somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনু-গল্পঃ অপ্রত্যাশিত নতুন জীবন

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মিতুর এতো কান্না এর আগে কোন দিন আসে নি। চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। উপরিওয়ালার দিকে তাকিয়ে বলতে ইচ্ছে করছে এমন কেন বারবার তার সাথেই ? কেন হবে বারবার তার সাথে এমন হবে ?
একটু আগে বড় চাচা আর চাচীর কথা লুকিয়ে শুনেছে। তখন থেকেই কান্না আসছে ওর। কিছুতেই আটকাতে পারছে না।

-আপু!
তাকিয়ে দেখে অরিন পাশে দাড়িয়ে। জীবনে এই অরিনকে ওর খুব বেশি অসহ্য লাগলো। তবুও নিজেকে সামলে নিল সে। বলল
-কি হয়েছে?
-নিলয় ভাই কেমন মানুষ বলত!
মাথার ভেতরে আবারও আগুন লেগে গেল। ইচ্ছে হল অরিনের চুলের মুঠি ধরে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরে।
হারামজাদী নিজে তো অন্যের সাথে পেট বাঁধিয়েছিস, আর এখন হাত বাড়িয়েছিস নিলয়ের দিকে। একটুও লজ্জাও করছে না?
মিতু বলল,
-জানি না।
-আরে তুমি ওনার সাথে কথা তথা বল তাই বললাম
মিতু আরও একটু বিরক্ত হয়ে বলল, "বললাম না জানি না। বিরক্ত করিস না।

অরিনের যেন কথা শুনে খুব মজা লাগলো। এমন মুখ করে তাকালো যে মিতুর রাগে পিত্তিটা জ্বলে উঠলো। আর সেখানে না থেকে উঠে দাড়ালো। ছাদের দিকে পা বাড়ালো। মিতু জানে নিলয় এখন ছাদেই আছে। ওখানে হাটাহাটি করছে। একবার ইচ্ছে করছে উপরে উঠে গিয়ে নিলয়ের সাথে কথা বলে । ওকে জড়িয়ে ধরে বলে যে ও নিজে ওকে ভালবাসে !

কিন্তু মিতু নিজেকে সামলে নেয় । ও কোনদিন নিলয়কে ভালবাসি বলে নি । কিন্তু আজকে যখন ওর চাচা চাচীকে বলতে শুনলো যে অরিনের জন্য তারা নিলয়ের ব্যাপারে কথা বলবে । আর তার চাচা যখন একটা কিছু ইচ্ছে করেছে তখন সেটা হবেই এটা মিতু খুব ভাল করেই জানে !


নিলয় ওদের বাসার ভাড়াটিয়া ! চিলেকোঠার দুরুম নিয়ে থাকে আজকে বেশ কিছু দিন । প্রথম প্রথম মিতু নিলয়ের কাছ থেকে নিজেকে খানিকটা দুরে রাখতো । কারন তারা চাচাকে সে খুব ভাল করেই চিনে । যদি তার চাচা এই ব্যাপারে জানতে পারে তখন কি হবে সেটাও সে ভাল করেই উপলব্ধি করতে পারে । কিন্তু যখন থেকে জানতে পারলো যে নিলয়ও ওর মত এতিম তখন থেকে কেন জানি মিতু নিজেকে দুরে রাখতে পারে নি । বিশেষ করে নিলয় যখন ওর প্রতি আগ্রহী ছিল । যখনই ছাদে আসছো তখন মাঝে মাঝেই নিয়ল ওর সাথে কথা বলতো । ওর ব্যাপারে খোজ খবর নিত । মিতুর খুব ভাল লাগতো ! নিলয়কে জানি খুব কাছের মানুষ মনে হত । এই জন্যই কষ্ট টা লাগছে !


মিতুর চাচাতো বোন অরিনের ব্যাপারে অনেকে অনেক কথা বললেও মিতুর চাচা এসব কিছু বিশ্বাস করতো না । কিন্তু কদিন আগে এমন একটা ঘটনা ঘটে গেছে যে মিতুর চাচার বড় চিন্তিত হয়ে পড়েছে । অরিন এমন কাজ করে ফেলেছে যে কদিন পরে বাইরে মুখ দেখানো দুস্কর হয়ে যাবে ! তাই মেয়ের এই কুকর্ম ঢাকতে মিতুর চাচা নিলয়কে বেছে নিয়েছে ।
মিতুর এমন কোন অবস্থা নেই যে ও নিলয়ের কাছে গিয়ে বলবে যে ও ওকে ভালবাসে । ও যেন অরিনকে বিয়ের জন্য প্রস্তুত না হয় ।


পরের সপ্তাহ মিতু একটা বারও ছাদে গেল না । নিলয়ের সাথে দেখাও করলো না একবার ! সপ্তাহের শেষ দিনে নিলয়ের ফোন এসে হাজির হল । ধরবে না ধরবে না করেও সে ঠিকই ধরে ফেলল ফোনটা ! প্রথমে কেউ কোন কথা না বললেও নিলয় বলল
-আমার উপর রাগ করেছো তুমি ?
-নাহ । রাগ কেন করবো ?
-বাহ ! বুঝতেই পারছি কথা শুনে ।
মিতু কি বলবে খুজে পেল না । নিলয় বলল
-এখন একটু দেখা করতে পারবে ?
-এখন ?
-হ্যা । আমি ধানমন্ডিতে আছি । আসতে পারবে ?

একবার মনে হল মানা করে দেয় । যদি একবার চাচা জানতে পারে তাহলে ওর অবস্থা খারাপ আছে কিন্তু মানা করতে পারলো না । ধানমন্ডির একটা ক্যাফেতে দেখা হল ওদের মধ্যে ! মিতু কিছু সময় কোন কথা বলল না । নিলয় বলল
-তোমার চাচার খবর তো শুনেছো ?
-হুম !
-চাচাতো বোনের ?
-আপনি কি এই কথা বলার জন্য আমাকে ডেকেছেন ?
-না ! আমি শুনতে চাইছি এতে তোমার কিছু বলার নেই ?
-আ-আমার কি বলার থাকতে পারে ?
-তার মানে তোমার চাচাতো বোনের সাথে যদি আমার বিয়ে হয় তোমার কোন আপত্তি নেই ?

মিতু কোন কথা না বলে চুপ করে রইলো । নিলয় কিছুটা সময় চুপ থেকে বলল
-আমি আমার অফিসের ঠিক পাশেই একটা ছোট বাসা ভাড়া নিয়েছি । এরকম চিলেকোঠা । গরম কালে একটু কষ্ঠ হবে হয়তো থাকবে । কিন্তু সামনের বছর আমার একটা ইনক্রিমেন্ট হবে ! তখন একটা ভাল বাসা ভাড়া নিতে পারবো ।
-আপনি এসব আমাকে কেন বলছেন ?
নিলয় আবারও চুপ করে থেকে বলল
-আমি আমার দুজন বন্ধুকে ধানমন্ডি কাজী অফিসে অপেক্ষা করতে বলেছি । ওরা পাঁচটা পর্যন্ত অপেক্ষা করবে !

মিতুর সময় দেখলো । এখন সাড়ে তিনটা বাজে । আরও দেড় ঘন্টা ! নিলয় বলল
-আমি একান্ত ভাবে চাই তুমি আমার বউ হও ! একান্ত ভাবেই । তবে তোমার ইচ্ছেটা অনেক বেশি জরূরী ! যদি তুমি রাজি না থাকো তাহলে আমি .....

মিতু কোন কথা না বলে কেবল তাকিয়ে রইলো নিলয়ের দিকে । ওর কাছে এমন কথা আসলেই একটু অপ্রতয়াশিত ছিল । এমন কি এখানে যখন আসছিলো তখনও ওর ধারনাও ছিল না যে নিলয় এমন কিছু বলতে পারে ওকে ! মিতু কোন মতে বলল
-চাচা রাগ করবে !
-তুমি সারা জীবন এই আফসোস করে কাটাতে রাজি আছো যে তোমার চাচা রাগ করবে বলে তুমি আমাকে বিয়ে করো নি ?

মিতু কোন কথা বলল না । নিলয় বলল
-তবে আমি আফসোস করতে রাজি নই । এই জন্য আমি চেষ্টা করলাম । আমি এখন ঐ কাজী অফিসে গিয়েই অপেক্ষা করছি । আমার বন্ধুরা ৫ পর্যন্ত অপেক্ষা করবে তবে আমি পুরোরাত অপেক্ষা করবো । যদি তুমি না আসো তাহলে কালকে তোমার চাচাকে গিয়ে বলবো যে অরিনকে বিয়ে করার ব্যাপারে আমার কোন আপত্তি নেই । এখন বসে ভাব তুমি কি করবে ?

এই বলেই নিলয় উঠে দাড়ালো । মিতু তাকিয়ে দেখলো বিল দিয়ে উঠে চলে গেল । কাঁচের দরজা দিয়েই দেখলো রাস্তার ওপাশে কাজী অফিসের সাইনবোর্ডে দেওয়া বিল্ডিংয়ে ঢুকে পড়লো ।

মিতু কি করবে বুঝতে পারলো না । বারবার চাচার চেহারা মনে আসছে । প্রথমে মা তার কিছুদিন পরে বাবার মারা যাওয়ার পরে এই চাচাই ওকে মানুষ করেছে । কি করবে ?
আফসোস করবে ?

চোখ বন্ধ করতেই নিলয়ের বুকে অরিনকে কল্পনা করলো । বুকের মাঝে যেন একটা মোচড় দিয়ে উঠলো ।
না কোন ভাবেই হবে না ।
কোন ভাবেই না !

আর চিন্তা না করেই কাঁচের জানালা খুলে বের হয়ে এল । ঐতো রাস্তার পাশে কাজী অফিস দেখা যাচ্ছে । ওখানে ওর জন্য অপ্রত্যাশিত নতুন জীবন অপেক্ষা করছে ।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২৩
১১টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×