somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু-গল্পঃ বায়োমেট্রিক ভালবাসা

২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৩৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-এই যে শুনন !

আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি নিহিন ছাদের দরজার পাশ দাড়িয়ে আছে । মুখটা একটু যেন বেজার । আমি মুখে ফিরে তাকালেও কিছু বললাম না । বাড়িওয়ালার এই মেয়েটাকে এখন আমি খানিকটা এড়িয়ে চলি । প্রথম প্রথম মেয়েটার সাথে একটু লাইন মারার চেষ্টা করতাম কিন্তু সোজা বাসায় রিপোর্ট চলে আসার পরেই আমি চুপ করে গেছি । তারপর থেকে এই মেয়ের সামনে দিয়ে গেলেও খুব একটা পাত্তা দিতাম না । নিজের ঈগো বলে একটা কথা তো আছে ।

নিহিন আমার কাছেই এগিয়ে এল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনাকে ডাকলাম, শুনেন না ?
-শুনবো না কেন ? কিন্তু সবার ডাকে সাড়া দিতেই বা হবে কেন ? কি বলতে চাও বলে ফেল ।

নিহিন আমার দিকে তাকিয়ে একটু যেন রাগ দেখানোর চেষ্টা করলো কিন্তু আমি সেদিকে খুব একটা মনযোগ দিলাম না । নিহিন বলল
-আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ড আছে ?
-মানে ?
-মানে বোঝেন না ? আমি কি ইংরেজিতে বলছি ? আপনার ন্যাশনাল আইডি কার্ড আছে ?
-কেন তোমার নাই ?
নিহিনের মুখটা একটু কালো হয়ে গেল । তার মানে, নেই । আমি খানিকটা হেসে বললাম
-তাহলে তো দেখি তুমি বাংলাদেশের নাগরিকই না ! তুমি তো অন্য দেশী !
-দেখুন ফাজলামো করবেন না । যা জানতে চেয়েছি বলেন ! আছে ?
-আছে ! কেন ?
-আমার একটা কাজ করে দিতে হবে । আমার সিম টা নিবন্ধন করে দিতে হবে !
আচ্ছা আমি বুঝতে পারলাম কেন আমার কাছে আসা । কিন্তু ওর বাবা মা থাকতে হঠাৎ আমার কাছে সাহায্য চাচ্ছে কেন ? আমি বললাম
-তোমার আইডি কার্ড নেই বুঝলাম কিন্তু তোমার বাবা মায়ের তো আছে । তাদের টা নিয়ে কর ।
এই কথা শুনে নিহিনের মুখটা আরও একটু কালো হয়ে গেল । বলল
-আসলে ......
-কি আসলে ?
-আসলে আমার বাবা জানে না যে আমি মোবাইলে সিম ব্যবহার করি । এমন কি মাও জানে না ।
-তাহলে তোমাকে মোবাইল কিনে দিয়েছে কেন ?
-ওটাতে সিম ভরার অনুমুতি নেই । জানতে পারলে বাবা ঠিক ঠিক মোবাইলটা নিবে । বাবার কথা হচ্ছে ভার্সিটিতে না ওঠার আগে কোন মোবাইল নয় ।
-ঠিকই বলেছেন তোমার বাবা । পিচ্চি পাচ্চা মেয়েদের হাতে মোবাইল দেওয়াই ঠিক না !


নিহিন কে দেখলাম ক্রুদ্ধ চোখে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে কিছুটা সময় তবে সেটা শান্ত হয়ে এল কিছু সময় পরেই । আমি জানি এমন টা হবে । এবার এসেছে উঠ পাহাড়ে নিচে । আমি বললাম
-তা আমি এই রিস্ক কেন নেব ?
-রিস্ক মানে ?
-মানে ধর, আমি সিমটা নিবন্ধন করে দিলাম তারপর তুমি এই সিম দিয়ে কাউকে হুমকি দিলে কিংবা কারো কাছে চাঁদা চাইলে তখন ? আমি তো ফেঁসে যাবো, তাই না !
নিহিনের মুখটা এবার সত্যি সত্যিই লাল হয়ে গেল । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আপনার মনে হয় যে আমি চাঁদা বাজ ? আমি কাউকে হুকমকি দেব ?
-দেও নাই ?
-কি বলতে চান আপনি ?
-বলতে চাই যে তুমি কি আমার নামে আমার বাবা মাকে হুমকি দাও নাই ? বলোনি এবার এমন কিছু করলে আমাদের বাসা ছেড়ে দিতে হবে !
-ওটা আমি বলি নি । বাবা বলেছে !
-বাবাকে তো তুমি বলেছো নাকি ?
-না । আমি বলি নি । আপনি সেদিন আমার সাথে কথা বলছিলেন বাবা দেখে ফেলেছিল ! তাই আমি বলেছিলাম যে আপনি আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করছিলেন !
-বাহ । নিজে বাঁচার জন্য অন্যকে বিপদে ফেলা !
-দেখুন, ওটার জন্য আমি সরি । আমি সরি বলতে চেয়েছি পরে কিন্তু আপনি আমার সামনেই আর আসেন নি ।
কিছু সময় কেউ কোন কথা বলল না । একটু পরে নিহিন নিজেই বলল
-দিবেন না ?
-আমার কি লাভ তাতে !
-সব কিছুতে লাভ কেন খুজেন ? দিবেন কি না বলেন ! যদি না দেন তাহলে ঐ মোড়ের যে কাউকে বললেই ওরা দৌড়ে এসে আমার কাজটা করে দিবে !
-তাহলে তাদের কাছে যাচ্ছো না কনে ?
-বুঝেন না ক্যা............
কথাটা বলতে গিয়েও নিহিন থেমে গেল । আমার দিকে আহত চোখে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে তারপর বলল
-থাক, আপনার কিছু করতে হবে না ! আমি যাই ।

এই বলে নিহিন ছাদের দরজার দিকে পা বাড়াতেই ওর হাত ধরলাম । ভেবেছিলাম ও হয়তো ছাড়ানোর চেষ্টা করবে কিন্তু সেটা করলো না। দাড়িয়ে রইলো কিছুটা সময় । আমি ওর হাত ধরে চটেনে এনে নিজের কাছে নিয়ে এলাম । মেয়েটা তখনও অন্য দিকে তাকিয়ে আছে । আমি বললাম
-তোমার কাজ টা করে দিতে পারি তবে একটা শর্ত আছে !
-কি শর্ত ?
-আমাকে চটপটি খাওয়াতে হবে ।
-আচ্ছা খাওয়াবো !
-আর .....
-আর কি ?
-না মানে রাতে তোমার বাবা মা কখন ঘুমায় ?
-কেন ?
-না মানে তোমার বাবা মা জেগে থাকলে তো আর তোমাকে ফোন করতে পারবো না তাই না ?
-আপনি কেন আমাকে ফোন করবেন শুনি ?
-বারে, নিজের নামের নিবন্ধন করা সিম কার্ডে যদি ফোনই না করতে পারলাম তাহলে লাভ কি নিবন্ধন করে, তাও আবার বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন করা !
এবার নিহিন হেসে ফেলল ! তারপর মোবাইল থেকে সিম কার্ডটা বের করে দিয়ে আমার দিয়ে বলল
-আপনি আসলেই দুষ্ট অনেক !
-তাই ?
-তবে মেয়েরা দুষ্ট ছেলেদের পছন্দ করে !

নিহিন আর দাড়ালো না । আমার হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে দৌড় দিল ছাদএর ডরজার দিকে । দরজার কাছে একটু থেমে আমার দিকে একবার তাকালো । তারপর আড়াল হয়ে গেল ।
যাক, বায়োমেট্রিকের কারনে একটা লাভ তো হল । আমার বায়োমেট্রিক ভালবাসা শুরু হয়ে গেল !
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে এপ্রিল, ২০১৬ রাত ১০:৪০
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×