somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভূমিকম্প এবং ভালবাসার গল্প

১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি সব সময় গান একটু উচু ভলিউমেই শুনি । আমার কাছে গান শোনার সময়ে ঘর না কাঁপলে কেন জানি ঠিক গান শুনে মজা লাগে না । এই জন্য বাবার চিৎকার আর ধমক আমাকে কম শুনতে হয় নি। আসে পাশের মানুষ জনের অভিযোগও কম শুনতে হয় নি । দিন নেই রাত নেই গান চলতেই আছে ।

শেষে যখন নিজেদের একটা ফ্ল্যাট কেনা হল তখন বাবা বাধ্য হয়েই আমার ঘরটা এমন ভাবে বানালেন যাতে সেটা দিয়ে খুব বেশি আওয়াজ বাইরে না বের হয় । একেবারে পুরোপুরি আমার ঘরটা সাউন্ড প্রুফ তা বলবো না তবে অনেকটাই কার্যকরি ! আমি জোরে গান শুনলে সেটা বাইরে থেকে খুব বেশি শোনা যায় না ।


আজকেও আমি ঘর কাঁপিয়ে গান শুনছিলাম । তখনই মা আমার ঘরে হুড়মুড় করে ঢুকে বলল
-এই জলদি চল নিচে চল !
আমি সাউন্ড কমিয়ে মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
-কি বললে ?

তখনই অনুভব করলাম আমার ঘর কাঁপছে । তবে এবার সেটা আমার গানের জন্য নয় । আসলেই কাঁপছে । তার মানে ভূমিকম্প হচ্ছে । যদিও আমার ভুমিকম্পে কোন দিনই ভয়-টয় লাগে না । আমার মনে হয় আমাদের দেশে ভূমিকম্পে খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি হবে না । কেন মনে হয় আমি বলতে পারবো না কিন্তু আমার এমনই মনে হয় । আমার খুব একটা ভয় লাগে না ।


মা আমাকে জোর করে টেনে তুললো । তারপর আমাকে টানতে টানতেই নিয়েই যেতে লাগলো বাইরে । আমার ভয় না লাগতে পারে কিন্তু আমার মায়ের তো আমার জন্য ভয় আছে ।
যখন সিড়ি দিয়ে নিচে নামছিলাম দেখি আমাদের এপার্টমেন্টের অনেকেই নামছে । যে মানুষ গুলো কোন দিন লিফট ছাড়া এক পাও নিচে নামে নি, তারাও আজকে সিড়ি দিয়ে নামছে । আমি ধীরে সুস্থে নামতে লাগলাম । নিচে নেমে দেখি আমাদের আগেই অনেকে নেমে গেছে । তখনও মাটি খানিকটা কাঁপছিলো । সবার চোখেই কেমন একটা আতংঙ্ক । ছোট ছেলে মেয়ে থেকে শুরু করে একেবারে বৃদ্ধরাও নেমে এসেছে ।


আমি ওদিকে বেশি লক্ষ্য না দিয়ে নিজের মনে মোবাইল টেপাটেপি করতে লাগলাম । মনে হল রুবেলকে একটু ফোন দেওয়া যাক । ওদের ওখানে কি অবস্থা কে জানে ! নিশিকে কি একবার ফোন দেন ?
নাহ ! দরকার নেই ।

নিশির বাসা আমাদের বাসা থেকে খুব বেশি দুরে না । হেটে গেলে মিনিট দশেকের পথ । আমি ওকে ফোন দিবো না বলেই ঠিক করলাম । রুবেলকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করতে লাগলাম । কিন্তু কয়েকবার চেষ্টা করার পরেও কাজ হল না । ওকে বাদ দিয়ে অন্য মানুষকে ফোন দেওয়ার চেষ্টা করলাম । দেখি মোবাইলে কাউকেই কল দেওয়া যাচ্ছে না । এর আগেও আমি ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছি । ভূমিকম্প হলেই কেন জানি ফোনের নেটওয়ার্কে ঝামেলা করে । আমি আরও কয়েকবার চেষ্টা করে বাদ দিলাম ।



যখন মনে আর ঝাঁকিটাকি দিবে না তখন আস্তে আস্তে সবাই নিজেদের ঘরে ফিরতে লাগলো । আমরা নিজেদের বাসায় ফিরে এলাম । আবারও নিজের ঘরের দিকে পা বাড়াবো তখনই আমাদের কলিংবেলটা বেজে উঠলো । মা খুলতে যাচ্ছিলো আমি বললাম আমি দেখছি !

দরজ খুলতেই দেখি সামনে নিশি দাড়িয়ে ! নিশির চোখ ভেজা ভেজা । ওকে দেখে মনে হল খুব একটা কিছু নিয়ে খুব বেশি চিন্তিত, ভয় পেয়েছে । আর বেশ জোরেই দম নিচ্ছে । সম্ভবত দৌড়ে এসেছে ।
কিন্তু নিশি এখানে এভাবে কেন ?
ওর তো এখানে আসার কথা না !
আর তার উপরে আমাদের গত সপ্তাহ থেকে কথা বলা বন্ধ । ও এক প্রকার আমার সাথে ব্রেকআপই করে ফেলেছে । কথা বলা-বলি বন্ধ ! তাহলে এখানে কেন ?
কি চায় !

আমি নিশির চেহারা দেখেই বুঝে ফেললাম এখনও কি করতে যাচ্ছে ।
দরজার কাছে দাড়িয়েই ও আমাকে জড়িয়ে ধরে হুহু করে কেঁদে উঠলো । মনে হল যেন খুব দামী কিছু কিংবা অনেক আপন কেউ হারিয়ে গিয়েছিলো তারপর আবার তাকে ফিরে পেয়েছে । এই আনন্দে কাঁদছে ।
আমি বললাম
-আরে কি হল ? কান্না কাটির কি হল ?
নিশির কান্না তখনও থামে না !

পেছনে তাকিয়ে দেখি মা চলে এসেছে । একটা মেয়ে আমাকে জড়িয়ে ধরে রেখেছে এটা দেখে মা অবাক আর জিজ্ঞাসু চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো । আমি মায়ের জিজ্ঞাসার কি জবাব দেব, আমি নিজেই তো এটার কোন উত্তর জানি না !
নিশির কান্না থামলো আরও আধা ঘন্টা পরে । মা ওর জন্য ঠান্ডা পানি নিয়ে এল । সেটা নিয়ে সোফার উপর বসে নিজেকে শান্ত করতে করতে আধা ঘন্টা মত পার হয়ে গেল ।


আমি তখনও ওর পাশেই বসে আছি । কি বলবো ঠিক বুঝতে পারছি না । মাকে যদিও আমি নিশির কথা বলি নি, তবে মা তো মা-ই, ছেলে প্রেম করবে আর মা সেটা বুঝতে পারবে না সেটা তো হতে পারে না ।
মা আমাদের সামনে এসে বসে বলল
-কি নাম তোমার ?
-নিশি !
-আমার ছেলেকে কিভাবে চেনো ?
-আমরা এক সাথে পড়ি ।
-আচ্ছা বুঝলাম । এখন আমাকে বল তুমি ওমন সিনেমার নায়িকাদের মত এসে আমার ছেলেকে জড়িয়ে ধরলে কেন ? এতো কান্না কাটির কি হল ? ও কি তোমার সাথে কিছু করেছে ? এভাবে কান্না কাটি করার মানে কি !

নিশি মাথা নিচু করে রইলো । কি বলবে ঠিক বুঝতে পারছে না । আমি কিছু বলতে যাবো মা আমাকে থামিয়ে দিয়ে বলল
-বল !
-আসলে .....
-কি আসলে ?
-ভুমিকম্পের পর শুনতে পেলাম যে আপনাদের কোন বিল্ডিং নাকি হেলে পড়েছে । ওর ফোনে ফোন দিতে গিয়ে দেখি কিছুতেই ফোন যাচ্ছে না । একবার দু বার তিনবার চারবার। আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো ওর কিছু একটা হয়েছে । তাই আমি.... আমি ....।
দেখলাম নিশির চোখে আবারও পানি চলে এসেছে ।


আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না । মাও খানিকটা অবাক হয়ে নিশির দিকে তাকিয়ে আছে । অন্তত ওর চোখে যে আবেগটা এখন দেখা যাচ্ছে সেটার ভেতরে যে কোন ভেজাল নেই মায়েরও বুঝতে কষ্ট হল না । মা আর কিছু জানতে চাইলো না ।
মা চলে যাওয়ার পর আমি নিশির দিকে তাকালাম ভাল করে । মেয়েটা অনেকটাই সামলে নিয়েছে । আমি কেবল তাকিয়েই রইলাম । নিশি বলল
-কি দেখি এমন করে ?
-তোমাকে !
-আমাকে দেখার কি আছে ! যাও তোমার মিনা না টিনা ওর কাছে যাও ।
এই টিনা প্রসঙ্গেই ওর সাথে সেদিন আমার ঝগড়া বেঁধে ছিলো । আমি হেসে বললাম
-টিনাকে দেখবে কোন দুঃখে ? টিনা কি আমার জন্য এভাবে দৌড়ে আসবে ? আর আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরবে ? তবে যাই বল না কেন এভাবে যদি প্রত্যেক ভুমিকম্পে আমাকে তুমি জড়িয়ে ধর টাহলে চাইবো যেন প্রতেক দিন একবার করে ভূমিকম্প হোক । আরেকবার ধরবে নাকি !
-বদ ! যাও । আমি বাসায় যাবো ।


নিশি উঠতে গেলেও আমি ওকে উঠতে দিলাম না । ওর সাথে এখনও বোঝা পড়া বাকি আছে । তবে সেটা আপনাদের না শুনলেও চলবে । ভূমিকম্প যে কেবল ভাঙ্গনই ধরায় তা না কাছেও টানে !





(খানিকটা সত্য ঘটনা অবলম্বনে । ব্লগার স্বর্ণমৃগ ভাইয়ের স্টাটাস পড়ে লেখা)
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই এপ্রিল, ২০১৬ বিকাল ৩:৪৩
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×