somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট-গল্পঃ সানগ্লাস

২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দিশার দিকে তাকিয়ে মনে হল অনেকটা পথ ও হেটে এসেছে । একেবারে ঘেমে নেয়ে একাকার অবস্থা । আমাকে দেখে জলদি জলদি মুখটা মুছলো হাতের রুমাল দিয়ে । অন্য হাতে ছাতাটা ধরা ।
আমি ওর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে তাকিয়ে রইলাম কিছুটা সময় । তারপর বললাম
-তুমি আবারও হেটে এসেছো ?
অপরাধ ধরা পরে গেছে এমন একটা ভাব করে দিশা হাসলো । আমি খানিকটা রাগের মুখ নিয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে । ও আমার কাছে এসে বলল
-প্রতিদিন তো আর আসি না । মাঝে মাঝে যখন রিক্সা পাই না তখন আসি !
-রিক্সা পাও নি সিএনজি নিয়া আসবা ? এতো কষ্ট করার মানে কি ?
দিশা যেন আমার কথা শুনে খুব মজা পেল । আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো । তারপর বলল
-আশিক সাহেব, ১০ হাজার বেতনের চাকরিতে রিক্সা চড়াটাই অনেক বিলাসিতা । তার উপর আবার সিএনজি !

আগে এই কথাটা দিশা প্রায়ই বলতো । রিক্সাতে চড়তে চাইতো না । আমার জোর করার কারনে এখন রিক্সাতে উঠে । বলেছি যে যদি রিক্সা করে না আসা যাওয়া কর তাহলে চাকরি করতে দিবো না । এতো কষ্ট হবে না । তারপর গিয়ে রিক্সা করে যাওয়া আসা করে ।

আমার আর দিশার সংসারে টাকার অভাব ছিল । তবে ভালবাসার কোন অভাব নেই । দুজনের চাকরি করি ছোট খাটো । দুজনের চাকরি মিলে কোন মতে সংসারের খরচ চলে যায় । কিন্তু এতে আমার কিংবা ওর কারো কোন অভিযোগ নেই । অফিস থেকে ফিরে এসে ওর সাথে সময় কাটাই । মাঝে মাঝে সময় থাকলে বিকেলে হাটতে বের হই । ছুটির দিন গুলোতে এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াই ওকে নিয়ে । রাতে ওকে জড়িয়ে ঘুমাই । সকালে দুজন মিলেই রান্না করে তারপর অফিসে যাই । ওর স্কুল বিধায় ও একটু আগে চলে আসে ।

আজকে অবশ্য অফিস থেকে আমি একটু জলদি জলদি চলে এসেছি । এসে দেখি ও বাসার গেটের কাছে এসে দম নিচ্ছে । দিশা বলল
-আজকে এতো জলদি চলে এলে যে ?
-আবার যেতে হবে । একটা কাজে এসেছি । ভাবলাম তোমার সাথে দেখা করে যাই । কিছু খেয়ে যাই ।
-ও তাহলে চল জলদি । খাবার গরম করে দেই ।
-আরে আগে বিশ্রাম নাও । এই অবস্থায় সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে হবে না ।

সিড়ি ঘরেই চুপ করে ওকে নিয়ে বসি কিছুটা সময় । মাঝে মাঝে ওর দিকে তাকিয়ে আমার মনে হয় এতো অভাবের মাঝেও মেয়েটা কি হাসি মুখে দিন পার করছে । একটা অভিযোগ নেই একটা বারতি আবদার নেই । আল্লাহ সবার কপালে এমন বউ লিখে রাখে না । আমি বললাম
-চল তোমাকে কোলে করে নিয়ে উঠে উপরে ।
-মোটেই না ।
-আরে আমার শক্তির উপর তোমার ভরশা নেই ?
-সেটা আছে কিন্তু এতো কষ্ট করতে হবে না ।
-আরে চল না । না পারলে তখন নামিয়ে দেব !
-বলেছি না দরকার নেই ।

দিশা অবশ্য আরও মানা করতে চাইলো তবে কাজ হল না । আমি ঠিক ঠিক ওকে কোলে নিয়ে সিড়ি ভেঙ্গে উঠতে লাগলাম । আমার মাঝে মাঝে এমন পাগলামো করতে খারাপ লাগে না ।

প্রতিদিনই এমন কোন কোন আনন্দে আমাদের দিন কাটে । ওকে পেয়ে একটা দিন এমন কি একটা মুহুর্ত মনে হয় না এই মেয়েটার সাথে বিয়ে হয়ে আমি জীবনে ভুল করেছি । আমি কোন কোন কোন দিন সারপ্রাইজ দেই মাঝে মাঝেও আমাকে অবাক করে ওর কাজ দিয়ে । ঠিক দুইদিন পরেই ও আমাকে তেমন ভাবেই অবাক করে দিল । ঠিক রাত বারোটায় আমাকে জন্মদিনের উইস করলো । করবে সেটা আমি জানতাম । ও ওর নিজের জন্মদিন ভুলে যেতে পারে তবে আমার টা কোন দিন ভুলবে না । একটা ছোট কেকেরও ব্যবস্থা করেছে দেখলাম । কিন্তু কেক কাটার পরেই আসল অবাক হওয়াটা । আমার জন্য ও একটা উপহার কিনেছিলো । প্যাকেট খুলতে দেখি একটা ফাস্ট ট্র্যাকের সানগ্লাস । আমি প্রথমে ভেবেছিলাম রেপ্লিকা । কারন আসলটা কেনার মত টাকা জোগার করা ওর পক্ষে একটু কষ্টের আর এতোটা বিলাসিতা আবার আমাদের মানায় না ! কিন্তু একটু পরেই বুঝতে পারলাম যে সানগ্লাস টা আসল । রেপ্লিকা না ! আমি ওর দিকে তাকিয়ে বলল
-এতো দাম দিয়ে কিভাবে কিনলে ?
-সেটা তোমাকে চিন্তা করতে হবে না । তোমার না খুব শখ ছিল এই সানগ্লাসের । তোমার জন্য কিনেছি এটাই বড় কথা !
-দিশা ! সত্যি করে বল .....

তখনই আমার মনে কিছু একটা বাড়ি মারলো । কিছু একটা যেন মনে পড়ে গেল । ব্যাপারটা মনে হতেই আমার চোখ খানিকটা সিক্ত হয়ে উঠলো । পাগল মেয়েটা পুরো মাস জুড়ে একটা দিনই স্কুলে রিক্সা করে যায় নি । তার বদলে হেটে হেটে এই রোদের ভেতরে যাওয়া আসা করেছে । সেই টাকা বাঁচিয়ে ও এই সানগ্লাস কিনেছে ।

আমি ওকে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে ধরলাম ! যেন আমার বুকের স্পন্দনটা ও শুনতে পারে । ওকে মুখের কথা দিয়ে নয় হৃদয় দিয়ে অনুভব করাতে ইচ্ছে যে আমি ওকে খুব বেশি ভালবাসি । খুব বেশি ভালবাসি !
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১১:৩০
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×