্সা নিয়ে যখন মেয়েদের হলটা পার হচ্ছিলাম তখনই চোখটা আটকে গেল গেটের কাছে । বেশ কয়েকজন দাড়িয়ে আছে ব্যাগ নিয়ে । কারো আসার জন্য অপেক্ষা করছে । কেউ কেউ আবার নিজেই রিক্সা ডেকে উঠে চলে যাচ্ছে যে যার গন্তব্যের দিকে ।

আজকে দুপুরের দিকে আমাদের ক্যাম্পাসে তুমুল মারামারি বেঁধে গেছে সরকারিও দলের দুপক্ষের মধ্যে । শোনা যাচ্ছে কয়েকজন নাকি মারাও গেছে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনের আনার জন্য তাই কর্তৃপক্ষ অনির্দিষ্ট কালের জন্য ক্যাম্পাস বন্ধ ঘোষনা করেছে আর সেই সাথে রাত আটটার ভেতরেই হল খালি করার নির্দেশ দিয়েছে । তাই আমরা সবাই যে যার মত বাসার দিকে রওনা দিতেছি ব্যাগ নিয়ে । মেয়ে গুলোও ঠিক সেই উদ্দেশ্যে রওনা দিচ্ছে ।

রিক্সাটা হলের সামনে থামাতে বললাম ! সুপ্তি ব্যাগ হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে গেটের এক পাশে । আমাকে এখনও দেখে নি । আমি রিক্সা থেকে নেমে ওর সামনে যেতেই একটু চমকে উঠলো । আমার দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে রইলো কোন কথা না বলে । আমি বললাম
-বাসায় কিভাবে যাবে ?
সুপ্তি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো । মনে ও কিভাবে বাসায় যাবে সেটা নিয়ে ও নিজে খানিকটা চিন্তিত । আমি আবার বললাম
-বাসায় ফোন দিয়েছিলে ?
-হুম !
-কি বলল ?
-আমাদের একখানে এক মামা আছে দুর সম্পর্কের । উনার বাসায় যেতে বলল । ভাইয়ার পক্ষে এখন আসা সম্ভব না । ভাইয়া কাল আসবে !

আমি জানি কেন আসা সম্ভব না । আমার আর সুপ্তির বাসাটা একই জায়গায় । সেখান থেকে শহরে অর্থ্যাৎ যেখান থেকে ঢাকার গাড়ি ছাড়ে সেখানে আস্তেই মোটামুটি ৩/৪ ঘন্টা লেগে যায় । আর ওর ভাইয়া যদি রওনাও দেয় তাহলে ঢাকার দিকে ছেড়ে আসা শেষ বাসটা ধরতে পারবে না । আর ধরতে পারলেও এখানে আস্তে আস্তে আরও ছয় সাত ঘন্টার ব্যাপার । এতো সময় ও কিভাবে এখানে থাকবে সেটা একটা বড় প্রশ্ন !

আমি বললাম
-তা এখানে দাড়িয়ে কেন আছো ? অবস্থা খুব বেশি ভাল লাগছে না । আবার মারামারি বাঁধতে পারে । তোমার ঐ মামার বাসা কোথায় ?

সুপ্তি কোন কথা না বলে চুপ করেি দাড়িয়েই রইলো । আমার কেন জানি মনে হল ও ঠিক ওর মামার বাসায় যেতে রাজি না । কোন একটা সমস্যা নিশ্চয়ই আছে । নয়তো এখনও এখানে দাড়িয়ে থাকার কোন মানে নেই । চাইলেই চলে যেতে পারতো । আমি বললাম
-ঐ মামার বাসায় যেতে চাও ?
কোন কথা না বলে ও কেবল মাথা ঝাকালো । যেতে চায় না ।
-তাহলে ?
কোন কথা না বলে সুপ্তি আবারও চুপ করে দাড়িয়েই রইলো । একবার মনে হল যেতে না চাইলে আমি কি আমি যাই আমার মত কিন্তু কেন জানি চলে আসতে পারলাম না । বললাম
-আমি যাচ্ছি বাসায় । তুমি চাইলে আমার সাথে আসতে পারো । যদি তোমার এবং তোমার পরিবারের কোন সমস্যা না হয় !

সুপ্তি আমার দিকে একটু তাকিয়ে আবার অন্য দিকে তাকালো । সন্ধ্যার এই অম্লাম আলোতে ওর মুখের যেন আমি খানিকটা অভিমান দেখতে পেলাম । কার প্রতি সেটা আমি ঠিক বলতে পারবো না ! আমি আবার বললাম
-যেতে চাও ?
সুপ্তি কোন কথা না বলে কেবল মাথা ঝাকালো । কেবল একটাবার । মেয়েটা যেতে চায় !
আমি বললাম
-তাহলে বাসায় জানানোর দরজার নেই । কারন তোমার বাবা কিংবা ভাই যদি আমাকে আর তোমাকে এক সাথে দেখে তাহলে ঠিক ঠিক ঝামেলা বেঁধে যাবে । আমি কোন ঝামেলা চাই না । আমি তোমাকে বাসা পর্যন্ত দিয়ে আসবো । ঠিক আছে ?
-আচ্ছা !
মুখে হাসি না দেখলেও আমার মনে হল আমার কথা শুনে ও খুশিই হয়েছে ।

আমি ওকে নিয়ে রিক্সা উঠে বসলাম । রিক্সা যখন উঠে বসলো তখনও খানিকটা সন্দেহ জেগে রইলো । আমি বললাম
-আচ্ছা তুমি তোমার ঐ মামার বাসায় যেতে চাইলে না অথচ আমার সাথে যেতে রাজি হলে, ব্যাপারটা কি ?
সুপ্তি বলল
-ঐ লোকটাকে আমার ঠিক পছন্দ না । আর ওনার এখান বাসায় বউ নেই বাপের বাসায় গেছে । ওনার ঠিক.....।
কথাটা বলতে ওর সংকোচ হচ্ছে বুঝতে পারলাম । আমি ওকে বাঁচিয়ে দিয়ে বললাম
-তা আমাকে ঠিকঠাক মত বিশ্বাস হয় তো ! মানে আমি তোমাদের প্রতিপক্ষ বাড়ির ছেলে । যদি কিছু করে বসি !

আমার কথার কোন উত্তর না দিয়ে সুপ্তি আমার দিকে খানিকটা সময় একভাবে তাকিয়েই রইলো । তারপর একটা হেসে বলল
-তাই ? পারবে না !
-কেন ? এতো কনফিডেন্ট হচ্ছো কিভাবে ?
-আমি জানি ! তোমাদের বাসার মানুষ গুলোর মত নও তুমি !
-তার মানে কি আমার বাসার অন্য কেউ হলে তোমার উপর হামলা করতো ?
-আমি সেটা মিন করি নি । তুমি একটু আগে যেমন করে আমার বাসার মানুষদের কে বলল !
-আচ্ছা ! প্রতিশোধ ! হা হা হা !

সুপ্তি বলল
-মনে আছে ঐদিনের কথা ?
-কোন দিন ?
-ঐ যে যেদিন আমাকে টিজ করেছিলে ? আম বাগানটার সামনে ?

আমার বেশ ভাল করেই মনে আছে । আমাদের গ্রামে দুইটা চেয়ারম্যান বাড়ি আছে । একটা মতি চেয়ারম্যান আর আসাদ চেয়ারম্যান । সুপ্তি মতি চেয়ারম্যানের মেয়ে । ওদের সাথে আমার বাড়ির লোকজনের সেই কবে থেকেই শত্রুতা । দুইজন দুই বাড়ির লোকজনদেরকে দেখতে পারে না । একবার ওর বাবা চেয়ারম্যান হয়তো আরেকবার আমার বাবা । ক্ষমতা আর প্রভাব প্রতি-পত্তিতে কেউ কারো থেকে কম না । তাই একটা ঠান্ডা যুদ্ধ লেগেই থাকে সব সময় । আগে অবশ্য মাঝে মাঝে দুই বাড়ির ভেতরে মারামারিও লেগে যেত । তবে এখন সেরকম হয় না । তবুও গ্রামের লোকজন আমাদের দুই বাড়ির মানুষজনদের নিয়ে বেশ ভয়ে ভয়ে থাকে । কখন কি হয়ে যায় কেউ বলতে পারে না । তবে আমার বাবারা দুজনেই বেশ বয়স হয়ে গেছে । আগের মত শত্রুতা না থাকলেও সেই ভাবটা ঠিকই আছে দুজনের মাঝে !

সুপ্তি মতি চেয়ারম্যানের মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও মাঝে মাঝে আমার এলাকার কিংবা আমার বাবার কিছু চ্যাংড়া পুলাপাইণ ওকে ওকে টিজ করতো । তখন ও স্কুলে পড়তো । অন্য মেয়ের মত সুপ্তি সেটা কিছুতেই সহ্য করতো না । হাতে কাছে যা পেত সে গুলো ছুড়ে মারতো । ওর ছুড়ে দেওয়া ইটের আঘাতে অনেকের মাথা ফেটে গেছে । তাই আমাদের পুলাপাইণ ওকে নাড়তে আরও বেশি মজা পেত । আমি এই টিজিং এ অংশ না নিলেও দেখতাম । একদিন কি মনে হল আম বাগানের কাছে আসতে সুপ্তিকে টিজ করা শুরু করলাম । তখন সবে স্কুল শেষ করে কলেজে যাওয়া শুরু করেছি । সুপ্তি সামনে এসএসসি দিবে । আমি ভেবে ছিলাম আমাকেও ও কিছু নিয়ে ঠিক ঠিক তাড়া করবে । কিন্তু আমার মুখ থেকে টিজ শুনে সুপ্তি একদম চুপ করে গেল । আমি নিজে অবাক না হয়ে পারলাম না । আরও অবাক হয়ে গেলাম যখন ওর চোকখে পানি দেখলাম ।

পরদিন সকালে যখন আবার ওর স্কুলের যাবার সময় হল আমি একটা কাগজে বড় করে "সরি" লিখে সেই আম বাগানেই টাঙ্গিয়ে রাখলাম । জানতাম যে সুপ্তি এটা নিশ্চিত দেখবে । হলও তাই । ও কিছুটা সময় সেই কাগজটা ডিকে তাকিয়ে তারপর আমার দিকে তাকালো । তারপর মাথা নিচু করে চলে গেল । এরপর থেকে আমি আর কোন দিন ওকে টিজ করি কিংবা আমাদের কোন ছেলেদের কেও সেটা করতে দেই নি । সেগুলো অবশ্য কয়েক বছর আগের কথা ! আমি বুঝলাম না ও হঠাৎ এই কথা কেন বলল !

আমি বললাম
-হ্যা মনে আছে ! কেন ?
-না এমনি ! তুমি চাইলেই আমার সাথে কিছু করবে না আমি জানি ! বুঝেছো !

বাসে উঠে গাড়ি ছাড়তে খুব বেশি সময় লাগলো না । পুরো বাস জুড়েই সুপ্তি আমার সাথে টুকটাক কথা বলতে লাগলো । আমার সত্যি মনে হল না ওর বাবার সাথে আমার বাবা এমন শত্রুতা আছে । মনে হতে লাগলো আমাদের কত দিনের চিন-পরিচয় । অবশ্য চিন-পরিচয় যে অল্প দিনের না, সেটা তো সত্যি । আমার বাবা একটা দিন নাই যে মতি চেয়ারম্যান কে গালি দেন না । অবশ্য মতি চেয়ারম্যানেরও নাকি আমার বাবার মতই অবস্থা । আমার দুটো ভাইও হয়েছে তেমনই । বাবাদের শত্রুতা ছেলেদের ভেতরে প্রবাহিত হয়েছে । কিন্তু মেয়েটা মনে সেরকম নয় বোঝাই যাচ্ছে ।

কথা বলতে বলতে একটা সময়ে আমরা দুজনেই ঘুমিয়ে পড়লাম । যখন জাফরপুর সদরে পৌছালাম তখন রাত প্রায় দুইটা । আমি তাকিয়ে দেখি বাস থেকে গেছে সবাই নামা শুরু করেছে । সুপ্তি আমার কাধে মাথা রেখেই ঘুমিয়েছে । কয়েক মুহুর্ত আমি ওর দিকে তাকিয়ে থেকে ওকে ডাক দিলাম ।

আসার সময় আমি ভাইয়াকে ফোন করে বলে রেখেছিলাম । আমাদের বাসায় রঘু মিয়াকে যেন সদরে পাঠিয়ে দেয় নছিমন নিয়ে । আমাদের এলাকায় যাওয়ার জনপ্রিয় যানবাহন হচ্ছে এই নছিমন । ভ্যানের সাথে স্যালো-মেশিন লাগিয়ে বানানো । অবশ্য বাসও চলে তবে সেটা সন্ধ্যার পরপরই বন্ধ হয়ে যায় । এগুলো মাল আনা নেওয়ার কাজে খুব চলে ।

আমি সুপ্তিকে নিয়ে নামতেই রঘু মিয়াকে দেখতে পেলাম । আমাকে নামতে দেখেই এগিয়ে এল । কিন্তু আমার সাথে সুপ্তি কে দেখে অবাক হয়ে বলল
-ভাইজান আপনের সাথে এইটা কেডা ? মতি চেয়ারম্যানের মাইয়া ?
-হুম !
-আপনার আব্বা জানলে কি হইবো ভাবছেন একবার ?
-আব্বাকে কে বলবে ? তুমি ?

রঘু মিয়া খুব ভাল করেই বুঝে গেল আমি ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছি । আর কথা বলল না । আমি আর সুপ্তি উঠে বসলাম নছিমনে ।

সুনশান নিরবতা দিয়ে ভটভট করে রঘু মিয়ার নছিমন এগিয়ে চলছে । সুপ্তি আমার পাশে বসে আছে । একটা ঝাকি লাগতেই আমার হাত চেপে ধরলো । বলল
-এই গাড়িতে করে মানুষ কিভাবে যায় এখনও বুঝলাম না ।
-তুমি চড়ো নাই এটাতে ?
-জীবনেও না । ভাইয়া সব সময় বাইক নিয়ে আসে আমার জন্য ।
-আমার ভাইয়েরও বাইক আছে । চাইলে আমিও বলতে পারতাম । কিন্তু ভাইয়া যদি এখন থাকতো তাহলে বুঝতেই পারছো কি হত !
সুপ্তি কিছু না বলে হাসলো । যদি অন্ধকার চারিপাশে তবে ওর হাসিটা আমার বুঝতে মোটেও কষ্ট হল না । সুপ্তির হাসি বরাবরই চমৎকার ছিল । আমার সেই ছোট থেকেই ভাল লাগতো । মিথ্যে বলবো না ওকে আমার ভাল লাগতো না কিন্তু পরিবারের জন্য কোন দিন বলতে পারি নাই সেই কথা ।

যখন ওকে ওর বাসার কিছু দুরে নামিয়ে দিলাম ও বলল
-আমাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দাও !
-তোমার বাবা আমাকে এখানে দেখলে খুন করে ফেলবে !
-আমার বাবা এতোটা খারাপ না । তার ভেতরে কৃতজ্ঞতা বোধ আছে ।
-থাকুক ! আমি কোন রিস্ক নিতে চাই না !

আমি তবুও ওকে একটু এগিয়ে দিলাম । গ্রামের রাত গুলো সব সময় খুব নির্জন হয় । রঘু মিয়াকে রাস্তার উপর দাড় করিয়ে রেখে ওকে নিয়ে হাটতে লাগলাম । এরকম নির্জন কোন রাতে আমি সুপ্তিকে নিয়ে হাটবো কোন দিন চিন্তাও করি নি । মানুষের কল্পনার বাইরে কত কিছু যে হয় সেটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না । আমরা ওর বাড়ি থেকে একটু দুরে দাড়ালাম । এখান থেকে ওর বাড়ির সদর দরজাটা স্পষ্টই দেখা যাচ্ছে । একটা ১০০ পাওয়ারের লাইট জ্বলছে । সুপ্তি বলল বলল
-থেঙ্কিউ !
-মেনশন নট ! তবে পাওনা রইলো । কোন দিন শোধ করে দিও !
-আচ্ছা !
তারপর খানিক্ষন দ্বিধা কন্ঠ নিয়ে বলল
-তোমার নাম্বার টা দেওয়া যাবে ?
-লাগবেই ?
-চাইলে আমি ম্যানেজ করে নিতে পারি কিন্তু আমি তোমার কাছ থেকেই চাই ।
আমি হেসে নাম্বার টা দিলাম !



দুই
সেই ঘটনার প্রায় ৬ মাস পার হয়ে গেছে । গ্রাম থেকে এসে সুপ্তির সাথে আমার নিয়মিত যোগাযোগ শুরু হয় এবং সেটা অন্য দিকে বাক নিতেও খুব একটা সময় লাগে নি । বিশেষ করে আমি যখন থেকে জানতে পারি যে ও আমাকে সেই স্কুল থেকেই পছন্দ করে । এই জন্য ঐ দিনের আমার টিজিংয়ের স্বীকার হয়েও কিছু বলে নি । চুপ করে ছিল । আরও একটা কারনও আছে অবশ্য । সুপ্তির এই শত্রুতা মোটেই ভাল লাগে না । ওর ইচ্ছে দুই পরিবারের ভেতরে এই ঝামেলা টা বন্ধ হয়ে যাক !

সেটা কবে হবে আমি জানি না, এও জানি না যে আমাদের এই সম্পর্কের কথা বাড়িতে জানলে কি অবস্থা হবে । তবে ওর সাথে সময় ভাল কাটতে লাগলো । কিন্তু ঝামেলা বেঁধে গেল একদিন সত্যি সত্যি !

আমি আর সুপ্তি সেদিন বসুন্ধরার আট তলায় বসে বসে কথা বলছি । মাঝে মাঝে এখানে আমাদের সময় কাটে । মাঝে মাঝে মুভি দেখি দুজন মিলে । আজকেও মুভি দেখেই বের হয়েছি । এখন খাওয়া দাওয়া করছি । ঠিক সেই সময় সুপ্তির দিকে তাকিয়ে দেখি ওর মুখ শুকিয়ে গেছে । কিছু দেখে ভয় পেয়েছে এবং ও তাকিয়ে আছে আমার পেছনের দিকে । যে জিনিসটা দেখে ভয় পেয়েছে সেটা আমার পেছনেই দাড়িয়ে আছে । পেছনে তাকিয়ে দেখি আমার নিজের বড় ভাই আমার দুজনের দিকে তাকিয়ে গেছে ।
এটা দেখে আমার খাওয়া আটকে গেল । মনে হল তখনই পালিয়ে যাই । দৌড় না দিলে আজকে আমার খবর আছে ।

ব্যবসার কাজে ভাইয়া মাঝে মাঝেই ঢাকায় আসেন । কোন কোন মাসে বেশ কয়েকবারই আসা লাগে । আমাকে প্রতিবার বলেনও না যে উনি এসেছেন । নিজের কাজ শেষ করে চলে যান । আজকে যে এখানে আসবেন সেটা তো আমি জানিই না ! আমার আবারও মনে হল এখন থেকে দৌড় দেওয়া আমার জন্য সব থেকে বুদ্ধিমানের কাজ হবে । কিন্তু ভাইয়াকে আসতে দেখে সেটা আর করতে পারলাম না !
ভাইয়া আস্তে আমাদের দিকে এগিয়ে এসে আমাদের পাশে বসলেন । তারপর ফোন বের করে কাকে যেন আসতে বললেন ।

আমাদের অবাক হওয়ার তখনও বাকি ছিল । ঠিক তার ১০ মিনিট পরে আরেকজন এসে দাড়ালো আমার টেবিলের সামনে । এবং সেটা আর কেউ নয়, সুপ্তির বড় ভাই । আমি আসলে ঠিক মত নিতে পারছিলাম না । কোন ভাবেই মাথায় ঢকছিলো না এই দুজনের যোগাযোগ কিভাবে হল ?

আমাদের দুই ভাই পাশাপাশি বসলো । আমাদের দিকে তাকিয়ে বলল
-এইটা কত দিন থেকে চলছে ?

আমার একবার মনে হল মিথ্যা বলি । বলি যে আমাদের মাঝে কিছু চলছে না । কিন্তু সুপ্তি আামকে অবাক করে দিয়ে বলল
-তোমরা দুইজন বন্ধু ?
ওর ভাই ওকে ধমক দিয়ে বলল
-আমার কথার জবাব দে !
-না দিবো না ! আগে আমার কথার জবাব দাও !

ভাইয়া সুপ্তির ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে বলল
-তোর বোন দেখছি আচ্ছা বেয়াদব । আর ভয়ডর কিচ্ছু পায় না !
-কি করবো বল ! একমাত্র বোন তো কিছু বলতেও পারি না !

দুজন এমন ভাবে কথা বলতে লাগলো যেন কত দিনের চেনা । আমরা দুজনই দুজনের মুখ চাওয়া চাওই করতে লাগলাম । একটু পরে জানতে পারলাম যে তারা আসলেই বন্ধু । এবং আজ থেকে না সেই কলেজ জীবন থেকেই । একবার সুজন ভাই কিভাবে যেন আমার ভাইয়াকে একটা এক্সিডেন্ট থেকে বাঁচিয়েছিলো । তারপর থেকেই দুজনের মধ্যে এই বন্ধুত্ব তৈরি হয়েছে । ভাবীরাও নাকি একে ওপরের বন্ধু । আমাদের জন্য ব্যাপার টা মনে হল আরও সহজ হয়েগেল । সত্যি সত্যি যে ভয় পেয়েছিালম । সেটা আর বলার মত না ।

আমাদের সম্পর্ক আবারও চলতে শুরু করলো । যদিও বাবারা এখনও জানে না । কোন একদিন জনাবে । তবে সেদিনের চিন্তা নেই । কারন এখন আমরা দলে ভারি । দুই বাবাকে ঠিক ঠিক কাবু করে ফেলবো একদিন !
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৬ রাত ১২:৪১
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×