somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৫ টি টুকরো গল্প

০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



গল্প নম্বরঃ ০১


হাতে নিয়ে আরেকবার চিন্তা করলাম । মনে হল কাজটা করা ঠিক হবে না । আবার মনে হল হয়তো কিছুই হবে না । কিন্তু লোকটা যেভাবে বলল তাতে কাজ হলেও হতে পারে । আমি আস্তে করে তিনবার প্রদীপে ঘষা দিলাম ।
এক বার !
দুই বার !
তিনবার !
কিছুই হল না । দুরও । কিছুভবে এটা ভাবতেই কেমন বোকা বোকা লাগছে । ঠিক তখনই আমার ফেসবুকে একটা নক এল । আমি স্বাধারনত অপরিচিত কারো মেসেজের উত্তর দেই না । কিন্তু এই মেসেজটার উত্তর না দিয়ে পারলাম না । কারন ফেসবুক প্রোফাইলের নাম দেখাচ্ছে "জ্বীন আরাফাত" ।
আমি কিছু সময় ভুরু কুঁচকে তাকিয়ে রইলাম । এবং অবাক হয়ে লক্ষ্য করলাম এরই মধ্যে এই জ্বীন আরাফাত আমার ফ্রেন্ড লিস্টেও এড হয়ে গেছে !
কিন্তু কিভাবে ? আমি তো একে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাই নি ।
আরেকবার মেসেজ !
"হুকুম করুন মালিক । আমি আপনার গোলাম । আপনার একটা ইচ্ছা পূরন করবো"
আমি মাথা মুন্ডু কিছুই বুঝলাম না । এই সবের মানে কি ?
লিখলাম, "এসবের মানে কি ?"
"ফেসবুকে নক দিয়েছি বলে অবাক হচ্ছেন ?"
"তাই কি হওয়ার কথা না ?"
"আসলে সব কিছু আধুনিক হচ্ছে । আমরাই বা কিভাবে পিছিয়ে থাকি কিভাবে ? এখন ঝটপট বলে ফেলুন আপনার একটা ইচ্ছার কথা । আমার আরও কাজ আছে ?"
"তোমার না তিনটা ইচ্ছা পূরন করার কথা ?"
"আগে ছিল । এখন অফার কমিয়ে দিয়েছি । জলদি বলে ফেলেন ইচ্ছার কথা"


আমি কিছু সময় চিন্তা করলাম । তারপর বললাম, "আচ্ছা আমার ইচ্ছা হচ্ছে আমার বর্তমান এবং সামনের সম্ভব্য প্রেমিকা কিংবা বউ যেই হোক না কেন তার যেন কোন ছেলে বেস্টফ্রেন্ড না থাকে । তারা যেন এই পৃথিবী থেকেই গায়েব হয়ে যায়"
মেসেজটা পাঠিয়ে কিছু অপেক্ষা করলাম । তাকিয়ে দেখে মেসেজ সীন হয়েছে । কিন্তু তার কয়েক সেকেন্ড পরেই জ্বীন আরাফাতের নীল নাম টা কালো হয়ে গেল । আমি "কই, কি হল" লিখে মেসেজ লিখতেই ফেসবুক জানালো ইউ ক্যান্ট রিপ্লাই দিস ! জ্বীন আরাফাত আমাকে ব্লক দিয়ে চলে গেছে । পারবি না বললেই হত ব্লক দেওয়ার কি দরকার ছিল ! বেটা বদ ।

-------০০--------


গল্প নম্বরঃ ০২


-অপু এই অপু !
আরাম করে ঘুমিয়ে ছিলাম । আওয়াজ শুনে ঘুম ভেঙ্গে গেল । একট পরেই অনুভব করলাম আমার শরীরে কেউ ধাক্কা দিচ্ছে । কে ধাক্কা দিচ্ছে সেটা বুঝতেও আমার কষ্ট হল না !
ঘুম আমার কাছে খুবই প্রিয় । আর শীতের ঘুম হলে তো কথাই নেই । সেই ঘুম ভাঙ্গালে আমার বড় রাগ হয় । এটা ইভার জানার কথা তবুও ও আমাকে এই রাতের বেলা ডাকছে কেন ?
আমি বললাম
-কি হল ?
-ভূমিকম্প হচ্ছে !
খানিকটা সময় বোঝার চেষ্টা করলাম আসলেই ভূমিকম্প হচ্ছে কি না ! বুঝতে পারলাম যে আসলেই হচ্ছে । আমি বললাম
-হ্যা হচ্ছে ! এখন কি করবা ! ফেসবুকে স্টাটাস দিবা ?
-ইয়ার্কি ভাল লাগছে না ! আমার ভয় করছে । চল নিচে যাই !
আমি ওর দিকে পাশ ফিরলাম ! তারপর বললাম
-এখন ভূমিকম্প কেন সুনামী হলেও আমি নিচে নামবো না ! বেশি ভয় করলে তুমি নিজে চলে যাও নিচে !
ডিম লাইটের আলোতে ইভার মুখটা দেখতে পাচ্ছি । মেয়েটা সব কিছুতেই এমন ভয় পায় কেন আমি ঠিক বুঝি না ! আমি বললাম
-ভয় পেও না । এদেশে এমন ভূমিকম্প কোন দিন হবে না ! বেশি ভয় লাগলে আমাকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে থাকো । যদি মরি দুজন এক সাথে মরবো !
আমি আর কথা বাড়ালাম না ! আবার চোখ বন্ধ করলাম । ইভা উঠে একটু নড়াচড়া করলো । এদিক ওদিক হাটা চলা করলো । তারপর যখন বুঝলো যে আমি সত্যিই নামবো না তখন বাধ্য হয়ে আবার শুয়ে পড়লো আমার পাশেই । একটু পরে আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ! তারপর আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল
-যদি বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ে তোমার কিন্তু খবর আছে !
আমি হাসতে হাসতে বললাম
-আচ্ছা ! যদি বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ে তাহলে এবার থেকে মশারী আমার টাঙ্গাবো ! ঠিক আছে ?
-হয়েছে !
খানিকটা রাগ দেখাতে চাইলো তবে সেটা কাজ হল না । আমার সাথে ওর রাগ কাজ করে না ! তবে অনুভব করতে পারছিলাম যে ও যেন আমাকে আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আছে, যেন আমি সামনে থাকলেই ভূমিকম্প ওকে কিছু করতে পারবে না !
--------
টুকরো গল্পঃ ভূমিকম্প


----------০০---------


গল্প নম্বরঃ ০৩


ঢাকা শহরের লোকজন এমন যে পাশের বাসার মানুষ মরে পরে থাকলেও বাইরে বের হতে চায় না । কিন্তু যদি একবার একটু ভূমিকম্প অনুভুত হয় তাহলে যে যেমন ভাবে আছে তেমন ভাবেই নিচে দৌড় মারে । আমি অবশ্য কখনই তাড়াহুড়া করি না । কারন আমার কেন জানি মনে হয় বড় ধরনের ভূমিকম্প কোনদিনই এখানে হবে না । আমি বেশির ভাগ সময়ই বাসাতেই থাকি । কিন্তু মায়ের জন্য সেটা পারা যায় না । পারলে আমাকে কোলে করে নিয়ে যায় ।
আজকে বিকেলে যখন পুরো ঢাকাটা কেঁপে উঠলো তখন সবাইকে জোর করে নামিয়ে দিয়ে মা নিচে চলে গেল । আমি নামতে শুরু করেছি ধিরে ধিরে । অবশ্য চারিপাশ থেকে চিৎকার চেঁচামিচির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি ! কয়েক ধাপ নামতেই আরেকবার কেঁপে উঠলো বিল্ডিংটা !
যখন আমাদের ফ্লোর থেকে এক ফ্লোর নিচে এলাম তখন চোখ গেল সুপ্তিদের বাসার গেটের দিকে । সুপ্তির মা অসহায়ের মত মেয়ের দিকে তাকিয়ে রয়েছে । সুপ্তির গত পরশু দিন পা ভেঙ্গে গেছে রিক্সা থেকে পরে গিয়ে । ও দরজায় দাড়িয়ে মাকে বলছে
-মা তুমি নিচে নেমে যাও প্লিজ ! আমার কিছু হবে না !
-আমি থাকি আমারও কিছু হবে না ! মরলে দুজন এক সাথে মরবো !
কিন্তু যখন আরেকবার বিল্ডিংটা কেঁপে উঠলো তখন সুপ্তির মা মেয়েকে কোলে নেওয়ার চেষ্টা করলেন ! তিনি ওকে নিয়ে যাবেনই নিচে ! আমার কেন জানি হাসি এল খুব ! তবে সুপ্তির চেহারা দেখে খানিকটা সাহায্য করতে মন চাইলো ! আমি এগিয়ে গেলাম !
ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে বললাম
-আন্টি আপনি নিজে যান ! আমি ওকে নিয়ে আসছি !
সুপ্তি আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে বলল
-আমি তোমার কোলে উঠবো না !
-শোনো এটা তর্ক করার সময় নয় ! আরেকবার বড় ঝাকি দিবে এখনই । এখন যদি না নামি তাহলে কিন্তু খবর আছে ! আর তুমি না গেলে তোমার মাও যাবে না ! এটাই তুমি চাও ?
এই কথাটাতেই কাজ হল ! সুপ্তি ওর মায়ের দিকে তাকালো ! আমি সেই সুযোগ না দিয়ে বলল
-আন্টি আপনি ওর হুইল চেয়ারটা নিন ! আমি ওকে তুলছি !
যদিও আমার মনে খানিকটা সন্দেহ ছিল যে আমি ওকে ঠিক মত তুলতে পারবো কি না ! তবে যখন ওকে কোলে নিলাম কেমন যেন হালকাই মনে হল । আসলেই এক মণ মালমাল তুলতে যে ক্ষ্ট এক মণ ওজনের মেয়ে কোলে নিতে সেই কষ্ট হয় না ! আমি ওকে কোলে নিয়েই সিড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম ! সুপ্তির মা আমার আগে আগে নামছে ! সুপ্তি আমার গলা জড়িয়ে খানিকটা সংকুচিত হয়ে আছে ! আমার অবশ্য খারাপ লাগছে না ! বরং মজাই লাগছে !
কিন্তু আসক ঘটনা ঘটলো যখন নিচে নেমে এলাম । আমাদের বাসার সিড়িটা একেবারে গেটের কাছ এসেই থেমেছে ! রাস্তা থেকেই দেখা যায় ! আমি ওকে কোলে করে নিয়েই গেটেই কাছে চলে এলাম সেখানে অনেকেই রয়েছে । বিশেষ তুহিন ভাই আমাদের এভাবে দেখে চোখ কপালে তুলে তাকিয়ে রইলো ।
আমি ওকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দিলাম । তাকিয়ে দেখি ওর মুখ একেবারে লজ্জায় লাল হয়ে গেছে ! সেই সাথে তুহিন ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে দেখি তার মুখ একেবারে কালো হয়ে গেছে !
তুহিন ভাই আমাদের একখানে থাকে ! খুব ভাল ছাত্র ! মেয়েদের ক্রাশ, সবাই তাকে পছন্দ করে ! তিনিও অনেককে পছন্দ করেন । কয়েকটা প্রেমও করেছেন তবে ভাল ছাত্রদের এসব দোষ দেখা হয় না ! কদিন থেকেই সে সুপ্তির পেছনে লেগেছেন তবে সে পাত্তা দিচ্ছে না । তবে শোনা যাচ্ছে সেও পাত্তা দিতে শুরু করে করবে খুব জলদি ! এমন সময় এই কাহিনী !
আমি ওদের রেখে সামনে এগিয়ে এলাম । আর অবশ্য কাঁপাকাপি করলো না । সবার ভয় কেটে যে যার বাসায় ফিরে এল । তবে সুপ্তিকে যখন ওর মা লিফ্টের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো আমার দিকে চোখ পড়তেই আমি দেখতে পেলাম সেখানে অন্য রকম কিছু কাজ করছে ।
সেটা টের পেলাম বিকেল বেলাতেই । সুপ্তির মা আমাদের বাসায় এল সুপ্তিকে নিয়ে । আমাকে ধন্যবাদ দিতে । সবাই নাকি এমনটা করে না । সবাই নিজেরটা নিয়েই ব্যস্ত ! সেখানে আমি ওদেরকে ছেড়ে যাই নি !
মায়ের সাথে সুপ্তির মা গল্প শুরু করে দিলে দেখলাম সুপ্তি নিজেই হুইল চেয়ারের চাকা ঘুরিয়ে আমার ঘরে এসে হাজির হল ! ও যে আসবে আমি জানতাম ! আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-থ্যাঙ্কিউ !
আমি বললাম
-কেন ? তোমাকে কোলে নেওয়ার জন্য ?
সুপ্তি কোন কথা না বলে আমার টেবিলের দিকে চলে গেল ! ওখানে আমার কিছু গল্পের বই ছিল সেখান থেকে একটা নিতে নিতে বলল
-তুহিন ভাইয়া খুব বেশি জ্বালাচ্ছে ! আজকের পর আরও জ্বালানো শুরু করবে !
-রাজি হয়ে যাও ! সব দিক দিয়ে সে পার্ফেক্ট !
-আমার এতো পার্ফেক্ট লোক পছন্দ না !
-তাহলে কাকে পছন্দ ?
-সেটা শুনতে হবে না ! আমি এসেছি তোমার সাহায্য নিতে !
-কি রকম ?
-আমি তুহিন ভাইকে বলেছি যে আমাদের ভেতরে কিছু চলছে ! এই জন্যই তুমি আমাকে এভাবে নিয়ে এসেছো !
-সেকি !! মিথ্যা বলেছো কেন ? আমাদের ভেতরে তো কিছু চলছে না ! শুনো আমি এসব মিথ্যার ভেতরে নাই । পরে ঝামেলা হবে ! আমি .....
আমি এক টানে এতো গুলো কথা বলতে বলতেই দেখি সুপ্তি হুইল চেয়ার টেনে আমার একেবারে সামনে চলে এসেছে ! তারপর উঠে দাড়ালো ! একটু খুড়িয়ে খুড়িয়ে হলেও দেখলাম ও আমার সামনেই হেটে দেখালো ! তারপর আবারও চেয়ারে গিয়ে বসলো !
আমি অবাক হয়ে বললাম
-তুমি তো চলতে পারো ! ইচ্ছে করলেই সিড়ি দিয়ে নামতে পারতে !
সুপ্তি রহস্যময় হাসি দিয়ে বলল
-হ্যা পারতাম ! কিন্তু আমার কোলে চড়ার খুব শখ ছিল যে !
-মানে কি !
সুপ্তি এবার একটু জোরে হেসে উঠলো ! তারপর হুইলচেয়ারটা দরজার দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল
-অপু তুমি যে গাধা, গাধাই রয়ে যাবে ! বলতে তো আর পারবা না কোনদিন ! আমি ঠিক জানতাম তখন মা বাদে আর অন্তত একটা মানুষ আমাকে না নিয়ে কিছুতেই নিচে যাবে না ! তাই তো ওমন ভাবে অপেক্ষা করছিলাম দরজার সামনে !
তারপর আর কিছু না দরজার দিক দিয়ে বের হয়ে গেল ! আমি অবাক হয়ে সুপ্তির চলে যাওয়া পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম !
মেয়েটা কিভাবে জানলো এতো কিছু !
আমি তো প্রকাশ্যে কখন এমন কোন কিছু কাউকে বলি নি !
সুপ্তিকে যে তীব্রভাবে পছন্দ করি এটা কেবল সবার কাছ থেকেই নয় নিজের কাছ থেকেও লুকিয়ে রেখেছিলাম !
ওটা ও কিভাবে জেনে গেল ?
-----------
অনু গল্পঃ ভূমিকম্প প্রেম


---------০০---------



গল্প নম্বরঃ ০৪

চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি এসিটা প্রয়োজনের তুলায় বেশি ঠান্ডা ছাড়াচ্ছে । টেবিলের উপরেই রিমোর্ট ছিল । একেবারে বন্ধ করে দিলাম । ঘরটা একেবারে ঠান্ডা হয়ে এসেছে । সেই সাথে একটা গুমট ভাবও বিরাজ করছে রুম জুড়ে । উঠে গিয়ে কাঁচের জানালা খুলে দিলাম । রাতের একটা তাজা বাতাস আমার ঘরে প্রবেশ করলো ।
সূর্য অনেক আগেই ডুবে গেছে । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আটটার বেশি বেজে গেছে । নীলার তো চলে আসার কথা !
আমি আমার ট্যাবটা হাতে নিলাম । সিসিটিভি ক্যামেরার এপসটা চালু করতেই দেখতে পেলাম নীলাকে ! বাবুর বেবি খাটের পাশেই দাড়িয়ে আছে ।
যাক বাবা ! বাঁচলাম !
নীলাকে মাঝে মাঝে আমার মানুষ না রোবট মনে হয় । একটা মানুষ একই সাথে এতো দিক কিভাবে সামলায় কে জানে ! আমার চেম্বারটা বাসাতে হলেও আমাকে প্রায় সারাদিনই ব্যস্ত থাকতে হয় । হয় ভিজিটর আসে নয়তো বিদেশী ক্লাইন্টদের সাথে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলতে হয় । এক মিনিটও দম ফেলার সময় নেই । আর অন্য দিকে নীলার অফিসটা একটু দুরে । ওকে নিয়মিত অফিসে যেতে হয় তার উপর ঘরও ও নিজেই সামলায় । বাবুকে সামলানোর জন্য একজন আয়া রাখা আছে তবে সে সব সময় থাকতে পারে না । তবুও নীলা কেমন করে যেন সব সামলে নেই ।
তবে আজকে একটু ঝামেলা হয়ে গেছিলো । বাবু কিছু সময়ের জন্য একা হয়ে গেছিলো । আয়া আসে নি আজকে । তবে নীলা বাবুকে ঘুম পাড়িয়েই অফিসে গিয়েছে । আর যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলো যদি ঘুম ভাঙ্গে তাহলে যেন আমি ওকে দুধ খাওয়াই । দুধও তৈরি করে রেখে গেছে ।
বাবুর ঘরেই একটা সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করা আছে । যেটা আমার এবং নীলার উভয়ের মোবাইলের সাথে সংযোগ করা । বাবু যা করছে সেটা লাইভ আমি আর নীলা দেখতে পাচ্ছি । নীলাকে দেখে আমি খানিকটা স্বস্থি বোধ করলাম । যাক ও চলে এসেছে দেখে ভাল লাগছে । আমি সারা দিনে খুব ব্যস্ত ছিলাম । তাই সন্ধ্যার আগ দিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । কখন যে সময় চলে গেছে টেরই পায় নি !
আমি ভিডিওর দিকে আরও কিছুটা সময় তাকিয়ে রইলাম । বাবু এখন ওর মায়ের দিকে তাকিয়ে হাসছে । যদিও ঘরটা খানিকটা আবছায়া হয়ে আছে । কেবল বেবি খাটের উপর আলোটা পড়ছে যেটাতে বাবুকে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে । তবে ঘুমানোর আগে তো এমন ছিল না । পুরো ঘরই আলোকিত ছিল ।
আমি বেশি চিন্তা করলাম না । নীলা যখন চলে এসেছে তখন আর সমস্যা নেই । ও নিশ্চয়ই ঘরের আলো কমিয়ে দিয়েছে !
আমি যখন আবার কাজের দিকে মন দেব তখনই আমার মোবাইলটা বেজে উঠলো । তাকিয়ে দেখি নীলা ফোন দিয়েছে । কি দরকার হল এমন !
-হ্যালো !
-হ্যালো সজিব ?
-হুম ! বল !
-শোন আমার আসতে আরেকটু দেরি হবে, তুমি বাবুকে ফিডার খাইয়েছো দেখে ভাল লাগলো ! এখন ওকে একটু কোলে নাও হেটে বেড়াও । অনেকক্ষন ও খাটে শুয়ে আছে !
আমার কানে আর কথা ঢুকলো না ! আমি আবার আমার ট্যাবটা তুলে নিলাম ! এখনও আবছায়া আয়বয়টা দেখা যাচ্ছে যার দিকে তাকিয়ে বাবু হাসছে । যাকে আমি নীলা মনে করেছিলাম ।
নীলা যদি এখনও বাইরে থাকে তাহলে বাবুর সাথে এই ছায়াটা কে !!
আর নীলা ওর মোবাইলেও দেখেছে তার মানে ও একা ভুল দেখে নি ! নীলা মনে করেছে ওটা আমি !
-হ্যালো শুনছো ! হ্যালো ! বাবুর ঘরটা অন্ধকার করে রেখেছো কেন ? এই শুনছো.....
আমার কানে আর কিছু গেল না । আমি ফোনটা রেখেই বাবুর ঘরের দিকে দৌড় দিলাম ! জানি না কি দেখবো সেখানে গিয়ে ! আমি দৌড়াতেই থাকি ! আমাকে যতদ্রুত সম্ভব বাবুর কাছে পৌছাতে হবে !

(এডোপ্টেড)


----------০০-----------



গল্প নম্বরঃ ০৫

মিতুর খুব কান্না আসছে । এমন কোন কারন হয় নি তবুও কান্না আসছে । রান্না ঘরে দাড়িয়ে দাড়িয়ে অনেকটা সময় নিজেকে সামলানোর চেষ্টা করলো ও । পুরো ফ্ল্যাটে ও ছাড়া আর কেউ নেই, তাই এখন যদি চোখ দিয়ে পানি বের হলেও কিছু যায় আসে না ।
ও নিজেই খানিকটা অবাক হয়ে যাচ্ছে যে এমন একটা সাধারন কারনে ওর কান্না আসছে । চুলায় হাড়ির দিকে আরেকবার তাকিয়ে দেখলো । মুরগিরটা একেবারে হয়ে গেছে । এখন নামিয়ে ফেললেই হয়ে যাবে । অথচ ওর ইচ্ছে করছে পুরো হাড়ি শুদ্ধ ড্রেনে ফেলে দিতে । যার জন্য রান্না করছে সেই চলে গেছে বাইরে খাওয়ার জন্য !
অবশ্য এর জন্য ওর নিজেরও দোষ যে নেই এমন না । আর কান্না টা ঠিক এই কারনেই ।
রাজিবের সাথে ওর বিয়ে হয়েছে খুব বেশি দিন হয় নি । মাস খানেকেরও কম সময় । তার উপর ওরা নতুন বাসায় উঠেছে মাত্র দুদিন হল । ওর স্কুলটার কাছেই বাসাটা নেওয়া হয়েছে যদিও রাজিবের অফিসটা একটু দুর হয়ে যায় । রাজিব ইচ্ছে করেই এই বাসাটা নিয়েছে । মিতু অবশ্য মানা করেছিলো রাজিব শুনে নি । তার বক্তব্য হচ্ছে তুমি ঘর সামলাবে আবার চাকরিও করও করবে এই সুবিধা টুকু অন্তত তোমার পাওয়া উচিৎ যেন পাঁচ মিনিটেই বাসায় আসতে পারো ! একবার ভেবেছিলো যে বিয়ের কর স্কুলের চাকরিটা ছেড়ে দিবে তবে রাজিবই বলেছে ছাড়ার কোন দরকার নেই । ওর ভাষ্য হচ্ছে প্রত্যেকের একটা নিজের পরিচয় থাকা উচিৎ ! অন্তত তার ছেলে মেয়ে যেন তার মায়ের পেশায় গৃহিনী না লেখে ! বলতে গেলে তখন থেকেই রাজিবের প্রতি ওর আকর্ষনটা আরও একটু বেড়ে যায় !
যদিও বিয়ের পর একটা জিনিস লক্ষ্য করেছে যে রাজিব কথা বার্তা কম বলে । যেমন টা ও ভেবে রেখেছিলো তেমন রোমান্টিক নয় তবে মানুষ হিসাবে ভাল । মিতুর এই মাঝে ওর প্রতি কেমন একটা অন্য রকম টান শুরু হয়েছে । এই অনুভুতির কোন ব্যাখ্যা নেই ।
আজকে তেমন কিছু হয় নি । স্কুল থেকে দুপুরের ভেতরেই ফিরে আসে ও ! স্কুল থেকে ফিরে এসেই ও একটু শুয়ে পরেছিল । ভেবে রেখেছিলো যে সন্ধ্যার একটু আগে আগে ও রাজিবের জন্য ভুনা মাংশ আর খিচুড়ি রান্না করবে । এটা ও খব পছন্দ করে । শ্বাশুড়ির কাছ থেকে ফোন দিয়ে জেনে নিয়েছে গতকাল । দুপুরে রান্না করলে ঠান্ডা হয়ে যাবে তাই ঠিক করেছিলো বিকালে রান্না শুরু করবে !
কিন্তু কখন যে ঘুম চলে এসেছে ও বলতে পারবে না । তাই একটু দেরি হয়ে গেল । সন্ধ্যার রাজিব অফিস থেকে ফিরে এসে ফ্রেশ হয়েও দেখে যে রান্না তখন শেষ হয় নি । একবার জিজ্ঞেস করে, রান্না শেষ হয় নি শুনে বসার ঘরে চলে যায় আবার । তারপরই বলে যে ও একটু বাইরে থেকে আসছে ।

মিতু রাজিবকে আটকানোর চেষ্টা করে । ও ভাল করেই জানে রাজিব মুখে কিছু না বললেো ও বাইরে যাচ্ছে খাওয়ার জন্য । ওর নিশ্চয়ই খুব ক্ষুধা লেখেছে । আর বিয়ের আগে ও বাইরেই খাওয়া দাওয়া করতো সব সময় ।
রান্না শেষ করে মিতু মন খারাপ করে বসে রইলো বসার ঘরে । নিজের জন্য রুটি বানাতে ইচ্ছে করলো না । আজকে ও না খেয়েই থাকবে । এমন সময় কলিং বেল বেজে উঠলো । মিতু দরজা খুলে দেখে রাজিব দাড়িয়ে । হাতে একটা কোকাকোলার বোতল । আরেকটা প্যাকেট !
মিতু কিছু তাকিয়ে থেকে বলল
-তুমি বাইরে থেকে খেয়ে এসেছো ?
রাজিব অবাক হয়ে বলল
-বাইরে থেকে খেয়ে কেন আসবো ? তুমি রান্না করছো না ! তাও আবার খিচুড়ি আর ভুনা মাংস !
-সত্যিই খেয়ে আসো নি তো ?
-আরে বাবা না !

মিতুর কেন জানি আনন্দ হতে লাগলো খুব বেশি ! কোন সংকোচ ছাড়াই দরজার মুখেই রাজিবকে জড়িয়ে ধরলো ! রাজিব কিছুই বুঝতে পারছিলো না কি হচ্ছে । এই মেয়েটা এমনই বা কেন আচরন করছে ! কয়েক মুহুর্ত পরে মিতু ওকে ছেড়ে দিয়ে তাড়াতাড়ি করে বলল
-তুমি জলদি করে টেবিলে বস । আমি খাবার দিচ্ছি !
তারপর প্যাকেটের দিকে চোখ যেতে বলল
-এই প্যাকেটে কি ?
-তোমার জন্য । তুমি যে রাতে সিদ্ধ আটার রুটি খাও !
মিতু খানিকটা থেমে গেল । গতদিনই রাজিব ব্যাপারটা লক্ষ্য করেছিলো । মিতু যখন টেবিলে ভাতের বদলে রুটি খাচ্ছিলো রাজিব বলল
-তুমি রাতে ভাত খাও না !
মিতু খানিকটা লজ্জিত কন্ঠে বলল
-আসলে বাবার ডায়াবেটিক্স ছিল । উনি রাতে রুটি খেতেন । ছোট বেলা থেকে আমিও রুটিই খেতাম বাবার সাথে । অভ্যাস হয়ে গেছে ।
রাজিব আর কিছু জানতে চায় নি ! আর আজকে সেটা সে মনে রেখেছে !
রাজিব বলল
-তুমি আমার জন্যও রান্না কর তার উপর নিজের জন্য রুটি বানাবে ! তাই ভাবলাম রুটি গুলো আমিই নিয়ে আসি ! গরম গরম আছে এখনও । দাড়িয়ে থেকে বানিয়ে নিয়ে এসেছি । তুমিও বসে পড় আমার সাথে
মিতু বলল
-তুমি এই জন্য বাইরে গেছিলে ?
-হ্যা ফেরার সময় মনে ছিল না !
-টেবিলে বস !
মিতু ওর হাত থেকে কোকাকোলা আর রুটির প্যাকেট টা নিয়ে রান্না ঘরে চলে গেল । লক্ষ্য করলো ওর চোখ দিয়ে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পড়লো । সেটা সে আটকানো চেষ্টা করলো না । একটু আগে কান্নাটা ছিল কষ্টের আর এখনকার কান্নাটা আনন্দের !
-------
অনু গল্পঃ টুকরো দৃশ্য !

--------০০০------
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৭ রাত ৮:৩৬
১৬টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×