somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু-গল্পঃ বুঁচি গার্লফ্রেন্ড

০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মেয়েটি ভয়ে কাঁদতেও ভুলে গেছে । কেমন জড় হয়ে বসে আছে । কারো দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছেও না । অবশ্য তাকানোর মত আসেপাশে তেমন কেউ নেইও !
মেয়েটি একটা চেয়ারে চুপ করে বসে আছে । কোলের উপর একটা এক কেজি ওজনের আরডিএক্স সম্বলিতো বোমা ! বোমাটা থেকে এক গুচ্ছ তার বের হয়ে এসেছে যেটা মেয়েটার গলার সাথে পেঁচিয়ে আটকানো । অনেক টা ওয়ান টাইম ইউজ জয়েন্ট ক্লিপের মত । কিছুতেই খোলা সম্ভব না । তার কেটে মেয়েটাকে মুক্ত করতে হবে । কিন্তু কাঁটতে কিংবা ছিড়তে গেলে বোমা ফেটে যাবে । আগে বোমা ডিফিউজ করতে হবে ।

আমি মেয়েটার সামনে বসতে বসতে বললাম
-কি খবর তোমার ?
একটু হাসার চেষ্টা করলাম ।
মেয়েটা খানিকটা অবাক চোখে আমার দিকে তাকালো । এমন অবস্থায় কেউ কুশল জিজ্ঞেস করতে পারে মনে মনে হয় ভাবে নি ।
মেয়েটিকে আরেকটু অবাক করে বললাম
-তোমার চেহারা অনেক টা আমার প্রাক্তন গার্লফ্রেন্ডের মত ! জানো ? তোমার হাসিটাও নিশ্চই ওর মত হবে ! একটু হাসো তো ?
মেয়েটি আরও খানিকটা অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো ! কিছু বলল না !

আমি কিছুটা সময় বোমাটার দিকে তাকিয়ে রইলমা । এফটি৫৪৭ লেভেলের বোমা মনে হচ্ছে । এই টাইপের বোমা গুলো স্বাধারন ডিফিউজ করা যায় না । টাইম সেট করা থাক্বে । সময় পার হলেই ফুট্টুস !

আমি বোমাটার গায়ে লাগানো ডিজিটাল ঘড়িটার দিকে তাকিয়ে দেখি ওটাতে এখনও ১৫ মিনিটের মত সময় আছে । তার মানে মেয়েটা আর ১৫ মিনিট বেঁচে থাকবে !
মেয়েটিও মনে হয় সেটা বুঝতে পেরেছে । ইতি মধ্যেই আসে পাশের সবাইকেই সরিয়ে নেওয়া হয়েছে । মেয়েটি কে একটি ঘরের ভিতর রাখা হয়েছে । যদিও বলা হচ্ছে বোম স্কোয়ার্ড আসছে কিন্তু তারা সময় আসতে পারবে না । তার আগেই বোমা ফুটে যাবে ।

মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-আমি মারা যাবো তাই না ?
-কে বলল তোমাকে ?
-আমি জানি ! আমার মনে হচ্ছে এই বোমা ফেটে এখনই আমি মারা যাবো ।
আমি কি বলবো ঠিক বুঝতে পারলাম না ।
মেয়েটি বলল
-জানেন, আমি না সারা জীবন একা একাই সব কিছু করেছি । বাবা মা ছিল না তো তাই ।
-বাবা মা ছিল না মানে ?
-বুদ্ধি হওয়ার পর থেকেই এতিমখানায় বড় হয়েছে । শুনেছি আমার বয়স যখন এক বছরের মত তখন নাকি আমাকে আমার মা ওখানে রেখে গিয়েছিল ।

আমি বোমাটা দেখতে লাগলাম । ডিফিউজ করা না গেলেও মেয়েটাকে কি কোন ভাবে বের করা যায় কি না !! কিন্তু সমস্যা হচ্ছে গলার তার টা কাটতে গেলে বোমাটা ফেটে যেতে পারে । অবশ্য এমনিতেই ফেটে যাবে ।
একবার কি রিস্ক নেবো নাকি ? কোন ভাবে মিনিট দুয়েক সময় পেলে মেয়েটাকে নিয়ে দৌড়ে বেরিয়ে যাওয়া যেত ।
মেয়েটা বলল
-আমার অনেক ইচ্ছে ছিল আমি যখন মারা যাবো তখন আমার পাশে আমার প্রিয় কোন মানুষ থাকবে । আমার হাত ধরে আমাকে সান্তবা দিয়ে বলবে কিছু হবে না । দেখো তোমার কিছু হবে না !
এই কথা টা বলতে বলতেই মেয়েটার চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো ! কেমন একটা অদ্ভুদ অনুভুতি হল মনে মাঝে । মেয়েটার পাশে বসলাম । তারপর মেয়েটার হাত ধরে বললাম
-কি নাম তোমার ?
-মিলি !
-মিলি ! তোমার কিছু হবে না ! আমি কথা দিলাম !

মিলি কোন কথা বলল না । দেখলাম ওর চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো !
আমি বললাম
-আমি শপিং মলের সিসি ভিডিও ফুটেজে দেখেছি, ওরা যখন চলে যাচ্ছিলো তখন অন্য একজনের গলায় বোমা টা সেট করে দিয়ে যাচ্ছিল । তুমি নিজে তার বদলে এগিয়ে এসেছো ! ইউ আর এ ব্রেভ গার্ল !
-ঐ লোকটার নিশ্চই বউ বাচ্চা আছে । আমার তো কেউ নেই ! আমি মরলে কেউ কাঁদবে না !
-কে বলল তোমার কেউ নেই । এই যে আমি আছি তোমার পাশে । যদি তোমাকে বাঁচাতে না পারি, তাহলে একসাথে মরবো, ঠিক আছে !
-কেন মরবেন ?
-কারন আমারও কেউ নেই এই দুনিয়াতে । দুইজন কেউ নেই টাইপের মানুষ এক সাথে মরলে তো সমস্যা নেই তাই না ?

মিলি কোন কথা বলে কেবল মাথা নাড়লো ।
ওর গলার কোন তার টা কাটবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । দুইটা লাল আর একটা সবুজ তার রয়েছে । সব সময় লালা তার কাটলে কাজ হয় জানি । কিন্তু দুইটা লাল তারের ভিতর কোন টা কাটবো ঠিক বুঝতে পারছি না !
মিলি বলল
-আচ্ছা আপনার গার্লফ্রেন্ড কি সত্যিই আমার মত দেখতে ছিল !
-হুম ! সত্যি !
-তাই ?
-হুম ! একদম তোমার মত ! তোমার মত বোঁচা নাক ছিল !
-আমার নাক বোঁচা না !
-কে বলল ? তোমার নাক বোঁচাই ! আমি ওকে কি বলে ডাকতাম জানো ? বুঁচি ! ও খুব রেগে যেত ! তোমাকেও বুঁচি বলে ডাকি !
-কি বিশ্রি নাম ! খবরদার আমাকে বুঁচি বলে ডাকবেন না !
-কেন ডাকবো না ! অবশ্যই ডাকবো !
-ডাকবেন না !
-ডাকবো !

এমন সময় কানের ইয়ার ফোনে বস বলল
-রাফাত অনেক হয়েছে এখন বেরিয়ে এসো ! আমাদের আর কিছু করার নেই । হাতে আর সময় নেই !
বলল
-স্যার ! মিলিকে রেখে একা যেতে ইচ্ছা করছে না !
-আর ইউ গোন ম্যাড !
-ইয়েস ! স্যার !
-ইটস এন অর্ডার !
-একটা অর্ডার না হয় অমান্যই করলাম ।
বস আরও কিছু বলতে যাচ্ছিল আমি ওয়্যারলেসের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিলাম !

মিলি দেখলাম অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে । অবাক হয়েই জানতে চাইলো
-তুমি আসলেই আমাকে ছেড়ে যাবে না ?
-উহু !
-কেন ? আমি তোমার কে হই ?
-তুমি আমার বুঁচি গার্লফ্রেন্ড !

মিলি এই সময় খুব অস্বভাবিক একটা কাজ করলো । আমাকে চট করে চুম খেলো ! আমিও খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে গেলাম । মিলি বলল
-আমার অনেক দিনের ইচ্ছে ছিল মরার আগে আমার একজন রাজপুত্রের সাথে প্রেম হবে । তাকে নিয়ে আমার আহ্লাদের শেষ থাকবে না ! সে আমাকে চুম খাওয়ার আগেই তাকে অবাক করে দিয়ে চুম খাবো ।
-বাহ ! আমি রাজপুত্র জেনে ভাল লাগছে !
-ইস ! এসেছে আমার রাজপুত্র !
-কি !!
-তবে এতেই চলবে ! তুমি কি আমার হাত ধরবে ! আর সময় নেই খুব বেশি ! দেখো !
আমি তাকিয়ে দেখি মিনিট দুয়েক বাকি ! আমি বললাম
-তুমি ঠিক মত দৌড়েতে পারো তো !
-কেন ?
-দেখো আমি এখন তার কারতে যাচ্ছি ! দুই ঘটনা ঘটতে পারে ! এক তার কাটার সাথে সাথে বোমা ফেটে যেতে পারে । দুই কিছু সময় পরে ফাটতে পারে । প্রথম হলে তো তখনই শেষ কিন্তু যদি ২য় টাঠয় তাহলে কিছুটা সময় পাবো হয় তো আমরা । ঠিক আছে !
-হুম !
মিলি নিজের পায়ের স্যান্ডেল খুলে ফেলল !
আমি বললাম
-ওকে ! রেডি !
-হুম !
-ওয়ান ! টু ! থ্রি !

আমি একটা লাল তার কেটে দিলাম .......

সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ২:৪২
১১টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×