somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দুইটি ভৌতিক অনু-গল্প

২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অনু গল্পঃ কোথায় গেল ?

সামিরের ভাই সাব্বিরকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না । গত পরশু দিন হঠাৎ করেই হোস্টেল সুপার ফোন দিয়ে তাকে বলল তার ভাই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে । কিভাবে গায়েব হয়েছে কেউ বলতে পারছে না । তারা অনেক খোজাখুজি করেছে কিন্তু পায় নি । শেষে পুলিশে খবর দেওয়া হয়েছে । সামির জলদি করে হোস্টেলে এসে হাজির হল । সারা দিন চলল খোজাখুজি । সে যে কোথায় গেছে কেউ বলতে পারছে না । রাতের বেলা সে ঘুমাতে গেছে এটা অনেকে দেখেছে । তার রুমমেট বাসায় গেছে গত সপ্তাহে । তাই রুমের ভেতরে কি হয়েছে কেউ কিছু বলতে পারে না ।

সকাল বেলা তার রুম ভেতর থেকে বন্ধ ছিল । অনেক ডাকা ডাকির পরে যখন খুলছিলো না তখন দরজা ভাঙ্গা হয় । এবং সেখানে কেউ ছিল না । কোথায় গেল কেউ বলতে পারে না । কিভাবে গেল তাও কেউ জানে না ।

পুলিশ সবাই কে জিজ্ঞাসাবাদ করলো । কিন্তু কেউই তেমন কিছু বলতে পারলো না । সামি খানিকটা দিশেহারা বোধ করলো । কি করবে কিছুই বুঝতে পারলো না । পুলিশ অফিসার তাকে থানা নিয়ে গেল আরও কিছু খোজ খবর নেওয়ার জন্য । কিছুটা সময় বসে থাকার পরে তার ডাক পড়লো ।

-আপনার ভাইয়ের ঘর থেকে আমরা একটা ডায়রী উদ্ধার করেছি । সেখানে সে বেশ কিছু কথা বার্তা লিখে রেখেছে । বিশেষ করে গতকাল পর্যন্ত সে কি করেছে সেটা ।
সামি বলল
-কিছু জানতে পারলেন ?
-কিছু তো পেয়েছিই । আমি আপনাকে পড়ে শোনাই ।

সাত দিন আগে
একটু আগে আম্মু ফোন করেছিলো । কতদিন পরে মায়ের সাথে শুনতে পেলাম । আম্মু অনেক সময় কথা বলল । ওনার কাছে যেতে বলল । খুব মায়ের কাছে যেতে বলল । মাকে বললাম আর কটা দিন মাত্র । পরীক্ষা শেষ হলেই চলে আসবো আমি ।


ছয়দিন আগে

আজকে আব্বু ফোন দিয়েছিলো । সেও আমাকে দেখতে চাইছিলো । অনেক দিন নাকি আমাকে দেখে না । আমি ঠিক বুঝতে পারছি না হঠাৎ মা বাবা এমন করে কথা বলা শুরু করলো কেন ?


পাঁচ দিন আগে
আজকে আবারও মায়ের ফোন এসে হাজির । আমি অনেক করে বোঝালাম । আম্মু কাঁদছিলো । এমন করে করছিলো আমি ঠিক বুঝতে পারছি না এমন কেন করছে ।


চার দিন আগে
আজকে ভাইয়ার সাথে কথা হল । ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম মা বাবার কথা । ভাইয়া কিছু বলল না । বলল সব ঠিক আছে । রাতে আবার মায়ের ফোন । আমাকে চলে আসতে বলল । আমাকে নাকি অনেক দেখতে ইচ্ছে করছে । আমারও অনেক দেখতে ইচ্ছে করছে মা কে !


তিন দিন আগে
আজকে বাবা যেন একটু রাগই করলো । মা নাকি আজকে আমার জন্য অনেক চিৎকার চেঁচামিচি করেছে । আমি কি করবো বুঝতে পারছি না!


দুই দিন আগে
মা আজকে কোন কথা বলে নি । কেবল হুহু করে কাঁদছিলো । আমি কি করবো ঠিক বুঝতে পারছিলাম না । মাকে বললাম পরীক্ষা শেষ প্রায় ।


একদিন আগে
আজকে মাকে বললাম কালই চলে আসবো আমি । আর কোন সমস্যা নেই । আমি আসছি ! মা খুব খুশি হল । বলল যে সে চলে নিজে আসবে আমাকে নিতে । সকাল হলেই মাকে দেখতে পাবো । এটা ভাবতেই ভাল লাগছে !


ডায়রিটা বন্ধ করে অফিসার বলল
-আপনার মা বাবার কাছে যাওয়ার কথা ছিল আপনার ভাইয়ের । তারা কোথায় থাকে বলেন তো । আসে নি কেন ?

সামি বলল
-আপনি কি নিশ্চিত যে বাবা মা সাব্বিরকে ফোন করেছিলো ?
-হ্যা । আমি খোজ নিয়েছি । প্রতিদিন রাতে হোস্টেলের ফোনে ফোন আসতো । তারপর সাব্বিরকে চাওয়া হত । কোন সময় আপনার বাবা কিংবা মা ফোন করতো ! সাব্বির অনেক সময় ধরে কথা বলতো !

সামি চুপ করে গেল । ঠিক বিশ্বাস হচ্ছে না ওর ! অফিসার বলল
-কি ব্যাপার চুপ করে আছেন কেন ?
-দেখুন আপনি যা বলছেন সেটা অসম্ভব !
-মানে ?
-মানে বাবা মা কিছুতেই সাব্বিরকে ফোন করতে পারে না ।
-কেন পারবে না ?
-কারন সপ্তাহ খানেক আগে তারা দুজনই একটা রোড এক্সিডেন্টে মারা গেছে । তারা সাব্বিরকেই দেখতে আসছিলো । ওর পরীক্ষা চলছিলো বলেই আমি ওকে কিছুই জানাই নি ।

অফিসার কিছুটা সময় থ হয়ে রইলেন । কি বললেন খুজে পেলেন না ।

সামি বাইরে বের হয়ে এল । তার ভাইটা কোথায় হারিয়ে গেল ? বাবা মা কি তাহলে যাওয়ার সময় তাকেও নিয়ে গেল সাথে করে ?


(সমাপ্ত)





অনু-গল্পঃ মেইড আন্টি



নিজেদের নতুন বাসার ড্রয়িং রুমে বসে বাবা খবরের কাগজ পড়ছিলো । আজকে তার সাপ্তাহিক ছুটির দিন । তাই তার ৮ বছরের ছোট ছেলেকে দেখা রাখার দায়িত্ব পড়েছে তার উপর । তার স্ত্রী এক বন্ধুর বাসায় গেছে । ফেরার পথে খাবার কিনে ফিরবে । তাই রান্নার ঝামেলা নেই । হঠাৎ তার ছেলে এসে বাবাকে বলল
-বাবা তুমি কি ভুতে বিশ্বাস কর ?
বাবা কিছু সময় ছেলের দিকে তাকিয়ে থেকে বলল
-না । ভুত বলে কিছু নেই ।
-কিন্তু বাবা ওরা সত্যিই আছে !
-তাই ?
-হ্যা বাবা । আমি জানি ।
-তুমি ভুল জানো !
-না বাবা সত্যি ওরা আছে ।
-তা কে বলেছে তোমাকে এই কথা ?
ছেলে বলল
-আমাদের বাসার মেইড আন্টি এই কথা বলেছে । সে নাকি নিজে দেখেছে ভুত !
ছোট ছেলেটির বাবা নিজের ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । তারপর দেওয়ালে ঝুলানো গাড়ির চাবিটা নিয়ে ছেলের হাত ধরে বের হয়ে এল । ছেলে কে গাড়িতে তুলে সোজা শহরের দিকে গাড়ি চালালো । ছেলে গাড়িতে বসে থাকতে থাকতে বলল
-আমরা কোথায় যাচ্ছি ?
-একজন হুজুরের কাছে । ঐ বাসায় আসলেই ভুত আছে । সে কিছু একটা করতে পারবে হয়তো ।
-বাহ আমি বললাম তুমি বিশ্বাস করলে না । আর মেইদ আন্টির কথা বললাম আর বিশ্বাস করে ফেলল ।
বাবা তার ছেলের দিকে তাকিয়ে বলল
-শুনো, আমাদের বাসায় কোন মেইড কিংবা কাজের মানুষ নেই । বাসাতে আমি তুমি আর তোমার আম্মা থাকে কেবল !


(সমাপ্ত)



(থিম এডোপ্টেড)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে অক্টোবর, ২০১৭ রাত ১২:০৩
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহমিকা পাগলা

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


এক আবেগ অনুভূতি আর
উপলব্ধির গন্ধ নিলো না
কি পাষাণ ধর্মলয় মানুষ;
আশপাশ কবর দেখে না
কি মাটির প্রণয় ভাবে না-
এই হলো বাস্তবতা আর
আবেগ, তাই না শুধু বাতাস
গায়ে লাগে না, মন জুড়ায় না;
বলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩




তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×