somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অনুগল্পঃ শিকার

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ফোনটা অনেক সময় ধরে বেজেই চলেছে । এই যুগে অফিস আদালত ছাড়া ল্যান্ড ফোনে মানুষ খুব একটা ফোন দেয় না । আমি ফোনটার দিকে তাকিয়ে একটু ইতস্ততঃ করতে লাগলাম । আমার এগিয়ে গিয়ে ফোনটা ধরা উচিৎ হবে না । মিমির কাছে জানতে চাইবো কি না ভাবছি এমন সময় মিমি রান্না ঘর থেকেই চিৎকারে বলে উঠলো

-ফোনটা ধর তো একটু !

আসলে এভাবে মিমির বাসায় এসে হাজির হওয়াটা আমার নিজের কাছে অন্য রকম লাগছে । কিন্তু মিমি যখন ওর বাসার আসার আমন্ত্রন জানালো তখন কোন ভাবেই মানা করতে পারলাম না । বিশেষ করে মিমি যখন বলল যে ও আজকে আমার জন্য রান্না করবে । আমি নাকি মেস বাসাতে কি না কি খাই । মাঝে মাঝে আমাকে খাওয়াতে পারলে ওর ভাল লাগবে তখন আমি আর মানা করতে পারি নি । যে কারনে অস্বস্তি লাগছিলো সেটা হল মিমি এই বড় বাড়িতে একদম একা থাকে ।

মোহাম্মাদপুরের বসিলার কাছে এই এলাকাটা দেখলে মনেই হয় না যে এটা ঢাকার ভেতরে । একেবারে আমাদের মফস্বলের শহরের মত । মিমি এই জায়গাতই একটা দোতলা বাসাতে থাকে । একদম একা । বাড়িটা চারিদিকে দেওয়াল দেওয়া । ভেতরে বেশ গাছ গাছালিতে ভর্তি । আমার বাসাটা খুব বেশি পছন্দ হয়ে গেল ।

এই ঢাকা শহরের মিমির মত মেয়ে একা একা এমন একটা বাসাতে থাকে, এটা শোনার পরে আমার কাছে একটু অবাকই লেগেছে । এমনটা খুব একটা হয় না সাধারনত । আমি আগে একবার জানতে চেয়েছিলাম ওর যে ওর বাবা মা কোথায় থাকে । মিমি সেই প্রশ্নের কোন জবাব দেয় নি । বরং এড়িয়ে গেছে । আমার কাছে মনে হয়েছে ও প্রশ্নের উত্তর দিতে চায় না । নিশ্চয়ই কোন ঘটনা আছে এই পেছনে । কোন অস্বস্থিকর ঘটনা । তাই আমি আর জানতে চাই নি ।

আজকে যখন ও বলল যে ওর বাসায় আমার দাওয়াত তখন আমার একটু অস্বস্থি লেগেছিল তবে না করতে পারি নি । মেয়েটা এমনিতেই আমার সাথে খুব মেশে । ক্লাস শুরুর পর থেকেই আমার সাথেই দেখি কথা বার্তা বলে বেশ ।

আমি উঠে গিয়ে ল্যান্ড ফোনের রিসিভারটা তুলে ধরলাম ।
-হ্যালো
ফোনের ওপাশ থেকে একটা হিসহিস আওয়াজ এল । মনে হল যেন ওপাশে খুব বাতাস কিংবা ঝড় হচ্ছে । আমি আবার বললাম
-হ্যালো !
বাতাসের আওয়াজ ছাড়া আর কোন আওয়াজ নেই । আমি অনেক টা সময় ফোনের রিসিভারটা কানে লাগিয়ে রইলাম । তারপর আওয়াজটা শুনতে পেলাম । যেন কেউ খুব দুর থেকে কোন কথা বলছে । কন্ঠটা বলল
-আমি মিমির বাবা বলছি । শুনছো ?
আমি কি বলব খুজে পেলাম না । আমি আজকে মিমির বাসায় এলাম আর এসেই মিমির বাবার ফোন । কি বলব প্রথমে বুঝতে পারলাম না । আমি সালাম দিলাম । কিন্তু কোন জবাব পাওয়া গেল না । ওপাশের ঝড়টা যেন আরও বেড়েই চলেছে । তারপর আবারও আওয়াজ শুনতে পেলাম ।
-খেও না । কিছু খেও না ।
-কি বলছেন ? আমি ঠিক শুনতে পাচ্ছি না । আমি কি মিমিকে ডেকে দিবো ?
আবারও সেই একই কথা ।
-খেও না । কিছু খেও না ।

আওয়াজটা যেন দুরে চলে যাচ্ছে । আবারও সেই ঝড়ের আওয়াজটা বাড়তে লাগলো । তারপর আস্তে আস্তে সেটা কমে এল । আমি আরও কিছুটা সময় ফোনটা কানে কানে লাগিয়ে বসে রইলাম । একটা সময় ফোনটা রেখে দিলাম ।
মিমি ততক্ষনে টেবিলে খাবার সাজাতে শুরু করেছে । আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-কে ফোন করেছিলো ? বাবা ?
-হ্যা । তাই তো বলল । কিন্তু কি সব বলল যেন । বুঝতে পারলাম না । মনে হচ্ছে উনি যেখানে আছেন সেখানে কোন প্রকৃতিক দুর্যোগ হচ্ছে । কিন্তু এই সময়ে কোথায় ঝড় হয় বুঝলাম না । তোমার বাবা কি দেশে নেই ? বাইরে থাকে ?

মিমি আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে হাসলো । তারপর বলল
-এসো খেতে বসো ।
আমি টেবিলের সামনে এসে দাড়ালাম । দেখি টেবিল ভর্তি নানা পদের খাবার । এই মেয়েটা আমার জন্য এতো কিছু করেছে ভাবতেই অবাক লাগছে । মিমি যে আমাকে পছন্দ করে সেটা আমি আগে থেকেই জানি । আমি নিজেও ওকে খুব পছন্দ করি । আজকে ওকে মনের কথাটা বলে দেওয়া যাবে !

টেবিলে বসে মিমিই আমাকে সব কিছু এগিয়ে দিতে লাগলো । সত্যি বলতে কি এতো স্বাধের খাবার আমি অনেক দিন খাই নি । ঢাকাতে আসার পর থেকে হোটেল আর বুয়ার রান্না খেতে খেতে পেটে পাথর পড়ে গেছে । সেখানে আজকে আজকে এতো ভাল খাবার ! আমি পেট ভরে খেলাম । মিমি অবশ্য কিছুই খেল না । কেবল আমাকে এগিয়ে দিতে লাগলো । বলল যে ও আমার খাওয়া দেখছে । আমার খাওয়া দেখার মাঝেই ওর শান্তি !
খাওয়া শেষ করে মিমি একটা মাংসের বাটি এগিয়ে দিল । বলল
-এটা খাও দেখি ।

বাটি থেকে একটু মুখে দিলাম । স্বাধটা যেন একটু মিষ্টি মিষ্টি লাগলো । মিমি আমার দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আমি বললাম
-এটা কিসের মাংস বলতো ? কলিজা তাই না ? কিন্তু কিসের ?
মিমি বলল
-খেতে কেমন লাগছে ?
-একটু মিষ্টি মিষ্টি তবে মজার । এর আগে কোন দিন খাই নি ।
-খাবেও না জানতাম । বলতো এটা কি ?
-বলতে পারছি না । বল কিসের মাংস !
মিমি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-এটা আমার রাফার কলিজা !
আমি খানিকটা চমকে উঠলাম । রাফা মানে ? কোন রাফা ! আমি কোন মতে বললাম
-রাফা মানে ? কোন প্রাণী ?
আমি যেন খুব মজার কথা বলেছি । মিমি হেসে উঠলো খুব জোরে । তারপর বলল
-রাফা হচ্ছে আমার আগের বয়ফ্রেন্ড । সেও তোমার মত আমার প্রেমে পাগল ছিল । তাকেও এভাবে এই বাড়িতে ডেকে নিয়ে এসেছিলাম । তুমি যেখানে বসে আছো ঠিক এক মাস আগে রাফাও এখানে বসে খাবার খাচ্ছিলো ।
-তুমি ইয়ার্কি মারছো আমার সাথে ?
তখনই আমি মিমির চোখের দিকে তাকালাম । ওর চোখের মোলায়েম ভাবটা কেটে গেছে । সেটা যেন জ্বলছে । আমার বুকের ভেতরে কেমন কেঁপে উঠলো । আমার বুঝতে কষ্ট হল না যে মিমি যা বলছে তা সত্যি । আমাকে একটু আগে ও কোন মানুষের কলিজা খাইয়েছে । আমি উঠে পড়তে চাইলাম তখনই আমার মাথার ভেতরটা চক্কর দিয়ে উঠলো । আমি শরীরে একদম বল পেলাম না । মিমি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
-নাহ ! সোনা পাখি এই কাজটা তুমি করতে পারবে না । তোমার খাবারে কড়া ঔষধ মিশিয়ে দিয়েছি । তুমি খুব বেশি সময় বেঁচে থাকবে না আর । ঘুমের মধ্যেই তোমার মৃত্যু হবে । যন্ত্রনাহীন মৃত্যু । বুঝেছো ।
আমি কোন মতে বললাম
-ক্যাক-কেন ?
-তুমি বেঁচে থাকার জন্য কি কর ? খাওয়া দাওয়া কর, আমি তো তাই । আমার মানুষ ছাড়া চলে না । তাই তো এই ব্যবস্থা । নাথিং পারসোনাল । তুমি কিছু মনে কর না । তবে তোমাকে কিন্তু বাবা সাবধান করেছিল কিছু না খেতে । তবুও তুমি খেলে । আসলে বাবাকে মেরে ফেলার পর থেকে আমি যাকেই ধরে নিয়ে আসি না কেন বাবা তাদেরকে ফোন করে সাবধান করার চেষ্টা করে । আমি প্রথমে একটু অবাক হতাম, একট ভয়ও পেতাম পরে এটা একটা মজা হিসাবে নিয়েছি । যদি বাবা কথা শুনে তুমি না খেতে তাহলে তুমি বেঁচে যেতে । এখন যেহেতু খেয়েই ফেলেছো তাই আর কিছু করার নেই ।

আমার অবাক হওয়ার ক্ষমতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে । আমার কাছে কেবল মনে হচ্ছে যা দেখছি সব স্বপ্ন দেখছি । এসব সত্য হতে পারে না । আমি নিজের চোখ দুটো খোলা রাখতে পারছিলাম না । আমার পুরো হাট পা অবশ হয়ে আসছিলো । মিমির বাবা এই জন্যই বারবার বলছিলো খেও না কিন্তু আমি সেটা কানে নেই নি । ফল স্ব রূপ আমাকে এই পরিনতি মেনে নিতে হচ্ছে । চোখে পুরোপুরি অন্ধকার নেমে আসার আগে মুহুর্তে আমি মিমিকে দেখতে পেলাম । শান্ত আর ভয়ংকর চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে ! সে চোখে খুনের নেশা !


পরিশিষ্টঃ
মিমি মাটিতে পড়ে থাকা আদনানের দেহটার দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুটা সময় । আগামী মাসখানের খোরাক আপাতত জমে গেছে । এখন নিশ্চিন্তে কিছুটা সময় পার করা যাবে । তারপর আবার নতুন কাউকে খুজে বের করতে হবে । ব্রিটিশ কাউন্সিলে গত সপ্তাহে ভর্তি হয়েছে ও । দুদিন ক্লাস করতে না করতেই রিফাত নামের একজনের সাথে পরিচয় হয়েছে । রিফাতের চোখের চাহনীর দেখেই মিমির বুঝতে কষ্ট হয় নি সামনে ওর শিকার কে হতে চলেছে !

সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ রাত ৮:১৭
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও পদ্মশ্রী পুরস্কার

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৫৬



এ বছরের পদ্মশ্রী (ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মাননা) পদকে ভূষিত করা হয়েছে, বাংলাদেশের রবীন্দ্র সংগীত এর কিংবদন্তি শিল্পী রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যাকে।

আমরা গর্বিত বন্যাকে নিয়ে । ...বাকিটুকু পড়ুন

কষ্ট থেকে আত্মরক্ষা করতে চাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯



দেহটা মনের সাথে দৌড়ে পারে না
মন উড়ে চলে যায় বহু দূর স্থানে
ক্লান্ত দেহ পড়ে থাকে বিশ্রামে
একরাশ হতাশায় মন দেহে ফিরে।

সময়ের চাকা ঘুরতে থাকে অবিরত
কি অর্জন হলো হিসাব... ...বাকিটুকু পড়ুন

রম্য : মদ্যপান !

লিখেছেন গেছো দাদা, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৫৩

প্রখ্যাত শায়র মীর্জা গালিব একদিন তাঁর বোতল নিয়ে মসজিদে বসে মদ্যপান করছিলেন। বেশ মৌতাতে রয়েছেন তিনি। এদিকে মুসল্লিদের নজরে পড়েছে এই ঘটনা। তখন মুসল্লীরা রে রে করে এসে তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

= নিরস জীবনের প্রতিচ্ছবি=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



এখন সময় নেই আর ভালোবাসার
ব্যস্ততার ঘাড়ে পা ঝুলিয়ে নিথর বসেছি,
চাইলেও ফেরত আসা যাবে না এখানে
সময় অল্প, গুছাতে হবে জমে যাওয়া কাজ।

বাতাসে সময় কুঁড়িয়েছি মুঠো ভরে
অবসরের বুকে শুয়ে বসে... ...বাকিটুকু পড়ুন

Instrumentation & Control (INC) সাবজেক্ট বাংলাদেশে নেই

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৩ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৫




শিক্ষা ব্যবস্থার মান যে বাংলাদেশে এক্কেবারেই খারাপ তা বলার কোনো সুযোগ নেই। সারাদিন শিক্ষার মান নিয়ে চেঁচামেচি করলেও বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরাই বিশ্বের অনেক উন্নত দেশে সার্ভিস দিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×