somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দি পাঞ্চ ক্লিপ থিউরী

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

খাবার টেবিলে রিয়ার দিকে খুব গম্ভীর ভাবে কিছু তাকিয়ে রইলাম । রিয়া আমার দিকে না তাকিয়ে খাবারের দিকে তাকিয়ে আছে । আমি যে ওর দিকে তাকিয়ে আছি এটা দেখেও না দেখার ভান করে আছে ! আমাকে পুরোপুরি উপেক্ষা করছে সে । আমি আর চুপ করে না থেকে বললাম

-তুমি নাজিফাকে ফোন কেন দিয়েছিলেন কেন ?
রিয়া শান্ত ভাবে খাবার মুখে নিল । তারপর পানি মুখে নিয়ে সেটা গিলে ফেলল । এমন একটা ভাব যেন আমার প্রশ্নের উত্তর দেওয়াটা খুব বেশি প্রয়োজনীয় না । আমি আবার বললাম
-কেন ফোন দিয়েছিলে ?
এবার রিয়া আমার কথা যেন ঠিক মত শুনতে পেল । খাওয়া বন্ধ করে বলল
-কেন দিয়েছিলাম জানো না ? আমার ঘরে অন্য মেয়ে মানুষের পাঞ্চ ক্লিপ থাকবে আমি সেটার খোজ নিব না !
আমি খানিকটা বিরক্ত হয়ে বললাম
-দোয়াই তোমার এই বেহুদা টপিকটা বাদ দাও । আমি জানি না এই পাঞ্চ ক্লিক টা কার !
-তুমি মিথ্যা বলছো । সত্য না বের করে আমি থামবো না । তোমাকে আমি চিনি না । বিয়ের আগে তোমার কত গুলো প্রেম ছিল সেটা আমি জানি না মনে করেছো । আমি বাসায় নেই আর ওমনি মেয়ে নিয়ে এসে হাজির করেছো !

আমি কিছু বলতে গিয়েও বললাম না । খাওয়া শুরু করি নি । আর খেতে ইচ্ছে করলো না । আমি টেবিল ছেড়ে উঠে দাড়ালাম । সোজা গিয়ে শোবার ঘরে বসলাম । টেবিলের উপর ল্যাপ্টপ টা রাখা । ইচ্ছে হল সেটা আছাড় মেরে ভেঙ্গে ফেলি । যতসব ঝামেলা এই ল্যাপ্টপের জন্য ।

ঘটনা তেমন কিছুই না । তিনদিন আগেই রিয়া বাবার বাড়ি থেকে ফিরেছে । ফিরে এসেই আমাদের বাসার কোন একটা স্থান থেক একটা পাঞ্চক্লিপ খুজে পেয়েছে । আমার কাছে জানতে চেয়েছিলো এটা কার আমি বলতে পারি নি । সেও তেমন কিছু আ র বলে নি । কিন্তু রাতে বাধলো অন্য ঝামেলা । আমরা দুজন বসে ল্যাপ্টপে একটা নাটক দেখছিলাম ইউটিউবে । ঈদে আর বিজ্ঞাপনের জন্য নাটক দেখার উপায় নেই তাই পরে এক সাথে ইউটিবে দেখি মাঝে মাঝে । বেশির ভাগ সময় রিয়াই দেখে আজকে কি মনে হল আমিও দেখতে বসলাম ।

আর কপাল খারাপ হলে যা হয় । রিয়া একটা নাটক পছন্দ করলো যার নাম পাঞ্চক্লিক । মিথিলার নাটক ! মিথিলা বাসার বাইরে যায় অফিসে কাজে । এর ফাঁকে তার স্বামীর প্রাক্তন প্রেমিকা বাসায় আসে আর একটা পাঞ্চক্লিক ফেলে যায় । সেটা থেকে সন্দেহ ঝগড়া শেষে ডিভোর্স !

আমি নাটক দেখে থ হয়ে রইলাম । রিয়া আমার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে থেকে প্রথমেই প্রশ্ন করলো
-কে এসেছিল সত্যি করে বল ? এই পাঞ্চ ক্লিপ কার ?
আমি তার থেকেও বেশি অবাক হয়ে বললাম
-তোমার কি মাথা খারাপ হয়েছে নাকি ! আজিব ! নাটক দেখে কি সব আজে বাজে কথা বলছো !
-না না ! নাটক দেখেই আমার আসল কথাটা মনে হয়েছে । আসলেই তো এমন কিছু হতে পারে । তাই না ? তা না হলে এই ক্লিপ কোথা থেকে আসবে ?

এর পর থেকেই সে ঘ্যানর ঘ্যানর শুরু করে দিয়েছে । আমি আছি অশান্তিতে । আমার যত প্রাক্তন প্রেমিকাদের নাম্বার কিংবা ফেসবুক আইডি ছিল সব সে খোজ বের সবাইকে জিজ্ঞেস করা শুরু করলো আমার সাথে যোগাযোগ আছে কি না কিংবা আমি এরই মাঝে তাদের সাথে যোগাযোগ করেছি কি না । একটা পর্যায়ে রিয়া এমন হয়ে উঠলো যে সে ধরেই নিল যে আমি সত্যি তার অগোচরে কিছু করছি । আমার সাথে আর থাকবে না সে ! অশান্তির মাঝেই একটা সপ্তাহ কেটে গেল !

আমি অনেক সহ্য করছিলাম । আর পারলাম না । শেষে ঠিক করলাম যে সত্যিটা ওকে বলেই দিব । সেদিন রাতেই ওকে নিয়ে বসলাম । তারপর বললাম
-তুমি যা করছো প্লিজ থামাবা ?
-তুমি সত্যি কথা স্বীকার কর আগে ! এই ক্লিক এখানে কিভাবে এল !

আমি কিছুটা সময় ওর দিকে তাকিয়ে থেকে বললাম
-আমার তোমার উপর খুব আশা ছিল । অন্তত ভেবেছিলাম তুমি কোন দিন আমার বিশ্বাস হারাবে না । যাক সেটা আমি হেরে গেছি । আজকে আমার ভালবাসা পরাজিত !

রিয়া আমার কথা শুনে খানিকটা দ্বিধায় পরে গেল । আমি আসলে কি বলতে চাচ্ছি সেটা ঠিক বুঝতে পারলো না ! আমি বললাম
-আমি খুব গর্ব করে আমার বন্ধুদের কাছে বলতাম যে আমার বউ শত হলেও আমার উপর কোন দিন বিশ্বাস হারাবে না । অন্য বউদের মত আমাকে কোন দিন অবিশ্বাস করবে না সন্দেহ করবে না । কিন্তু যাক এতো কথা বলে লাভ নেই । তুমি আমার সাথে থাকতে চাও না ভাল কথা । কিন্তু তার আগে এই ভিডিওটা দেখো । আমার আর কোন কিছু বলার থাকবে না !

আমি মোবাইল থেকে একটা ভিডিও বের করে দিলাম ! ভিডিওটা চালু হতে রিয়া সেদিকে তাকিয়ে রইলো এক ভাবে । ভিডিওটাতে আমি আমার বন্ধু রাজু আর তার বউ ছিল । ভাবি একটা পাঞ্চক্লিপ ভিডিওর দিকে তুলে ধরেছে, ভিডিওর উদ্দেশ্য বলছে, "ভাবি, সামি ভাই আমাদের সাথে চ্যালেঞ্জ করেছে যে আপনি নাকি ওকে কোন দিন সন্দেহ করবেন না । আমরা বলেছি আপনি ঠিকই সন্দেহ করবেন । তাই এই পাঞ্চক্লিপ টা সামি ভাইকে দিলাম । সামি ভাই এটা আপনাদের বাসায় রাখবে । আপনি যখন ফিরে আসবেন তখন এটা দেখতে পাবেন । আমরা দেখতে চাই আপনার প্রতিক্রিয়া কি হয় !"

ভিডিওটা অফ হয়ে গেল আমি রিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ও মুখটা কেমন মলিন হয়ে গেছে । সেখানে পানি টপমল করছে । মুখে একটা অপরাধীর ভাব ফুটে ওঠেছে । আমি বললাম
-পেয়েছো তোমার জবাব ? খুশি ? এখন আমাকে ছেড়ে চলে চাইলে চলে যেতে পারো । আমার আর কিছু বলার নেই ।

এই বলে আমি উঠে পড়তে যাবো ঠিক তখনই রিয়া আমার বুকের উপর ঝাপিয়ে পড়লো । তারপর হুহু করে কেঁদে উঠলো । বারবার সরি বলতে লাগলো । আমাকে সে বিশ্বাস করে নি এই জন্য নিজেকে বারবার দোষ দিতে লাগলো ।

একটা পর্যায়ে আমি বললাম
-ঠিক আছে । চুপ কর । আমারও এটা করা ঠিক হয় নি । দয়া করে আমাকে আর সন্দেহ করো না প্লিজ !
রিয়া ফোঁফাতে ফোঁফাতে বলল
-আর কোন দিন আমি তোমাকে সন্দেহ করবো না । কোন দিন না !
-আর নাটক ফাটক দেখে স্বামীকে আর জ্বালাবা না । ঠিক আছে !
-আর নাটকই দেখবো না । যে নাটক দেখে স্বামীর উপর সন্দেহ জন্মে সেই নাটক আমি দেখবোই না !

ওর কপালে একটা ছোট করে চুমু খেলাম । মনে মনে শান্তি লাগছে এই ভেবে যে কদিন থেকে যে অশান্তি চলছিলো সেটা শেষ হল । আজ কে রাতে একটু শান্তি মত ঘুমানো যাবে রিয়াকে জড়িয়ে ধরে !













পরিশিষ্টঃ

রাত দুইটা । রিয়া আমাকে জড়িয়ে ধরেই ঘুমিয়ে আছে । আমি ওর মাথায় আস্তে আস্তে হাত বুলাচ্ছি । এমন সময় আমার মোবাইলটা মৃদু স্বরে কেঁপে উঠলো । আমার ঠোঁটে সুক্ষ্য একটা হাসি ফুটে উঠলো । মোবাইলের স্ক্রিনটার দিকে দেখি নিশাতের মেসেজ । সেখানে একটা কথাই লেখা "সমাধান হয়েছে ?"
আমি একটা হাসির ইমো দিয়ে লিখলাম । "সমাধান হয়েছে । এর পর থেকে সাবধান । কিছু যেন ফেলে যেও না আর"

পাঠিয়ে দিলাম মেসেজ টা । সাথে সাথেই এত্তো গুলো চুমুর ইমো এসে হাজির হল !

নিশাতের সাথে গোপনে আমার সম্পর্কটা চলছিলো অনেক দিনই । এতো দিন আমরা খুব সাবধানেই ছিলাম । ও ওর স্বামীর কাছ থেকে লুকাচ্ছিলো আর আমি রিয়ার কাছ থেকে । কিন্তু গতবার যখন আমার বাসায় এসে হাজির হল তখনই ভুল করে ও চুলের পাঞ্চক্লিপটা ফেলে গেল । আর সেটা সোজা পরলো রিয়ার হাতে ।
যে রিয়া এতো দিন আমাকে সন্দেহ করে নি তার মনে যে কিছু একটা ঢুকে গেছে সেটা বুঝতে কষ্ট হল না । কিাভবে সেটা একেবারে বের করা যায় সেটা ভাবতে ভাবতেই এই বুদ্ধিটা বের করলাম ।

রাজু ভাই আর ভাবীর কাছে গিয়ে কথার কৌশলে তাদের বুঝালাম যে আমার বউ রিয়া তাদের মত না । এবং একটা পরীক্ষার কথা বললাম । নিজের বুদ্ধিটা দিলাম । ভাবী সরল মনেই কাজটা করলো । ক্লিপটা কালো ছিলো বিধায় রং বাছতে খুব একটা কষ্ট হয় নি ! আরও একটু সেফটির জন্য মোবাইলের ভিডিওটা একটু এডিট করে রেকর্ডের তারিখটা একটু পিছিয়ে দিলাম যদিও নিশ্চিত ছিলাম রিয়া এটা চেক করবে না ।

তবে রাজু ভাই আর ভাবির কাছে জিজ্ঞেস করতে পারতো তাই একটু সময় নিতে থাকলাম যাতে করে রাজু ভাইয়েরও ঠিক মনে না থাকে যে কবে আমরা ভিডিওটা করেছিলাম !

আমি মোবাইল অফ করে চোখ বন্ধ করলাম । যাক আপাতত একটা টেনশন গেল । সামনের অনেক গুলো দিন রিয়া আমার উপরে কোন সন্দেহ করবে না !
সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১২:০২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×