somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ এমন যদি হত ....

০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




নাফিয়া গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে রাফির দিকে। এতো দিনের পরিচিত মুখটা কেমন যেন ওর কাছে অপরিচিত মনে হচ্ছে। এতোদিন যে চেহারাটা সব থেকে কাছের ছিল যার চেহারার দিকে তাকালেই নিজের সব চিন্তা দুর হয়ে যেত সেই চেহারাটাই আজকে একদম অন্য রকম লাগছে । ভরশার জায়গাটা এভাবে নড়ে উঠবে নাফিয়া কোনদিন ভাবে নি । রাফি এতো সময় ওর দিকে তাকিয়ে থাকলেও এখন আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। নাফিয়ার চোখে চোখ ফেলতে চাইছে না।

নাফিয়া আবার বলল
-আর কি কোন উপায় নেই?
রাফি আবারও ওর চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নিল। তারপর অন্য দিকে তাকিয়ে বলল
-বাবা পরিস্কার বলে দিয়েছে কোন বেকার মেয়ের সাথে আমার বিয়ে দিবে না। আমি কি করব বল। তুমি নিশ্চয়ই চাও না আমি আমার পরিবারের বিপরীতে যাই ?
নাফিয়া ক্ষীণ কন্ঠে বলল
-তুমি তোমার বাবাকে একটু বোঝাও। সবে মাত্র পরীক্ষা দিয়েছি। এখনও তো রেজাল্টও বের হয় নি।
রাফি এবার উঠে দাড়াতে দাড়াতে বলল
-দেখ আমি অনেক দিন বাবাকে আটকে রেখেছি। আর পারছি না। বাবা এবার আমার বিয়ে দিয়েই দিবে। মেয়েও তার পছন্দ হয়ে গেছে। ব্যাংকে জব করে। বাবার বন্ধুর মেয়ে। আমার পক্ষে আর আটকানো সম্ভব হচ্ছে না। আর পড়া শুনা শেষ চাকরি করা ছেলে যখন বিয়ে করে না তখন মানুষ জন নানান কথা বলা শুরু করে । জানোই তো । আমার পরিবার এটা মানতে চাইছে না !
-তোমার চাকরি তো রয়েছে । তাই না ? কটা দিন আমাদের সংসার চমৎকার চলে যাবে । ততদিনে আমিও কিছু একটা করে ফেলবো !
-সেটা তো সমস্যা না । কিন্তু বাবা চান না তার বেকার পুত্রবধু হোক । তার তো সমাজে একটা মান সম্মান আছে নাকি ? এটা তিনি মেনে নিবেন না !

রাফি আর দাড়ালো না। নাফিয়া কেমন অসহায় হয়ে রাফির চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। ওর কিছুই করার নেই। এতোদিনের ভালবাসার মানুষটা চোখের সামনে দিয়ে অন্য কারো হয়ে যাবে অথচ ওর কিছুই করার নেই। বাসায় যে বলবে সেটারও উপায় নেই। বরং নাফিয়ার আব্বা বিরক্তই হবেন।

রাফি চলে যাওয়ার পরে বেশ কিছুটা সময় নাফিয়া এদিক ওদিক ঘুরলো কোন উদ্দেশ্য ছাড়া। সব কিছু কেমন অর্থহীন মনে হচ্ছে ওর কাছে। এতো দিন একসাথে ছিল ওরা । সুখে দুঃখে এক সাথে থাকার কথা দিয়েছিলো অথচ আজকে কিভাবে ওকে ছেড়ে চলে যাচ্ছে । ও চাইলেই কি নিজের ফ্যামিলিকে বোঝাতে পারতো না ? এটা একদমই অসম্ভবই ছিল ! ও কথা রাখলো না ! নাফিয়ার নিজের কাছে ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছে । বারবার মনে হচ্ছে এই জীবনের কোন মূল্য নেই । কোন মানে নেই এই বেঁচে থাকার ।

তখনই ও রাস্তা দিয়ে তীব্র বেগে ছুটে আসা ট্রাকটার দিকে চোখ গেল। আর কিছু মাথায় আসলো না ওর। রাফিকে ছাড়া ওর পক্ষে বাঁচা সম্ভব না। ওর বেঁচে থাকতে রাফি অন্য কোন মেয়ের কোলে মাথা রেখে ঘুমাবে এটা ও মেনেই নিতে পারবে না। নাফিয়া আর কিছু ভাবলো না। ছুটে আসা ট্রাকটা লক্ষ্য করেই ঝাপ দিল। প্রবল শব্দে ব্রেক করার শব্দ কানে এল। সেই সাথে টায়ার পোড়া গন্ধ। কিন্তু নাফিয়া জানে কোন লাভ হবে না। ট্রাকটা কিছুতেই নিয়ন্ত্রন করতে পারবে না। তীব্র একটা আলোর ঝলকানী দেখতে পেল। সেই সাথে তীব্র হর্ণ বাজানোর শব্দ।

নাফিয়ার ঘুম ভেঙ্গে গেল। বিছানা ছেড়ে উঠে দেখলো পুরো শরীর ওর ঘামে ভিজে গেছে। পাশের টেবিলে রাখা পানি এক ঢোকে খেয়ে ফেলল। তবুও ওর স্থির হতে বেশ সময় লাগলো। এমন একটা অদ্ভুদ স্বপ্ন কেন দেখলো ওর বুঝতে কষ্ট হল না। গত সপ্তাহেই ঠিক এমন কিছুই ও বলেছিল রাফিকে। বেচারা ওর দিকে কি অসহায় চোখে তাকিয়ে ছিল সেটা নাফিয়ার এখনও চোখে লেগে আছে। নিজেকে বড় স্বার্থপর আর নিচ মনে হল হল। যদি এমন কথাই বলবে তাহলে রাফির সাথে কেন সম্পর্কে জড়ালো ও! আর রাফির উপর দিয়ে এখন কি চলছে সেটা বুঝতে পারছে।

ফোন হাতে নিয়ে দেখলো প্রায় ভোর হয়ে গেছে। রাফি নিশ্চয় এখনও ঘুমাচ্ছে। ঘুমাক তবুও ফোন করলো ওকে। কয়েকবার রিং বাজার পরে ফোন ধরবে হয়তো। কিন্তু নাফিয়াকে অবাক করে দিয়ে প্রথমবার রিং বাজার পরেই ফোন রিসিভ করলো রাফি। গেল সপ্তাহের পর এই প্রথম নাফিয়া ওকে ফোন দিচ্ছে।

-হ্যালো !
-ঘুমাও নি?
-ঘুম আসে না এখন আর।
-আমার উপর রাগ অনেক, তাই না?
-নাহ। রাগ কেন থাকবে! ভালবাসি না তোমাকে, রাগ করতে পারি নাকি !

নাফিয়ার আবারও নিজেকে খুব বেশি ছোট মনে হল নিজেকে। বারবার মনে হল ও চাইলেই সব কিছু সম্ভব হয় । এখনও হবে । মনে মনে ঠিক করে নিল এবার ওর নিজের কিছু করার সময় হয়েছে । বাবা হয়তো রাগ করবে, করুক ! কিচ্ছু যায় আসে না ! রাফিকে বলল
-শোন তোমার কাছে কত টাকা আছে ?
ওপাশ থেকে কিছু শোনা গেল না কিছুটা সময় । তারপর আওয়াজ এল
-কেন ? টাকা দিয়ে কি হবে ?
-আহা ! এতো কথা বল না তো । কত টাকা জোগার করতে পারবে ?
-হাজার দশেক আমার কাছেই আছে । আরও দশ পনের ব্যবস্থা করা যাবে !
-আচ্ছা কর !
-মানে কি তুমি কি বলছো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না ।
-কিছু বুঝতে হবে না । যা বলছি শোন মন দিয়ে । সব টাকা নিয়ে আর একটা ব্যগে কিছু কাপড় নিয়ে সকাল ১০টার সময় মগবাজার কাজী অফিসের সামনে আসবা । দেরী যেন না হয় ।
-নাফিয়া বাবু ! তুমি ঠিক আছো তো ! গত দিন বললে আর আজকে কি বলছো ?
-গতদিনের কথা ভুলে যাও । এখন যা বলছি শোন । আজকে না হলে আর কোন দিন হবে না । ঠিক আছে ?


নাফিয়া ফোন রেখে বেশ কিছুটা সময় চুপ করে বসে রইলো । কি করলো সেটা ও নিজেই জানে না । বুকের ভেতরে একটা তীব্র উত্তেজনা কাজ করছে তবে সেই সাথে একটা অসম্ভব ভাল লাগা কাজ করছে । গত সপ্তাহের পর একটা দিনও ও শান্তিতে থাকতে পারে নি । যতবার নিজেকে আয়নার দিকে তাকিয়েছে অথবা একা একা নিজে কিছু ভাবতে গেছে ততবার সেখানে নিজেকে নিচ মনে হয়েছে, প্রতারক মনে হয়েছে কিন্তু এখন সেটা মনে হচ্ছে না । এই কদিন সে একটা বারও শান্তি মত ঘুমাতে পারে নি । কিন্তু এখন মনে হচ্ছে একটু শান্তিতে ঘুমানো যাবে । যদিও সকাল হতে খুব বেশি বাকি নেই । সকালে আবার নতুন কিছু অপেক্ষা করছে । নতুন কিছু !


(সমাপ্ত)




এমন যদি হত ! মেয়ে তুমি একবার কেবল অনুভব করতে নিজের ভালবাসার মানুষটি কিভাবে তোমার থেকে দুরে চলে যাচ্ছে চিরোদিনের মত কেবল মাত্র তোমার একটা ভাল চাকরি নেই বলে ! সেই অনুভূতি তুমিও অনুভব করতে যদি তাহলেই বুঝতে !!!
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৫৪
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ

লিখেছেন রাজীব নুর, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪০



'অন্যায় অত্যাচার ও অনিয়মের দেশ, শেখ হাসিনার বাংলাদেশ'।
হাহাকার ভরা কথাটা আমার নয়, একজন পথচারীর। পথচারীর দুই হাত ভরতি বাজার। কিন্ত সে ফুটপাত দিয়ে হাটতে পারছে না। মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্য অরিজিনস অফ পলিটিক্যাল জোকস

লিখেছেন শেরজা তপন, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১১:১৯


রাজনৈতিক আলোচনা - এমন কিছু যা অনেকেই আন্তরিকভাবে ঘৃণা করেন বা এবং কিছু মানুষ এই ব্যাপারে একেবারেই উদাসীন। ধর্ম, যৌন, পড়াশুনা, যুদ্ধ, রোগ বালাই, বাজার দর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×