somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ প্রেম-ভয়

০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-কি হল ? বারবার ফোন দিচ্ছো কেন ?

ও পাশ থেকে কোন আওয়াজ পাওয়া গেল না কিছু সময় । আমি জানতাম নিহিন কথা বলবেও না । আমার গলার আওয়াজ যখন একটু উচু হয় তখনও কখনও কথা বলে না । চুপচাপ শুনে যায় । এটা তো আজকালকার প্রেমিকাদের ভেতরে দেখাই যায় না ।
প্রেমিকা !

শব্দটা শুনে নিজেই খানিকটা হেসে উঠলাম । নিহিন তখনও ফোনের ওপাশেই রয়েছে । আমি বললাম
-কি ব্যাপার কথা বলছো না কেন ?
-না মানে ....
-একবার দেখলে না ফোন কেটে দিলাম । এর অর্থ কি ?
ওপাশ থেকে আবারও কোন কথা নেই । আমি বললাম
-আগে কতবার বলেছি যে যখন ফোন কেটে দিবো তার মানে আমি বিজি বারবার এতো ফোন দেওয়া কিছু নেই ।
-আচ্ছা !

আচ্ছা শব্দটা শুনেই মনে হল নিহিনের চোখে পানি চলে এসেছে । এই মেয়েটাকে আমি মাঝে মাঝে কিছুতেই বুঝতে পারি না । এমন মেয়ে আমি এর আগে দেখিও নি । এমন কেন এই মেয়েটা । একটু খারাপ লাগলো । এটো কঠিন কথা না বললেও হয়তো চলতো । কি্তু কাজের সময় মানুষ জন ফোন দিলে আমার কেন জানি খুব মেজাজ গরম হয়ে ওঠে ! আমি বললাম
-আমি কাজ করছি ।
-আচ্ছা কাজ শেষ করে ফোন দিও ।
-আচ্ছা দিবো । কিন্তু তুমি ঘুমিয়ে পড় । অনেক রাত হবে ।
-আচ্ছা ।
-আচ্ছা না । তুমি জেগে থাকবে না । ঘুমিয়ে পড় ।
-আচ্ছা !

নিহিন যদিও বলল যে আচ্ছা আমি খুব নিশ্চিত জানি যে নিহিন ততক্ষন পর্যন্ত জেগে থাকবে যতক্ষন পর্যন্ত আমি ওকে ফোন না দিবো । এই মেয়েটা এমনই । এমন কাজই করে যাবে । নিজে যা বুঝবে তেমনই করবে । অন্যেরা কি বলছে কেন বলছে সেটার দিকে কোন লক্ষ্য নেই ।

আমার সাথে পরিচয়টাও এমন ভাবেই হয়েছিলো । মোবাইলে কথা হত । আসলে একটা সময়ে আমার এমন কাউকে দরকার ছিল যার সাথে আমি ওকে শেয়ার করতে পারি । ওর সাথে পরিচয়ের পর থেকে ওর সাথে অনেক কথা হত । আস্তে আস্তে ওর সব কিছুই আমি জানতে পারি ঠিক তেমনি ও আমার সব কিছু জানতো । একদিন হঠাৎ করেই ও বলে বসলো যে ও আমাকে পছন্দ করে । খুব করে ধমক দিলাম । এমন না যে আমি কারো সাথে প্রেম-ট্রেম করবো না কিংবা করি নি আসল ব্যাপাটা হচ্ছে মেয়েটা আমার থেকে বেশ ছোট । আমার স্টুডেন্টও ওর থেকে এক বছরের সিনিয়র । বয়সের পার্থক্যটা প্রায় ৮/৯ বছর ।

আমি যতই মানা করতে চাইলাম নিহিন যেন ততই জেদ চেপে ধরে বসে রইলো । একদিন এমন একটা কাজ করে বসলো যে আমি অবাক না হয়ে পারলাম না । আমার কখন কোথায় যাই কি করি সেটা ও জানতো । বিশেষ করে যে সময়টাতে আমি খুব ডিপ্রেস ছিলাম কারো সাথে কথা বলার দরকার ছিল তখন নিহিনের সাথে কথা বলতাম । অনেক কথা বলতাম । এই কথাটা আসলে আমি কোন ভাবেই অস্বীকার করতে পারবো না যে আমার খারাপ সময়ে সে আমাকে অনেক বেশি সাপোর্ট দিয়েছে । সেখান থেকেই অনেক কথাই নিহিনের সাথে শেয়ার করা হত ।

একদিন টিউশনী যাচ্ছি । পরিবাগের ওভার ব্রীজের মাঝখানে এসেছি এমন সময়ই কেউ একজন আমার পেছন থেকে আমার নাম ধরে ডাক দিল । তাকিয়েই প্রথমে কাউকে চিনতে পারলাম না কিন্তু একজনকে দেখতে পেলাম । ধবধবে সাদা রংয়ের কামিজ আর সাদা লেগিংস পরা । চুল খোলা । মেয়েটা হাত দিয়ে নিজের চুল গুলো একপাশে সরিয়ে দিতে দিতে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো । মেয়েটার হাতে তাজা মেহেদীর রং দেখতে পেলাম ।

নিহিন !

আমি সত্যি অবাক না হয়ে পারলাম না । এই মেয়েটার সাথে আমার কোন দিন আগে দেখা হয় নি । কেবল ফোনেই কথাই হয়েছে । আর আজকে সরাসরি আমার সামনে ।
আমি কোন কথা না বলে কেবল তাকিয়েই রইলাম মেয়েটার দিকে ।
নিহিন আমার কাছে এসে বলল
-পছন্দ হয়েছে ?
-কি !
-আমাকে ?
-মানে ?
-মানে মনে নেই । তুমি একদিন বলেছিলে মনে নেই, সাদা সেলোয়ার কামিজ পরা হাতে মেহেদি আর চুল খোলা অবস্থায় কোন মেয়ে যডি আমাকে এসে প্রোপোজ করে তাহলে তুমি তার প্রেমে পড়ে যাবে ।
-নিহিন ! তুমি.....।
-পাগল আমি.....

আমি কোন কথা বলতে পারলাম না । মেয়েটা আসলেই পাগল হয়ে গেছে ।
নিহিন বলল
-তোমার সাথে মিন্টু রোডে হাটবো একটু ! হাটবে ?

নিহিনের দিকে তাকিয়ে আমি মানা করতে পারলাম না । কোন ভাবেই এমন আহবান মানা করার উপায় নেই । সেদিন থেকেই শুরু । মেয়েটা আমার সাথে প্রায় প্রতিদিনই দেখা করতে আসতো । আমার ভেতরে সে কি দেখেছিলো আমার জানা নেই । আমাকে ছাড়া যেন তার চলবেই না এমন একটা ভাব । আমার দিকে তাকিয়ে এমন ভাবে সে কথা বলতো যেন আমি ছাড়া আসে পাশে আর কেউ নেই ! আমি এই ব্যাপারটা কিছুতেই মন থেকে সরাতে পারতাম না ।

তবে আমি কেন জানি ভয় পেতাম । আমি ভয় পেতাম নতুন কোন সম্পর্কে জড়াতে । কিন্তু নিহিনকে ইগনোর করতে পারতাম না । কোন ভাবেই । খাতের কাজটা শেষ করতে প্রায় রাত দুইটা বেজে গেল । আমি নিশ্চিত জানি এখনও নিহিন জেগেই আছে । ওকে ফোন করতে গিয়েও কেন জানি করলাম না । হঠাৎই একটা কথা মনে হল । কাজটা যদিও খানিকটা পাগলামো হয়ে যাবে তবুও কেন জানি করতে ইচ্ছা হল কাজটা !




-হ্যালো !
নিহিনও হ্যালো বলে কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । আমি বললাম
-আছো ?
-হুম ! কাজ শেষ ?
-হু । তুমি এখনও জেগে আছো ?
-হুম । তোমার সাথে কথা না বললে ঘুম আসতো না ।
-কেন আসতো না ? আমি কি ঘুমের ঔষধ ?
নিহিন হেসে উঠলো । তারপর বলল
-আমার জন্য তুমি যে কি সেটা যদি তুমি বুঝতে ।
-এখন ঘুম আসবে ?
-আসবে !
-আচ্ছা এখনও তোমার ঘরের লাইট জ্বলছে । ওটা অফ করে দাও ।

কিছু সময় কোন কথা হল না । তারপরই হঠাৎই নিহিন বলল
-তুমি কোথায় ? আমার হোস্টেলর সামনে ?

ওর গলাতে আশ্চার্য একটা উত্তেজনা শুনতে পেলাম ।
-তুমি সত্যিই আমার হোস্টেলর সামনে ?
-হ্যা ।
-আমি আসছি ।
-খবরদার না । এতো রাতে হোস্টেলের বাইরে বের হলে তোমাকে রাস্টিকেট করে দিবে । তুমি কেবল জানলার সামনে এসো, তাহলেই আমাকে দেখতে পাবে ।
-দিক । জাহান্নামে যাক সব কিছু !

ঠিক মিনিট তিনেকের মাথায় আমি ওদের হোস্টেলর হেট খোলার আওয়াজ শুনতে পেলাম । তাকিয়ে দেখি নিহিন দরজা খুলে বের হয়ে আসছে । ঠিক বের হয়ে না, ও দৌড়ে আসছে । আমি জানি, ও আমাকে ঠিক ঠিক এসে জড়িয়ে ধরবে । মাঝ রাতের বেলা, নির্জন রাস্তাতে একটা মেয়ে দৌড়ে রাস্তা পার হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে দাড়িয়ে থাকা একটা ছেলে দিকে । অদ্ভুদ একটা দৃশ্য ।

কেন জানি আমার আবারও ভয় করতে লাগলো ।
কারো সাথে জড়িয়ে যাওয়ার ভয় !
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০১৬ বিকাল ৪:০৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেহেদী নামের এই ছেলেটিকে কি আমরা সহযোগীতা করতে পারি?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:০৪


আজ সন্ধ্যায় ইফতার শেষ করে অফিসের কাজ নিয়ে বসেছি। হঠাৎ করেই গিন্নি আমার রুমে এসে একটি ভিডিও দেখালো। খুলনার একটি পরিবার, ভ্যান চালক বাবা তার সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে হিমশিম... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভালোবাসা নয় খাবার চাই ------

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:০৬


ভালোবাসা নয় স্নেহ নয় আদর নয় একটু খাবার চাই । এত ক্ষুধা পেটে যে কাঁদতেও কষ্ট হচ্ছে , ইফতারিতে যে খাবার ফেলে দেবে তাই ই দাও , ওতেই হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতীয় ইউনিভার্সিটি শেষ করার পর, ৮০ ভাগই চাকুরী পায় না।

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৯ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৭



জাতীয় ইউনিভার্সিটি থেকে পড়ালেখা শেষ করে, ২/৩ বছর গড়াগড়ি দিয়ে শতকরা ২০/৩০ ভাগ চাকুরী পেয়ে থাকেন; এরা পরিচিত লোকদের মাধ্যমে কিংবা ঘুষ দিয়ে চাকুরী পেয়ে থাকেন। এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×