somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্পঃ ভালবাসা এবং প্রাপ্তি

১১ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:২৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেই সন্ধ্যা থেকে মিতু জানলার পাশে কাত হয়ে শুয়ে আছে। আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকলেও নির্দিষ্ট করে কিছুই দেখছে না। আজকে ওর মন খারাপ। অনেক কষ্টে কান্না আটকে রেখেছে। রাতের আগে কান্না কাটি করা যাবে না। মিতুর আম্মু টের পেলে নানান প্রশ্ন করবে। এখন মিতুর কোন জবাব দিতে ইচ্ছে করছে না।
পিঠে কারো হাতের ছোঁয়া পেতেই পিছন ফিরে তাকালো। মিতু মা এসে বসেছে। নরম স্বরে মেয়েকে বলল
-ঘর অন্ধকার করে শুয়ে আছিস কেন?
-এমনি মা।
-মন খারাপ?
মিতু কিছু না বলে আবারও জানলা দিয়ে আকাশের দিকে তাকালো। মিতুর মা বলল
-সুমন বিসিএসে টিকে গেছে এই জন্য মন খারাপ?
কথাটা শুনার সাথে সাথে মিতু মায়ের দিকে ফিরে চাইলো। মাকে ও যতটা বোকা মনে করতো ততটা বোকা সে নয়। মায়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই মিতুর চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে এল। কিছু না বলে মায়ের বুকে ঝাপিয়ে পড়লো। ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠলো।
আসলেই সুমন ভাইয়ার বিসিএসে টিকে যাওয়াতে মিতুর মন খারাপ। কারন এর পর কি হবে মিতু খুব ভাল করে জানে। সুমন ভাইয়া অনেক দিন থেকেই উপর তলার রমিজ আঙ্কেলের মেয়ে নিথিকে পছন্দ করে। নিথি এতোদিন তাকে পাত্তা দেয় নি কিন্তু এবার দিবে। বিসিএস ক্যাডারকে পাত্তা দেবে না এমন মেয়ে খুব কমই আছে এদেশে। পারিবারিক ভাবে হয়তো বিয়েও ঠিক হয়ে যাবে। রমিজ আঙ্কেলও বিয়ের জন্য অমত করবে না।
মিতুর মা মেয়েকে আদর করতে করতে বলল
-আমি কি সুমনের বাবার কাছে প্রস্তাব পাঠাবো?
মিতু ফোঁফাতে ফোঁফাতেই বলল
-না।
-কেন না?
-আমি তো নিথির মত দেখতে এতো সুন্দর না। আমি তো দেখতে কালো।
-কে বলেছে তুই কালো? এটাকে কালো বলে? আর সুমন তো তোকে পছন্দ করে। করে না?
-ঐভাবে করে না।
তুই তো করিস? ভালবাসিস না ওকে? তাহলে কেন বলিস নি এতোদিন? যখন ওর সাথে কথা বলেছিস এতোদিন তখন কেন বলিস নি?
মিতু কোন জবাব না দিয়ে মাকে আরও একটু শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। ওর কান্না আসতে লাগলো খুব বেশি।


দুই

এদিকে সুমনদের বাসাতে আনন্দের বন্যা বয়ে চলেছে। সবার মন ভাল। উপর তলার নিথিরাও এসেছে। তাদেরকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসা হয়েছে। রাতের খাবার তারা একসাথে খাবে।
কিন্তু সুমনের মনে চলছে অন্য কিছু। আজকেই নিথিদের এভাবে ডেকে আনার পেছনে মায়ের একটা আলাদা উদ্দেশ্য আছে সুমন সেটা জানে।
খাবার টেবিলেই কথা উঠলো। ছেলের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হয়েছে, এখন একটা বউ দরকার। ঠিক তখনই সুমনের মা বলল
-ঠিক মনের কথা বলেছেন ভাবি। এখন একটা ছেলের বউ দরকার।
সুমন তাকিয়ে দেখলো নিথির মুখটা কেমন লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। সুমনের মা বলল
-ভাবি আমি চাই......
কথাটা শেষ হল না তার আগেই সুমন বলল
-মা। এখন এসব থাক!
-কেন থাকবে কেন?
-মা প্লিজ।
হঠাৎ করেই ঘরের আবহাওয়া বদলে গেল। সুমনের মা বলল
-কি হল এমন? তুই তো একদিন আমাকে বলেছিলি যে তুই নিথিকে পছন্দ করিস! তাহলে?
-তখন বলেছিলাম। তখন করতাম পছন্দ।
-এখন কি সমস্যা?
-এখন কোন সমস্যা নেই। এখন আর সেই অনুভূতি নেই।
কিছু সময় কেউ কোন কথা বলল না। বেশ কিছু সময় পরে নিথির বাবা বলল
-নিথি কি তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছে কোন দিন?
সুমন বলল
-না আঙ্কেল। এমন কিছু না। আসলে ও আমাকে কোন দিন পছন্দই করে নি। এখন যে পছন্দ করা শুরু করেছে সেটা আমার জন্য না, আমার চাকরির জন্য।
সুমন আর কোন কথা না বলে খাবার টেবিল থেকে উঠে গেল। কথা গুলো বলতে পেরে অনেক শান্তি লাগছে ওর।


তিন

-মন খারাপ তোমার?
মিতু তাকিয়ে দেখলো সুমন পেছনে এসে দাড়িয়েছে। ভেবেছিল আজকে সে ছাদে আসবে না। প্রতিদিন রাতে সুমন ছাদে আসতো। মিতুও আসতো একই সময়। এই সময়টাতে অনেক কথা হত দুজনার। মিতু বলল
-আজকে ভাবলাম আপনি হয়তো আসবেন না?
-কেন? প্রতিদিনই তো আসি।
-না আজকে একটা বিশেষ দিন আপনার জন্য। আর শুনলাম নিথিরা নাকি আপনাদের বাসায় গিয়েছিল। ভাবলাম গল্প গুজব করবেন ওর সাথে।
সুমন প্রসঙ্গ এড়িয়ে বলল
-আমার রেজাল্ট নিয়ে তুমি খুশি না?
-কেন খুশি হব না? অনেক খুশি!
-তাহলে ফোন করে যখন তোমাকে বললাম তুমি কথা বললে না কেন?
-আসলে তখন মোবাইলে একটু সমস্যা দেখা দিয়েছিল। আমি কথা বলেছিলাম আপনি শুনতে পাননি।
সুমন কোন কথা না বলে কিছুটা সময় মিতুর দিকে তাকিয়ে রইলো। মেয়েটার চেহারা দেখেই মনে হচ্ছে কান্নাকাটি করেছে। সুমন বলল
-আমি নিথিকে আর পছন্দ করি না।
কথা টা শুনে মিতু চুপ করে তাকিয়ে রইলো। কিছু বলতে পারলো না। সুমন বলল
-আজকে কথাটা সবার সামনেই বলে দিয়েছি। যা কনফিউশন ছিল দূর হয়ে গেছে।
মিতু ক্ষীণ কন্ঠে বলল
-কাকে পছন্দ করেন এখন?
-তুমি জানো না?
-না। বলেন।
মিতুর কেবল মনে হল ও হয়তো এখনই দম বন্ধ হয়ে মারা যাবে। সুমন বলল
-আমি তাকেই পছন্দ করি যে এতোটা দিন আমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে ভালবেসে এসেছে, আমি হাতে মেয়েদী পছন্দ করি বলে একটা দিন তার হাত খালি রাখে নি মেহেদী ছাড়া, যে আমাকে আমার চাকরির জন্য না বরং আমাকে আমার জন্য ভালবাসে, অনিশ্চিত জেনেও যে আমার হাত ধরতে চাইতো আমি তাকে ভালবাসি।
মিতু লক্ষ্য করলো ওর চোখ দিয়ে পানি পড়তে শুরু করেছে। কোন মতে বলল
-কিন্তু আমি তো নিথির মত দেখতে সুন্দর না।
-দরকারও নেই অমন সৌন্দর্য্যের।

তারপর সুমন মিতুর সামনে হাটু ভাজ করে বসে বলল
-মিতু তুমি হয়তো আমার জীবনে প্রথমে আসো নি, তবে আমি চাই আমার জীবনের শেষ নারী তুমিই হও। এখন থেকে একদম জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। হবে?

মিতু কেবল অশ্রু চোখে সুমনের দিকে তাকিয়ে রইলো । ওর কিছু বলা উচিৎ কিন্তু কান্নার জন্য কিছু বলতে পারলো না !
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মে, ২০১৭ সকাল ১০:২৭
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমিও যাবো একটু দূরে !!!!

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২২

আমিও যাবো একটু দূরে
যদিও নই ভবঘুরে
তবুও যাবো
একটু খানি অবসরে।
ব্যস্ততা মোর থাকবে ঠিকই
বদলাবে শুধু কর্ম প্রকৃতি
প্রয়োজনে করতে হয়
স্রষ্টা প্রেমে মগ্ন থেকে
তবেই যদি মুক্তি মেলে
সফলতা তো সবাই চায়
সফল হবার একই উপায়।
রসুলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×