somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতিপ্রকৃত গল্পঃ নিনেন

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




শেষ রিক্সাটা যখন আমার বাসার দিকে যেতে মানা করে দিল তখন একটু চিন্তিত বোধ করলাম । এতোটা পথ আমাকে এখন হেটে যেতে হবে । কদিন থেকেই এমন হচ্ছে । আমার এলাকার নাম শুনলেই কেউ ওদিকে যেতে চাইছে না । বড় ঝামেলাতে পড়েছি ।

অবশ্য ওদের ঠিক দোষ দিতেও পারি না । আমি হলে হয়তো আমিও যেতে চাইতাম না । গত এক মাস ধরে আমাদের এলাকাতে খুব বড় ধরনের ঝামেলা শুরু হয়েছে । গত এক মাসে আমার এলাকা এবং আসে পাশের এলাকাতে ৪টা বিভৎষ খুন হয়েছে । এমন যে পুরো শহরকে নাড়িয়ে দিয়েছে । প্রথম দুইটা খুনের পরে আমাদের এলাকাতে বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছিলো । ঠিক তার পরপরই যখন একটা পুলিশও ওভাবে খুন হল তখন সবাই একটু নড়ে চড়ে বসলো । সবাই বুঝতে পারলো এই খুনি যে কোন সাধারন খুনি নয় । এখন সবাই খুব সাবধান হয়ে গেছে । সন্ধ্যা হলেই কেউ আর বাইরে থাকছে না । থাকার সাহস হচ্ছে না ।

আমিও বাইরে না থাকার চেষ্টা করি কিন্তু মাঝে মাঝে ঝামেলা তো হয়েই যায় । যেমন আজকে হয়ে গেছে । অফিস থেকে বের হতে হতে দেরি হয়ে গেল । এখন বাসায় যাওয়ার জন্য কাউকে খুজে পাচ্ছি না ।

অনেক কষ্টে একজন রিক্সাওয়ালাকে পেলাম । তবে সে আমাদের এলাকাতে ঢুকবে না । বাইরে থেকে নামিয়ে চলে আসবে । তাতেই রাজী হয়ে গেলাম । মনে মনে একটু ভয় লাগছিল । ঐ চার জনের যা হয়েছে তেমন কিছু যদি আমার সাথে হয় তাহলে ? অবশ্য আমি মারা গেলে আমার জন্য কাঁদার জন্য কেউ নেই । বাবা মা মারা গেছে অনেক দিন আগেই । বড় মামার কাছে মানুষ হয়েছি তারাও যে আমাকে খুব একটা কাছের মানুষ ভাবে সেটাও না । আমার মত মানুষ মারা গেলে কার কি যায় আসে !

রিক্সাওয়ালা আমাকে আমাদের এলাকার ঠিক বাইরে নামিয়ে দিল । এখান থেকে আমার বাসায় যেতে মোটামুটি মিনিট ত্রিশেক সময় লাগবে । তার উপর আমার বাসাটা একেবারে নির্জন একটা জায়গাতে । সবার শেষের দিকের বাসা । নিরিবিলি থাকার জন্যই আমি বাসাটা ভাড়া নিয়েছিলাম তখন তো আর জানতাম না যে এই ঝামেলা আমার উপর এসে পড়বে ।
আমি উপরওয়ালার নাম নিয়ে হাটা দিলাম । ব্যাগের ভেতরে একটা কাটার আছে । মাঝে মাঝে অফিসের কাগজ কাটার জন্য দরকার হয় বলে ব্যাগেই একটা রেখেছিলাম । সেটা হাতে নিয়ে হাটতে লাগলাম । বুকের ভেতরে ভয় লাগছিলো সেটা অস্বীকার করবো না । কিন্তু ভয় লাগলেও কিছু করার নেই । আমি পুরো রাস্তার দিকে তাকিয়ে রইলাম । পুরো রাস্তায় আমি ছাড়া আর একটা মানুষ নেই । অধিকাংশ ল্যাম্পপোস্টই নষ্ট এদিককার রাস্তায় । এই জন্যই সম্ভবত খুনি খুন করার জন্য এই এলাকাটা বেছে নিয়েছে । দু একটা ল্যাম্পপোস্টের আলোতে অন্ধকার তো যায়ই নি বরং আর বেড়ে গেছে । আমি ভয়ে ভয়ে দ্রুত হাটতে লাগলাম । আমার লক্ষ্য কেবলই আমার বাসা ।

কয়েক মিনিট পরেই পাশ কাটিয়ে একটা পুলিশের গাড়ি চলে গেল । বুকে একটু বল পেলাম । কেউ তো একজন আছে । আমি একা নেই পথে । পুলিশের গাড়িটা একটু দুরেই থেমে গেল । আমি আরও দ্রুত এগোতে লাগলাম । পুলিশের গাড়ির কাছে আসতে একজন অফিসার আমাকে ডাক দিল । বলল
-আপনি কোথায় যাচ্ছেন ?
-বাসায় ?
-একা কেন ? আপনাদের না বলা হয়েছে একা না বের হতে ?
-কি করবো বলেন ? বস তো আর শুনে না এসব ?
-আসুন । আপনাকে পৌছে দেই ।

পুলিশের এতো ভাল আচরন দেখে সত্যিই মন ভাল হয়ে গেল । পুলিশের নাম জানতে পারলাম আব্দুল ওয়াদুত । এখানকার থানার এস আই । আমাকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গেল । আর বলে গেল সাবধানে থাকতে ।

আমি গেট খুলে ভেতরে প্রবেশ করলাম । প্রবেশের সাথে সাথেই আমার কাছে মনে হল কিছু একটা ঠিক নেই । তখনই তাকে দেখতে পেলাম । কি কারনে সামনের লাইটটা কেউ অফ করে রেখেছে । কিন্তু এমনটা হওয়ার কথা না । বাসার সামনের বাতিটা সব সন্ধ্যার পর থেকে জ্বালানোই থাকে । তাহলে বন্ধ করলো কে ?

আমার মনে পড়লো বাড়িওয়ালা স্ব-পরিবারে শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে গেছে আসলে এই খুন খারাবী শুরুর পরপরই গেছে । খুনী ধরা না পরা পর্যন্ত তারা আর আসবে না । আমি পুরো বাসায় একা । এখন সেই খুনি যদি আমারকে এই বাসার ভেতরে একে আমাকে খুন করে রেখে চলে যায় তাহলে কেউ টেরই পাবে না । লাশ এভাবে এখানে পরে থাকবে । মোবাইলে আলো বের করে সামনে ফেলতেই কারো উপর শরীরে আলো পড়লো । আর আমি সাথে সাথেই চিৎকার করে উঠলাম ।
-আস্তে ! আমি !

একটা মেয়ে কন্ঠ !
আমার বাসায় মেয়ে !

আমি চুপ করে গেলাম । যত ভয়ের ব্যাপারই হোক না কেন একটা মেয়ের সামনে ভয়ে চিৎকার করাটা কেমন জানি লাগে । মান সম্মানের প্রশ্ন । তবে মেয়েটার কন্ঠ আমি তখনও চিনতে পারি নি । আর তার উপর আমি খুব মেয়েদেরকেই চিনি । তাহলে এই মেয়ে এতো রাতে আমার বাসায় সামনে দাড়িয়ে কি করে ?

হাটার আওয়াজ হল । একটু পরেই আমার বাড়ির সামনের লাইটটা জ্বলে উঠলো । বুঝতে পারলাম সেই মেয়েটাই গিয়ে জ্বালিয়েছে লাইটটা ! মেয়েটা যখন আবার আমার সামনে এল আমি এবার ছোট খাটো মত ধাক্কা খেলাম । প্রথমেই যে কথাটা মনে হল সেটা হচ্ছে "এই মেয়ে এখানে কি করছে ? আর আমার বাসার খবরই বা পেল কিভাবে ?"

আমার অবাক হওয়ার ভাবটা তখনও মুখে গেলেই রয়েছে । মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে হাসলো একটু । তারপর বলল
-কেমন আছো ?
-তুমি এখানে ? আমার বাসা চিনলে কিভাবে ?

মেয়েটি আমার কথার জবাব না দিয়ে হাসলো । আমি আরও অবাক হয়ে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে রইলাম । সবুজ চোখের মেয়েটিকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে । যখন প্রথমবার মেয়েটিকে দেখেছিলাম তখন ওর চেহারার দিকে এতো ভাল করে তাকানোর অবস্থায় ছিলাম না ।
মেয়েটি বলল
-এখানেই দাড়িয়ে থাকবে ? ভেতরে আসতে বলবে না ?

আমি খানিকটা ইতস্ততঃ করে বললাম
-হ্যা চল । কিন্তু তুমি আমার বাসা চিনলে কিভাবে ?
-চিনেছি ! চিনে নিয়েছি !

আমি দরজার তালা খুলতে মেয়েটাকে দেখতে লাগলাম । আমার এখনও ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না এই মেয়েটা আমার সামনে দাড়িয়ে আছে । আমার তো কোন দিন ধারনাও ছিল না যে মেয়েটার সাথে আমার আবার কোন দিন দেখা হবে ।


দুই
==


আমার বরাবরই বেড়ানোর খুব বেশি শখ । একটু সময় পেলেই আমি কাধে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ি । দু'মাস আগেও ঠিক এমন একটা সুযোগ এসেছিলো । হাতে একটু বেশি সময়ই ছিল তাই একটু দুরেই চলে গেছিলাম । বান্দরবানের রুমা থেকে আমার যাত্রা শুরু হয়েছিলো । ইচ্ছে ছিল রুমা হয়ে কেউকারাডাং, তাজিংডং হয়ে থানচি পৌছাবো ! আমি আগেও এই রাস্তা পার করেছি । তারও আবার বেশ কয়েকবার । সেখানে যাওয়ার জন্য একজন গাইড নেওয়া নিয়মের মধ্যে পড়ে কিন্তু এদেশে টাকা থাকলে কি না হয় । আমি একা একা জার্নি শুরু করে দিলাম । এর আগের বারও আমি একাই পার হয়েছিলাম এই পথ ।

সব কিছু ঠিকঠাকই চলছিলো । থানচি আসার ঠিক শেষ দিন সকালে আমি হাটা শুরু করেছি । সেই সময়েই একটা অদ্ভুদ শব্দ শুনতে পেলাম । মনে হল কিছু মানুষ যেন দৌড়াদৌড়ি করছে, চিৎকার করছে । পাহাড় সব সময় শান্ত থাকে । মানুষ জনের চিৎকার চেঁচামিচি একদম নেই বললেই চলে । তাই এই পাহাড়েই আমি বারবার ফিরে আসি । শান্তিতে আর একান্তে কিছু সময় কাটাতে ।

আমি কয়েকবার পিছন ফিরে তাকাতে তাকাতে সামনে এগিয়ে চলছি । পেছনের আওয়াজটা তখনও হয়ে চলেছে । কমছে তো নাই বরং আরও বেড়ে চলেছে । মনে মনে ভাবতে লাগলাম আসলে কি হতে পারে ! মাঝে মাঝে পাহাড় অশান্ত হয়ে ওঠে ওরকম কিছু নাকি !

আমি একটু সাবধান হয়ে গেলাম । বলা যায় না কোন দিন দিয়ে কি বিপদ আসে ! চোখ কান খোলা রেখে সামনে এগিয়ে চলছি আপন মনে ! সেই সময়ে পাশের ঝোপ থেকে একজন এসে সোজাসুজি আমার সাথে ধাক্কা খেল । কে আমাকে ধাক্কা মারলো সেটার দিকে ভাল করে তাকাতেই আমার চোখ কপালে উঠলো ।
একটা মেয়ে !
এই পাহাড়ে !

আমার অবাক হওয়ার আরো বড় কারন হচ্ছে মেয়েটা শরীরে বিন্দু মাত্র কাপড় নেই । ফর্সা শরীরের সব টুকু অনাবৃত্ত হয়ে আছে । মেয়েটার চোখে সেটার কোন লক্ষন নেই বরং সেখানে একটা ভয়ের ছাপ দেখতে পাচ্ছি । আমার দিকে চোখ পড়াতেই মেয়েটার সেই ভয় যেন আরও বেড়ে গেল । দুরে সরে যেতে চাইলো । তবে দেখলাম উঠে দাড়াতেই মেয়েটা আবার পড়ে গেল । পায়ে সম্ভবত ব্যাথা পেয়েছে । আর হাটতে পারবে না ।

মেয়েটার সব থেকে লক্ষ্য করার মত দিক হচ্ছে মেয়েটার সবুজ চোখ । নীল চোখের মেয়ে আমি অনেক দেখেছি কিন্তু সবুজ চোখের মানুষ এই প্রথম দেখলাম ! মেয়েটা আমার দিকে ভীত চোখেই তাকিয়ে রইলো । আমার কাছ থেকে যেন কোন হামলার আশংকা করছে । আমাকে মেয়েটা এতো ভয় পাচ্ছে কেন ঠিক বুঝতে পারলাম না । তবে ওর কাছে গিয়ে বললাম
-ভয় নেই । আমি কিছু করবো না !
মেয়েটা আবারও ভয়ে দুরে সরে যেতে চাইলো । আমি আরও মোলায়েম কন্ঠে বললাম
-ভয় নেই । কি হয়েছে আমাকে বল ?

এই কথাতেই মনে হল একটু কাজ হল । তবে মেয়েটা কোন কথা বলল না । কেবল হাত দিয়ে ও যেদিক দিয়ে এসেছিলো সেদিকে নির্দেশ করলো । ওখান থেকে আমি সেই মানুষ জনের আওয়াজ পেলাম । ওরা এদিকেই আসছে । আমার বুঝতে কষ্ট হল না । এই মেয়েটাকে নিশ্চয়ই ঔ লোক গুলো আক্রমন করেছে । ওদের কাছ থেকেই মেয়েটা পালিয়ে আসছে ।

আমি বললাম
-হাটতে পারবে ?
মেয়েটার মুখ দেখে মনে হল সে সম্ভবত আমার কথা বুঝতে পারছে না । আমি ওর পায়ের দিকে নির্দেশ করে হাটার মত করে অভিনয় করে দেখালাম । ও কেমন অসহায়ের মত মাথা নাড়ালো ।
পারবে না !

কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । এক মন বলছে এসব ঝামেলার ভেতরে নিজেকে জড়ানোর কোন মানে নেই । সোজা কেটে পরি এখান থেকে । কিন্তু আমি খুব ভাল করেই জানি এই মনভাব আমার নিজের কাছে এক মুহুর্তও টিকবে না । আজকে যদি মেয়েটাকে আমি এখানে এভাবে একলা ফেলে চলে যাই তাহলে বাকি জীবনটা আমাকে এই ভেবে কাটাতে হবে যে আমি চাইলেই মেয়েটাকে বাঁচাতে পারতাম ।

আমি মেয়েটাকে হাত ধরে তুললাম । এরপর ওকে চলতে সাহায্য করলাম । পেছন থেকে সেই আওয়াজ আমার কানে আসছিলোই । আস্তে আস্তে তারা এগিয়েই আসছিলো । এক পর্যায়ে আমি আমার কাধের ব্যাগটা খুলে একটা ঝোপের ভেতরে লুকিয়ে রাখলাম । যদি আবার কোন দিন এই দিকে আসি তাহলে এটা নিয়ে আসা যাবে । সেখান থেকে আমার একটা গেঞ্জি আর থ্রিকোয়াটার বের করে মেয়েটাকে পরালাম । মেয়েটা এমন ভাবে সেগুলো পড়লো যেন এর আগে সে এগুলো কোন দিন পরেই নি ।

এরপর মেয়েটাকে কাধে নিয়ে দৌড়াতে শুরু করলাম । কত সময় দৌড়েছি আমি বলতে পারবো না তবে এক সময় আমার কেবল মনে হল আমরা এখন নিরাপদ । রাতে খোলা আকাশের নিচেই ঘুমিয়েছিলাম । আমি এর আগেও বেশ কয়েকবার পাহাড়ে এসেছি তাই জানি কোথায় খাবার পাওয়া যায় । কোন ফল গুলো খাওয়া নিরাপদ । সেগুলো খেয়েই আপাতত ক্ষুধা নিবারন করলাম কিন্তু মেয়েটা কিছুই খেল না । এমন কি আমার সাথে একটা কথাও বলল না । মেয়েটার নাম পর্যন্ত জানতে পারলাম না ।

সকালে উঠে দেখি মেয়েটা নেই । মনের ভেতরে কু ডেকে উঠলো । মেয়েটাকে সম্ভবত ওরাই ধরে নিয়ে গেছে যারা ওর পিছু নিয়েছিলো কিন্তু আমার ঘুম এতো পাতলা না যে মেয়েটাকে নিয়ে যাবো জোর করে আমি টের পাবো না । তার মানে মেয়েটা একা একাই চলে গেছে । নিজেকে খানিকটা বোকা বোকা মনে হল । যার জন্য এতো কষ্ট করলাম শেষে এসে দেখা গেল কিছুই হল না । তারপর আর ঐ পথে গেলাম না । বাসার দিকে ফিরে এলাম ।

সেদিনের পর থেকে মেয়েটাকে আমি আর দেখি নি । দেখছি এই আজকে ! আমারই বাসার সামনে আমার জন্য অপেক্ষা করছে ।


তিন
===


-এতোদিন কোথায় ছিলে ? আমার খোজ কিভাবে পেলে ! আজিব ! আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না । ঐদিন ওভাবে চলে গেলে কেন ? জানো আমি কত চিন্তা করছিলাম জানো ?
আমি এক নিঃশ্বাসে কথা গুলো বলে ফেললাম । মেয়েটা হাসলো । সবুজ চোখের মেয়েটার হাসি আসলেই অন্য রকম লাগছে ।
আমি বললাম
-এমন কি আমি তোমার নাম পর্যন্ত জানি না !
-আরে বাবা আস্তে আস্তে । এক সাথে এতো প্রশ্নের জবাব কিভাবে দিবো ?
-কিছু তো বল !
-আচ্ছা ! আমার নাম বলতে পারো "নিনেন"
-নিনেন ?
-কেন পছন্দ হয় নি ?
-না মানে এই নাম কোন দিন শুনি নি তো !
-শুনতে হবে না ! নাম তো জরুরী না ! মানুষ জরুরী !

আমি খানিকটা অবাক হয়ে বললাম
-আজকে এতো কথা । ঐদিন তো একটা কথাও বল নি !
নিনেন আবারও হাসলো । কোন জবাব দিল না । বুঝতে পারলাম ও ঐদিনকার কথা তুলতে চাচ্ছে না ! আমি বললাম
-আমার খোজ কিভাবে পেলে ?
-পেয়েছি । বলতে পারো গন্ধ শুকে শুকে চলে এসেছি !
-বটে ?
-হুম! এখন খুব ক্ষুধা লেগেছে । কিছু খেতে দাও দেখি !

ঐরাতে বেশ চমৎকার কাটলো । কিছু রান্না করা ছিল না, দুজন মিলে রান্না করলাম । মুরগির মাংসের ঝোল আর ভাত । বলতে গেলে ও নিজেই রান্না করলো । তরকারী মুখে দিয়ে সত্যিই অবাক হয়ে গেলাম । নিনেন চমৎকার রান্না করে । কোথা থেকে শিখলো কে জানে !
খাওয়া দাওয়ার পরে নিনের সাথে অনেক কথা হল । আমি এতো কথা বলতে পারি দেখে অবাকই লাগছিলো । আমার সব কিছু ও শুনতে লাগলো । কি করি কি করেছি আমার কে কে আছে ! সব কিছু । আমার বলতেও ভাল লাগছিলো কারন এর আগে আমার কথা এতো আগ্রহ নিয়ে কেউ শুনে নি । কিন্তু নিজের ব্যাপারে ও কিছুই বলল না । বলল যে বলার মত তেমনি কিছু নেইও ! ও খুব দুরের একটা জায়গা থেকে এসেছে । নিজের ব্যাপারে ওর কিছুই মনে নেই । ওর স্মৃতি বলতে ঐ দিনের পর থেকেই যেদিন আমাদের দেখা হয়েছিলো।
তবে আমার ওর ব্যাপারে একটু যে অদ্ভুদ লাগছিলো না সেটা বলবো না । এতো দিন পরে মেয়েটা এরকম হঠাৎ করে আমার উদয় হল । আমার খোজ কিভাবে পেল কে জানে ? এমন যে চলতে ফিরতে হঠাৎ করেই দেখা হয়ে গেছে । রাতে ওকে গেস্ট রুমে ঘুমাতে দিলাম ।

সকাল বেলা উঠে দেখি ও নেই । চলে গেছে । আমাকে কিছু না বলে চলে গেছে । ভেবেছিলাম আবারও হয়তো দেখা হবে না অনেক দিন । কিন্তু রাতের বেলা আবারও আবারও এসে হাজির । এভাবে প্রত্যেকদিনই নিনেন আমার বাসায় আসতে লাগলো । প্রথম প্রথম একটু অন্য রকম লাগলেও পরে আমার কাছেও সব কিছু স্বাভাবিক মনে হতে লাগলো । একবার অবশ্য ওকে জিজ্ঞেস করেছিলাম যে ও কোথায় যায় এই সকাল বেলা । ও ঠিক মত জবাব দেয় নি । কেবল বলল যে দিনের আলো ওর কাছে ভাল লাগে না । আমি কথাটা অর্থ বুঝতে না পারলেও আর জানতে চাইলাম না ।

এভাবেই দিন যেতে লাগলো । আমার সময় কাটতে লাগলো বেশ ভাল । এতো দিনের সেই নিঃসঙ্গ ভাবটা আমার পুরোপুরি কেটে যেতে লাগলো । নিনেন কে আমি পছন্দ করতে শুরু করেছি সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । ও নিজেও যে আমাকে পছন্দ করে সেটাও বুঝতে কষ্ট হল না । সারাটা সময় কেবল ওর কথাই ভাবতাম ।
একদিন রাতে খাওয়ার পরে আমরা এক সাথে টিভি দেখছিলাম । এমন সময় নিনেন আমাকে বলল
-আচ্ছা আমি যখন তোমার কাছে থাকি না তুমি আমার কথা অনেক ভাব, তাই না ?
-হ্যা ! সব সময় !
-আমিও ।
-আমার কেন জানি মনে হয় তুমি ভাব আমার কথা অনেক !
-ও আচ্ছা । ইউ ক্যান ফিল ইট টু !
-হুম !
-গত পরশুদিন তুমি অফিসে আমার কথা ভাবতে একটা বড় ভুল করে ফেলেছিলেন তাই না ? তোমার বস তোমাকে এই জন্য বেশ ঝাড়িও দিয়েছিল !
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে কিছু সময় । আমি সত্যিই ভুল করেছিলাম এবং সেটা অন্যমনস্ক থাকার জন্যই ।
-তুমি কিভাবে জানলে ?
নিনেন আমার কথার জবাব দিল না । সবুজ চোখে আমার দিকে একভাবে তাকিয়েই রইলো !

বুকে আরেকটু সাহস জাগলো । ওকে চুমু খেয়ে ফেললাম । মনের ভেতরে ভয় ছিল যে ও হয়তো রাগ করবে । কিন্তু ও রাগ তো করলোই না বরং আমার চুমুতে আরও ভাল ভাবে সারা দিল ।

সব কিছু ভালই চলছিলো । কিন্তু একদিন ছন্দ পতন হল । অফিসে দুজন মানুষ আমার সাথে দেখা করতে এল যাদের কে আমি চিনি না । এর আগে তাদের সাথে আমার যে কোন দিন দেখা হয় নি সেটা আমি নিশ্চিত করেই বলতে পারি । এদের একজন আবার বিদেশী ।
কিন্তু ওদের হাতে আমি যখন আমার বান্দরবনে ফেলে আসা ব্যাগ টা দেখতে পেলাম তখন একটু অবাক হতেই হল । অনেক কিছু মাথার ভেতরে ঘুর পাক খেতে লাগলো ।

প্রথম লোকটা নিজের পরিচয় দিল আজগর নামে । বিদেশী লোকটার নাম বলল ডেভিড ! আমি বললাম
-আমার কাছে কি কাজে এসেছেন জানতে পারি কি ?
-এই ব্যাগটা আপনার তো ?
একবার ভাবলাম মিথ্যা বলি । কিন্তু পরে মনে হল মিথ্যা বলার দরকার নেই । বললাম
-হ্যা ! আমারই ! মাস দুয়েক আগে আমি ট্যুরে গেছিলাম । ওখান থেকেই ব্যাগটা খাঁদে পরে যায় অসাবধানতাবসত ।
-কিন্তু আমরা কিন্তু এটা কোন খাদের ভেতরে পায় নি ।
-তাই নাকি ? তাহলে ?
-এটা একটা ঝোপের ভেতরে লুকানো ছিল !
-হয়তো কোন পাহাড়ি পেয়েছিলো ওটা । পেয়ে লুকিয়ে রেখেছে । কিন্তু আপনারা আমার কাছে এই ব্যাগটা ফেরৎ দেওয়ার জন্য নিশ্চয়ই আসেন নি । তাই না ?

আজগর আর ডেভিড দুইজনই আমার দিকে তাকালো ! ওদের চোখের ভাষা পড়তে আমার খুব একটা কষ্ট হল না । আমি বললাম
-না মানে, একটা ট্রাভেল ব্যাগ ফেরৎ দেওয়ার জন্য আপনারা আমার কাছে আসেন নি সেটা আমি পরিস্কার বুঝতে পারছি । আসল কাহিনী কি বলবেন প্লিজ !

আজগর আমার দিকে কিছু সময় তাকিয়ে থেকে বলল
-ঠিকই বলেছেন । আপনাকে বলতে পারেন আমরা খুজে বের করেছি । ঐ সময় বান্দরবানে কারা কারা ট্যুরে ছিল সব আমরা জোগার করেছি । তাদের গাইডদের সাথে কথা বলেছি । বিজিবির ডাটা থেকে জানতে পেরেছি কেবল মাত্র আপনিই একজন যে কোন গাইড না নিয়ে চলাচল করেছেন । তারপর আরও অনেক কিছু খুজে বের করতে হয়েছে !
-এটা নিশ্চয়ই একটা মাত্র ব্যাগ ফেরৎ দেওয়ার জন্য নয় ?
-বুঝতেই পারছেন সেটা নয় !
আজগর আমার দিকে ঠান্ডা স্বরে বলল । আমিও নিজেকে যথা সম্ভব ঠান্ডা কন্ঠে বললাম
-তাহলে কি সেটা ?
-আপনি ঐদিন কোন অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ্য করেছেন ?
-কেবল আমার ব্যাগটা হারিয়েছিলো ! আর কিছু না !
-সত্যি কি তাই ? আর কিছু না ?
-জি না আর কিছু না ! ব্যাগটা হারানোর পরে আমি সোজা ফেরার পথ ধরি । আর কিছু হয় নি !

কিছু সময় দুজনই চুপ করে রইলাম । কেউ কোন কথা বলছি না ! হঠাৎ করেই পাশের বিদেশী লোকটা যার নাম ডেভিড আজগরের দিকে
তাকিয়ে বলল
-আমার বন্ধুর কথায় কিছু মনে করবেন না । তবে আমরা আপনার শত্রু নই । আমাদের কিছু তথ্য দরকার । যদি দয়া করে সাহায্য করতেন !
আমি এবার একটু শান্ত কন্ঠে বললাম
-তার আগে আমাকে জানতে হবে আপনারা সেটা কেন জানতে চাচ্ছেন ?

দুজনেই চুপ করে রইলো কিছু সময় । একে অন্যের সাথে বোঝাপরা করে নিল । তারপর আমার দিকে তাকিয়ে ডেভিড বলল
-আপনি কি অস্বাভাবিক কিছুতে বিশ্বাস করেন ? মারে যার কোন ব্যাখ্যা হয় না, এমন কিছুতে ?
-হ্যা । অবশ্যই । পৃথিবীতে অনেক কিছুই এমন আছে যার কোন ব্যাখ্যা নেই । থাকলেও আমরা যেটা জানি না ।
-এই ঘটনাও এমন একটা ঘটনা !
-আপনি আলমাইটি গডে বিশ্বাস করেন তো ?
-আমার বিশ্বাস আল্লাহর উপর !
-ঐতো । আমরা যেন অলমাইটি গডের অনুসারী ঠিক তেমনি অনেকে আছে ডিমন কিংব লুসিফারের অনুসারী ! আপনাদের ধর্মে যাকে শয়তান নামে ডাকা হয় !

আমি কোন কথা না বলে বলে শুনে গেলাম । আমার মাথায় অবশ্য তেমন কিছু আসছে না । তবে এটা যেন নিনের সাথে সম্পর্কৃত সেটা বুঝতে আমার মোটেই কষ্ট হল না ।

-আসল কথা হচ্ছে জগতে একটা ভাল এবং একটা খারাপ শক্তি আছে । এটা এখনকার দুনিয়াতে অনেকে বিশ্বাস না করলেও আমরা করি ! আমরা করি যে আমাদের থেকেও একটা সুপিরিয়র শক্তি আছে । একটা পজেটিভ একটা নেগেটিভ ! আমরা যে প্রাণীটার পেছনে ছুটে বেড়াচ্ছি সেটা কোন ভাল কিছু নয় । এই লুসিফারের পাঠানো একটা ডিমোন ।
-আমি আসলে ঠিক বুঝতে পারছি না আপনারা কি বলতে চাচ্ছেন ?
এরপরে কথা গুলো শুরু করলো আজগর ।
-ঠিক এমন কিছু ডিমোন বিগত কয়েকশ বছর ধরে পৃথিবীতে পাঠাচ্ছে লুসিফার । তার অনুসারীদের পথ দেখানোর জন্য । এই ডিমোনটার নাম "নিনেন" । সবুজ চোখের ডিমোন !

আমার মেরুদন্ড বেয়ে সরু একটা ঠান্ডা প্রবাহ বয়ে গেল ! আমি তবুও নিজেকে যথাযত শান্ত রাখা চেষ্টা করলাম !

-আর আমাদের কাজ হচ্ছে সেই নিনেন টেনডারকে এইজেই মেরে ফেলা । কারন যত সময় যেতে থাকবে তত এটা শক্তিশালী হতে থাকবে । এদের আসে পাশে সব কিছু থেকে জ্ঞান আহরন করার ক্ষমতা অসাধারন । এরা খুব দ্রুত শিখতে পারে, শক্তিও অর্জন করতে পারে এবং এমন একটা সময় আসবে যখন আমরা হয়তো এটার আর কোন ক্ষতি করতে পারবো না । আমরা পুরো পৃথিবী ঘুরে বেরিয়েছি । যখন যেখানে যেতে হয়েছে সেখানেই গেছি । কিন্তু এইবার আমাদের একটু দেরি হয়ে গেছে । একটু দেরি হয়ে গেছে । সেখানে দুটা ডিমোনকে আমরা জায়গাতে শেষ করতে পারলেও তিন নম্বরটা আমাদের হাত ছুটে পালিয়ে যায় । এবং আমাদের বিশ্বাস ওটার সাথে আপনার দেখা হয়েছে । সাম হাউ আপনি ওটাকে সাহায্য করেছেন পালাতে !

আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম ।
আজগর বলে চলল
-না আপনাকে আমরা দোষ দিচ্ছি না । আপনি যা করেছেন তা না জেনেই করেছেন । ওরা মানুষ্য রূপে ছিল তার উপর একটা মেয়ের রূপে । যে কেউ সাহায্য করবে !

আমি বললাম
-আপনাদের কেন মনে হল যে আমিই ওটাকে সাহায্য করেছি ?
-কারন একেবারে প্রথম অবস্থায় ওরা কিছুই জানে না । ওদের পক্ষে পালিয়ে থাকাটা সম্ভব হয় না । আত্মরক্ষা করাও । কিন্তু নিনেন সার্ভাইভ করেছে ! সেটার ফল আপনি দেখতে পাচ্ছেন !
-মানে ? আমি বুঝলাম না ।
-বুঝলেন না ?
আমি মাথা নাড়ালাম ।
-গত দুই মাস ধরে আপনাদের এলাকাতে কিছু অঘটন ঘটছে । নিশ্চয়ই খেয়াল করছেন ?
-হ্যা !
-কি অস্বাসাভবিক লাগছে সেটার ব্যাপারে ? লক্ষ্য করে দেখেছেন কি ওদের মৃত্যু গুলো সব একই ভাবে এবং একই রকম ভাবে হচ্ছে ?

আমার বুকের ভেতরটা কেমন লাফাতে লাগলো । মনে মনে কাল রাতের নিনের চেহারাটা মনে করার চেষ্টা করলাম গতকাল রাতে নিনের সাথে আমার সম্পর্কটা আরও একটু অন্য দিকে চলে গেছে । আমি সেটা মনে করার চেষ্টা করলাম । কেবল চুমুর ভেতরেই সেটা সীমাবদ্ধ থাকে নি । আরও অনেক বেশি কিছু হয়েছে আমাদের ভেতরে !

আজগর বলেই চলল
-খবর রিপোর্টে কি মনে হচ্ছে ? কি মিল আছে খুন গুলোর মধ্যে ?

আমি রিপোস্ট গুলো পরেছি । এটা কে পুলিশ সিরিয়াল কিলিং বলছে । কারন প্রত্যেকটা খুনের ধরন একই রকম । প্রথমে ভিট টিমের ঘাড়টা ভাঙ্গা হয় তারপর ধারালো কোন অস্ত্র দিয়ে বুকে টা চিরে ফেলে খুনি । এরপর সেখান থেকে হৃদপিন্ডটা তুলে নেয় ! যে ছয়টা খুন হয়েছে সব গুলোই একই ভাবে !
আমি বললাম
-প্রত্যকটা বডি থেকে হৃদপিন্ড নিয়ে নেওয়া হয়েছে ।

ডেভিড হাসলো । তারপর বলল
-এই নিনেনদের প্রধান এবং পছন্দের খাদ্যই হচ্ছে মানুষের হৃদপিন্ড ! আর এই এলাকাই বেছে নিয়েছে কেন জানেন ? বলতে পারেন আপনার জন্যই । সে প্রথম অবস্থায় আপনাকে দেখেছে আপনি তাকে সাহায্য করেছেন এটা ও মনে রেখেছে । ও আপনার শরীরে একটা নিরাপদ গন্ধ পেয়েছে এই জন্যই আপনার কাছেই ও ছুটে এসেছে ।

আমি কি বলবো খুজে পেলাম না । চুপ করে তাকিয়ে রইলাম । একবার মনে সব সত্য টুকু ওদের বলে দেই । তারপর ওদের সাথে করে নিয়ে যাই আমার বাসায় নিনেন কে ধরিয়ে দেই ! কিন্তু মন সায় দিল না । আমাকে আগে নিনেনের সাথে কথা বলতে হবে ।
ডেভিড বলল
-নিনেন এখন আপনাদের এলাকাতেই রয়েছে । আশে পাশে । তার কাজ কর্মে সেটার বোঝা যাচ্ছে । বুঝেছেন । এই জন্য প্লিজ আমাদের সাহায্য করুন ! আপনি যা জানুন আমাদের কে বলুন !

আমি সত্যটা বলেই দিলাম । বলে দিলাম যে আমার সাথে ওমন একটা মেয়ের দেখা হয়েছিলো । এবং আমি ওকে সাহায্য করেছিলাম ! সব কিছু বললাম কেবল ও আমার বাসায় এসে হাজির হচ্ছে প্রতি রাতে সেটা বললাম না !

আগজর বলল
-গুড এটা একটা ভাল সংবাদ !
-ভাল দিক ?
-নিনেনরা এটা একটা বৈশিষ্ট বলতে পারেন । ও আপনাকে চিনেছে এবং আপনার খোজেই এখানে এসেছে । আশা করি কদিনের ভেতরেই ও আপনার সামনে আসবে । এটা আমাদের জন্য প্লাস পয়েন্ট ! আর আরেকটা বড় খবর হচ্ছে ওরা আলো ভয় পায় । ঠিক ভয় না আলোতে ওদের শক্তি কমে যায় ! এটা মাথায় রাখবেন ! অবশ্য আপনার মাথায় রাখার খুব একটা দরকার নেই । ওটা আপনার কোন ক্ষতি ততক্ষন পর্যন্ত করবে না যতক্ষন আপনি ওটার ক্ষতি করেন !

আরও অনেক কথা হল আমাদের মাঝে । কিন্তু আমার কেন জানি সেগুলো শুনতে মন চাইছিলো না । পাছে তারা কিছু বুঝে ফেলে এই জন্য শোনার আগ্রহ করে আমি সেদিকে তাকিয়ে রইলাম । যাওয়ার আগে তারা আমাকে তাদের মোবাইল নাম্বার দিয়ে গেল । আর বলে গেল যেন সে দেখা দেওয়ার সাথে সাথে আমি যেন ওদের সাথে যোগাযোগ করি ।


চার
===


রাতের বেলা নিনেন নিজ থেকেই আমার কাছে এল । খাওয়ার পর যখন ওকে জড়িয়ে শুয়ে ছিলাম তখনও আমার ঠিক বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিলো । মনে হচ্ছিলো ওরা যা বলেছে তা মিথ্যা বলেছে । এটা কোন ভাবেই সত্য হতে পারে না ।কিন্তু ওদের কথা সত্য হবে এটা জানি । কারন এটা সব কিছুর ব্যাখ্যা পাওয়া যায় । সব উত্তর মিলে যায় !
কিভাবে ও আমার খোজ পেয়ে চলে এল এখানে । কিভাবে আমার সব কিছু জেনে যায় আমি কি ভাবি সেটা বুঝতে পারে সব কিছুরই ব্যাখ্যা পাওয়া যায় ।

যখন একটু একটু ঘুম আসবে তখনই নিনেন উঠে বসলো । ওর পরিস্কার ফর্সা পিঠটা আমার দিকে মুখ করে বসলো । তারপর বলল
-তুমি সব জানো তাই না ? সব জেনে গেছ ?
আমি চুপ করে রইলাম । এই সত্যটা ওকে বলতে ইচ্ছে হল না ।
-আজকে আমি তোমার মন অনুভব করতে পারছি ! তুমি জেনে গেছো আমি কে ? আমি কি !
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম । নিনেন বলল
-আমি যখন নিজের আসল ষত্যটা বুঝতে পারলাম সত্য বলতে সেটা মেনে নিতে পারি নি । কেন পারি নি আমি জানি না । আমার কেবল তোমার কথা মনে ছিল । তোমার গায়ের গন্ধ, তোমার শরীরের উত্তাপ । তুমি যখন আমাকে কাধে করে নিয়ে দৌড়াচ্ছিলে তখন তোমার অনেক কাছে আমি চলে গিয়েছিলাম, অনেক ভিতরে । এটা আমাদের বৈশিষ্ট বলতে পারো ! আমার সব জ্ঞান তোমার থেকেই শুরু বলতে পারো ! এই পৃথিবীতে আমার অস্তিত্ব তোমার থেকে শুরু !
আমি বললাম
-আমার কাছ থেকে চলে যাওয়ার পর তুমি কোথায় গেছিলে ?ত
-আরেকটা পরিবারের কাছে গিয়ে হাজির হই, ফরেস্ট অফিসারের বাংলো ছিল সেটা । ওরা আমার সাথে খুব ভাল ব্যবহার করে । তুমি যেমন করেছিলে ! আমার ভেতরে এই বোধটা আসে যে আমি মানুষের কোন ক্ষতি করতে পারবো না । প্রতি রাতে আমার স্বপ্নে সে আসতো ! আমাকে ওদের খুন করতে বলতো আমার আসল দিকটা দেখাতো কিন্তু আমি সেগুলো অস্বীকার করি আমাকে ভয় দেখায় তবুও আমি আমি রাজি হই নি ! আমি অন্য নিনেনদের মত নই !
-তাহলে এতো গুলো মানুষ কে মেরেছে ?
-আমি মারি নি । কাউকে মারি নি ! বিশ্বাস কর !
-তাহলে কে মেরেছে ?
-আমি জানি না ! তবে আমি এই টুকু জানি যে আমি তোমার কোন ক্ষতি করতে পারবো না কোন দিন ।

আমি কি বলব বুঝতে পারলাম না । চুপ করে রইলাম । নিনেন আবার বলল
-তবে জানি এই কথা হয়তো তুমি বিশ্বাস করবে না । কেউ করবে না ! তাই আমার মনে হয় এখানে আর আসা ঠিক হবে না । চলে যেতে হবে । তোমাকে ছেড়ে অনেক দুরে । সেটা তোমার আর আমার দুজনের জন্যই ভাল ।

আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নিনেন উঠে দাড়ালো । ওর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম । ওকে বলতে ইচ্ছে হল যে আমি বিশ্বাস করি যে ও কাউকে মারে নি । কিন্তু সেটার বলার আগেই নিনেন চলে গেল ! আমি ওর চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়েই রইলাম ।



পাঁচ
===



তারপর আরও সপ্তাহ দুয়েক কেটে গেছে । এবং এই সপ্তাহের ভেতরে এলাকাতে কোন খুন হয় নি । ভয়টা একটু কেটে গেছে সবার । পুলিশও ঐ রকম ট হল কমিয়ে দিয়েছে । নিনেন এই দুই সপ্তাহের মাঝে একবারও আমার কাছে আসে নি । আর সম্ভবত আমাদের দেখা হবে না কোন দিন । হয়তো ঐ লোক গুলোর হাতে নিনেন কোন মারা পরবে । আমি হয়তো জানতেও পারবো না !

আজকেও অফিস থেকে বের হতে একটু দেরী হয়ে গেল । তবে আজকে খুব একটা ভয় ছিল না । রিক্সাও পাওয়া গেল বড় রাস্তা পর্যন্ত । রিক্সা এই পর্যন্তই আষে অবশ্য । এখানে থেকে আমার বাসা আর একটু হাটার পথ । তবে এই দিকটাতে আর বাড়ি নেই । রাস্তার এক পাশে একটা ছোট খোলা মাঠ । তারপরেই ঝোপ জঙ্গল । রাস্তাার শেষ গিয়ে ঠেকেছে আমার বাসার গেটে !

আমি আপন মনে হাটতে থাকি । এদিককার বেশি ভাগ ল্যাম্প পোস্টই নষ্ট । মাঝে মাঝে কয়েকটা জ্বলছে । সেগুলো আগের মতই অন্ধকার দুর করার থেকে আরও যেন বাড়িয়ে দিচ্ছে ।


-মিস্টার অপু হাসান !
আমি থেমে গেলাম । আমার পেছন থেকে কেউ ডাক দিয়েছে আমাকে ! আমি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখি কেউ নেই । একটু ভয় পেয়ে গেলাম । কে ডাকলো ? কোন পুরুষের কন্ঠই মনে গল ।
আরও কয়েক কদম এগোতেই সেই একই শব্দ !
আমার নাম ধরে কেউ ডাকছে । এবার আমি ঠিক ঠিকই ভয় পেয়ে গেলাম । মনে হল কেউ আমাকে দেখতে পাচ্ছে । আমি আরেক পা ফেলতেই মানুষটাকে দেখতে পেলাম । অন্ধকারের ভেতরে অবয়বটা পরিস্কার হয়ে উঠলো ।

মানুষটা আমার সামনে এসে থামলো ! সব থেকে অবাক করার বিষয় যে এই অন্ধকারের ভেতরেও আমি লোকটার সবুজ চোখ দেখতে পেলাম । জ্বলজ্বল করছে ।
মাই গড !
নিনেন !
নাহ ! এটা হতে পারে না !
সামনের কন্ঠটা বলে উঠলো
-আমার মনে হয় আপনি আমাকে চিনতে পেরেছেন ?
আমার বুকের ভেতর তখন দুরু দুরু করছে । আমাকে ওমন ভাবে বিচৎষ ভাবে মরতে হবে ! বুকটা শুকিয়ে গেল !
সে আরও কাছে চলে এল । একদম আমার কাছে । আমি বললাম
-তুমি কেন এমন করছো ?

আমার কথা শুনে যেন সে খুব মজা পেল । হোহো করে হেসে উঠে বলল
-কেন তোমরা মাছ খাওয়া না ? মুরগি ছাগল গরু মেরে খাওয়া না ? আমিও এখানে তাই করছি । আমাকে খেয়ে বাঁচতে হবে । আমি তাই করছি ।

আমার বুকের ভেতর তখন কেবল একটা কথাই চলছে কিভাবে আমি দৌড়ে পালাবো । আমার বাসা এখন থেকে আর খুব বেশি দুরে না । দৌড় দিলে হয়তো ঠিক সময়ে পৌছে যেতেও পারি । আমার মনের কথা যেন ওটা বুঝতে পারলো । ওটার সবুজ চোখ যেন আরও একটু জ্বলে উঠলো । বলল
-দৌড় দিলে চার কদমের ভেতরেই তোমাকে আমি ধরে ফেলবো । লাভ হবে না !
আমি তবুও দৌড় দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিলাম । সামনে দাড়ানো শয়তানের সাগরেত বলল
-তবে তোমাকে আমি খাওয়ার জন্য মারবো না জানো ?
-মানে ? তাহলে কেন মারবে ?
-তোমাকে মারবো আমি আমার নিনেনকে আমার কাছ থেকে দুরে নিয়ে যাওয়ার জন্য ! তাকে বদলে ফেলার জন্য ! সে আর আমাদের মত নেই । দূষিত হয়ে গেছে ।
আমি ওটার কোন কথার মাথা মন্ডু বুঝতে পারছিলাম না ।
-আমি বুঝতে পারছি না ।
-তুমি বুঝতে তো পারবেই না । এই জগতে আমার সাথী হিসাবেই নিনেনকে পাঠানো হয়েছিলো । ওর আমার সাথে থাকার কথা ছিল । আমাকে চুমু খাওয়ার কথা ছিল আর আমার সাথে পর মিলিত হওয়ার কথা ছিল কিন্তু সেটা ও করেছে তোমার সাথে । তুই যতদিন বেঁচে থাকবি ততদিন আমার শান্তি হবে না ! তোকে আমি......
এই বলে ও আমাকে জোড়ে একটা ধাক্কা দিল । আমি ছিটকে রাস্তা থেকে পাশের মাঠে গিয়ে পড়লাম । খুব বেশি জোরে সে ধাক্কা মারে নি তবে আমার মনে হল বুকের হাড় ভেঙ্গে গেছে ।

আমি উঠে দাড়ালাম । ওটাকে আমার দিকে ছুটে আসতে দেখলাম । আমি চোখ বন্ধ করে ফেললাম কিন্তু আমার কাছে পৌছার আগেই একটা ঢুপ আওয়াজ শুনতে পেলাম । কেউ যেন কাউকে ধাক্কা মেরেছে । চোখে মেলে দেখি আমার ঠিক সামনেই নিনেন দাড়িয়ে আছে ।

আমার নিনেন !
আর সামনে মাটিতে পড়ে আছে পুরুষ নিনেন টা !
নিনেন আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-তুমি বাসায় যাও এখনও । ওদেরকে ফোন দাও । আমি একে আটকে রাখছি !
-কেউ কোথাও যাবে না ।
লাইনটা বলে পুরুষ নিনেনটা উঠে দাড়াতে লাগলো ।

এরপরেই আমি অদ্ভুদ কিছু দেখতে পেলাম । দুজনেই তাদের মানুষ্য রূপের খোলস ছেড়ে আসল রূপ নিতে লাগলাম । নিনেনের গলাটা একটু বেশি লম্বা হয়ে গেল । তাররপ দুই হাতের ঠিক নিচেই আরও দুটো হাত সেই সাথে গুলো আরও বেশি লম্বা হয়ে উঠলো । মাথার পাশে কান গুলো আরো একটু লম্বা এল অনেকটা বাদুরের মত । সেই সাথে ঠোট দুটো ঈগলের ঠোটের মত । পা দুটো ক্যাঙ্গারুর মত লম্বা হয়ে ভাজ হয়ে এল । এরপরও ওর একে ওপরের উপর ঝাপিয়ে পরলো ।
আমি কেবল তাকিয়ে রইলাম । আমার কিছু করার ছিল না । কেবল তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া । তবে একটা পর্যায়ে মনে হল পুরুষ নিনেনের সাথে ও পারবে না । আসলই ও পারবে না । আমার কথা সত্য করে দিয়ে নিনেনকে পুরুষটা মাটিতে ফেলে দিল ।

নিনেনের দিকে তাকিয়ে মনে ও বেশ আহত হয়ে গেছে । আমি আর কিছু ভাবলাম না সোজা ওর দিকে দৌড়ে গেলাম । পুরুষটার এক হাতের একটা অংশ বেশ চোখা হয়ে উঠেছে, সেটাও ও নিনের শরীরে ঢুকিয়ে দিতে গেল কিন্তু আমার দৌড়ে যাওয়ার ফলে যেন একটু থামলো । ওটার চেহারা দেখে আমার কেন জানি মনে হল ওটা হাসছে । আমার অবস্থা দেখে হাসছে । কি এক অদ্ভুদ ভাষায় কি যেন বলল । আমি বুঝতে পারলাম না কিছু । কিন্তু মনে হল আমাদের মৃত্যু আসলেই আসন্ন । সামনের প্রাণীটাকে মোবাবেলা করার মত ক্ষমতা আমার নেই । নিনেনকে হয়তো বাঁচাতে পারবো না । তবে ওর সাথে মরতে তো পারবো ! ও হতে পারে অন্য জগতের মানুষ তবে ওর প্রতি আমার অনুভুতিটা তো মিথ্যা নয় !

কিন্তু তখনও হয়তো আরও কিছু বাকি ছিল । হঠাৎ করেই চারিদিকে একসাথে অনেক গুলো আলো জ্বলে উঠলো । কোথা থেকে ছুটে এলে বেশ কয়েকটা গাড়ি । গাড়ির মাথাতেই আলো ফ্লাড লাইট বসানো হয়েছে । আলো পড়তেই একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম যে সামনের পুরুষ নিনেনটা চিৎকার করে উঠলো । পালিয়ে যেতে চাইলো কিন্তু চারিদিক থেকে হরপুনের মত তীর এসে সোজা লাগলো সেটার বুকের ভেতরে । মুহুর্তের ভেতরেই ঘায়েল করে ফেলল ওটাকে !
সেই সাথে আরও আরো কয়েকটা হরপুন এসে বিঁধলো ওটার বুকে । আস্তে আস্তে ওটা মানুষের রূমে ফিরে এল । কালচে রংয়ের রক্তে ভেসে যাচ্ছে ওটার বুক । আরও কিছু সময় এদিক ওদিক নড়া চড়া করার চেষ্টা করে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো । শরীরে তীব্র আলো পড়ার সাথে সাথে ওদের শরীর থেকে শক্তি চলে গেছে ।

ততক্ষনে নিনেনও আবার আগের রূপে ফেরৎ এসেছে । আবারও সেই প্রথম দিন দেখার মত করে । আমি আমার শরীরের অফিস কোর্ট টা ওর গায়ে চাপিয়ে দিলাম । তারপর ওকে আড়াল করে দাড়ালাম । আমি জানতাম কারা এটা করেছে ।

ভারি বন্দুক তাক করে কয়েকজন কালো পোষাক পরা মানুষ আমাদের দিকে এগিয়ে এল । সবার বন্ধুক নিনেনের দিকে । ওকে আমি তখনও আড়াল করেই রাখার চেষ্টা করছি ! ডেভিডকে আসতে দেখলাম ।
আমার দিকে সরাসরি তাকিয়ে বলল
-আমার সন্দেহ ছিল তুমি সত্য কথা বলছো না । তাই তোমার উপর চোখ রাখছিলাম । আর আমাদের হিসাবে একটু ভুল ছিল । একটা নয় দুটা নিনেন ছুটে গিয়েছিলো আমার হাত থেকে !
-ওকে তোমরা নিয়ে যেতে পারবে না ।
-অপু আমি চাই না তোমাকে আঘাত করতে !
-কিন্তু ও আমাকে বাঁচাতে লড়েছে ওটার সাথে ! অন্য সবার মত নয় ! ও একটা মানুষকেও হত্যা করে নি এই কয় দিনে । বিশ্বাস করুন !
-আমরা কোন রিস্ক নিতে পারি না !

নিনেন আমার পেছন থেকে বলল
-অপু আমাকে যেতে দাও !
-চুপ । কোন কথা না !
আমি ডেভিডের দিকে তাকিয়ে বললাম
-একটু আগে কি হয়েছে দেখেছেন আপনি ? নিনেন ওটার সাথে পারবে না জেনেও আমাকে বাঁচাতে ঠিকই ওটার সাথে লড়াই করেছে । দেখেছেন নিশ্চয়ই ?
-হ্যা ! কিন্তু এটা ওর বেঁচে থাকার জন্য যথেষ্ঠ কারন হতে পারে না !
-ওয়েল ও যদি আমাকে বাঁচানোর জন্য এমন করতে পারে আমি কেন পারবো না ? আপনারা যদি ওকে মারতেই চান তাহলে আগে আমাকে গুলো করতে হবে !

লাইনটা বলেই আমি নিনেন সামনে দিকে চেপে ধরে দৌড় দিলাম । ওকে এমন ভাবে সামনে ধরে রেখেছে যে পেছনে বন্দুক ধারীরা যদি গুলো করে সেটা সবার আগে আমার শরীরে লাগবে ।
লাগুক !
ঐ আরেকটু দুরে ! ফ্লাড লাইটের তীব্র আলো পার হয়ে গেলেই নিনেন বাকিটা নিজেই সামনে নিতে পারবে ! আলো যে ওকে দুর্বল করে দেয় সেটা আর হবে না !
-মিস্টার অপু ! থামুন বলছি ! আমি কিন্তু গুলি করবো ! থামুন বলছি !
আমি সেদিকে কান দিলাম না !

আমি প্রতি মুহুর্তে গুলির অপেক্ষাতেই দৌড়াচ্ছি । মনে হচ্ছে এই বুঝি একটা গুলি এসে লাগলো আমার বুকের ভেতরে । ঐ তো অন্ধকার দেখা যাচ্ছে । নিনেন দিকে তাকিয়ে দেখি ও সবুজ চোখে আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে । বিন্দু বিন্দু অশ্রু যেন ঝড়ে পরছে ওর চোখ দিয়ে !

সেই দৃষ্টিতে, সেই অশ্রুতে কোন হিংস্রতা নেই ।
কেবল ভালবাসা রয়েছে !

আমি দৌড়াতে থাকি ! আমাকে ঐ অন্ধকারের পৌছাতেই হবে !


(সমাপ্ত)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৬ রাত ১২:৩৩
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×