somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ বিষণ্ণ মীরা কিংবা আমি....

১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-আমি সাহায্য করবো ?

মেয়েটি একটু যেন চমকে উঠলো । একবার আমার দিকে তাকালো । তাকিয়েই চোখ সরিয়ে নিচে আবার নিচে পড়ে থাকা ব্যাগ গুলোর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় ! আমি আবার বলে উঠলাম
-কখন থেকে দেখছি বারবার ব্যাগ গুলো পড়ে যাচ্ছি । আমি সাহায্য করি ?

মেয়েটি একটু হাসলো । তবে হাসিটা জোর করে ফোটানো । আমার কেন জানি মনে হল আজকে মেয়েটার অসম্ভব মন খারাপ । আমি আর অনুমুতি তোয়াক্কা না করে সামনে এগিয়ে গেলাম । তারপর পড়ে থাকা কয়েকটা ব্যাগ তুলে নিলাম আমার হাতে ।

মেয়েটাকে আমি বেশ কিছু সময় ধরেই লক্ষ্য করছি । বসুন্ধরাতে আসলেই আমি এমনটা করি । আসে পাসের মানুষ গুলোকে দেখি । কোন কাজ নিয়ে আমি এখানে আসি না । আসি সময় কাটাতে । আজকে অবশ্য এসেছিলাম মুভি দেখতে কিন্তু সেটা শুরু হতে আরও বেশ খানিকটা সময় বাকি আছে । তাই এদিক ওদিক ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম । তখনই মেয়েটাকে দেখতে পেলাম । দুই হাত ভর্তি ব্যাগ নিয়ে হাটছে এদিক ওদিক । ব্যাগ গুলো ঠিক মত সামলাতে পারছে না ।

অবশ্য মেয়েটাকে লক্ষ্য করার আরেকটা কারন হচ্ছে মেয়েটা সাদা রংয়ের সেলোয়ার কামিজ পরে আছে । শুভ্র একটা সৌন্দর্য মেয়েটার সারা শরীরে বয়ে বেড়াচ্ছে । আমার চোখটা তাই মেয়েটার দিকে বার বার ফোরে যাচ্ছিলো ।

আমি ব্যাগ গুলো হাতে নিলেও মেয়েটা কোন বাধা দিলো না । আমার চেহারায় সব সময়ই একটা ভাল ভাল মানুষ ছাপ আছে । মানুস খুব আমাকে প্রথম দেখাতে খারাপ মনে করে না । মেয়েটাও হয়তো তাই করছে । আমি বললাম
-আপনি এখন কোন দিকে যাবেন না ? নিচে নাকি উপরে ?
-উপরে ! ক্ষুধা লেগেছে ।

মেয়েটা এমন কন্ঠে ক্ষুধা লেগেছে কথাটা বলল যেন ক্ষুধা লাগাটা কোন অপরাধ কিংবা এবং সে এখন এই অপরাধ টা করে লজ্জিত । আমি মেয়েটার কথা বলার ধরন দেখেই হেসে ফেললাম । বললাম
-আচ্ছা চলুন । আপনাকে আট তলা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসি ।

মেয়েটা কোন কথা না বলে আমার সাথে সাথে হাটতে লাগলো । আমি আটতলায় ক্যাপ্রিকর্নে মেয়েটাকে পৌছে দিয়ে যখনই ফেরৎ আসতে যাবো তখনই মেয়েটা বলল
-আপনি কিছু খাবেন ?
-আমার এখন এতো ক্ষুধা লাগে নি । আমি মুভি দেখে তারপর কিছু খাবো ভাবছি ।
-কি মুভি দেখবেন ?
-যেটা চলছে । ক্যাপ্টেন আম্রিকা !
আমার বলার ধরন দেখে মেয়েটা হেসে ফেলল । আবারও সেই বিষণ্ণ হাসি ! নাহ একটা কিছু করতে হবে দেখছি । মেয়েটার বিষণ্ণতার কারনটা শুনতে হবে । তাহলে হয়তো একটু হালকা হতে পারবে । আমি বললাম

-তবে ....
মেয়েটি আচ্ছা বলে নিচের দিকে তাকাতে যাচ্ছিলো আমার তবে শুনে আবার আমার দিকে ফিরে চাইলো । বলল
-তবে ?
-তবে কিছু অবশ্য এখন খাওয়া যায় যদি একটা শর্ত মানেন !
-কি শর্ত !
-এখানে খাওয়ার পরে আমার সাথে মুভি দেখতে হবে !

মেয়েটা সত্যি একটু অবাক হল । প্রথম দর্শনে কোন মেয়েকে এভাবে প্রস্তাব দেওয়াটা কোন ভাবেই যুক্ত দেখায় না কিন্তু মেয়েটা মন কোন কারনে অসম্ভব খারাপ । আমার কেন জানি মনে হল মেয়েটা স্বাভাবিক আচরন করছে না এই কারনে । কোন স্বভাবিক মানুষ এক সাথে এতো শপিংও করতে পারে না । হাতে নেওয়ার সময়ে দেখি সেখানে এমন কিছু জিনিস রয়েছে যে গুলো মানুষের একটার বেশি দরকারই পরে না । মেয়েটা সেখানে তিন চারটা কিনেছে । আমি নিশ্চিত মেয়েটা এগুলো ব্যবহারও করবে না । একেবারে প্রয়োজন ছাড়া কেনা কাটা । অস্বাভাবিক আচরন !

মেয়েটা বলল
-আচ্ছা । আগে খাওয়া শেষ করি । তারপর দেখা যাবে !

আমি হাসলাম কেবল ।

খেতে বসতে বসতেই প্রথমে আমি নিজের নাম বললাম । মেয়েটা নিজের নাম বলল মীরা চৌধুরী । তারপর টুকটাক কথা বলতে লাগলো । তবে খুব আস্তে আস্তে । সম্ভব মেয়েটা এমন ভাবেই কথা বলে । মেয়েটার কথা বলার ধরন দেখে আমার মনে আগের ধারনাটা আরও দৃঢ় ভাবে আসন গেড়ে বসলো যে মেয়েটার মন আজকে সত্যিই খারাপ কোন কারনে । আমি কেবল এই কারনেই মেয়েটাকে মুভি দেখার প্রস্তাবটা দিলাম । যদি মেয়েটার কিছুটা ভাল লাগে ।

খাওয়া শুরু করতেই আমি মেয়েটাকে খানিকটা অবাক করে দিয়েই বললাম
-আপনার আজকে মন খারাপ কেন ?
মীরা চামচ মুখে নিতে গিয়ে থেমে গেল । তাকিয়ে রইলো আমার দিকে কিছুটা সময় । মেয়েটা আসলেই বেশ খানিকটা অবাক হয়েছে আমার কথা শুনে ।আমি বললাম
-আজকে কোন কারনে আপনার মন খারাপ । এই মন খারাপ ভাব টা কাটানোর জন্যই মনে হয় এতো এতো শপিং করেছেন তাই ?

মীরা আবারও কিছুটা সময় আমার দিকে তাকিয়ে থেকে রাইসের চামচ টা মুখে দিলো । একটু চিবিয়ে তারপর গিয়ে ফেলল । তারপর বলল
-হুম ! মন খারাপ থাকলে আমি শপিং সেন্টারে ঘোরাঘুরি করি খুব ।
-মন খারাপের কারন টা কি আমাকে বলা যায় ?
-যায় !

আবারও কিছুটা সময় চুপ করে থেকে মীরা বলল
-আজকে আম্মুকে খুব বেশি করে মনে পড়ছিলো । কেন জানি না খুব বেশি ।
-উনি .....
-মারা গেছে !
-সরি, আসলে আমি জানতাম না !
-নাহ ঠিক আছে । সরি বলার কিছু নেই । মাঝে মাঝে আম্মুকে খুব মিস করি ! খুব বেশি ! আর কেউ নেই আমার !

আর কেউ নেই তো এই কথাটা এমন ভাবে বলল আমার নিজের কাছেই খুব খারাপ লাগলো । আমি তাকিয়ে দেখি মীরার চোখে পানি চলে এসেছে । চোখের জল বিষণ্ণতা দুর করনে খুব কার্যকরী । এটা যত বের হবে তত মানুষের মন হালকা হবে ! অবশ্য কিছু সময় পরেই মীরা সমনে নিল ।

মীরা ওর মায়ের ব্যাপারে আরও অনেক কথা আমাকে বলল । আমি চুপচাপ শুনতে লাগলাম । মীরার মুখ দেখে মনে হচ্ছিলো যে আমাকে বলতে পেরে মীরা ভাল লাগছে । আসলে কষ্টের কথা গুলো অন্যের সাথে শেয়ার করে নিলে মন খারাপের ব্যাপারটা কমে আসে । ঠিক তেমনি মীরাও যেন একটু হালকা হয়ে নিচ্ছিলো নিজের কাছে ।

খাওয়া শেষে দুজন মিলে মার্কিন অধিনায়ক দেখলাম । একটা অপরিচিত মেয়ের সাথে মুভি দেখাটা খারাপ লাগলো না । বরং বেশ ভাল লাগলো । মুভি শেষ করে মীরার সাথে সাথে হাটতে হাটতে পার্কিং লরের সামনে এলাম । মীরা ওর ড্রাইভারকে ফোন করে আসতে বলল । এবার মীরা আমাকে অবাক করে দিয়ে বলল
-আপনার মন কেন খারাপ শুনি ?
-মানে ? আমার মন খারাপ আপনাকে কে বলল ?
-দেখুন একজন বিষণ্ণ মানুষ অন্য একটা বিষণ্ণ মানুষের চোখ খুব ভাল করেই চিনতে পারে । আপনি যেমন আমার কষ্ট টা বুঝতে পেরেছে তেমনি আপনারও যে কোন কারনে মন খারাপ সেটাও আমি আপনার চোখ দেখেই বুঝেছি । কেন জানি মনে হয়েছে আপনার সাথে বললে কষ্ট খানিকটা কমবে । আপনার বেলাতেও সেটা সত্যি ।

আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না । ততক্ষনে গাড়ি চলে এসেচে । মীরা আমাকে প্রায় জোর করেই গাড়িতে তুলে নিলো । তারপর আমার বাসার ঠিকানা জানতে চেয়ে সেদিকে গাড়ি ছোটাতে বলল ।
মীরা বলল
-না বলতে চাইলে আমি জোর করবো না ।
আমি কিছুটা সময় মীরার দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম
-আসলে গত সোমবার সুপ্তির বিয়ে গেছে ।
-আপনার প্রেমিকা ?
-হুম !
-এই কথাটা আমি কাউকে বলতে পারছি না, ভেতরে যে কি হচ্ছে সেটা কাউকে বলতেো পারছি না । আমি ....।

আমি অনুভব করলাম আমার চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হয়ে । সুপ্তির বিয়ে হওয়ার পর এই প্রথম আমি কাঁদতে শুরু করলাম । কেন জানি নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না । মীরার দিকে তাকিয়ে দেখি মেয়েটার চোখেও পানি চিকচিক করছে । আমার জন্য মেয়েটা কোন করুনা নয় বরং স হানুভুতি অনুভব করছে । এটা যেন আমার কান্না কে আরও একটু বেশি বাড়িয়ে দিল ।

আমি জানলার দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিজেকে সামলাতে চেষ্টা করলাম !

রাস্তা এই সময়ে বেশ ফাঁকাই বলা চলে । মীরার গাড়িটা বেশ দ্রুতই চলছিলো মোহাম্মাদপুরের দিকে । মীরা অনেক টা সময় পরে বলল
-এখন ভাল লাগছে ?
-হুম ।

আসলেই আমার একটু হালকা লাগছিলো , অন্তত একটা মানুষের সামনে নিজের কস্ট টাকে বের করে দিয়ে আসলেই একটু হালকা লাগছিলো । আমি বললাম
-থ্যাঙ্কিউ ! আজকে এই কষ্ট টা বের না হলে হয়তো আর কোন দিন বের হত না ।
-আমার বেলাতেও তাই । কাউকে না বললে হয়তো কষ্ট টা ভেতরই রয়ে যেত । তোমাকেও ধন্যবাদ !

গাড়িটা একেবারে আমার বাসার সামনে এসে থামলো । আমাকে নামিয়ে দিয়ে গাড়িটা যখন চলে যাচ্ছিলো আমার মনের ভেতরে তখন একটা মিশ্র অনুভুতি হল । মেয়েটার সাথে হয়তো আর কোন দিন দেখা হবে না তবে মেয়েটা আজকে আসলেই বড় উপকার করলো আমার । আজকে রাতে আমি হয়তো একটু ঘুমাতে পারবো !
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৬ রাত ১১:১০
১৮টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পেচ্ছাপ করি আপনাদের মূর্খ চেতনায়

লিখেছেন সত্যপথিক শাইয়্যান, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৩৮

আপনারা হাদি হতে চেয়েছিলেন, অথচ হয়ে গেলেন নিরীহ হিন্দু গার্মেন্টস কর্মীর হত্যাকারী।
আপনারা আবাবিল হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাড়াতে চেয়েছিলেন, অথচ রাক্ষস হয়ে বিএনপি নেতার ফুটফুটে মেয়েটাকে পুড়িয়ে মারলেন!
আপনারা ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির আসল হত্যাকারি জামাত শিবির কেন আলোচনার বাহিরে?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৪


গত মাসের শেষের দিকে জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পারওয়ারের ছেলে সালমান, উসমান হাদির সঙ্গে খু*নি ফয়সালের পরিচয় করিয়ে দেন। সেই সময় হাদিকে আশ্বস্ত করা হয়—নির্বাচন পরিচালনা ও ক্যাম্পেইনে তারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

দিপুকে হত্যা ও পোড়ানো বনাম তৌহিদী জনতা!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৫


পাইওনিয়ার নিটওয়্যারস বিডি লিমিটেড (Pioneer Knitwears (BD) Ltd.) হলো বাদশা গ্রুপের (Badsha Group) একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। বাদশা গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান কর্ণধার হলেন জনাব বাদশা মিয়া, যিনি একইসাথে এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাজানো ভোটে বিএনপিকে সেনাবাহিনী আর আমলারা ক্ষমতায় আনতেছে। ভোট তো কেবল লোক দেখানো আনুষ্ঠানিকতা মাত্র।

লিখেছেন তানভির জুমার, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:২২



১০০% নিশ্চিত বিএনপি ক্ষমতায় আসছে, এবং আওয়ামী স্টাইলে ক্ষমতা চালাবে। সন্ত্রাসী লীগকে এই বিএনপিই আবার ফিরিয়ে আনবে।সেনাবাহিনী আর আমলাদের সাথে ডিল কমপ্লিট। সহসাই এই দেশে ন্যায়-ইনসাফ ফিরবে না। লুটপাট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×