somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাদিয়া আর আমার সম্ভাব্য প্রেমের গল্প

০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




আমাদের ক্লাসের মোটামুটি সবাই নিশ্চিত ছিলাম যে আমাদের রেজাল্টের দিনেই নাদিয়ার চাকরি হয়ে যাবে ডিপার্টমেন্টে । রেজাল্টের দিনই ওকে ডিপার্টমেন্টে জয়েন করতে বলা হবে । সেই সাথে আমার বন্ধুদের এই ধারনাও ছিল যে আমাদের রেজাল্টের দিনই নাদিয়া আমার সাথে ব্রেকআপ করবে । আমার দিকে তাকিয়ে বলবে অপু অনেক হয়েছে । আমাদের সম্পর্কের এখানেই ইতি ।
আর ওদের দোষ দিয়ে লাভ কি, এমন ধারনা আমার নিজের ধারনাও খানিকটা এরকমই ।

তাই সকালে বেলা নাদিয়া যখন ফোন করে আমাকে বলল আজকে ও আমাকে একটা জরুরী কথা বলবে তখন মোটামুটি আমি নিশ্চিতই হয়ে গেলাম যে আজকে আমাদের রিলেশনের শেষ দিন । মনটা একটু খারাপই হল । ঠিক একটু না বেশ খারাপ হল । মেয়েটার সাথে আমার দিন গুলো বেশ শান্তিতেই কেটে যাচ্ছিলো । অন্যান্য প্রেমিকাদের মত নাদিয়া আমাকে কোন প্রকার প্যারা দিতো না তবে অন্যান্য প্রেমিকাদের মত আমাকে সুবিধা সে ঠিকই দিত । মন খারাপ হলেই ওকে ফোন করে বলা যেত মন খারাপ আমার । একটু কথা বলি । দেখা হলে ওর হাত হাটা যেত । মাঝে মাঝে রিক্সাতে কোথাও গেলে নাদিয়া আমার কাধে মাথা রাখতো । ভাগ্য ভাল হলে মাঝে মাঝে চুমুও খাওয়া যেত ওকে ।
আর সব থেকে বড় ব্যাপারটা ছিল সে আমাকে সীমাহীন স্বাধীনতা দিয়ে রেখেছিলো । এমন কি আমি যদি অন্য কোন মেয়ের সাথে রিক্সা করে ঘুরেও বেড়াতাম সেটা দেখেও ও কিছু বলতো না । আমার প্রতি তার অঘাত বিশ্বাস ছিল । আমার দিকে তাকিয়ে বলত, তোমার আসলে আমাকে ছেড়ে অন্য কোন মেয়ের সাথে সম্পর্ক করার ক্ষমতা নেই । তুমি পারবেই না !
ঘটনা অনেকটাই সত্য !
মেয়েটা যে আমার অনেক খানি জায়গা জুড়ে ছিল সেটা যেমন আমি খুব ভাল করে জানি তেমনি ও নিজেও জানে । কিন্তু কেবল তো আর আবেগ দিয়ে জীবন চলে না । আর এই বয়সে এসে এই আবেগ দিয়ে সব কিছু বিচার করলে চলে না । এটাও আমি খুব ভাল করে জানি !

নাদিয়ার সাথে প্রেমটাও আমার ঠিক অন্য ভাবেই হয়েছিল ।

ক্লাসে একটা ভাল ছাত্র থাকলে সবাই, বিশেষ করে কিছু কিছু মেয়ে সেই ভাল ছাত্রের পেছনে বেশ ভাল করেই ঘুরে বেড়ায় । এটা প্রায় প্রত্যেক ক্লাসেই দেখা যায় । কিন্তু যদি একটা ভাল ছাত্রী থাকে, তাও আবার মাথা খারাপ করা ভাল ছাত্রী তাহলে ছেলেরা সেই ছাত্রীর আসে পাশে যায় না । কারনটা খুব ভাল করেই জানে তারা যে এই মেয়ে তাদের দ্বারা পটবে না । অন্য কোন বড় ক্লাসের অন্য কোন বড় ভাল ছাত্র এই মেয়েকে পটিয়ে নিয়ে যাবে । এদের দিকে সময় নষ্ট করে লাভ কি !
তার উপরে নাদিয়া ছিল আমাদের ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান স্যারের মেয়ে । তার দিকে অন্য চোখে তাকালে গেলে বেশ কয়েকবার আমাদের সবার ভাবতে হত । সেদিক দিয়ে তার কাছে খুব দরকার না হলে কেউ যেত না । আর আমার তো যাওয়ার কোন দরকারই পড়ে না । আমি সারা জীবনই ছাপোষা টাইপের স্টুডেন্ট । পরীক্ষার আগের রাতে পড়ালেখা করে পাশ করি ।

যাই হোক ঘটনা শুরু একটা থিউরী নিয়ে । রাইবোনেস্কি মডেল । নামের মতই এই মডেলটা জটিল । স্যার ক্লাসে বকবক করে চলে গেল । ক্লাসের কারো মাথার ভেতরে ভাল ভাবে ঢুকলো না । আমার তো প্রশ্নই আসে না । সবাই যখন আগামীকালের পরীক্ষা নিয়ে টেনশন করছে আমি তখন গায়ে হাওয়া লাগিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি । তারপর হঠাৎ করেই আমি একটা অদ্ভুদ কাজ করে ফেললাম । ক্লাস শেষ করে বাসার দিকে যাচ্ছিলাম তখনই চোখ নাদিয়ার উপর । আমাদের ক্যাম্পাসের মাঠে বসে কি যেন পড়ছে । কি মনে হল আমি মেয়েটার দিকে এগিয়ে গেলাম । ওর সামনে গিয়ে বললাম
-বসব একটু ?
নাদিয়া আমার দিকে চোখ তুলে তাকালো । মেয়েটা সব সময়ই গম্ভীর হয়ে থাকে । কালো ফ্রেমের চশমার ভেতরে দিয়েও ওর গম্ভীর চোখে বেশ ভাল করে দেখা যায় । নাদিয়া বলল
-বস । কিছু বলবা ?
-তুমি আমাকে চেনো ?
-তোমার রোল নাম্বার ৪৬৯ । তুমি আমাদের ক্লাসের সব থেকে ফাঁকিবাজ স্টুডেন্ট !
আমি বসতে বসতে দাঁত বের করে হেসে দিলাম । বললাম
-এই চিনেছো । একটু হেল্প করবা ?
-কি হেল্প ?
-রাইবোনেস্কি মডেলটা একটু মাথার ভেতরে চালান দিতে সাহায্য কর দেখি । মানছি আমি ফাঁকিবাজ কিন্তু আমার গ্রেড কিন্তু একেবারে খারাপ না ।

আমার কথা শুনে নাদিয়া ঠোঁটে সুক্ষ একটা হাসি দেখতে পেলাম । আমি আবার বললাম
-হ্যা, এটা সত্যি যে সেটা তোমার গ্রেডের তুলনায় একেবারেই খারাপ তবে আমার কাছে এটাই অনেক !

তারপর নাদিয়া আমাকে মডেল বোঝাতে লেগে গেল । একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলাম মেয়েটার অসীম ধৈর্য্য ! শেষ পর্যন্ত আমাকে বুঝিয়েই ছাড়লো । যখন আমাদের পড়াশুনা শেষ হল তাকিয়ে দেখি দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে গেছে ।

পরদিনের পরীক্ষা ভাল হল । যখন রেজাল্ট দিল সবাই কেমন অবাক করা চোখে আমার দিকে তাকাতে লাগলো । কারন ইনকোর্সে ১০ মার্ক কেবল পেয়েছে দুজন । আমি আর নাদিয়া । নাদিয়া পাবে সেটা সবাই জানতো কিন্তু আমি কিভাবে পেয়ে গেলাম সেটা কেউ বুঝতে পারছে না । বাকি সবাই দুই তিনের বেশি পায় নি ।

ক্লাস শেষ করেই আমি আবার নাদিয়াকে ধরলাম ।
-থেঙ্কিউ ।
-ইট স ওকে !
-নাহ । কেবল ওকে বললে চলবে না । কেবল মাত্র তোমার কারনে ফুল-মার্ক পেয়েছি । আজকে বিকেলে তোমার ট্রিট !
-ধন্যবাদ । বিকেলে আমার কাজ আছে ।
-কি কাজ । পড়াশুনা ? আরে বাবা একদিন না পড়লে কি হবে ? আমি কিছু জানি না আজকে বিকেলে আল-ফ্রাসকোতে আসবা । বিকাল ৫টা ।
-দেখো .....
-কোন দেখা দেখি নাই । আমি দাওয়াত দিলাম আমি ওখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করব । আসা না আসা তোমার ব্যাপার ! আমি কিন্তু বসে থাকবো তোমার জন্য ।

আমি নাদিয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ওখান থেকে কেটে পড়লাম । যাওয়ার পথে একবার পেছন ফিরে তাকিয়ে দেকি নাদিয়া আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে । সম্ভবও এই ভাবে তার সাথে এর আগে কেউ কোন দিন কথা বলে নি কিংবা এভাবে কেউ জোরও করে নি । আমি যদিও নিশ্চিত ছিলাম না তবে কেন জানি মনে হচ্ছিলো নাদিয়া ঠিক ঠিক এসে হাজির হবে ।

সত্যি হল তাই । ৫ টার সময় আসতে বলেছিলাম নাদিয়া আসলো আরও দশ মিনিট লেট করে । তবে এবার আমার অবাক হওয়ার পালা । কারন আমি নাদিয়াকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম, অন্তত এইভাবে আমি ওকে আশা করি নি । ক্লাসে ও স্বাধারন ভাবেই আসে । ক্লাসে কিছু কিছু মেয়ে আছে যারা নিজেদের বাহ্যিক চেহারা এবং পোষাক পরিচ্ছেদ নিয়ে খুব বেশি সচেতন । তবে নাদিয়া কোন দিনই এমন ছিল না । কিন্তু আজকে ওকে দেখে আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম ।

আজকে ও চশমা পরে আসে নি । নীল আর সাদা মেশানো একটা কামিজ পরেছে সেই সাথে সাদা রংয়ের লেগিংস । চুল গুলো খোলা রয়েছে । মাঝে মাঝে সামনে চলে আসছে । ঠোটে হালকা লিপস্টিকও দিয়েছে । রিক্সা থেকে নামতে নামতে দুবার চুল সরিয়েছে চোখের সামনে থেকে । আমি ওর সামনে গিয়ে বললাম
-তুমি নাদিয়া তো, নাকি ? অন্যকেউ না তো ?
নাদিয়া একটু অপ্রস্তুত ভাবে হাসলো । সত্যিই আমি তখনই ওর প্রেমে পড়ে গেলাম । এই মেয়েটা এতো দিন কই ছিল ? কই ছিল ?

এতো সময় আমি আলফ্রেসকোর ভেতরের মেয়েদের কে দেখছিলাম । সবাই কত সুন্দর করে সেজে গুজে খেতে এসেছে । আমি যখন নাদিয়াকে নিয়ে ভেতরে ঢুকছি তখন সবার চোখ আমাদের দিকে ঘুরে গেছে । নাদিয়ার দিকে সবাই তাকিয়ে আছে । আসলেই মেয়েটা আজকে অন্য রকম লাগছে । অন্য রকম সুন্দর !
আমি ওকে নিয়ে বসতে বসতে বললাম
-তুমি এতো সুন্দর আগে তো লক্ষ্য করি নি ।
-করলে কি করতে ?
-তোমার কাছে মডেল না বুঝতে গিয়ে তোমার কাছে প্রেমের প্রস্তাব নিয়ে যেতাম ।
-হাহা ভেরি ফানি !
-সিরিয়াসলি ! ঠিক ঠিক দেখো আমি তোমাকে এক না একদিন প্রোপোজ করে বসবোই !

নাদিয়া আবারও অদ্ভুব ভাবে হাসলো । আমার কাছে মনে হল এই মেয়ের সাথে আমি প্রেম করবোই । পুরো সময়টা আমি ওর দিকে তাকিয়েই কাটালাম । ও প্রথমে একটু অস্বস্থি বোধ করলেও আস্তে আস্তে কাটিয়ে উঠলো সেটা । ছবি তুলতে চাইলে ও বলল
-কিন্তু এই ছবি ফেসবুকে দেওয়া যাবে না ।
-দিলে সমস্যা কি ?
-সমস্যা আছে । যদি রাজি থাকো তাহলে তুলতে পারো ।


আমি তাই রাজি হয়ে গেলাম । ওর একার ছবি তো তুলাম ওর সাথেও কয়েকটা ছবি তুললাম ।

পরদিন আবারও সেই স্বাভাবিক নাদিয়াকে দেখতে পেলাম । বই হাতে গম্ভীর চোখে ক্লাস করছে । তবে ওকে আমার ভাল লেগে গেছে । আমি ওর পিছু ছাড়লাম না । নাদিয়া অবশ্য এতে বিরক্ত হল না । আমার কেন জানি মনে হত লাগলো মেয়েটার আমারও সঙ্গ ভাল লাগছে ।

আমি আর দেরি করলাম না । পরের সপ্তাহেই আমি ওকে প্রপোজ করে ফেললাম । আমার দিকে অবাক করা চোখে তাকিয়ে থেকে নাদিয়া বলল
-এসব নিয়ে আমি কোন দিন ভাবে নি ।
-সেটা তোমার ব্যাপার । আমি তোমাকে আমার মনের কথা বললাম । তুমি অবশ্যই আমাকে রিজেক্ট করে দিতে পারো তবে আমাকে ইগনোর করতে পারবো না । কারন এই বাকি দিন গুলো আমি তোমার সাথে আঠার মত লেগে থাকবো । তুমি যেখানে যাবে আমিও সেখানে যাবো ।

সত্যি সত্যি বাকি দিন গুলো আমি ওর সাথে আঠার মতই লেগে থাকতাম । ক্যাম্পাসের পুরো সময়টা ও আমার সাথেই থাকতো । মাঝে মাঝে ওকে ডেট এ নিয়ে যেতাম যদিও ও এগুলোকে ডেট বলতে রাজি ছিল না ।

কিন্তু ওখনও নাদিয়া আমাকে ভালবাসি বলে নি । আমি ওকে মাঝে মাঝেই মনে করিয়ে দিতাম যে আমি রয়েছি তোমার জন্য । তবে একদিন আমাকে ভালবাসি বলেই ফেলল । সেদিনের ঘটনাও একটু অন্য রকম । পিএল চলছিল । ক্যাম্পাস বন্ধ । আমি বাসায় বসে বসে টিভি দেখছিলাম । সকাল ১১টার কিছু বেশি বাজে তখন । নাদিয়ার ফোন এসে হাজির ।
-হ্যালো ।
-তোমার বাসা নাম্বারটা কত বল তো ?
-মানে ?
-বাসা নাম্বার ?
-১/৫ ।
-লাল রংয়ের বাড়িটা ?
-হ্যা !
-আর রং খুজে পাও নি । এরকম বিদঘুটে রং কেউ করে ?
-আব্বার পছন্দ ।
-কতলা থাকো ?
-দুই তলা !

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নাদিয়া ফোন কেটে দিল । ঠিক তার কয়েক মিনিট পরেই কলিংবেল বেজে উঠলো । দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেখি নাদিয়া সামনে দাড়িয়ে আছে । ও যে আসবে সেটা আমাকে বলার দরকার ছিল তো । হঠাৎ করেই এভাবে হাজির । মায়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিলাম । মাকে আগেই বলেছিলাম নাদিয়ার কথা । মানে আমি যে ওকে পছন্দ করি এই কথা না, আমাদের ক্লাসের সব থেকে ভাল স্টুডেন্ট এই হিসাবে । মাকে বললাম যে পড়া লেখা করতে এসেছে ও । মা কত টুকু বিশ্বাস করলো যে জানে ।
তবে আমার কেন জানি মনে হচ্ছিলো নাদিয়া এসেছে অন্য কোন কারনে । মা রান্না ঘরে চলে গেলে ওকে নিয়ে নিজের ঘরে এসে হাজির হলাম । বলল
-কি হয়েছে বলবা ? এভাবে ?
নাদিয়া কোন উত্তর না দিয়ে হঠাৎ করেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো । বেশ শক্ত করেই জড়িয়ে ধরলো । আমার মনে হল আমি হারিয়ে গেছিলাম, অনেক দিন পরে আমাকে খুজে পেয়েছে এমন ভাবেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো । এটা আসলেই আমার জন্য একটু নতুন ছিল । আমি নিজে রিক্সায় চড়ার সময় ওর হাত ধরলাম । ও একটু লুক দিয়ে আমার দিকে তাকালেও বেশি কিছু বলতো না কিন্তু কোন দিন ওকে জড়িয়ে ধরার সাহস করি নি । আজকে কি হল ওর ।

এর আমাকে আরও একটু অবাক করে দিয়ে আমাকে চুমু খেয়ে বসলো । আলতো করে না গভীর ভাবে । আমার আরও দৃঢ় বিশ্বাস হল কোন ঝামেলা হয়েছে । সিরিয়াস কোন ঘটনা ঘটেছে । কিন্তু কি হয়েছে ।

অনেক সময় পরে নাদিয়া আমার দিকে ভাল করে তাকালো কিছু সময় । কিন্তু কোন কথা বলল না । আমার কাছে মনে মেয়েটার চোখ বলছে যে ও আমাকে ভালবাসে । আমি বলল
-তা কি হয়েছে আজকে ?
-আজকে আব্বুর সাথে ঝগড়া করেছি ।
-কি নিয়ে ?
-তোমাকে নিয়ে !
-আমাকে !! মানে কি ?
-আসলে আব্বু চাচ্ছিলো না আমি তোমার সাথে মিশি । আব্বু চায় আমাদের ডিপার্টমেন্টে যে নতুন লেকচারার এসেছে তার সাথে আমার বিয়ে দিতে ।
-ও ! তুমি কি বললে !
-কিছু বলি নি । বাসা ছেড়ে চলে এসেছি । হাটতে হাটতে মনে হল তোমাকে খুব বেশি মিস করছি । এতোটা দিন তুমি আমার পাশা পাশি ছিলে আমার কোন চাপ অনুভুত হত না সব কিছু সহজ মনে হত। আসলে আজকে বাবা যখন বিয়ের কথা বলল তখন বুঝতে পারলাম যে তোমাকে অনেক অনেক পছন্দ করি ! অনেক বেশি !


যদিও সেদিন থেকেই আমাদের অফিশিয়ার ভালবাসা শুরু তবুও সব কিছু আগের মতই থাকলো । ওর বাবা আমাকে অপছন্দ করলেও বেশি কিছু করার ছিল না নাদিয়ার জন্যই । নাদিয়া বলেছিলো যে যদি বেশি বাড়াবাড়ি করে তাহলে সে খারাপ কিছু করে ফেলবে ।
তবে নাদিয়া নিজের পড়ালেখা ঠিকই চালিয়ে গেল আগের মত । আমাদের সময় করে দেখা হত এর বেশি কিছু না ।

আমার বন্ধুরা জানার পরে ও বিশ্বাসই করতে চায় নি । আস্তে আস্তে বিশ্বাস করেছে । তবে এটাও বলে গেছে যে এই সম্পর্ক টিকবে না ।নাদিয়ার ধারে কাছে ছেলেরা যেত না আমি গেছি বলেই নাকি আমার প্রতি একটা আকর্ষন অনুভব করছে । কদিন পরেই মোহ কেটে যাবে । আসলে আমার মনেও যে এমন কিছু আসে নি সেকথা আমি বলবো না । নিজেকে তাই মানষিক ভাবে প্রস্তুত করেই রেখে ছিলাম যেন নাদিয়া যখন ব্রেক আপের কথা বলবে আমি যেন সেটা সামলে নিতে পারি ।


রেজাল্ট যেমন আশা করেছিলাম তেমনই হয়েছে । নাদিয়ার রেজাল্ট সবারই উপরে । সবাই যেমনটা ভেবেছিলো তেমন । আমি ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখি নাদিয়া আজকে শাড়ি পরে এসেছে । আমার দিকে এগিয়ে এসে বলল
-তোমার আরেকটু ভাল রেজাল্ট আশা করেছিলাম আমি ।
-আমার এক্সপেক্ট টেশন থেকে ভাল হয়েছে ।
নাদিয়া মুখ বাকিয়ে বলল
-বলেছে তোমাকে !
-শুনো আজকেই মনে হয় আমাকে জয়েন করতে হবে । আব্বু এমনই বলছিল । তোমাকে ফোন দিলেই তুমি পুকুর পাড়ে চলে যাবে । তোমার সাথে আমার জরুরী কথা আছে ।
-আচ্ছা ।

আমার মনটা একটু খারাপই হল । ব্রেক আপ টা আর কদিন পরে করলে ভাল হত না । আমার অনেক দিনের শখ ওকে নিয়ে নীলগীরি দেখতে যাবো । ওকে বলেও ছিলাম কিন্তু ও রাজি হয় নি ।
হয়তো এই ব্রেক আপের ধারনাটা আমাকে পেয়ে সবতো না যদি না নাদিয়ার বাবা মানে আমাদের চেয়ারম্যান স্যার আমাকে সেদিন ডেকে না পাঠাতো ।

আমাদের সেদিন শেষ ভাইভা ছিল । সবার ভাইভা শেষ হয়ে গেছে । আমরা বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি । এমন সময় পিয়ন এসে বলল যে চেয়ারম্যান স্যার আমাকে ডাকছে । আমি একটু ভয় পেয়ে গেলাম । নাদিয়ার ব্যাপার টা নিয়ে আমি এমনিতেই একটু ভয়ে ভয়ে থাকতাম । স্যারকে এড়িয়ে চলতাম । কিন্তু স্যার যখন ডেকেছে তখন তো না গিয়ে পারা যাবে না । আমি রুমে গিয়ে হাজির হালম । স্যার বসতে বললেন । তারপর অনেকটা সময় চুপ করে থেকে বললেন
-তোমাকে এখানে কেন ডেকেছি বুঝতে পারছো তো ?
-জি স্যার !
-দেখো তুমি বুদ্ধিমান ছেলে । তুমি বুঝবে । তুমি নিজেকে আর নাদিয়াকে কমপেয়ার করে দেখো । তোমার কি মনে হয় তুমি ওর জন্য বেস্ট অপশান ?
আমি কোন কথা না বলে মাথা নাড়লাম ।
স্যার বললেন
-তাহলে ?
আমি মনে মনে বললাম আমি কি করবো স্যার বলেন ।
স্যার বললেন
-নাদিয়া আমার কোন কথা কোন দিন অমান্য করেনি । কেবল তোমার ব্যাপারটা ছাড়া । তবে আমার বিশ্বাস ও ওকে আমি ঠিক ঠিক রাজি করাতে পারবো । আমার সাফায়েতকে পছন্দ । সামনের আগষ্টে ও ইউ এস যাচ্ছে । ততদিনে তোমাদের রেজাল্টও বের হয়ে যাবে । আমার ইচ্ছে যে সাফায়েতের সাথেই নাদিয়া যাক ।
আমি কিছু না বলে চুক করে রইলাম । স্যার বলেই চলল
-আমি চাই তুমি আমার মেয়ের জীবন টাকে নষ্ট কর না । আসলে তোমাকে কিছু করতে হবে না ও যখন তোমাকে ছেড়ে যেতে চাইবে তুমি কেবল বাঁধা কিংবা কোন প্রকার ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করবে না কেবল এই টুকু রিকোয়েস্ট ।
আমি বললাম
-স্যার ও যদি নিজ থেকে চলে যায় আমার ক্ষমতা নেই ওকে আটকানোর । আর আমি আটকাবোও না ।
-দ্যাটস গুড !

আমি স্যারের কনফিডেন্ড দেখে অবাক হয়ে গেলাম । স্যার একেবারেই যেন নিশ্চিত সে ঠিক ঠিক তার মেয়েকে আমার কাছ থেলে দুরে সরিয়ে দেবে ।
তারপর থেকেই আমাদের যোগাযোগ একটু কমে এল । আসলে ও বাইরে যাওয়ার জন্য জিআরই টোফেল পরীক্ষার জন্য আরও ব্যস্ত হয়ে গেল । তবে মাঝে মাঝে আমাদের ঠিকই দেখা হত । মাঝে মাঝে ওকে বলতে ইচ্ছে করতো তুমি আমাকে ছেড়ে যেও না প্লিজ ! কিন্তু বলা হত না !



আরও ঘন্টা খানেক পরে ও ফোন দিয়ে পুকুর পাড়ে যেতে বলল । আমি গিয়ে দেখি সেখানে ও আগে থেকেই হাজির । ওর মুখ একটু গম্ভীর । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আসলে অনেক দিন থেকে ভাবছিলাম কথাটা তোমাকে বলব !
বুঝতে পারলাম সময় চলে এসেছে ।
-তারপর মনে হল রেজাল্টের পরেই বলি । আজকে এপোয়েন্টমেন্ট লেটার হাতে পেয়ে মনে হল এটাই বলার সব থেকে চমৎকার সময় । -আচ্ছা
-তুমি খুশি না যে আমি চাকরি পেয়েছি ?
-আরে কেন খুশি হব না । অবশ্যই খুশি ।
-তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে না ।
-না আমি তোমার জন্য অনেক খুশি । আর আমরা এমনই আশা করেছিলাম ।
নাদিয়া আমার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় তারপর বলল
-আজকে তোমাকে একটা কথা বলবো । খুব জরুরী । আসলে জীবনের একটা কঠিন সিন্ধান্ত নিয়েছি ।
-হুম ।
-অনেক দিন থেকেই ভাবছি ।

আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । নাদিয়া এখনই নিশ্চয়ই বলবে আজকেই আমাদের শেষ দেখা ।

তখনই আমার মনে হল কিছু যেন একটা ঠিক নেই । আমি নাদিয়াকে উঠে দাড়াতে দেখলাম । তার দেখা দেখাদেখি আমিও উঠে দাড়ালাম । বললাম
-কি সমস্যা তোমার চেহারা এমন কেন লাগছে ? তুমি যা বলতে চাও বলে ফেল । আমি কিছু মনে করবো না ।
-আমি জানি তুমি কিছু মনে করবে না ।
এই বলেই নাদিয়া আমার সামনে হাটু গেড়ে বসে বসলো । তারপর হাতের ভেতর থেকে একটা কালো বক্স আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল
-অপু, উইল ইউ ম্যারি মি ?

আমি কালো ছোট বক্সটার দিকে তাকিয়ে দেখি সেখানে একটা আংটি দেখা যাচ্ছে ।

আমি কয়েক সেকেন্ড কি করবো বুঝে উঠতে পারলাম না । আমি নিজের চোখকে ঠিক বিশ্বাস করতে পারতেছি না । নাদিয়া আমাকে বিয়ের জন্য প্রোপোজ করছে । আমি বোকার মত তাকিয়ে রইলাম কেবল ।
ডান দিকে তাকিয়ে দেখি সাফিক ক্যামেরা নিয়ে আমাদের ছবি তুলছে । তার মানে ও আগে থেকেই এসব প্লান করে রেখেছিল । আমি হাত বাড়িয়ে আংটিটা নিলাম । বললাম
-আমি যে কবে থেকে তোমাকে বিয়ে করার জন্য বসে আছি ।

ব্যাস, এই বার চিৎকার চেঁচামিচির শুনতে পেলাম । তাকিয়ে দেখি পুরো পুকুর পাড়ে আমার ক্লাসের সবাই এসে হাজির । নাদিয়া সবাইকে বলে রেখেছিলো । এই মেয়েটা পাগল নাকি । নাদিয়া এবার সবার সামনেই আমাকে জড়িয়ে ধরলো ।

আমার তখনই বিশ্বাস হচ্ছিলো না ! আসলেই এসব হচ্ছিলো নাকি আমি স্বপ্ন দেখছি । নাদিয়ার বাবা কি ভাববে ! উনি যে আমাকে এতো চমৎকার ভাবে বোঝালো সেটার কি হবে ! আর সাফায়েত সাহেবেরই বা কি হবে ! যা হয় হোক । এতো চিন্তা করার দরকার আছে । নাদিয়া এখন আমার হয়ে যাচ্ছে এটাই হচ্ছে সব থেকে বড় কথা ।


পরিশিষ্টঃ
দেরি না করে বিকেলেই বিয়ে করে ফেললাম ওকে । আসলে আমি মোটেই রিস্ক নিতে চাচ্ছিলাম না । কখন আবার কি হয় । কখন নাদিয়ার বাবা আবার কি করে ফেলে ।
বাসাও কাউকে কিছু জানালাম না যে বিয়ে করেছি । নাদিয়া আমাকে অবাক করে দিয়া বান্দরবানের দুইটা টিকিট আগে থেকেই কেটে রেখেছিলো । ওকে বলেছিলাম ওকে নীলগীরি যাওয়ার ইচ্ছের কথা ও সেটা মনে রেখেছে ঠিকই । আপাতত হানিমুনে যাচ্ছে বাকি গল্প ফিরে এসে !


কিছু বানান ভুল থাকবে । এই জন্য ক্ষমা প্রার্থী
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই আগস্ট, ২০১৬ রাত ১২:৪১
১১টি মন্তব্য ১১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×