somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পঃ অসময়েই পাশে সে...

২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




-আচ্ছা একটা কথা জানতে চাই ?
ফারিয়া কাচের গ্লাসটা নামিয়ে রেখে বলল
-বলুন ।
-পরিবেশ পরিস্থিতি যা দেখতে পাচ্ছি তাতে আপনার পরিবার এবং আপনি নিজে এই ব্যাপারে পজেটিভ । রাইট ?

ফারিয়া আমার কথা শুনে মনে হল যেন একটু লজ্জা পেল । মুখে মৃদ্যু হাসি দেখতে পেলাম । কেন জানি মনে হল নিজেকে সামলে নিই । যা বলতে এবং যা করতে যাচ্ছি সেটা না কারি । চুপচাপ বাসায় চলে যাই । বাসায় গিয়ে বলি মেয়ে পছন্দ হয়েছে । ফারিয়াও নিশ্চয়ই বাসাতে গিয়ে এই কথাই বলবে । বিয়ে হতে খুব বেশি সময় লাগার কথা না । তারপর সবাই যেমন করে বেঁচে থাকে সেই ভাবে বেঁচে থাকি ! কি দরকার অন্য রকম ভাবে চিন্তা করার !
কিছু সময় কোন কথা হল না । ফারিয়া বলল
-কি যেন বলছিলেন ?
আমি আবারও বাস্তবে ফিরে এলাম । আর কিছু না ভেবে বললাম
-মনে করুন এখন আমার চাকরি চলে গেল । মানে যে চাকরিটা করছিলাম সেটা চলে গেল । তাহলে কি আমাদের বিয়েটা হবে ?

আমি ফারিয়াকে খানিকটা কনফিউজ দেখলাম । কি বলবে ঠিক খুজে পাচ্ছে না । কিংবা ওর কি বলা উচিৎ সেটাও ঠিক বুঝতে পারছে না ! আমি বললাম
-দেখুন আমার ভবিষ্যৎ একেবারে সুনিশ্চিৎ । বেশ ভাল একটা চাকরি করি আমি । এই অবস্থায় আমি যে যে পরিবারে বিয়ে করতে যাই না কেন মোটামুটি সব ক্ষেত্রেই তারা রাজি হয়ে যাবে । মানে যাওয়ার কথা । এখন মনে করুন আমার এই ভবিষ্যৎটা সুনিশ্চিৎ না তাহলে কয়টা মেয়ে আমাকে বিয়ে করতে যাবে ? যে মেয়ে আমার অনিশ্চিত জীবনে আমার হাত ধরতে রাজি না, তাকে আমি ঠিক পছন্দ করতে পারছি না ।

ফারিয়া ঠিক বুঝতে পারছে না আমি কি বলছি । ওর মাথাতে ঠিক ঢুকছে না । ওর মুখ দেখে মনে হচ্ছে এই কথা বার্তা ও ঠিক আশা করে নি । আমি এবার সব থেকে বড় বোমাটা ফাঁটালাম । বললাম
-আমি আপনার এখানে আশার আগে আমার চাকরিটা ছেড়ে দিয়ে এসেছি । বলতে পারেন এখন আমি একদম বেকার । সামনে আবার কবে আবার চাকরি পাবো এটা আমি নিজেও জানি না ।

এটা বলে আমি আমার রেজিগনেশনের একটা কপি ওকে দিলাম । তারপর বললাম
-এটা আপনি দেখুন । আর আপনার বাবা মাকেও দেখাবেন । তারপর যদি ওনারা এবং আপনি বিয়েতে রাজি থাকেন তাহলে সব কিছু যেমন চলছিলো তেমন থাকবে । যেভাবে কদিন থেকেই দুই পরিবার বিয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছিলো সব চলতে থাকবে । আর যদি রাজি না থাকেন তাহলে দয়া করে আমাদের বাসায় ফোন করে জানিয়ে দিবেন !


তারপর আমার লাঞ্চ আর খুব বেশি সময় চলল না । চলার কথাও না আমি জানি । ফারিয়া আর খুব বেশি কথা বলল না । খাওয়া শেষ করে ও বের হয়ে গেল । আমি মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেলাম যে বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে ।

আমার অনেক আগে থেকেই এই ব্যাপারটা দেখার খুব ইচ্ছে । আসলে আমি মনে প্রাণে যে কথাটা বিশ্বাস করি যে যে মানুষটা আপনার খারাপ সময়ে আপনার হাত ধরতে রাজি থাকে না সে সামনে গিয়ে আপনার হাত শক্ত করে ধরে রাখতে পারবে না । প্রায়ই প্রেমিকাদের শোনা যায় তাদের প্রেমিকদের বলতে ভাল কিছু করতে । না হলে বিয়ে করবে না । কেন রে বিয়ে করতে সমস্যা কই ? কেবল কি ভাল থাকার জন্য প্রেম করেছো ? সামনের মানুষের সাথে যদি দুঃখ শেয়ার করার মানষিকতাই না থাকে তাহলে ভালবাসার নামে ভন্ডামী কেন ? হ্যা এখন তার ভাল চাকরি নেই তো কি হয়েছে ? সামনে হবে । এই সময় টুকু তার পাশে থাকো । সামনে সুদিন আসবে । কিন্তু না । তোমার আগে সুনিশ্চিত ভবিষ্যত চাই । তারপর অন্য । তোমাদের এমন ভালবাসার নিকুচি করি !

যাই হোক ফারিয়াকে দেখার পর থেকে এমন কিছু আমার মাথাতে ঘুরছিলো । বেশ কয়েক মাস ধরেই আমাদের পরিবারের জানা শোনা । কোন পক্ষেই কোন সমস্যা নেই । সমস্যা থাকার কোন কথাও না । কিন্তু এখন সামনে একটা সমস্যা এসে দাড়িয়েছে । দেখা যাক কি হয় ।


রাতে বাসায় এসে বাবা তুলকালাম বাঁধিয়ে দিলেন । ফারিয়ারা বিয়েতে পিছিয়ে গেছে এবং আমার চাকরি ছাড়ার কথাও বাবা জেনে গেছে । আমার দিকে চোখ গরম করে সোজা বাসা থেকে বের হয়ে যেতে বললেন । এমন কিছু হতে পারে আমি আগে থেকেই ধারনা করতে পেরেছিলাম । তাই আগে থেকে সব পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম । বেশ কিছু টাকা আগে থেকে গুছিয়ে রেখেছিলাম । চার পাঁচ মাস নিশ্চিন্তে চলে যাবে । একটা ছোট বাসাও ভাড়া করে রেখেছিলাম । আমি আর কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয়ে এলাম । কটা দিন আমি নিজেও শান্তি মত থাকতে পারবো ।

তবে ফারিয়াকে বিয়ে না করতে পারার জন্য মনের ভেতরে একটা ছোট্ট আফসোস হচ্ছিলো। বারবার মনে হচ্ছিলো এমন বেশি বুঝে এসব না করতে গেলে কোন সমস্যা হত না । সবার ভাগ্যে যেমনটা হয় আমার ভাগ্যেও তেমনটা হবে । সমস্যা কি হত ।

সপ্তাহ খানেক কেটে গেল নিজের মত । মা বারবার ফোন করে বাসায় যেতে বলল । বাসার সব কিছু নাকি ঠান্ডা হয়ে গেছে । আমি এখন চাইলেই ফিরে যেতে পারি । বাবাও চুপচাপ হয়ে গেছে । আমি মাকে বললাম আমি ফিরে আসবো । কিছুদিন চাকরি বাকরি থেকে একটু দুরে থাকি । সব কিছু থেকে দুরে থাকি ।

পরের মাসে একটা আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটলো । ফারিয়ার ফোন এসে হাজির, যা আমি মোটেই আশা করি নি । এমন অবস্থায় ফারিয়ার ফোন আসার কথা না । ফোন করে বলল যে সে আমার সাথে দেখা করতে চায় । কেন চায় ঠিক বুঝতে পারলাম না । একটা সম্ভবনা আছে যে ফারিয়া বলবে যে আমি যদি আবার চাকরি ফিরে পাই তাহলে সে আমাকে বিয়ে করতে রাজি কিংবা এরকম কিছু ।

সেদিন যেখানে দেখা করেছিলাম আজও সেখানেই দেখা করলাম । ফারিয়ার দিকে তাকিয়েই মনে হল এই কদিনে মেয়েটার ভেতরে একটু পরিবর্তন হয়েছে । মেয়েটা যেন একটু শুকিয়ে গেছে ।

-কেমন আছেন ?
-ভাল না ।
-কেন ?
-জানি না ।
-শরীর খারাপ করেছে দেখছি ।
-আপনারই দোষ । এমন টা না করলে কি হত না । এতো ভাল চাকরি না ছাড়লে কি হত । শুনছি আপনি চাকরির চেষ্টাও করছেন না ।
-হ্যা । এক টানা দুবছর চাকরি করে হাপিয়ে গেছি । এখন একটু বিশ্রাম নেই । আর এতো জরূরীও তো না ! তা আপনি হঠাৎ ?
-বাবা কিছুতেই বিয়েতে হচ্ছিলো না । যখনই শুনলো আপনি ইচ্ছে করে চাকরি ছেড়ে দিয়েছে এবং সামনে আপাতত কোথাও জয়েন করার ইচ্ছে নেই তখন থেকেই বেঁকে বসেছে ।
-বুঝতে পারছি !

ফারিয়ে কিছু সময় চুপ থেকে আবার বলল
-আমারও মুভ অন করা উচিৎ । কিন্তু আপনাকে আমি কিছুতেই মাথা থেকে বের করতে পারছি না । কোন ভাবেই না ।
আমি কোন কথা না বলে চুপ করে তাকিয়ে রইলাম ফারিয়ার দিকে । হঠাৎ করেই আমার মনে হল কিছু একটা অস্বাভাবিক ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে । ফারিয়া বলল
-আজকে আমাকে আরেক ছেলে পক্ষ দেখতে আসার কথা ।
-ওহ !
-কিন্তু আমার পক্ষে অন্য কাউকে বিয়ে করা সম্ভব না । কোন ভাবেই না । আর আপনাকে ভুল প্রমানিত করতে চাই । সব মেয়ে কেবল নিশ্চিত ভবিষ্যতের পেছনে ছোটে না । কিছু কিছু মেয়ের কাছে টাকা পয়সার থেকেও নিজেদের পছন্দ অপছন্দ আর ভালবাসাটা বেশি জরুরী ! চলুন আমি আপনাকেই বিয়ে করবো !

আমি কেবল পানি মুখে দিয়েছি । আরেকটু হলেই আমার গলাতে পানি আটকে যেত । কোন মতে সেটা গিলে ফেলে বললাম
-আপনি সিওর ?
-হান্ড্রেট পার্সেন্ট !
-আমার কিন্তু অতি সম্প্রতি চাকরি হওয়ার কোন সম্ভবনাও নেই । আর বাবা কিন্তু বাসা থেকে বের করে দিয়েছে ।
-আপনাকে বিয়ে করলে আমার বাসার দরজাও আমার জন্য বন্ধ হয়ে যাবে । টাতে অবশ্য খুব একটা সমস্যা নেই । আমার কিছু জমানো টাকা আছে আর ......
ফারিয়া নিজের ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করলো । আমাকে দেখিয়ে বলল
-এটা আমার এপোয়েন্টমেন্ট লেটার ! সামনের মাসে আমার জয়েনিং ! আপনার যতদিন কিছু না হয় আমাদের সংসার আমি চালাবো !
-যদি কোন দিন ভাল কিছু না হয় ?
-যাই হোক যেমনই হোক দুজন মিলে সেটা সামলাবো !

আমার কেন জানি কথাটা খুব ভাল লাগলো । যে মেয়ে মনভাব এমন সেই মেয়েকে চোখ বন্ধ করে জীবন সঙ্গী করাই যায় ! যে তোমার অনিশ্চিত জীবনে তোমার পাশে থাকতে রাজি হয় তারই অধিকার আছে তোমার জীবন সঙ্গী হওয়ার । ভাল সময়ে পাশে থাকার মানুষের অভাব হয় না !


ফারিয়ার হাত ধরলাম । এ হাত আর কোন দিন ছেড়ে দিবো না !


(সমাপ্ত)



বিঃদ্রঃ বাস্তবে এমন কাজ করতে যাবেন না । বাস্তবে এমন কন্যার টিকিও খুজে পাবেন না ।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৭ রাত ৮:৫৮
৮টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আপনি কি বেদ, উপনিষদ, পুরাণ, ঋগ্বেদ এর তত্ত্ব বিশ্বাস করেন?

লিখেছেন শেরজা তপন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫২


ব্লগে কেন বারবার কোরআন ও ইসলামকে টেনে আনা হয়? আর এই ধর্ম বিশ্বাসকে নিয়েই তর্ক বিতর্কে জড়িয়ে পড়ে সবাই? অন্য ধর্ম কেন ব্লগে তেমন আলোচনা হয় না? আমাদের ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

দুলে উঠে

লিখেছেন সাইফুলসাইফসাই, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৫৬

দুলে উঠে
সাইফুল ইসলাম সাঈফ

মন খুশিতে দুলে দুলে ‍উঠে
যখনই শুনতে পাই ঈদ শীঘ্রই
আসছে সুখকর করতে দিন, মুহূর্ত
তা প্রায় সবাকে করে আনন্দিত!
নতুন রঙিন পোশাক আনে কিনে
তখন ঐশী বাণী সবাই শুনে।
যদি কারো মনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তরে নিয়ে এ ভাবনা

লিখেছেন মৌন পাঠক, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩০

তরে নিয়ে এ ভাবনা,
এর শুরু ঠিক আজ না

সেই কৈশোরে পা দেয়ার দিন
যখন পুরো দুনিয়া রঙীন
দিকে দিকে ফোটে ফুল বসন্ত বিহীন
চেনা সব মানুষগুলো, হয়ে ওঠে অচিন
জীবনের আবর্তে, জীবন নবীন

তোকে দেখেছিলাম,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আপনি কি পথখাবার খান? তাহলে এই লেখাটি আপনার জন্য

লিখেছেন মিশু মিলন, ২২ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১০:৩৪

আগে যখন মাঝে মাঝে বিকেল-সন্ধ্যায় বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম, তখন খাবার নিয়ে আমার জন্য ওরা বেশ বিড়ম্বনায় পড়ত। আমি পথখাবার খাই না। ফলে সোরওয়ার্দী উদ্যানে আড্ডা দিতে দিতে ক্ষিধে পেলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

×