somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ গল্প করার রাত !

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হঠাৎ করেই মিতু আবিস্কার করলো বিয়ের পর ওর জীবনটা আগের থেকে আরও সহজ হয়ে গেছে । এখন চাইলেই অনেক কিছু করা যাচ্ছে যা আগে ভাবাও যেত না । আগে যেখানে প্রতিটা কাজে ওকে কথা শুনতে হত এখানে সেখানে কিছুই শুনতে হচ্ছে না । কালকের কথাই ধরা যাক । মিতুদের পরিবারে মেয়েদের সন্ধ্যার পরে একা একা বাইরে থাকা মানে হচ্ছে মারাত্বক অন্যায় করে ফেলা । সেখানে গতকাল বাসায় আসতে আসতে আসতে রাত আট টা বেজে গেল । ওর বাবা ওকে বকতে যাবে তখনই ওর মুখ দিয়ে বের হয়ে এল যে মাহমুদকে বলে গিয়েছিলো ।

মাহমুদের কথা শুনে মিতুর আব্বা চুপ করে গেলেন । যদিও খানিকটা মিথ্যা কথা । মিতু ঐ লোকটাকে ফোন দেয়ই না বললে চলে । মাহমুদই মাঝে মাঝে ওকে ফোন দেয় । কেমন আছো কি করছো টাইপের কয়েকটা প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে তারপর রেখে দেয় । এর বেশি কিছু না ।

মিতুর বিয়েটা মিতুর পছন্দ মত হয় নি । অবশ্য মিতু আগে থেকেই জানতো ওর কপালে হয়তো এমনই হবে । ওর বড় দুই বোনের মত মিতুর গায়ের রং ওতোটা ফর্সা নয় । এই জন্য মিতুর বাবা মায়ের চিন্তার শেষ ছিল না । এই মেয়েকে তারা কিভাবে বিয়ে দিবে ? কে করবে বিয়ে !

কয়েক জায়গা থেকে বিয়ে এসেছে মিতুর । তবে তারা সবাই মিতুকে বিয়ের করার জন্য মোটা টাকা যৌতুক চেয়েছে । দিতে গিয়ে শেষ পর্যন্ত বিয়ে আর হয় নি । মিতু জানতো এমনই হবে ওর সাথে । ওর বড় দুই বোনের স্বামীদের কাছে ওর জামাই কিছুই না । সামান্য বেতনের একটা চাকরি করে । যেখানে ওর দুই দুলাভাইয়ের একজন সরকারি ব্যাংকে অন্য জন্য বেসরকারি ব্যাংকে চাকরি করে । কি সুখেই না আছে । আর এদিকে এখনও বাপের বাসাতেই পরে আছে । ওর বিয়ে হলেও মাহমুদ কিছুটা দিন সময় নিয়েছে বউ তুলে নেওয়ার ব্যাপারে । বলেছে একটু গুছিয়ে নিয়েই ওকে তুলে নিবে । আর এই ফাকে ওর পড়াশুনাটাও শেষ হবে ।

সব দিক দিয়ে মিতুর বাবা রাজি হয়ে গিয়েছিলো । তিনি জানতেন তার এই মেয়ের গায়ের রংয়ের জন্য স হজে ভাল জায়গাতে বিয়ে হবে । আর মাহমুদ ছেলে হিসাবে ভাল । হ্যা এখানে যে চাকরি করে সেটা আহমরি কিছু না তবে সামনে গিয়ে আরও ভাল কিছু করে ফেলবে ! তারপর থেকেই এভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিলো ওর জীবন । আগের মত আর শাসনে রাখতো ওকে ! মিতুর বাবা খুবই কড়া স্বভাবের মানুষ । বাবাকে ওরা তিনবোনই খুব ভয় পেত ।

সকাল বেলা বের হয়েই মিতু মাহমুদকে ফোন দিল । মিতু জানে লোকটা খানিকটা অবাকই হবে । গত দিন মাহমুদের নাম নিয়ে ও বাবার বকা খাওয়া থেকে বেঁচে গেছে । আজকে তাই অন্য কিছু করতে ইচ্ছে করছে । আগের দিন তো না জানিয়েই মাহমুদের নাম নিয়েছিল । ভাগ্য ভাল যে বাবা আর খোজ নেয় নি । নিলে ধরা পরে যেত হয়তো । আজকে তাই আগে থেকেই জানিয়ে রাখার কথা ভাবলো !

-হ্যালো ।
-ভাল আছেন ?

মিতু এখনও তুমি করে বলে উঠতে পারে নি । আপনি করেই বলে ।
-হ্যা ভাল । তোমার কি খবর ?
-ভাল ।
ভাল বলে মিতু আর কথা খুজে পেল না । কি বলবে ঠিক বুঝে উঠতে পারলো না । ফোনের ওপাশ থেকে আওয়াজ হল
-কি ব্যাপার কথা বলছো না কেন ? সব কিছু ঠিক আছে ?
-হ্যা হ্যা । ঠিক আছে !
-কিছু বলার ছিল ?
-হ্যা !
-বল । আজকে বাবা আপনাকে ফোন করতে পারে । বাবাকে বলবেন যে আমি আপনাকে বলে গেছি ।
-কি বলেছি ?
-সেটা আপনাকে শুনতে হবে না । কেবল বলবেন যে আপনি জানেন যে আমি সেখানে গেছি !
-কোথায় যাচ্ছো ?
মিতুর হঠাৎ রাগ উঠলো । লোকটা দেখি ওর বাবার মতই প্রশ্ন করা শুরু করেছে ।
-আপনি আমাকে জেরা করছেন ?
-না জেরা করছি না । আব্বা যদি জানতে চান তাহলে যেন ডিটেইল সব বলতে পারি ।

মাহমুদের মুখে আব্বা কথাটা শুনে মিতুর হাসি চলে এল । হাসি থামিয়ে বলল
-আচ্ছা । আমি আমার এক বন্ধুর জন্মদিনের অনুষ্ঠানে যাচ্ছি । ফিরতে ফিরতে নয়টা বাজতে পারে !
ওপাশ থেকে খানিকক্ষণ নিরবতা বিরাজ করলো । তারপর মাহমুদ বলল
-কোন রেস্টুরেন্ট বলা যাবে ?
-কেন ?
-না মানে নয়টা তো অনেক রাত হয়ে যাবে । তুমি যদি একা একা বাসায় যাও তোমার বাবা রাগ করতে পারে । আমি তোমাকে নিয়ে গেলাম বাসায় । তাহলে আর কোন ঝামেলাই হবে না ।

কথাটা মিতুর মনে ধরলো । লোকটার আসলেই মাথায় বুদ্ধি আছে । বলল
-আচ্ছা ঠিক আছে । আপনি ঠিক নয়টা সাড়ে নটার সময় মধ্যে সাতাশ নম্বরের চলে আসবেন । ঠিক আছে ।
-আচ্ছা । আমি পৌছে যাবো । চিন্তা কর না !


কিন্তু যেমন টা মিতু ভেবেছিলো তেমনটা হল না । রিমির জন্মদিনের প্রোগ্রাম শুরু হতে হতেই নয়টা বেজে গেল । সাড়ে নটার দিকে মাহমুদ বারবার ওকে ফোন দিতে লাগলো । মিতু বারবার সেটা কেটে দিতে লাগলো । একটা পর্যায়ে মিতু খানিকটা বিরক্ত হয়েই ফোন ধরে বলল
-কি ব্যাপার বারবার ফোন দিচ্ছেন কেন ?
ওপাশ থেকে কিছু সময় কোন কথা শোনা গেল না । মিতু বলল
-দেখুন আমার আরও দেরি হবে । আপনি চলে যেতে পারেন । কেবল আব্বু ফোন করলে বলবেন আমি আপনার সাথে আছি । ব্যাস !

মিতুর আর কিছু না বলে ফোন রেখে দিলো । তারপর ফোনটা বন্ধ করে দিল ।


অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে রাত দশটা পার হয়ে গেল । যখন রেস্টুরেন্ট থেকে বের হল তখন মিতুর খানিকটা চিন্তাই হচ্ছিলো যে এখন একা একা কিভাবে বাসায় যাবে । যদিও ওদের বাসাটা এখান থেকে খুব বেশি দুরে না । তবুও এতো রাতে একা একা ও কোন দিন বাইরে থাকে নি । রাস্তায় দাড়িয়ে কি করবে ভাবছে তখনই রাস্তার ওপাশে ফুটপাতে বসে থাকা একটা মানুষের দিকে চোখ গেল ওর ! আরেকটু ভাল করে তাকাতেই মিতু অবাক হয়ে দেখলো সেটা আর কেউ না মাহমুদ ! ফুটপাতের উপর বসে আছে !

মিতুর মনের ভেতর হঠাৎ কি যে হল মিতু বলতে পারবে না । নিজের কাছে খুব খারাপ লাগলো । মানুষটা কতটা সময় এখানে বসে আছে ওর জন্য । ও কি পারতো না ওকে ভেতরে ডেকে নিয়ে যেতে । ওর বন্ধুরা নিশ্চয়ই কিছু মনে করতো না । বরং খুশিই হত !

আস্তে আস্তে হেটে হেটে রাস্তা পার হয়ে মাহমুদের কাছে গিয়ে দাড়ালো । একমনে মোবাইলের কি যেন করছিলো ওকে দাড়াতে দেখে সোজা হয়ে দাড়ালো । একটু হাসার চেষ্টা করলো । মিতু বলল
-আপনাকে চলে যেতে বললাম না !
মাহমুদ আবারও বোকার মত হাসলো খানিকটা । তারপর বলল
-চল রাত হয়ে যাচ্ছে । তোমাকে বাসায় দিয়ে আসি । রিক্সা ডাকি ?
-ডাকুন !

রিক্সাতে চড়ার পরেও মিতুর সেই খারাপ লাগাটা গেল না । বারবার মনে হচ্ছে মানুষটা তো ওর জন্যই বসে ছিলো এতোটা সময় । এমনটা না করলেও চলতো ! হঠাৎ মিতু বলল
-আই এম সরি !
-আরে না না ! সরি বলার কিছু নেই । আসলে আমার বসে থাকতে ভালই লাগছিলো ।
-কেন ভাল লাগছিলো শুনি ?
-মনে হচ্ছিলো একটু পরে তুমি বের হয়ে আসবে । তোমার সাথে দেখা হবে । এক সাথে রিক্সা করে তোমাকে বাসায় দিয়ে আসবো । এটা তো .....।

কথাটা বলেই মাহমুদ কিছুটা সময় চুপ করে রইলো । মিতু এক ভাবে মাহমুদের দিকে তাকিয়েই । ছেলেটার চোখে মুখে অন্য রকম কিছু একটা ছিল । মাহমুদ যে ওকে পাগলের মত ভালবাসে সেটা মিতু এই রাতের বেলা চট করে ধরে ফেলল । জীবনে প্রথম বারের মত মিতুর নিজেকে ভাগ্যবতী মনে হল । ওকেও যে কোন ছেলে ভালবাসতে পারে এটা মিতুর ধারনার বাইরে ছিল ! মিতু হঠাৎ খুব কান্না আসতে লাগলো । কান্না আটকে মিতু বলল
-কথা শেষ করেন !
মাহমুদ বলল
-এটা তো আর সচারচর হয় না । তুমি সম্ভবত আমাকে ঠিক মত পছন্দ কর না । আসলে এভাবে আমাদের বিয়ে টা হল যে !
মিতু নিজেকে খানিকটা সামলে নিয়ে বলল
-কে বলল যে আমি আপনাকে পছন্দ করি না ?
-না মানে .....
-শুনেন পুরুষ মানুষ হচ্ছে গাধা টাইপের হয় । তারা কিছুতেই মেয়েদের মন বুঝতে পারে না । এক কাজ করেন । রিক্সা আপনার বাসার দিকে নিয়ে চলেন । আজকে আমি আপনার বাসায় যাবো !
-কি ?
-কেন সমস্যা কোন ?
-না মানে ....
মিতু বলল
-এতো মানে মানে কেন করেন আপনি ? এখন বাসায় যেতে ইচ্ছে করছে না । বাবা হাজারটা প্রশ্ন করবে । বাবার সামনে পড়তে ইচ্ছে করছে না ।

মাহমুদ খানিটকা অস্বস্থিতে পরে গেল । ওর চেহারা দেখেই মিতুর বুঝতে পারলো সেটা । রিক্সাওয়ালাকে রিক্সা ঘোরাতে বলতে গিয়েও আটকে যাচ্ছিলো । তবে মিতু এটাও জানে যে মাহমুদের অসম্ভব ভালও লাগছিলো । মিতু মাহমুদের হাত ধরে বলল
-এতো নার্ভাস হওয়ার কিছু নেই । আমি আপনার বিয়ে করা বউ ।
-হ্যা তাই তো । আমি নার্ভাস হচ্ছি না তো !
-আপনার কন্ঠস্বর শুনেই বুঝতে পারছি !

বলেই মিতু হাসলো । ও কেন হঠাৎ করেই যেতে চাইলো মিতু নিজেও জানে না । হঠাৎ করেই মনে হল পাশে বসা এই মানুষটার সাথে গল্প করে একটা রাত কাটিয়ে দেওয়া যায় ! নেহৎ মন্দ হবে না সে রাত !



সর্বশেষ এডিট : ১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ রাত ১১:৫২
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×