somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ নীতু সাথে ইফতারি এবং তারপর .....

০৭ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নীতুর ফোন পেয়ে খানিকটা অবাক হলাম। ওর তো আর ফোন করার কথা না। নাকি ওকে এখনও কিছু জানানো হয় নি। ওর পরিবার যদি ওকে সব কিছু জানাতো তাহলে তো ওর ফোন দেওয়ার কথা ছিল না ! নাকি খানিকটা অপরাধ বোধ থেকেই ও ফোন দিচ্ছে !
আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না । আমি ফোন রিসিভ করলাম
-হ্যালো
-আপনি কোথায়?
-এই তো বাসার দিকে যাচ্ছি।
-একটু আমার হলের সামনে আসতে পারবেন?
-এখন?

আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। এখন যদি নীতুর হলের সামনে যাই তাহলে ইফতারির আগে কোন ভাবেই বাসায় পৌছানো যাবে না। বাইরে ইফতারি করতে হবে। একবার মনে হল ওকে মানা করব দেই। সব কিছু যখন শেষ হয়ে গেছে তখন আবার দেখা করে কি লাভ হবে। পরক্ষণেই মনে হল, থাকুক। একবার দেখা করলে এমন কিছু হবে না। আর ইফতারি আমি বাইরে থেকে কিনেই আনি। একদিন ঘরে না করলে এমন কোন সমস্যা হওয়ার কথা না। ওকে বলে দিলাম যে আসছি।

ফোন রেখে বাস থেকে নেমে পড়লাম । ওর হলের সামনে যেতে হলে এখন আমাকে রিক্সা নিতে হবে । এই গরমে আর বাসে উঠতে ইচ্ছে করছে না !

রিক্সাতে উঠে নীতুর কথাই ভাবতে লাগলাম। নীতুর সাথে আমার বেশ কয়েক দিন থেকেই কথা হচ্ছিলো। দুবার দেখাও হয়েছে। মিষ্টি চেহারার মেয়েটিকে আমার ভালই লেগেছিলো। বাসায় তাই বলে দিয়েছিলাম যে মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে। তারা যেন কথা বার্তা এগিয়ে নিয়ে ।

পারিবারিক ভাবে নিতুদের বাসায় প্রথম যাওয়া হয় । আমাদের দুজনের বাসা ঠিক একই এলাকাতে না হলেও খুব বেশি দুরে না । বিয়ের জন্য পাত্রী দেখতে দেখতে একদিন নীতুর খোজা পাওয়া গেল । দিন ক্ষণ ঠিক করে সবাই দল বেধে হাজির হলাম ! সেদিন দুজনের মাঝে তেমন কোন কথাই হয় নি । কেবল কয়েকবার চোখাচোখী হয়েছিলো । পরে মোবাইল নাম্বার আদান প্রদান হল । ঢাকাতে এসে কথা বলা শুরু করলাম ! মেয়েটিকে আমার আস্তে আস্তে ভাল লাগতে শুরু করলো । আর নীতুর চোখের দৃষ্টি দেখে আমারও কেন জানি মনে হল সে নীতুরও আমাকে পছন্দ হয়েছে । যেদিন আমি ওকে ফোন দিতে পারতাম না সেদিন ও নিজে আমাকে ঠিকই ফোন দিত । খানিকটা অভিমান ভরা কন্ঠে অনুযোগ করতো যে আমি ওকে সারা দিন ফোন দেই নি । আমার ভালই লাগতো ! নতুন করে স্বপ্ন দেখতে লাগলাম !

দিনের মাঝে অবসরে ওকে নিয়ে দুচারটা কল্পনার ছবিও একে ফেলেছি কিন্তু গত কালকে মা ফোন দিয়ে জানালো যে ওরা নাকি না করে দিয়েছে। ওরা আরও ভাল পাত্র চায়। আমি আর কিছু জানতে না চাইলেও মা আরও অনেক কথা বলল । কোন এক ডাক্তার ছেলের স্বম্মন্ধ নাকি এসেছে নীতুর জন্য। বিয়ের কথা বার্তা চলছে খুব জোরে স্বরে। এবার ঈদের পরই নাকি বিয়ে হয়ে যাবে। আমার খানিকটা মন খারাপ হল। আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিলাম। আমর আসলে কিছুই করার নেই । ডাক্তার পাত্রের কাছে আমি তো দাড়াতেই পারবো না । আর নীতুর সাথে আমার এমন কোন সম্পর্ক গড়ে ওঠে নি যে ওকে বলব আমাকে বিয়ে করার কথা !

ভেবেছিলাম নীতু হয়তো আর যোগাযোগ করবে না। আগ বাড়িয়ে যোগাযোগ করাটাও কেমন দেখায় তাই আমিও ঠিক করলাম যে ওর সাথে আর যোগাযোগ করবো না। কিন্তু আজকেই নীতু ফোন দিবে ভাবি নি।



ওর হলের সামনে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেল। ওকে ফোন দিতেই ও বাইরে বেরিয়ে এল। হাতে দেখলাম বেশ বড় একটা শপিং ব্যাগ। এতো বড় ব্যাগ নিয়ে ও কোথায় যাচ্ছে কে জানে!
আমাকে নিয়ে ওদের হলের পাশেই সবুজ ঘাসের উপর বসলো। তাকিয়ে দেখি আরও অনেকেই সেখানে বসে আছে। বেশির ভাগই কাপল। এক সাথে ইফতারি করবে। সবার সামনে খাবার কেবল আমাদের সামনে কিছু নেই। আমি নীতু বলতে যাবো যে কিছু কিনে আনি, তাকিয়ে দেখি ও শপিং ব্যাগের ভেতর থেকে আস্তে আস্তে ইফতারি বের করতে লাগলো। আমার মনটা হঠাৎ খারাপ হয়ে গেল। মেয়েটা নিশ্চয়ই এখনও কিছু জানে না। ওর বাসার লোকজন সম্ভবত এখনও কিছু ওকে বলে নি।

ইফতারি শেষ আমরা আরও কিছুটা সময় বসে রইলাম মাঠের ভেতর। অন্ধকার নেমে এলে দেখলাম অনেকেই উঠে গেল। আমার উঠতে ইচ্ছে করছিলো না। আজ রাতেই হয়তো নীতুকে সব জানানো হবে কাল থেকে আর আমার সাথে যোগাযোগ হবে না। নীতু হঠাৎ বলল
-আপনি আর ওরকম স্টাটাস দেবেন না।
-কি রকম?
-ঐ যে কালকে যেটা দিলেন। "একা একা ইফতারি করা যায় না"। এবার থেকে এক সাথে ইফতারি করবো প্রতিদিন। আপনি অফিস শেষ করে এখানে চলে আসবেন সোজা!
আমি কিছু বলতে গিয়েও বলতে পারলাম না। নীতু বলেই চলল
-আমার ঐ স্টাটাস দেখে খুব খারাপ লেগেছে। রাতে ঘুম আসে নি।
আমি খানিকটা বিষণ্ণ চোখ নিয়ে নীতুর দিকে তাকালাম যদিও বেশ অন্ধকার হয়ে এসেছে। আমার চোখের বিষণ্ণতা নীতুর চোখে পড়ার কথা না। বললাম
-বাসা থেকে ফোন করে নি তোমাকে?

নীতু কিছু বলতে গিয়ে থেমে গেল। তারপর মৃদ্যু স্বরে বলল
-হ্যা করেছে।
আমি খানিকটা চমকালাম। নীতু জানে! তবুও? খানিকটা প্রশ্ন নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম কিছু সময়। নীতু খানিকটা সময় মাথা নীচু করে থেকে বলল
-ঔ ডাক্তার ছেলে আমার পছন্দ না।
-ও।
তারপর আরও মৃদ্যু স্বরে বলল
-আমার আপনাকে পছন্দ।

লাইনটা বলার পরপরই নীতু আমার দিকে তাকালো। অন্ধকারের ভেতরেও আমি ওর জ্বলজ্বল করতে থাকা চোখ দেখতে পেলান। বুকের ভেতর একটা অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছিলো যা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। নীতু বলল
-আমি জানি এবার বাসাতে গেলে বাবা ঠিক আমাকে ঐ ছেলের সাথে বিয়ে দিয়ে দিবে। কিন্তু.....
আমি ওর কথা শেষ করতে না দিয়ে বললাম
-তুমি বিয়ে করে ফেলবে ?
-কি করবো বলুন । মেয়েদের বাধা দেওয়ার শক্তি কম !

আমি খানিকট সময় চুপ করে রইলাম । কি বলবো খুজে পাচ্ছিলাম না । তারপর হঠাৎই বললাম
-আমার বাসার পাশের কাজী অফিসটা অনেক রাত পর্যন্ত খোলা থাকে।
নীতু বলল
-কি? কি বললেন ?
-একবার বিয়ে হয়ে গেলে আর জোর করে বিয়ে দিতে পারবে না নিশ্চয়ই?

নীতু আমার দিকে তাকিয়েই রইলো কিছুটা সময় । কিছু যেন ভাবছে অথবা কিছু বলতে চাইছে । আমার দিক থেকে একটি বারও চোখ সরায় নি ! তারপর নীতুকে হঠাৎ হেসে ফেলতে দেখলাম। হাসি মাখা মুখ নিয়েই নীতু বলল
-আপনি এখানে একটু বসেন। আমি শাড়ি পরে আসছি।

আমি তখনও ঠিক বিশ্বাস করতে পারছি না নীতু রাজি হয়ে গেছে। আমার কেবল মনে ছিল তাই বলে ফেললাম কথাটা। ভাবতেও পারি নি এভাবে কাজ হয়ে যাবে নতুন জীবনটা এভাবে চট করে শুরু হতে চলেছে!

সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই জুন, ২০১৭ রাত ১০:১২
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হেঁটে আসে বৈশাখ

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০০


বৈশাখ, বৈশাখের ঝড় ধূলিবালি
উঠন জুড়ে ঝলমল করছে;
মৌ মৌ ঘ্রান নাকের চারপাশ
তবু বৈশাখ কেনো জানি অহাহাকার-
কালমেঘ দেখে চমকে উঠি!
আজ বুঝি বৈশাখ আমাকে ছুঁয়ে যাবে-
অথচ বৈশাখের নিলাখেলা বুঝা বড় দায়
আজও বৈশাখ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছায়ানটের ‘বটমূল’ নামকরণ নিয়ে মৌলবাদীদের ব্যঙ্গোক্তি

লিখেছেন মিশু মিলন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



পহেলা বৈশাখ পালনের বিরোধীতাকারী কূপমণ্ডুক মৌলবাদীগোষ্ঠী তাদের ফেইসবুক পেইজগুলোতে এই ফটোকার্ডটি পোস্ট করে ব্যঙ্গোক্তি, হাসাহাসি করছে। কেন করছে? এতদিনে তারা উদঘাটন করতে পেরেছে রমনার যে বৃক্ষতলায় ছায়ানটের বর্ষবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বয়কটের সাথে ধর্মের সম্পর্কে নাই, আছে সম্পর্ক ব্যবসার।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৫০


ভারতীয় প্রোডাক্ট বয়কটটা আসলে মুখ্য না, তারা চায় সব প্রোডাক্ট বয়কট করে শুধু তাদের নতুন প্রোডাক্ট দিয়ে বাজার দখলে নিতে। তাই তারা দেশীয় প্রতিষ্ঠিত ড্রিংককেও বয়কট করছে। কোকাকোলা, সেভেন আপ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মানুষের জন্য নিয়ম নয়, নিয়মের জন্য মানুষ?

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৭



কুমিল্লা থেকে বাসযোগে (রূপান্তর পরিবহণ) ঢাকায় আসছিলাম। সাইনবোর্ড এলাকায় আসার পর ট্রাফিক পুলিশ গাড়ি আটকালেন। ঘটনা কী জানতে চাইলে বললেন, আপনাদের অন্য গাড়িতে তুলে দেওয়া হবে। আপনারা নামুন।

এটা তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন খাঁটি ব্যবসায়ী ও তার গ্রাহক ভিক্ষুকের গল্প!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৪


ভারতের রাজস্থানী ও মাড়ওয়ার সম্প্রদায়ের লোকজনকে মূলত মাড়ওয়ারি বলে আমরা জানি। এরা মূলত ভারতবর্ষের সবচাইতে সফল ব্যবসায়িক সম্প্রদায়- মাড়ওয়ারি ব্যবসায়ীরা ঐতিহাসিকভাবে অভ্যাসগতভাবে পরিযায়ী। বাংলাদেশ-ভারত নেপাল পাকিস্তান থেকে শুরু করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×