somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ এক সপ্তাহের প্রেম

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

-মাত্র এক সপ্তাহের জন্য ?

-মানে ?

-মানে মাত্র এক সপ্তাহের জন্য রাজি হও প্লিজ !

-অপু সাহেব আপনার মাথা খারাপ হয়ে গেছে । বুঝেছেন ! আপনার কাছে রিলেশন করাটা একটা ছেলে খেলা তাই না ?

-আমার ব হু দিনের শখ একটা ডাক্তার মেয়ের সাথে প্রেম করবো । আর আমি খুব ভাল করেই জানি যে ডাক্তারি পাশ করার সাথে সাথেই তোমার বাবা মা তোমাকে কোন ডাক্তারের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে । জীবনে কি করলে তাহলে বল !

-দেখুন...

-সত্যি ! একবার ভেবে দেখো । সারা জীবন মা আর বাবার ইচ্ছার মত করে জীবনটা পার করে দিলে । মাত্র একটা সপ্তাহ নিজের মত কাটাও প্লিজ ! প্লিজ .....

অপুকে আমি বেশ কিছু দিন ধরেই চিনি । অনেক দিন ধরেই ছেলেটা আমার লিস্টে আছে । কিভাবে এড হয়েছিলো আমি নিজেই জানি না । তবে ইদনিং বেশ কথা হয় । আর আমার কেন জানি নিজেরও ছেলেটার সাথে কথা বলতে ভালই লাগে । কদিন আগে ছেলেটা ব্রেক আপ হয়েছে । আমি ওকে শান্তনা দিতে গিয়ে দেখি ছেলেটা তো মোটেই দুঃখে নেই । বরং যেন ব্রেকাপ হয়ে ছেলেটার জন্য ভাল হয়েছে ।

আর আজকে ছেলে অদ্ভুদ একটা কাজ করে বলসো ।

অবশ্য তার একদিন আগে একটা স্টাটাস নিয়ে আমি খানিকটা কনফিউজ ছিলাম । তার নাকি কোন ডাক্তারের সাথে প্রেম করার অনেক শখ ! আর আজকে আমাকে বলে কি না আমার গার্লফ্রেন্ড হবে । আমি রাগ করবো কি আমার কেন জানি হাসি এল । তবে শেষে কথা বার্তা হয়ে এল এক সপ্তাহের জন্য আমাকে তার গার্লফ্রেন্ড হতে হবে এবং হবেই ।

আমি বললাম

-জি না !

-জি হ্যা !

-না !

-হ্যা !

তারপর ছেলেটা আরেকটা পাগলামো করে বসলো । আমাকে রিলেশনশীপ রিকোয়েস্ট পাঠালো । আমি সত্যিই অবাক না হয়ে পারলাম না । ছেলেটার মাথায় কি চলছে কে জানে ! তার থেকেও বড় কথা আমার মনের ভেতরে কি চলছে আমি নিজেও জানি না । ছেলেটা সারাটা জীবন আমি সত্যি সত্যিই বাবা মায়ের কথা মতই চলেছি । আমি নিজেকে নিজেই অবাক করে দিয়ে ছেলেটার রিকোয়েস্ট কনফার্ম করে দিলাম ।

তারপর অপুকে ইনবক্স করে বললাম

-এক সপ্তাহ ! ওকে ?

প্রথমে ছেলেটা একটা বড় স্মাইলি দিল । তারপর বলল

-আচ্ছা !

-আর একটা দিনও বেশি না !

-ওকে বাবা ! ওকে ।

তারপর সত্যি সত্যি ছেলেটার সাথে এক সপ্তাহের প্রেম শুরু হয়ে গেল । প্রথম দিন কেবল ফোনে কথাই বললাম । ছেলেটা এতো কথা বলতে পারে । অবশ্য আমার কথা শুনতে এবং বলতে খারাপ লাগছিলো না । ওর জীবনের প্রথম থেকে শুরু করে একেবারে শেষ পর্যন্ত যেন সব কিছুই আমাকে বলে ফেলল । আমিও রাত জেগে ছেলেটার সাথে অনেক কথাই বললাম ।

জানি সব মিথ্যা তবুও বলতে খারাপ লাগছিলো না ।

পরদিন ক্লাসে গিয়ে সবাই আমাকে কত রকম প্রশ্ন করলো ।

ছেলেটা কে ?

কিভাবে এসব হল !

তারা তো বিশ্বাসই করতে চাইলো না যে আমি এমন একটা কাজ করতে পারি আরও কত কিছু ! আমি বেশি ভাফ প্রশ্নের উত্তরই রহস্যময় ভাবে দিলাম । সবাই খুবই অবাক হল আমার কথা শুনে । আমার অবশ্য মন্দ লাগছিলো না ।

ক্লাস শেষ করে আমার জন্য সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছিলো । অপু আমার ক্যাম্পাসে এসে হাজির । আমি সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম । ছেলেটা সবার সামনে এসেই আমার হাত ধরলো । একটু লজ্জা লাগছেও ওর সাথেই ক্যাম্পাসের ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিতে লাগলাম । ছেলেটা আসলেই এমন ভাবে কথা বলছিলো যেন কতদিন আমাদের চেনা পরিচয় !

তারপের তিনটা দিন যেন স্বপ্নের মত কেটে গেল । এক সাথে ঘোরাঘুরি মুভি দেখা আর কত কিছু । সত্যি বলতে কি আমি জীবনে যা করি নি এই দুই দিনে সব কাজ করে ফেললাম । চার নাম্বার দিনে আমাদের ঝগড়া বেঁধে গেল । আমি নিজে নিজের ঝগড়া করার ক্ষমতা দেখে আমি নিজঐ অবাক হয়ে গেলাম । পাশের ঘর থেকে মা এসে জানতে চাইলো কার সাথে কথা বলছি ।

ছয় নাম্বার দিনটা আমাদের মাঝে কোন কথাই হল না । ফেসবুকে তাকিয়ে দেখি সে মেয়েদের পচিয়ে স্টাটাস দিতে লাগলো । আমি কোন কথা বললাম না । তবে মজা লাগছিলো । প্রেম করার অনুভুতিটা টের পাচ্ছিলাম । মজাও পাচ্ছিলাম খুব । সাত নাম্বার দিনে অপু নিজে আমার কাছে এসে হাজির আমাকে খানিকটা জোর করে বাইরে নিয়ে এল । আমি বেশ কয়েকবার জানতে চাইলেও বলল না । তবে কিছু সময় পরে টের পেলাম আমরা মাওয়ার দিকে যাচ্ছি । দুপুরে তাজা ইলিশ ভাজা দিয়ে খাওয়া দাওয়া চমৎকার হল । তারপর দুজন ট্রলার ভাড়া করে নদীর বুকে দুজনে বের হয়ে পড়লাম । সত্যি বলতে কি এতো চমৎকার লাগছিলো আমি নিজে বলে বোঝাতে পারবো না । যেতেই ইচ্ছে করছিলো না । যখন ফিরে আসছিলাম তখন অপুর মন খারাপ মনে হল খানিকটা । আমি বললাম

-কি হল আমরা এতো চমৎকার সময় কাটালাম । আর তোমার মন খারাপ ?

-হুম !

-কেন ?

-বৃষ্টি হয় নি একবারও !

-বৃষ্টি দিয়ে কি করবে ?

-ইচ্ছে ছিলো তোমার সাথে বৃষ্টিতে ভিজবো । কিন্তু তা আর হল কই !

-থাক সব ইচ্ছে পূরন হতে নেই ।

-তাও ঠিক অবশ্য !

ফেরার পথে বাসের ভেতরে ওর কাধে মাথা দিয়ে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি আমি নিজেই জানি না । ঢাকা এসে ও নিজেই আমাকে ডেকে তুললো । বাস থেকে নেমে নিজেই রিক্সা ঠিক করে আমাকে বাসায় পৌছে দিল । রাত হয়েছিলো তবুও অপুর চেহারা দেখে মনে হচ্ছিলো ছেলেটার মন খারাপ খানিকটা !

যাওয়ার সময় ছেলেটা আরেকটা অদ্ভুদ কাজ করলো । আমার কপালে ছোট্ট করে একটা চুম খেল চট করে । তারপর বলল

-থ্যাঙ্কিউ !

-তোমাকেও !

আমি যদি জানতাম ছেলেটার মনে তখন কি চলছে । ঐদিন রাতেই লক্ষ্য কারলাম যে আমার রিলেশনশীপ স্টাটাস আর নেই । অপুকেও আর কোথাও খুজে পেলাম না । একবার মনে হল আমাকে কি ব্লক করে দিল ? পরে খোজ নিয়ে জানতে পারলাম যে ওর আইডি বন্ধ । কেউ কোন কিছু বলতে পারলো না । ও বলেছিলো মাত্র এক সপ্তাহের প্রেমিক হবে । তাই বলে এভাবে যোগাযোগ বন্ধ করে দিবে ?

তা কিভাবে হয় !

আমি খুব বেশি আমলে নিলাম না । দিন ভাল গেছে । আমিও জানতাম এমন হবে । এর বেশি কিছু না । আমারও প্রথমে এভাবে ব্লক মারার ইচ্ছে ছিল । তবে ছেলেটা নিজেই এভাবে গায়েব হয়ে গেল কেন ?

পরদিন সন্ধ্যায় আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি এল । আমি জানালার ধারে বসে বৃষ্টি দেখছিলাম তখনই আমার ফোন বেজে উঠলো । তাকিয়ে দেখি অপুর ফোন । আমি রিসিভ করলাম ।

-একটু নিচে আসবে ?

-কোথায় তুমি ?

-তোমার বাসার নিচে ।

-কেন ?

-আসো প্লিজ !

আমি খুব বেশি চিন্তা না করে নিচে নেমে এলাম । অপু ছাতা মাথায় দিয়ে অপেক্ষা করছিলো আমি সামনে আসতেই ওর চোখটা আমি কেমন ঘোলা ঘোলা দেখতে পেলাম ! আমি বললাম

-কি হয়েছে ? তোমাকে এমন মনে হচ্ছে কেন ?

-এমনি । দেখো না আজকে বৃষ্টি এসেছে ।

-হুম !

-ভিজবে ?

-কি ! এখন ?

-হ্যা ! আর হয়তো সুযোগ আসবে না ।

-এক সপ্তাহ কিন্তু পার হয়ে গেছে ।

-এই জন্যই তো অনুমুতি চাইছি !

-আচ্ছা চল !

প্রবল বৃষ্টিতে আমরা ছাতা মাথায় দিয়ে একসাথে হাটতে লাগলাম রাস্তার উপরে । খারাপ লাগছিলো না অবশ্য বরং ভাল লাগছিলো অনেক । জানলা দিয়ে মা আমাদের দিকে কেমন চোখে তাকিয়ে ছিল । তারপরঐ অপু সেই অদ্ভুদ কাজটা করলো । ছাতা ফেলে আমার দিকে এগিয়ে গেল । আমি ওর চোখের তাকিয়েই বুঝে গেলাম ও কি করতে যাচ্ছে ! আমি কেন জানি বাঁধা দিলাম না । চারিদিকে বৃষ্টি পড়ছে । আমার মাথা থেকে ছাতাটা এমনিতেই সরে গেল । আমি একদম ভিজে গেলাম । আমার অবশ্য সেদিকে খেয়াল নেই । আমার দৃষ্টি অপুর দিকে । ল্যাম্পপোস্টের আলোতে ও আমাকে কি গভীর ভাবে চুমু খেল সেটা আমি বলতে পারবো না ! আমি তখন যেন অন্য জগতে ছিলাম । আমরা দুজনেই দিলাম !

তারপর ও আর আমি বেশ খানিকটা ফুটপাতের উপরে বসে বসে ভিজলাম একসাথে । একটা সময়ে ও উঠে চলে গেল । আমি অদ্ভুদ একটা অনুভুতি অনুভূতি হচ্ছিলো !

কিন্তু পরের দিনেই টের পেলাম আমি কিছু যেন একটা মিস করছি । পরের সপ্তাহে আমি অবাক হয়ে আবিস্কার করলাম যে আমি অপুকে মিস করছি । ওর সাথে কাটানোর সময়টাকে মিস করতে শুরু করেছি ।

নিজের কাছেই প্রশ্ন করার চেষ্টা করলাম যে এমন কেন হচ্ছে ?

এমন তো হওয়ার কথা না ! আরও সপ্তাহ খানেক পার না হতে হতে আমি বুঝতে পারলাম ছেলেটাকে আমি আসলেই মিস করতে শুরু করেছি । আর আমি কোন ভাবেই সেটা নিজের মন থেকে বের করতে পারছি না । আর এই দিকে ছেলেটার কোন খোজ নেই । মানে সেই যে আইডি বন্ধ করেছে আজও খুলে নি ! 

সর্বশেষ এডিট : ১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৬ রাত ৯:৪৭
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মেঘ ভাসে - বৃষ্টি নামে

লিখেছেন লাইলী আরজুমান খানম লায়লা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩১

সেই ছোট বেলার কথা। চৈত্রের দাবানলে আমাদের বিরাট পুকুর প্রায় শুকিয়ে যায় যায় অবস্থা। আশেপাশের জমিজমা শুকিয়ে ফেটে চৌচির। গরমে আমাদের শীতল কুয়া হঠাৎই অশীতল হয়ে উঠলো। আম, জাম, কাঁঠাল,... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×